Bengali Forum Latest Questions

  1. বর্ষাকাল ভূমিকা: বাংলার প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়ে ঋতুর পরে ঋতু আসে। কখনো শীতের হিম হিম পরশ আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থেকে চারদিক। কখনো চৈতালি-বৈশাখি রোদ, আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জনে মুখরিত হয় সারাবেলা। কখনো আবার কাশফুলের শুভ্রতার সাথে একাকার হয়ে মিশে থাকে শরতের সাদা মেঘ। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির নাচন নRead more

    বর্ষাকাল

    ভূমিকা: বাংলার প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়ে ঋতুর পরে ঋতু আসে। কখনো শীতের হিম হিম পরশ আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থেকে চারদিক। কখনো চৈতালি-বৈশাখি রোদ, আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জনে মুখরিত হয় সারাবেলা। কখনো আবার কাশফুলের শুভ্রতার সাথে একাকার হয়ে মিশে থাকে শরতের সাদা মেঘ। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির নাচন নাচাতে নাচাতে আসে বর্ষা। বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি পায় নতুন মাত্রা। জরাজীর্ণ গ্রীষ্মক্লান্ত এ দেশের প্রকৃতিকে বর্ষা তার আপন প্রেমপেয়ালার পবিত্র জলে স্নান করিয়ে সিক্ত করে তোলে। জলরঙে রাঙিয়ে দেয় ধরণী।

    বর্ষাকাল পরিচিতি: বর্ষাকাল বাংলাদেশের ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের শেষে শুকনো ধরণীকে সিক্ত করে বাংলার বুকে বর্ষার শুভ আগমন ঘটে। তখন আর গ্রীষ্মের কাঠফাটা দাবদাহ থাকে না। বাংলা আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল, যার পুরোটা সময় জুড়েই থাকে ঝর ঝর বৃষ্টিধারার কানজুড়ানো ধ্বনি, আর কদম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য।

    বর্ষার কারণ: ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের কানে বর্ষার আগমন বার্তা জানান দিয়ে যায়। এ বৃষ্টির রয়েছে ভৌগোলিক কারণ। গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং উত্তর-পূর্বে বয়ে যায় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প বুকে ধরে। হিমালয়ের গায়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তা বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।

    বাংলায় বর্ষার আগমন: বর্ষার আগমন বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য প্রতীক্ষার সমাপন। গ্রীষ্মের রোদে যখন প্রকৃতি শুষ্কপ্রায়, মৃতপ্রায়; একফোঁটা বৃষ্টির জন্য যখন মানুষ ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’ বলে গান গেয়ে ওঠে; খরতাপে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত কুকুরটির যখন তৃষ্ণায় জিভ ঝুলে যায়, এক পশলা বৃষ্টি তখন নতুন মাত্রার ছন্দ নিয়ে অবসান ঘটায় সব প্রতীক্ষার। পরিপূর্ণতা দেয় সকল প্রত্যাশার আর শীতল করে দেয় সব তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের উত্তাপকে। অদ্ভূত সুন্দর শিহরণে শিহরিত হয় প্রকৃতি। টিনের চালের ঝুম বৃষ্টির নৃত্যে মুখরিত হয় গ্রামবাংলা। সাথে নেচে ওঠে বর্ষা-প্রেমিক মানুষগুলোর মন।

    বর্ষার প্রকৃতি: বর্ষার বৃষ্টিভেজা বাতাস শিহরিয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতিকে। গ্রীষ্মের তাপে জরাজীর্ণ উদ্ভিদ বর্ষার নবীন মেঘের আহ্বানে নাচতে থাকে হেলেদুলে। বহুদিনের প্রতীক্ষিত বারিধারায় রোমাঞ্চিত হয় নগর-পল্লীর বৃক্ষরাজি।

    বর্ষায় পল্লীর রূপ-বৈচিত্র্য: বর্ষায় শহরে ও গ্রামে আলাদা আলাদা চিত্র ফুটে ওঠে। পল্লীর প্রকৃতি বর্ষার অপার সৌন্দর্যে শোভামন্ডিত। পুকুর, খাল, বিল বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর থাকে। বৃক্ষরাজির ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে কী যে অনাবিল শোভার সৃষ্টি করে তা সত্যিই হৃদয় পাগল করা। মাতাল হাওয়া যখন বাঁশবনে তার পরশ বুলিয়ে যায়, তখন বিরহিনীর আকুল হৃদয় প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা ‘পল্লীবর্ষা’য় এই রূপে ফুটে উঠেছে নিবিড় যত্নের সাথে। তিনি বলেছেন- ‘বেনুবনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।’

    বর্ষায় পল্লীর জনজীবন: বর্ষাকাল গ্রামীণ মানুষদেরকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে দেয়। পাড়ার পুরুষ মানুষরা চায়ের দোকানে বসে পুরনো দিনের গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে। রমনীরা ঘরে বসে নকসী কাঁথায় ফুল তোলে। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন।

    শহর জীবনে বর্ষা: শহরের গৎবাঁধা যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বর্ষার বৃষ্টি শহরের আকাশে বাতাসে উড়ে চলা ধূলোবালিকে অনেকটাই বশ করে ফেলে। এই একটা ঋতুতেই কেবল শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো একটু নির্মল হাওয়ায় নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় যা মানুষের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

    বর্ষায় বাংলার নদ-নদী: বর্ষাকালে বাংলার নদ-নদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে এ সময় নদী তার আসল সৌন্দর্য খুঁজে পায়। নদীর পাড়ের সবুজ ঘাস আরো সবুজ হয়ে ওঠে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি, তারপর লম্বা একটি গ্রামের রেখা, তার উপরে শুধু মেঘ আর মেঘ।

    বর্ষার ফুলফল: সৌন্দর্যের রেনু খুলে বর্ষায় ফোঁটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন-এর ভাষায়- ‘কাহার ঝিয়ারি কদম্ব-শাখে নিঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে, অস্ফুট কলিকায়।’ এ সময় বিলে ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য বর্ষাকে দেয় নতুন মাত্রা। বর্ষার ফলের মধ্যে অন্যতম ফল আনারস, আমড়া, পেয়ারা প্রভৃতি।

    কাব্যে ছন্দে বর্ষার প্রকৃতি: বর্ষার প্রকৃতি হৃদয় কাড়তে জানে। এর রূপের আকর্ষণ উতলা করে মানবমন। প্রাণোচ্ছল কিশোরীকে টেনে আনে ঘরের বাইরে। তখন তার বৃষ্টিভেজা নূপুরের নিক্কন আরো মধুর সুরে বাজতে থাকে। তা শুনে কবি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, বন্ধ করে রাখতে পারেন না আর কবিতার খাতা। শিল্পীর সুর আর বাঁধ মানে না। ঝুম বৃষ্টির সাথে তার কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার হয়ে দূর দিগন্তে মিলিয়ে যায়। বাংলার সাহিত্য, সংগীত এভাবেই সিক্ত হয়ে আছে বর্ষার বৃষ্টিতে।

    বর্ষার আশির্বাদ: বর্ষাকাল বাংলাদেশের জন্য বয়ে নিয়ে আসে অপার সম্ভাবনার বার্তা। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় বাংলার মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্য-প্রাচুর্যের বার্তা। বর্ষার পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে ফসলের মাঠ আর হাসি ফোটে কৃষকের মুখে।

    বাংলা সংস্কৃতিতে বর্ষার প্রভাব: বাংলার সংস্কৃতিতে একাকার হয়ে মিশে আছে বর্ষা ঋতুর ভেজা সৌন্দর্য। বর্ষাকে নিয়ে বাংলায় যতো গান রচিত হয়েছে, অন্য কোনো ঋতু নিয়ে তা হয়নি। রবীন্দ্র সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বর্ষা ঋতুর বন্দনা, বর্ষার সৌন্দর্য বন্দনা। রবীন্দ্রনাথের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ কিংবা ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর ভাদর দিনে’ প্রভৃতি গান আজও বৃষ্টির দিনে আমাদের ভাবনার জগতে টেনে নেয়। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন পল্লীর আরশিতে বর্ষাকে যেভাবে প্রতিফলিত করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।

    বর্ষার অপকারী দিক: বর্ষাকাল সব সময়ই বাঙালির মুখে হাসি ফোটায় তা নয়। খরস্রোতা নদী মাঝে মাঝে লাগামছাড়া হয়ে বান ডাকে, ভাসিয়ে নেয় উপকূলের অনেক মানুষের বসতবাড়ি। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘুর্ণিঝড় ইত্যাদি বর্ষাকালেই বেশি আঘাত হানে। অতিবৃষ্টির ফলে অনেক সময় ফসল নষ্ট হতে পারে, আবার কখনো তা মানব জীবনে স্থবিরতা এনে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অনেক মহামারী ছড়িয়ে জনজীবনকে বিষিয়ে তোলে।

    উপসংহার: বর্ষার রূপ, রং, ভেজা গন্ধ-সব কিছুই আপন মহিমা আর সৌন্দর্যে ভাস্বর। বাংলার বর্ষাকাল কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি কৃষি অনেকাংশেই বর্ষার কাছে ঋণী। বাংলাদেশের অন্য কোনো ঋতুকেই আমরা এতটা গভীরভাবে দেহ, মন ও অনুভূতির সাথে মিলিয়ে নিতে পারি না। তাই বর্ষা অনেকের কাছেই প্রিয় ঋতু হিসেবে বিবেচিত।

    See less
  1. This answer was edited.

    গ্রীষ্মকাল সূচনা: বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম কাল হল গ্রীষ্মকাল। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল বলতে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাস কে বুঝায়। এই সময় সূর্যের তাপমাত্রা এতই প্রখর হয় যে দিনের বেলা চলাচল দুষ্কর হয়ে ওঠে। চারিদিকে বিরাজ করে গরম আবহাওয়া এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ। গ্রীষ্মের বৈশিষ্ট্য বা রূপ:গ্রীষ্মকালে বাতাস হয় শুষ্Read more

    গ্রীষ্মকাল

    সূচনা:

    বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম কাল হল গ্রীষ্মকাল। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকাল বলতে বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাস কে বুঝায়। এই সময় সূর্যের তাপমাত্রা এতই প্রখর হয় যে দিনের বেলা চলাচল দুষ্কর হয়ে ওঠে। চারিদিকে বিরাজ করে গরম আবহাওয়া এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ।

    গ্রীষ্মের বৈশিষ্ট্য বা রূপ:
    গ্রীষ্মকালে বাতাস হয় শুষ্ক তাই বারবার তৃষ্ণা পায়। মানুষ দিনের বেলা যথাযথ পরিশ্রম করতে ব্যাহত হয়। বারবার ঘামে শরীর ভিজে যায়। কৃষকেরা মাঠ ত্যাগ করে ছায়ার আশ্রয় নে। গ্রীষ্মকালে আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে বারবার পানি, শরবত ইত্যাদি পান করতে হয়। গ্রীষ্মের গরম আবহাওয়া মানুষ ছাড়াও পশুপাখির জন্য কষ্টকর হয়। ‌ বিশ্বের বিকেলে সূর্যের তাপ কমে গেলে মৃদু বাতাস বয়। কখনো কখনো কালবৈশাখী ঝড় উঠে এবং বৃষ্টিপাত হয়।

    গ্রীষ্মের ফলমূল:
    গ্রীষ্মকাল ফুলের ঋতু। গ্রীষ্মকালে অনেক রকমের ফলমূল পাওয়া যায়। এই সময় আম, কাঁঠাল, জাম, তরমুজ, লিচু প্রভৃতি মিষ্টি ফল পাওয়া যায়। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল যেমন বেল, জুঁই, চাপা, গন্ধরাজ প্রভৃতি ফুটে।

    গ্রীষ্মের সুবিধা ও অসুবিধা:
    গ্রীষ্মের সময় দিনের বেলা অনেক লম্বা হয়। তাই বাইরে ঘোরাঘুরি এবং কাজের জন্য অনেক সময় পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের ছুটিতে জলে সাঁতার কাটা, বিভিন্ন ফল ফলমূল উপভোগ করা দারুন আনন্দের। কিন্তু গরমের প্রকোপে এই সময়ে অনেক রোগ যেমন জ্বর, কাশি, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি দেখা দেয়। তাছাড়া কখনো কখনো কাল বৈশাখের কারণে অনেক ঘরবাড়ি ও সম্পত্তির ক্ষতিসাধন হয়।

    উপসংহার:
    গ্রীষ্মকাল নিঃসন্দেহে বছরের সবচেয়ে কষ্টের কাল বা ঋতু। এই সময় গরমের প্রকোপে চারিদিকে অশান্তি সৃষ্টি হয়। নানা অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। তবুও গ্রীষ্মের সুমিষ্ট ফলমূল, নববর্ষ উৎসব, জামাই ষষ্ঠী ইত্যাদি আমাদের জীবনে আনন্দ সঞ্চার করে।

    রচনা-গ্রীষ্মকাল | Summer season essay in bengali | summer season | grishma kal essay in bengali | paragraph in bengali | grishma ritu essay in bengali  

    See less
  1. গ্রন্থাগার ভূমিকা: গ্রন্থাগার সভ্য মানুষের জীবনযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান কালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের বাড়িতেই জ্ঞান আনন্দলাভের জন্য গৃহ লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যে সকল সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত শিক্ষাবঞ্চিত দেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকRead more

    গ্রন্থাগার

    ভূমিকা: গ্রন্থাগার সভ্য মানুষের জীবনযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান কালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের বাড়িতেই জ্ঞান আনন্দলাভের জন্য গৃহ লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যে সকল সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত শিক্ষাবঞ্চিত দেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বা সাধারণ গ্রন্থাগার সকল মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটায় আনন্দ দান করে। দেশের অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীকরণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

    গ্রন্থাগার জ্ঞানের মিলনক্ষেত্র: গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী জ্ঞান ধারার মহামিলন ক্ষেত্র। এখানে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মিলিত হয়ে আছে নানা দেশের পুস্তকের মাধ্যমে এটি সকল জ্ঞানের মিলন তীর্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যের চিন্তাধারা আমাদেরশান্তি দেয়, আনন্দ দেয়, আর দেয় উদারতার শিক্ষা।

    গ্রন্থাগারের উদ্ভব : জ্ঞান-পিপাসু মানুষের কাছে গ্রন্থাগার আধুনিক সভ্যতার অবদান। প্রাচীন কালের মানুষও আধুনিক মানুষের মতাে জ্ঞান লাভ ও বিদ্যা শিক্ষার প্রয়ােজনে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় মনােযােগী হয়েছিল। তখনকার দিনে গ্রন্থ বলতে অবশ্য বর্তমানকালের সহজে বহন করার মতাে কাগজের গ্রন্থ ছিল না। ছিল খােদাই করা শিলায় লিপি। তারপর তালপাতায় ও ভুজপত্রে লিখিত গ্রন্থ বের হয়। মধ্যযুগে তুলট কাগজের আবিষ্কার হওয়ায় এ কাগজে লেখা আরম্ভ হয়।

    প্রাচীন কালের গ্রন্থাগার : চীনদেশে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে অনেক বড় গ্রন্থাগার সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রাচীন ভারতে তক্ষশিলা, নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় গ্রন্থাগার ছিল। এসব গ্রন্থাগার শত শত ছাত্র ও বিদেশি পরিব্রাজকদের জ্ঞান-তৃষ্ণা মিটাত।

    পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার : জ্ঞানের চর্চার প্রয়ােজনের সঙ্গে সঙ্গে এবং মুদ্রণযন্ত্রের প্রবর্তনের ফলে পৃথিবীর সকল দেশেই বড় বড় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহৎ গ্রন্থাগার ছিল চারটি – প্যারিস নগরীর বিবলিওথেক ন্যাশন্যাল, লণ্ডনের বৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি, আমেরিকার ওয়াশিংটন নগরের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এবং সােভিয়েত রাশিয়ার লেলিন লাইব্রেরি। এগুলির দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই উপকৃত হতেন।

    গ্রন্থাগারের শ্রেণি : গ্রন্থাগার দুই প্রকার – ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ও সাধারণ গ্রন্থাগার। ব্যক্তি বিশেষের গ্রন্থাগারে পুস্তকের সংখ্যা সাধারণত কিছু কম। এ সব গ্রন্থাগার গড়ে উঠে পণ্ডিত, শিক্ষক ও গবেষকদের নিজস্ব প্রয়ােজনে। এর দ্বারা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিরাই উপকৃত হন। অপরদিকে, সাধারণ গ্রন্থাগারের লক্ষ্য থাকে সকল শ্রেণির পাঠকের চাহিদা পূরণ। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের চেষ্টায় প্রতিষ্টিত হয় সাধারণ গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগারে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের বই পড়ার সুযােগসুবিধা থাকে। শুধু বর্তমান যুগেই নয় প্রাচীন যুগেও প্রচলন ছিল সাধারণ গ্রন্থাগারের ভারতের বৌদ্ধ বিহারগুলির বিশাল গ্রন্থাগার ধ্যান মগ্ন ঋষির নীরবতায় করে চলত সকল মানুষের হিতসাধনের তপস্যা।

    বর্তমানের গ্রন্থাগার : আমাদের দেশে কয়েকটি গ্রন্থাগার আছে – কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার, এশিয়াটিক সােসাইটির গ্রন্থাগার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগার। তাছাড়া দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে,স্কুলে ও বড় বড় শহরে সাধারণ পাঠের জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া কিছু ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারও আমাদের দেশে দেখা যায়।

    গ্রন্থাগার সভ্যতা ও প্রগতির পরিচায়ক : সমস্ত জগতের শিক্ষিত সমাজ আজ গ্রন্থাগারের বিরাট প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই গ্রন্থাগার আন্দোলনের সাহায্যে তারা চেয়েছেন গ্রন্থাগারের উন্নতি সাধন করতে। কারণ প্রত্যেক দেশেরই সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলাে বিতরণ করতে হলে সরকারের শুধু শিক্ষা নীতি করলেই চলবে না তার সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরির সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ জাতীয় জীবনে গ্রন্থাগার-এক মহৎ কর্তব্য পালন করে চলছে, গ্রন্থাগারই পারে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলাে জ্বালিয়ে দিতে।

    উপসংহার : গ্রন্থাগার দেশের গ্রন্থ-সচেতন মানসিকতার পরিচায়ক। গত জাতির সভ্যতার বার্তা বহন করে অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়। গ্রন্থাগার নিরক্ষরতা দূরীকরণে যেমন সহায়ক, তেমনি জ্ঞান বৃদ্ধিরও সহায়ক। সুতরাং দেশে যত বেশি লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হবে ততই জ্ঞান পিপাসু মানুষ প্রেরণা ও অমৃতের স্বাদ করবে আস্বাদন। আর হবে জাতির উন্নতি।

    See less
  1. ইন্টারনেট ভূমিকাঃ মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার অনন্য ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্টারনেট। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এক মাধ্যমের নাম ইন্টারনেট। এটি কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সারRead more

    ইন্টারনেট

    ভূমিকাঃ মানব সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞানের যে সব আবিষ্কার অনন্য ভূমিকা পালন করেছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ইন্টারনেট। বিশ্ববিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার যুগান্তকারী এক মাধ্যমের নাম ইন্টারনেট। এটি কম্পিউটারভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে সারাবিশ্বের দেশগুলি আজ যেন নিকট প্রতিবেশী। এই ব্যবস্থা ‘বিশ্বগ্রাম’ (Global Village)ধারণাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে। বর্তমানে ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। আধুনিক ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানবকল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভাবনাময় করে তুলেছে ইন্টারনেট।

    ইন্টারনেট কীঃ ইন্টারন্যাশনাল নেটওয়ার্ক (আন্তর্জাতিক জাল) শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ইন্টারনেট। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হলো এই ব্যবস্থা। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের একটি পদ্ধতি হিসেবে গড়ে উঠেছে এই সিস্টেম। সারাবিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত কম্পিউটারকে একটি বিশেষ পদ্ধতিতে যুক্ত করে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। এ প্রযুক্তিতে কম্পিউটার ভিত্তিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও প্রেরণ করা যায়। সারাবিশ্বের অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গবেষণাগার, সংবাদ সংস্থা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ কোটি কোটি গ্রাহক ইন্টারনেটের সাহায্যে যুক্ত হয়ে এই মহাযোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়ে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন কিংবা অনুরূপ যেকোনো ডিভাইস মুহূর্তেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এ জন্য প্রয়োজন কম্পিউটার বা অনুরূপ ডিভাইস, মডেম এবং ইন্টারনেট সংযোগ।

    ইন্টারনেটের উৎপত্তিঃ ইন্টারনেট আধুনিক কালের আবিষ্কার। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ এটি আবিষ্কার করে। যোগাযোগের গোপন এবং নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে এটি প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণাগারে টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে স্থান করে নেয়। এটি টেলিফোন লাইন নির্ভর একটি যোগাযোগ পদ্ধতি। ডেস্কটপ কম্পিউটারের আবিষ্কার হলে টেলিনেটওয়ার্কের সাথে কম্পিউটারের সংযুক্তি ঘটে। তখন এর নাম ছিল ARPANET । এক সময় কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। ১৯৯০-এর দশকে ইন্টারনেট সারাবিশ্বে ব্যাপক আকারে বিস্তার লাভ করে। অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার ইন্টারনেটের বিপ্লবে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

    ইন্টারনেটের সম্প্রসারণঃ মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ৪টি কম্পিউটারের সংযোগ ঘটিয়ে যে ব্যবস্থার শুরু করে, পরবর্তী তিন বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৬টিতে। ১৯৮৪ সালে মার্কিন ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য একটি ব্যবস্থা চালু করে। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তখনও সুযোগ-সুবিধা ছিল সীমিত। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রণের জন্য ৯০-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়। অতি অল্প সময়েই তা দ্রুত বিস্তার লাভ করে। বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা শত কোটির ঊর্ধ্বে।

    ন্টারনেটের ব্যবহারিক দিকঃ ইন্টারনেট সিস্টেমে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি ব্যবহারিক দিক হলো

    * ই.মেইল: দ্রুত সময়ে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা হলো ইলেকট্রনিক্স মেইল বা ই-মেইল।

    * ওয়েব: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে রাখা তথ্য দেখার পদ্ধতি।

    * নেট নিউজ: ইন্টারনেটের তথ্য ভান্ডারে রক্ষিত সংবাদ।

    * চ্যাট: অনলাইনে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির কথা বা টেক্সট আড্ডা।

    * ইউজনেট: সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত তথ্য ভান্ডার।

    * ই-ক্যাশ: অর্থনৈতিক লেনদেন ও বাণিজ্যিক সুবিধা।

    ইন্টারনেটের ব্যবহারঃ বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সভ্য সমাজের মানুষের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট ছাড়া জীবন অচল। এর মাধ্যমে মুহূর্তেই বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়। লেখাপড়া, গবেষণা, সাহিত্য চর্চার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, বই, ইন্টানেটের মাধ্যমে যেকোনো সময় পাওয়া সম্ভব। এটি মানুষের হাতের মুঠোয় জ্ঞানভান্ডার তথা লাইব্রেরিকে এনে দিয়েছে। পর্যটকদের প্রয়োজনীয় সব তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যায়। হোটেল রির্জাভেশন, টিকেট কাটা সবই সম্ভব অনলাইনে। এছাড়াও ইন্টারনেটে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়। ঘরে বসে বিশ্ববিখ্যাত সব সিনেমা-নাটক দেখা যায় যা বিনোদনকে সহজ করেছে। বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলি যেমন ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে ইন্টারনেট এনেছে নতুন দিগন্ত। অনলাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইনে কেনাবেচা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দিয়েছে নতুনমাত্রা। এতে সময় ও ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছে। সংবাদপত্র এবং খেলাধুলার ক্ষেত্রকেও ইন্টারনেট অনেক সহজ করে দিয়েছে।

    ইন্টারনেটের ক্ষতিকর দিকঃ ইন্টারনেটের বহুমাত্রিক উপকারিতার পাশাপাশি এর নেতিবাচক দিকও আছে। অবশ্য তা নির্ভর করে এর ব্যবহারের উপর। বর্তমানে এর সাহায্যে মিথ্যা খবর, অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও প্রদর্শন, মানুষকে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব বিষয় যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। কেউ কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, যা অসংখ্য কম্পিউটারকে অকেজো করে দিচ্ছে বা ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হ্যাকাররা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য চুরি করে বিভিন্নভাবে মানুষের ক্ষতি করছে। এছাড়াও অন্যের একাউন্ট হ্যাক করে অর্থ-সম্পদ নিজের দখলে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আবার ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করেও অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এসবের দায় ইন্টানেটের নয়, ব্যবহারকারীর। অপরাধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে।

    তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে করণীয়ঃ জ্ঞান বিজ্ঞান ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নিজ অবস্থান সুদৃঢ় করতে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশের কোনো বিকল্প নেই। বর্তমানে এক্ষেত্রে যারা পিছিয়ে পড়ছে, তারা এক ধরণের বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, যাকে ডিজিটাল বৈষম্য বলা হয়। বাংলাদেশও এরূপ বৈষ্যমের শিকার। এই বৈষম্য দূর করতে চাইলে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো-

    * আমাদের তরুণ সমাজকে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে।

    * ব্যাপক সংখ্যক জনগণের নিকট ইন্টারনেট পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

    * টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।

    * তথ্য প্রযুক্তির জগতে ভাষা হিসেবে ইংরেজির অধিপত্য একক। তাই ইংরেজির ব্যবহারে দক্ষতা বাড়াতে হবে।

    * তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনসম্পদ এবং সরকার গড়ে তুলতে হবে।

    উপসংহারঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিই বর্তমান বিশ্বের সকল প্রকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মূল চালিকাশক্তি। এক্ষেত্রে যারা যতো বেশি অগ্রগামী, তারা ততো উন্নত। ইন্টারনেট এখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিটি স্তরকে জয় করে মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমরা তৃতীয় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এখনও পিছিয়ে আছি। আমাদের উচিত হলো ইন্টারনেটের ব্যাপক ও বহুমাত্রিক ব্যবহারের প্রসার ঘটিয়ে দেশকে আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলা।

    See less
  1.   দুই বিঘা জমি' রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'কথা ও কাহিনী' নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি লিখেছেন। এই কবিতায় গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক দেখানো হযRead more

     

    দুই বিঘা জমি’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি ব্যঙ্গাত্মক কবিতা। এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কথা ও কাহিনী’ নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি লিখেছেন। এই কবিতায় গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক দেখানো হয়েছে। এখানে একটি লোকের জমি জোর করে জমিদার এর দখলে নেওয়ার ঘটনা অতি নিপুণভাবে কবিতার ছন্দে বলা হয়েছে। এই কবিতার উপর ভিত্তি করে হিন্দি দো বিঘা জমিন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।

    আরও পড়ুনঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতাসমূহ

     

    দুই বিঘা জমি

    শুধু বিঘে দুই ছিল মোর ভুঁই   আর সবই গেছে ঋণে।
    বাবু বলিলেন, “বুঝেছ উপেন,   এ জমি লইব কিনে।’
    কহিলাম আমি, “তুমি ভূস্বামী,   ভূমির অন্ত নাই।
    চেয়ে দেখো মোর আছে বড়ো-জোর   মরিবার মতো ঠাঁই।’
    শুনি রাজা কহে, “বাপু, জানো তো হে, করেছি বাগানখান
    পেলে দুই বিঘে প্রস্থে ও দিঘে   সমান হইবে টানা–
    ওটা দিতে হবে।’ কহিলাম তবে   বক্ষে জুড়িয়া পাণি
    সজল চক্ষে, “করুণ বক্ষে   গরিবের ভিটেখানি।
    সপ্ত পুরুষ যেথায় মানুষ   সে মাটি সোনার বাড়া,
    দৈন্যের দায়ে বেচিব সে মায়ে   এমনি লক্ষ্মীছাড়া!’
    আঁখি করি লাল রাজা ক্ষণকাল   রহিল মৌনভাবে,
    কহিলেন শেষে ক্রূর হাসি হেসে,  “আচ্ছা, সে দেখা যাবে।’

    পরে মাস দেড়ে ভিটে মাটি ছেড়ে   বাহির হইনু পথে–
    করিল ডিক্রি, সকলই বিক্রি   মিথ্যা দেনার খতে।
    এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায়   আছে যার ভূরি ভূরি–
    রাজার হস্ত করে সমস্ত   কাঙালের ধন চুরি।
    মনে ভাবিলাম মোরে ভগবান   রাখিবে না মোহগর্তে,
    তাই লিখি দিল বিশ্বনিখিল   দু বিঘার পরিবর্তে।
    সন্ন্যাসীবেশে ফিরি দেশে দেশে   হইয়া সাধুর শিষ্য
    কত হেরিলাম মনোহর ধাম, কত মনোরম দৃশ্য!
    ভূধরে সাগরে বিজনে নগরে   যখন যেখানে ভ্রমি
    তবু নিশিদিনে ভুলিতে পারি নে   সেই দুই বিঘা জমি।
    হাটে মাঠে বাটে এই মতো কাটে   বছর পনেরো-ষোলো–
    একদিন শেষে ফিরিবারে দেশে   বড়ই বাসনা হল।

    নমোনমো নম সুন্দরী মম   জননী বঙ্গভূমি!
    গঙ্গার তীর স্নিগ্ধ সমীর,   জীবন জুড়ালে তুমি।
    অবারিত মাঠ, গগনললাট  চুমে তব পদধূলি,
    ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়   ছোটো ছোটো গ্রামগুলি।
    পল্লবঘন আম্রকানন   রাখালের খেলাগেহ,
    স্তব্ধ অতল দিঘি কালোজল–  নিশীথশীতল স্নেহ।
    বুকভরা মধু বঙ্গের বধূ   জল লয়ে যায় ঘরে–
    মা বলিতে প্রাণ করে আনচান,   চোখে আসে জল ভরে।
    দুই দিন পরে দ্বিতীয় প্রহরে   প্রবেশিনু নিজগ্রামে–
    কুমোরের বাড়ি দক্ষিণে ছাড়ি   রথতলা করি বামে,
    রাখি হাটখোলা, নন্দীর গোলা, মন্দির করি পাছে
    তৃষাতুর শেষে পঁহুছিনু এসে   আমার বাড়ির কাছে।

    ধিক্‌ ধিক্‌ ওরে, শতধিক্‌ তোরে,   নিলাজ কুলটা ভূমি!
    যখনি যাহার তখনি তাহার,   এই কি জননী তুমি!
    সে কি মনে হবে একদিন যবে   ছিলে দরিদ্রমাতা
    আঁচল ভরিয়া রাখিতে ধরিয়া   ফল ফুল শাক পাতা!
    আজ কোন্‌ রীতে কারে ভুলাইতে   ধরেছ বিলাসবেশ–
    পাঁচরঙা পাতা অঞ্চলে গাঁথা, পুষ্পে খচিত কেশ!
    আমি তোর লাগি ফিরেছি বিবাগি   গৃহহারা সুখহীন–
    তুই হেথা বসি ওরে রাক্ষসী,   হাসিয়া কাটাস দিন!
    ধনীর আদরে গরব না ধরে !   এতই হয়েছ ভিন্ন
    কোনোখানে লেশ নাহি অবশেষ   সেদিনের কোনো চিহ্ন!
    কল্যাণময়ী ছিলে তুমি অয়ি,   ক্ষুধাহরা সুধারাশি!
    যত হাসো আজ যত করো সাজ   ছিলে দেবী, হলে দাসী।

    বিদীর্ণ হিয়া ফিরিয়া ফিরিয়া   চারি দিকে চেয়ে দেখি–
    প্রাচীরের কাছে এখনো যে আছে,   সেই আমগাছ একি!
    বসি তার তলে নয়নের জলে   শান্ত হইল ব্যথা,
    একে একে মনে উদিল স্মরণে   বালক-কালের কথা।
    সেই মনে পড়ে জ্যৈষ্ঠের ঝড়ে  রাত্রে নাহিকো ঘুম,
    অতি ভোরে উঠি তাড়াতাড়ি ছুটি   আম কুড়াবার ধুম।
    সেই সুমধুর স্তব্ধ দুপুর,   পাঠশালা-পলায়ন–
    ভাবিলাম হায় আর কি কোথায়   ফিরে পাব সে জীবন!
    সহসা বাতাস ফেলি গেল শ্বাস   শাখা দুলাইয়া গাছে,
    দুটি পাকা ফল লভিল ভূতল   আমার কোলের কাছে।
    ভাবিলাম মনে বুঝি এতখনে   আমারে চিনিল মাতা,
    স্নেহের সে দানে বহু সম্মানে   বারেক ঠেকানু মাথা।

    হেনকালে হায় যমদূত-প্রায়  কোথা হতে এল মালী,
    ঝুঁটি-বাঁধা উড়ে সপ্তম সুরে   পাড়িতে লাগিল গালি।
    কহিলাম তবে, “আমি তো নীরবে   দিয়েছি আমার সব–
    দুটি ফল তার করি অধিকার,   এত তারি কলরব!’
    চিনিল না মোরে, নিয়ে গেল ধরে  কাঁধে তুলি লাঠিগাছ–
    বাবু ছিপ হাতে পারিষদ-সাথে   ধরিতেছিলেন মাছ।
    শুনি বিবরণ ক্রোধে তিনি কন,   “মারিয়া করিব খুন!’
    বাবু যত বলে পারিষদ-দলে   বলে তার শতগুণ।
    আমি কহিলাম, “শুধু দুটি আম  ভিখ মাগি মহাশয়!’
    বাবু কহে হেসে, “বেটা সাধুবেশে   পাকা চোর অতিশয়।’
    আমি শুনে হাসি আঁখিজলে ভাসি,   এই ছিল মোর ঘটে–
    তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ,   আমি আজ চোর বটে!

    Translation:

    My Little Plot of Land

    (Fakrul Alam)

    Of my land only a little remained, the rest having been mortgaged away.

    The zamidar (landlord) said one day, “Know what Upen? This too should come my way”.

    I said, “O Lord, countless are the plots of land you already own,

    But consider–I only have land enough to bury me when I’m gone!’

    The zamindar brushed me aside saying, “Upen, I’m building a garden,

    Your half-acre will allow me to design for it a lovely fountain–

    You’ll have to sell it to me!”  ……. I replied, tears in my eyes,

    and hands on my heart, “Spare this poor man’s land, or else he dies!

    For seven generations we’ve tilled this plot and it’s everything to me,

    Selling it will be like selling my mother because of poverty!”

    The zamindar reddened, kept mum for a bit, and then gave a peculiar smile

    In a forbidding manner, he muttered under his breath, “we’ll see in a while!’

     

    In six weeks I was forced out of my ancestral land and into the road

    By a court decree. Falsely, it said I had defaulted on a loan and owed

    The zamindar the whole lot! Alas, in this world those who have most want all

    Even the king won’t stop until he has grabbed everything–big or small!

    I consoled myself: God has decided not to confine me to this small plot of land;

    Perhaps I am fated to roam far and wide and end up in some distant strand.

    And so I became a mendicant’s assistant and followed him everywhere

    Visiting shrines that were memorable and seeing sights that were fair.

    But no matter whether I climbed high peaks or reached a remote river bend

    The thing I could never forget night or day was my little plot of land!

    And so I traversed country fairs, fields, and roads for fifteen years or so

    Until homesickness made me feel to my country once more I must go.

     

    I thought as I went: motherland Bengal–I bow to you lovingly!

    Your exquisite riverbanks and gentle winds will surely revive me.

    I’ll thrill at skies kissing dust swirling up from wide open fields,

    I’ll seek in the sylvan shade of a tiny village an abode of perfect bliss.

    Bengal’s shaded ponds will be calm and comforting to see

    And surely I’ll delight at sweet village belles carrying water home daily.

    Such thoughts of my motherland made me sad and tears welled up in me.

    Two days later–at noon– I entered my village– oh so eagerly!

    Past the potter’s shop and left of the field where festivals are held I sped

    Leaving the fairground–site of all delight– and the temple ground,

    I hurried to my homestead–thirsty, eager and completely exhausted!

     

    Shame, shame, oh shame on you, my shameless little plot of land!

    How is it that you yielded so easily to the seducer’s blandishment?

    Don’t you remember how you once nurtured me with what little you had?

    How you provided me with fruits, flowers and produce from your bed?

    Who are you trying to seduce now in fancy and dazzling dresses?

    Why deck yourself in alluring colors and flower-studded tresses?

    It was for you I came back worn out by years of wandering

    But you, wanton, are only bent on being coy and enchanting!

    Riches enticed you and the landlord’s wealth made all the difference

    Nothing remained of what you once were — a maiden in essence!

    So bountiful and giving once, so caring, sweet and pleasant,

    Seduce him all you can– once a goddess, now you’re a mere servant!

     

    With a grieving heart I looked around and what then did I see?

    Still erect where it always stood was my favorite mango tree!

    I sat down and wept till tears doused the pain that was in me

    One by one, images of childhood resurfaced in my memory.

    How after summer storms I wouldn’t sleep at all,

    Knowing I had to gather by dawn the mangoes sure to fall

    I thought of still fun-filled afternoons when we played hooky

    And I felt: what a pity that such days I will never again see!

     

    Suddenly a gusting wind shook the branches of the tree

    and two ripe mangoes fell on the spot where I happened to be.

    Surely, I thought, my mother has finally seen her long lost son,

    I picked up the mangoes she lovingly gave me on this occasion.

     

    Suddenly, as if an angel of death, an Oriya gardener was in the scene

    Hair in knot, this man swore and threatened in a way that was obscene.

    I told him, “I gave up all years ago without protesting the court decree

    Why fuss if I pick up two mangoes from what was my property?”

    Unimpressed, the gardener seized me, directing his stick at my head.

    Dragging me to his landlord, he complained to him about what I said.

    The zamidar, egged on by his cronies, thundered, “You’re as good as dead!”

    But his abuse was nothing compared to what his cronies had to say.

    All I could say in defense was, “my lord, those mangoes fell my way.”

    The zamindar said, “This scoundrel acts innocent but is a big thief!”

    With tears in my eyes I laughed at being made the source of all mischief.

     

    I laughed at my fate and at all those years I spent in grief

    Indeed, he is the saint now and I am the thief!

    See less
  1. This answer was edited.

    বোঝাপড়া কবিতার সব প্রশ্ন উত্তর এই লিংকে  বোঝাপড়া (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) Bojhapora Poem lyrics

    বোঝাপড়া কবিতার সব প্রশ্ন উত্তর এই লিংকে 

    বোঝাপড়া (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) Bojhapora Poem lyrics

    বোঝাপড়া (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) bojhapora poem lyrics

    See less