1. চিত্ত যেথা ভয়শূন্য | chitto jetha bhayshunyo চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির, জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি, যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায় অজস্র সহস্রবিধ চরিতারRead more

    চিত্ত যেথা ভয়শূন্য | chitto jetha bhayshunyo

    চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,
    জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর
    আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী
    বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,
    যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে
    উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যেথা নির্বারিত স্রোতে
    দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়
    অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়–
    যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি
    বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
    পৌরুষেরে করে নি শতধা; নিত্য যেথা
    তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা–
    নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ,
    ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।

    See less
  2. ছন্নছাড়া | chonnochara অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া -- আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া, রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনাRead more

    ছন্নছাড়া | chonnochara

    অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত

    গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে
    গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া —
    আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল
    শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া,
    রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ
    লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই
    নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি
    এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা |
    ওই পথ দিয়ে
    জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি ক’রে |
    ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না |
    দেখছেন না ছন্নছাড়া ক’টা বেকার ছোকরা
    রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে–
    চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো, রোখা মেজাজ, ঠোকা কপাল–
    ওখান দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে,
    বলবে, হাওয়া খাওয়ান |

    ওরা কারা ?
    চেনেন না ওদের ?
    ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের –এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে |
    ওদের কিছু নেই
    ভিটে নেই ভিত নেই রীতি নেই নীতি নেই
    আইন নেই কানুন নেই বিনয় নেই ভদ্রতা নেই
    শ্লীলতা-শালীনতা নেই |
    ঘেঁষবেন না ওদের কাছে |

    কেন নেই ?
    ওরা যে নেই রাজ্যের বাসিন্দে–
    ওদের জন্যে কলেজে সিট নেই
    অফিসে চাকরি নেই
    কারখানায় কাজ নেই
    ট্রামে-বাসে জায়গা নেই

    মেলায়-খেলায় টিকিট নেই
    হাসপাতালে বেড নেই
    বাড়িতে ঘর নেই
    খেলবার মাঠ নেই
    অনুসরণ করবার নেতা নেই
    প্রেরণা-জাগানো প্রেম নেই
    ওদের প্রতি সম্ভাষণে কারু দরদ নেই–
    ঘরে-বাইরে উদাহরণ যা আছে
    তা ক্ষুধাহরণের সুধাক্ষরণের উদাহরণ নয়,
    তা সুধাহরণের ক্ষুধাভরণের উদাহরণ–
    শুধু নিজের দিকে ঝোল- টানা |
    এক ছিল মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে ফালতু এক রক
    তাও দিয়েছে লোপট ক’রে |

    তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে |
    কোথ্বকে আসছে সেই অতীতের স্মৃতি নেই |
    কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেই বর্তমানের গতি নেই
    কোথায় চলেছে নেই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা |

    সেচ-হীন ক্ষেত
    মণি-হীন চোখ
    চোখ-হীন মুখ
    একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্তুপ |

    আমি বললুম, না ওদিক দিয়েই যাব,
    ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট |
    ওদের কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে
    জিজ্ঞেস করলুম,
    তোমাদের ট্যাক্ সি লাগবে ? লিফট চাই ?
    আরে এই তো ট্যাক্ সি, এই তো ট্যাক্ সি, লে হালুয়া
    সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল ওরা
    সিটি দিয়ে উঠল
    পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি চল পানসি বেলঘরিয়া |
    তিন-তিনটে ছোকরা উঠে পড়ল ট্যাক্ সীতে,
    বললুম কদ্দুর যাবে |
    এই কাছেই | ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড় ?
    সিনেমা না, জলসা না, নয় কোনো ফিল্মি তারকার অভ্যর্থনা |
    একটা নিরীহ লোক গাড়িচাপা পড়েছে,
    চাপা দিয়ে গাড়িটা উধাও–
    আমাদের দলের কয়েকজন গাড়িটার পিছে ধাওয়া করেছে
    আমরা খালি ট্যাক্ সি খুঁজছি |
    কে সে লোক ?
    একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি |
    রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে গেছে |
    ওর কেউ নেই কিছু নেই
    শোবার জন্য ফুটপাথ আছে তো মাথার উপরে ছাদ নেই,
    ভিক্ষার জন্য পাত্র একটা আছে তো
    তার মধ্যে প্রকান্ড একটা ফুটো |
    রক্তে মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে
    ওরা পাঁজাকোলা করে ট্যাক্ সির মধ্যে তুলে নিল |
    চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে –আনন্দে ঝংকৃত হয়ে–
    প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে |

    রক্তের দাগ থেকে আমার ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে গিয়ে
    আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি |
    তারপর সহসা শহরের সমস্ত কর্কশে-কঠিনে
    সিমেন্টে-কংক্রিটে |
    ইটে-কাঠে-পিচে-পাথরে দেয়ালে-দেয়ালে
    বেজে উঠল এক দুর্বার উচ্চারণ
    এক প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খধ্বনি–
    প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে
    সমস্ত বাধা-নিষেধের বাইরেও
    আছে অস্তিত্বের অধিকার |

    ফিরে আসতেই দেখি
    গলির মোড়ে গাছের সেই শুকনো বৈরাগ্য বিদীর্ণ ক’রে
    বেরিয়ে পড়েছে হাজার-হাজার সোনালি কচি পাতা
    মর্মরিত হচ্ছে বাতাসে,
    দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠছে ফুল
    ঢেলে দিয়েছে বুকের সুগন্ধ,
    উড়ে এসেছে রঙ-বেরঙের পাখি
    শুরু করেছে কলকন্ঠের কাকলি,
    ধীরে ধীরে ঘন পত্রপুঞ্জে ফেলেছে স্নেহার্দ্র দীর্ঘছায়া
    যেন কোনো শ্যামল আত্মীয়তা |
    অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম
    কঠোরের প্রচ্ছন্নে মাধুর্যের বিস্তীর্ণ আয়োজন |
    প্রাণ আছে, প্রাণ আছে– শুধু প্রাণই আশ্চর্য সম্পদ
    এক ক্ষয়হীন আশা
    এক মৃত্যুহীন মর্যাদা |

    See less
  3. হোলি বা দোল উৎসব  সুচনাঃ- হোলি বা দোল  রঙের উৎসব প্রায়ই সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পূর্ণিমাতে ফাগুন পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর হোলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে মানুষ তাদের সব সমস্যা ভুলে,নতুন রঙে  এবং নতুন ভাবে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালীRead more

    হোলি বা দোল উৎসব 

    সুচনাঃ-
    হোলি বা দোল  রঙের উৎসব প্রায়ই সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পূর্ণিমাতে ফাগুন পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর হোলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে মানুষ তাদের সব সমস্যা ভুলে,নতুন রঙে  এবং নতুন ভাবে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে। এই উৎসব মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়ায়। এই দিনটি ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক উৎসব, এই উৎসব শুধু হিন্দুদের উৎসব নয় এই উৎসব সর্বজনীন।

    হোলি রং এবং প্রেমের উত্সব। প্রতিবছর হিন্দুদের দ্বারা উদযাপন করা একটি বড় উৎসব। এই দিনে প্রেম ও স্নেহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ধর্ম স্থান তথা রাম জন্মভূমি, কৃষ্ণ জন্মভূমি এই দিনে বিশেষ ভাবে পালিত হয়।

    হোলি উৎসবে সমাজের ভুমিকাঃ- 

    হোলি উৎসব ভারতে প্রতি অঞ্চলে সুখের রঙ আনে, আনে প্রতিটি বাড়িতে, এই উৎসব সুখের রঙ দেয়, তাই এই উৎসব কে রং উৎসব বলা হয়। যেমন প্রকৃতি তার আলো, বায়ু, জল, সমস্ত জীবকে কোনও পার্থক্য ছাড়াই বিতরণ করে। অনুরূপভাবে, হোলির রংগুলি এমন কোনো বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত জীবকুলে  খেলা করে। আবীরের রঙে রঙিন রং সব রঙিন হয়ে যায়। সমাজের সব জীবকুলে এমনকি সমস্ত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এই রং সবারে মধ্যে ছরিয়ে পরে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে। তাই হোলি এক সমতা বৃদ্ধি, ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করার উৎসব।

    মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উদযাপন মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উৎসবঃ

    মথুরা এবং বৃন্দাবন পবিত্র স্থান যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সারা বছর ধরে এই পবিত্র জায়গায় দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক ঘুরতে আসে। কিন্তু এই সময় দোল যাত্রার সময় প্রচুর মানুষ এই পবিত্র স্থানে ঘুরতে আসে। মথুরা ও বৃন্দাবনে হোলি উৎসব বিখ্যাত এই দিন আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হয়, সাত দিন ধরে এই সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে। রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে লিলা খেলার নৃত্য হয়। জাত্রাপালার মাধ্যমে রাধা-কৃষ্ণর লিলা খেলা তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মের কাছে। রামায়নের চরিত্র এই সময় তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন প্রকারের খাবার, নৃত্য নতুন পোশাক রং মাখা গোটা শহর কিছুটা অন্য রকম। হাসি-খুশিতে কেটে যায় এই সাতদিন। আর এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য এই দিনে মানুষ ভারতের অন্যান্য শহর থেকে মথুরা এবং বৃন্দাবনে আসে।

    হোলির গুরুত্ব হোলির ও তাৎপর্য :

    এই উৎসব অনেক অনুষ্টানের মাধ্যমে পালন করা হয়, পরিবারের সব সদস্য এবং আত্মীয় একসাথে হোলিকা পুড়িয়ে দেয় এবং হোলি দিবসের পালন করে। এই হোলিকার মৃত্যু এবং প্রতিবছর সে উপলক্ষে হোলিকা পুড়ান হোলির রং খেলার সঙ্গে জরিত।কেউ কেউ মনে করে যে  হিরণ্যকশিপ রাজার বোন হোলিকার নাম থেকেই হোলি নাম হয়েছিল ।

    উপসংহারঃ-

    হোলি প্রেম এবং পারস্পরিক মিলনের একটি উৎসব যা একতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে। সবাই হাসে, এবং প্রত্যেক মানুষ হোলির রং পায়। পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের রং এ মিলে মিশে যায়। মানুষ সবার সাথে সুখ -শান্তি ভোগ করে নেয়। হোলি একটি পবিত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত সুখের উৎসবের পাশাপাশি একটি সামাজিক উৎসব ও বটে । আসুন সবাই একসঙ্গে এই উৎসবের মর্যাদা রাখি এবং আনন্দে এই উৎসব উদযাপন করি। সুখশান্তি সবাই মিলে ভাগ করে নেই এবং হোলির রঙ্গে সবাই রঙ্গিন হই।

    See less
  4. This answer was edited.

    হোলি বা দোল উৎসব  সুচনাঃ- হোলি বা দোল  রঙের উৎসব প্রায়ই সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পূর্ণিমাতে ফাগুন পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর হোলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে মানুষ তাদের সব সমস্যা ভুলে,নতুন রঙে  এবং নতুন ভাবে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালীRead more

    হোলি বা দোল উৎসব 

    সুচনাঃ-
    হোলি বা দোল  রঙের উৎসব প্রায়ই সারা ভারত জুড়ে পালিত হয়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারী বা মার্চ মাসে পূর্ণিমাতে ফাগুন পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রতিবছর হোলির উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই দিনে মানুষ তাদের সব সমস্যা ভুলে,নতুন রঙে  এবং নতুন ভাবে তাদের সম্পর্ক শক্তিশালী করে তোলে। এই উৎসব মানুষের মধ্যে ভালবাসা বাড়ায়। এই দিনটি ঐতিহ্যবাহী ও সাংস্কৃতিক উৎসব, এই উৎসব শুধু হিন্দুদের উৎসব নয় এই উৎসব সর্বজনীন।

    দোল উৎসব নিয়ে কুইজ দেখুন এখানে

    হোলি রং এবং প্রেমের উত্সব। প্রতিবছর হিন্দুদের দ্বারা উদযাপন করা একটি বড় উৎসব। এই দিনে প্রেম ও স্নেহের প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন ধর্ম স্থান তথা রাম জন্মভূমি, কৃষ্ণ জন্মভূমি এই দিনে বিশেষ ভাবে পালিত হয়।

    হোলি উৎসবে সমাজের ভুমিকাঃ- 

    হোলি উৎসব ভারতে প্রতি অঞ্চলে সুখের রঙ আনে, আনে প্রতিটি বাড়িতে, এই উৎসব সুখের রঙ দেয়, তাই এই উৎসব কে রং উৎসব বলা হয়। যেমন প্রকৃতি তার আলো, বায়ু, জল, সমস্ত জীবকে কোনও পার্থক্য ছাড়াই বিতরণ করে। অনুরূপভাবে, হোলির রংগুলি এমন কোনো বৈষম্য ছাড়াই সমস্ত জীবকুলে  খেলা করে। আবীরের রঙে রঙিন রং সব রঙিন হয়ে যায়। সমাজের সব জীবকুলে এমনকি সমস্ত জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে এই রং সবারে মধ্যে ছরিয়ে পরে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করতে। তাই হোলি এক সমতা বৃদ্ধি, ও বন্ধুত্ব বৃদ্ধি করার উৎসব।

    মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উদযাপন মথুরা এবং বৃন্দাবনে হোলি উৎসবঃ

    মথুরা এবং বৃন্দাবন পবিত্র স্থান যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সারা বছর ধরে এই পবিত্র জায়গায় দেশ বিদেশ থেকে পর্যটক ঘুরতে আসে। কিন্তু এই সময় দোল যাত্রার সময় প্রচুর মানুষ এই পবিত্র স্থানে ঘুরতে আসে। মথুরা ও বৃন্দাবনে হোলি উৎসব বিখ্যাত এই দিন আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করা হয়, সাত দিন ধরে এই সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলে। রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে লিলা খেলার নৃত্য হয়। জাত্রাপালার মাধ্যমে রাধা-কৃষ্ণর লিলা খেলা তুলে ধরা হয় নতুন প্রজন্মের কাছে। রামায়নের চরিত্র এই সময় তুলে ধরা হয়। বিভিন্ন প্রকারের খাবার, নৃত্য নতুন পোশাক রং মাখা গোটা শহর কিছুটা অন্য রকম। হাসি-খুশিতে কেটে যায় এই সাতদিন। আর এই ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করার জন্য এই দিনে মানুষ ভারতের অন্যান্য শহর থেকে মথুরা এবং বৃন্দাবনে আসে।

    হোলির গুরুত্ব হোলির ও তাৎপর্য :

    এই উৎসব অনেক অনুষ্টানের মাধ্যমে পালন করা হয়, পরিবারের সব সদস্য এবং আত্মীয় একসাথে হোলিকা পুড়িয়ে দেয় এবং হোলি দিবসের পালন করে। এই হোলিকার মৃত্যু এবং প্রতিবছর সে উপলক্ষে হোলিকা পুড়ান হোলির রং খেলার সঙ্গে জরিত।কেউ কেউ মনে করে যে  হিরণ্যকশিপ রাজার বোন হোলিকার নাম থেকেই হোলি নাম হয়েছিল ।

    উপসংহারঃ-

    হোলি প্রেম এবং পারস্পরিক মিলনের একটি উৎসব যা একতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করে। সবাই হাসে, এবং প্রত্যেক মানুষ হোলির রং পায়। পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের রং এ মিলে মিশে যায়। মানুষ সবার সাথে সুখ -শান্তি ভোগ করে নেয়। হোলি একটি পবিত্র ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত সুখের উৎসবের পাশাপাশি একটি সামাজিক উৎসব ও বটে । আসুন সবাই একসঙ্গে এই উৎসবের মর্যাদা রাখি এবং আনন্দে এই উৎসব উদযাপন করি। সুখশান্তি সবাই মিলে ভাগ করে নেই এবং হোলির রঙ্গে সবাই রঙ্গিন হই।

    See less
  5. খিচুড়ি |khichuri হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না), হয়ে গেল 'হাঁসজারু' কেমনে তা জানি না ৷ বক কহে কচ্ছপে—"বাহবা কি ফুর্তি ! অতি খাসা আমাদের 'বকচ্ছপ মূর্তি' ৷" টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা— পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা ? ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি, চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি !Read more

    খিচুড়ি |khichuri

    হাঁস ছিল, সজারুও, (ব্যাকরণ মানি না),
    হয়ে গেল ‘হাঁসজারু’ কেমনে তা জানি না ৷
    বক কহে কচ্ছপে—”বাহবা কি ফুর্তি !
    অতি খাসা আমাদের ‘বকচ্ছপ মূর্তি’ ৷”
    টিয়ামুখো গিরগিটি মনে ভারি শঙ্কা—
    পোকা ছেড়ে শেষে কিগো খাবে কাঁচা লঙ্কা ?
    ছাগলের পেটে ছিল না জানি কি ফন্দি,
    চাপিল বিছার ঘাড়ে, ধড়ে মুড়ো সন্ধি !
    জিরাফের সাধ নাই মাঠে–ঘাটে ঘুরিতে,
    ফড়িঙের ঢং ধরি সেও চায় উড়িতে ৷
    গরু বলে, “আমারেও ধরিল কি ও রোগে ?
    মোর পিছে লাগে কেন হতভাগা মোরগে ?”
    ‘হাতিমি’র দশা দেখ–তিমি ভাবে জলে যাই
    হাতি বলে, “এই বেলা জঙ্গলে চল ভাই ৷”
    সিংহের শিং নাই এই বড় কষ্ট—
    হরিণের সাথে মিলে শিং হল পষ্ট

