ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে। এই দেখার মধ্যে একাধারে যেমন আছে উত্তেজনা, ঠিক তেমনি আছে আনন্দ। ঘরে বসে এমন উত্তেজক আনন্দ আর কোন যন্ত্রের মাধ্যমে পাই না, তাই ‘দূরদর্শন আমাদের একান্ত প্রিয়। আবিষ্কার ও গবেষণা : বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দান এই আনন্দদায়ক যন্ত্রটি। যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে, এল, বােয়ার্ডকে এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের গৌরব দেওয়া হয়ে থাকে তথাপি পূর্বসূরী হিসাবে জার্মানির কর্ণ ও মার্কিন বৈজ্ঞানিক রেঞ্জারে নামও আমাদের স্মরণ করতে হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বৈজ্ঞানিক কর্ণ। বেতারের মাধ্যমে প্রথম দুরে ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন যদিও তার দূরত্বটা ছিল কম। পরবর্তীতে রেঞ্জার এই ছবি পাঠাতে সমর্থ হলেন আটলান্টিক সাগরের এপার থেকে ওপারে। এ দুজন বৈজ্ঞানিক যে ছবি পাঠিয়ে ছিলেন তা ছিল স্থির। ১৯২৫ সালে অনেক গবেষণার পর বেয়ার্ড সমর্থ হলেন চলমান দৃশ্যের ছবি পাঠাতে। বলাবাহুল্য এই চলমান ছবি থেকেই আমরা পেয়ে গেলাম টেলিভিশন বা দূরদর্শন। ভারতে দূরদর্শন : ইউরােপ ও আমেরিকায় টেলিভিশন চালু হওয়ার অনেক পরে আমাদের দেশে এ যন্ত্রটি চালু হয়। এর কারণ আমাদের মতাে গরীব দেশের জন্য এটা ছিল বড়ই ব্যয় বহুল। বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠ ফসল যদি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া না যায়, যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক লােকের কাছে পৌছায় তবে বিজ্ঞানের এই প্রকৃত সুফলটি পাওয়া যাবে না। তাই অনেক চেষ্টা সাবুদ করে প্রথমে চালু করা হল দিল্লী শহরে। তারপর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গে দূরদর্শন চালু হয়। দুরদর্শনের কলকাতা কেন্দ্রে টেলিভিশন প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ১৯৮২ তে মাইক্রোওয়েভ সংযােগের মাধ্যমে দিল্লি থেকে সরাসরি কলকাতা এবং দেশের অপরাপর কেন্দ্রে প্রচার সম্ভব হয়।
দূরদর্শনের উপযােগিতা : টেলিভিশন বা দূরদর্শন মানুষের জীবনে আনন্দ দানের এক বিরাট ও ব্যাপক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।টেলিভিশনের কল্যাণে পৃথিবী ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চক্ষু গােচর হচ্ছে।এত সহজে এবং এত অল্প সময়ে এত বিস্তৃতভাবে লক্ষ লক্ষ জ্ঞান শিক্ষা আনন্দ-বিতরণের ব্যবস্থায় দূরদর্শন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দূরদর্শন শিক্ষক, চাকুরীজীবী, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক, শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়। আমেরিকার বক্তৃতা, ইংল্যান্ডের গান আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার বর্ণনা আমরা নিজ নিজ ঘরে বসেই দৈনন্দিন টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। একই সময়ে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে আনন্দ দানের এত বড় মাধ্যম পৃথিবীতে কোন কালেই ছিল না।
ইডিয়েট বক্স বোকা বাক্স: বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টেলিভিশন একটি বোকা বাক্স। এই দৃশ্যমান যন্ত্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। ভাববার বা চিন্তা করবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দিনে দিনে একটু একটু করে দর্শকদের নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। নির্বোধ না হলে দিনের পর দিন ওই সব ছবি কেউ কি দেখতে পারে? রাজনীতিকরা মনে করেন যে এটি শাসক দলের প্রচার এর একটি হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতি এটি তাদের হাতে না থাকাই ভালো। মোট কথা অনেকের কাছেই টিভি আজাদ পছন্দের বস্তু নয়। তবে ব্যবসায় দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসু কৌতুহলী দর্শকদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীরা দেখছেন এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারলে খদ্দের ধরা খুবই সহজ। তাই টিভির মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞাপন এখন একটি চারুকলা হয়ে উঠেছে। নাচ-গান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, খেলাধুলা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে সারা সপ্তাহ ধরে নানান বিচিত্র আলোচনা এখানে পরিবেশিত হয়।
