Bengali Forum Latest Questions

  1. বারুদ (পৃথিবী ব্যান্ড) আমি বারুদ বুনেছি আমার হৃদয়ে অলিন্দে আমার অস্তিত্ব বিপন্ন প্রতিনিয়ত ছুরির আঘাতে আমার মায়ের শরীর পুড়ছে ভালো লাশকাটা ঘরে আমার বোনের কচি গাল আজ বাজারে নিলাম ধরে কিসের যন্ত্রণা আমি শুয়েছি সারাক্ষণ লাশে ছড়া শুয়োরের মতো বেইমান প্রজনন।. আমার শিরায় শিরায় রক্তের মিছিল সংশয় এই প্রRead more

    বারুদ (পৃথিবী ব্যান্ড)

    আমি বারুদ বুনেছি
    আমার হৃদয়ে অলিন্দে
    আমার অস্তিত্ব বিপন্ন
    প্রতিনিয়ত ছুরির আঘাতে
    আমার মায়ের শরীর পুড়ছে
    ভালো লাশকাটা ঘরে
    আমার বোনের কচি গাল
    আজ বাজারে নিলাম ধরে
    কিসের যন্ত্রণা আমি শুয়েছি সারাক্ষণ
    লাশে ছড়া শুয়োরের মতো
    বেইমান প্রজনন।.

    আমার শিরায় শিরায় রক্তের মিছিল
    সংশয় এই প্রাণে
    যত নির্বাচন আজ ভাগাড়ে যাক
    আমি জন্ম নেব আগুনে।

    এসো আমরা গড়ি নতুন পৃথিবী এই আশায়
    যেখানে মানুষ বাঁচতে চায়,
    বাঁধতে চায় ভালোবাসায় ।
    ধ্বংস হোক যত মানব শত্রু সব
    এখানে জন্ম নিক নবজাতক।

    আমি স্বপ্ন বেঁধেছি
    আমার পিস্তলের ট্রিগারে।
    আমার বালিশে বারুদ
    আমার ঘুম নেই দুচোখে
    আমি বিষ ঢেলেছি
    আমার প্রেমিকার বুক জুড়ে।
    আমি কসাই সেজে নিজের মাংস
    বিক্রি করেছি বাজারে।

    কিসের এ যন্ত্রনা আমার নিথর শরীরে
    আজো শুনি গোগানি
    প্রতিবন্ধকতার বিচারে
    আমি বিশ্বাসঘাতক দাঁতের বিষে
    কত মানুষ মেরেছি
    আমার ঝলসানো প্রাণের বারুদ বাগানে
    একটা বিপ্লব দেখেছি।

    এসো আমরা গড়ি নতুন পৃথিবী এই আশায়
    যেখানে মানুষ বাঁচতে চায়,
    বাঁধতে চায় ভালোবাসায় ।
    ধ্বংস হোক যত মানব শত্রু সব
    এখানে জন্ম নিক নবজাতক।

    See less
  1. সারাংশ : খেয়া কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত চৈতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। রবীন্দ্রনাথ পতিসরের নাগর নদী ভ্রমণকালে থাকা অবস্থায় এই কবিতা রচনা করেছিলেন। কবি নদীর তীরে গড়ে ওঠা সরল গ্রাম্য জীবনধারা এই কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। খেয়া রবীন্দ্রনাথের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এই কবিতায় সভ্যতার দুইটিRead more

    সারাংশ :
    খেয়া কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত চৈতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। রবীন্দ্রনাথ পতিসরের নাগর নদী ভ্রমণকালে থাকা অবস্থায় এই কবিতা রচনা করেছিলেন। কবি নদীর তীরে গড়ে ওঠা সরল গ্রাম্য জীবনধারা এই কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

    খেয়া রবীন্দ্রনাথের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এই কবিতায় সভ্যতার দুইটি দিক; কোলাহল মগ্ন নগর এবং শান্তি প্রবন গ্রামাঞ্চলের জীবনের চরিত্র ফুটে উঠেছে।
    কবিতার প্রথমেই সহজ সরল গ্রামাঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। নদীর দুই তীরে দুইটি গ্রাম কিন্তু এই দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক, জানাশোনা। নিত্যদিন ওরা খেয়ার মাধ্যমে এক গ্রাম হইতে অন্য গ্রামে আসা-যাওয়া করে। তাই খেয়ে নৌকা হয়ে উঠেছে দুই পাড়ের মানুষের আত্মীয়তার অনন্য বাহন।
    গ্রামের মানুষ গুলি এতই সহজ যে ওরা বাইরের জগৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বহির্বিশ্বে কত না যুদ্ধ-বিগ্রহ লড়াই অবিরাম হয়ে যাচ্ছে আর কত না ইতিহাস নিত্যদিনে গড়ে উঠছে। ক্ষমতার লড়াই এর ফলে হচ্ছে রক্তপাত, যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে কেহ বা ক্ষমতা অর্জন করছে আর কেহ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাচ্ছে।

    রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে
    সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে

    অর্থাৎ কত রাজা বা ক্ষমতাবান সরকার যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে আর যুদ্ধে জয় লাভ করছে। এ সবকিছুই যেন এই গ্রামের মানুষদের ছুইতে পারে নাই।
    মানুষের সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুনত্বের। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানব সভ্যতাকে নিয়ে এসেছে এক নতুন স্থানে। মানুষের মনে তৃষ্ণা জেগেছে না জানাকে জানার, অসম্ভবকে সম্ভব করার। তাই আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন পদ্ধতি নতুন প্রযুক্তি। আর তার সঙ্গে উঠছে অনেক হলাহল অর্থাৎ বিশৃঙ্খলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    কিন্তু নদীর এই দুই তীরবর্তী গ্রাম তার ব্যতিক্রম। এখানে নেই কোনো নতুনত্ব, নেই কোনো অগ্রগতি, নেই কোন বহির্বিশ্বের খবর।

    এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে

    তাদের সরল জীবনযাত্রায় কোন বাধাপ্রাপ্ত হয় নাই। গ্রামের দুই পারের মানুষের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঘটেনি বরং ওদের মধ্যে রয়েছে মিলন, ভালোবাসা এবং আদান প্রদান। তাদের জীবনের নদীস্রোত নদীর খেয়ার মত চলে যাচ্ছে অবলীলায়।

    মূলভাব :

    কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতার মাধ্যমে নগরজীবনের বা উন্নত সভ্যতার অন্ধকার দিক কে তুলে ধরেছেন। যদিও নগরজীবন বা আধুনিক সভ্যতা গ্রামাঞ্চলের মানুষ থেকে অনেক উন্নত কিন্তু তাদের মধ্যে মিল নেই, মায়া নেই বরং সংঘাত এবং দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। আর তার বিপরীতে গ্রাম্য জীবনযাত্রা অনুন্নত হওয়া সত্বেও তাদের মধ্যে রয়েছে নিবিড় মিলন, ভালোবাসা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা।

    See less
  1. রথযাত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রথযাত্রার দিন কাছে। তাই রানী রাজাকে বললে, ‘চলো, রথ দেখতে যাই।’ রাজা বললে, ‘আচ্ছা।’ ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া বেরোল, হাতিশাল থেকে হাতি। ময়ূরপংখি যায় সারে সারে, আর বল্লম হাতে সারে সারে সিপাইসান্ত্রি। দাসদাসী দলে দলে পিছে পিছে চলল। কেবল বাকি রইল একজন। রাজবাড়ির ঝাঁটার কাঠি কুড়িযRead more

    রথযাত্রা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    রথযাত্রার দিন কাছে।

    তাই রানী রাজাকে বললে, ‘চলো, রথ দেখতে যাই।’

    রাজা বললে, ‘আচ্ছা।’

    ঘোড়াশাল থেকে ঘোড়া বেরোল, হাতিশাল থেকে হাতি। ময়ূরপংখি যায় সারে সারে, আর বল্লম হাতে সারে সারে সিপাইসান্ত্রি। দাসদাসী দলে দলে পিছে পিছে চলল।

    কেবল বাকি রইল একজন। রাজবাড়ির ঝাঁটার কাঠি কুড়িয়ে আনা তার কাজ।

    সর্দার এসে দয়া করে তাকে বললে, ‘ওরে, তুই যাবি তো আয়।’

    সে হাত জোড় করে বললে, ‘আমার যাওয়া ঘটবে না।’

    রাজার কানে কথা উঠল, সবাই সঙ্গে যায়, কেবল সেই দুঃখীটা যায় না।

    রাজা দয়া করে মন্ত্রীকে বললে, ‘ওকেও ডেকে নিয়ো।’

    রাস্তার ধারে তার বাড়ি। হাতি যখন সেইখানে পৌঁছল মন্ত্রী তাকে ডেকে বললে, ‘ওরে দুঃখী, ঠাকুর দেখবি চল্‌।’

    সে হাত জোড় করে বলল, ‘কত চলব। ঠাকুরের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছই এমন সাধ্য কি আমার আছে।’

    মন্ত্রী বললে, ‘ভয় কী রে তোর, রাজার সঙ্গে চলবি।’

    সে বললে, ‘সর্বনাশ! রাজার পথ কি আমার পথ।’

    মন্ত্রী বললে, ‘তবে তোর উপায়? তোর ভাগ্যে কি রথযাত্রা দেখা ঘটবে না।’

    সে বললে, ‘ঘটবে বই কি। ঠাকুর তো রথে করেই আমার দুয়ারে আসেন।’

    মন্ত্রী হেসে উঠল। বললে, ‘তোর দুয়ারে রথের চিহ্ন কই।’

    দুঃখী বললে, ‘তাঁর রথের চিহ্ন পড়ে না।’

    মন্ত্রী বললে, ‘কেন বল্‌ তো।’

    দুঃখী বললে, ‘তিনি যে আসেন পুষ্পকরথে।’

    মন্ত্রী বললে, ‘কই রে সেই রথ।’

    দুঃখী দেখিয়ে দিলে, তার দুয়ারের দুই পাশে দুটি সূর্যমুখী ফুটে আছে।

     

    See less
  1. ভক্তিভাজন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম, ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম। পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব–হাসে অন্তর্যামী।

    ভক্তিভাজন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    রথযাত্রা, লোকারণ্য, মহা ধুমধাম,
    ভক্তেরা লুটায়ে পথে করিছে প্রণাম।
    পথ ভাবে আমি দেব রথ ভাবে আমি,
    মূর্তি ভাবে আমি দেব–হাসে অন্তর্যামী।

    See less
  1. মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য ভূমিকা: মাতাপিতার কাছে তাঁর সন্তানের থেকে বড় কোনো অমূল্য বস্তূ নেই। তাই পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ট সম্পর্ক হয় সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। তাঁদের জন্যই আমরা আজ এই পৃথিবীর আলো দেখেছি । একটি শিশু পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধRead more

    মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য

    ভূমিকা: মাতাপিতার কাছে তাঁর সন্তানের থেকে বড় কোনো অমূল্য বস্তূ নেই। তাই পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ট সম্পর্ক হয় সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। তাঁদের জন্যই আমরা আজ এই পৃথিবীর আলো দেখেছি । একটি শিশু পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমেই বড় হয়ে উঠে। সুতরাং সন্তানের জীবনে পিতামাতার অবদান অসীম। তাই প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে তাহাদের কর্তব্য পালন করা।

    মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: একজন পিতা-মাতা যেভাবে আদর যত্নে একটি সন্তান কে মানুষ করে তুলে সেভাবে সন্তানের ও দায়িত্ব মা-বাবার যত্ন নেয়া। তাই একটি সন্তানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা, না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব। প্রায় প্রতিটি ধর্ম মা বাবার প্রতি আনুগত্য
    হওয়ার শিক্ষা দে। কিন্তু আজকাল তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম। আমাদের শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত এটা রোধ করা একান্ত কর্তব্য।

    শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

    প্রধান কয়েকটি দায়িত্ব: প্রধান দায়িত্বের মধ্যে মা বাবার প্রত্যাশা পূর্ণ করা হচ্ছে অন্যতম। প্রত্যেক মা-বাবাই তার সন্তানদের বিভিন্ন আশা ভরসায় লালন পালন করে। তারা চায় তাদের সন্তান জীবনে সাফল্য অর্জন করুক এবং সুখী জীবন যাপন করুক। এর জন্যই মা-বাবা প্রত্যেক সন্তানের পিছনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এইজন্য সন্তানের দায়িত্ব তার মা-বাবার আশা-প্রত্যাশা পূর্ণ করে দায়িত্ব পালন করা।
    দ্বিতীয়তঃ মা-বাবার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। সর্ব অবস্থায় মা-বাবার প্রতি অনুগত থাকা। তাদের নেয়া বিচারের উপর আস্থা রাখা।তাদের প্রতি বিনয়ী আচরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
    তৃতীয়তঃ পিতামাতার আদর্শ ও সম্মান বজায় রাখা। প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তাদের পিতামাতার আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা। সমাজে তাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ না করে যে কাজে মা বাবার সম্মান বৃদ্ধি পায় সেই কাজ করা।

    উপসংহার: মাতা-পিতার সন্তানের পরম বন্ধু সন্তানের জন্য মা বাবার মতো কেহই আপন নহে। সুতরাং ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো যথাযত পালন করা সন্তানের একান্ত কর্তব্য।