    See less
  6. আবোল তাবোল | abol tabol আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়, আয়রে পাগল আবোল তাবোল মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় ৷ আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে নাইকো মানে নাইকো সুর, আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায় মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর ৷ আয় ক্ষ্যাপা–মন ঘুচিয়ে বাঁধন জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্, আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া নিয়মহারা হিসাব–হীন ৷ আRead more

    আবোল তাবোল | abol tabol

    আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা
    স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
    আয়রে পাগল আবোল তাবোল
    মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় ৷
    আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
    নাইকো মানে নাইকো সুর,
    আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
    মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর ৷
    আয় ক্ষ্যাপা–মন ঘুচিয়ে বাঁধন
    জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
    আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
    নিয়মহারা হিসাব–হীন ৷
    আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
    মাতবি মাতাল রঙ্গেতে,
    আয়রে তবে ভুলের ভবে
    অসম্ভবের ছন্দেতে ৷৷

    See less
  7. সৎপাত্র | shot patro শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে- তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ? গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ? জান্‌‌তে চাও সে কেমন ছেলে ? মন্দ নয় সে পাত্র ভাল- রঙ যদিও বেজায় কালো ; তার উপরে মুখের গঠন অনেকটা ঠিক প্যাঁচার মতন । বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই- ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় ! উনিশটি বার ম্যাট্রিকে সে ঘায়েল হযRead more

    সৎপাত্র | shot patro

    শুনতে পেলুম পোস্তা গিয়ে-
    তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
    গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
    জান্‌‌তে চাও সে কেমন ছেলে ?

    মন্দ নয় সে পাত্র ভাল-
    রঙ যদিও বেজায় কালো ;
    তার উপরে মুখের গঠন
    অনেকটা ঠিক প্যাঁচার মতন ।

    বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই-
    ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
    উনিশটি বার ম্যাট্রিকে সে
    ঘায়েল হয়ে থাম্‌ল শেষে ।

    বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়-
    কষ্টে-সৃষ্টে দিন চলে যায় ।
    মানুষ ত নয় ভাই গুলো তার-
    একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
    আরেকটি সে তৈরি ছেলে,
    জাল ক’রে নোট্‌ গেছেন জেলে ।
    কনিষ্ঠটি তব্‌লা বাজায়
    যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।

    গঙ্গারাম ত কেবল ভোগে
    পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।
    কিন্তু তারা উচচ ঘর
    কংসরাজের বংশধর !
    শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
    কি যেন হয় গঙ্গারামের ।-

    যাহোক্‌, এবার পাত্র পেলে,
    এমন কি আর মন্দ ছেলে ?

    See less
  8. Kandari hushiar by Kazi Nazrul Islam দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার! দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ, ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ? কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ। এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। তRead more

    Kandari hushiar by Kazi Nazrul Islam

    দুর্গম গিরি, কান্তার-মরু, দুস্তর পারাবার
    লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি-নিশীথে, যাত্রীরা হুশিয়ার!

    দুলিতেছে তরি, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ,
    ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?
    কে আছ জোয়ান হও আগুয়ান হাঁকিছে ভবিষ্যৎ।
    এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

    তিমির রাত্রি, মাতৃমন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান!
    যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান।
    ফেনাইয়া উঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
    ইহাদের পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।

    অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরন
    কান্ডারী! আজ দেখিব তোমার মাতৃমুক্তি পন।
    হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
    কান্ডারী! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার

    গিরি সংকট, ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ,
    পশ্চাৎ-পথ-যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ!
    কান্ডারী! তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ-মাঝ?
    করে হানাহানি, তবু চলো টানি, নিয়াছ যে মহাভার!

    কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,
    বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!
    ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!
    উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার।
    ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান,
    আসি অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন্ বলিদান
    আজি পরীক্ষা, জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?
    দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুশিয়ার!