ছাত্রদের জন্য : ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক অনুষ্ঠান দুরদর্শনে পরিবেশন করা হয়। তবে টিভি প্রােগ্রাম দেখা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও কিছুটা বিধি নিষেধ থাকা দরকার। সব অনুষ্ঠান তাদের দেখা ঠিক নয়। যেগুলি শিক্ষামূলক সেগুলিই তারা দেখুক। সেগুলি ছাড়া আর সব অনুষ্ঠানের দিকে ঝোক ছাত্রদের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। অধিকাংশ হিন্দি সিনেমা, নাচ, গান, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা উচিত নয়। প্রদর্শনীয় বিষয় পরিকল্পনার সময় দেশের কিশাের-কিশােরীদের নৈতিক এবং মানসিক গঠনের কথাটা ভাবতেই হবে।
উপসংহার: মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার। মানুষের প্রয়োগ পদ্ধতির জন্য আবিষ্কার হয়েছে কোন আশীর্বাদ আবার কখনো হয়েছে অভিশাপ। কোটি কোটি মানুষ আজও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাই আজও বহুলোকের টিভি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। টিভি এখনো উচ্চবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত বিলাসের উপকরণ অথচ বিজ্ঞানের আবিষ্কার কে করে করে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ধীরে ধীরে এগিয়ে রূপান্তরিত করতে হবে অগ্রগতির শানিত হাতিয়ারে। কেননা আধুনিক জীবনে এই অপরিহার্য সঙ্গীটিকে আর বর্জন করার উপায় বা সাধ্য নেই। তবে সেখানে প্রয়োজন অনুষ্ঠান সূচির নৈতিক নিয়ন্ত্রণ। প্রয়োজন ব্যাপক গঠনমূলক রুচি শিল্পোন্নত অনুষ্ঠানের নিত্য নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবন।
Hridoy
দূরদর্শন বা জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব
ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে। এই দেখার মধ্যে একাধারে যেমন আছে উত্তেজনা, ঠিক তেমনি আছে আনন্দ। ঘরে বসে এমন উত্তেজক আনন্দ আর কোন যন্ত্রের মাধ্যমে পাই না, তাই ‘দূরদর্শন আমাদের একান্ত প্রিয়।
আবিষ্কার ও গবেষণা : বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দান এই আনন্দদায়ক যন্ত্রটি। যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে, এল, বােয়ার্ডকে এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের গৌরব দেওয়া হয়ে থাকে তথাপি পূর্বসূরী হিসাবে জার্মানির কর্ণ ও মার্কিন বৈজ্ঞানিক রেঞ্জারে নামও আমাদের স্মরণ করতে হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বৈজ্ঞানিক কর্ণ। বেতারের মাধ্যমে প্রথম দুরে ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন যদিও তার দূরত্বটা ছিল কম। পরবর্তীতে রেঞ্জার এই ছবি পাঠাতে সমর্থ হলেন আটলান্টিক সাগরের এপার থেকে ওপারে। এ দুজন বৈজ্ঞানিক যে ছবি পাঠিয়ে ছিলেন তা ছিল স্থির। ১৯২৫ সালে অনেক গবেষণার পর বেয়ার্ড সমর্থ হলেন চলমান দৃশ্যের ছবি পাঠাতে। বলাবাহুল্য এই চলমান ছবি থেকেই আমরা পেয়ে গেলাম টেলিভিশন বা দূরদর্শন।
ভারতে দূরদর্শন : ইউরােপ ও আমেরিকায় টেলিভিশন চালু হওয়ার অনেক পরে আমাদের দেশে এ যন্ত্রটি চালু হয়। এর কারণ আমাদের মতাে গরীব দেশের জন্য এটা ছিল বড়ই ব্যয় বহুল। বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠ ফসল যদি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া না যায়, যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক লােকের কাছে পৌছায় তবে বিজ্ঞানের এই প্রকৃত সুফলটি পাওয়া যাবে না। তাই অনেক চেষ্টা সাবুদ করে প্রথমে চালু করা হল দিল্লী শহরে। তারপর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গে দূরদর্শন চালু হয়। দুরদর্শনের কলকাতা কেন্দ্রে টেলিভিশন প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ১৯৮২ তে মাইক্রোওয়েভ সংযােগের মাধ্যমে দিল্লি থেকে সরাসরি কলকাতা এবং দেশের অপরাপর কেন্দ্রে প্রচার সম্ভব হয়।
দূরদর্শনের উপযােগিতা : টেলিভিশন বা দূরদর্শন মানুষের জীবনে আনন্দ দানের এক বিরাট ও ব্যাপক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।টেলিভিশনের কল্যাণে পৃথিবী ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চক্ষু গােচর হচ্ছে।এত সহজে এবং এত অল্প সময়ে এত বিস্তৃতভাবে লক্ষ লক্ষ জ্ঞান শিক্ষা আনন্দ-বিতরণের ব্যবস্থায় দূরদর্শন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দূরদর্শন শিক্ষক, চাকুরীজীবী, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক, শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়। আমেরিকার বক্তৃতা, ইংল্যান্ডের গান আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার বর্ণনা আমরা নিজ নিজ ঘরে বসেই দৈনন্দিন টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। একই সময়ে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে আনন্দ দানের এত বড় মাধ্যম পৃথিবীতে কোন কালেই ছিল না।
ইডিয়েট বক্স বোকা বাক্স: বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টেলিভিশন একটি বোকা বাক্স। এই দৃশ্যমান যন্ত্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। ভাববার বা চিন্তা করবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দিনে দিনে একটু একটু করে দর্শকদের নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। নির্বোধ না হলে দিনের পর দিন ওই সব ছবি কেউ কি দেখতে পারে? রাজনীতিকরা মনে করেন যে এটি শাসক দলের প্রচার এর একটি হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতি এটি তাদের হাতে না থাকাই ভালো। মোট কথা অনেকের কাছেই টিভি আজাদ পছন্দের বস্তু নয়। তবে ব্যবসায় দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসু কৌতুহলী দর্শকদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীরা দেখছেন এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারলে খদ্দের ধরা খুবই সহজ। তাই টিভির মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞাপন এখন একটি চারুকলা হয়ে উঠেছে। নাচ-গান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, খেলাধুলা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে সারা সপ্তাহ ধরে নানান বিচিত্র আলোচনা এখানে পরিবেশিত হয়।
ছাত্রদের জন্য : ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক অনুষ্ঠান দুরদর্শনে পরিবেশন করা হয়। তবে টিভি প্রােগ্রাম দেখা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও কিছুটা বিধি নিষেধ থাকা দরকার। সব অনুষ্ঠান তাদের দেখা ঠিক নয়। যেগুলি শিক্ষামূলক সেগুলিই তারা দেখুক। সেগুলি ছাড়া আর সব অনুষ্ঠানের দিকে ঝোক ছাত্রদের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। অধিকাংশ হিন্দি সিনেমা, নাচ, গান, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা উচিত নয়। প্রদর্শনীয় বিষয় পরিকল্পনার সময় দেশের কিশাের-কিশােরীদের নৈতিক এবং মানসিক গঠনের কথাটা ভাবতেই হবে।
উপসংহার: মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার। মানুষের প্রয়োগ পদ্ধতির জন্য আবিষ্কার হয়েছে কোন আশীর্বাদ আবার কখনো হয়েছে অভিশাপ। কোটি কোটি মানুষ আজও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাই আজও বহুলোকের টিভি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। টিভি এখনো উচ্চবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত বিলাসের উপকরণ অথচ বিজ্ঞানের আবিষ্কার কে করে করে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ধীরে ধীরে এগিয়ে রূপান্তরিত করতে হবে অগ্রগতির শানিত হাতিয়ারে। কেননা আধুনিক জীবনে এই অপরিহার্য সঙ্গীটিকে আর বর্জন করার উপায় বা সাধ্য নেই। তবে সেখানে প্রয়োজন অনুষ্ঠান সূচির নৈতিক নিয়ন্ত্রণ। প্রয়োজন ব্যাপক গঠনমূলক রুচি শিল্পোন্নত অনুষ্ঠানের নিত্য নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবন।