1. লীলা মজুমদার বাংলা সাহিত্যের এক স্বনামধন্য লেখিকা হলেন লীলা মজুমদার। প্রমদা রঞ্জন রায় ও সুরমা দেবীর একমাত্র সন্তান। লীলা রায় বিখ্যাত দন্তচিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদার এর সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিলংয়ে। তার জন্ম অবশ্য কলকাতার গড়পার রোড এর বাড়িতে হয়। প্রমদাRead more

    লীলা মজুমদার

    বাংলা সাহিত্যের এক স্বনামধন্য লেখিকা হলেন লীলা মজুমদার। প্রমদা রঞ্জন রায় ও সুরমা দেবীর একমাত্র সন্তান। লীলা রায় বিখ্যাত দন্তচিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদার এর সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিলংয়ে। তার জন্ম অবশ্য কলকাতার গড়পার রোড এর বাড়িতে হয়। প্রমদারঞ্জন রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায় এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা, এবং সুরমা দেবী হরেন উপেন্দ্রকিশোরের পালিত কন্যা।

    তার জন্ম ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ও মৃত্যু ২০০৭ সালের ৫ই এপ্রিল। তার প্রাথমিক শিক্ষা লরেটো কনভেন্ট স্কুল, শিলং থেকে হয় তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন।

    তার প্রথম গল্প “লক্ষ্মীছাড়া” ১৯২২ সালে “সন্দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হল- টংলিং (উপন্যাস), পদিপিসির বর্মীবাক্স, হলদে পাখির পালক, বাতাস বাড়ি, বিড়ালের বই, গূপের গুপ্তধন, গুপির গুপ্ত খাতা, মাকু গামা, পাকদন্ডী, সুকুমার ইত্যাদি। তার লেখা ‘মনের কথা’ সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

    তার কর্ম জীবনের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে দার্জিলিংয়ের মহারানি গার্লস স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে। পরে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে একবছর শান্তিনিকেতনে ও শিক্ষা দান করেন। এরমধ্যে তিনি আশুতোষ কলেজের মহিলা বিভাগীয় যোগদান করেছিলেন। কিন্তু লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে বেশি নিয়োজিত রেখেছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন।

    তার প্রথম গল্পগ্রন্থের ইলাস্ট্রেশন (illustration) উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব সুকুমার নিলে তিনি লেখা দেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তার আজীবন যোগ ছিল। ১৯৬৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার প্রকাশনায় সহ-সম্পাদিকা রূপে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

    তার সর্ব মোট ১২৫ টি বই প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে একটি গল্প সংকলন, পাঁচটি সহ লেখিকা রূপে, নয়টি অনূদিত গ্রন্থ এবং ১৯ টি সম্পাদিত গ্রন্থ। তার প্রথম গ্রন্থ বদ্যি নাথ এর বাড়ি (১৯৩৯) দ্বিতীয় প্রকাশনা ‘দিনদুপুরে’ (১৯৪৮)। তিনি শিশু সাহিত্যের পাশাপাশি, গোয়েন্দা গল্প, ভূতের গল্প লিখেছেন অনেকগুলি।

    তার আত্মজীবনী মূলক রচনা ‘পাকদন্ডী’ তে শিলং থাকাকালীন শৈশবের স্মৃতি থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজের স্মৃতি কে উল্লেখ করেছেন বেশ সুন্দরভাবে। তিনি বাংলাতে অনুবাদ করেছেন- জনাথন সুইফট এর ‘গালিভার ট্রাভেলস’ এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী’। লেখালেখির পাশাপাশি মিডিয়াতে তার কাজের অনেক অনুভব রয়েছে। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে মহিলাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তিনি পরিচালনা করতেন। ১৯৭২ সালে তার ‘পদিপিসির বর্মী বাক্স’ চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়।

    ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প মনিমালা, বাঘের চোখ, টাকা গাছ, লাল-নীল দেশ্লাই, বাঁশের ফুল, ময়না, শালিক, আগুনি বেগুনি, টিপুর ওপর টিপুনি, শিবুর ডায়েরি, ফেরারী, এই যে দেখা, শ্রীমতি, পেশা বদল এসব অনেক বিখ্যাত।

    লীলা মজুমদার তার স্বনামধন্য লেখালেখির জন্য অনেক সময় অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তারমধ্যে আনন্দ পুরস্কার, ভারত সরকারের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার এইগুলি উল্লেখিত।

    বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার অবদান সমুদ্র তুল্য‌। তিনি তার লেখার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক উজ্জল স্থানে নিয়োজিত করেছেন।

    See less
  2. লীলা মজুমদার বাংলা সাহিত্যের এক স্বনামধন্য লেখিকা হলেন লীলা মজুমদার। প্রমদা রঞ্জন রায় ও সুরমা দেবীর একমাত্র সন্তান। লীলা রায় বিখ্যাত দন্তচিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদার এর সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিলংয়ে। তার জন্ম অবশ্য কলকাতার গড়পার রোড এর বাড়িতে হয়। প্রমদাRead more

    লীলা মজুমদার

    বাংলা সাহিত্যের এক স্বনামধন্য লেখিকা হলেন লীলা মজুমদার। প্রমদা রঞ্জন রায় ও সুরমা দেবীর একমাত্র সন্তান। লীলা রায় বিখ্যাত দন্তচিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদার এর সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিলংয়ে। তার জন্ম অবশ্য কলকাতার গড়পার রোড এর বাড়িতে হয়। প্রমদারঞ্জন রায় হলেন উপেন্দ্রকিশোর রায় এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা, এবং সুরমা দেবী হরেন উপেন্দ্রকিশোরের পালিত কন্যা।

    তার জন্ম ১৯০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ও মৃত্যু ২০০৭ সালের ৫ই এপ্রিল। তার প্রাথমিক শিক্ষা লরেটো কনভেন্ট স্কুল, শিলং থেকে হয় তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন।

    তার প্রথম গল্প “লক্ষ্মীছাড়া” ১৯২২ সালে “সন্দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হল- টংলিং (উপন্যাস), পদিপিসির বর্মীবাক্স, হলদে পাখির পালক, বাতাস বাড়ি, বিড়ালের বই, গূপের গুপ্তধন, গুপির গুপ্ত খাতা, মাকু গামা, পাকদন্ডী, সুকুমার ইত্যাদি। তার লেখা ‘মনের কথা’ সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

    তার কর্ম জীবনের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে দার্জিলিংয়ের মহারানি গার্লস স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে। পরে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে একবছর শান্তিনিকেতনে ও শিক্ষা দান করেন। এরমধ্যে তিনি আশুতোষ কলেজের মহিলা বিভাগীয় যোগদান করেছিলেন। কিন্তু লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে বেশি নিয়োজিত রেখেছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন।

    তার প্রথম গল্পগ্রন্থের ইলাস্ট্রেশন (illustration) উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব সুকুমার নিলে তিনি লেখা দেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তার আজীবন যোগ ছিল। ১৯৬৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার প্রকাশনায় সহ-সম্পাদিকা রূপে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।

    তার সর্ব মোট ১২৫ টি বই প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে একটি গল্প সংকলন, পাঁচটি সহ লেখিকা রূপে, নয়টি অনূদিত গ্রন্থ এবং ১৯ টি সম্পাদিত গ্রন্থ। তার প্রথম গ্রন্থ বদ্যি নাথ এর বাড়ি (১৯৩৯) দ্বিতীয় প্রকাশনা ‘দিনদুপুরে’ (১৯৪৮)। তিনি শিশু সাহিত্যের পাশাপাশি, গোয়েন্দা গল্প, ভূতের গল্প লিখেছেন অনেকগুলি।

    তার আত্মজীবনী মূলক রচনা ‘পাকদন্ডী’ তে শিলং থাকাকালীন শৈশবের স্মৃতি থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজের স্মৃতি কে উল্লেখ করেছেন বেশ সুন্দরভাবে। তিনি বাংলাতে অনুবাদ করেছেন- জনাথন সুইফট এর ‘গালিভার ট্রাভেলস’ এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী’। লেখালেখির পাশাপাশি মিডিয়াতে তার কাজের অনেক অনুভব রয়েছে। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে মহিলাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তিনি পরিচালনা করতেন। ১৯৭২ সালে তার ‘পদিপিসির বর্মী বাক্স’ চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়।

    ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প মনিমালা, বাঘের চোখ, টাকা গাছ, লাল-নীল দেশ্লাই, বাঁশের ফুল, ময়না, শালিক, আগুনি বেগুনি, টিপুর ওপর টিপুনি, শিবুর ডায়েরি, ফেরারী, এই যে দেখা, শ্রীমতি, পেশা বদল এসব অনেক বিখ্যাত।

    লীলা মজুমদার তার স্বনামধন্য লেখালেখির জন্য অনেক সময় অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তারমধ্যে আনন্দ পুরস্কার, ভারত সরকারের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার এইগুলি উল্লেখিত।

    বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার অবদান সমুদ্র তুল্য‌। তিনি তার লেখার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক উজ্জল স্থানে নিয়োজিত করেছেন।

    See less
  3. কবর (জসীম উদ্দীন) এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক। এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা, সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা। সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়নRead more

    কবর (জসীম উদ্দীন)

    এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
    তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
    এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
    পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
    এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
    সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
    সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,
    লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
    যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,
    এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।

    এমন করিয়া জানিনা কখন জীবনের সাথে মিশে,
    ছোট-খাট তার হাসি-ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
    বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা,
    আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
    শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু পয়সা করি দেড়ী,
    পুঁতির মালা এক ছড়া নিতে কখনও হতনা দেরি।
    দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
    সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে !
    হেস না–হেস না–শোন দাদু সেই তামাক মাজন পেয়ে,
    দাদী যে তোমার কত খুশি হোত দেখিতিস যদি চেয়ে।
    নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, ‘এতদিন পরে এলে,
    পথপানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।’

    আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
    কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ্ দাদু, ‘আয় খোদা, দয়াময়,
    আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

    তার পরে এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
    যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
    শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি
    গনিয়া গনিয়া ভুল করে গনি সারা দিনরাত জাগি।
    এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
    গাড়িয়া দিয়াছি কতসোনা মুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
    মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে লাগায়ে বুক,
    আয় আয় দাদু, গলাগলি ধরে কেঁদে যদি হয় সুখ।

    এইখানে তোর বাপ্জী ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
    কাঁদছিস তুই ? কি করিব দাদু, পরান যে মানে না !
    সেই ফাল্গুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
    বা-জান, আমার শরীর আজিকে কি যে করে থাকি থাকি।
    ঘরের মেঝেতে সপ্ টি বিছায়ে কহিলাম, বাছা শোও,
    সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ ?
    গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
    তুমি যে কহিলা–বা-জানেরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
    তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
    সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে।
    তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু হাতে জড়ায়ে ধরি,
    তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিন-মান ভরি।
    গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,
    ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।
    পথ দিয়ে যেতে গেঁয়ো-পথিকেরা মুছিয়া যাইতো চোখ,
    চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
    আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
    হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
    গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
    চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।
    উদাসিনী সেই পল্লীবালার নয়নের জল বুঝি,
    কবর দেশের আন্ধার ঘরে পথ পেয়েছিল খুঁজি।
    তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
    হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বীষের তাজ।
    মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, ‘বাছারে যাই,
    বড় ব্যথা রল দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
    দুলাল আমার, দাদু রে আমার, লক্ষ্মী আমার ওরে,
    কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।’
    ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গণ্ড ভিজায়ে নয়ন-জলে,
    কি জানি আশিস্ করি গেল তোরে মরণ-ব্যথার ছলে।

    ক্ষণ পরে মোরে ডাকিয়া কহিল, ‘আমার কবর গায়,
    স্বামীর মাথার ‘মাথাল’ খানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।’
    সেই সে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
    পরানের ব্যথা মরে না কো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
    জোড়-মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু-ছায়,
    গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়ে।
    জোনাকি মেয়েরা সারা রাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
    ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নুপুর কত যেন বেসে ভাল।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’রহমান খোদা, আয়,
    ভেস্ত নাজেল করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়ে।’

    এইখানে তোর বু-জীর কবর, পরীর মতন মেয়ে,
    বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের ঘরে বনিয়াদী ঘর পেয়ে।
    এত আদরের বু-জীরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে।
    হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
    খবরের পর খবর পাঠাত, ‘দাদু যেন কাল এসে,
    দু দিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
    শ্বশুর তাহার কসাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে,
    অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
    সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে, ফোটে না সেথায় হাসি,
    কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিত ভাসি।
    বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
    কে জানিত হায়, তাহারও পরানে বাজিবে মরণ-বীণ!
    কি জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
    এইখানে তারে কবর দিয়াছি দেখে যাও দাদু ধীরে।

    ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেউ ভাল,
    কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
    বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
    পাতায় পাতায় কেঁপে ওঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’আয় খোদা দয়াময়!।
    আমার বু-জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

    হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু সাত বছরের মেয়ে,
    রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
    ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কি জানি ভাবিত সদা,
    অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা।
    ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
    তোমার দাদীর মুখখানি মোর হৃদয়ে উঠিত ছেয়ে।
    বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
    রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

    একদিন গেনু গজ্নার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
    ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
    সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে,
    কি জেনি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গ্যাছে।
    আপন হাতেতে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি–
    দাদু ধর–ধর–বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
    এইখানে এই কবরের পাশে, আরও কাছে আয় দাদু,
    কথা ক’সনাক, জাগিয়া উঠিবে ঘুম-ভোলা মোর যাদু।
    আস্তে আস্তে খুড়ে দেখ্ দেখি কঠিন মাটির তলে,
    দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে।

    ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে,
    এমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
    মজীদ হইছে আজান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,
    মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দুর!
    জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর্, ‘আয় খোদা, রহমান,
    ভেস্ত নাজেল করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত প্রাণ!

    See less
  4. কবর এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে, তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে। এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ, পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক। এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা, সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা। সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি, লাঙ্গল লইRead more

    কবর

    এইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
    তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
    এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
    পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
    এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
    সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
    সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,
    লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
    যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,
    এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।

    এমন করিয়া জানিনা কখন জীবনের সাথে মিশে,
    ছোট-খাট তার হাসি-ব্যথা মাঝে হারা হয়ে গেনু দিশে।
    বাপের বাড়িতে যাইবার কালে কহিত ধরিয়া পা,
    আমারে দেখিতে যাইও কিন্তু উজান-তলীর গাঁ।
    শাপলার হাটে তরমুজ বেচি দু পয়সা করি দেড়ী,
    পুঁতির মালা এক ছড়া নিতে কখনও হতনা দেরি।
    দেড় পয়সার তামাক এবং মাজন লইয়া গাঁটে,
    সন্ধ্যাবেলায় ছুটে যাইতাম শ্বশুর বাড়ির বাটে !
    হেস না–হেস না–শোন দাদু সেই তামাক মাজন পেয়ে,
    দাদী যে তোমার কত খুশি হোত দেখিতিস যদি চেয়ে।
    নথ নেড়ে নেড়ে কহিত হাসিয়া, ‘এতদিন পরে এলে,
    পথপানে চেয়ে আমি যে হেথায় কেঁদে মরি আঁখি জলে।’

    আমারে ছাড়িয়া এত ব্যথা যার কেমন করিয়া হায়,
    কবর দেশেতে ঘুমায়ে রয়েছে নিঝ্ঝুম নিরালায়।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ্ দাদু, ‘আয় খোদা, দয়াময়,
    আমার দাদীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

    তার পরে এই শুন্য জীবনে যত কাটিয়াছি পাড়ি,
    যেখানে যাহারে জড়ায়ে ধরেছি সেই চলে গেছে ছাড়ি।
    শত কাফনের শত কবরের অঙ্ক হৃদয়ে আঁকি
    গনিয়া গনিয়া ভুল করে গনি সারা দিনরাত জাগি।
    এই মোর হাতে কোদাল ধরিয়া কঠিন মাটির তলে,
    গাড়িয়া দিয়াছি কতসোনা মুখ নাওয়ায়ে চোখের জলে।
    মাটিরে আমি যে বড় ভালবাসি, মাটিতে লাগায়ে বুক,
    আয় আয় দাদু, গলাগলি ধরে কেঁদে যদি হয় সুখ।

    এইখানে তোর বাপ্জী ঘুমায়, এইখানে তোর মা,
    কাঁদছিস তুই ? কি করিব দাদু, পরান যে মানে না !
    সেই ফাল্গুনে বাপ তোর এসে কহিল আমারে ডাকি,
    বা-জান, আমার শরীর আজিকে কি যে করে থাকি থাকি।
    ঘরের মেঝেতে সপ্ টি বিছায়ে কহিলাম, বাছা শোও,
    সেই শোওয়া তার শেষ শোওয়া হবে তাহা কি জানিত কেউ ?
    গোরের কাফনে সাজায়ে তাহারে চলিলাম যবে বয়ে,
    তুমি যে কহিলা–বা-জানেরে মোর কোথা যাও দাদু লয়ে?
    তোমার কথার উত্তর দিতে কথা থেমে গেল মুখে,
    সারা দুনিয়ার যত ভাষা আছে কেঁদে ফিরে গেল দুখে।
    তোমার বাপের লাঙল-জোয়াল দু হাতে জড়ায়ে ধরি,
    তোমার মায়ে যে কতই কাঁদিত সারা দিন-মান ভরি।
    গাছের পাতারা সেই বেদনায় বুনো পথে যেত ঝরে,
    ফাল্গুনী হাওয়া কাঁদিয়া উঠিত শুনো মাঠখানি ভরে।
    পথ দিয়ে যেতে গেঁয়ো-পথিকেরা মুছিয়া যাইতো চোখ,
    চরণে তাদের কাঁদিয়া উঠিত গাছের পাতার শোক।
    আথালে দুইটি জোয়ান বলদ সারা মাঠ পানে চাহি,
    হাম্বা রবেতে বুক ফাটাইত নয়নের জলে নাহি।
    গলাটি তাদের জড়ায়ে ধরিয়া কাঁদিত তোমার মা,
    চোখের জলের গহীন সায়রে ডুবায়ে সকল গাঁ।
    উদাসিনী সেই পল্লীবালার নয়নের জল বুঝি,
    কবর দেশের আন্ধার ঘরে পথ পেয়েছিল খুঁজি।
    তাই জীবনের প্রথম বেলায় ডাকিয়া আনিল সাঁঝ,
    হায় অভাগিনী আপনি পরিল মরণ-বীষের তাজ।
    মরিবার কালে তোরে কাছে ডেকে কহিল, ‘বাছারে যাই,
    বড় ব্যথা রল দুনিয়াতে তোর মা বলিতে কেহ নাই;
    দুলাল আমার, দাদু রে আমার, লক্ষ্মী আমার ওরে,
    কত ব্যথা মোর আমি জানি বাছা ছাড়িয়া যাইতে তোরে।’
    ফোঁটায় ফোঁটায় দুইটি গণ্ড ভিজায়ে নয়ন-জলে,
    কি জানি আশিস্ করি গেল তোরে মরণ-ব্যথার ছলে।

    ক্ষণ পরে মোরে ডাকিয়া কহিল, ‘আমার কবর গায়,
    স্বামীর মাথার ‘মাথাল’ খানিরে ঝুলাইয়া দিও বায়।’
    সেই সে মাথাল পচিয়া গলিয়া মিশেছে মাটির সনে,
    পরানের ব্যথা মরে না কো সে যে কেঁদে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
    জোড়-মানিকেরা ঘুমায়ে রয়েছে এইখানে তরু-ছায়,
    গাছের শাখারা স্নেহের মায়ায় লুটায়ে পড়েছে গায়ে।
    জোনাকি মেয়েরা সারা রাত জাগি জ্বালাইয়া দেয় আলো,
    ঝিঁঝিরা বাজায় ঘুমের নুপুর কত যেন বেসে ভাল।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’রহমান খোদা, আয়,
    ভেস্ত নাজেল করিও আজিকে আমার বাপ ও মায়ে।’

    এইখানে তোর বু-জীর কবর, পরীর মতন মেয়ে,
    বিয়ে দিয়েছিনু কাজীদের ঘরে বনিয়াদী ঘর পেয়ে।
    এত আদরের বু-জীরে তাহারা ভালবাসিত না মোটে।
    হাতেতে যদিও না মারিত তারে শত যে মারিত ঠোঁটে।
    খবরের পর খবর পাঠাত, ‘দাদু যেন কাল এসে,
    দু দিনের তরে নিয়ে যায় মোরে বাপের বাড়ির দেশে।
    শ্বশুর তাহার কসাই চামার, চাহে কি ছাড়িয়া দিতে,
    অনেক কহিয়া সেবার তাহারে আনিলাম এক শীতে।
    সেই সোনামুখ মলিন হয়েছে, ফোটে না সেথায় হাসি,
    কালো দুটি চোখে রহিয়া রহিয়া অশ্রু উঠিত ভাসি।
    বাপের মায়ের কবরে বসিয়া কাঁদিয়া কাটাত দিন,
    কে জানিত হায়, তাহারও পরানে বাজিবে মরণ-বীণ!
    কি জানি পচানো জ্বরেতে ধরিল আর উঠিল না ফিরে,
    এইখানে তারে কবর দিয়াছি দেখে যাও দাদু ধীরে।

    ব্যথাতুরা সেই হতভাগিনীরে বাসে নাই কেউ ভাল,
    কবরে তাহার জড়ায়ে রয়েছে বুনো ঘাসগুলি কালো।
    বনের ঘুঘুরা উহু উহু করি কেঁদে মরে রাতদিন,
    পাতায় পাতায় কেঁপে ওঠে যেন তারি বেদনার বীণ।
    হাত জোড় করে দোয়া মাঙ দাদু,’আয় খোদা দয়াময়!।
    আমার বু-জীর তরেতে যেন গো ভেস্ত নাজেল হয়।’

    হেথায় ঘুমায় তোর ছোট ফুপু সাত বছরের মেয়ে,
    রামধনু বুঝি নেমে এসেছিল ভেস্তের দ্বার বেয়ে।
    ছোট বয়সেই মায়েরে হারায়ে কি জানি ভাবিত সদা,
    অতটুকু বুকে লুকাইয়াছিল কে জানিত কত ব্যথা।
    ফুলের মতন মুখখানি তার দেখিতাম যবে চেয়ে,
    তোমার দাদীর মুখখানি মোর হৃদয়ে উঠিত ছেয়ে।
    বুকেতে তাহারে জড়ায়ে ধরিয়া কেঁদে হইতাম সারা,
    রঙিন সাঁঝেরে ধুয়ে মুছে দিত মোদের চোখের ধারা।

    একদিন গেনু গজ্নার হাটে তাহারে রাখিয়া ঘরে,
    ফিরে এসে দেখি সোনার প্রতিমা লুটায় পথের পরে।
    সেই সোনামুখ গোলগাল হাত সকলি তেমন আছে,
    কি জেনি সাপের দংশন পেয়ে মা আমার চলে গ্যাছে।
    আপন হাতেতে সোনার প্রতিমা কবরে দিলাম গাড়ি–
    দাদু ধর–ধর–বুক ফেটে যায়, আর বুঝি নাহি পারি।
    এইখানে এই কবরের পাশে, আরও কাছে আয় দাদু,
    কথা ক’সনাক, জাগিয়া উঠিবে ঘুম-ভোলা মোর যাদু।
    আস্তে আস্তে খুড়ে দেখ্ দেখি কঠিন মাটির তলে,
    দীন দুনিয়ার ভেস্ত আমার ঘুমায় কিসের ছলে।

    ওই দূর বনে সন্ধ্যা নামিছে ঘন আবিরের রাগে,
    এমনি করিয়া লুটায়ে পড়িতে বড় সাধ আজ জাগে।
    মজীদ হইছে আজান হাঁকিছে বড় সকরুণ সুর,
    মোর জীবনের রোজকেয়ামত ভাবিতেছি কত দুর!
    জোড়হাতে দাদু মোনাজাত কর্, ‘আয় খোদা, রহমান,
    ভেস্ত নাজেল করিও সকল মৃত্যু-ব্যথিত প্রাণ!

    See less
  5. পালের নাও (জসীমউদ্দীন) পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও - ঘরে আছে ছোট বোনটি তারে নিয়ে যাও। কপিল-সারি গাইয়ের দুধ যেয়ো পান করে' কৌটা ভরি সিঁদুর দেব কপালটি ভরে'! গুয়ার গায়ে ফুল চন্দন দেব ঘসে' ঘসে', মামা-বাড়ীর বলব কথা শুনো বসে বসে! কে যাওরে পাল ভরে' কোন্ দেশে ঘর পাছা নায়ে বসে আছে কোন্ সওদাগর?Read more

    পালের নাও (জসীমউদ্দীন)
    পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও –
    ঘরে আছে ছোট বোনটি তারে নিয়ে যাও।
    কপিল-সারি গাইয়ের দুধ যেয়ো পান করে’
    কৌটা ভরি সিঁদুর দেব কপালটি ভরে’!
    গুয়ার গায়ে ফুল চন্দন দেব ঘসে’ ঘসে’,
    মামা-বাড়ীর বলব কথা শুনো বসে বসে!

    কে যাওরে পাল ভরে’ কোন্ দেশে ঘর
    পাছা নায়ে বসে আছে কোন্ সওদাগর?
    কোন্ দেশে কোন্ গাঁয়ে হিরে ফুল ঝরে।
    কোন্ দেশে হিরামন পাখী বাস করে!
    কোন্ দেশে রাজ-কনে খালি ঘুম যায়,
    ঘুম যায় আর হাসে হিম্-সিম্ বায়।
    সেই দেশে যাব আমি কিছু নাহি চাই,
    ছোট মোর বোনটিরে যদি সাথে পাই!

    পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও,
    তোমার যে পাল নাচে ফুলঝুরি বাও।
    তোমার যে না’র ছই আবের ঢাকনী
    ঝলমল জ্বলিতেছে সোনার বাঁধনী।
    সোনার না বাঁধন্ রে তার গোড়ে গোড়ে
    হিরামন পঙ্খীর লাল পাখা ওড়ে।
    তারপর ওড়েরে ঝালরের ছাতি,
    ঝলমল জলে জ্বলে রতনের বাতি।
    এই নাও বেয়ে যায় কোন্ সদাগর,
    কয়ে যাও – কয়ে যাও কোন্ দেশে ঘর?

    পালের নাও, পালের নাও, পান খেয়ে যাও,
    ঘরে আছে ছোট বোন্ তারে নিয়ে যাও, –
    চেনা গাঙে সাত ধার করে গলাগলি,
    সেথা বাস কেহেলার – লোকে গেছে বলি।
    পারাপার দুই নদী – মাঝে বালুচর
    সেইখানে বাস করে চাঁদ সওদাগর।

    এ পারে ধুতুমের বাসা ও পারেতে টিয়া –
    সেখানেতে যেও না রে নাও খানি নিয়া।
    ভাইটাল গাঙ্ দোলে ভাটা গেঁয়ো সোতে,
    হবে নারে নাও বাওয়া সেথা কোন মতে।

    See less
  6. নিমন্ত্রণ (জসীমউদ্দীন) তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়; মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি, মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়, তুমি যাবে ভাই - যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়, ছোট গাঁওখানি - ছোট নদী চলে, তারি এRead more

    নিমন্ত্রণ (জসীমউদ্দীন)
    তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
    গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
    মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
    মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
    মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
    তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

    ছোট গাঁওখানি – ছোট নদী চলে, তারি একপাশ দিয়া,
    কালো জল তার মাজিয়াছে কেবা কাকের চক্ষু নিয়া;
    ঘাটের কিনারে আছে বাঁধা তরী
    পারের খবর টানাটানি করি;
    বিনাসুতি মালা গাথিছে নিতুই এপার ওপার দিয়া;
    বাঁকা ফাঁদ পেতে টানিয়া আনিছে দুইটি তটের হিয়া।

    তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, ছোট সে কাজল গাঁয়,
    গলাগলি ধরি কলা বন; যেন ঘিরিয়া রয়েছে তায়।
    সরু পথ খানি সুতায় বাঁধিয়া
    দূর পথিকেরে আনিছে টানিয়া,
    বনের হাওয়ায়, গাছের ছায়ায়, ধরিয়া রাখিবে তায়,
    বুকখানি তার ভরে দেবে বুঝি, মায়া আর মমতায়!

