বাংলা প্রবন্দ : বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ | vigyan ashirbad na abhishap bengali rachana
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
ভূমিকা : মানব জাতির গৌরবের শিখরে উত্তরণে যার ভূমিকা নিঃসংশয়ে
এক বাক্যে স্বীকার করে নিতে হয় তার নাম বিজ্ঞান। ‘বিজ্ঞান’ শব্দের প্রকৃত অর্থ।
হলাে বিশেষ জ্ঞান। ‘বি মানে বিশেষ। অর্থাৎ বিশেষ জ্ঞান যা মানুষকে বিশেষ রূপে
জ্ঞানের পথে পরিচালনা করে। যেখানে থাকে না কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, থাকে শুধু
সঠিক পথের নির্দেশ। বিজ্ঞান আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তবে বর্তমান মানব।
সভ্যতা বিজ্ঞানের কাছ থেকে কী পেয়েছে আর বিজ্ঞান মানব সভ্যতার কাছ থেকে
কতটুকু গ্রহণ করছে তার হিসাব নিকাশ করবার দিন এসে গেছে।
বিজ্ঞানের জন্ম ও ক্রম বিকাশ : বিজ্ঞানের জন্ম কেমন করে হলাে? তা।
কোনও প্রাণীর মতাে একটি মুহূর্তে জন্ম লাভ করেনি। শতশত বছর ধরে অসংখ্য
মানুষের চিন্তা ও কর্মের মধ্যদিয়ে তিলে তিলে এই বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে। সৃষ্টির উষা
লগ্নে মানুষ ছিল গুহাবাসী। গভীর অরণ্যে, নদীতীরে ছিল মানুষের বাসস্থান। ভয়ঙ্করী
প্রকৃতি বার বার মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকত। গভীর অরণ্যে ঝড়-ঝঞ্জা, বদ্র-বিদ্যুৎ
আর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষকে বাঁচতে হবে নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে। মানুষ
ছিল তখন প্রকৃতির হাতের ক্রীড়নক। সেদিন মানুষকে রক্ষা করতে স্বর্গ থেকে নেমে
আসেননি কোন দেবতা। কিন্তু মানুষ যেদিন নিজ বুদ্ধি বলে পাথর ঘষে অস্ত্র তৈরি করে
পশুদের আক্রমণ প্রতিহত করল, তারপর ভয়ঙ্কর প্রকৃতিকে বশে এনে আত্মরক্ষার
চিন্তা করল সে দিনই বলা যায় জন্ম বিজ্ঞানের। মানুষ বিজ্ঞান-বুদ্ধির উপর নির্ভর করে
শিখেছে আগুনের ব্যবহার, শিখেছে কৃষিকর্ম, বয়ন কর্ম আর রাস্তা নির্মাণ, ওই বিজ্ঞানের
শক্তির নিসর্গ প্রকৃতি তথা আকাশে, স্থলে-জলে আধিপত্য বিস্তার করে। এভাবে
মানুষ আপন প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তার করে বিধাতার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করল। আমরা এতক্ষণ যা বললাম তার সব কিছুই বিজ্ঞানের আশীর্বাদ।
আধুনিক যুদ্ধ ও বিজ্ঞান : আধুনিক কালের যুদ্ধ বিগ্রহ মানুষকে করে
তুলেছে আতঙ্কিত। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে রণনীতি ও অভাবনীয় রূপে পরিবর্তিত
হয়ে গেছে। আধুনিক কালের যুদ্ধ বাহুবলের নয়, অস্ত্র বলের। আধুনিক সংগ্রাম যে
এত পরিমাণে সর্বনাশা হয়ে উঠেছে তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞানের নিত্য নতুন মারণ
অস্ত্রের আবিষ্কার। তাই সমগ্র বিশ্বের শান্তি প্রিয় মানুষ আজ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর দিকে
বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষ তাই বিজ্ঞানের অবদান সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে
উঠেছে, বারবার একটি জিজ্ঞাসা থাকে ভাবিয়ে তুলেছে– আধুনিক বিজ্ঞান কী চায় –
সভ্যতার অগ্রগতি না বিনাশ ? জীবন না মৃত্যু।
যান্ত্রিক যুদ্ধ : প্রথম মহাযুদ্ধে মারণ-অস্ত্রের এমন ভয়াবহ রূপ আত্মপ্রকাশ
করেনি। কিন্তু দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষ অস্ত্র ভয়ঙ্কর, দানবীয় শক্তি, শত সহস্রগুণ বেশি
ভয়াবহ ও মারাত্মক। মাত্র দুটি আণবিক বোমার প্রলয়ংকর বিস্ফোরণে অগণিত
অধিবাসী সহ জাপানের দুটি শিল্প সমৃদ্ধ নগরী হিরোশিমা ও নাগাসাকি মুহুর্তে পৃথিবীর
বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। আর বিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর বৃহত্তম বাণিজ্য নগরীর
হোয়াইট হাউস ধ্বংসের স্মৃতি মানুষকে ভীত ও শঙ্কিত করে তুলেছে। পারমাণবিক অস্ত্রের
ভারসাম্য তৈরি করতে আমেরিকা যে জানালাটি খুলে দিয়েছে তা একই সঙ্গে অস্ত্রের
ভারসাম্য গত নিয়ন্ত্রণ চুক্তির ও নক্ষত্র যুদ্ধের বাতায়ন। স্বদেশের নিরাপদ মাটিতে বসে
প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে আকাশপথে শত্রুদেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াই হবে আগামী
যুদ্ধের লক্ষ্য। সভ্যতা বিধ্বংসী এই মনােভাবের পেছনে আছে হিংসা মদমত্ততা আর।
লাভ। যতদিন পৃথিবীর বুকে সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ বর্তমানে থাকবে ততদিন বিশ্বের
নর-নারীকে যুপকাষ্ট বদ্ধ মৃত্যুমুখী বলির পশুর মতাে ভয়ার্ত অসহায় হয়ে দিন যাপন।
করতে হবে।
বিজ্ঞানের মৃত্যু-সাধনার কারণ : বিজ্ঞানীদের কাছে মানুষের ঋণ অপরিমেয়,
বিজ্ঞানের কল্যাণতম অবশ্যই স্বীকার্য। এখন আমাদের জিজ্ঞাসা, বিজ্ঞানীরা বিশ্ব ধ্বংসের
কাজে নিজের শক্তি ও মনীষা নিয়োজিত করেছেন ? জীবন সাধনা পরিবর্তে কেন
তাদের মৃত্যুমুখী সাধনা ? কোন শক্তির কাছে বিজ্ঞানী তার মহান আদর্শ, সমস্ত বিবেক
বুদ্ধি বিক্রি করে দিয়ে জনকল্যাণের ক্ষেত্রে দেউলিয়া সেজে বসল ? এর জন্য কি
বিজ্ঞানীরাই দায়ি না অপর কোন দানবীয় শক্তি – এই জটিল প্রশ্নের সমাধান আমাদেরই
করতে হবে।
পুঁজিবাদের বিকৃত ক্ষুধার ভয়াবহ পরিণাম : আধুনিক রাষ্ট্রধর্ম ও সমাজ
ব্যবস্থা কে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এর পিছনে আত্মগোপন করে আছে মুষ্টিমেয়
মানুষের সীমাহীন লোভ, পরাজিত কে শাসন ও শোষণের হিংস্র প্রবৃত্তি। ও পুঁজিবাদী
মানবগোষ্ঠীর স্বার্থের ফলে সমগ্র পৃথিবী আজ আর্ত ও পীড়িত। সেই স্বার্থান্ধ ধনিক
শ্রেণির কাছে জগতের বিজ্ঞানীরাও নিজেদের বিবেক, বুদ্ধি, প্রতিভা বিকিয়ে দিয়েছেন।।
জীবনাদর্শের এই যে অধঃপতন, আজ এরই জন্য সাম্রাজ্যবাদ ক্ষুধার্ত গরুড়ের মতাে
সমগ্র পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইছে। আর মানুষ দিন দিন নেমে আসছে পশুত্বের।
পর্যায়।
উপসংহার : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন – ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানাে
পাপ। সুতরাং বিজ্ঞানীদের সত্য তপস্যার উপর আমরা বিশ্বাস হারাব না। তাছাড়া
পৃথিবীতে এখনও বিবেকবান দূরদৃষ্ট সম্পন্ন মানুষের অভাব নেই। ধীর গতিতে হলেও
বিশ্ব বিবেক জাগ্রত হচ্ছে, আশা করা যায় মানুষ বিজ্ঞানকে সর্বনাশের হাতিয়ার হিসেবে
ব্যবহার করা থেকে নিবৃত্ত হয়েছে সার্বিক মানব কল্যাণে থাকে প্রয়োগ করবে। বিজ্ঞান
কোটি কোটি মানুষের আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবে।