বাংলাদেশ কবিতা র সারাংশ
বাংলাদেশ কবিতা র সারাংশ
See lessLost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Sorry, you do not have a permission to ask a question, You must login to ask question.
সাগর-তর্পণ -সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত বীরসিংহের সিংহশিশু! বিদ্যাসাগর! বীর! উদ্বেলিত দয়ার সাগর, --বীর্য্যে সুগম্ভীর! সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়, তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়। নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে, দয়ার অবতার! কোথাও তবু নোয়াও নি শির জীবনে একবার! দয়ায় স্নেহে ক্ষুদ্র দেহে বিশাল পারাবার, সৌম্য মূRead more
-সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত
বীরসিংহের সিংহশিশু! বিদ্যাসাগর! বীর!
উদ্বেলিত দয়ার সাগর, –বীর্য্যে সুগম্ভীর!
সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়,
তোমায় দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়।
নিঃস্ব হয়ে বিশ্বে এলে, দয়ার অবতার!
কোথাও তবু নোয়াও নি শির জীবনে একবার!
দয়ায় স্নেহে ক্ষুদ্র দেহে বিশাল পারাবার,
সৌম্য মূর্ত্তি তেজের স্ফূর্ত্তি চিত্ত চমৎকার !
নামলে একা মাথায় নিয়ে মায়ের আশীর্ব্বাদ,
করলে পূরণ অনাথ আতুর অকিঞ্চনের সাধ;
অভাজনে অন্ন দিয়ে—বিদ্যা দিয়ে আর –-
অদৃষ্টেরে ব্যর্থ তুমি করলে বারম্বার।
বিশ বছরে তোমার অভাব পুরলো নাকো, হায়,
বিশ বছরের পুরাণো শোক নূতন আজো প্রায়;
তাইতো আজি অশ্রুধারা ঝরে নিরন্তর!
কীর্ত্তি-ঘন মূর্ত্তি তোমার জাগে প্রাণের ‘পর ।
স্মরণ-চিহ্ন রাখতে পারি শক্তি তেমন নাই,
প্রাণ-প্রতিষ্ঠা নাই যাতে সে মূরৎ নাহি চাই;
মানুষ খুঁজি তোমার মতো, –একটি তেমন লোক, —
স্মরণ চিহ্ন মূর্ত্ত ! –যে জন ভুলিয়ে দেবে শোক।
রিক্ত হাতে করবে যে জন যজ্ঞ বিশ্বজিৎ, —
রাত্রে স্বপন চিন্তা দিনে দেশের দশের হিত, —
বিঘ্ন বাধা তুচ্ছ ক’রে লক্ষ্য রেখে স্থির,
তোমার মতন ধন্য হ’বে, –চাই সে এমন বীর।
তেমন মানুষ না পাই যদি খুঁজব তবে, হায়,
ধূলায় ধূসর বাঁকা চটি ছিল যা ঐ পায়;
সেই যে চটি উচ্চে যাহা উঠত এক একবার
শিক্ষা দিতে অহঙ্কৃতে শিষ্ঠ ব্যবহার।
সেই যে চটি—দেশী চটি—বুটের বাড়া ধন,
খুজব তারে, আনব তারে, এই আমাদের পণ;
সোনার পিঁড়েয় রাখবো তারে, থাকবো প্রতীক্ষায়
আনন্দহীন বঙ্গভূমির বিপুল নন্দীগাঁয়।
রাখব তারে স্বদেশপ্রীতির নূতন ভিতের ‘পর,
নজর কারো লাগবে নাকো, অটুট হ’বে ঘর !
উঁচিয়ে মোরা রাখব তারে উচ্চে সবাকার,—
বিদ্যাসাগর বিমুখ হ’ত—অমর্য্যাদায় যার।
শাস্ত্রে যারা শস্ত্র গড়ে হৃদয় বিদারণ,
তর্ক যাদের অর্কফলার তূমুল আন্দোলন;
বিচার যাদের যুক্তিবিহীন অক্ষরে নির্ভর, —
সাগরের এই চটি তারা দেখুক নিরন্তর ।
দেখুক এবং স্মরণ করুক সব্যসাচীর রণ, —
স্মরণ করুক বিধবাদের দুঃখ-মোচন পণ;
স্মরণ করুক পান্ডারূপী গুন্ডাদিগের হার,
বাপ্ মা বিনা দেবতা সাগর মানেই নাকো আর ।
অদ্বিতীয় বিদ্যাসাগর! মৃত্যু-বিজয় নাম,
ঐ নামে হায় লোভ করেছে অনেক ব্যর্থকাম;
নামের সঙ্গে যুক্ত আছে জীবন-ব্যাপী কাজ,
কাজ দেবে না? নামটি নেবে? –একি বিষম লাজ!
বাংলা দেশের দেশী মানুষ! বিদ্যাসাগর ! বীর!