    See less
  1. রচনা: বাংলাদেশের নদ নদী ভুমিকা : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম একটি অংশ এখানকার নদনদী। নদীবিহীন সবুজ বাংলাদেশের কল্পনা অসম্ভব । বাংলাদেশকে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সৌন্দর্য মন্ডিত করার পিছনে নদ নদী গুলির ভূমিকাই প্রধান। নদী গুলি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য, প্রাচুর্য্য তৎসঙRead more

    রচনা: বাংলাদেশের নদ নদী

    ভুমিকা : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম একটি অংশ এখানকার নদনদী। নদীবিহীন সবুজ বাংলাদেশের কল্পনা অসম্ভব । বাংলাদেশকে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সৌন্দর্য মন্ডিত করার পিছনে নদ নদী গুলির ভূমিকাই প্রধান। নদী গুলি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য, প্রাচুর্য্য তৎসঙ্গে করেছে সমৃদ্দ। তাই বাংলাদেশ নদীর দেশ বা নদীমাতৃক দেশ।

    বাংলাদেশের নদ নদী : বাংলাদেশে নদী, উপনদী ও শাখানদী মিলিয়ে মোট ৭০০ থেকে বেশি নদী রয়েছে, যে গুলি প্রবাহিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে। বাংলাদেশের প্রধান নদী গুলির মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র উল্লেখযোগ্য। এই নদীগুলির বেশিরভাগ প্রবাহিত হয়েছে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ মুখী হয়ে। এই প্রধান নদীগুলি ছাড়াও কর্ণফুলী, কপোতাক্ষ, তিতাস, গোমতী, শীতলক্ষ্যা বাংলাদেশের অন্যতম নদনদী।

    পদ্মা : বাংলাদেশের প্রধান বৃহত্তম নদী যাহার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬৬ কিলোমিটার। ইহা হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করে ভারতবর্ষের বুকে সুদীর্ঘ অঞ্চল প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে পদ্মা নদী নামে। তারপর পদ্মা নদী গোয়ালন্দে গিয়ে মিলিত হয়েছে যমুনার সাথে । মিলনের এই ধারা অব্যাহত রেখে মেঘনার সাথে আবার মিলিত হয় চাঁদপুরে এবং শেষমেষ মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।

    মেঘনা : মেঘনার উৎপত্তিস্থল ভারতবর্ষের মনিপুর রাজ্যে। এই নদী উৎপত্তিস্থল থেকে বরাক নদী নামে প্রবাহিত হয়ে পৃথক দুইটি শাখা কুশিয়ারা ও সুরমা নামে বাংলাদেশে সিলেট অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করেছে। এই দুইটি শাখা আজমিরীগঞ্জে আবার মিলিত হয়েছে কালনী নদীর ধারায়। পরে কিছুদূর এগিয়ে এই তিনটি নদী মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মেঘনার উপনদী গুলি হচ্ছে গোমতি, তিতাস, মনু বাউলাই ইত্যাদি।

    ব্রহ্মপুত্র : ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে তিব্বত এবং পরে ভারতবর্ষের আসাম রাজ্য অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এই নদী দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যমুনা এবং মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। ব্রম্মপুত্রের প্রধান উপনদী গুলি হল ধরলা এবং তিস্তা।

    যমুনা : যমুনার উৎপত্তি ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা থেকে। ইহা দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রম্মপুত্রের প্রধান শাখা থেকে যমুনা নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় এবং পরে আবার মিলিত হয় পদ্মার সঙ্গে। ইহা বাংলাদেশের প্রশস্ততম নদী। যমুনার উপনদী গুলি হল ধরলা, তিস্তা, করতোয়া, আত্রাই ইত্যাদি।

    জনজীবনে নদীর প্রভাব : বাংলাদেশের জনজীবনে নদ নদীর ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের সভ্যতা সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে এখানকার নদীগুলি। নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল নগর ও বন্দর, গড়ে উঠেছে নৌপথ। যা সহজ করে দিয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য ও আদান প্রদানের কাজ। আর অন্যদিকে এই নদীর জল বাংলার মাটিকে করেছে উর্বর। চাষাবাদের ক্ষেত্রে এখানকার নদীগুলিই যোগান দিচ্ছে অধিকাংশ জল। তাছাড়া শিল্প কারখানা, মৎস্য সম্পদ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যবস্থায় নদ-নদী পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

    নদী ভাঙ্গন ও বিপর্যয় : প্রকৃতির দান এই নদ নদী গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের মঙ্গল সাধন করে থাকলেও কখনো কখনো এই নদীগুলি মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকালে নদী অতিরিক্ত প্রবাহের কারণে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তীরবর্তী ফসলের মাঠ, ডুবে যায় জনপদ। নদীর ভাঙ্গনের ফলে ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, মানুষ হয়ে ওঠে অসহায়।