    তুমি যাবে ভাই যাবে মোর সাথে – নরম ঘাসের পাতে
    চম্বন রাখি অধরখানিতে মেজে লয়ো নিরালাতে।
    তেলাকুচা-লতা গলায় পরিয়া
    মেঠো ফুলে নিও আঁচল ভরিয়া,
    হেথায় সেথায় ভাব করো তুমি বুনো পাখিদের সাথে,
    তোমার গায়ের রংখানি তুমি দেখিবে তাদের পাতে।

    তুমি যদি যাও আমাদের গাঁয়ে, তোমারে সঙ্গে করি
    নদীর ওপারে চলে যাই তবে লইয়া ঘাটের তরী।
    মাঠের যত না রাখাল ডাকিয়া
    তোর সনে দেই মিতালী করিয়া
    ঢেলা কুড়িইয়া গড়ি ইমারত সারা দিনমান ধরি,
    সত্যিকারের নগর ভুলিয়া নকল নগর গড়ি।

    তুমি যদি যাও – দেখিবে সেখানে মটর লতার সনে,
    সীম আর সীম – হাত বাড়াইলে মুঠি ভরে সেই খানে।
    তুমি যদি যাও সে – সব কুড়ায়ে
    নাড়ার আগুনে পোড়ায়ে পোড়ায়ে,
    খাব আর যত গেঁঢো – চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে,
    হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুইজনে।

    তুমি যদি যাও – শালুক কুড়ায়ে, খুব – খুব বড় করে,
    এমন একটি গাঁথিব মালা যা দেখনি কাহারো করে,
    কারেও দেব না, তুমি যদি চাও
    আচ্ছা না হয় দিয়ে দেব তাও,
    মালাটিরে তুমি রাখিও কিন্তু শক্ত করিয়া ধরে,
    ও পাড়াব সব দুষ্ট ছেলেরা নিতে পারে জোর করে;

    সন্ধ্যা হইলে ঘরে ফিরে যাব, মা যদি বকিতে চায়,
    মতলব কিছু আঁটিব যাহাতে খুশী তারে করা যায়!
    লাল আলোয়ানে ঘুঁটে কুড়াইয়া
    বেঁধে নিয়ে যাব মাথায় করিয়া
    এত ঘুষ পেয়ে যদি বা তাহার মন না উঠিতে চায়,
    বলিব – কালিকে মটরের শাক এনে দেব বহু তায়।

    খুব ভোর ক’রে উঠিতে হইবে, সূয্যি উঠারও আগে,
    কারেও ক’বি না, দেখিস্ পায়ের শব্দে কেহ না জাগে
    রেল সড়কের ছোট খাদ ভরে
    ডানকিনে মাছ কিলবিল করে;
    কাদার বাঁধন গাঁথি মাঝামাঝি জল সেঁচে আগে ভাগে
    সব মাছগুলো কুড়ায়ে আনিব কাহারো জানার আগে।

    ভর দুপুরেতে এক রাশ কাঁদা আর এক রাশ মাছ,
    কাপড়ে জড়ায়ে ফিরিয়া আসিব আপন বাড়ির কাছ।
    ওরে মুখ-পোড়া ওরে রে বাঁদর।
    গালি-ভরা মার অমনি আদর,
    কতদিন আমি শুনি নারে ভাই আমার মায়ের পাছ;
    যাবি তুই ভাই, আমাদের গাঁয়ে যেথা ঘন কালো গাছ।

    যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়।
    ঘন কালো বন – মায়া মমতায় বেঁধেছে বনের বায়।
    গাছের ছায়ায় বনের লতায়
    মোর শিশুকাল লুকায়েছে হায়!
    আজি সে-সব সরায়ে সরায়ে খুজিয়া লইব তায়,
    যাবি তুই ভাই, যাবি মোর সাথে আমাদের ছোট গায়।

    তোরে নিয়ে যাব আমাদের গাঁয়ে ঘন-পল্লব তলে
    লুকায়ে থাকিস্, খুজে যেন কেহ পায় না কোনই বলে।
    মেঠো কোন ফুল কুড়াইতে যেয়ে,
    হারাইয়া যাস্ পথ নাহি পেয়ে;
    অলস দেহটি মাটিতে বিছায়ে ঘুমাস সন্ধ্যা হলে,
    সারা গাঁও আমি খুজিয়া ফিরিব তোরি নাম বলে বলে।

    See less
  7. This answer was edited.

          শেষের কবিতার কিছু স্মরণীয় লাইন পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর। যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে, অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে। শিকলওয়ালা বাঁধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলাও।Read more

          শেষের কবিতার কিছু স্মরণীয় লাইন

    • পুরুষ আধিপত্য ছেড়ে দিলেই মেয়ে আধিপত্য শুরু করবে। দুর্বলের আধিপত্য অতি ভয়ংকর।
    • যে পক্ষের দখলে শিকল আছে সে শিকল দিয়েই পাখিকে বাঁধে, অর্থাৎ জোর দিয়ে। শিকল নেই যার সে বাঁধে আফিম খাইয়ে, অর্থাৎ মায়া দিয়ে। শিকলওয়ালা বাঁধে বটে কিন্তু ভোলায় না, আফিমওয়ালী বাঁধেও বটে ভোলাও। মেয়েদের কৌটো আফিমে ভরা, প্রকৃতি – শয়তানী তার জোগান দেয়।
    • পৃথিবীতে হয়তো দেখবার যোগ্য লোক পাওয়া যায়, তাকে দেখবার যোগ্য জায়গাটি পাওয়া যায় না।
    • মেনে নেওয়া আর মনে নেওয়া, এই দুইয়ের তফাৎ আছে।
    • যা আমার ভাল লাগে তাই আর একজনের ভাল লাগে না, এই নিয়েই পৃথিবীতে যত রক্তপাত।
    • নাম যার বড় তার সংসারটা ঘরে অল্প, বাইরেই বেশি… … … … নামজাদা মানুষের বিবাহ স্বল্প বিবাহ, বহুবিবাহের মতোই গর্হিত।

     

