1. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার (Paribesh dushan o tar pratikar rachana) ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আRead more

    পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার (Paribesh dushan o tar pratikar rachana)

    ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই
    সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার
    নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের
    সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আজ নিঙড়ে নিচ্ছে পৃথিবীতে। এতে কার হচ্ছে
    সর্বনাশ ? কার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে বিপন্ন ? আজ পৃথিবীর হাজারও সমস্যার মধ্যে
    যেটা সবচাইতে বড় সমস্যা সেটাই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ।

    পরিবেশ : যে পারিপার্শ্বিকতা আমাদের দেহ মনকে প্রভাবিত করে তার
    সম্মিলিত সমাহারই হলাে আমাদের পরিবেশ। বাস্তবিকই আমাদের চারিপাশে অবস্থিত
    উদার আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছগাছালি, নানাজাতের প্রাণী, ঝোপ, লতা,
    গুল্ম, মরুপ্রান্তের কীট, পতঙ্গ, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এ সবাইকে নিয়েই বসবাস
    করাই আমাদের পরিবেশ।

    পরিবেশ দূষণ : দূষণ বা ইংরেজিতে Pollution শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
    Pollution হতে উৎপন্ন। সাধারণ অর্থে পরিবেশের ক্ষতিকর বস্তুর প্রাধান্যকে
    দূষণ বা Pollution বলা হয়। আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের কুলম্করপ
    আমাদের প্রকৃতিতে যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে, নান প্রকার রােগের সৃষ্টি হচ্ছে,
    পর্বের সে মুক্ত বাতাস আর বিশুদ্ধ জল আমরা আর পাচ্ছিনা। এটাই দুষণ। তাই
    বাতাস, জল আর মাটি দুষিত হওয়াকেই এক কথায় বলা হয় পরিবেশ দূষণ। তাছাড়া
    শব্দ দূষণের পরিবেশ দূষণের অন্তর্গত।

    পরিবেশ দূষণের কারণ : সৃষ্টির উষা-লগ্নে আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে
    একদিন এ পৃথিবীতে জীবন ছিল সুন্দর।খাদ্য ও জলে ছিল বিশুদ্ধতা । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি
    আর বিজ্ঞানের প্রাধান্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে এল এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
    ক্ষতি হয়ে চলল উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণীজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এভাবে
    এসে দাড়িয়েছে এক বিপদজনক অবস্থায়।

    বায়ু দূষণ – প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ যে ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করতে
    চলেছে তার মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। প্রাণী জগতে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়ােজন নিল
    বায়ুর। জল ও খাদ্য ছাড়া মানুষ দু-চার দিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু অর্থাৎ
    বাতাস ছাড়া মানুষ বা প্রাণী এক মুহূর্তও বেচে থাকতে পারে না। বায়ু দুষিত হলে
    অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক দুষিত গ্যাস আমাদের
    দেহে প্রবেশ করবে। এই অক্সিজেনের যােগান দেয় গাছ-পালা, এজন্য প্রাণী জগৎ বেঁচে
    আছে। তাই অরণ্য হল মানব জগতের ফুসফুস। সে অরণা আজ ফবংসের মুখে।
    মানুষ একদিন প্রয়ােজনের তাগিদে অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করেছিল আর
    আজ তাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য করেছে অরণ্য ছেদন। যান্ত্রিক সভ্যতায় কল
    কারখানার ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন শহরের ধুলা-বালু, রাস্তার ধারে জ্বালানাে কয়লার ঘোষ
    ইত্যাদি বাতাসকে করছে বিষাক্ত। ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রম বর্ধমান, অকাল
    বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় এর মূলে বায়ু দূষণের অভিশাপ। এই দূষিত বায়ু নিশ্বাসকে নিষ্ট করে
    ফুসফুসকে দ্রুত জীর্ণ করে দেয়, ফলে শ্বাস রােগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রােগ
    দেখা দেয়।

    জল দূষণ : জলের অপর নাম জীবন। জলছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।
    অথচ এই জলই দূষিত হয়ে মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত মুক্ত এ
    বস্তুটিও আধুনিক সভ্যতার করাল গ্রাস হতে রক্ষা পায়নি। বড় বড় নদীতে আজ দুষিত
    জলের ধারা বহে চলেছে। কল-কারখানার এবং পয়ঃ প্রণালীর পরিত্যজ্য জল নালা
    নর্দমার মাধ্যমে জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    হিন্দু ধর্মে ও লােকাচারে গঙ্গানদী অতি পবিত্র নদী। স্নান-পান ও স্পর্শে মুক্তি।
    গঙ্গা ভগীরথ আনিত ও বিষ্ণু পদ গলিত ধারা সে বিশ্বাস আজ আর নেই। গঙ্গার
    সুদীর্ঘ তীরবর্তী গ্রাম জনপথ ও শহরের বর্জ্য পদার্থ পূণ্য সলিলা গঙ্গায় বিসর্জিত
    হচ্ছে। কিভাবে দূষিত জলের সমস্যা আজ সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এই দূষণের
    ফলে বিনষ্ট হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। অকাল মৃত্যু হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে।

    মাটি দূষণ : পৃথিবীর অন্যতম উপাদান মাটি উদ্ভিদ জগৎকে প্রতাক্ষভাবে
    এবং প্রাণী জগৎকে পরােক্ষভাবে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু নানধরনের জঞ্জাল, পরিত্যক্ত
    পদার্থ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটি-দূষণের জন্য দায়ি।
    নিউক্লীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নিউক্লীয় বিস্ফোরণ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে
    দূষণ সৃষ্টি করে। এই মাটির উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সঞ্চিত হয়। আর এই উদ্ভিদ
    খাদ্য হিসেবে প্রাণীর দেহে গেলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
    গ্রাম দূষণ ও এই দূষণের হাত থেকে ছায়া সুনিবিড় গ্রামাঞ্চলও বাদ যায়নি।
    মাটি দূষণ তাে গ্রামের বুকেই ঘটছে। স্থানে স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ, শ্মশান, ভাগাড় ইত্যাদি
    দূষিত পদার্থ আর বর্জিত পদার্থের স্তুপ। সংস্কৃত পুকুর, ডােবার নােংরা পটা জাল
    নির্মল গ্রামকেও আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে।

    শব্দ-দূষণ : শব্দ দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। গ্রামের
    তুলনায় শহরে এর উপদ্রব বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা আছি শব্দের জগতে কিন্তু তা
    যখন কানের কাছে অসহ্য হয়ে উঠে তখনই তাকে বলে শব্দ দূষণ। বিজ্ঞানীদের মতে
    ২০থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করবার ক্ষমতা থাকে মানুষের কিন্তু তা যখন এর
    মাত্রা ছাড়ায় তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্রমাগত মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন,
    বাইক, বৈদ্যুতিক হর্ণের কর্কশতা, মাইকের শব্দ, বোমা বাজি, পটকার ধ্বনি ইত্যাদি
    অহরহ পাল্লা দিয়ে শব্দ দূষণ করে চলেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের
    কানের। তাছাড়া মানসিক ক্ষতিও করে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও অনিদ্রা
    রােগ দেখা দেয়।

    প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ রূপ ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূতের হাত থেকে পৃথিবী
    তথা প্রাণী জগৎকে রক্ষা করতে দেরিতে হলেও সচেতনতা শুধু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের
    বৈজ্ঞানিকগণ পরিবেশকে রক্ষা করতে সচেতন হয়ে ওঠেছেন।
    প্রকৃতির মধ্যেই বায়ু বিশুদ্ধকরণের চমৎকার ব্যবস্থা আছে। সবুজ উদ্ভিদরা
    বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণে দূষিত গ্যাস ও ক্ষতিকর সুক্ষ্ম কণিকা সংগ্রহ করে
    বাতাসকে বিশুদ্ধ করে থাকে। সুতরাং বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বনভূমি বাড়াতে হবে
    অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে শিলাঞ্চল ও শহরগুলিতে।
    কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহরাঞ্চলের নাগরিকদের ব্যবহৃত আবর্জনা নদী
    বা সাগরের জলে ফেলা বন্ধ করতে হবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত কীটনাশক ও
    সার যাতে জলের সাথে না মিশে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

    বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বিশ্ব জুড়েই আজ পরিবেশ সংকট। সেই সংকট
    দূর করতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা রত। দূষণের ভয়াবহতা ঘুম কেড়ে নিয়েছে মানবতাবাদী
    আর চিন্তাশীল মানুষের। চিন্তিত রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাই রাষ্ট্রসংঘ ৫ জুন কি ঘােষণা করেছে বিশ্ব
    পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করতে। যাতে মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
    ১৯৭২ সন থেকে প্রতি বছরই ওই দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারেই ওই দিনটি নাড়া
    দিয়ে যায় বিশ্ব বিবেককে। গ্রহণ করা হয় নতুন শপথ।

    উপসংহার : পরিবেশ যতই দুষিত হােক না কেন সুষ্ঠু ভাবে বাঁচতে হলে
    তাকে পরিশােধন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক
    মানসিকতা, শিক্ষা ও সচেতনতার। এই পৃথিবীকে অর্থাৎ আমাদের একমাত্র বাসস্থানকে
    আমরা যদি নিজেই ধ্বংস করি তা হলে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনব আমরা তাই এ
    কথা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীকে সুন্দর ও সুষ্টু রাখা আমাদের
    দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    See less
  2. ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়। আপন ঘর না বুঝে বাহিরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়।। আমি সত্য না হইলে হয় গুরু সত্য কোন কাজে আমি যেরূপ দেখ না সেরূপ দীন দয়াময়।। আত্মরূপে সেই অ-ধর সঙ্গী অংশে কলা তার ভেদ না জেনে বনে বনে ফিরিলে কি হয়।। আপনার আপনি না চিনে ঘুরবি কত ভুবনে লালন বলে, অন্তিম কালে নাইRead more

    ক্ষ্যাপা তুই না জেনে তোর আপন খবর যাবি কোথায়।

    আপন ঘর না বুঝে বাহিরে খুঁজে পড়বি ধাঁধায়।।

    আমি সত্য না হইলে

    হয় গুরু সত্য কোন কাজে

    আমি যেরূপ দেখ না সেরূপ দীন দয়াময়।।

    আত্মরূপে সেই অ-ধর

    সঙ্গী অংশে কলা তার

    ভেদ না জেনে বনে বনে ফিরিলে কি হয়।।

    আপনার আপনি না চিনে

    ঘুরবি কত ভুবনে

    লালন বলে, অন্তিম কালে নাই রে উপায়।

    See less
  3. লাল শাড়ি পরিয়া কন্যা রক্ত আলতা পায়, আমার চোখের জল মিশাইলা নিলানা বিদায়, তুমি ফিরাও চাইলা না একবার চইলা গেলা হায়, জানি আজ রাতে হইবা পরের আর ভাইব না আমায়। চান্দের মত মুখটি যখন ভাসত নয়ন জলে, আদর কইরা মুইছা দিতাম গালে। ঘাটে আইসা পাশে বইসা জড়াইতো এ বুকে, ভুলব আমি এই কথা কেমনে? তবে ভালো ক্যান বাসিলRead more

    লাল শাড়ি পরিয়া কন্যা
    রক্ত আলতা পায়,
    আমার চোখের জল মিশাইলা
    নিলানা বিদায়,
    তুমি ফিরাও চাইলা না একবার
    চইলা গেলা হায়,
    জানি আজ রাতে হইবা পরের
    আর ভাইব না আমায়।

    চান্দের মত মুখটি যখন
    ভাসত নয়ন জলে,
    আদর কইরা মুইছা দিতাম গালে।
    ঘাটে আইসা পাশে বইসা
    জড়াইতো এ বুকে,
    ভুলব আমি এই কথা কেমনে?

    তবে ভালো ক্যান বাসিলা
    স্বপ্ন কেন দেখাইলা
    ভালো ক্যান বাসিলা আমারে?

    চার বেহারার পালকি কইরা
    যখন গেলা সামনে দিয়া,
    শেষ দেখাও দিলা না আমারে।
    ফিরা আইসা দেখবা তুমি
    চইলা গেছি জগত ছাড়ি
    পাইবা শুধু আমায় স্বপনে।

    তুমি কান্দিয়া ডাকিবা কভু না পাইবা
    কান্দিয়া ডাকিবা আমারে।

    লাল শাড়ি পরিয়া কন্যা
    রক্ত আলতা পায়,
    আমার চোখের জল মিশাইলা
    নিলানা বিদায়,
    তুমি ফিরাও চাইলা না একবার
    চইলা গেলা হায়,
    জানি আজ রাতে হইবা পরের
    আর ভাইব না আমায়।

    See less
  4. এখন অনেক রাত (অনুপম রায় ) ekhon onek raat এখন অনেক রাত, তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় ! ছুঁয়ে দিলে হাত, আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে ডলছি কেমন নেশায় ! এখন অনেক রাত, তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় ! ছুঁয়ে দিলে হাত, আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাRead more

    এখন অনেক রাত (অনুপম রায় ) ekhon onek raat

    এখন অনেক রাত,
    তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় !
    ছুঁয়ে দিলে হাত, আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে ডলছি কেমন নেশায় !

    এখন অনেক রাত,
    তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় !
    ছুঁয়ে দিলে হাত, আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে ডলছি কেমন নেশায় !

    কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি, পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলি !
    আমি ভাবতে পারিনি, তুমি বুকের ভেতর ফাটছো আমার শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ !
    আমি থামতে পারিনি, তোমার গালে নরম দুঃখ আমার দুহাত দিয়ে মুছতে দিও প্লিজ |

    তোমার গানের সুর আমার পকেট ভরা সত্যি মিথ্যে রেখে দিলাম তোমার ব্যাগ-এর নীলে |
    জানি তর্কে বহুদূর, তাও আমায় তুমি আঁকড়ে ধরো, আমার ভেতর বাড়ছো তিলে তিলে !

    কেন যে অসংকোচে অন্ধ গানের কলি, পাখার ব্লেড-এর তালে সোজাসুজি কথা বলি !
    আমি ভাবতে পারিনি, তুমি বুকের ভেতর ফাটছো আমার শরীর জুড়ে তোমার প্রেমের বীজ !
    আমি থামতে পারিনি, তোমার গালে নরম দুঃখ আমার দুহাত দিয়ে মুছতে দিও প্লিজ |

    এখন অনেক রাত,
    তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় !
    ছুঁয়ে দিলে হাত, আমার বৃদ্ধ বুকে তোমার মাথা চেপে ধরে ডলছি কেমন নেশায় !

    এখন অনেক রাত,
    তোমার কাঁধে আমার নিঃশ্বাস , আমি বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসায় !
    ভালোবাসায় .

    See less
  5. This answer was edited.

    আমিই সেই মেয়ে আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি আপনি রোজ দেখেন। আর আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন। আমিই সেই মেয়ে। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতেRead more

    আমিই সেই মেয়ে

    আমিই সেই মেয়ে।

    বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন

    যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি

    আপনি রোজ দেখেন।

    আর

    আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।

    স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।

    আমিই সেই মেয়ে।

    বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো

    আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে

    তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি

    আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়

    আপনার রাজকীয় লাম্পট্য

    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে

    যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে

    ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান

    যার অনাবৃত শরীর

    আমি সেই মেয়ে।

    রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি

    পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল

    হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন

    চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে

    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা

    ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার

    চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া

    সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো

    গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-

    কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা

    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার

    আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান

    আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে

    বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।

    আমিই সেই মেয়ে।

    সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।

    আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।

    আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।

    আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।

    কালো আকাশ মাথায় নিয়ে

    আমি ছাতা হয়ে থাকি।

    ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

    আপনি

    আপনারা

    আমার জন্য অনেক করেছেন।

    সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে

    মা বলে পুজো করেছেন।

    প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর

    শহর গঞ্জের কানাগলিতে

    ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।

    হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।

    একদিন হয়ত

    হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন

    আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে

    আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !

    খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।

    দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।

    কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।

    হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।

    দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।

    নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।

    দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন

    মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং

    কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

    বীভৎস দাবানলের মত

    আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে

    মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-

    সভ্যতার দেহ

    প্রগতির দেহ-

    উন্নতির দেহ-

    সমাজের দেহ

    হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

    See less
  6. This answer was edited.

    (বিশেষ নোট : তাসলিমা নাসরিন আমি সেই মেয়ে নাম দিয়ে কোনো কবিতা লিখেন নি। আমি সেই মেয়ে নাম দিয়ে দুইটি কবিতা লিখা হয়েছে। একটা লিখেছেন শুভ দাশগুপ্ত এবং উন্নতি লিখেছেন কবিতা সিংহ।) আমিই সেই মেয়ে (শুভ দাশগুপ্ত) আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গRead more

    (বিশেষ নোট : তাসলিমা নাসরিন আমি সেই মেয়ে নাম দিয়ে কোনো কবিতা লিখেন নি। আমি সেই মেয়ে নাম দিয়ে দুইটি কবিতা লিখা হয়েছে। একটা লিখেছেন শুভ দাশগুপ্ত এবং উন্নতি লিখেছেন কবিতা সিংহ।)

    আমিই সেই মেয়ে (শুভ দাশগুপ্ত)

    আমিই সেই মেয়ে।
    বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
    যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
    আপনি রোজ দেখেন।
    আর
    আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
    স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
    আমিই সেই মেয়ে।
    বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
    আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
    তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
    আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
    আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
    আমিই সেই মেয়ে।
    আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
    যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
    ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
    যার অনাবৃত শরীর
    আমি সেই মেয়ে।
    রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
    পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
    হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
    চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
    আমিই সেই মেয়ে।
    আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
    ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
    চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
    সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
    গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
    কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
    আমিই সেই মেয়ে।
    আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
    আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
    আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
    বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
    আমিই সেই মেয়ে।
    সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
    আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
    আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
    আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
    কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
    আমি ছাতা হয়ে থাকি।
    ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।
    আপনি
    আপনারা
    আমার জন্য অনেক করেছেন।
    সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
    মা বলে পুজো করেছেন।
    প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
    শহর গঞ্জের কানাগলিতে
    ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
    হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
    একদিন হয়ত
    হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
    আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
    আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
    খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
    দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
    কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
    হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
    দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
    নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
    দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
    মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
    কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।
    বীভৎস দাবানলের মত
    আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
    মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
    সভ্যতার দেহ
    প্রগতির দেহ-
    উন্নতির দেহ-
    সমাজের দেহ
    হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

    See less
  7. আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন) আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি আপনি রোজ দেখেন। আর আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন। আমিই সেই মেয়ে। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো আপনার ধর্মেRead more

    আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন)

    আমিই সেই মেয়ে।
    বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
    যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
    আপনি রোজ দেখেন।
    আর
    আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
    স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
    আমিই সেই মেয়ে।

    বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
    আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
    তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
    আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
    আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
    যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
    ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
    যার অনাবৃত শরীর
    আমি সেই মেয়ে।

    রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
    পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
    হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
    চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
    ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
    চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
    সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
    গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
    কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
    আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
    আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
    বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
    আমিই সেই মেয়ে।

    সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
    আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
    আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
    আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
    কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
    আমি ছাতা হয়ে থাকি।
    ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

    আপনি
    আপনারা
    আমার জন্য অনেক করেছেন।
    সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
    মা বলে পুজো করেছেন।
    প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
    শহর গঞ্জের কানাগলিতে
    ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
    হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
    একদিন হয়ত
    হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
    আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
    আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
    খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
    দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
    কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
    হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
    দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
    নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
    দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
    মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
    কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

    বীভৎস দাবানলের মত
    আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
    মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
    সভ্যতার দেহ
    প্রগতির দেহ-
    উন্নতির দেহ-
    সমাজের দেহ

    হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

    See less
  8. আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন) আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি আপনি রোজ দেখেন। আর আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন। আমিই সেই মেয়ে। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো আপনার ধর্মেRead more

    আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন)

    আমিই সেই মেয়ে।
    বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
    যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
    আপনি রোজ দেখেন।
    আর
    আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
    স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
    আমিই সেই মেয়ে।

    বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
    আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
    তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
    আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
    আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
    যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
    ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
    যার অনাবৃত শরীর
    আমি সেই মেয়ে।

    রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
    পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
    হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
    চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
    ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
    চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
    সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
    গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
    কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
    আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
    আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
    বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
    আমিই সেই মেয়ে।

    সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
    আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
    আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
    আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
    কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
    আমি ছাতা হয়ে থাকি।
    ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

    আপনি
    আপনারা
    আমার জন্য অনেক করেছেন।
    সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
    মা বলে পুজো করেছেন।
    প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
    শহর গঞ্জের কানাগলিতে
    ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
    হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
    একদিন হয়ত
    হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
    আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
    আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
    খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
    দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
    কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
    হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
    দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
    নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
    দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
    মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
    কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

    বীভৎস দাবানলের মত
    আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
    মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
    সভ্যতার দেহ
    প্রগতির দেহ-
    উন্নতির দেহ-
    সমাজের দেহ

    হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

    See less
  9. আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন) আমিই সেই মেয়ে। বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি আপনি রোজ দেখেন। আর আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন। আমিই সেই মেয়ে। বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো আপনার ধর্মেRead more

    আমিই সেই মেয়ে (তছলিমা নাসরিন)

    আমিই সেই মেয়ে।
    বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
    যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
    আপনি রোজ দেখেন।
    আর
    আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
    স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
    আমিই সেই মেয়ে।

    বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
    আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
    তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
    আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
    আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
    যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
    ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
    যার অনাবৃত শরীর
    আমি সেই মেয়ে।

    রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
    পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
    হেঁটে ক্লান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
    চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
    ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
    চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
    সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
    গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
    কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
    আমিই সেই মেয়ে।

    আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
    আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
    আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
    বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
    আমিই সেই মেয়ে।

    সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
    আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
    আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
    আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
    কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
    আমি ছাতা হয়ে থাকি।
    ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।

    আপনি
    আপনারা
    আমার জন্য অনেক করেছেন।
    সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
    মা বলে পুজো করেছেন।
    প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
    শহর গঞ্জের কানাগলিতে
    ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
    হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
    একদিন হয়ত
    হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
    আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
    আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
    খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
    দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
    কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
    হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
    দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
    নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
    দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
    মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
    কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।

    বীভৎস দাবানলের মত
    আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
    মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
    সভ্যতার দেহ
    প্রগতির দেহ-
    উন্নতির দেহ-
    সমাজের দেহ

    হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।

    See less
  10. This answer was edited.

    আমিই সেই মেয়ে- কবিতা সিংহ আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়ে যার জন্মের সময় কোন শাঁখ বাজেনি জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষীর ছঁকে বন্দী যার লগ্ন রাশি রাহু কেতুর দিশা খোঁজা হয়েছে না, তার নিজের জন্য নয় তার পিতার জন্য আর ভাই এর জন্য তার স্বামীর জন্য তার পুত্রের জন্য কিন্তু যার গর্ভ থেকে আমার জন্ম সেই মায়ের কথা বলেনRead more

    আমিই সেই মেয়ে- কবিতা সিংহ

    আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়ে
    যার জন্মের সময় কোন শাঁখ বাজেনি
    জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষীর ছঁকে বন্দী
    যার লগ্ন রাশি রাহু কেতুর
    দিশা খোঁজা হয়েছে না, তার নিজের জন্য নয়
    তার পিতার জন্য আর ভাই এর জন্য
    তার স্বামীর জন্য তার পুত্রের জন্য
    কিন্তু যার গর্ভ থেকে আমার জন্ম
    সেই মায়ের কথা বলেনি কেউ।

    আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়েটি
    যে জন্ম থেকেই বিবাহের
    জন্য বলি প্রদত্ত
    যার বাইরের চেহারা
    চোখ – নাক-মুখ- ত্বক- চুল – রঙ
    নিয়েই দর কষাকষি
    কাল না ফর্সা
    খাঁদা না টিকালো
    লম্বা না বেঁটে
    খুতখুতে না টানা টানা
    যার মাথার বাইরেটা নিয়েই সকলের ভাবনা
    মাথার ভিতরটা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই
    আমিই সেই মেয়েটি যে ছোটবেলা থেকে শুনেছে
    জোরে জোরে কথা বলতে নেই
    ছুটতে নেই -চেঁচাতে নেই- হাসতে নেই
    এমন কি কাঁদলেও তা লুকিয়ে লুকিয়ে

    আমিই সেই মেয়েটি যাকে বলতে নেই –
    খিদে পেয়েছে – ঘুম পেয়েছে – ইচ্ছে করছেনা-
    ক্লান্ত লাগছে -আর পারছিনা — আর পারছিনা।
    আমিই সেই মেয়েটি খেলার জন্য যার
    হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুতুল
    পুতুলের আদল পাবার জন্য
    পুতুলের সংসার বানাবার জন্য।

    আমিই সেই মেয়েটি যে গত কোন
    শতাব্দী তে পাঁচ বছর বয়সে মালা দিয়েছে –
    গঙ্গা যাত্রীর গলায়
    কুলীন ব্রাম্মন এর তিনশো পঁয়ষট্টি তম স্ত্রীর
    অন্যতমা হয়ে স্বামীর গরবে হয়েছি গরবিনী
    একাদশীর দিন অবুজ দশমীর বালিকার তৃষ্ণায় –
    আটক ঘরের মাটি লেহন করতে করতে প্রান ত্যাগ করেছি
    সন্তানের পর সন্তান জন্ম দিতে দিতে যন্ত্রণায়
    মুখ থুবড়ে পরেছি সূতিকাগারে
    জ্বলে পুড়ে মরেছি সতীদাহে।

    আমি বুঝতে পারিনি যে চাকরীর জায়গায়
    নিজের কাজের কুশলতা দেখাতে নেই
    আমি বুঝতে পারিনি যে আমার প্রেমিককে
    তার প্রেম পত্রের বানান ভুল গুল ধরিয়ে দেওটাই
    আমার ভুল হয়ে ছিল
    আমি বুঝতে পারিনি আমি যদি কবি হতে চাই
    আমার বন্ধুরা বলবে ”ওটা কবিতা হয়নি পদ্য হয়েছে”

    আমি বুঝতে পারিনি যে বিংশ শতাব্দীর শেষ সীমানায় এসে দাড়িয়েও
    এইপুরুষ শাসিত সমাজ বুদ্ধিমতিদের জন্য অপ্রস্তুত
    আমি সেই মেয়েটি যে দেখেছে একটি নারী
    কেমন করে নিছক মেয়েছেলে বনে যায়
    চরিত্রের উলটো দিকে হেঁটে যায় সফল স্বামীদের গিন্নীরা
    শিক্ষার চেয়ে উজ্জলতা পায় বেনারসি সাড়ীর ফুলকি
    বুদ্ধির চেয়ে দিপ্তিমান হয়ে ওঠে অন্ধকারে হীরা পান্না

    আমি সেই মেয়েটি জানেন আমি সেই মেয়েটি
    যে জীবনের কয়েকটি বছর ভুলের পরে ভুল
    পুনরুপি ভুল করে চলেছি
    অন্ধকারের দিনে ফিরতে পারিনা বলেই কি
    আমি অপমানের জলন্ত কয়লার উপর দিকে হেঁটে যেতে চাই
    যেতে চাই দুঃখের দিকে
    আমি প্রনাম জানাই সেই প্রথম আগুনকে
    যার নাম বর্ণপরিচয়
    সেই অগ্নি সুদ্ধ পরম্পরাকে সেইসব পুরুষ রমণীকে
    যারা উনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকারের হাতলে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে
    এক জন্মে আমাকে জন্ম জন্মান্তরের দরজা খুলে দিয়েছে।