    See less
  9. মহাত্মা গান্ধী – (Mahatma Gandhi biography essay) ভূমিকা : যে সমস্ত মানুষ পৃথিবীতে এসে তাদের মহাজীবনের অতি উজ্জ্বল আলাের দ্বারা মানুষের জীবনে কল্যাণের পথটি উদ্ভাসিত করে দেন মহাত্মা গান্ধী সেরূপ একজন মহাপুরুষ। ভারতবাসীকে তিনি এক নবমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। তাই তাই তিনি জাতির জনক। তার অপরাজেয় আত্মশক্Read more

    মহাত্মা গান্ধী – (Mahatma Gandhi biography essay)

    ভূমিকা : যে সমস্ত মানুষ পৃথিবীতে এসে তাদের মহাজীবনের অতি
    উজ্জ্বল আলাের দ্বারা মানুষের জীবনে কল্যাণের পথটি উদ্ভাসিত করে দেন মহাত্মা গান্ধী
    সেরূপ একজন মহাপুরুষ। ভারতবাসীকে তিনি এক নবমন্ত্রে দীক্ষিত করেছিলেন। তাই
    তাই তিনি জাতির জনক। তার অপরাজেয় আত্মশক্তি সমগ্র দেশের প্রাণ শক্তিকে
    জাগ্রত করেছিল। শুধু ভারতবর্ষ কেন সারা বিশ্বের তিনি একজন মহামানব।

    জন্ম ও শিক্ষা: ইংরেজি ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের অন্তর্গত
    পােরবন্দরের এক সম্ত্রান্ত বণিক বংশে মহাত্মা গান্ধীর জন্ম। তার পুরাে নাম মােহন দাস
    করম চাদ গান্ধী। তাঁর পিতার নাম কাবা গান্ধী আর মাতার নাম পুতলিবাঈ। তার পিতা
    ছিলেন অত্যন্ত ন্যায়-নিষ্ঠ ও তেজস্বী পুরুষ। আর মাতা ছিলেন ধর্মশীলা। গান্ধীজী
    বাল্যকালে অতিশয় ভীরু ও লাজুক প্রকৃতির ছিলেন। গান্ধিজীর বিদ্যা শিক্ষা আরম্ভ
    হয় দেশীয় বিদ্যালয়ে। দশবছর বয়সে রাজকোটের উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়ে তার উচ্চশিক্ষা
    শুরু এবং সতের বছর বয়সে প্রবেশিকা পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ভবন নগরের শ্যামল দাস
    কলেজে ভর্তি হন। কলেজে তাঁর বেশিদিন পড়ার সুযােগ হয়নি। দেশীয় প্রথামতে
    মাত্র তের বছর বয়সে কস্তুরীবাঈয়ের সঙ্গে তার বিবাহ হয়।

    ব্যারিস্টারি পাস প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে
    গান্ধীজী ব্যারিস্টারি পাশ করবার জন্য বিলাত যান এবং ১৮৯০ খৃস্টাব্দে ব্যরিষ্টারি পাশ
    করে স্বদেশে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি মদ্য-মাংস স্পর্শ বা কোন আচার-বিরাে
    কার্য করবেন না বলে মায়ের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন
    করেছিলেন। আফ্রিকায় থাকা অবস্থায় সে দেশের বর্ণ বিদ্বেষী সরকারের বিদ্ধ
    সত্যনিষ্ঠ গান্ধীজী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

    কর্মজীবন : প্রথমে বােম্বাইয়ে, পরে রাজকোট শহরে তিনি আইন ব্যবসা
    আরম্ভ করেন। কিন্তু তার প্রকৃতিগত লাজুক স্বভাবের জন্য তিনি আইন ব্যবসায়ে ।
    প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেননি।১৮৯৩ খৃস্টাব্দে একটি জটিল মোকদ্দমার ভার নিয়ে গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকার নাটলে গমন করেন। তার চেষ্টায় মোকদ্দমা আপসে মীমাংসা হয়ে গেলেও তিনি রয়ে
    গেলেন সেখানে। দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের লাঞ্ছনা ও নির্যাতন দেখে তিনি সকল
    প্রবাসী ভারতবাসীকে সম্মিলিত করে গড়ে তুলেন ‘নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস’ নামে
    একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের অধিকার রক্ষার জন্য চালাতে লাগলেন নানাভাবে আন্দোলন।
    এর ফলে সেতাঙ্গদের হাতে তাকে নানা প্রকার নির্যাতন ভােগ করতে হয়েছিল।দীর্ঘ একুশ বছর সেখানে বাস করে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতীয়দের অধিকার। এখানেই
    তার সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা।

