Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Please briefly explain why you feel this question should be reported.
Please briefly explain why you feel this answer should be reported.
Please briefly explain why you feel this user should be reported.
রচনা : আমার প্রিয় খেলা ফুটবল | football paragraph in bengali
ফুটবল খেলা ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ও অন্যতম খেলা হচ্ছে ফুটবল। কারও মতে চীন আবার কারো মতে ইতালি থেকে ফুটবল খেলা আরম্ব হয় এবং পরবর্তী কালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । জনপ্রিয়তার কারণে ইহা একটি আন্তর্জাতিক খেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতি চার বছর পর পর আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযRead more
ফুটবল খেলা
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ও অন্যতম খেলা হচ্ছে ফুটবল। কারও মতে চীন আবার কারো মতে ইতালি থেকে ফুটবল খেলা আরম্ব হয় এবং পরবর্তী কালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । জনপ্রিয়তার কারণে ইহা একটি আন্তর্জাতিক খেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতি চার বছর পর পর আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় । ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই ফুটবল একটি জাতীয় খেলা । আমাদের দেশে সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা দেখা যায়।
মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়: ফুটবল খেলার মাঠ সাধারণত ১০০-১২০ গজ দীর্ঘ এবং ৫০-৫৬ গজ প্রস্থ হয়ে থাকে । মাঠের দুই প্রান্তে দু’টি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট এর উচ্চতা ৮ ফুট এবং একটি বার বা খুঁটির অপরটি থেকে ৮ গজ দূরে অবস্থিত। একটি আদর্শ ফুটবলের ওজন সাধারণত ১৪-১৬ আউন্স হয়ে থাকে। একটি ফুটবল খেলায় মোট ২২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে , যারা দুইটি দলে ১১ জন করে বিভক্ত হয়ে খেলে থাকে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান রেফারি ও তাকে সাহায্যের জন্য দু’ জন লাইন্সম্যান থাকে।
ফুটবল খেলার নিয়ম বা পদ্ধতি: পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী খেলার জন্য মাঠের মধ্যস্থলে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান করে। রেফারির বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু হয় এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের অবস্থানে চলে যায়। সাধারণত ১১ জন খেলোয়াড়ের পাঁচ জন সামনের ভাগে দাঁড়ায় যাদেরকে বলে ফরোয়ার্ড, তাদের পিছনে ৩ জন থাকে মিডফিল্ডার বা হাফ ব্যাক, তাদের পিছনে দু’ জন থাকে ডিফেন্স বা ফুল ব্যাক আর গোলবারের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক, যিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে বলকে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। একটি ফুটবল ম্যাচ মোট ৯০ মিনিটের হয়, মধ্যেখানে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকে।
খেলার নিয়ম কানুন: যে ভাবে প্রত্যেকটি খেলার একটি নিয়ম থাকে সে ভাবে ফুটবল খেলার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে । এসব নিয়মনীতি সবই ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তৈরী করে থাকে । যেমন প্রথমে বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখতে হবে। রেফারি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু করতে হবে। একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ বল হাত দিয়ে ধরতে বা মারতে পারবে না। এ নিয়ম না মানলে হ্যান্ডবল হয় এবং বিপক্ষ দলের দিকে বল ফ্রি কিক মারা হয়। অবৈধভাবে কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারলে রেফারি শাস্তি স্বরূপ উক্ত খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে শাস্তি দেন। লাল কার্ড পেলে ঐ খেলোয়াড় আর খেলতে পারেন না। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের সহজেই চিনতে প্রত্যেকটি খেলোয়াড় কে তাদের ইউনিফর্ম এ জার্সি নাম্বার দেয়া হয়।
ফুটবল ও ভারতবর্ষ : বিদেশি খেলা হলেও ফুটবল খেলা ভারতবর্ষের একটি জনপ্রিয় খেলা । বিশেষ করে বাংলায় সঙ্গে ফটবললের অনন্য সম্পর্ক । বিশ্বকাপ এলেই সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় ফুটবল উন্মাদনা। পতাকা টানিয়ে বা সমর্থিত দলের জার্সি গায়ে দিয়ে দলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে বাঙালিরা।ভারতবর্ষে ফুটবল আসে ইংরেজ দের হাত ধরে এবং ১৮৭২ সালে প্রথম “কলকাতা ফটবল ক্লাব” স্হাপিত হয়। বর্তমানে “অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন” ভারতে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভারত একাধিকবার অলিম্পিক এবং এশিয়ান কাপ সহ অনেক প্রতিজোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।হাল আমলে ভারতবর্ষে ফুটবল কে আরও জনপ্রিয় করতে ২০১৩ সালে একটি প্রিমিয়াম ঘরোয়া প্রতিজুগিতা “ইন্ডিয়ান সুপার লিগ” নামে শুরু করা হয়।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা): বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় FIFA (Federation of International Football Association). ২১ মে, ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্থাটি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এটির সদরদপ্তর। ফিফা এর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার। ফিফার বর্তমান সদস্য ২০৯টি। এ সংস্থা প্রতি ৪ বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। পুরুষদের ন্যায় নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপেরও প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থা। প্রতিবছর এ সংস্থা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচন ও দলগত র্যাংকিং করে থাকে।
ফুটবল বিশ্বকাপ: ফুটবল খেলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফার অধীনে প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২১ তম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে রাশিয়ায় । এ আসরে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স । তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট সম্মাননা দেওয়া হয়। ফুটবল বিশ্বকাপের ২২ তম আসর হবে কাতারে ২০২২ সালে।
ফুটবল খেলার উপকারিতা: ফুটবল খেলা শুধু খেলা নয়, এটির মাধ্যমে যেমন আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল খেলা আজ বিশ্বব্যাপী বিশাল লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবল বাণিজ্যের অন্যতম উদাহরণ। ফুটবল খেলার মাধ্যমে যেমন মানসিক অবসাদ দূর হয় তেমনি এর উত্তেজনা-উপভোগ মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ফুটবল খেলতে যথেষ্ট ছুটাছুটি ও পরিশ্রম করতে হয় বলে শরীর সর্বদাই ফিট থাকে। খেলার কঠোর আইন-কানুন খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
বিশ্বের উল্লেখিত ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ: ফুটবলের জগতে জীবন্ত কিংবদন্তী হলো ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজপুত্র নামে পরিচিত। এ ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, নেইমার, জিদান বর্তমান ফুটবলের অন্যতম তারকা। বার্সালোনা, রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ান মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, চেলসি, ম্যানচেষ্টার সিটি প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন কাপ, এশিয়া কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ লীগ, প্রভৃতির মাধ্যমে ফুটবল সারা পৃথিবীতে উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার: ফুটবল খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস। ফুটবল খেলায় থাকে হার-জিত, থাকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু। সেই আনন্দ বেদনার ঊর্ধ্বে থাকে মনোরম লড়াই আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন, স্বদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি আর বিজয়ের তীব্র বাসনা। ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এ জন্যই ফুটবল খেলা সকল খেলাকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।
See lessবাংলা রচনা : বর্ষাকাল | borshakal rochona in bengali
বর্ষাকাল ভূমিকা: বাংলার প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়ে ঋতুর পরে ঋতু আসে। কখনো শীতের হিম হিম পরশ আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থেকে চারদিক। কখনো চৈতালি-বৈশাখি রোদ, আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জনে মুখরিত হয় সারাবেলা। কখনো আবার কাশফুলের শুভ্রতার সাথে একাকার হয়ে মিশে থাকে শরতের সাদা মেঘ। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির নাচন নRead more
বর্ষাকাল
ভূমিকা: বাংলার প্রকৃতিতে রূপের পসরা সাজিয়ে ঋতুর পরে ঋতু আসে। কখনো শীতের হিম হিম পরশ আর কুয়াশার চাদরে ঢাকা থেকে চারদিক। কখনো চৈতালি-বৈশাখি রোদ, আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জনে মুখরিত হয় সারাবেলা। কখনো আবার কাশফুলের শুভ্রতার সাথে একাকার হয়ে মিশে থাকে শরতের সাদা মেঘ। আবার কখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টির নাচন নাচাতে নাচাতে আসে বর্ষা। বর্ষায় বাংলার প্রকৃতি পায় নতুন মাত্রা। জরাজীর্ণ গ্রীষ্মক্লান্ত এ দেশের প্রকৃতিকে বর্ষা তার আপন প্রেমপেয়ালার পবিত্র জলে স্নান করিয়ে সিক্ত করে তোলে। জলরঙে রাঙিয়ে দেয় ধরণী।
বর্ষাকাল পরিচিতি: বর্ষাকাল বাংলাদেশের ঋতুচক্রের দ্বিতীয় ঋতু। বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসের শেষে শুকনো ধরণীকে সিক্ত করে বাংলার বুকে বর্ষার শুভ আগমন ঘটে। তখন আর গ্রীষ্মের কাঠফাটা দাবদাহ থাকে না। বাংলা আষাঢ় ও শ্রাবণ দুই মাস নিয়ে বর্ষাকাল, যার পুরোটা সময় জুড়েই থাকে ঝর ঝর বৃষ্টিধারার কানজুড়ানো ধ্বনি, আর কদম ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য।
বর্ষার কারণ: ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোঁটা আমাদের কানে বর্ষার আগমন বার্তা জানান দিয়ে যায়। এ বৃষ্টির রয়েছে ভৌগোলিক কারণ। গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং উত্তর-পূর্বে বয়ে যায় প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প বুকে ধরে। হিমালয়ের গায়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তা বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
বাংলায় বর্ষার আগমন: বর্ষার আগমন বাংলাদেশের জন্য এক অনন্য প্রতীক্ষার সমাপন। গ্রীষ্মের রোদে যখন প্রকৃতি শুষ্কপ্রায়, মৃতপ্রায়; একফোঁটা বৃষ্টির জন্য যখন মানুষ ‘আল্লাহ মেঘ দে, পানি দে’ বলে গান গেয়ে ওঠে; খরতাপে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত কুকুরটির যখন তৃষ্ণায় জিভ ঝুলে যায়, এক পশলা বৃষ্টি তখন নতুন মাত্রার ছন্দ নিয়ে অবসান ঘটায় সব প্রতীক্ষার। পরিপূর্ণতা দেয় সকল প্রত্যাশার আর শীতল করে দেয় সব তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের উত্তাপকে। অদ্ভূত সুন্দর শিহরণে শিহরিত হয় প্রকৃতি। টিনের চালের ঝুম বৃষ্টির নৃত্যে মুখরিত হয় গ্রামবাংলা। সাথে নেচে ওঠে বর্ষা-প্রেমিক মানুষগুলোর মন।
বর্ষার প্রকৃতি: বর্ষার বৃষ্টিভেজা বাতাস শিহরিয়ে দিয়ে যায় প্রকৃতিকে। গ্রীষ্মের তাপে জরাজীর্ণ উদ্ভিদ বর্ষার নবীন মেঘের আহ্বানে নাচতে থাকে হেলেদুলে। বহুদিনের প্রতীক্ষিত বারিধারায় রোমাঞ্চিত হয় নগর-পল্লীর বৃক্ষরাজি।
বর্ষায় পল্লীর রূপ-বৈচিত্র্য: বর্ষায় শহরে ও গ্রামে আলাদা আলাদা চিত্র ফুটে ওঠে। পল্লীর প্রকৃতি বর্ষার অপার সৌন্দর্যে শোভামন্ডিত। পুকুর, খাল, বিল বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর থাকে। বৃক্ষরাজির ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে কী যে অনাবিল শোভার সৃষ্টি করে তা সত্যিই হৃদয় পাগল করা। মাতাল হাওয়া যখন বাঁশবনে তার পরশ বুলিয়ে যায়, তখন বিরহিনীর আকুল হৃদয় প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার প্রত্যাশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের কবিতা ‘পল্লীবর্ষা’য় এই রূপে ফুটে উঠেছে নিবিড় যত্নের সাথে। তিনি বলেছেন- ‘বেনুবনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ, মন যেন চায় কারে।’
বর্ষায় পল্লীর জনজীবন: বর্ষাকাল গ্রামীণ মানুষদেরকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে দেয়। পাড়ার পুরুষ মানুষরা চায়ের দোকানে বসে পুরনো দিনের গল্প আড্ডায় মেতে ওঠে। রমনীরা ঘরে বসে নকসী কাঁথায় ফুল তোলে। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন।
শহর জীবনে বর্ষা: শহরের গৎবাঁধা যান্ত্রিক জীবনে বর্ষা কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলে। বর্ষার বৃষ্টি শহরের আকাশে বাতাসে উড়ে চলা ধূলোবালিকে অনেকটাই বশ করে ফেলে। এই একটা ঋতুতেই কেবল শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো একটু নির্মল হাওয়ায় নিঃশ্বাস ফেলতে পারে। তবে বর্ষায় শহরের রাস্তাঘাট অল্প বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় যা মানুষের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
বর্ষায় বাংলার নদ-নদী: বর্ষাকালে বাংলার নদ-নদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে এ সময় নদী তার আসল সৌন্দর্য খুঁজে পায়। নদীর পাড়ের সবুজ ঘাস আরো সবুজ হয়ে ওঠে। যতদূর চোখ যায় শুধু পানি, তারপর লম্বা একটি গ্রামের রেখা, তার উপরে শুধু মেঘ আর মেঘ।
বর্ষার ফুলফল: সৌন্দর্যের রেনু খুলে বর্ষায় ফোঁটে কদম ফুল, যা বর্ষার রূপকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। পল্লীকবি জসীম উদ্দীন-এর ভাষায়- ‘কাহার ঝিয়ারি কদম্ব-শাখে নিঝুম নিরালায়, ছোট ছোট রেণু খুলিয়া দিয়াছে, অস্ফুট কলিকায়।’ এ সময় বিলে ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য বর্ষাকে দেয় নতুন মাত্রা। বর্ষার ফলের মধ্যে অন্যতম ফল আনারস, আমড়া, পেয়ারা প্রভৃতি।
কাব্যে ছন্দে বর্ষার প্রকৃতি: বর্ষার প্রকৃতি হৃদয় কাড়তে জানে। এর রূপের আকর্ষণ উতলা করে মানবমন। প্রাণোচ্ছল কিশোরীকে টেনে আনে ঘরের বাইরে। তখন তার বৃষ্টিভেজা নূপুরের নিক্কন আরো মধুর সুরে বাজতে থাকে। তা শুনে কবি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না, বন্ধ করে রাখতে পারেন না আর কবিতার খাতা। শিল্পীর সুর আর বাঁধ মানে না। ঝুম বৃষ্টির সাথে তার কণ্ঠ মিলেমিশে একাকার হয়ে দূর দিগন্তে মিলিয়ে যায়। বাংলার সাহিত্য, সংগীত এভাবেই সিক্ত হয়ে আছে বর্ষার বৃষ্টিতে।
বর্ষার আশির্বাদ: বর্ষাকাল বাংলাদেশের জন্য বয়ে নিয়ে আসে অপার সম্ভাবনার বার্তা। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় বাংলার মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্য-প্রাচুর্যের বার্তা। বর্ষার পানিতে সতেজ হয়ে ওঠে ফসলের মাঠ আর হাসি ফোটে কৃষকের মুখে।
বাংলা সংস্কৃতিতে বর্ষার প্রভাব: বাংলার সংস্কৃতিতে একাকার হয়ে মিশে আছে বর্ষা ঋতুর ভেজা সৌন্দর্য। বর্ষাকে নিয়ে বাংলায় যতো গান রচিত হয়েছে, অন্য কোনো ঋতু নিয়ে তা হয়নি। রবীন্দ্র সাহিত্যের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে বর্ষা ঋতুর বন্দনা, বর্ষার সৌন্দর্য বন্দনা। রবীন্দ্রনাথের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ কিংবা ‘আজি ঝরো ঝরো মুখর ভাদর দিনে’ প্রভৃতি গান আজও বৃষ্টির দিনে আমাদের ভাবনার জগতে টেনে নেয়। পল্লী কবি জসীম উদ্দীন পল্লীর আরশিতে বর্ষাকে যেভাবে প্রতিফলিত করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়।
বর্ষার অপকারী দিক: বর্ষাকাল সব সময়ই বাঙালির মুখে হাসি ফোটায় তা নয়। খরস্রোতা নদী মাঝে মাঝে লাগামছাড়া হয়ে বান ডাকে, ভাসিয়ে নেয় উপকূলের অনেক মানুষের বসতবাড়ি। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন-জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ঘুর্ণিঝড় ইত্যাদি বর্ষাকালেই বেশি আঘাত হানে। অতিবৃষ্টির ফলে অনেক সময় ফসল নষ্ট হতে পারে, আবার কখনো তা মানব জীবনে স্থবিরতা এনে দেয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর অনেক মহামারী ছড়িয়ে জনজীবনকে বিষিয়ে তোলে।
উপসংহার: বর্ষার রূপ, রং, ভেজা গন্ধ-সব কিছুই আপন মহিমা আর সৌন্দর্যে ভাস্বর। বাংলার বর্ষাকাল কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ইতিবাচক। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি কৃষি অনেকাংশেই বর্ষার কাছে ঋণী। বাংলাদেশের অন্য কোনো ঋতুকেই আমরা এতটা গভীরভাবে দেহ, মন ও অনুভূতির সাথে মিলিয়ে নিতে পারি না। তাই বর্ষা অনেকের কাছেই প্রিয় ঋতু হিসেবে বিবেচিত।
See lessরচনা : স্বচ্ছ ভারত অভিযান | swachh bharat abhiyan essay in bengali pdf download
স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভূমিকা: স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভারত সরকারের প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প ।এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ৪০৪১টি শহরের সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্করণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর নূতন দিল্লির রাজঘাট সমাধি পরিসরে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, যেখাRead more
স্বচ্ছ ভারত অভিযান
ভূমিকা: স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভারত সরকারের প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প ।এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ৪০৪১টি শহরের সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্করণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর নূতন দিল্লির রাজঘাট সমাধি পরিসরে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা এই প্রকল্পের শুভাৰম্ভ হয় । সেই দিন এই প্রকল্পকে রূপায়িত করতে দেশের প্রায় ত্রিশ লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন।
আবশ্যকতা : ইহা নির্দ্বিধায় শিকার করা যায় যে স্বচ্ছতার দিক দিয়ে ভারত অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি থেকে অনেক পিছিয়ে । ভারত বর্ষ একটি পুরনো সভ্য সংস্কৃতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতবর্ষের নাগরিক স্বচ্ছতার দিক দিয়ে অনেকটাই উদ্বেগহীন। আর এই উদ্যোগ হীনতা ই নিত্যদিন বয়ে আনছে নানান রোগ ও ব্যাদি। তাই বৃহত্তর ভারতীয় নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আরম্ভ হয় এই গণআন্দোলন। চারিদিক স্বচ্ছ রাখা এবং স্বচ্ছ করা এই গণআন্দোলনের একমাত্র লক্ষ।
স্বচ্ছতার উপরে উল্লেখযোগ্য সাবেক প্রয়াস : ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ১৯৫৪ সালে স্বচ্ছতার প্রোগ্রাম চালানো হয়। পরে ১৯৮৬ সেন্ট্রাল সেন্ট্রাল রুবেল স্যানিটেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালিত হয়। এবং সর্বশেষ ১৯১২ সালে কংগ্রেস সরকার নির্মল ভারত অভিযান নামে একটি প্রোগ্রাম চালায়। যদিও নির্মল ভারতের আওতায় কয়েকটি বিশেষ এলাকা এবং সীমিত বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, এবং এর ফলাফল খুব একটা সুদূরপ্রসারি হয়ে উঠতে পারেনি। তাই এই নির্মল ভারত অভিযান কে ২০১৪ সালে আবার স্বচ্ছ ভারত অভিযান নামে আরম্ভ করা হয়।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের তাৎপর্য: মহাত্মা গান্ধী যে ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা শুধুমাত্র ক্ষমতার হস্তান্তর ছিলনা। তিনি চেয়েছিলেন বিদেশি শক্তির উৎখাতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ভেদাভেদ এবং নোংরামির উৎখাত। তাই মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৪ সালে এই গণ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পরিচ্ছন্ন অস্বাস্থ্যকর ভারতের যে স্বপ্ন গান্ধী দেখেছিলেন তা পূরণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যকলাপ: স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ব্যক্তিগত শৌচাগার, গোষ্ঠী শৌচাগার নির্মাণ ও কঠিন বর্জ্য পরিচালন ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে আবার মানুষের ব্যবহারিক আচরণ বদলানোর লক্ষ্যে মুখোমুখী কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষকে বোঝানোর কাজ চলছে। এছাড়া, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রকল্প রূপায়ণ ও পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়ে । শৌচাগার নির্মাণের জন্য উৎসাহ প্রদান বাবদ অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কঠিন ও তরল বর্জ্য পরিচালনের জন্যও অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। সারা দেশে নাগরিকরা যেসব পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন, তা তুলে ধরতে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে MycleanIndiaনামে একটি পোর্টালও চালু করা হয়েছে।
প্রভাব ও প্রসার: এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের অনুরোধ স্বচ্ছতা অভিযান এক জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে এক ধরনের দায়িত্ববোধের সঞ্চার হয়েছে।সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ পরিচ্ছন্নতার গণআন্দোলনে এগিয়ে এসে যুক্ত হয়েছেন। এই মহান উদ্যোগে সরকারি কর্মকর্তা থেকে জওয়ান, বলিউডের অভিনেতা থেকে ক্রীড়াবিদ, শিল্পপতি থেকে ধর্মীয় নেতা সকলেই যুক্ত হয়েছেন। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সরকারি বিভাগ, অসরকারি সংগঠন এবং স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি কেন্দ্রের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন। সারা দেশ জুড়ে ঘন ঘন পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রচার কর্মসূচিতে নাটক ও সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রচার সংগঠিত হচ্ছে।
See lessবলিউডের খ্যাতনামা চিত্রতারকা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের অভিনেতারা এগিয়ে এসে এই পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, কৈলাশ খের, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে এসেছেন । শচীন তেন্ডুলকর, সানিয়া মির্জা, সাইনা নেহওয়াল এবং মেরীকমের মতো বহু বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অবদান বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।
স্বচ্ছ ভারত অভিযান | bengali essay on swachh bharat abhiyan
স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভূমিকা: স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভারত সরকারের প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প ।এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ৪০৪১টি শহরের সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্করণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর নূতন দিল্লির রাজঘাট সমাধি পরিসরে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, যেখাRead more
স্বচ্ছ ভারত অভিযান
ভূমিকা: স্বচ্ছ ভারত অভিযান ভারত সরকারের প্রচলিত একটি জাতীয় প্রকল্প ।এই প্রকল্পের অধীনে দেশের ৪০৪১টি শহরের সড়ক এবং পরিকাঠামোকে পরিষ্করণের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২রা অক্টোবর নূতন দিল্লির রাজঘাট সমাধি পরিসরে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়, যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দ্বারা এই প্রকল্পের শুভাৰম্ভ হয় । সেই দিন এই প্রকল্পকে রূপায়িত করতে দেশের প্রায় ত্রিশ লক্ষ সরকারি কর্মচারী এবং ছাত্ররা অংশগ্রহণ করেন।
আবশ্যকতা : ইহা নির্দ্বিধায় শিকার করা যায় যে স্বচ্ছতার দিক দিয়ে ভারত অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলি থেকে অনেক পিছিয়ে । ভারত বর্ষ একটি পুরনো সভ্য সংস্কৃতির দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতবর্ষের নাগরিক স্বচ্ছতার দিক দিয়ে অনেকটাই উদ্বেগহীন। আর এই উদ্যোগ হীনতা ই নিত্যদিন বয়ে আনছে নানান রোগ ও ব্যাদি। তাই বৃহত্তর ভারতীয় নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আরম্ভ হয় এই গণআন্দোলন। চারিদিক স্বচ্ছ রাখা এবং স্বচ্ছ করা এই গণআন্দোলনের একমাত্র লক্ষ।
