1. ( Note 😉:- কারো জন্য ইতিহাস তিতা তো কারো জন্য মিঠা হয়।তিতা লাগলে দয়া করে আবার তিতা কমেন্ট করবেন না।আমি মিষ্টি মানুষ😝।) 🧐সুলতান মাহমুদ গজনভি,ইতিহাসে বহু বিতর্কিত এক ব্যাক্তিত্ব।মুসলমানদের নিকট তিনি "গাজী"।অনেকের মতে যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের পৌত্তলিকদের ধ্বংস করা।আবার ভারতের হিন্দু সমাজের কাছে তিনি ছিRead more

    (

    Note 😉:- কারো জন্য ইতিহাস তিতা তো কারো জন্য মিঠা হয়।তিতা লাগলে দয়া করে আবার তিতা কমেন্ট করবেন না।আমি মিষ্টি মানুষ😝।)

    🧐সুলতান মাহমুদ গজনভি,ইতিহাসে বহু বিতর্কিত এক ব্যাক্তিত্ব।মুসলমানদের নিকট তিনি “গাজী”।অনেকের মতে যার উদ্দেশ্য ছিল ভারতের পৌত্তলিকদের ধ্বংস করা।আবার ভারতের হিন্দু সমাজের কাছে তিনি ছিলেন এক অসুর।যিনি কুগ্রহের মতই হঠাৎ উদিত হন।হুনদের মত তাকে ভাবা হতো বর্বর এক লুণ্ঠনকারি।কিন্তু নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার করলে তিনি এক আজন্ম নেতা,ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সুশাসক,ন্যায়পরায়ণ সুবিচারক বিশ্বের অন্যতম এক দক্ষ বিজেতা এবং নৃপতি।অধ্যাপক হাবিব যথার্থই বলেন,”উত্তরসূরিদের কাছে তিনি ছিলেন সত্যই কিংবদন্তি রাজকুমার।সুলতান তার জনগণের নিকট দেবদূত হিসেবে খ্যাত ছিলেন।এইবার আসেন আসল কথায় আসি।

    ***১:- সুলতান মাহমুদ তার ভারতবিরোধী অভিযান শুরু করেন ১০০০ খ্রিস্টাব্দে।খাইবার পাস সীমান্তের কিছু দুর্গ দখল করে উনি তার সীমান্ত সুরক্ষিত করেন।

    ***২:-পিতৃশত্রু জয়পালের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ১০০১ সালে সুলতান মাহমুদ তার ১০০০০ সেনাদল নিয়ে জয় পালের ১২০০০ ঘোড়সাওয়ার,৩০০০০ পদাতিক এবং ৩০০ হস্তী বাহিনীর বিরুদ্ধে অগ্রসর হন এবং ২,৫০,০০০ দিনার,৫০ টি হাতি ও রাজ্যের কিয়দংশ ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিয়ে পরাজিত জয়পাল কে মুক্তি দেন।

    ***৩:-১০০৪-১০০৫ খ্রিস্টাব্দে ঝিলম নদীর তীরের ভীরা রাজ্য আক্রমণ করেন এবং তা অধিকার করেন। যা ছিল মূলত তার রাজ্যের সুরক্ষার জন্য।

    ***৪:-১০০৬ সালে মাহমুদ মুলতানের আবুল ফাতেহ দাউদ এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামলে দাউদ রাজ্য ছেড়ে পালিয়ে যায়।এভাবেই মুলতান সুলতান মাহমুদের করতলগত হয়।এটি ছিল তার রাজ্যের বিস্তারের জন্য।

    ***৫:-১০০৭ সালে আনন্দপালের ছেলে সুখপাল যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নওরোজ শাহ্ উপাধি নিয়ে ছিলেন তিনি ইসলাম ত্যাগ করে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।সুলতান ক্ষুদ্ধ হন এবং ভারতে ৫ম অভিযান পরিচালনা করে সুখপালকে পরাজিত ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সুখপালের থেকে ৪০০০০ দিরহাম জরিমানাও আদায় করা হয়।