    জীবন দর্শনের মূল সূত্র : গান্ধীজীর জীবনদর্শনের মূল ভিত্তিই সত্যের
    প্রতি মূল নিষ্ঠা। যার সমস্ত শক্তির উৎস ছিল সুগভীর মানবতাবোধ, কর্তব্য নিষ্ঠা ও
    ধর্মনিষ্ঠতা। গান্ধীজী বিশ্বাস করতেন হিংসা দিয়ে কখনাে হিংসার উগ্রতাকে স্তব্ধ করা
    যায় না। অহিংসার শক্তি হিংসার শক্তির চেয়ে অনেকগুণ বেশি। গান্ধীজীর জীবন দর্শনের মূল ছিল আধ্যাত্ব চেতনা যা ছিল তাঁর প্রেরণা শক্তি। যে সত্যনিষ্ঠাকে তিনি ছেলেবেলা থেকে অনুসরণ করেছেন সেটাই তাকে পথ দেখিয়েছিল গভীর আধ্যাত্মিক বোধ ও বিশ্বাস।

    ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ও গান্ধীজী : ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে
    গান্ধীজীর ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী। এই স্বাধীনতা
    যজ্ঞে তিনিই ছিলেন প্রধান ঋত্বিক। ১৯১৬ সালে নীলকরের অত্যাচারের প্রতিবাদে
    চম্পারণ তার সত্যাগ্রহ আন্দোলন, ১৯১১ সালে রাওলাট বিলের প্রতিবাদে হরতাল
    ঘােষণা, ১৯২০ সালে ‘খিলাফত আন্দোলন ও ওই সালে অসহযোগ-নীতি গ্রহণ এবং
    বিলাতী-বর্জন আন্দোলন প্রভৃতি দ্বারা তিনি ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতন
    অধ্যায়ের সূচনা করেন। ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি খদ্দর ও চরকা প্রচারে ব্রতী হয়ে
    আন্দোলন চালান। ভারতকে স্বায়ত্ব-শাসন দেওয়ার জন্য ব্রিটিশ সরকার গােলটেবিল
    বৈঠকের আয়োজন করেন গান্ধীজী বিলাত যান এবং ১৯৩৯ খৃষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে
    শূন্য হাতে ফিরে আসে। ১৯৪২ খৃষ্টাব্দে “ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মধ্য দিয়ে
    গান্ধী ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে তার আত্মিক শক্তি দুর্জয় রূপ দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে।
    চকিত করে দেন। বস্তুত এভাবে ধারাবাহিক আন্দোলনে ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তি।
    ত্বরান্বিত হয়েছে। তিনি জীবনে বহুবার কারাবরণ করেন।

    সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য ও গান্ধীজী – গান্ধীজীর স্বাধীনতার জন্য
    সংগ্রাম তথা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুধু সরকার বদল বা শাসন ক্ষমতা হস্তান্তরের
    রাজনীতি নয়। তিনি বিশ্বাস করতেন রাজনৈতিক স্বাধীনতা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক
    স্বাধীনতার সঙ্গে এক সুত্রে জড়িত। তাই সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অসমতার
    বিরুদ্ধে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন প্রথম থেকে। ভারতবর্ষের মাটিতে এক নতুন
    সমাজতন্ত্রের সাধনার প্রবক্তা ছিলেন গান্ধীজী। শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ব্যাপক কুটির শিল্প স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভারতে নব্য আর্থ সামাজিক কাঠামোর হদিশ
    দিয়েছেন তিনিই।

    গান্ধীজী ও মানবপ্রেম : গান্ধীজী ছিলেন প্রেমের পূজারী। তিনি মানব
    সেবক, তরি মানব প্রেম সমাজসেবার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছিল। তিনি হিন্দু-সমাজের
    অস্পৃশ্যতা-রূপ পাপ দূর করবার জন্য চষ্টা করে গেছেন। অস্পৃশাদের তিনি নাম
    দিয়েছিলেন হরিজন’। হিন্দু ও মুসলমানদের সম্প্রীতিকে তিনি দৃঢ় করার প্রয়াস চালিয়ে
    গিয়েছিলেন। গ্রাম প্রধান ভারতের পুনর্গঠনের জন্যও তিনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে
    গিয়েছেন। ভারতবর্ষের সাত লক্ষ শ্রীহীন গ্রামের পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য তার
    অবদান স্মরণীয়।

    উপসংহার : গান্ধীজীর জীবন দর্শন ও ভারতাত্মা শাশ্বত বাণী সংহত
    মূর্তি। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি নাথুরাম গডসের পিস্তলের গুলিতে তার নশ্বর।
    দেহ লীন হয়ে গেছে। কিন্তু তিনি চিরঞ্জীবী। আজও তার আরম্ভ করা কাজ সমাপ্ত
    হয়নি। ভারতের যতটুকু অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে, তা তারই প্রদর্শিত পথে এগিয়ে
    চলার ফল। তবে এখনও অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। দেশ থেকে দারিদ্র্য,
    অশিক্ষা, বিভেদ নীতি আর সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ উপড়ে ফেলতে হবে। তাহলে
    দেশ বাঁচবে, জাতি বাঁচবে,মানব সমাজ বিপদ মুক্ত হবে। আর এই সাধনায় গান্ধীজীর
    জীবন দর্শন হবে আমাদের পরম পাথেয়।

