1. এ তুমি, কেমন তুমি, চোখের তারায় আয়না ধরো, এ কেমন কান্না তুমি, আমায় যখন আদর করো ! জন্মের আগেও, জন্ম পরেও, জন্ম তুমি এমন, সুরের গভীর সুরে পদাবলীর ধরণ যেমন | কথা নয়, নিরবতায় সজলতার আখর ভরো, এ কেমন কান্না তুমি, আমায় যখন আদর করো ! এসেছি আগেও আমি, যখন তুমি পদ্মাবতী, কবেকার পুঁথির শোলোক (শ্লোক), তোমার মতইRead more

    এ তুমি, কেমন তুমি, চোখের তারায় আয়না ধরো,
    এ কেমন কান্না তুমি, আমায় যখন আদর করো !

    জন্মের আগেও, জন্ম পরেও, জন্ম তুমি এমন,
    সুরের গভীর সুরে পদাবলীর ধরণ যেমন |

    কথা নয়, নিরবতায় সজলতার আখর ভরো,
    এ কেমন কান্না তুমি, আমায় যখন আদর করো !

    এসেছি আগেও আমি, যখন তুমি পদ্মাবতী,
    কবেকার পুঁথির শোলোক (শ্লোক), তোমার মতই অশ্রুমতী |

    অশ্রুর একটি ফোঁটায় জন্ম আমার, আমার মরণ,
    নীরবে জাতিস্বরে গল্প বলা তোমার ধরন |

    ঝরেছ বৃষ্টি হয়ে আগেও তুমি, আবার ঝরো,
    এ কেমন কান্না তুমি, আমায় যখন আদর করো !

    See less
    • 0
  2. গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও | এই বুঝি তল পেলে, ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও | জানলা জুড়ে মানুষের কান, গলির ভাঁজে ভ্রমরের প্রাণ | গণিকার ঘাম লেগে থাকে তার ডানায় | আর অন্ধকারে ছটফটিয়ে মুখ ফেরানোর দায়, তার উড়ে আসা ধুসর চোখে সিগারেটের ছাই | তাই গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও | গভীরে  যাও, আরো গভীরে যাও | এই বুRead more

    গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও |
    এই বুঝি তল পেলে, ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও |

    জানলা জুড়ে মানুষের কান,
    গলির ভাঁজে ভ্রমরের প্রাণ |
    গণিকার ঘাম লেগে থাকে তার ডানায় |
    আর অন্ধকারে ছটফটিয়ে মুখ ফেরানোর দায়,
    তার উড়ে আসা ধুসর চোখে সিগারেটের ছাই |

    তাই গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও |
    গভীরে  যাও, আরো গভীরে যাও |
    এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও |

    নদীর বুকে, ঘরের খোঁজে,
    কাটেনি দিন খুব সহজে |
    বহু বছর মেখেছি রুপোর বালি |
    সেই রুপোর লোভে বাড়ি ফেরা যাবে রসাতল |
    আর ভেজা শরীর চোরা স্রোতে কামড়ে ধরে জল |

    তাই গভীরে যাও, আরো গভীরে যাও |
    গভীরে  যাও, আরো গভীরে যাও |
    এই বুঝি তল পেলে ফের হারালে, প্রয়োজনে ডুবে যাও |

    See less
    • 0
  3. নারী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নাস্তিকেরা তোমায় মানে না, নারী দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো তুমি চুল মেলে বিপ্লবের শত্রু হয়ে আছো ! এমনকি অদৃশ্য তুমি বহু চোখে কত লোক নামই শোনেনি যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে জল-রং-আলো— তারা চেনে প্রেমিকা বা সহোদরা জননী বা জায়া দুধের দোকানের মেয়ে, কিংবা যারা নাচে গায় রান্নাঘরে ঘামে শিশুকোRead more

    নারী – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    নাস্তিকেরা তোমায় মানে না, নারী
    দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো তুমি চুল মেলে
    বিপ্লবের শত্রু হয়ে আছো !
    এমনকি অদৃশ্য তুমি বহু চোখে
    কত লোক নামই শোনেনি
    যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে
    জল-রং-আলো—

    তারা চেনে প্রেমিকা বা সহোদরা
    জননী বা জায়া
    দুধের দোকানের মেয়ে, কিংবা যারা
    নাচে গায়
    রান্নাঘরে ঘামে
    শিশুকোলে চৌরাস্তায় বাড়ায় কঙ্কাল হাত
    ফ্রক কিংবা শাড়ি পরে দু:খের ইস্কুলে যায়
    মিস্তিরির পাশে থেকে সিমেন্টে মেশায় কান্না
    কৌটো হাতে পরমার্থ চাঁদা তোলে
    কৃষকের পান্তাভাত পৌছে দেয় সূর্য ক্রুদ্ধ হলে
    শিয়রের কাছে রেখে উপন্যাস
    দুপুরে ঘুমোয়
    এরা সব ঠিকঠাক আছে
    এদের সবাই চেনে শয়নে, শরীরে
    দু:খ বা সুখের দিনে
    অচির সঙ্গিনী

    কিন্তু নারী? সে কোথায়?
    চল্লিশ শতাব্দী ধরে অবক্ষয়ী কবি-দল
    যাকে নিয়ে এমন মেতেছে

    সে কোথায়? সে কোথায়?
    দীর্ঘ-ঈ-কারের মতো চুল মেলে
    সে কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে?

    এ ভিড়ে কেমন গোপন থাকো তুমি
    যেমন জলের মধ্যে মিশে থাকে
    জল-রং-আলো —

    See less
    • 0
  4. হঠাৎ দেখা রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা, ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন। আগে ওকে বারবার দেখেছি লালরঙের শাড়িতে দালিম ফুলের মতো রাঙা; আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়, আঁচল তুলেছে মাথায় দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে। মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে, যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়Read more

    হঠাৎ দেখা

    রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
    ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।
    আগে ওকে বারবার দেখেছি
    লালরঙের শাড়িতে
    দালিম ফুলের মতো রাঙা;
    আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
    আঁচল তুলেছে মাথায়
    দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
    মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
    ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
    যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
    শালবনের নীলাঞ্জনে।
    থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;
    চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।
    হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
    আমাকে করলে নমস্কার।
    সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
    আলাপ করলেম শুরু —
    কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার
    ইত্যাদি।
    সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
    যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
    দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
    কোনোটা বা দিলেই না।
    বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —
    কেন এ-সব কথা,
    এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।
    আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে
    ওর সাথিদের সঙ্গে।
    এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
    মনে হল কম সাহস নয়;
    বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
    গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
    বললে মৃদুস্বরে,
    “কিছু মনে কোরো না,
    সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
    আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
    দূরে যাবে তুমি,
    দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
    তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
    শুনব তোমার মুখে।
    সত্য করে বলবে তো?
    আমি বললেম, “বলব।”
    বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
    “আমাদের গেছে যে দিন
    একেবারেই কি গেছে,
    কিছুই কি নেই বাকি।”
    একটুকু রইলেম চুপ করে;
    তারপর বললেম,
    “রাতের সব তারাই আছে
    দিনের আলোর গভীরে।”
    খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
    ও বললে, “থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।”
    সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;
    আমি চললেম একা।

    – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    See less
    • 0
  5. স্বাধীনতার সুখ বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই, “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।” বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ? কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।” – রজনীকান্ত সেন

    স্বাধীনতার সুখ

    বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
    “কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই,
    আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
    তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।”

    বাবুই হাসিয়া কহে, “সন্দেহ কি তাই ?
    কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
    পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
    নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।”

    – রজনীকান্ত সেন

    See less
    • 0
  6. কাজলা দিদি বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই? পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে, ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই; মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই? সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো, দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো? খাবার খেতে আসি যখন দিদRead more

    কাজলা দিদি

    বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
    মাগো, আমার শোলক-বলা কাজলা দিদি কই?
    পুকুর ধারে, নেবুর তলে থোকায় থোকায় জোনাই জ্বলে,
    ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না, একলা জেগে রই;
    মাগো, আমার কোলের কাছে কাজলা দিদি কই?

    সেদিন হতে দিদিকে আর কেনই-বা না ডাকো,
    দিদির কথায় আঁচল দিয়ে মুখটি কেন ঢাকো?
    খাবার খেতে আসি যখন দিদি বলে ডাকি, তখন
    ও-ঘর থেকে কেন মা আর দিদি আসে নাকো,
    আমি ডাকি, – তুমি কেন চুপটি করে থাকো?
    বল মা, দিদি কোথায় গেছে, আসবে আবার কবে?
    কাল যে আমার নতুন ঘরে পুতুল-বিয়ে হবে!
    দিদির মতন ফাঁকি দিয়ে আমিও যদি লুকোই গিয়ে-
    তুমি তখন একলা ঘরে কেমন করে রবে?
    আমিও নাই দিদিও নাই কেমন মজা হবে!

    ভুঁইচাঁপাতে ভরে গেছে শিউলি গাছের তল,
    মাড়াস নে মা পুকুর থেকে আনবি যখন জল;
    ডালিম গাছের ডালের ফাঁকে বুলবুলিটি লুকিয়ে থাকে,
    দিস না তারে উড়িয়ে মা গো, ছিঁড়তে গিয়ে ফল;
    দিদি এসে শুনবে যখন, বলবে কী মা বল!

    বাঁশবাগানের মাথার উপর চাঁদ উঠেছে ওই
    এমন সময়, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?
    বেড়ার ধারে, পুকুর পাড়ে ঝিঁঝিঁ ডাকে ঝোঁপে-ঝাড়ে;
    নেবুর গন্ধে ঘুম আসে না- তাইতো জেগে রই;
    রাত হলো যে, মাগো, আমার কাজলা দিদি কই?

    – যতীন্দ্রমোহন বাগচী

    See less
    • 0
  7. ছাত্রজীবন এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য ভূমিকা : আজ যারা ছাত্র, আগামীকাল তারা দেশের নাগরিক। কাজেই দেশের ভালাে-মন্দ ভবিষ্যৎ নিরূপিত হয় ছাত্র সমাজের জীবন ও চরিত্র গঠন, শিক্ষা দীক্ষা, রুচি-প্রকৃতি এবং কর্মপন্থা প্রভৃতির উপর। সতরাং মানব জীবনের গুরুত্ব পূণ। সময়ই হলাে ছাত্র জীবন। এই সময়কে কর্ম জীবনের উদ্যোRead more

    ছাত্রজীবন এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য

    ভূমিকা : আজ যারা ছাত্র, আগামীকাল তারা দেশের নাগরিক। কাজেই
    দেশের ভালাে-মন্দ ভবিষ্যৎ নিরূপিত হয় ছাত্র সমাজের জীবন ও চরিত্র গঠন, শিক্ষা
    দীক্ষা, রুচি-প্রকৃতি এবং কর্মপন্থা প্রভৃতির উপর। সতরাং মানব জীবনের গুরুত্ব পূণ।
    সময়ই হলাে ছাত্র জীবন। এই সময়কে কর্ম জীবনের উদ্যোগ-পর্ব বলেও ধরা যেতে
    পারে।