    উপসংহার : নদ নদী গুলি আমাদের জাতীয় সম্পদ। বাংলার মাটিকে পরিপূর্ণতা দান করেছে এই নদ-নদীগুলি। নদীর জলধারা থেকে আমরা নানাভাবে উপকৃত হয়েছি অনাদিকাল থেকে। তাই আমাদের দায়িত্ব নদী গুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ।

    See less
  1. ছন্নছাড়া | chonnochara অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া — আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া, রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনাRead more

    ছন্নছাড়া | chonnochara

    অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত

    গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে
    গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া —
    আঁকাবাঁকা শুকনো কতকগুলি কাঠির কঙ্কাল
    শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া,
    রুক্ষ রুষ্ট রিক্ত জীর্ণ
    লতা নেই পাতা নেই ছায়া নেই ছাল-বাকল নেই
    নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি
    এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা |
    ওই পথ দিয়ে
    জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি ক’রে |
    ড্রাইভার বললে, ওদিকে যাব না |
    দেখছেন না ছন্নছাড়া ক’টা বেকার ছোকরা
    রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে–
    চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো, রোখা মেজাজ, ঠোকা কপাল–
    ওখান দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে,
    বলবে, হাওয়া খাওয়ান |

    ওরা কারা ?
    চেনেন না ওদের ?
    ওরা বিরাট এক নৈরাজ্যের –এক নেই রাজ্যের বাসিন্দে |
    ওদের কিছু নেই
    ভিটে নেই ভিত নেই রীতি নেই নীতি নেই
    আইন নেই কানুন নেই বিনয় নেই ভদ্রতা নেই
    শ্লীলতা-শালীনতা নেই |
    ঘেঁষবেন না ওদের কাছে |

    কেন নেই ?
    ওরা যে নেই রাজ্যের বাসিন্দে–
    ওদের জন্যে কলেজে সিট নেই
    অফিসে চাকরি নেই
    কারখানায় কাজ নেই
    ট্রামে-বাসে জায়গা নেই

    মেলায়-খেলায় টিকিট নেই
    হাসপাতালে বেড নেই
    বাড়িতে ঘর নেই
    খেলবার মাঠ নেই
    অনুসরণ করবার নেতা নেই
    প্রেরণা-জাগানো প্রেম নেই
    ওদের প্রতি সম্ভাষণে কারু দরদ নেই–
    ঘরে-বাইরে উদাহরণ যা আছে
    তা ক্ষুধাহরণের সুধাক্ষরণের উদাহরণ নয়,
    তা সুধাহরণের ক্ষুধাভরণের উদাহরণ–
    শুধু নিজের দিকে ঝোল- টানা |
    এক ছিল মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে ফালতু এক রক
    তাও দিয়েছে লোপট ক’রে |

    তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে |
    কোথ্বকে আসছে সেই অতীতের স্মৃতি নেই |
    কোথায় দাঁড়িয়ে আছে সেই বর্তমানের গতি নেই
    কোথায় চলেছে নেই সেই ভবিষ্যতের ঠিকানা |

    সেচ-হীন ক্ষেত
    মণি-হীন চোখ
    চোখ-হীন মুখ
    একটা স্ফুলিঙ্গ-হীন ভিজে বারুদের স্তুপ |

    আমি বললুম, না ওদিক দিয়েই যাব,
    ওখান দিয়েই আমার শর্টকাট |
    ওদের কাছাকাছি হতেই মুখ বাড়িয়ে
    জিজ্ঞেস করলুম,
    তোমাদের ট্যাক্ সি লাগবে ? লিফট চাই ?
    আরে এই তো ট্যাক্ সি, এই তো ট্যাক্ সি, লে হালুয়া
    সোল্লাসে চেঁচিয়ে উঠল ওরা
    সিটি দিয়ে উঠল
    পেয়ে গেছি পেয়ে গেছি চল পানসি বেলঘরিয়া |
    তিন-তিনটে ছোকরা উঠে পড়ল ট্যাক্ সীতে,
    বললুম কদ্দুর যাবে |
    এই কাছেই | ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড় ?
    সিনেমা না, জলসা না, নয় কোনো ফিল্মি তারকার অভ্যর্থনা |
    একটা নিরীহ লোক গাড়িচাপা পড়েছে,
    চাপা দিয়ে গাড়িটা উধাও–
    আমাদের দলের কয়েকজন গাড়িটার পিছে ধাওয়া করেছে
    আমরা খালি ট্যাক্ সি খুঁজছি |
    কে সে লোক ?
    একটা বেওয়ারিশ ভিখিরি |
    রক্তে-মাংসে দলা পাকিয়ে গেছে |
    ওর কেউ নেই কিছু নেই
    শোবার জন্য ফুটপাথ আছে তো মাথার উপরে ছাদ নেই,
    ভিক্ষার জন্য পাত্র একটা আছে তো
    তার মধ্যে প্রকান্ড একটা ফুটো |
    রক্তে মাখামাখি সেই দলা-পাকানো ভিখিরিকে
    ওরা পাঁজাকোলা করে ট্যাক্ সির মধ্যে তুলে নিল |
    চেঁচিয়ে উঠল সমস্বরে –আনন্দে ঝংকৃত হয়ে–
    প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে |

    রক্তের দাগ থেকে আমার ভব্যতা ও শালীনতাকে বাঁচাতে গিয়ে
    আমি নেমে পড়লুম তাড়াতাড়ি |
    তারপর সহসা শহরের সমস্ত কর্কশে-কঠিনে
    সিমেন্টে-কংক্রিটে |
    ইটে-কাঠে-পিচে-পাথরে দেয়ালে-দেয়ালে
    বেজে উঠল এক দুর্বার উচ্চারণ
    এক প্রত্যয়ের তপ্ত শঙ্খধ্বনি–
    প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে
    সমস্ত বাধা-নিষেধের বাইরেও
    আছে অস্তিত্বের অধিকার |

    ফিরে আসতেই দেখি
    গলির মোড়ে গাছের সেই শুকনো বৈরাগ্য বিদীর্ণ ক’রে
    বেরিয়ে পড়েছে হাজার-হাজার সোনালি কচি পাতা
    মর্মরিত হচ্ছে বাতাসে,
    দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠছে ফুল
    ঢেলে দিয়েছে বুকের সুগন্ধ,
    উড়ে এসেছে রঙ-বেরঙের পাখি
    শুরু করেছে কলকন্ঠের কাকলি,
    ধীরে ধীরে ঘন পত্রপুঞ্জে ফেলেছে স্নেহার্দ্র দীর্ঘছায়া
    যেন কোনো শ্যামল আত্মীয়তা |
    অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দেখলুম
    কঠোরের প্রচ্ছন্নে মাধুর্যের বিস্তীর্ণ আয়োজন |
    প্রাণ আছে, প্রাণ আছে– শুধু প্রাণই আশ্চর্য সম্পদ
    এক ক্ষয়হীন আশা
    এক মৃত্যুহীন মর্যাদা |

    কবিতা সম্মন্দে

    এই কবিতাটি ’পুব-পশ্চিম’ কবিতা গ্রন্থের অন্তর্গত । অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত ‘কল্লোল’ গোষ্ঠীর অন্যতম লেখক হিসেবে বাংলা সাহিত্যে অতি আধুনিক ধারা সৃষ্টিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫-এ তিনি ‘কল্লোল’ পত্রিকা পত্রিকা প্রকাশের সামগ্রিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একদিকে রোমান্টিকতা, অন্যদিকে গণচেতনা তাঁর কবিতার ভাববস্তু নির্মাণে বৈচিত্র্য এনেছে।এইসব কবির সমবায়ে বাংলা কবিতায় প্রকৃত আধুনিকতার সৃষ্টি হয়।

    See less
  1. আগামী – সুকান্ত ভট্টাচার্য জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ, আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ; মাটিতে লালিত ভীরু, শুদু আজ আকাশের ডাকে মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে। যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে, বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোরRead more

    আগামী – সুকান্ত ভট্টাচার্য

    জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ,
    আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ;
    মাটিতে লালিত ভীরু, শুদু আজ আকাশের ডাকে
    মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে।
    যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে
    তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে,
    বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা
    শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।
    আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা
    উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা;
    তার পর দৃপ্ত শাখা মেলে দেব সবার সম্মুখে,
    ফোটাব বিস্মিত ফুল প্রতিবেশী গাছেদের মুখে।
    সংহত কঠিন ঝড়ে দৃঢ়প্রাণ প্রত্যেক শিকড়;
    শাখায় শাখায় বাঁধা, প্রত্যাহত হবে জানি ঝড়;
    অঙ্কুরিত বন্ধু যত মাথা তুলে আমারই আহ্বানে
    জানি তারা মুখরিত হবে নব অরণ্যের গানে।
    আগামী বসন্তে জেনো মিশে যাব বৃহতের দলে;
    জয়ধ্বনি কিশলয়ে; সম্বর্ধনা জানাবে সকলে।
    ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী বনস্পতি,
    বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তারি তো সম্মতি।
    সেদিন ছায়ায় এসো; হানো যদি কঠিন কুঠারে
    তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে;
    ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন
    একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।।

    কবিতা সম্মন্দে
    এই কবিতা সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ছাড়পত্র”(১৯৪৮) এর অন্তর্ভুক্ত ।

     

    See less
  1. বোধন হে মহামানব, একবার এসো ফিরে শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রাম নগরের ভিড়ে, এখানে মৃত্যু হানা দেয় বারবার; লোকচক্ষুর আড়ালে এখানে জমেছে অন্ধকার । এই যে আকাশ, দিগন্ত, মাঠ স্বপ্নে সবুজ মাটি নীরবে মৃত্যু গেড়েছে এখানে ঘাঁটি; কোথাও নেইকো পার মারী ও মড়ক, মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন ভাঙা নৌকারRead more

    বোধন

    হে মহামানব, একবার এসো ফিরে
    শুধু একবার চোখ মেলো এই গ্রাম নগরের ভিড়ে,
    এখানে মৃত্যু হানা দেয় বারবার;
    লোকচক্ষুর আড়ালে এখানে জমেছে অন্ধকার ।
    এই যে আকাশ, দিগন্ত, মাঠ স্বপ্নে সবুজ মাটি
    নীরবে মৃত্যু গেড়েছে এখানে ঘাঁটি;
    কোথাও নেইকো পার
    মারী ও মড়ক, মন্বন্তর, ঘন ঘন বন্যার
    আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন ভাঙা নৌকার পাল,
    এখানে চরম দুঃখ কেটেছে সর্বনাশের খাল,
    ভাঙা ঘর, ফাঁকা ভিটেতে জমেছে নির্জনতার কালো,
    হে মহামানব, এখানে শুকনো পাতায় আগুন জ্বালো ।

    ব্যাহত জীবনযাত্রা, চুপি চুপি কান্না বও বুকে,
    হে নীড়-বিহারী সঙ্গী ! আজ শুধু মনে মনে ধুঁকে
    ভেবেছ সংসারসিন্ধু কোনোমতে হয়ে যাবে পার
    পায়ে পায়ে বাধা ঠেলে । তবু আজো বিস্ময় আমার –
    ধূর্ত, প্রবঞ্চক যারা কেড়েছে মুখের শেষ গ্রাস
    তাদের করেছ ক্ষমা, ডেকেছ নিজের সর্বনাশ ।
    তোমার ক্ষেতের শস্য
    চুরি ক’রে যারা গুপ্তকক্ষতে জমায়
    তাদেরি দুপায়ে প্রাণ ঢেলে দিলে দুঃসহ ক্ষমায়;
    লোভের পাপের দুর্গ গম্বুজ ও প্রাসাদে মিনারে
    তুমি যে পেতেছ হাত; আজ মাথা ঠুকে বারে বারে
    অভিশাপ দাও যদি, বারংবার হবে তা নিষ্ফল –
    তোমার অন্যায়ে জেনো এ অন্যায় হয়েছে প্রবল ।
    তুমি তো প্রহর গোনো,
    তারা মুদ্রা গোনে কোটি কোটি,
    তাদের ভাণ্ডার পূর্ণ; শূন্য মাঠে কঙ্কাল-করোটি
    তোমাকে বিদ্রূপ করে, হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে –
    কুজ্ঝটি তোমার চোখে, তুমি ঘুরে ফের দুর্বিপাকে ।

    পৃথিবী উদাস, শোনো হে দুনিয়াদার !
    সামনে দাঁড়িয়ে মৃত্যু-কালো পাহাড়
    দগ্ধ হৃদয়ে যদিও ফেরাও ঘাড়
    সামনে পেছনে কোথাও পাবে না পার :
    কি করে খুলবে মৃত্যু-ঠেকানো দ্বার –
    এই মুহূর্তে জবাব দেবে কি তার ?

    লক্ষ লক্ষ প্রাণের দাম
    অনেক দিয়েছি; উজাড় গ্রাম ।
    সুদ ও আসলে আজকে তাই
    যুদ্ধ শেষের প্রাপ্য চাই ।

    কৃপণ পৃথিবী, লোভের অস্ত্র
    দিয়ে কেড়ে নেয় অন্নবস্ত্র,
    লোলুপ রসনা মেলা পৃথিবীতে
    বাড়াও ও-হাত তাকে ছিঁড়ে নিতে ।
    লোভের মাথায় পদাঘাত হানো-
    আনো, রক্তের ভাগীরথী আনো ।
    দৈত্যরাজের যত অনুচর
    মৃত্যুর ফাঁদ পাতে পর পর;
    মেলো চোখ আজ ভাঙো সে ফাঁদ-
    হাঁকো দিকে দিকে সিংহনাদ ।

    তোমার ফসল, তোমার মাটি
    তাদের জীয়ন ও মরণকাঠি
    তোমার চেতনা চালিত হাতে ।
    এখনও কাঁপবে আশঙ্কাতে ?
    স্বদেশপ্রেমের ব্যাঙ্গমা পাখি
    মারণমন্ত্র বলে, শোনো তা কি ?
    এখনো কি তুমি আমি স্বতন্ত্র ?
    করো আবৃত্তি, হাঁকো সে মন্ত্র :
    শোন্ রে মালিক, শোন্‌রে মজুতদার !
    তোদের প্রাসাদে জমা হল কত মৃত মানুষের হাড়-
    হিসাব কি দিবি তার ?

    প্রিয়াকে আমার কেড়েছিস তোরা,
    ভেঙেছিস ঘরবাড়ি,
    সে কথা কি আমি জীবনে মরণে
    কখনো ভুলতে পারি ?
    আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই
    স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের
    চিতা আমি তুলবই ।

    শোন্ রে মজুতদার,
    ফসল ফলানো মাটিতে রোপণ
    করব তোকে এবার ।

    তারপর বহুশত যুগ পরে
    ভবিষ্যতের কোনো যাদুঘরে
    নৃতত্ত্ববিদ্ হয়রান হয়ে মুছবে কপাল তার,
    মজুতদার ও মানুষের হাড়ে মিল খুঁজে পাওয়া ভার ।
    তেরোশো সালের মধ্যবর্তী মালিক, মজুতদার
    মানুষ ছিল কি ? জবাব মেলে না তার ।

    আজ আর বিমূঢ় আস্ফালন নয়,
    দিগন্তে প্রত্যাসন্ন সর্বনাশের ঝড়;
    আজকের নৈঃশব্দ্য হোক যুদ্ধারম্ভের স্বীকৃতি ।
    দু হাতে বাজাও প্রতিশোধের উন্মত্ত দামামা,
    প্রার্থনা করো :
    হে জীবন, হে যুগ-সন্ধিকালের চেতনা-
    আজকে শক্তি দাও, যুগ যুগ বাঞ্ছিত দুর্দমনীয় শক্তি,
    প্রাণে আর মনে দাও শীতের শেষের
    তুষার-গলানো উত্তাপ ।
    টুকরো টুকরো ক’রে ছেঁড়ো তোমার
    অন্যায় আর ভীরুতার কলঙ্কিত কাহিনী ।
    শোষক আর শাসকের নিষ্ঠুর একতার বিরুদ্ধে
    একত্রিত হোক আমাদের সংহতি ।

    তা যদি না হয় মাথার উপরে ভয়ঙ্কর
    বিপদ নামুক, ঝড়ে বন্যায় ভাঙুক ঘর;
    তা যদি না হয়, বুঝবো তুমি তো মানুষ নও-
    গোপনে গোপনে দেশদ্রোহীর পতাকা বও ।
    ভারতবর্ষ মাটি দেয়নিকো, দেয় নি জল
    দেয় তোমার মুখেতে অন্ন, বহুতে বল
    পূর্বপুরুষ অনুপস্থিত রক্তে, তাই
    ভারতবর্ষে আজকে তোমার নেইকো ঠাঁই ॥

    সারমর্ম

    এই কবিতা সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রথম কাব্যগ্রন্থ “ছাড়পত্র”(১৯৪৮) এর অন্তর্ভুক্ত । বামপন্থী মনোভাবাপন্ন সুকান্তের কবিতায় স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে সাম্যবাদী চিন্তা,শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার বিরুদ্ধে তীব্র সক্রোধ প্রতিবাদ।যে সময় অন্যান্য তরুণেরা সরল তরল প্রেমের কবিতা লেখে,সে বয়সে সুকান্তের কবিতা আগুন জ্বেলে দিচ্ছে অসাম্যের বিরুদ্ধে,পূঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে।”বোধন” কবিতাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।শোষক ও শাসিতের অবসান কল্পে শোষিত ও শাসিতের জাগরণের কবিতা সুকান্ত ভট্টাচার্যের “বোধন”

    See less