    • যে রত্নকে সস্তায় পাওয়া গেল তারও আসল মূল্য যে বোঝে সেই জানব জহুরি।
    • পড়ার সময় যারা ছুটি নিতে জানে না তারা পড়ে, পড়া হজম করে না।
    • যে ছুটি নিয়মিত, তাকে ভোগ ক্রয়া আর বাধা পশুকে শিকার করা একই কথা। ওতে ছুটির রস ফিকে হয়ে যায়।
    • পুরুষ তার সমস্ত শক্তিকে সার্থক করে সৃষ্টি করতে, সেই সৃষ্টি আপনাকে এগিয়ে দেবার জন্যই আপনাকে পদে পদে ভোলে। মেয়ে তার সমস্ত শক্তিকে খাটায় রক্ষা করতে, পুরোনোকে রক্ষা করবার জন্যেই নতুন সৃষ্টিকে সে বাধা দেয়। রক্ষার প্রতি সৃষ্টি নিষ্ঠুর, সৃষ্টির প্রতি রক্ষা বিঘ্ন … … … এক জায়গায় এরা পরস্পরকে আঘাত করবেই। যেখানে খুব মিল সেখানেই মস্ত বিরুদ্ধতা … … … আমাদের সকলের চেয়ে বড়ো যে পাওনা সে মিলন নয়, সে মুক্তি।
    • ভালোবাসায় ট্রাজেডি সেখানেই ঘটে যেখানে পরস্পরকে স্বতন্ত্র জেনে মানুষ সন্তুষ্ট থাকতে পারে নি – নিজের ইচ্ছা অন্যের ইচ্ছে করবার জন্যে যেখানে জুলুম – যেখানে মনের করি, আপন মনের মত করে বদলিয়ে অন্যকে সৃষ্টি করে।
    • বিয়ের ফাঁদের জড়িয়ে পড়ে স্ত্রী-পুরুষ যে বড়ো বেশি কাছাকাছি এসে পড়ে, মাঝে ফাঁক থাকে না; তখন একেবারে গোটা মানুষকে নিয়ে কারবার করতে হয় নিতান্ত নিকটে থেকে। কোন একটা অংশ ঢাকা রাখবার জো থাকে না।

     

    • মানুষের মৃত্যুর পরে তার জীবনী লেখা হয় তার কারণ, একদিকে সংসারে সে মরে, আর –এক দিকে মানুষের মনে সে নিবিড় করে বেঁচে ওঠে।
    • মানুষের কোনো কথাটাই সোজা নয়। আমরা ডিক্‌শনারিতে যে কথার এক মানে বেঁধে দেই, মানব-জীবনের মধ্যে মানেটা সাতখানা হয়ে যায়; সমুদ্রের কাছে এসে গঙ্গার মতো!
    • বিবাহের হাজারখানা মানে। মানুষের সঙ্গে মিশে তার মানে হয়, মানুষকে বাদ দিয়ে তার মানে বের করতে গেলেই ধাঁ ধাঁ লাগে।
    • সহজকে সহজ রাখতে হলে শক্ত হতে হয়।
    • মেয়েদের ভালো-লাগা তার আদরের জিনিসকে আপন-অন্দর মহলে একলা নিজেরই করে রাখে, ভিড়ের লোকের কোন খবরই রাখে না। সে যত দাম দিতে পারে সব দিয়ে ফেলে, অন্য পাঁচজনের সঙ্গে মিলিয়ে বাজার যাচাই করতে তার মন নেই।
    See less
  8. বিদায় কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও। তারি রথ নিত্যই উধাও জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন, চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন। ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল– তুলে নিল দ্রুতরথে দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে তোমা হতে বহুদূরে। মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে পার হয়ে আসিলাম আজি নবপ্রভাতRead more

    বিদায়

    কালের যাত্রার ধ্বনি শুনিতে কি পাও।
    তারি রথ নিত্যই উধাও
    জাগাইছে অন্তরীক্ষে হৃদয়স্পন্দন,
    চক্রে-পিষ্ট আঁধারের বক্ষ-ফাটা তারার ক্রন্দন।
    ওগো বন্ধু, সেই ধাবমান কাল
    জড়ায়ে ধরিল মোরে ফেলি তার জাল–
    তুলে নিল দ্রুতরথে
    দুঃসাহসী ভ্রমণের পথে
    তোমা হতে বহুদূরে।
    মনে হয় অজস্র মৃত্যুরে
    পার হয়ে আসিলাম
    আজি নবপ্রভাতের শিখরচূড়ায়,
    রথের চঞ্চল বেগ হাওয়ায় উড়ায়
    আমার পুরানো নাম।
    ফিরিবার পথ নাহি;
    দূর হতে যদি দেখ চাহি
    পারিবে না চিনিতে আমায়।
    হে বন্ধু, বিদায়।

    কোনোদিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশে,
    বসন্তবাতাসে
    অতীতের তীর হতে যে রাত্রে বহিবে দীর্ঘশ্বাস,
    ঝরা বকুলের কান্না ব্যথিবে আকাশ,
    সেইক্ষণে খুঁজে দেখো, কিছু মোর পিছে রহিল সে
    তোমার প্রাণের প্রান্তে; বিস্মৃতপ্রদোষে
    হয়তো দিবে সে জ্যোতি,
    হয়তো ধরিবে কভু নামহারা-স্বপ্নের মুরতি।
    তবু সে তো স্বপ্ন নয়,
    সব চেয়ে সত্য মোর, সেই মৃত্যুঞ্জয়,
    সে আমার প্রেম।
    তারে আমি রাখিয়া এলেম
    অপরিবর্তন অর্ঘ্য তোমার উদ্দেশে।
    পরিবর্তনের স্রোতে আমি যাই ভেসে
    কালের যাত্রায়।
    হে বন্ধু, বিদায়।
    তোমার হয় নি কোনো ক্ষতি
    মর্তের মৃত্তিকা মোর, তাই দিয়ে অমৃত-মুরতি
    যদি সৃষ্টি করে থাক, তাহারি আরতি
    হোক তব সন্ধ্যাবেলা।
    পূজার সে খেলা
    ব্যাঘাত পাবে না মোর প্রত্যহের ম্লানস্পর্শ লেগে;
    তৃষার্ত আবেগবেগে
    ভ্রষ্ট নাহি হবে তার কোনো ফুল নৈবেদ্যের থালে।
    তোমার মানসভোজে সযত্নে সাজালে
    যে ভাবরসের পাত্র বাণীর তৃষায়,
    তার সাথে দিব না মিশায়ে
    যা মোর ধূলির ধন, যা মোর চক্ষের জলে ভিজে।
    আজও তুমি নিজে
    হয়তো বা করিবে রচন
    মোর স্মৃতিটুকু দিয়ে স্বপ্নাবিষ্ট তোমার বচন।
    ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়।
    হে বন্ধু, বিদায়।

    মোর লাগি করিয়ো না শোক,
    আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।
    মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই,
    শূন্যেরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।
    উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকে
    সেই ধন্য করিবে আমাকে।
    শুক্লপক্ষ হতে আনি
    রজনীগন্ধার বৃন্তখানি
    যে পারে সাজাতে
    অর্ঘ্যথালা কৃষ্ণপক্ষ-রাতে,
    যে আমারে দেখিবারে পায়
    অসীম ক্ষমায়
    ভালোমন্দ মিলায়ে সকলি,
    এবার পূজায় তারি আপনারে দিতে চাই বলি।
    তোমারে যা দিয়েছিনু, তার
    পেয়েছ নিঃশেষ অধিকার।
    হেথা মোর তিলে তিলে দান,
    করুণ মুহূর্তগুলি গণ্ডূষ ভরিয়া করে পান
    হৃদয়-অঞ্জলি হতে মম।
    ওগো তুমি নিরুপম,
    হে ঐশ্বর্যবান,
    তোমারে যা দিয়েছিনু সে তোমারি দান;
    গ্রহণ করেছ যত ঋণী তত করেছ আমায়।
    হে বন্ধু, বিদায়।

    – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    See less
  9. নতুন ভবন,  হাওড়া-৫ ৩ য় আশ্বিন, ১৪২৫ প্রিয় আবির, অনেক দিন তােমার চিঠিপত্র পাই না। আশা করি ভালাে আছ। ইতিমধ্যে আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে আগামী পূজার ছুটিতে দেশভ্রমণের একটা পরিকল্পনা করেছি। গন্তব্য স্থান হল মাদ্রাজ শহর এবং আশেপাশের এলাকা। আমাদের ইচ্ছা তুমিও এই আনন্দময় ভ্রমণে যােগদান কর। মাদ্রাজRead more

    নতুন ভবন,  হাওড়া-৫

    ৩ য় আশ্বিন, ১৪২৫

    প্রিয় আবির, অনেক দিন তােমার চিঠিপত্র পাই না। আশা করি ভালাে আছ। ইতিমধ্যে আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে আগামী পূজার ছুটিতে দেশভ্রমণের একটা পরিকল্পনা করেছি। গন্তব্য স্থান হল মাদ্রাজ শহর এবং আশেপাশের এলাকা। আমাদের ইচ্ছা তুমিও এই আনন্দময় ভ্রমণে যােগদান কর। মাদ্রাজ শহরে আমরা দেখব—সমুদ্রতীর, সর্প উদ্যান, কুমির উদ্যান, মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্য দর্শনীয় স্থানগুলি। একটা পুরাে দিন রেখে দেব মহাবলীপুরম দেখতে। এখানে পহুভ রাজাদের আমলের পাহাড় কেটে আর পাথর খােদাই করে তৈরি অপূর্ব মন্দির আর ভাস্কর্য রয়েছে। সত্যি বলতে কী,
    মাদ্রাজে দেখার মতাে এত সব রয়েছে যে সেগুলি দেখার লােভ সম্বরণ করা যায় না।

    তােমার সম্মতি আছে মনে করে আমরা তােমার নামও তালিকাভুক্ত করে নিলাম। অক্টোবর মাসের সুবিধেমতাে কোনও তারিখের জন্য করমণ্ডল এক্সপ্রেসের টিকিট কাটা হবে। অতএব আমাদের এই প্রস্তাবে ‘না’ করাে না যেন।

    তােমার উত্তরের অপেক্ষায় রইলাম। ইতি

    তােমার একান্ত কুর্নিশ

    See less
  10. Indrani  Real estate PVT. LTD. Nadiya Date. ১০/১২/২০২০ মাননীয় ম্যানেজার স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া বর্ধমান প্রিয় মহাশয়, আমরা আমাদের বর্ধমানের জেলার "বাংলা সাংস্কৃতিক ভবনের" আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নিয়েছি। এই পরিকল্পনায় ভবনটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হবে এবং দর্শকের জন্য আরামপ্রদ আসনের ব্যবস্থা করা হবে।Read more

    Indrani  Real estate PVT. LTD.

    Nadiya

    Date. ১০/১২/২০২০

    মাননীয় ম্যানেজার

    স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া

    বর্ধমান

    প্রিয় মহাশয়,

    আমরা আমাদের বর্ধমানের জেলার “বাংলা সাংস্কৃতিক ভবনের” আধুনিকীকরণের পরিকল্পনা নিয়েছি। এই পরিকল্পনায় ভবনটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত হবে এবং দর্শকের জন্য আরামপ্রদ আসনের ব্যবস্থা করা হবে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫,০০,০০০ টাকা। আমরা আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে মাত্র ৩,০০,০০০ টাকা সংগ্রহ করতে পারব, অবশিষ্ট ২,০০,০০০ টাকা ঋণ গ্রহণ করতে হবে।

    এজন্য আমাদের অনুরােধ,পরিকল্পনাটি রূপায়ণ করতে, আসবাব পত্র ও অন্যান্য জিনিস যন্ত্রাদির জামিনের বিনিময়ে আপনি আমাদের ২,০০,০০০ টাকা ঋণদানের ব্যবস্থা করে সহায়তা করুন। আপনার সম্মতিসূচক চিঠি পেলে আমরা আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি পাকা করতে ইচ্ছুক।

    ধন্যবাদান্তে,

    আপনাদের বিশ্বস্ত ইন্দ্রানী রিয়েল এস্টেটর পক্ষে

    শর্মিষ্ঠ ব্যানার্জি

    ম্যানেজিং ডিরেক্টর

    See less