পূজারিনী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্যগ্রন্থ- কথা তারিখ - ১৮ আশ্বিন, ১৩০৬ (অবদান শতক) নৃপতি বিম্বিসার নমিয়া বুদ্ধে মাগিয়া লইলা পাদ-নখ-কণা তাঁর। স্থাপিয়া নিভৃত প্রাসাদ-কাননে তাহারি উপরে রচিলা যতনে অতি অপরূপ শিলাময় স্তূপ শিল্পশোভার সার । সন্ধ্যাবেলায় শুচিবাস পরি রাজবধূ রাজবালা আসিতেন, ফুল সাজায়Read more
পূজারিনী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ- কথা
তারিখ – ১৮ আশ্বিন, ১৩০৬
(অবদান শতক)
নৃপতি বিম্বিসার
নমিয়া বুদ্ধে মাগিয়া লইলা
পাদ-নখ-কণা তাঁর।
স্থাপিয়া নিভৃত প্রাসাদ-কাননে
তাহারি উপরে রচিলা যতনে
অতি অপরূপ শিলাময় স্তূপ
শিল্পশোভার সার ।
সন্ধ্যাবেলায় শুচিবাস পরি
রাজবধূ রাজবালা
আসিতেন, ফুল সাজায়ে ডালায়
স্তূপপদমূলে সোনার থালায়
আপনার হাতে দিতেন জ্বালায়ে
কনক প্রদীপমালা ।
অজাত শত্রু রাজা হোলো যবে
পিতার আসনে আসি
পিতার ধর্ম শোণিতের স্রোতে
মুছিয়া ফেলিল রাজপুরী হতে
সঁপিল যজ্ঞ-অনল-আলোতে
বৌদ্ধ-শাস্ত্ররাশি।
কহিলা ডাকিয়া অজাতশত্রু
রাজপুরনারী সবে,—
বেদ ব্রাহ্মণ রাজা ছাড়া আর
কিছু নাই ভবে পুজা করিবার
এই ক’টি কথা জেনো মনে সার—
ভুলিলে বিপদ হবে।
আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতাসমূহ
সেদিন শারদ-দিবা-অবসান,—
শ্ৰীমতী নামে সে দাসী
পুণ্যশীতল সলিলে নাহিয়া
পুষ্প প্রদীপ থালায় বাহিয়৷
রাজমহিষীর চরণে চাহিয়া
নীরবে দাঁড়াল আসি।
শিহরি সভয়ে মহিষী কহিলা—
এ কথা নাহি কি মনে
অজাতশত্রু করেছে রটনা—
স্তূপে যে করিবে অৰ্ঘ্যরচনা
শূলের উপরে মরিবে সে জনা
অথবা নির্বাসনে।
সেথা হতে ফিরি গেল চলি ধীরি
বধূ অমিতার ঘরে।
সমুখে রাখিয়া স্বর্ণ-মুকুর,
বাঁধিতেছিল সে দীর্ঘ চিকুর,
আঁকিতেছিল সে যত্নে সিঁদুর
সিথির সীমার পরে।
শ্ৰীমতীরে হেরি বাঁকি গেল রেখা
কাঁপি গেল তার হাত,-
কহিল অবোধ, কী সাহস-বলে
এনেছিস পূজা,এখনি যা চ’লে
কে কোথা দেখিবে, ঘটিবে তাহলে
বিষম বিপদপাত।
অস্ত-রবির রশ্মি-আভায়
খোলা জানালার ধারে
কুমারী শুক্লা বসি একাকিনী
পড়িতে নিরত কাব্য-কাহিনী,
চমকি উঠিল শুনি কিঙ্কিণী
চাহিয়া দেখিল দ্বারে।
শ্ৰীমতীরে হেরি পুঁথি রাখি ভূমে
দ্রুতপদে গেল কাছে।
কহে সাবধানে তার কানে কানে
রাজার আদেশ আজি কে না জানে,
এমনি ক’রে কি মরণের পানে
ছুটিয়া চলিতে আছে।
দ্বার হতে দ্বারে ফিরিল শ্রীমতী
লইয়া অৰ্ঘ্যথালি।
“হে পুরবাসিনী” সবে ডাকি কয়,—
“হয়েছে প্রভুর পূজার সময়”—
শুনি ঘরে ঘরে কেহ পায় ভয়
কেহ দেয় তারে গালি।
দিবসের শেষ আলোক মিলাল
নগর সৌধপরে॥
পথ জনহীন আঁধারে বিলীন,
কলকোলাহল হয়ে এল ক্ষীণ,
আরতিঘণ্টা ধ্বনিল প্রাচীন
রাজ-দেবালয় ঘরে।
শারদ নিশির স্বচ্ছ তিমিরে
জ্বলে অগণ্য তারা।
সিংহদুয়ারে বাজিল বিষাণ,
বন্দীরা ধরে সন্ধ্যার তান,
“মন্ত্রণাসভা হোলো সমাধান”
