“স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন থেকেই চিন্তার জন্ম হয় আর চিন্তা জন্ম দেয় কাজের” “জীবন এক কঠিন খেলা, এই খেলায় জয় তখনই সম্ভব যখন তুমি ব্যক্তি হিসাবে জন্মগত ভাবে পাওয়া অধিকারকে ধারণ করবে” “আমরা শুধু সাফল্যের উপরই গড়ি না, আমরা অসফলতার উপরেও গড়ি” “প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা করতে হবে ব্যক্তিগত ভRead more
- “স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন থেকেই চিন্তার জন্ম হয় আর চিন্তা জন্ম দেয় কাজের”
- “জীবন এক কঠিন খেলা, এই খেলায় জয় তখনই সম্ভব যখন তুমি ব্যক্তি হিসাবে জন্মগত ভাবে পাওয়া অধিকারকে ধারণ করবে”
- “আমরা শুধু সাফল্যের উপরই গড়ি না, আমরা অসফলতার উপরেও গড়ি”
- “প্রশংসা করতে হবে প্রকাশ্যে কিন্তু সমালোচনা করতে হবে ব্যক্তিগত ভাবে”
- “জটিল কাজে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়, তাই সফলতার আনন্দ পাওয়ার জন্য মানুষের কাজ জটিল হওয়া উচিত”
- “একজন মহান শিক্ষক জ্ঞান,অদম্য ইচ্ছা আর করুনার দ্বারা নির্মিত হন”
- “ছোট লক্ষ্য রাখা একটি অপরাধ”
- “ওপরে আকাশের দিকে তাকান, আমরা একা নই”
- “সফলতার গল্পে কেবল একটা বার্তা থাকে কিন্তু ব্যর্থতার গল্পে সফল হওয়ার উপায় থাকে” –
Nibedita Paul
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসনRead more
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা
ভূমিকা:
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসন ব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন প্রধান এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হত । রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল আইন প্রণয়ন, ক্ষমতার বন্টন, শাসন পরিচালনা এবং সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের চুড়ান্ত এখতিয়ার। রাজা হর্ষবর্ধন (মৃত্যু ৬৪৫খ্রি.) এর মৃত্যুর পর ভারতবর্ষ রাজনৈতিক বিশৃংঙ্খলায় পতিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে । এ বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্যময় অবস্থা মুসলিম বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল । মুসলিম বিজয়ের সময় উত্তর-পশ্চিম ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এ সময় ভারতবর্ষের কেন্দ্রিয় শাসন ও সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। জাতিভেদ প্রথা হিন্দুসমাজের এঁক্য ও সংহতির মূলে প্রবল আঘাত হানে ।
ধর্মীয় ও প্রশাসনিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে হিন্দুধর্ম দেশের প্রধান ধর্ম হিসেবে পরিণত হয়। অধিকাংশ রাজাই ছিলেন হিন্দু এবং তারা সকলেই হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন । সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপ্রতিহত প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিদ্যমান ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারে ও শাসনকার্ধে তাদের অধিকার ছিল একচেটিয়া। বৈশ্য ও শুদ্রগণ ছিল নির্যাতিত, নিম্পেষিত এবং নিম্ন শ্রেণির হিন্দুরা ছিল অস্পৃশ্য । ব্রাহ্মণগণ ধর্মীয় ব্যাপারে সর্বেসর্বা ছিলেন। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে ধর্মীয় অসন্তোষ, অরাজকতা ও নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করে । সাম্প্রাদায়িক কলহ ও ধর্মীয় কোন্দল মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। প্রাক-মুসলিম যুগে বংশানুক্রমিকভাবে ভারতবর্ষের রাজা নিযুক্ত হতেন। রাজকুমারীগণও শাসনকার্ষে অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। রাজার হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা । তিনি আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। ন্যায় বিচারের উৎস এবং প্রধান সেনাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত পালন করতেন । তিনি রাজধর্মের আলোকে শাসনকার্ পরিচালনা করতেন । রাজকার্য পরিচালনার ব্যাপারে মন্ত্রীগণ রাজাকে পরামর্শ দিতেন এবং সাহায্য করতেন। তবে রাজা তাঁদের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য ছিলেন না। এ সময় সাম্রাজ্য বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রাদেশিক প্রধানকে বলা হত “উপারিক’ । তাঁর প্রধান কর্তব্য ছিল প্রদেশের শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করা রাজার আদেশকে কার্যকরী করা এবং প্রয়োজনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। প্রদেশগুলি জেলায় বিভক্ত ছিল। জেলাকে বলা হত “বিষয়’। জেলার শাসনকর্তা বিষয়পতি নামে অভিহিত হতেন । দেশের শাসন ব্যবস্থার সর্বনিমনস্তরে ছিল গ্রাম । গ্রামের শাসন ব্যবস্থা মোড়ল বা পঞ্চায়েত কর্তৃক সম্পাদিত হত।
অর্থনৈতিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রান্কালে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও ধর্বর্ষে পরিপূর্ণ ছিল ভারতবর্ষ। এ দেশের মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ । অভিজাত ও উঁচু শ্রেণির অধিকাংশ লোক বিলাসবহুল জীবন যাপন করত। প্রাচীন অর্থশান্ত্রবিদ কৌটিল্যের বিবরণ অনুযায়ী তিনটি মৃখ্য উৎস থেকে রাষ্ট্রের আয় ছিল: ক) ভূমি রাজস্ব, খ) সামন্ত প্রভূ ও জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত কর, এবং গ) আবগারী ও বাণিজ্য শুন্ক। পরবর্তীতে এদেশে শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে । গুজরাট ও বাংলা কাপার্স বন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্যেও উৎকর্ষ সাধিত হয়। বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হতে থাকে। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো ছিল বলে এদেশে সংস্কৃতি ও সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটেছিল । চীনা পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনা থেকে পঞ্চম শতাব্দির শুরুতে ভারতবর্ষের উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মগধের লোকেরা ধনী ও সমৃদ্ধশালী ছিল। পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর বর্ণনায় জানা যায় যে, সপ্তম শতাব্দিতেও ভারতবর্ষের অধিবাসীগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করত ও নির্বিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। এদেশের অতুল এশ্বর্ষে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশী বণিকগণ যেমন এদেশে বারবার এসেছেন আবার বিদেশী আক্রমণকারীগণও এ দেশ বার বার লুগ্ঠন করে তাদের কর্তৃত প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস চালিয়েছেন ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা
তৎকালীন হিন্দু সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র-এই চারটি বর্ণ স্তরে বিভক্ত ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপরিসীম প্রভাব বিস্তৃত ছিল। আর বৈশ্য ও শুদ্রদের অবস্থান ছিল সমাজের নিমস্তরে । শুদ্রদের সমাজে অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হত। জাতিভেদ প্রথা খুব কঠোর ছিল । জনসাধারণ স্ব স্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ করতে পছন্দ করত । ব্রাহ্মণরা শিক্ষা, ধর্মকর্ম, আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও কখনো কখনো যুদ্ধ বিগ্রহে নিয়োজিত থাকতো । ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ধ বিরহ, বৈশ্যরা ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং শুদ্রগণ কৃষিকাজ ও সাধারণ কাজ কর্ম করত। বর্ণপ্রথার কারণে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্ভ্বীতির অভাব ছিল । সমাজে বহু বিবাহ, সতীদাহ ও সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিল । কিন্তু বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল না। নারীরা অন্ত:পুরে জীবন যাপন করতেন। তাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্য ছিল না। দাসপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। এতদ্বস্েও অভিজাত শ্রেণির মেয়েরা উদার শিক্ষা লাভ করত। তারা শাসন ক্ষেত্রে ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করত । মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রভূত অগ্গতি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলা চর্চায় ভারতীয়গণ কৃতিতৃ অর্জন করেন। সে যুগে ভারতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । ভারতের স্বনামধন্য বল্পভী এবং বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও উদন্তপুর, বিক্রমশীলা, বারানসী প্রভৃতি স্থানে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল। মালব ও আজমীরে সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়েছিল । জ্যোর্তিবিদ্যা, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন ও সাহিত্য প্রভৃতি জ্ঞানের চর্চা করা হত। সে যুগে স্থাপত্য ও ভাক্কর্য শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল ।
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা:
আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও কনৌজ: মৌর্য বংশের শাসনামল থেকেই আফগানিস্তান ছিল ভারতের একটি অংশ । মুসলিম এঁতিহাসিকগণ এটিকে হিন্দুশাহী রাজ্য বলে অভিহিত করেন। সপ্তম শতাব্দিতে কর্কট রাজবংশীয় দুর্লভ বর্ধনের অধীনে কাশ্মীর ছিল উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। বিজেতা, বিদ্যোৎসাহী ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় ছিলেন কাশ্মীরের রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর । তিনি কনৌজ, কামরূপ, কলিঙ্গ ও গুজরাট জয় করেন বলে জানা যায়। কর্কট বংশের অপর একজন শাসক জয়গীড় গৌড় ও কনৌজের নৃপতিদের পরাজিত করেন। অষ্টম শতাব্দির প্রথম দিকে কনৌজ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হত। উত্তর-ভারতের অন্যতম পরাক্রমশালী রাজা যশোবর্মণ কনৌজের হত গৌরব ও আধিপত্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি গৌড় জয় করে এর রাজাকে হত্যা করেন এবং কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের সহায়তায় তিব্বত অভিযান করেন। তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন। কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য কর্তৃক তিনি পরাজিত ও নিহত হন। রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সিন্ধু ও মালব-দিল্লি ও আজমীর
সপ্তম শতকে সিন্ধু ছিল হ্র্ষবর্ধনের সাগ্রাজ্যভূক্ত। পরবর্তীতে “চাচ” নামক সিদ্ধুর জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী সিন্ধুতে স্বাধীন রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন । চাচের পুত্র রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ইমাদউদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ সালে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। প্রতিহার রাজপুতদের দ্বারা শাসিত মালব ছিল উত্তর- ভারতের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র । উজ্জয়িনী ছিল এ রাজ্যের রাজধানী । দ্বাদশ শতকে মুসলিম অভিযানের প্রান্কালে দিল্লি ও আজমীরে শক্তিশালী চৌহান বংশীয় রাজপুব্রগণ রাজত্র করত । এ বংশের শাসক বিশালদেব চৌহান প্রতিহর বংশের নিকট থেকে দিল্লি দখল করেন। রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে তারা একটি বিশাল রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
গুজরাট, আসাম ও নেপাল
প্রতীহার বংশের অধীনে অত:পর তাদের আধিপত্য ক্ষুন্ন করে চালক্য ও ভাগেলা বংশ পর্যায়ক্রমে গুজরাট শাসন করে। নবম শতাব্দিতে চান্দেলা বংশ বুন্দেলখন্ডে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শেষ রাজা গন্ড ১০১৯ হন। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব প্ান্তসীমায় অবস্থিত একটি রাজ্য হল আসাম । এটি হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়। এ সময় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার স্বাধীন নৃপতি। হ্র্ষবর্ধনের সমসাময়িক এই শাসকের মৃত্যুর পর বাংলায় মারাত্মক গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নেপাল সপ্তম শতাব্দিতে উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। নেপালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
See less