    See less
  10. দীপাবলি, বা, দেওয়ালি হল একটি পাঁচ দিন-ব্যাপী হিন্দু ধর্মীয় উৎসব । আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয় । কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয় । হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূরRead more

    দীপাবলি, বা, দেওয়ালি হল একটি পাঁচ দিন-ব্যাপী হিন্দু ধর্মীয় উৎসব । আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদশীর দিন ধনতেরাস অথবা ধনত্রয়োদশী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দীপাবলি উৎসবের সূচনা হয় । কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই উৎসব শেষ হয় ।

    হিন্দুদের কাছে, দীপাবলি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব । এই দিন সব হিন্দুরা বাড়িতে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । বাংলা, আসাম, ওড়িশা ও মিথিলাতে এই দিনটি কালীপূজা হিসেবে উদযাপন করা হয় । ভারতীয় সমাজের দৃঢ় বিশ্বাস ‘দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন’ বা ‘ন্যায়ের কাছে অন্যায়ের পরাজয়’ এই নীতিতে ।

    “দীপাবলি” নামটির অর্থ “প্রদীপের সমষ্টি” এই দিন হিন্দুরা ঘরে ঘরে ছোটো মাটির প্রদীপ জ্বালেন । এই প্রদীপ জ্বালানো অমঙ্গল বিতাড়নের প্রতীক । বাড়িঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সারা রাত প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখলে ঘরে লক্ষ্মী আসেন বলে উত্তর ভারতীয় হিন্দুরা বিশ্বাস করেন । বাংলার দীপান্বিতা কালীপূজা বিশেষ জনপ্রিয় । এই উৎসব সাড়ম্বরে আলোকসজ্জা সহকারে পালিত হয়।

    ধনতেরাসের দিন অনেক ভারতীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের অর্থবর্ষের সূচনা হয়; লোকজন নতুন বর্তন, বাসন, গয়না প্রভৃতিও কিনে থাকেন এই দিনে । তবে বেশির ভাগ বাঙালি ব্যবসায়ীদের অর্থবর্ষের সূচনা হয় পয়লা বৈশাখে । দ্বিতীয় দিনটিকে বলে ভূত চতুর্দশী । এই দিনে বাঙালিরা বাড়ির চোদ্দোটা এঁদো কোণায় চোদ্দোটা প্রদীপ জ্বালিয়ে কালো মুছিয়ে আলোকিত করে তোলেন বাড়িটাকে । কথায় আছে যে এমনটা করলে ভূতপ্রেত পরিবার আর স্বজনদের ঘাড়ের কাছে নড়তে পারে না; এমনটাও লোককথায় শোনা যায় যে এই প্রদীপসজ্জার মাধ্যমে পরিবারের পিতৃপুরুষদের অনুষ্ঠানে পদার্পণ করার জন্য নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়, যাতে তারা মায়ের বাৎসরিক আগমনে উপস্থিত হয়ে সবাইকে শুভাশীষ দিয়ে নিজেরা মায়ের আশীর্ব্বাদে মোক্ষ লাভ করবেন । তৃতীয় দিন কার্তিক অমাবস্যায় যেখানে উত্তর ভারতে লক্ষ্মীর পূজা চলছে, পশ্চিমবঙ্গে দারুণ জাঁকজমকে ঘটা করে পালন করা হয় কালীপূজা ।

    দেওয়ালির দিনে প্রদীপের আলোয় বাড়ি-বাড়ি ঝকমক করে ওঠে । নানান রঙের বাজিতে আকাশটাও রীতিমত চকচক করে থাকে । দীপাবলি সারি-সারি প্রদীপের আলোকে স্বর্গের দেবতাকে মর্তের কুটিরে বরণ করে নেবার উৎসব । চতুর্থ দিন কার্তিক শুক্লা প্রতিপদ । এই দিন বৈষ্ণবেরা গোবর্ধন পূজা করেন । পঞ্চম দিন যমদ্বিতীয়া বা ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা । এই দিন বোনেরা তাদের ভাইদের জন্যে উপোস করে তাদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ করে।

    See less