দ্বারী ফুকারিয়া বলে।
এমন সময়ে হেরিলা চমকি
প্রাসাদে প্রহরী যত—
রাজার বিজন কানন মাঝারে
স্তূপপদমূলে গহন আঁধারে
জ্বলিতেছে কেন, যেন সারে সারে
প্রদীপমালার মতো।
মুক্তকৃপাণে পুররক্ষক
তখনি ছুটিয়া আসি
শুধাল—“কে তুই ওরে দুর্মতি,
মরিবার তরে করিস আরতি।”
মধুর কণ্ঠে শুনিল “শ্ৰীমতী
আমি বুদ্ধের দাসী।”
সেদিন শুভ্ৰ পাষাণ-ফলকে
পড়িল রক্ত-লিখা।
সেদিন শারদ স্বচ্ছ নিশীথে
প্রাসাদ কাননে নীরবে নিভৃতে
স্তূপপদমূলে নিবিল চকিতে
শেষ আরতির শিখা৷
Pujarini Poem by Rabindranath Tagore:
Pujarini
Rabindranath Tagore
(Abadan-Shatak)
Nipriti bimbisar
Namiya buddhe magiya loila
Padan-khakana tar.
Stapiya nivrito prashad-kanane
Tahari upore racila jatane
Oti aparup shilamaya sthup
Shilposhovar sar.
Sandhya belay shuchibash pori
Rajbadhu Rajbala
Ashiten phul sajaye ḍalay,
Stupa-pada-mule sonar thalay
Apanar hathe diten jalaye
Kanak-pradip-mala.
Ajatsatru raja holo jabe,
Pitar ashone asi
Pitar̥ dharma shonither srote
Muchiya felilo rajpuri hote–
Shopilo jagga-anal-alote
Baud’dha-sastra-rashi.
Kahilo ḍakiya ajatsatru
Rajpuranari sobe,
“bed brahman raja chara ar
kichu na bhobe puja koribar
Ei kati katha jeno mone shar-
Bhulile bipad hobe. ‘
Sedin sharad-diba-abashan-
Srimoti name she dashi
Punyasitala salile nahiya,
Puṣhpa-pradip thalay bahiya,
Rajmahishir charane cahiya
Nirobe daralo asi.
Sihari sobhoye mahiṣhi kahila,
“e katha nahi ki mane,
Ajatsatru kareche ratana
Stupe je koribe arghya-rachana
Shuler upore maribe se jana
Othoba nirbashane? ‘
Setha hote phiri gelo choli dhire
Badhu amitar ghare.
Samukhe rakhiya sarnamukur
Badhitechilo se dirgha chikur,
Akitechilo se jatne sinḍur
Shimantashima-‘pre.
Nibedita Paul
মূল্যপ্রাপ্তি -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অবদানশতক অঘ্রাণে শীতের রাতে নিষ্ঠুর শিশিরঘাতেপদ্মগুলি গিয়াছে মরিয়া--সুদাস মালীর ঘরে কাননের সরোবরেএকটি ফুটেছে কী করিয়া।তুলি লয়ে বেচিবারে গেল সে প্রাসাদদ্বারে,মাগিল রাজার দরশন--হেনকালে হেরি ফুল আনন্দে পুলকাকুলপথিক কহিল একজন,"অকালের পদ্ম তব আমি এটি কিনি লব,কত মূল্য লইবেRead more
মূল্যপ্রাপ্তি
-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অবদানশতক
অঘ্রাণে শীতের রাতে নিষ্ঠুর শিশিরঘাতে
পদ্মগুলি গিয়াছে মরিয়া–
সুদাস মালীর ঘরে কাননের সরোবরে
একটি ফুটেছে কী করিয়া।
তুলি লয়ে বেচিবারে গেল সে প্রাসাদদ্বারে,
মাগিল রাজার দরশন–
হেনকালে হেরি ফুল আনন্দে পুলকাকুল
পথিক কহিল একজন,
“অকালের পদ্ম তব আমি এটি কিনি লব,
কত মূল্য লইবে ইহার?
বুদ্ধ ভগবান আজ এসেছেন পুরমাঝ
তাঁর পায়ে দিব উপহার।
‘মালী কহে, “এক মাষা স্বর্ণ পাব মনে আশা।’
পথিক চাহিল তাহা দিতে–
হেনকালে সমারোহে বহু পূজা-অর্ঘ্য বহে
নৃপতি বাহিরে আচম্বিতে।
রাজেন্দ্র প্রসেনজিৎ উচ্চারি মঙ্গলগীত
চলেছেন বুদ্ধদরশনে–
হেরি অকালের ফুল শুধালেন, “কত মূল?
কিনি দিব প্রভুর চরণে।
‘মালী কহে, “হে রাজন্, স্বর্ণমাষা দিয়ে পণ
কিনিছেন এই মহাশয়।’
“দশ মাষা দিব আমি’ কহিলা ধরণীস্বামী,
“বিশ মাষা দিব’ পান্থকয়।
দোঁহে কহে “দেহো দেহো’, হার নাহি মানে কেহ–
মূল্য বেড়ে ওঠে ক্রমাগত।
মালী ভাবে যাঁর তরে এ দোঁহে বিবাদ করে
তাঁরে দিলে আরো পাব কত!
কহিল সে করজোড়ে, “দয়া করে ক্ষম মোরে–
এ ফুল বেচিতে নাহি মন।
‘এত বলি ছুটিল সে যেথা রয়েছেন বসে
বুদ্ধদেব উজলি কানন।
বসেছেন পদ্মাসনে প্রসন্ন প্রশান্ত মনে,
নিরঞ্জন আনন্দমূরতি।
দৃষ্টি হতে শান্তি ঝরে, স্ফুরিছে অধর-‘পরে
করুণার সুধাহাস্যজ্যোতি।
সুদাস রহিল চাহি– নয়নে নিমেষ নাহি,
মুখে তার বাক্য নাহি সরে।
সহসা ভূতলে পড়ি পদ্মটি রাখিল ধরি
প্রভুর চরণপদ্ম-‘পরে।
বরষি অমৃতরাশি বুদ্ধ শুধালেন হাসি,
‘কহো বৎস, কী তব প্রার্থনা।
‘ব্যাকুল সুদাস কহে, “প্রভু, আর কিছু নহে,
চরণের ধূলি এক কণা।’
Mullyoprapti
Rabindranath Tagore
Oghrane shiter rate nisthur raate
See lessPodmoguli giyache moria
Sudash malir ghoreKanoner sorobore
Ekti futeche ki koria
Tuli loye bechibare gelo se proshaddhare
magilo Rajar dorshon.
henokale heri ful Aanonde pulkakul
Pothik kohilo ekjon,
‘okaler podmo tobo ami eti kine lobo
Koto mullyo hoibe ihar
Budha Bhogoban aaj esechen puromajh
Tar paye dibo upohar.
mali kohe, “ek masha shorno pabe mone asha”
Pothik chahilo taha dite
Henokale somaruhe bahu puja-orgyo bohe
Nripoti bahire aachombito
Rajendra Prosenjit ucchari mongolgeet
Cholechen budha dorshone-
Heri okaler ful shudhalen, “koto mul”?
Kini dibo prabhur chorone.
Mali kohe, “he rajon shornomasha diye pon
Kinichen ei mohashoy.
“Dash masha dibo aami” kohila dhoronishami,
“bish masha dibo” pantokoy.
Duhe kohe “deho deho’, E duhe bibad kore
Mullyo bere uthe kromagata
Mali bhabe jar tore e duhe bibad kore
tare dile aaro pabo koto!
Kohilo sae korojure, “doya kore khomo more”
E ful bechite nahi mono’
Eto bole chutilo she jetha royechen boshe
Buddhadeb ujli kanan.
Boshechen poddashone proshonno proshanto mone,
Nironjon Anandomurti
dristi hote santi jhore, sfuriche odhor-pore
Karunar sudha-hashyo-jyoti
Sudash rohilo chahi- noyone nimesh nahi
Mukhe tar bakyo nahi shore.
Sohosha bhutole pori poddoti rakhilo dhori
Pabhur choronpoddo pore
Baroshi omrito rashi buddha sudhalen hashi
“koho botsho ki taba prarthona”.
Byakul sudash kohe, “prabhu ar kichu nohe,
Choroner dhuli ek kona’.