বীরসিংহের সিংহশিশু! বীর্য্যে সুগম্ভীর!
সাগরে যে অগ্নি থাকে কল্পনা সে নয়,
চক্ষ দেখে অবিশ্বাসীর হয়েছে প্রত্যয়।
In English Font:
Sagar Tarpan
Satyendranath Dutta
Birsingher singhoshishu! Bidyasagor! Bir!
Uddelito dayar sagar,-birje sugambhir
Sagare je ogni thake kolpona she noy,
Tumay deklhe obishashir hoyeche prottoy.
Nissho hoye Bisshe ele, Dayar obota!
Kuthao tabu nuwao ni shir jibone ekbar!
Dayay snehe khubda dehe bishal parapar,
Shummo murti tejer sfurti chitto chomotkar!
Namle eka mathay niye mayer aashirbaad,
Korle puron onath aatur okinchoner shadh;
Obhajone onno diye-biddya diye ar-
Odrister bertho tumi korle barombar
Bish bochore tumar obhab purlo nako hay,
Bish bochorer purano sukh natun aajo pray;
Taito aaji osrudhara jhore nirontor!
Kirti ghono murti tumar jage praner por.
Shoron chinno rakhte pari shokti temon nai,
Pran-protistha nai jate se murat nahi chai;
Manush khuji tumar moto,- ekti temon lok,
Shoron chinno murto! -je jon bhuliye debe shuk
Rikto hathe korbe je jon jaggo bisshojith
ratre hathe chinta dine desher dosher hit
Bigno badha tuccho kore lokkhe rekhe stir,
Tumar moton dhonno hobe,- chai se emon bir
Temon manush na pai jodi khujbo tobe, hay,
Dhulay dushur baka choti chilo ja oi pay;
Sei je choti ucche jaha uthto ek ek bar
Shikkha dite ohongkrite shisto bebohar
Sei je choti- deshi choti- buter bara dhan
khujbo tare, anbo tare, ei amader pon;
Sunar pire rakhbo tare, thakbo protikkay
Anandohin bongobhumir bipul nondigay
Rakhbo tare shodeshpritir natun viter por
Najar karo lagbe nako, atut hobe ghar!
Uchiye mura rakhbo tare ucche sobakar,
Bidyashagar bimukh hoto- omorjaday jar.
Shastre jara shostro gore hridoy bidaran,
Tarko jader orkofolar tumul aandolon;
Bichar jader juktibihin okkhore nirbhor,-
Shagarer ei choti tara dekuk nirontor.
Dekhuk ebong shoron karuk shobbosachir ron,
Shoron karuk bidhobader dukh-mochon pon;
Shoron karuk pandarupi gundadiger har,
Baap ma bina debota shagar manei nako ar.
oditiyo bidyashagar! mrityo-bijoy naam
Oi naame hay lov koreche onek berthokam;
Namer shonge jukto aache jibon-byapi kaj,
kaj debe na? mati nebe? eki bishom laj!
Bangla desher deshi manush! bidyashagar! bir
Birsingher singhoshishu!-birje sugambhir
Sagare je ogni thake kolpona she noy,
Chokkho dekhe obishashir hoyeche prottoy.
গোঁফ চুরি সুকুমার রায় হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত, তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জানত ? দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে, একলা বসে ঝিম্ঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে ! আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক'রে গোল, হঠাৎ বলেন, "গেলুম গেলুম, আমায় ধরে তোল !" তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউবা হাঁকে পুলিশ,Read more
সুকুমার রায়
হেড অফিসের বড়বাবু লোকটি বড় শান্ত,
তার যে এমন মাথার ব্যামো কেউ কখনো জানত ?
দিব্যি ছিলেন খোসমেজাজে চেয়ারখানি চেপে,
একলা বসে ঝিম্ঝিমিয়ে হঠাৎ গেলেন ক্ষেপে !
আঁৎকে উঠে হাত পা ছুঁড়ে চোখটি ক’রে গোল,
হঠাৎ বলেন, “গেলুম গেলুম, আমায় ধরে তোল !”
তাই শুনে কেউ বদ্যি ডাকে, কেউবা হাঁকে পুলিশ,
কেউবা বলে, “কামড়ে দেবে সাবধানেতে তুলিস ।”
ব্যস্ত সবাই এদিক ওদিক করছে ঘোরাঘুরি,
বাবু হাঁকেন, “ওরে আমার গোঁফ গিয়েছে চুরি !”
গোঁফ হারানো ! আজব কথা ! তাও কি হয় সত্যি ?