স্বচ্ছতার উপরে উল্লেখযোগ্য সাবেক প্রয়াস : ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম ১৯৫৪ সালে স্বচ্ছতার প্রোগ্রাম চালানো হয়। পরে ১৯৮৬ সেন্ট্রাল সেন্ট্রাল রুবেল স্যানিটেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রোগ্রাম চালিত হয়। এবং সর্বশেষ ১৯১২ সালে কংগ্রেস সরকার নির্মল ভারত অভিযান নামে একটি প্রোগ্রাম চালায়। যদিও নির্মল ভারতের আওতায় কয়েকটি বিশেষ এলাকা এবং সীমিত বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, এবং এর ফলাফল খুব একটা সুদূরপ্রসারি হয়ে উঠতে পারেনি। তাই এই নির্মল ভারত অভিযান কে ২০১৪ সালে আবার স্বচ্ছ ভারত অভিযান নামে আরম্ভ করা হয়।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের তাৎপর্য: মহাত্মা গান্ধী যে ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিলেন তা শুধুমাত্র ক্ষমতার হস্তান্তর ছিলনা। তিনি চেয়েছিলেন বিদেশি শক্তির উৎখাতের সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত ভেদাভেদ এবং নোংরামির উৎখাত। তাই মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে ২০১৪ সালে এই গণ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে পরিচ্ছন্ন অস্বাস্থ্যকর ভারতের যে স্বপ্ন গান্ধী দেখেছিলেন তা পূরণ করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের বিভিন্ন প্রকল্প ও কার্যকলাপ: স্বচ্ছ ভারত অভিযানে ব্যক্তিগত শৌচাগার, গোষ্ঠী শৌচাগার নির্মাণ ও কঠিন বর্জ্য পরিচালন ব্যবস্থার ওপর জোর দেওয়া হয়। গ্রামাঞ্চলে আবার মানুষের ব্যবহারিক আচরণ বদলানোর লক্ষ্যে মুখোমুখী কথাবার্তার মাধ্যমে মানুষকে বোঝানোর কাজ চলছে। এছাড়া, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তর পর্যন্ত প্রকল্প রূপায়ণ ও পরিষেবা প্রদান ব্যবস্থাকে জোরদার করা হয়ে । শৌচাগার নির্মাণের জন্য উৎসাহ প্রদান বাবদ অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা করা হয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে কঠিন ও তরল বর্জ্য পরিচালনের জন্যও অর্থ প্রদান করা হচ্ছে। সারা দেশে নাগরিকরা যেসব পরিচ্ছন্নতার কাজ করেছেন, তা তুলে ধরতে, স্বচ্ছ ভারত অভিযানের অঙ্গ হিসেবে MycleanIndiaনামে একটি পোর্টালও চালু করা হয়েছে।
প্রভাব ও প্রসার: এই উদ্যোগে অংশগ্রহণের অনুরোধ স্বচ্ছতা অভিযান এক জাতীয় আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। স্বচ্ছ ভারত আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীর মধ্যে এক ধরনের দায়িত্ববোধের সঞ্চার হয়েছে।সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ পরিচ্ছন্নতার গণআন্দোলনে এগিয়ে এসে যুক্ত হয়েছেন। এই মহান উদ্যোগে সরকারি কর্মকর্তা থেকে জওয়ান, বলিউডের অভিনেতা থেকে ক্রীড়াবিদ, শিল্পপতি থেকে ধর্মীয় নেতা সকলেই যুক্ত হয়েছেন। সারা দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ দিনের পর দিন বিভিন্ন সরকারি বিভাগ, অসরকারি সংগঠন এবং স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি কেন্দ্রের উদ্যোগে পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগে যুক্ত হয়েছেন। সারা দেশ জুড়ে ঘন ঘন পরিচ্ছন্নতা বিষয়ে প্রচার কর্মসূচিতে নাটক ও সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্যাপক ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে প্রচার সংগঠিত হচ্ছে।
বলিউডের খ্যাতনামা চিত্রতারকা থেকে শুরু করে টেলিভিশনের অভিনেতারা এগিয়ে এসে এই পরিচ্ছন্নতার উদ্যোগে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন। অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, কৈলাশ খের, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা এগিয়ে এসেছেন । শচীন তেন্ডুলকর, সানিয়া মির্জা, সাইনা নেহওয়াল এবং মেরীকমের মতো বহু বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদদের স্বচ্ছ ভারত অভিযানে অবদান বিশেষভাবে প্রশংসনীয়।
See lessরচনা: মাতৃভাষার গুরুত্ব | importance of mother tongue in bengali
মাতৃভাষার গুরুত্ব বা শিক্ষার মাধ্যমরূপে মাতৃভাষা ভূমিকা : মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রথম বােধের উন্মেষ। মাতৃভাষার মধ্যদিয়ে শিশুর চেতনার বিকাশ ঘটে। শিশুর কাছে মাতার যেমন গুরুত্ব, শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষারও তেমনই গুরুত্ব। মাতৃভাষা ছাড়া শিক্ষা লাভ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করেই তার জীবনRead more
মাতৃভাষার গুরুত্ব বা শিক্ষার মাধ্যমরূপে মাতৃভাষা
ভূমিকা : মাতৃভাষার মাধ্যমেই প্রথম বােধের উন্মেষ। মাতৃভাষার মধ্যদিয়ে শিশুর চেতনার বিকাশ ঘটে। শিশুর কাছে মাতার যেমন গুরুত্ব, শিক্ষার ক্ষেত্রে মাতৃভাষারও তেমনই গুরুত্ব। মাতৃভাষা ছাড়া শিক্ষা লাভ অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করেই তার জীবন নানাভাবে বিকাশ লাভ করে।
সার্বিক বিকাশে মাতৃভাষা : মাতৃভূমির মতাে মাতৃভাষাও মানুষের নিকট একান্ত প্রিয়। মাতৃভাষাকে আশ্রয় করেই মানুষের সার্বিক বিকাশ সম্ভব। মাতৃভাষাতেই মানুষের পরম তৃপ্তি। কারণ, এই ভাষায় কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করে মানুষ যত আনন্দ পায় অন্যভাষায় কথা বলে তা পায় না। মাতৃভাষা শুধু প্রাত্যহিক জীবনের অবলম্বন নয় – এর মাধ্যমে সাহিত্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান সাধনার বিকাশ ঘটে।
বিদেশি ভাষার অসুবিধা : শিক্ষার মাধ্যমরূপে বিদেশি ভাষাকে অবলম্বন করার পক্ষে কোন যুক্তি নেই। তার কতকগুলি কারণ আছে। প্রথমতঃ বিদেশি ভাষাকে আয়ত্ত করতে যে কোন মানুষের অনেক বেশি সময় লাগে। দ্বিতীয়তঃ বিদেশি ভাষার মাধ্যমে শিক্ষা যতই করায়ত্ত হােক না কেন তার মাধ্যমে মাতৃভাষার মতাে মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায় না।
শিক্ষার লক্ষ্য : শিক্ষা ও জীবনের সামঞ্জস্য বিধানের জন্য মনুষ্যত্বের বিকাশ সাধনের জন্য মাধ্যম হওয়া উচিত মাতৃভাষা। একমাত্র মাতৃভাষাই পারে প্রাণের ভাবের সম্মিলন ঘটাতে। শুধ কাজ নয়, ভাব প্রকাশই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।মাতৃভাষাই মানুষের মুক্তির যথার্থ উপায়। মাতভাষায় শিক্ষাগ্রহণে আপামর জনসাধারণের পক্ষে সহজ। গভীর আনন্দে মানষ শিক্ষা গ্রহণ করে। শিক্ষা তার পক্ষে ভার হয়ে দাড়ায় না। মাতৃভাষা শিক্ষা নেওয়ার পরে মানুষ নিজের ইচ্ছেমতাে যে কোন ভাষায় শিক্ষা নিতে পারে।
বাংলা ভাষায় জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার সূচনা : জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র হিসাবে বাংলা ভাষার ক্ষেত্রটি আজও দুর্বল। ঊনবিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে হডরােপায় মিশনারিদের চেষ্টায় এদেশে সর্বপ্রথম বাংলাভাষার মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার সত্রপাত ঘটে। রাজা রামমােহন রায় সর্বপ্রথম এই ব্যাপারে এগিয়ে এসেছিলেন। পরবর্তীকালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, অক্ষয়কুমার দত্ত, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ভূদেব মুখােপাধ্যায়, কৃষ্ণমােহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীদের প্রচেষ্টায় বিষয়টি আরও গুরুত্ব লাভ করে।
পরাধীন ভারতে রাষ্ট্রভাষা : পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজিই ছিল রাষ্ট্রভাষা। তখন শিক্ষার মাধ্যমরূপে একমাত্র ইংরেজি ভাষাই ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল। ইংরেজি সভ্যতা ও সাহিত্যের অনেক গুণগত উৎকর্ষ আছে সেটি আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে। কিন্তু তবুও মাতৃভাষার স্থান সকলের চেয়ে আলাদা। ইংরেজি শিক্ষার মােহে সেই সময় শিক্ষিত যুবকবৃন্দ একস্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে যখন সেই মােহ কাটল, তখন তাদের মধ্যে অনেকেই সত্য পথের সন্ধান পেয়েছিলেন। মাইকেল মধুসুদন দত্ত ইংরেজি ভাষায় মহাকবি হওয়ার স্বপ্ন ত্যাগ করে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিলেন। বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও ইংরেজি ছেড়ে মাতৃভাষার মাধ্যমে সাহিত্যরচনা করতে আরম্ভ করেন।