    আমি আজ প্রেমের জন্য ফেলে যাচ্ছি আরাম-
    শোকার্জিত শাকান্নের জন্য ফেলে যাচ্ছি ক্রীতদাসের চর্ব্যচোষ্য
    জেগে থাকার জন্য ফেলে যাচ্ছি ভাত ঘুম,
    যন্ত্রণার জন্য ফেলে যাচ্ছি সুখ –
    জ্ঞানের জন্য ফেলে যাচ্ছি অন্ধতা
    আনন্দের জন্য ফেলে যাচ্ছি সাফল্য
    অমৃতের জন্য ঐশ্বর্য।
    আমার হাতে জ্বলছে দিশারীদের শিক্ষার মহান আগুন

    আমিই সেই মেয়েটি———
    আপনারা নিজের দর্পণে দেখে আমাকে চিনুন
    আমাকে চিনুন – আমাকে চিনুন।।

     

     

    English Transliteration: 

     

    Ami Shei Meyeti, Shei meye
    jar jonmer shomoy kono shakh bajeni
    Jonmo thekei je Jyotishir choke bondi
    jar logno rasi rahu ketur
    Disha Khuja hoyeche na, tar nijer jonno noy
    Tar pitar jonno r bhai er jonno
    tar shamir jonno r putrer jonno
    Kintu jar gorvo theke amar janma
    Shei mayer kotha boleni keu.

    Ami Shei Meyeti, Shei meyeti
    Je janma thekei bibaher
    Jonno bole prodotto
    jar bairer chehara
    chok-Nak-mukh-tak-chul-rang
    Niyei dor koshakoshi
    kalo na forsha
    Khada na tikalo
    lomba na bete
    khutkhute na tantana
    jar mathar baireta niyei shokoler bhabona
    mathar vitorta niye kar o kuno matha byatha nei

    Ami shei meyeti je chotobela theke shuneche
    Jore jore kotha bolte nei
    Chutte nei-chechate nei-hashte nei
    Emonki kadleo ta lukiye lukiye
    Ami shei meyeti jake bolte nei
    Khide peyeche-ghum peyeche-icche korchena
    Klanta lagche-aar parchi na- r parchi na

    Ami Shei Meyeti khelar jonno jar
    haate tule dewa hocche putul
    Putuler aadol pawar jonno
    Putuler shonshar banabar jonno

    Ami Shei Meyeti Je goto kono
    shotabdi te panch bachar boyoshe mala diyeche
    Ganga jatrir golay
    Kulin Brahmaner tin sho poyshotti tama strir
    Onnotama hoye shamir garabe hoyechi garabini
    ekadashir din abuj dashamir balikar trishnay
    aatak ghorer mati lehon korte korte pran tyag korechi
    Shontaner par shantan janma dite dite jantronay
    Mukh thubre porechi shutikagare
    Jole pure morechi shotidahe.

    Ami bujhte parini je charir jaygay
    Nijer kajer kushalata dekhate nei
    Ami bujhte parini je amar premik ke
    Tar prem potrer banan bhulgulo dhoriye dewatai
    Amar bhul hoyechilo
    Ami bujhte parini ami jodio kobi hote chai
    Amar bandura bolbe “ota kobita hoini podyo hoyeche”
    Ami bujhte parini je bingsho shotabdir shesh shimanay eshe dariye o
    Ei purush shashito shomaj buddhimatider jonno oprastut

    Ami shei meyeti je dekheche ekti naari
    kemon kore nisok meyechele bone jay
    Charitrer ulto dike hete jay shofol shamider ginnira
    Shikkhar cheye ujjolota pay benarashi sharir fulki
    Buddhir cheye diptoman hoye uthe ondhokare hira panna

     

    See less