গোঁফ জোড়া তো তেমনি আছে, কমেনি এক রত্তি ।
সবাই তাঁকে বুঝিয়ে বলে, সামনে ধরে আয়না,
মোটেও গোঁফ হয়নি চুরি, কক্ষণো তা হয় না
রেগে আগুন তেলে বেগুন, তেড়ে বলেন তিনি,
“কারো কথার ধার ধারিনে, সব ব্যাটাকেই চিনি ।
নোংরা ছাঁটা খ্যাংরা ঝাঁটা বিচ্ছিরি আর ময়লা,
এমন গোঁফ তো রাখতো জানি শ্যামবাবুদের গয়লা ।
এ গোঁফ যদি আমার বলিস করব তোদের জবাই”—
এই না বলে জরিমানা কল্লেন তিনি সবায় ।
ভীষণ রেগে বিষম খেয়ে দিলেন লিখে খাতায়,
“কাউকে বেশি লাই দিতে নেই, সবাই চড়ে মাথায় ।
আফিসের এই বাঁদরগুলো, মাথায় খালি গোবর,
গোঁফ জোড়া যে কোথায় গেল কেউ রাখে না খবর ।
ইচ্ছে করে এই ব্যাটাদের গোঁফ ধরে খুব নাচি,
মুখ্যুগুলোর মুণ্ডু ধরে কোদাল দিয়ে চাঁচি ।
গোঁফকে বলে তোমার আমার–গোঁফ কি কারো কেনা ?
গোঁফের আমি গোঁফের তুমি, তাই দিয়ে যায় চেনা ।”
In English Font:
Gof Churi
Sukumar Roy
Head office er barababu lokti bara shanto
Tar je emon mathay bemo keu na kokhono janto?
Dibyi chilen khoshmejaje chair khani chepe,
Ekla boshe jimjimiye hotath gelen khyepe!
Atke uthe hat pa chure chokti kore gul,
Hotath bolen “gelum gelum amay dhore tul”!
tai shune keu bodyi dake, keuba hake police,
Keuba bole, ” kamre debe shabdhanete tulish. ”
Besto shobai edik odik korche ghura guri
Babu haken, “ore amar gof giyeche churi!”
Gof harano! Ajab kotha! tao ki hoy shotti?
Gof jura to emon e aache, komeni ek rotti
Shobai take bujiye bole, shamne dhore aayna,
Muteo gof hoini churi, kokhono ta hoy na.
Rege aagun tele begun, tere bolen tini,
“karo kothay dhar dharine, shob betakei chini.
Nungra chata khangra jhata bicchirin ar moyla,
Emon gof to rakhto jani shyamal babuder goyla.
E gof jodi amar bolish korbo toder jobai”
Ei na bole jorimana korlen tini shobay
Bhishon rege bishom kheye dilen likhe khatay,
“Kauke beshi lai dite nei, shobai chore mathay
Officer ei badargulo mathay khali gubor,
Gof jura je kuthay gelo keu rakhe na khabar
icche kore ei betader gof dhore khub nachi,
Mukhyogulor mundu dhore kudal diye chachi.
Gofke bole tumar amar -gof ki karo kena?
Gofer ami gofer tumi, tai diye jay chena.”
সৎপাত্র সুকুমার রায় শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ? গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ? জানতে চাও সে কেমন ছেলে ? মন্দ নয় সে পাত্র ভালো রঙ যদিও বেজায় কালো ; তার উপরে মুখের গঠন অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ; বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই— ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় ! উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে ঘায়েল হয়ে থামল শেষে । বRead more
সুকুমার রায়
শুনতে পেলাম পোস্তা গিয়ে
তোমার নাকি মেয়ের বিয়ে ?
গঙ্গারামকে পাত্র পেলে ?
জানতে চাও সে কেমন ছেলে ?
মন্দ নয় সে পাত্র ভালো
রঙ যদিও বেজায় কালো ;
তার উপরে মুখের গঠন
অনেকটা ঠিক পেঁচার মতন ;
বিদ্যে বুদ্ধি ? বলছি মশাই—
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায় !
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে ।
বিষয় আশয় ? গরীব বেজায়—
কষ্টে–সৃষ্টে দিন চলে যায় ।
মানুষ তো নয় ভাইগুলো তার—
একটা পাগল একটা গোঁয়ার ;
আরেকটি সে তৈরী ছেলে,
জাল করে নোট গেছেন জেলে ।
কনিষ্ঠটি তবলা বাজায়
যাত্রাদলে পাঁচ টাকা পায় ।
গঙ্গারাম তো কেবল ভোগে
পিলের জ্বর আর পাণ্ডু রোগে ।
কিন্তু তারা উচ্চ ঘর,
কংসরাজের বংশধর !
শ্যাম লাহিড়ী বনগ্রামের
কি যেন হয় গঙ্গারামের ।—
যহোক, এবার পাত্র পেলে,
এমন কি আর মন্দ ছেলে ?
In English Font:
Satpatra
sukumar Roy
Shunte pelum posta giye
Tumar naki meyer biye
Gangaramke patra pele?
jante chao kemon chele?
Mondo noy se patro valo
Rang jodio bejay kalo
Tar upore mukher gathan
Onekta thik pechar moton
Bidya buddhi? bolchi moshay-
Dhanni cheler odyoboshay
Unishtibar matric e she
ghayel hoye thamlo seshe|
bishoy aashoy? Garib bejay-
Koste-sriste din chole jay.
Manush to noy bhaigulo tar
Ekta pagol ekta guwar;
Arekti she toiri chele,
Jal kore note gechen jele
Konishto ti tabla bajay
Jatradole pach taka pay.
Gangaram to kebol bhuge
Piler jor ar pandu ruge
Kintu tara uccho ghar,
Kongshorajer bongshodhar!
Shyam lahiri banagramer
Ki je hoy gangaramer
Jahok, ebar patro pele,
Emon ki ar mondo chele?
See less
বলাই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে-- আমাদের বাঘ-গোরRead more
মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে– আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে, অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধরে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে– কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।
আমার ভাইপো বলাই– তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়ে-চড়ে বেড়ানো নয়। পুবদিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে; ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ। ছাদের উপর বিকেল-বেলাকার রোদ্দুর পড়ে আসে, গা খুলে বেড়ায়; সমস্ত আকাশ থেকে যেন কী একটা সংগ্রহ করে নেয়। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে, তার একটা নিবিড় আনন্দ জেগে ওঠে ওর রক্তের মধ্যে, একটা কিসের অব্যক্ত স্মৃতিতে; ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবনের মতোই ওর অন্তর-প্রকৃতিটা চার দিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, ভরে ওঠে, তাতে একটা ঘন রঙ লাগে। তখন ওর একলা বসে বসে আপন মনে কথা কইতে ইচ্ছে করে, যা-কিছু গল্প শুনেছে সব নিয়ে জোড়াতাড়া দিয়ে; অতি পুরানো বটের কোটরে বাসা বেঁধে আছে যে একজোড়া অতি পুরানো পাখি, বেঙ্গমা বেঙ্গমী, তাদের গল্প। ওই ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে-থাকা ছেলেটা বেশি কথা কইতে পারে না। তাই ওকে মনে মনে অনেক বেশি ভাবতে হয়। ওকে একবার পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলুম। আমাদের বাড়ির সামনে ঘন সবুজ ঘাস পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পর্যন্ত নেবে গিয়েছে, সেইটে দেখে আর ওর মন ভারি খুশি হয়ে ওঠে। ঘাসের আস্তরণটা একটা স্থির পদার্থ তা ওর মনে হয় না; ওর বোধ হয়, যেন ওই ঘাসের পুঞ্জ একটা গড়িয়ে-চলা খেলা, কেবলই গড়াচ্ছে; প্রায়ই তারই সেই ঢালু বেয়ে ও নিজেও গড়াত– সমস্ত দেহ দিয়ে ঘাস হয়ে উঠত– গড়াতে গড়াতে ঘাসের আগায় ওর ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগত আর ও খিলখিল করে হেসে উঠত।
রাত্রে বৃষ্টির পরে প্রথম সকালে সামনের পাহাড়ের শিখর দিয়ে কাঁচা সোনারঙের রোদ্দুর দেবদারুবনের উপরে এসে পড়ে– ও কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে সেই দেবদারুবনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, গা ছমছম করে– এই সব প্রকাণ্ড গাছের ভিতরকার মানুষকে ও যেন দেখতে পায়। তারা কথা কয় না, কিন্তু সমস্তই যেন জানে। তারা-সব যেন অনেক কালের দাদামশায়, ‘এক যে ছিল রাজা’দের আমলের।
ওর ভাবে-ভোলা চোখটা কেবল যে উপরের দিকেই তা নয়, অনেক সময় দেখেছি, ও আমার বাগানে বেড়াচ্ছে মাটির দিকে কী খুঁজে খুঁজে। নতুন অঙ্কুরগুলো তাদের কোঁকড়ানো মাথাটুকু নিয়ে আলোতে ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই। প্রতিদিন ঝুঁকে পড়ে পড়ে তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে, ‘তার পরে? তার পরে? তার পরে?’ তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। সদ্য গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা, তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে? তারাও ওকে কী একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য আঁকুপাঁকু করে। হয়তো বলে, ‘তোমার নাম কী।’ হয়তো বলে, ‘তোমার মা কোথায় গেল।’ বলাই মনে মনে উত্তর করে, ‘আমার মা তো নেই।’
কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে। আর-কারও কাছে ওর এই সংকোচের কোনো মানে নেই, এটাও সে বুঝেছে। এইজন্যে ব্যথাটা লুকোতে চেষ্টা করে। ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে মেরে আমলকি পাড়ে, ও কিছু বলতে পারে না, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। ওর সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্যে বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু পাশের গাছগুলোকে মারতে মারতে চলে, ফস্ ক’রে বকুলগাছের একটা ডাল ভেঙে নেয়– ওর কাঁদতে লজ্জা করে পাছে সেটাকে কেউ পাগলামি মনে করে। ওর সব-চেয়ে বিপদের দিন, যেদিন ঘাসিয়াড়া ঘাস কাটতে আসে। কেননা, ঘাসের ভিতরে ভিতরে ও প্রত্যহ দেখে দেখে বেড়িয়েছে– এতটুকু-টুকু লতা, বেগনি হল্দে নামহারা ফুল, অতি ছোটো ছোটো; মাঝে মাঝে কন্টিকারি গাছ, তার নীল নীল ফুলের বুকের মাঝখানটিতে ছোট্ট একটুখানি সোনার ফোঁটা; বেড়ার কাছে কাছে কোথাও-বা কালমেঘের লতা, কোথাও-বা অনন্তমূল; পাখিতে-খাওয়া নিমফলের বিচি পড়ে ছোটো ছোটো চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা– সমস্তই নিষ্ঠুর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই।
এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে বসে তার গলা জড়িয়ে বলে, ‘ওই ঘাসিয়ারাকে বলো-না, আমার ওই গাছগুলো যেন না কাটে।’
কাকি বলে, ‘বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস। ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে কেন।’
বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই– ওর চার দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই।
এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে, যেদিন সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে– সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাঁক আর জল। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, ‘আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।’ গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বত প্রান্তরে, তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, ‘আমি থাকব, আমি থাকব।’ বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহর্নিশি আকাশে উচ্ছ্বসিত করে তোলে, ‘আমি থাকব।’ সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-এক-রকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল ওই বলাই। আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম।
একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, ‘কাকা, এ গাছটা কী।’
দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে।
হায় রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে। এতটুকু যখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্রলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্রমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উঁচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবামাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু। বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে।
আমি বললুম, ‘মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।’
বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা! বললে, ‘না, কাকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে ফেলো না।’
আমি বললুম, ‘কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।’
আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললে, ‘কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।’
উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল। ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, ‘ওগো, শুনছ। আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।’
রেখে দিলুম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না। কিন্তু, এখন রোজই চোখে পড়ে। বছরখানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার ‘পরেই তার সব-চেয়ে স্নেহ।
গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নির্বোধের মতো। একটা অজায়গায় এসে দাঁড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে! আরও দু-চারবার এর মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালুম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব।
বললেম, ‘নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে আর-একটা চারা আনিয়ে বেড়ার ধারে পুঁতে দেব, সুন্দর দেখতে হবে।’
কিন্তু কাটবার কথা বললেই বলাই আঁতকে ওঠে, আর ওর কাকি বলে, ‘আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে!’
আমার বউদিদির মৃত্যু হয়েছে যখন এই ছেলেটি তাঁর কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসন্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ। বছর দশেক পরে দাদা ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে প্রথমে নিয়ে গেলেন সিমলেয়– তার পরে বিলেত নিয়ে যাবার কথা।
কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শূন্য।
তার পরে দু বছর যায়। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া একপাটি জুতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন; এতদিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন।
কোনো এক সময়ে দেখলুম, লক্ষ্মীছাড়া শিমুলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে– এতদূর অসংগত হয়ে উঠেছে যে, আর প্রশ্রয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলুম তাকে কেটে।
এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, ‘কাকি, আমার সেই শিমুলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।’
বিলেত যাবার পূর্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে।
তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, ‘ওগো শুনছ, একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো।’
জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কেন।’
বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন।
আমি বললেম, ‘সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে।’
বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিঁড়ে; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বুকের মধ্যে ক্ষত করে দিলে।
ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর।
See lessগান -ঘুম ঘুম ক্লাসরুম গায়ক - উপল সেনগুপ্ত ও পরমা ব্যান্ড -চন্দ্রবিন্দু লিরিক্স - অনিন্দ চট্টোপাধ্যায় চেনা মুখ, ছুঁয়ে থাকা দৃষ্টিএলোমেলো আড্ডা, চায়ের গেলাসঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলাডাকছে আমাকে, তোমার আকাশঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলাডাকছে আমাকে, তোমার আকাশনীল নির্বাসন, নীল নির্বাসRead more
গান -ঘুম ঘুম ক্লাসরুম
গায়ক – উপল সেনগুপ্ত ও পরমা
ব্যান্ড -চন্দ্রবিন্দু
লিরিক্স – অনিন্দ চট্টোপাধ্যায়
চেনা মুখ, ছুঁয়ে থাকা দৃষ্টি
এলোমেলো আড্ডা, চায়ের গেলাস
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
এমনও সকাল হয় অবিরত অপচয়
ছাইদানী ভরা থাকে মরা আগুনে
যাও মেঘ বলে দাও আমি ভালো নেই।
জেগে থাকে কথা ক্যান্টিন কোণ
ভোরে বেজে ওঠে যে টেলিফোন
ফুলে ঢাকা পথ হোক নির্জন
একা পথ পড়ে আছে নির্ঝুম
ফাঁকা ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানালা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
এমনও বিকেল আসে,
তুমি যাও বাইপাসে
অচেনা লোকাল বাসে সন্ধ্যে কাবার
যাও পথ খুঁজে নাও পথ পালাবার।
মনে পড়ে যায় গত জন্মের পাপ
শরীরে রয়েছে চেনা শরীরের ছাপ
তুমি নতমুখে মেনে নিলে অভিশাপ
সাদা হিমঘর জুড়ে শীত ঘুম
ফাঁকা ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানালা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানালা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
চেনা মুখ, ছুঁয়ে থাকা দৃষ্টি
এলোমেলো আড্ডা, চায়ের গেলাস
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
ঘুম ঘুম ক্লাসরুম, পাশে খোলা জানলা
ডাকছে আমাকে, তোমার আকাশ
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
নীল নির্বাসন, নীল নির্বাসন
Singer – Upal Sengupta And Poroma
Song: Ghum Ghum Classroom
Band Name – Chandrabindoo
Lyrics – Anindya Chattopadhyay
Chena mukh chuye thaka drishti
Elomelo adda chayer glass
Ghum ghum classroom Pashe khula janla
Dakche aamake tomar aakash
Neel nirbashon, Neel nirbason (*2)
Emono shokal hoy obiroto opochoy
Chai-dani bhora thake mora aagune
Jao megh bole dao ami bhalo nei
Jege thake kotha canteen kon
Bhure beje uthe je telephone
Fule dhaka poth hok nirjon
Eka poth pore ache nijhum
Emono bikal aashe,
Tumi jao baipase
Ochena local bus e shondhe kabar
jao poth khuje nao poth palabar
Mone pore jay gata janmer pap
Shorire royeche chena shorirer chap
Tumi noto mukhe mene nile ovishap
Shada himghar jure shit ghum
Faka classroom, pashe khula janala
Dakche amake, Tumar aakash
Ghum ghum classroom Pashe khula janla
Dakche aamake tomar aakash
See less
আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে ব্যান্ড : চন্দ্রবিন্দু আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে আমি যে রিক্সাওয়ালা আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে আমি যে রিক্সাওয়ালা আকাশে সূর্য ওঠে পুকুরে পদ্ম ফোটে আকাশে সূর্য ওঠে গো আকাশে সূর্য ওRead more
See lessআমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে
ব্যান্ড : চন্দ্রবিন্দু
আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে
বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে
আমি যে রিক্সাওয়ালা
আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে
বলি কি ও মাধবী তুমি কি আমার হবে
আমি যে রিক্সাওয়ালাআকাশে সূর্য ওঠে পুকুরে পদ্ম ফোটে
আকাশে সূর্য ওঠে গো
আকাশে সূর্য ওঠে পুকুরে পদ্ম ফোটে
হৃদয়ে কুটনো কোটে অসহ মদন জ্বালা
আমি যে রিক্সাওয়ালা
আমি যে রিক্সাওয়ালা দিন কি এমন যাবে
বরাবর পাগলা ভোলা নিশিদিন ফুল কুড়াবে
আমি যে রিক্সাওয়ালা
দিন যায় সন্ধ্যে ঢলে গরুতে হাম্বা বলে
দিন যায় সন্ধ্যে ঢলে গরুতে হাম্বা বলে
জ্বলেলে পাড়ার কলে তুমি হও চাঁদের কণা
আমি যে রিক্সাসোনা
আমি যে রিক্সাসোনা দিন কি এমন যাবে
সকালে ভাত খাবো না রাতে রাত আমায় খাবে
আমি যে রিক্সাওয়ালাজলে যায় জলের পোকা স্কুলে যায় কোলের খোকা
জলে যায় জলের পোকা
ওহ ওহ ওহ…
জলে যায় জলের পোকা স্কুলে যায় কোলের খোকা
বসে রয় হদ্দ বোকা দু’চোখে তোমার ছবি
আমি যে রিক্সা কবি গো
আমি যে রিক্সা কবি, দিন কি এমন যাবে
বলি কি হে মাধবী তুমি আর আসবে কবে
আমি যে রিস্কাওয়ালা…
Hridoy
আমরা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে আমরা বাঙালী বাস করি সেই তীর্থে- বরদ বঙ্গে, বাম হাতে যার কমলার ফুল, ডাহিনে মধুর-মালা, ভালে কাঞ্চন-শৃঙ্গ-মুকুট, কিরণে ভূবন আলো, কোল ভরা যার কনক ধান্য, বুকভরা যার স্নেহ, চরণ পদ্ম, অতসী অপরাজিতায় ভূষিত দেহ, সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গRead more
আমরা
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
মুক্তবেণীর গঙ্গা যেথায় মুক্তি বিতরে রঙ্গে
আমরা বাঙালী বাস করি সেই তীর্থে- বরদ বঙ্গে,
বাম হাতে যার কমলার ফুল, ডাহিনে মধুর-মালা,
ভালে কাঞ্চন-শৃঙ্গ-মুকুট, কিরণে ভূবন আলো,
কোল ভরা যার কনক ধান্য, বুকভরা যার স্নেহ,
চরণ পদ্ম, অতসী অপরাজিতায় ভূষিত দেহ,
সাগর যাহার বন্দনা রচে শত তরঙ্গ ভঙ্গে,
আমরা বাঙালী বাস করি সেই বাঞ্চিত ভূমি বঙ্গে।
বাঘের সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আমরা বাঁচিয়া আছি,
আমরা হেলায় নাগেরে খেলাই, নাগেরি মাথায় নাচি।
আমাদের সেনা যুদ্ধ করেছে সজ্জিত চতুরঙ্গে,
দশাননজয়ী রামচন্দ্রের প্রপিতামহের সঙ্গে।
আমাদের ছেলে বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়
সিংহল নামে রেখে গেছে নিজ শৌর্যের পরিচয়।
একহাতে মোরা মগের রুখেছি, মোগলের আর হাতে,
চাঁদ-প্রতাপের হুকুমে হঠিতে হয়েছে দিল্লীনাথে।
জ্ঞানের নিধান আদিবিদ্বান কপিল সাঙ্খ্যকার
এই বাঙ্গলার মাটিতে গাঁথিল সূত্রে হীরক-হার।
বাঙালী অতীশ লঙ্ঘিল গিরি তুষারে ভয়ঙ্কর,
জ্বালিল জ্ঞানের দীপ তিব্বতে বাঙালী দীপঙ্কর।
কিশোর বয়সে পক্ষধরের পক্ষশাতন করি,
বাঙালীর ছেলে ফিরে এল দেশে যশোর মুকুট পরি।
বাংলার রবি জয়দেব কবি কান্ত কোমল পদে
করেছে সুরভি সংস্কৃতের কাঞ্চন-কোকনদে।
স্থপতি মোদের স্থাপনা করেছে ‘বরভূদরের’ ভিত্তি,
শ্যাম কাম্বোজে ‘ওস্কার-ধাম’, -মোদেরি প্রাচীন কীর্তি।
ধেয়ানের ধনে মূর্তি দিয়েছে আমাদের ভাস্কর
বিট পাল আর ধীমান,- যাদের নাম অবিনশ্বর।
আমাদেরি কোন সুপটু পটুয়া লীলায়িত তুলিকায়
আমাদের পট অক্ষয় করে রেখেছে অজন্তায়।
কীর্তনে আর বাউলের গানে আমরা দিয়েছি খুলি
মনের গোপনে নিভৃত ভুবনে দ্বার ছিল যতগুলি।
মন্বন্তরে মরি নি আমরা মারী নিয়ে ঘর করি,
বাঁচিয়া গিয়েছি বিধির আশীষে অমৃতের টিকা পরি।
দেবতারে মোরা আত্মীয় জানি, আকাশে প্রদীপ জ্বালি,
আমাদেরি এই কুটীরে দেখেছি মানুষের ঠাকুরালি,
ঘরের ছেলের চক্ষে দেখেছি বিশ্বভূপের ছায়া,
বাঙালীর হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।
বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বাণী ছটেছে জগৎময়,
বাঙালীর ছেলে ব্যাঘ্রে বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।
তপের প্রভাবে বাঙালী সাধক জড়ের পেয়েছে সাড়া,
আমাদের এই নবীন সাধনা শব-সাধনার বাড়া।
বিষম ধাতুর মিলন ঘটায়ে বাঙালী দিয়েছে বিয়া,
মোদের নব্য রসায়ন শুধু গরমিলে মিলাইয়া।
বাঙালীর কবি গাহিছে জগতে মহামিলনের গান,
বিফল নহে এ বাঙালী জনম, বিফল নহে এ প্রাণ।
ভবিষ্যতের পানে মোরা চাই আশাভরা আহ্বাদে,
বিধাতার কাজ সাধিবে বাঙালী ধাতার আশির্বাদে।
বেতালের মুখে প্রশ্ন যে ছিল আমরা নিয়েছি কেড়ে,
জবাব দিয়েছি জগতের আগে ভাবনা ও ভয় ছেড়ে,
বাঁচিয়া গিয়েছি সত্যের লাগি সর্ব করিয়া পণ,
সত্যে প্রণমি থেমেছে মনের অকারণ স্পন্দন।
সাধনা ফলেছে, প্রাণ পাওয়া গেছে জগত-প্রাণের হাটে,
সাগরের হাওয়া নিয়ে নিশ্বাসে গম্ভীরা নিশি কাটে,
শ্মশানের বুকে আমরা রোপণ করেছি পঞ্চবটী,
তাহারি ছায়ায় আমরা মিলাব জগতের শত কোটী।
মণি অতুলন ছিল যে গোপন সৃজনের শতদলে,
ভবিষ্যতের অমর সে বীজ আমাদেরি করতলে,
অতীতে যাহার হয়েছে সূচনা সে ঘটনা হবে হবে,
বিধাতার বরে ভরিবে ভূবন বাঙালীর গৌরবে।
প্রতিভার তপে সে ঘটনা হবে, লাগিবে না দ্বেষাদ্বেষি,
মিলনের মহামন্ত্রে মানবে দীক্ষিত করি ধীরে—
মুক্ত হইব দেব-ঋণে মোরা মুক্তবেণীর তীরে।
In English Font:
Amra
Satyendranath Dutta
Muktobenir gonga jethay mukti bitore ronge
Amra bangali bash kori sei tirthe-borod bonge,
Bam hate jar komolar fol, dahine madhur mala,
bhale kanchon sringe mukut, kirone bhubon alo
Kol bhora jar konok dhannyo, bukbhora jar sneho
Choron podmo, Otoshi oporajitay bhushito deho,
Shagor jahar bonfdona roche shoto taranga vonge,
Amra bangali bash kori sei bonchito bhumi bonge
Bager shonge juddho koriya amra bachiya aachi,
Amra helay nagere khelay, nageri mathay nachi.
Amader sena juddho koreche shojjito chaturonge,
Doshanonjoyi ramchandrer propitamoher songe.
Amader chele bijoysinghho Lanka koria joy
Singhol nam rekhe geche nij shourjer porichoy
Ekhathe mora moger rukechi, Mogholer ar hathe,
Chand-protaper hukume hotite hoyeche dillinathe
Gyaner nidhan Adibidyan kopil sangkhokar
Ei Banglar matite gathilo sutre hirok-har.
Bangali otisho longilo giri tushare voyonkor.
Jalilo gyaner dip tibbote Bangali dipongkor
Kishor bohoshe pokkodhorer pokkoshashon kori,
Bangalir chele fire elo deshe joshur mukut pori.
Banglar robi joydeb kobikanto komol pode
Koreche shurovi Sanskriter kanchon-kokonde
Stopoti moder stapona koreche “borbhuder” Bhitti,
Shyam kamboje ‘oskar-dhaam’ -moderi prachin kirti
Dheyaner dhone murti diyeche amader vaskor
Bit paul ar Dhiman,- jader nam obinosshor.
Amader e kono supathu potuwa lilayito tulikay
Amader pot okhoy kore rekeche ojontay.
Kirtone ar bauler gaane amra diyechi khuli
Moner gupone nibrito bhubone daar chilo jatoguli
Monmontore mori ni amra mari ni niyte ghor kori,
Bachiya giyachi bidhir ashishe omriter tika pori.
Debotare mura aatiyo jani, akashe prodip jali,
Amader ei kuthire dekechi manusher thakurali,
Ghorer cheler chokkhe dekechi bishobhuper chaya
Bangalir hiya omiyo mothiya nimai dhoreche kaya.
Bir shonnashi bibeker bani choteche jagatmoy,
bangalir chele byagr brishobhbe ghotabe shomonnoy.
Toper probhabe Bangali shadhok jorer peyeche shara
Amader ei nabin shadhona Shob-shadhonar bara.
Bishom dhatur milon ghotaye Bangali diyeche biya,
Moder nobbo roshayan sudhu gormile milaiya .
bangalir kobi gahiche jagate mohamiloner gaan,
Bifol nohe e Bangali janam, Bifol nohe e pran.
Bhobishoter pane mora chaiashabhora aalade
Bidhatar kaj shadhibe Bangali dhatar aashirbade.
Betaler mukhe proshno je chiloamra niyechi kere.
Jobab diyechi jagater aage bhabona o bhoy chere,
Bachiya giyechi sotter lagi shorbo koria pon,
Shotte pronomi themeche moner okaron spondon.
Shadhona foleche, pran pawa geche jagat praner haate
Shagorer hawa niye nishashe gombhira nishi kate,
shoshaner buke amra rupon korechi ponchoboti,
tahari chayay amara milabo jagater shoto kuti.
Moni atulon chilo je gopon srijoner shotodole
See lessBhobishoter omar she bij amader e korotole,
Otite jahar hoyeche suchona se ghotona hobe hobe
Bidhatar bore bhoribe bhubon Bangalir gourobe.
Protibhar tope se ghotona hobe, lagibe na deshadeshi,
Miloner mohamontre manobe dikkito kori dhire-
mukto hoibo debo-rine mora muktobenir tire.