    ছাত্র জীবন ; বিদ্যারম্ভের সময় হতে শিক্ষা সমাপ্তির কাল পর্যন্ত কালকে
    ছাত্র জীবন বলা হয়। এই সময়সীমায় বর্তমান শিক্ষাক্রমে চারটি স্তর আছে। প্রাথমিক
    শিক্ষা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। এর সময়সীমা এক থেকে নয় বছর পর্যন্ত। দ্বিতীয় স্তর হল
    মাধ্যমিক শিক্ষা। এই স্তরে দশ-এগারাে বছর বয়সে শিক্ষা আরম্ভ আর পনের-যােল
    বছর বয়সে দশম শ্রেণীতে শিক্ষা-সমাপ্তি। তৃতীয় স্তর – উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা। এই স্তরে
    শিক্ষাথীকে দুই বছর শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। চতৰ্থ স্তর – উচ্চ শিক্ষা বা কলেজ
    ইউনিভারসিটির শিক্ষা। এই স্তরে উনিশ-কুড়ি বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার্থীকে কলেজীয়
    বা স্নাতক শ্রেণির শিক্ষাক্রম এবং একশ-বাইশ বছর বয়স পর্যন্ত স্নাতকোত্তর
    শিক্ষাক্রম গ্রহণ করতে হয়।

    ছাত্র-জীবন অনুশীলন-পর্ব : অধ্যয়ন ছাত্রদের তপস্যা। “ছাত্রানং অধ্যয়নং
    তপঃ।” সর্ব স্তরেই ছাত্রদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য জ্ঞান অর্জন, অধ্যয়ন ও অনুশীলন।
    এ সময়ে সংযম, সহিষ্ণতা,ত্যাগ, সেবা প্রভৃতি মহৎ মূল্যবােধগুলিরও আহরণের উপযুক্ত
    সময়। একদিকে শিক্ষাচর্চা অন্যদিকে শিল্পিত স্বভাব ও সুদৃঢ় চরিত্র সংগঠনের উপযুক্ত
    প্রভৃতি কাল ছাত্রজীবন।

    প্রাচীন ভারতের ছাত্র জীবন : প্রাচীন ভারতে ছাত্রগণ গুরুগৃহে বাস করে
    অধ্যয়ন করত। গুরুকে কোন বেতন দিতে হতাে না।বরং গুরুই ছাত্রদের থাকা
    খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। ছাত্ররা শুরুর সেবা ও গৃহের কাজ কর্ম করে অবসর সময়ে
    পড়া-শুনা করত। ছাত্রদেরকে কঠোর ব্রহ্মচর্যের মধ্যদিয়ে জ্ঞান লাভ করতে হত।
    ব্রহ্মচর্যের কঠোর নিয়মে সকল প্রকার ভোগ বিলাসিতা ত্যাগ করে গুরুর কাছ থেকে
    লাভ করত সর্বশাস্ত্রের পূর্ণ জ্ঞান। সমস্ত সমাজের তখন মূল ভিত্তি ছিল গুরুকুলবাসী
    ছাত্র-সমাজ।

    দায়িত্ব-কর্তব্য ও চরিত্র গঠন শিক্ষা : একথা স্বীকার করতে হয় যে, শিশুর
    পক্ষে শিক্ষার অপরিহার্যতা ও চরিত্র গঠনের উপযোগিতা উপলব্ধি করা কঠিন ব্যাপার।।
    কাজে প্রথমাবস্থায় শিক্ষায় ও চরিত্র গঠনে মনোযোগী করে তোলার দায়িত্ব পিতামাতা।
    এবং শিক্ষকের। তারপর যখন শিশু কৈশােরকালে উপনীত হয় তখন হতে শিক্ষা ও
    চরিত্র গঠনে ছাত্রকে কিছুটা স্বনির্ভর হওয়া দরকার। যথা – পরিমিত বিদ্যাভ্যাস,
    খেলাধুলা, ভ্রমণ, দেহ ও মনের বলিষ্ঠ বিকাশ সাধনে নিজেকে যত্নবান হতে হবে। নিয়ম
    শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা প্রভৃতি বিষয়ে সচেতন হতে হবে। সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা,ক্ষমা,
    উদারতা প্রভৃতি চারিত্রিক গুণাবলী শিক্ষা জীবনে অর্জন করতে হবে। মনে রাখা
    ভাল, চরিত্রহীন বিদ্যাশিক্ষা লােক সমাজে কোন মূল্যই বহন করে না। চরিত্র এমন একটি সম্পদ যা একবার অধঃ পতিত হলে বিশাল সম্পদের বিনিময়েও তা পুনরুদ্ধার
    করা যায় না।