    ***৬:-১০০৮ সালে সুলতান মাহমুদ অনন্দপালের বিরুদ্ধে তার ষষ্ঠ অভিযান পরিচালনা করে। আনন্দপাল দিল্লি,কনৌজ, উজ্জৈনি, গোয়ালীয়র ও আজমিরের হিন্দু রাজাদের নিয়ে এক বিশাল বাহিনী প্রস্তুত করে।কাশ্মীরের খোক্কার জাতি ও যোগ দেয় সেই বাহিনীতে। ভীষন যুদ্ধ হয়।যুদ্ধের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময় আনন্দ পালের হস্তী বাহিনীর হাতিগুলো হঠাৎ কেন জানি ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়।ফলে আনন্দ্পালের শিবিরে গোলযোগ বেঁধে যায়।আর মাহমুদ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যুদ্ধ জিতে যান।**এই যুদ্ধ অবশ্যই ছিল তার কর্তৃত্ব বৃদ্ধির যুদ্ধ।অর্থাৎ,ভারত থেকে গজনীতে যাতে ভবিষ্যতে কেউ হামলা করার সাহস না করে তার পাকা পোক্ত ব্যবস্থা।সুলতান মাহমুদ চাইছিলেন মধ্য এশিয়া তে নিজের সাম্রাজ্য দাঁড় করতে।ভারতের বিজিত রাজ্যগুলো নিজের করলে তার মধ্য এশিয়াতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ব্যাহত হতে পারে এই ভেবে তিনি শুধু পাঞ্জাব বাদে সকল রাজ্যগুলো মোটা অংকের জরিমানা ও রাজাদের ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে ছেড়ে দেন।

    ***৭:-১০০৯ সালে সুলতান মাহমুদ কাংড়ার নাগরকোটে অভিযান চালান এবং ঐতিহাসিক ফিরিস্তার মতে,দুর্গ এবং ধ্বংস করা মন্দির থেকে ৭ লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা,২শ মণ খাটি সোনা,৭শ মণ রূপার পাত,২ হাজার মণ অপরিশোধিত রূপা এবং ২০ মণ মণি মুক্তা লাভ করেন😲।। এ অবিশ্বাস্য পরিমাণ সম্পদ দেখে সুলতান মাহমুদ নিজেই স্তম্ভিত হন।এই দুর্গে অভিযানের কারন হয় তো এইটাই।তবে এত সম্পদ থাকার কথা সুলতান মাহমুদ নিজেও কল্পনা করতে পারেননি।

    ***৮:-১০১০ সালে মাহমুদ মুলতানের বিদ্রোহী শাসক দাউদ কে পরাজিত করে শাস্তি প্রদান করেন।

    ***৯:- এতবার হারার পরেই আমাদের “Robert Bruce” আনন্দপাল হতোদ্যম হননি🤟😏।তিনি নিজের রাজধানী নন্দিতে স্থানান্তর করে সৈন্য সংগ্রহ শুরু করেন।মাহমুদ সেই কথা জানতে পারেন।কিন্তু যুদ্ধ করার আগেই ওপর ওয়ালা আনন্দ পালকে ডেকে নেয়😦।যার দরুন তার পুত্র ত্রিলোচন সিংহাসনে বসে।সিংহাসনে বসেই বেচারা ১০১৪ সালে সুলতান মাহমুদের আক্রমণের শিকার হয়।সে কাশ্মীরে পালিয়ে যায়।কিন্তু ট্রি লোচন😏🤟 ছিল দারুন লেভেলের দাগাবাজ😡।সে তার আশ্রয়দাতা কাশ্মীরের রাজাকে পরাজিত করে কাশ্মীর দখল করে।কিন্তু কাশ্মীরে না থেকে সে তার পিতৃ রাজ্যে ফিরে এসে শিবলী পাহাড়ে নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করে।কিন্তু আবারও মাহমুদের কাছে ধরা খেতে হয় তাকে।।তার পরের কাহিনী অতি সংক্ষিপ্ত,১০২১ এ ট্রি লোচন তার কৃতঘ্নতার শাস্তি পায়।সে গুপ্ত ঘাতকের হাতে নিহত হয়।এরপর তার ছেলে ভীম রাজা হলেও কয়েক বছর পর মারা যান।এভাবে হিন্দুশাহী বংশের পতন হয়😞।ট্রিলোচনের ক্ষমতা খর্ব করাই তার উদেশ্য ছিল বলে মনে হয়।

    ***১০:-১০১৪ সালে মাহমুদ থানেস্বর অভিযান চালান। সেখানের হিন্দুগণ বীর বিক্রমে যুদ্ধ করলেও পরাজিত হন তারা।এরপর মাহমুদ বিখ্যাত চক্রস্বামী মন্দির ধ্বংস করেন এবং সেখানে থাকা অঢেল সম্পদ আর বহুমূল্য ব্রোঞ্জের মূর্তিটি নিয়ে যান।মন্দির ধ্বংস করাই তার উদেশ্য ছিল সম্ভবত।

    ***১১:- মাহমুদ কাশ্মীর অভিযান চালান দুই বার।তবে প্রচন্ড শীতের কারন দুইবারই ব্যর্থ হন।কারন জানি না।

    ***১২:-১০১৮ তে মাহমুদ হিন্দুস্তানি সাম্রাজ্যের প্রাণকেন্দ্র বা রাজধানী কনওজ অভিযান চালান।পথে বালান ও বুলন্দ শর এর রাজা হরদত্ত কে পরাজিত করেন, হরদত্ত ১০০০০ লোকসহ ইসলাম গ্রহণ করেন।এরপর বৃন্দাবন ও মথুরায় নিজ আধিপত্য বিস্তার করেন এবং উভয় স্থান হতেই প্রচুর অর্থ সম্পদ দখল করেন।(কিছু মন্দির মনে হয় ধ্বংস করা হইছিলো)।১০১৯ সালে জানুয়ারিতে কনৌজের দরজায় টোকা দেন মাহমুদ।আর এই টোকায় ভয় পেয়ে কনৌজের প্রতিহার রাজ রাজ্যপাল বিনাশর্তে বশ্যতা স্বীকার করে।এই অভিযানে মাহমুদ ৩০ লাখ দিরহাম,৩৫০ টি হাতি,৫৫ হাজার দাস নিয়ে গজনী ফিরে যান।লক্ষ ছিল ভারতের শাসকদের দুর্বল করা এবং কর্তৃত্ব ও তাদের ভেতর ভয় বজায় রাখা।

    ***১৩:- কনওজ রাজ রাজ্যপাল মাহমুদের বশ্যতা স্বীকার করায় বাকিরা তার ওপর দারুন ক্ষেপে যায়।ভাবতে পারেন,কি খারাপ😡!বিপদে সাহায্য তো করেই না আবার মান মর্যাদা দেখাইতে আসে।তো রাজ্যপাল তার প্রতিবেশী রাজাদের হাতে মারা যায়।এর প্রতিশোধ নিতে ক্রোধ উন্মত্ত সুলতান মাহমুদ চান্দেলা রাজ্য আক্রমণ করেন ১০১৯ সালে। চন্দেলা রাজ পাতলা গলি দিয়ে পালিয়ে যান 😄।প্রচুর ধন সম্পদ নিয়ে তিনি গজনী ফিরে যান।

    ***১৪:- মাহমুদ ১০২১-১০২২ সালে গোয়ালিয়র আক্রমণ করেন এবং গোয়ালিয়োর রাজ বার্ষিক কর প্রদান করার প্রতিশ্রতি দিয়ে আত্মরক্ষা করেন।আমি যদ্দুর জানি কনৌজের রাজার জন্য প্রতিশোধ নেওয়াই ছিল এই অভিযানের উদেশ্য।

    ***১৫:- কলিঞ্জরের বিরুদ্ধে মাহমুদ ১০২৩ সালে অভিযান পরিচালনা করেন এবং প্রখ্যাত গন্ডার দুর্গ অবরোধ করেন।কলিঞ্জর রাজ ও নিরুপায় হয়ে গোয়ালিয়র রাজার মত করদানের চুক্তি করে আত্মরক্ষা করেন।কলিঞ্জরও প্রতিশোধের জন্যই মাহমুদের আক্রমণের শিকার হয়।

    ***১৬:- এইবার এই লিস্টের সব থেকে contrivarsal অংশে আসলাম। চালুক্য রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত কথিয়াবাড়ের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সোমনাথ মন্দির আক্রমণ ছিল সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমনের সবচে উল্লেখ্যোযোগ্য ঘটনা।ঐতিহাসিক ইবনুল আসির,ইবনে খালদুন, ফিরিস্তা,আধুনিক ঐতিহাসিক ও গবেষক ডব্লিউ. হেগ প্রমুখের মতে সোমনাথ মন্দিরকে হিন্দু পুরোহিতরা ভাবত ইনভিনসিবল।সোমনাথের দেবতা অজেয় এবং ওনার মন্দির ধ্বংস করা কারো সাধ্য নেই।তারা সুলতানকে প্রচুর অভিশাপ দেয় আর চ্যালেঞ্জ করে সোমনাথ আক্রমণ করতে।সোমনাথ মন্দিরের দেবতা মাহমুদকে ভষ্ম করে দেবেন।মাহমুদ সোমনাথ আক্রমণ করতে আসলে নির্ঘাত মরবেন এবং নির্বংশ হবেন blah blah।এইসব কথা শুনলে কার না রাগ হবে?তার ওপর হিন্দু রাজারা প্রচুর সম্পদ মন্দিরে রেখেছিল সুলতান মাহমুদকে চ্যালেঞ্জ করে।১০২৬ সালের ৬ই জানুয়ারি সোমনাথ মন্দিরের দরজায় সুলতান তার সৈন্যবাহিনী নিয়ে উপস্থিত হন।গুজরাটের রাজা ভীমদেবের নেতৃত্বে হিন্দুরা প্রবল বাঁধা দেয়।কিন্তু তাদের পরাজিত করে সুলতান মাহমুদের বাহিনী।অতঃপর সুলতানের আদেশে মন্দিরের ৩০০ দেবদেবীর মূর্তি বিচূর্ণ করা হয়। এ মন্দির হতে সুলতান মাহমুদ ২ কোটি স্বর্ণমুদ্রা 😲এবং প্রচুর অলংকার হস্তগত করেন!! ড. ঈশ্বরী প্রসাদ বলেন,”সোমনাথ বিজয় মাহমুদের ললাটে নতুন বিজয় গৌরব সংযুক্ত করে”।এই অভিযান নিঃসন্দেহে মন্দির এবং মন্দিরস্থ দেব দেবীদের বিগ্রহ ধ্বংস করতেই পরিচালনা করা হয়েছিল।

    ***১৭:- সুলতান মাহমুদের শেষ অভিযান ছিল জাঠদের বিরুদ্ধে।সোমনাথ থেকে ফেরার পথে মুসলিম সৈনিকরা জাঠ দস্যুদের দ্বারা উৎপীড়িত হয়।এইজন্য,তার শেষ অভিযান জাঠ দের উচিত শিক্ষাদানের মাধ্যমে শেষ হয়।

    সারাজীবন সংগ্রাম করে এই মহান নৃপতি মৃত্যুবরণ করেন ১০৩০ সালে গজনীতে।

    (ভাবছিলাম ইতিহাসটা একটু মজা করে লিখবো। মানে কাহিনীগুলো যৎকিঞ্চিৎ হাস্যরস যোগ করে।বোরিং সাবজেক্ট বলে তো সবাই অবজ্ঞা করে।তাই এইরূপ পদক্ষেপ কিরূপ হবে তা জানার বড় ইচ্ছা🙂।কমেন্ট করে জানাবেন যদি ইচ্ছা হয় 😉।)

    See less
    • 0