বাংলা ভাষার ধারণ ক্ষমতা : ভারতবর্ষের স্বাধীনতা লাভের পর অনেক বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার ব্যাপক প্রচলন দেখা যায়। অনেকে হয়তাে যুক্তি দেখাবেন যে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার পথই একমাত্র পথ কারণ কিছু বিষয় | যেমন অর্থনীতি, ভূতত্ত্ববিদ্যা, বিজ্ঞান বিষয় সমূহকে মাতৃভাষার মাধ্যমে যথার্থ শিক্ষাদান সম্ভব হয় না। একথা হয়তাে আংশিক সত্য। কিন্তু তবুও অনুপযুক্ত বলে চিরকালই তা অনুপযুক্তই থাকবে এমন কোন কথা নেই।
উপসংহার : মাতৃভাষা যে শিক্ষার সর্বস্তরে মাধ্যম হিসাবে কার্যত গৃহিত হতে পারছে না এর মূলে পণ্ডিত অধ্যাপকদের মানসিক জাড্য এবং ইংরেজি ভাষার প্রতি মােহ। বাংলায় যে সর্বোচ্চ স্তরের জ্ঞান-বিজ্ঞানের গ্রন্থাদি রচিত হয়নি তার দায় পণ্ডিত সমাজ অস্বীকার করতে পারবে না। জাপান-রাশিয়া-জার্মানি সূচনা থেকেই মাতৃভাষাকে সর্বোচ্চ স্তরের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়ােগ করেছেন। বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা বাংলা সে বিষয়ে অক্ষম একথা স্বীকার করা যায় না। শুধু প্রতিষ্ঠানিক বিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রে বাংলা তথা অন্যান্য মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা করে রাখা লজ্জাকর। শিক্ষাকে সার্বজনীন ও উচ্চমানের করতে হলে মাতৃভাষার প্রতি এই মনােভাব অবশ্য বর্জন করতে হবে।
See lessরচনা: সর্বশিক্ষা অভিযান | sarva shiksha abhiyan in bengali language
সর্বশিক্ষা অভিযান ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে তােমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘাের ব্যবধান। কিন্তু সেই বাণী হেলায় আমাদের রাষ্ট্রনেতারা উপেক্ষা করেছিলেন। তারা হয়তাে ভেবেছিলেন এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। কিন্তু এখন তারা বুঝেছেন, দেরিতে হলেও অন্য সব দেশ জাগছে জ্ঞRead more
সর্বশিক্ষা অভিযান
ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে
তােমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘাের ব্যবধান। কিন্তু সেই বাণী হেলায় আমাদের রাষ্ট্রনেতারা উপেক্ষা করেছিলেন। তারা হয়তাে ভেবেছিলেন এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। কিন্তু এখন তারা বুঝেছেন, দেরিতে হলেও অন্য সব দেশ জাগছে জ্ঞানের গৌরবে, ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়। তাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভেঙ্গেছে। যৌথ উদ্যোগে আমাদের রাজ্যে শুরু হয়েছে সর্বশিক্ষা অভিযান।
বাস্তবতা : ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম ‘ভিশন ২০১০ পরিকল্পনা ঘােষণা করেন। তাতে প্রকাশিত রিপাের্টে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৬৯.২২ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশ ৭৭.১৩ শতাংশ এবং কেরলে ৯০.২২ শতাংশ। আসামে ৬৮.৫৮ শতাংশ। এই বাস্তব অবস্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে সর্ব শিক্ষা অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম।
সর্বশিক্ষা অভিযান কী ? সকলের জন্য শিক্ষা, তাই হলাে সর্বশিক্ষা। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে এই শিক্ষার সমাধান করার নাম সর্বশিক্ষা অভিযান। স্বাস্থ্যের জন্য যেমন পালস পােলিওর অভিযান – পােলিও মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য, তেমনি সকল শিশুর জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান। আসলে সর্বশিক্ষা অভিযান সকলের শিক্ষার জন্য সবশ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে করে পথ চলার একটা পদ্ধতি মাত্র। যারা সমাজে নিজেদের শিক্ষিত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে, তাদের যে অশিক্ষিত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে এই সর্বশিক্ষা অভিযান।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ : এই সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্যতম কারণ শুধু সব শিশুকেই শিক্ষা দান নয়, মাঝপথে শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া শিশুদেরও শিক্ষার মূল স্রোতে অঙ্গীভূত করা। কারণ, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনও নিজেদের সম্পূর্ণরূপে জানে না, নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কারণগুলি সম্পর্কেও আদৌ সচেতন নয়। সেজন্য পারস্পরিক লেনদেনের প্রয়ােজনে চাই যাতায়াতের পথ। সেটা যদি রাজপথ না হয় তাে অন্তত গলি রাস্তা হওয়া চাই। সর্বশিক্ষা অভিযান সে পল্লি গ্রামের মেটে পথ। দ্বিতীয়তঃ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও বিশ্বাস আছে যে শিক্ষার জন্য ব্যয় করা বিলাসিতা মাত্র। তাই শিক্ষা এখনাে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েনি। অথচ ভারতীয় সংবিধানের ৪৫নং ধারায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়স্ক শিশুরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা পাবে। তবুও আজও পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়নি। তৃতীয়তঃ জন্মসূত্রে পেশাগত কাজে যারা নিয়ােজিত তারা নিজেদের মতাে তাদের সন্তানদের নিজের মৌলিক কাজে নিয়ােজিত করতে গিয়ে মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দেন, তাদের জন্য এই কর্মসূচির গুরুত্ব রয়েছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের সমস্যা : সর্বশিক্ষা অভিযানের পথ কঠিন। গরিব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিশু শ্রমিক হিসাবে চায়ের দোকানে, হােটেলে, মিষ্টির দোকানে কাজ করে। তাদের পিতা-মাতাদের কাছে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়ানাে সময়ের অপব্যয় মাত্র। এদের মধ্যে যারা স্কুলে যায়, তারাও পরে স্কুলছুট হয়ে যায়। এজন্য সর্বশিক্ষা প্রকল্প মার খাচ্ছে। ফলে সব শিশুকে স্কুলে পাঠানাের লক্ষ্যমাত্রা আজও ষােলাে আনা পূরণ হয়নি।
গৃহীত কর্মসূচি : প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে গরিব পরিবারের শিশুদের অনাহা কাটানাের জন্য চালু হয়েছে Midday Meal অর্থাৎ মধ্যাহ্ন ভােজন। বর্তমানে
হালেবা সংস্থা সৰ্বশিক্ষার প্রচারে ও পসারে এগিয়ে এসেছে। জেলায় জেলায় ৪টি গঠন করে পরিকাঠামাে নির্মাণ করে শিক্ষকদেরও এই অভিযানে সামিল রা হয়েছে।
উপসংহার : UNESCO এর মাধ্যমে “সকলের জন্য শিক্ষা” সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ভারতে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার আগেই ৭৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে যায় ।জনসাধারণকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে শিক্ষিত মানুষদের গা-ছাড়া মনােভাব কম দায়ী নয় । এব্যাপারে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত কারণ শিক্ষা না পেলে মানুষের কার্যকরী শক্তি জেগে উঠতে পারে না। মানুষ সমাজের সেবায় লাগার উপযুক্ত হয়ে উঠে না।
See lessবাংলা রচনা: গ্রন্থাগার | granthagar bengali essay
গ্রন্থাগার ভূমিকা: গ্রন্থাগার সভ্য মানুষের জীবনযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান কালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের বাড়িতেই জ্ঞান আনন্দলাভের জন্য গৃহ লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যে সকল সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত শিক্ষাবঞ্চিত দেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকRead more
গ্রন্থাগার
ভূমিকা: গ্রন্থাগার সভ্য মানুষের জীবনযাত্রায় এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বর্তমান কালে অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের বাড়িতেই জ্ঞান আনন্দলাভের জন্য গৃহ লাইব্রেরি গড়ে উঠেছে। বর্তমানে যে সকল সরকারি গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে তাদের প্রয়োজনীয়তা আমাদের মত শিক্ষাবঞ্চিত দেশের পক্ষে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি বা সাধারণ গ্রন্থাগার সকল মানুষের জ্ঞানের পিপাসা মেটায় আনন্দ দান করে। দেশের অজ্ঞতার অন্ধকার দূরীকরণে গ্রন্থাগারের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
গ্রন্থাগার জ্ঞানের মিলনক্ষেত্র: গ্রন্থাগার বা লাইব্রেরী জ্ঞান ধারার মহামিলন ক্ষেত্র। এখানে অতীত,বর্তমান ও ভবিষ্যৎ মিলিত হয়ে আছে নানা দেশের পুস্তকের মাধ্যমে এটি সকল জ্ঞানের মিলন তীর্থ। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সাহিত্যের চিন্তাধারা আমাদেরশান্তি দেয়, আনন্দ দেয়, আর দেয় উদারতার শিক্ষা।
গ্রন্থাগারের উদ্ভব : জ্ঞান-পিপাসু মানুষের কাছে গ্রন্থাগার আধুনিক সভ্যতার অবদান। প্রাচীন কালের মানুষও আধুনিক মানুষের মতাে জ্ঞান লাভ ও বিদ্যা শিক্ষার প্রয়ােজনে গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠায় মনােযােগী হয়েছিল। তখনকার দিনে গ্রন্থ বলতে অবশ্য বর্তমানকালের সহজে বহন করার মতাে কাগজের গ্রন্থ ছিল না। ছিল খােদাই করা শিলায় লিপি। তারপর তালপাতায় ও ভুজপত্রে লিখিত গ্রন্থ বের হয়। মধ্যযুগে তুলট কাগজের আবিষ্কার হওয়ায় এ কাগজে লেখা আরম্ভ হয়।
প্রাচীন কালের গ্রন্থাগার : চীনদেশে প্রথম কাগজ আবিষ্কৃত হয় এবং সেখানে অনেক বড় গ্রন্থাগার সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। প্রাচীন ভারতে তক্ষশিলা, নালন্দা প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় বড় গ্রন্থাগার ছিল। এসব গ্রন্থাগার শত শত ছাত্র ও বিদেশি পরিব্রাজকদের জ্ঞান-তৃষ্ণা মিটাত।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ গ্রন্থাগার : জ্ঞানের চর্চার প্রয়ােজনের সঙ্গে সঙ্গে এবং মুদ্রণযন্ত্রের প্রবর্তনের ফলে পৃথিবীর সকল দেশেই বড় বড় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহৎ গ্রন্থাগার ছিল চারটি – প্যারিস নগরীর বিবলিওথেক ন্যাশন্যাল, লণ্ডনের বৃটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি, আমেরিকার ওয়াশিংটন নগরের লাইব্রেরি অব কংগ্রেস এবং সােভিয়েত রাশিয়ার লেলিন লাইব্রেরি। এগুলির দ্বারা ছাত্র-ছাত্রীরা খুবই উপকৃত হতেন।
গ্রন্থাগারের শ্রেণি : গ্রন্থাগার দুই প্রকার – ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার ও সাধারণ গ্রন্থাগার। ব্যক্তি বিশেষের গ্রন্থাগারে পুস্তকের সংখ্যা সাধারণত কিছু কম। এ সব গ্রন্থাগার গড়ে উঠে পণ্ডিত, শিক্ষক ও গবেষকদের নিজস্ব প্রয়ােজনে। এর দ্বারা বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিরাই উপকৃত হন। অপরদিকে, সাধারণ গ্রন্থাগারের লক্ষ্য থাকে সকল শ্রেণির পাঠকের চাহিদা পূরণ। সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের চেষ্টায় প্রতিষ্টিত হয় সাধারণ গ্রন্থাগার। এ গ্রন্থাগারে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলের বই পড়ার সুযােগসুবিধা থাকে। শুধু বর্তমান যুগেই নয় প্রাচীন যুগেও প্রচলন ছিল সাধারণ গ্রন্থাগারের ভারতের বৌদ্ধ বিহারগুলির বিশাল গ্রন্থাগার ধ্যান মগ্ন ঋষির নীরবতায় করে চলত সকল মানুষের হিতসাধনের তপস্যা।
বর্তমানের গ্রন্থাগার : আমাদের দেশে কয়েকটি গ্রন্থাগার আছে – কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগার, এশিয়াটিক সােসাইটির গ্রন্থাগার, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের গ্রন্থাগার। তাছাড়া দেশের প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে,স্কুলে ও বড় বড় শহরে সাধারণ পাঠের জন্য গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া কিছু ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারও আমাদের দেশে দেখা যায়।
গ্রন্থাগার সভ্যতা ও প্রগতির পরিচায়ক : সমস্ত জগতের শিক্ষিত সমাজ আজ গ্রন্থাগারের বিরাট প্রয়ােজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাই গ্রন্থাগার আন্দোলনের সাহায্যে তারা চেয়েছেন গ্রন্থাগারের উন্নতি সাধন করতে। কারণ প্রত্যেক দেশেরই সর্বশ্রেণির মানুষের কাছে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলাে বিতরণ করতে হলে সরকারের শুধু শিক্ষা নীতি করলেই চলবে না তার সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরির সংখ্যাও বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ জাতীয় জীবনে গ্রন্থাগার-এক মহৎ কর্তব্য পালন করে চলছে, গ্রন্থাগারই পারে অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করে জ্ঞানের আলাে জ্বালিয়ে দিতে।
উপসংহার : গ্রন্থাগার দেশের গ্রন্থ-সচেতন মানসিকতার পরিচায়ক। গত জাতির সভ্যতার বার্তা বহন করে অগ্রগতির পথে নিয়ে যায়। গ্রন্থাগার নিরক্ষরতা দূরীকরণে যেমন সহায়ক, তেমনি জ্ঞান বৃদ্ধিরও সহায়ক। সুতরাং দেশে যত বেশি লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হবে ততই জ্ঞান পিপাসু মানুষ প্রেরণা ও অমৃতের স্বাদ করবে আস্বাদন। আর হবে জাতির উন্নতি।
See lessজনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব রচনা | essay on television in bengali language
দূরদর্শন বা জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমেRead more
দূরদর্শন বা জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব
ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে। এই দেখার মধ্যে একাধারে যেমন আছে উত্তেজনা, ঠিক তেমনি আছে আনন্দ। ঘরে বসে এমন উত্তেজক আনন্দ আর কোন যন্ত্রের মাধ্যমে পাই না, তাই ‘দূরদর্শন আমাদের একান্ত প্রিয়।
আবিষ্কার ও গবেষণা : বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দান এই আনন্দদায়ক যন্ত্রটি। যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে, এল, বােয়ার্ডকে এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের গৌরব দেওয়া হয়ে থাকে তথাপি পূর্বসূরী হিসাবে জার্মানির কর্ণ ও মার্কিন বৈজ্ঞানিক রেঞ্জারে নামও আমাদের স্মরণ করতে হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বৈজ্ঞানিক কর্ণ। বেতারের মাধ্যমে প্রথম দুরে ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন যদিও তার দূরত্বটা ছিল কম। পরবর্তীতে রেঞ্জার এই ছবি পাঠাতে সমর্থ হলেন আটলান্টিক সাগরের এপার থেকে ওপারে। এ দুজন বৈজ্ঞানিক যে ছবি পাঠিয়ে ছিলেন তা ছিল স্থির। ১৯২৫ সালে অনেক গবেষণার পর বেয়ার্ড সমর্থ হলেন চলমান দৃশ্যের ছবি পাঠাতে। বলাবাহুল্য এই চলমান ছবি থেকেই আমরা পেয়ে গেলাম টেলিভিশন বা দূরদর্শন।
ভারতে দূরদর্শন : ইউরােপ ও আমেরিকায় টেলিভিশন চালু হওয়ার অনেক পরে আমাদের দেশে এ যন্ত্রটি চালু হয়। এর কারণ আমাদের মতাে গরীব দেশের জন্য এটা ছিল বড়ই ব্যয় বহুল। বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠ ফসল যদি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া না যায়, যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক লােকের কাছে পৌছায় তবে বিজ্ঞানের এই প্রকৃত সুফলটি পাওয়া যাবে না। তাই অনেক চেষ্টা সাবুদ করে প্রথমে চালু করা হল দিল্লী শহরে। তারপর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গে দূরদর্শন চালু হয়। দুরদর্শনের কলকাতা কেন্দ্রে টেলিভিশন প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ১৯৮২ তে মাইক্রোওয়েভ সংযােগের মাধ্যমে দিল্লি থেকে সরাসরি কলকাতা এবং দেশের অপরাপর কেন্দ্রে প্রচার সম্ভব হয়।
দূরদর্শনের উপযােগিতা : টেলিভিশন বা দূরদর্শন মানুষের জীবনে আনন্দ দানের এক বিরাট ও ব্যাপক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।টেলিভিশনের কল্যাণে পৃথিবী ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চক্ষু গােচর হচ্ছে।এত সহজে এবং এত অল্প সময়ে এত বিস্তৃতভাবে লক্ষ লক্ষ জ্ঞান শিক্ষা আনন্দ-বিতরণের ব্যবস্থায় দূরদর্শন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দূরদর্শন শিক্ষক, চাকুরীজীবী, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক, শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়। আমেরিকার বক্তৃতা, ইংল্যান্ডের গান আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার বর্ণনা আমরা নিজ নিজ ঘরে বসেই দৈনন্দিন টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। একই সময়ে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে আনন্দ দানের এত বড় মাধ্যম পৃথিবীতে কোন কালেই ছিল না।
ইডিয়েট বক্স বোকা বাক্স: বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টেলিভিশন একটি বোকা বাক্স। এই দৃশ্যমান যন্ত্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। ভাববার বা চিন্তা করবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দিনে দিনে একটু একটু করে দর্শকদের নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। নির্বোধ না হলে দিনের পর দিন ওই সব ছবি কেউ কি দেখতে পারে? রাজনীতিকরা মনে করেন যে এটি শাসক দলের প্রচার এর একটি হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতি এটি তাদের হাতে না থাকাই ভালো। মোট কথা অনেকের কাছেই টিভি আজাদ পছন্দের বস্তু নয়। তবে ব্যবসায় দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসু কৌতুহলী দর্শকদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীরা দেখছেন এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারলে খদ্দের ধরা খুবই সহজ। তাই টিভির মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞাপন এখন একটি চারুকলা হয়ে উঠেছে। নাচ-গান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, খেলাধুলা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে সারা সপ্তাহ ধরে নানান বিচিত্র আলোচনা এখানে পরিবেশিত হয়।
ছাত্রদের জন্য : ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক অনুষ্ঠান দুরদর্শনে পরিবেশন করা হয়। তবে টিভি প্রােগ্রাম দেখা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও কিছুটা বিধি নিষেধ থাকা দরকার। সব অনুষ্ঠান তাদের দেখা ঠিক নয়। যেগুলি শিক্ষামূলক সেগুলিই তারা দেখুক। সেগুলি ছাড়া আর সব অনুষ্ঠানের দিকে ঝোক ছাত্রদের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। অধিকাংশ হিন্দি সিনেমা, নাচ, গান, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা উচিত নয়। প্রদর্শনীয় বিষয় পরিকল্পনার সময় দেশের কিশাের-কিশােরীদের নৈতিক এবং মানসিক গঠনের কথাটা ভাবতেই হবে।
উপসংহার: মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার। মানুষের প্রয়োগ পদ্ধতির জন্য আবিষ্কার হয়েছে কোন আশীর্বাদ আবার কখনো হয়েছে অভিশাপ। কোটি কোটি মানুষ আজও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাই আজও বহুলোকের টিভি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। টিভি এখনো উচ্চবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত বিলাসের উপকরণ অথচ বিজ্ঞানের আবিষ্কার কে করে করে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ধীরে ধীরে এগিয়ে রূপান্তরিত করতে হবে অগ্রগতির শানিত হাতিয়ারে। কেননা আধুনিক জীবনে এই অপরিহার্য সঙ্গীটিকে আর বর্জন করার উপায় বা সাধ্য নেই। তবে সেখানে প্রয়োজন অনুষ্ঠান সূচির নৈতিক নিয়ন্ত্রণ। প্রয়োজন ব্যাপক গঠনমূলক রুচি শিল্পোন্নত অনুষ্ঠানের নিত্য নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবন।
See lessরচনা: দূরদর্শন | television paragraph in bengali
দূরদর্শন ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে। এই দেখার মধ্যে একাধারে যেমনRead more
দূরদর্শন
ভূমিকা : আজকের ভারতবর্ষে সর্বাধিক মনােরঞ্জক ও জনপ্রিয় কোন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের নাম যদি করতে হয়, তাহলে যে যন্ত্রটির নাম বহুজনের কণ্ঠে উচ্চারিত হবে, সেটি হল টেলিভিশন। বাংলায় আমরা একে বলে থাকি দূরদর্শন। বহুদুরের জিনিসকে, আমরা কাছে এনে দেখে থাকি এই যন্ত্রের মাধ্যমে। এই দেখার মধ্যে একাধারে যেমন আছে উত্তেজনা, ঠিক তেমনি আছে আনন্দ। ঘরে বসে এমন উত্তেজক আনন্দ আর কোন যন্ত্রের মাধ্যমে পাই না, তাই ‘দূরদর্শন আমাদের একান্ত প্রিয়।
আবিষ্কার ও গবেষণা : বলা যেতে পারে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দান এই আনন্দদায়ক যন্ত্রটি। যদিও ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জে, এল, বােয়ার্ডকে এই যন্ত্রটি আবিষ্কারের গৌরব দেওয়া হয়ে থাকে তথাপি পূর্বসূরী হিসাবে জার্মানির কর্ণ ও মার্কিন বৈজ্ঞানিক রেঞ্জারে নামও আমাদের স্মরণ করতে হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান বৈজ্ঞানিক কর্ণ। বেতারের মাধ্যমে প্রথম দুরে ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন যদিও তার দূরত্বটা ছিল কম। পরবর্তীতে রেঞ্জার এই ছবি পাঠাতে সমর্থ হলেন আটলান্টিক সাগরের এপার থেকে ওপারে। এ দুজন বৈজ্ঞানিক যে ছবি পাঠিয়ে ছিলেন তা ছিল স্থির। ১৯২৫ সালে অনেক গবেষণার পর বেয়ার্ড সমর্থ হলেন চলমান দৃশ্যের ছবি পাঠাতে। বলাবাহুল্য এই চলমান ছবি থেকেই আমরা পেয়ে গেলাম টেলিভিশন বা দূরদর্শন।
ভারতে দূরদর্শন : ইউরােপ ও আমেরিকায় টেলিভিশন চালু হওয়ার অনেক পরে আমাদের দেশে এ যন্ত্রটি চালু হয়। এর কারণ আমাদের মতাে গরীব দেশের জন্য এটা ছিল বড়ই ব্যয় বহুল। বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠ ফসল যদি মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়া না যায়, যদি নির্দিষ্ট সংখ্যক লােকের কাছে পৌছায় তবে বিজ্ঞানের এই প্রকৃত সুফলটি পাওয়া যাবে না। তাই অনেক চেষ্টা সাবুদ করে প্রথমে চালু করা হল দিল্লী শহরে। তারপর সত্তরের দশকের মাঝামাঝি পশ্চিমবঙ্গে দূরদর্শন চালু হয়। দুরদর্শনের কলকাতা কেন্দ্রে টেলিভিশন প্রচার আরম্ভ হয় ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে। ১৯৮২ তে মাইক্রোওয়েভ সংযােগের মাধ্যমে দিল্লি থেকে সরাসরি কলকাতা এবং দেশের অপরাপর কেন্দ্রে প্রচার সম্ভব হয়।
দূরদর্শনের উপযােগিতা : টেলিভিশন বা দূরদর্শন মানুষের জীবনে আনন্দ দানের এক বিরাট ও ব্যাপক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে।টেলিভিশনের কল্যাণে পৃথিবী ঘটে যাওয়া বড় বড় ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চক্ষু গােচর হচ্ছে।এত সহজে এবং এত অল্প সময়ে এত বিস্তৃতভাবে লক্ষ লক্ষ জ্ঞান শিক্ষা আনন্দ-বিতরণের ব্যবস্থায় দূরদর্শন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দূরদর্শন শিক্ষক, চাকুরীজীবী, রাজনৈতিক বা বৈজ্ঞানিক, শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলের জন্যই প্রয়োজনীয়। আমেরিকার বক্তৃতা, ইংল্যান্ডের গান আর অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট খেলার বর্ণনা আমরা নিজ নিজ ঘরে বসেই দৈনন্দিন টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখে আনন্দ উপভোগ করতে পারি। একই সময়ে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ লোককে আনন্দ দানের এত বড় মাধ্যম পৃথিবীতে কোন কালেই ছিল না।
ইডিয়েট বক্স বোকা বাক্স: বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে টেলিভিশন একটি বোকা বাক্স। এই দৃশ্যমান যন্ত্রটি মানুষকে বোকা বানিয়ে রাখে। ভাববার বা চিন্তা করবার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে দিনে দিনে একটু একটু করে দর্শকদের নির্বোধ বানিয়ে ফেলে। নির্বোধ না হলে দিনের পর দিন ওই সব ছবি কেউ কি দেখতে পারে? রাজনীতিকরা মনে করেন যে এটি শাসক দলের প্রচার এর একটি হাতিয়ার। সুতরাং এই হাতি এটি তাদের হাতে না থাকাই ভালো। মোট কথা অনেকের কাছেই টিভি আজাদ পছন্দের বস্তু নয়। তবে ব্যবসায় দাঁড়ায় এবং জিজ্ঞাসু কৌতুহলী দর্শকদের কাছে এটি খুবই জনপ্রিয়। ব্যবসায়ীরা দেখছেন এর মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারলে খদ্দের ধরা খুবই সহজ। তাই টিভির মধ্যে দিয়ে বিজ্ঞাপন এখন একটি চারুকলা হয়ে উঠেছে। নাচ-গান, বিজ্ঞান, চিকিৎসা, খেলাধুলা, শিক্ষা, ভ্রমণ ইত্যাদি সম্পর্কে সারা সপ্তাহ ধরে নানান বিচিত্র আলোচনা এখানে পরিবেশিত হয়।
ছাত্রদের জন্য : ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনেক অনুষ্ঠান দুরদর্শনে পরিবেশন করা হয়। তবে টিভি প্রােগ্রাম দেখা সম্পর্কে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরও কিছুটা বিধি নিষেধ থাকা দরকার। সব অনুষ্ঠান তাদের দেখা ঠিক নয়। যেগুলি শিক্ষামূলক সেগুলিই তারা দেখুক। সেগুলি ছাড়া আর সব অনুষ্ঠানের দিকে ঝোক ছাত্রদের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে। অধিকাংশ হিন্দি সিনেমা, নাচ, গান, ছাত্র-ছাত্রীদের দেখা উচিত নয়। প্রদর্শনীয় বিষয় পরিকল্পনার সময় দেশের কিশাের-কিশােরীদের নৈতিক এবং মানসিক গঠনের কথাটা ভাবতেই হবে।
উপসংহার: মানুষের কল্যাণে বিজ্ঞানের আবিষ্কার। মানুষের প্রয়োগ পদ্ধতির জন্য আবিষ্কার হয়েছে কোন আশীর্বাদ আবার কখনো হয়েছে অভিশাপ। কোটি কোটি মানুষ আজও দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাই আজও বহুলোকের টিভি ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। টিভি এখনো উচ্চবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত বিলাসের উপকরণ অথচ বিজ্ঞানের আবিষ্কার কে করে করে সব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। ধীরে ধীরে এগিয়ে রূপান্তরিত করতে হবে অগ্রগতির শানিত হাতিয়ারে। কেননা আধুনিক জীবনে এই অপরিহার্য সঙ্গীটিকে আর বর্জন করার উপায় বা সাধ্য নেই। তবে সেখানে প্রয়োজন অনুষ্ঠান সূচির নৈতিক নিয়ন্ত্রণ। প্রয়োজন ব্যাপক গঠনমূলক রুচি শিল্পোন্নত অনুষ্ঠানের নিত্য নতুন পরিকল্পনা উদ্ভাবন।
See lessদেশ ভ্রমণ প্রবন্ধ | Desh bhraman rochona in Bengali
দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ। অথবা দেশভ্রমণের উপযােগিতা ভূমিকা: ঘরকুনাে সংসারী মানুষ যে নেশার টানে ঘরছাড়া হয়, তারই নাম ভ্রমণ।সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বাস করে মানুষের মন যখন হাঁপিয়ে উঠে, তখনই সে চায়। উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রভাব সহজাত এই উন্মুক্ত বিশ্ব প্রকৃতির অনন্ত সৌন্দর্য-সুধা পান করতে। অজানাকে জানা, অদেখাকেRead more
দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ। অথবা দেশভ্রমণের উপযােগিতা
ভূমিকা: ঘরকুনাে সংসারী মানুষ যে নেশার টানে ঘরছাড়া হয়, তারই নাম ভ্রমণ।সংকীর্ণ সীমার মধ্যে বাস করে মানুষের মন যখন হাঁপিয়ে উঠে, তখনই সে চায়। উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রভাব সহজাত এই উন্মুক্ত বিশ্ব প্রকৃতির অনন্ত সৌন্দর্য-সুধা পান করতে। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা, অচেনাকে চেনা মানুষের সহজাত প্রবণতা। আর এই প্রবণতাই মানুষকে ঠেলে নিয়ে চলেছে অরণ্য পথে, তুষারাচ্ছন্ন মেরু প্রদেশ, সমুদ্রতীর, মরু প্রান্তর আর পর্বত শৃঙ্গে।
পথ চলা আনন্দের উৎস : সদরের পিয়াসি মানুষ পথ চলতেই আনন্দ পায়। মানুষের মন চিরচঞ্চল সে মনে একট সাড়া পেলেই তাকে ঘরে বেঁধে রাখা দায়।
“ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্ট মন্দিরে”
বহুদক সন্ন্যাসীর মতাে ওই মন্ত্র নিয়ে শুধুই পথ চলা। আর থেমে থাকা নয়, সীমার গণ্ডি পেরিয়ে অসীমের দিকে কেবলই- “হেথা নয়, অন্য কোথা অন্য কোনাে খানে।” ভ্রমণ সাহিত্য গুলি আমাদের অমূল্য সম্পদ। ভ্রমণ যারা করেছেন, তাদের বিবরণ পড়ে মন যেন তাদের পিছু পিছু ভ্রমণ করে বেড়ায়। কর্মক্লান্ত জীবনকে মুক্তি বা আনন্দ দেওয়ার জন্য যে ভ্রমণ, আধুনিক যুগেই তার সুত্রপাত হয়েছে।
শিক্ষা লাভের অঙ্গ : ভ্রমণ শুধু নিছক ঘুরে বেড়ানুই নয়। ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে ভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম। বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক হতে আমরা যে শিক্ষা লাভ করি, তাতে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভ হয় না। আমরা ভুগােলে নানা দেশের কথা পড়ি। কত বিচিত্র দেশ বিচিত্র তার অধিবাসী, আরও বিচিত্র তার রীতিনীতি আর জীবনযাত্রা প্রণালী। তাছাড়া সুউচ্চ পর্বতের কথা, ধু-ধু মরুভূমির কথা, সাগরের অনন্ত জলরাশির কথা শুধু বইয়ে পড়ে সঠিক ভাবে জ্ঞান লাভ হয় না। প্রকৃতির বাণী কান পেতে শুনতে হলে প্রকৃতির পাশটিতে গিয়ে বসা চাই। পূর্ণ শিক্ষা লাভের জন্য তাই ভ্রমণ একান্ত জরুরি। দুঃখের বিষয় হল, আমাদের দেশে এখনও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ভ্রমণের তেমন সুব্যবস্থা নেই। অথচ বিদেশে পৃথিবীর উন্নত দেশসমুহে দেশভ্রমণকে শিক্ষার অঙ্গ হিসাবেই গণ্য করা হয়।
দেশভ্রমণ না করার কুফল : স্বদেশে ক্ষুদ্রগণ্ডীর মধ্যে চিরকাল আবদ্ধ থাকলে আমাদের মন সাধারণতঃ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এর ফলে ক্ষুদ্র স্বার্থ নিয়ে আমরা দলাদলি ও হানাহানি করি। পল্লীবাসীদের কুপমণ্ডুকতাই এর প্রধান কারণ। যারা অনেক দেশভ্রমণ করেছে তাদের মন উদার হয়, মনে সংকীর্ণতা থাকে না। তাই নানা জাতির সংস্পর্শে থাকার ফলে গ্রামের লােকের চাইতে শহরের লােকের উদারতা বেশি। দেশভ্রমণের ফলে মানুষ মাত্রেই বুঝতে পারে যে, পরস্পরের সঙ্গে যােগসূত্র না থাকলে নিজেকেই অসহায় করা হয়। দেশভ্রমণ অপরিহার্য। পাশ্চাত্য মহাদেশের উন্নত দেশগুলি আধুনিক বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কৃষিকার্যে কীভাবে উন্নতি লাভ করছে, যন্ত্র শিল্পের প্রতিষ্ঠা করে কীভাবে অন্যান্য দেশের বাজার হস্তগত করছে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্বন্ধ কাভাবে স্থাপন করছে, দেশভ্রমণের দ্বারাই এসব বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান সঞ্চয় করা যায়। কোথায় কোন প্রয়ােজনীয় জিনিস সুলভে প্রচুর পাওয়া যায়, কোথায় কোন জিনিসের চাহিদা বেশি, দেশভ্রমণের ফলে তাও বিশেষ ভাবে জানতে পারা যায়।
অভিজ্ঞতা ও সৌন্দর্য বােধের প্রসার : মানুষ সৌন্দর্যের পুজারি। দেশ ভ্রুমণের ফলে সৌন্দর্যবােধ সঞ্চারিত হয়। জীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান ভাণডার সমৃদ্ধ হয়। প্রকৃতির নব নব সুন্দর্য দর্শন করে মানুষের রস পিপাসু মন পরিতৃপ্ত হয় । দেশ ভ্রমণের আনন্দ মনকে উন্নত ও বিকশিত করতে সাহায্য করে। ঘুরতে ঘুরতে পথ থেকে সে কুড়িয়ে যে জ্ঞান সঞ্চয় করে তার মূল্য কেতাবি বিদ্যার চেয়ে অনেক মূল্যবান হয় ।
দেশ ভ্রমণ, প্রাচীন ও আধুনিক যুগে : দেশ ভ্রমণ মানব সভ্যতার প্রাচীনতম প্রবৃত্তি। এজন্য বহু লোকের মধ্যে একটা আজন্ম ভবঘুরে প্রবৃত্তি চোখে পড়ে।মানুষ যখন ঘর বেঁধে চাষবাস করতে শেখেনি, তখন সে এক স্থান হতে অন্যস্থানে ঘুরে মানুষ বেড়াত।একশতাব্দী পূর্বেও মানুষ ভ্রমণ করেছে বহু কষ্ট স্বীকার করে, ফা-হিয়ান, ইবন বতুতা প্রভৃতি পরিব্রাজকগণ অপর দেশের শিক্ষা, সভ্যতা, ধর্ম প্রভৃতি জানবার আগ্রহে ভারতে এসেছিলেন। তাদের ভ্রমণ কাহিনি হতে প্রাচীন ভারতের বিবরণ পাওয়া যায়।কলম্বাস, ভাস্কো-ডা-গামা, মঙ্গোপাঙন এর মতন ভ্রমণকারীদের দ্বারা পৃথিবীর বহু অজ্ঞাত স্থান আবিষ্কৃত হয়েছে। আজ কাল অনেক দুর্গম স্থানে ও ভ্রমণার্থীদের যাওয়া ও থাকা খাওয়ার সবন্দোবস্ত করা হয়েছে। দেশভ্রমণ আজ অনেকের কাছেই একটা নেশা বা পরিণত হয়েছে। শীতে,গ্রীষ্মে বা পুজোর ছুটিতে আজ দলে দলে মানুষ বেরিয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে।
উপসংহার : ভ্রমণ সত্যিই সুখের। আজকাল ভ্রমণের সঙ্গে পর্যটন শিল্পের বিষয়টিও জড়িয়ে আছে। নিজ দেশে দেশি ও বিদেশি ভ্রমণার্থীদের আকৃষ্ট করতে পারলে জাতীয় ভাণ্ডারে অনেক বিদেশি মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয়।বিগত দিনের তুলনায় আজ ভ্রমণ ক্রমশই বাড়ছে, এটা সুখবর, সন্দেহ নেই। দেশে দেশে মানুষের যাতায়াত যত বাড়বে, তত বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে মেলামেশা, তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি, পরিচয় সম্পর্কে আদান প্রদান সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক শান্তি স্থাপনের দূত হিসেবে ভ্রমণার্থীরাই সবচেয়ে উপযুক্ত। দেশভ্রমণের এটিও একটি মস্ত উপযােগিতা বলা যেতে পারে।
See less