    ভবিষ্যৎ নাগরিক হওয়ার শিক্ষা : এগুলি ছাড়া ছাত্র ছাত্রীদের যে বিষয়ে
    সচেতন হওয়া দরকার তা হলাে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে
    গড়ে তুলা। ছাত্র পাঠ্যগ্রন্থ বহুতর অনুসরণীয় আদর্শের কথা পাঠ করে, মনীবী
    মহাপুরুষদের জীবন কথা, তাদের ত্যাগ ও কর্তব্য নিষ্ঠার কথা জানতে পারে। এসব
    আদর্শ নিজেদের জীবনে রূপায়িত করার দায়িত্ব কিন্তু ছাত্রদেরই। এ ভাবেই একজন
    ছাত্র ভবিষ্যতে একজন পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষ ও নাগরিক হয়ে উঠতে পারবে।

    সেবাধর্মঃ ছাত্রসমাজ নিজেদের জীবনে শিক্ষার মূল্য উপলব্ধি করতে পারে,
    তাই আশা করা যায় তারা দেশের অশিক্ষিত মানুষদের শিক্ষিত করে তুলতে অগ্রণী
    ভূমিকা পালন করবে। নিজ নিজ পল্লীতে নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করে বয়স্ক ও দরিদ্রদের
    মধ্যে শিক্ষার আলাে বিতরণ করে দেশের ও দশের কল্যাণ সাধন করবে। তাছাড়া
    রোগীর সেবা ও দরিদ্রের সাহায্য ইত্যাদি কাজের ভারও ছাত্রদের কাঁধে তুলে নেওয়া
    দরকার। কারণ সেবা ধর্ম অতি পবিত্র ধর্ম।

    উপসংহার : অল্প কথায়, ছাত্রজীবন গঠন-পর্ব। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের
    প্রধান লক্ষ্য বিদ্যাভ্যাস ও জ্ঞান চর্চা। এ সবের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য চর্চা, চরিত্র গঠন,
    অধ্যবসায় ও অধায়নও পাশাপাশি চলবে। কূপমণ্ডুকতা ছাত্রজীবনেও মারাত্মক অভিশাপ।
    সুস্থ স্বাস্থ্য, মুক্ত জ্ঞান, মুক্ত দৃষ্টি, আনন্দোল পরমায়ু – এসবই ছাত্রের দরকার।
    ভবিষ্যতের সুখী কর্মঠ জ্ঞানী – বিবেকবান নাগরিক তারাই। মনে রাখতে হবে দেশ
    একটি মানচিত্র সম্মত ভূখণ্ড নয় কেবল, দেশ বহু জ্ঞানী-গুণী কর্মী, শিল্পী, ভাবুক কবি,
    সমাজসেবী রাজনীতিক প্রকৃতির লীলাভূমি – রম্য বাসস্থান।

    See less
    • 1
  8. দুই বিঘা জমি শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই   আর সবই গেছে ঋণে। বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন,   এ জমি লইব কিনে।’ কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী,   ভূমির অন্ত নাই। চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর   মরিবার মতো ঠাঁই।’ শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে   সমান হইবে টানা– ওটা দিRead more

    দুই বিঘা জমি

    শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই   আর সবই গেছে ঋণে।
    বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন,   এ জমি লইব কিনে।’
    কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী,   ভূমির অন্ত নাই।
    চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর   মরিবার মতো ঠাঁই।’
    শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান
    পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে   সমান হইবে টানা–
    ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে   বক্ষে জুড়িয়া পাণি
    সজল চক্ষে, “করুণ বক্ষে   গরিবের ভিটেখানি।
    সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ   সে মাটি সোনার বাড়া,
    দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে   এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
    আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল   রহিল মৌনভাবে,
    কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে,  “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’

    পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে   বাহির হইনু পথে–
    করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি   মিথ্যা দেনার খতে।
    এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায়   আছে যার ভূরি ভূরি–
    রাজার হস্ত করে সমস্ত   কাঙালের ধন চুরি।
    মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান   রাখিবে না মোহগর্তে,
    তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল   দু বিঘার পরিবর্তে।
    সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে   হইয়া সাধুর শিষ্য
    কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!
    ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে   যখন যেখানে ভ্রমি
    তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে   সেই দুই বিঘা জমি।
    হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে   বছর পনেরো-ষোলো–
    একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে   বড়ই বাসনা হল।

    নমোনমো নম সুন্দরী মম   জননী বঙ্গভূমি!
    গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর,   জীবন জুড়ালে তুমি।
    অবারিত মাঠ, গগনললাট  চুমে তব পদধূলি,
    ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়   ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
    পল্লবঘন আম্রকানন   রাখালের খেলাগেহ,
    স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল–  নিশীথশীতল স্নেহ।
    বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ   জল লয়ে যায় ঘরে–
    মা বলিতে প্রাণ করে আনচান,   চোখে আসে জল ভরে।
    দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে   প্রবেশিনু নিজগ্রামে–
    কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি   রথতলা করি বামে,
    রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
    তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে   আমার বাড়ির কাছে।

    ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে, শতধিক্‌ তোরে,   নিলাজ কুলটা ভূমি!
    যখনি যাহার তখনি তাহার,   এই কি জননী তুমি!
    সে কি মনে হবে একদিন যবে   ছিলে দরিদ্রমাতা
    আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া   ফল ফুল শাক পাতা!
    আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে   ধরেছ বিলাসবেশ–
    পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
    আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি   গৃহহারা সুখহীন–
    তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী,   হাসিয়া কাটাস দিন!
    ধনীর আদরে গরব না ধরে !   এতই হয়েছ ভিন্ন
    কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ   সেদিনের কোনো চিহ্ন!
    কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি,   ক্ষুধাহরা সুধারাশি!
    যত হাসো আজ যত করো সাজ   ছিলে দেবী, হলে দাসী।

    বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া   চারি দিকে চেয়ে দেখি–
    প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে,   সেই আমগাছ একি!
    বসি তার তলে নয়নের জলে   শান্ত হইল ব্যথা,
    একে একে মনে উদিল স্মরণে   বালক-কালের কথা।
    সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে  রাত্রে নাহিকো ঘুম,
    অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি   আম কুড়াবার ধুম।
    সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,   পাঠশালা-পলায়ন–
    ভাবিলাম হায় আর কি কোথায়   ফিরে পাব সে জীবন!
    সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস   শাখা দুলাইয়া গাছে,
    দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল   আমার কোলের কাছে।
    ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে   আমারে চিনিল মাতা,
    স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে   বারেক ঠেকানু মাথা।

    হেনকালে হায় যমদূত-প্রায়  কোথা হতে এল মালী,
    ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে   পাড়িতে লাগিল গালি।
    কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে   দিয়েছি আমার সব–
    দুটি ফল তার করি অধিকার,   এত তারি কলরব!’
    চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে  কাঁধে তুলি লাঠিগাছ–
    বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে   ধরিতেছিলেন মাছ।
    শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন,   “মারিয়া করিব খুন!’
    বাবু যত বলে পারিষদ-দলে   বলে তার শতগুণ।
    আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম  ভিখ মাগি মহাশয়!’
    বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে   পাকা চোর অতিশয়।’
    আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি,   এই ছিল মোর ঘটে–
    তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,   আমি আজ চোর বটে!

    See less
    • 0
  9. চন্দ্রকরোজ্জ্বল (Chondro korojjol)- Moonlit অপ্রতিসাম্য (Oproti Shammo)- Asymmetry খুঞ্চিপোষ( Khunchi Poash) - Tray Cover মতিভ্রংশ-(Moti vrongsho)- Mistake স্বভাবশোভা( Shovab Shobha)- Natural Beauty বিলাসপ্রিয়(Bilash Priyo)- Luxurious স্বরমাধুর্য(Shoro madhurjo) -Melody নৃতত্ত্ব- ( Nri Totto) AnthroRead more

    চন্দ্রকরোজ্জ্বল (Chondro korojjol)- Moonlit

    অপ্রতিসাম্য (Oproti Shammo)- Asymmetry

    খুঞ্চিপোষ( Khunchi Poash) – Tray Cover

    মতিভ্রংশ-(Moti vrongsho)- Mistake

    স্বভাবশোভা( Shovab Shobha)- Natural Beauty

    বিলাসপ্রিয়(Bilash Priyo)- Luxurious

    স্বরমাধুর্য(Shoro madhurjo) -Melody

    নৃতত্ত্ব- ( Nri Totto) Anthropology

    মঞ্জু ভাষী- (Monju Bhashi) Sweet Spoken

    যুগ্মরাশি- (Jugmo Rashi) Even Number

    মনঃকষ্ট- (Mono Koshto) Sorrow

    বিশ্বব্রহ্মাণ্ড- (Bissho Brohmmando) Universe

    জীবনসঙ্গিনী- (Jibon Shongini) Wife

    গ্রহাণুপুঞ্জ (Grohanu punjo)-Asteroids

    তেজস্বিনী (Tejosshini)- High Spirited Woman

    তাণ্ডবলীলা-(Tandob leela) Massacre

    মধুরালাপ -(Modhuralap) Friendly conversation

    খুনসুটি -(Khun shuti) Childish quarrel

    মন্ত্রমুগ্ধ- (Montro mugdho) Charmed

    বিশুদ্ধতা (Bishuddhota)- Holiness

    রণ নৈপুণ্য -(Rono noipunno) Strategy

    See less
    • 0
  10.   আমার কুঁড়েঘরে হুমায়ুন আজাদ আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই ঘাসের শিখা নেই জলেরRead more

     

    আমার কুঁড়েঘরে

    হুমায়ুন আজাদ

    আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
    তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
    গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
    বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আর দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
    আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক

    আমার গ্রহ জুড়ে বিশাল মরুভূমি
    সবুজ পাতা নেই সোনালি লতা নেই শিশির কণা নেই
    ঘাসের শিখা নেই জলের রেখা নেই
    আমার মরুভূর গোপন কোনো কোণে একটু নীল হয়ে
    বাতাসে কেঁপে কেঁপে একটি শীষ আজ উঠুক

    আমার গাছে গাছে আজ একটি কুঁড়ি নেই
    একটি পাতা নেই শুকনো ডালে ডালে বায়ুর ঘষা লেগে
    আগুন জ্ব’লে ওঠে তীব্র লেলিহান
    বাকল ছিঁড়েফেড়ে দুপুর ভেঙেচুরে আকাশ লাল ক’রে
    আমার গাছে আজ একটা ছোট ফুল ফুটুক

    আমার এ-আকাশ ছড়িয়ে আছে ওই
    পাতটিনের মতো ধাতুর চোখ জ্বলে প্রখর জ্বালাময়
    সে-তাপে গ’লে পড়ে আমার দশদিক
    জল ও বায়ুহীন আমার আকাশের অদেখা দূর কোণে
    বৃষ্টিসকাতর একটু মেঘ আজ জমুক

    আমার কুঁড়েঘরে নেমেছে শীতকাল
    তুষার জ’মে আছে ঘরের মেঝে জুড়ে বরফ প’ড়ে আছে
    গভীর ঘন হয়ে পাশের নদী ভ’রে
    বরফ ঠেলে আর তুষার ভেঙে আজ দু-ঠোঁটে রোদ নিয়ে
    আমার কুঁড়েঘরে এ-ঘন শীতে কেউ আসুক।

    See less
    • 0