রচনা: ইন্টারনেট ও তার ব্যবহার | essay on internet in bengali language
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
ইন্টারনেট
ভূমিকাঃ মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার অনন্য ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্টারনেট। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এক মাধ্যমের নাম ইন্টারনেট। এটি কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সারাবিশ্বের দেশগুলি আজ যেন নিকট প্রতিবেশী। এই ব্যবস্থা ‘বিশ্বগ্রাম’ (Global Village)ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট কীঃ ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক (আন্তর্জাতিক জাল) শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ইন্টারনেট। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো এই ব্যবস্থা। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি পদ্ধতি হিসেবে গড়ে উঠেছে এই সিস্টেম। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। সারাবিশ্বের অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, সংবাদ সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি গ্রাহক ইন্টারনেটের সাহায্যে যুক্ত হয়ে এই মহাযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন কিংবা অনুরূপ যেকোনো ডিভাইস মুহূর্তেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন কম্পিউটার বা অনুরূপ ডিভাইস, মডেম এবং ইন্টারনেট সংযোগ।
ইন্টারনেটের উৎপত্তিঃ ইন্টারনেট আধুনিক কালের আবিষ্কার। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এটি আবিষ্কার করে। যোগাযোগের গোপন এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণাগারে টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয়। এটি টেলিফোন লাইন নির্ভর একটি যোগাযোগ পদ্ধতি। ডেস্কটপ কম্পিউটারের আবিষ্কার হলে টেলিনেটওয়ার্কের সাথে কম্পিউটারের সংযুক্তি ঘটে। তখন এর নাম ছিল ARPANET । এক সময় কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট সারাবিশ্বে ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ইন্টারনেটের বিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
ইন্টারনেটের সম্প্রসারণঃ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ৪টি কম্পিউটারের সংযোগ ঘটিয়ে যে ব্যবস্থার শুরু করে, পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। ১৯৮৪ সালে মার্কিন ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তখনও সুযোগ-সুবিধা ছিল সীমিত। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯০-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। অতি অল্প সময়েই তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত কোটির ঊর্ধ্বে।
ইন্টারনেটের ব্যবহারিক দিকঃ ইন্টারনেট সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ব্যবহারিক দিক হলো
* ই.মেইল: দ্রুত সময়ে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা হলো ইলেকট্রনিক্স মেইল বা ই-মেইল।
* ওয়েব: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে রাখা তথ্য দেখার পদ্ধতি।
* নেট নিউজ: ইন্টারনেটের তথ্য ভান্ডারে রক্ষিত সংবাদ।
* চ্যাট: অনলাইনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কথা বা টেক্সট আড্ডা।
* ইউজনেট: সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য ভান্ডার।
* ই-ক্যাশ: অর্থনৈতিক লেনদেন ও বাণিজ্যিক সুবিধা।
ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সভ্য সমাজের মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অচল। এর মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। লেখাপড়া, গবেষণা, সাহিত্য চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, বই, ইন্টানেটের মাধ্যমে যেকোনো সময় পাওয়া সম্ভব। এটি মানুষের হাতের মুঠোয় জ্ঞানভান্ডার তথা লাইব্রেরিকে এনে দিয়েছে। পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। হোটেল রির্জাভেশন, টিকেট কাটা সবই সম্ভব অনলাইনে। এছাড়াও ইন্টারনেটে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়। ঘরে বসে বিশ্ববিখ্যাত সব সিনেমা-নাটক দেখা যায় যা বিনোদনকে সহজ করেছে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলি যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ইন্টারনেট এনেছে নতুন দিগন্ত। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে কেনাবেচা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দিয়েছে নতুনমাত্রা। এতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। সংবাদপত্র এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রকেও ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।
ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকঃ ইন্টারনেটের বহুমাত্রিক উপকারিতার পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকও আছে। অবশ্য তা নির্ভর করে এর ব্যবহারের উপর। বর্তমানে এর সাহায্যে মিথ্যা খবর, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন, মানুষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বিষয় যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা অসংখ্য কম্পিউটারকে অকেজো করে দিচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি করে বিভিন্নভাবে মানুষের ক্ষতি করছে। এছাড়াও অন্যের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ-সম্পদ নিজের দখলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করেও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এসবের দায় ইন্টানেটের নয়, ব্যবহারকারীর। অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।
তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়ঃ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে, তারা এক ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যাকে ডিজিটাল বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশও এরূপ বৈষ্যমের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে চাইলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-
* আমাদের তরুণ সমাজকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।
* ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
* টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
* তথ্য প্রযুক্তির জগতে ভাষা হিসেবে ইংরেজির অধিপত্য একক। তাই ইংরেজির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।
* তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনসম্পদ এবং সরকার গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহারঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি। এক্ষেত্রে যারা যতো বেশি অগ্রগামী, তারা ততো উন্নত। ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে জয় করে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখনও পিছিয়ে আছি। আমাদের উচিত হলো ইন্টারনেটের ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের প্রসার ঘটিয়ে দেশকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা।