1. লোহার ব্যাথা যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও ভাই কর্মকার– আমাকে পুড়িয়ে পিটানাে ছাড়া কি নাইকো কর্ম আর? কোন্ ভােরে সেই ধরেছ হাতুড়ি, রাত্রি গভীর হ’লো, ঝিল্লীমুখর স্তব্ধ পল্লী, তােলো গাে যন্ত্র তােলো। ঠকা ঠাঁই ঠাঁই কাঁদিছে নেহাই, আগুন ঢুলিছে ঘুমে, শ্রান্ত সাঁড়াশি ক্লান্ত ওষ্ঠে আলগােছে ছেনি চুমে, দেখাে গাে হোRead more

    লোহার ব্যাথা
    যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

    ও ভাই কর্মকার–
    আমাকে পুড়িয়ে পিটানাে ছাড়া কি নাইকো কর্ম আর?
    কোন্ ভােরে সেই ধরেছ হাতুড়ি, রাত্রি গভীর হ’লো,
    ঝিল্লীমুখর স্তব্ধ পল্লী, তােলো গাে যন্ত্র তােলো।
    ঠকা ঠাঁই ঠাঁই কাঁদিছে নেহাই, আগুন ঢুলিছে ঘুমে,
    শ্রান্ত সাঁড়াশি ক্লান্ত ওষ্ঠে আলগােছে ছেনি চুমে,
    দেখাে গাে হোথায় হাপর হাঁপায়, হাতুড়ি মাগিছে ছুটি;
    ক্লান্ত নিখিল করো গো শিথিল তোমার বজ্রমুঠি।

    রাত্রি দু’পরে মনে নাহি পড়ে কি ছিলাম আমি ভােরে,
    ভাঙিলে গড়িলে সিধা বাঁকা গােল লম্বা চৌকা করে;
    কভু আতপ্ত, কভু লাল, কভু উজ্জ্বল রবিসম,
    কভু বা সলিলে করিলে শীতল অসহ্য দাহ মম।
    অজানা দুজনে গলায়ে আগুনে জুড়িয়া মিটালে সাধ,
    ধড় হতে কভু বাহুল্যবােধে মাথা কেটে দিলে বাদ।
    ঘন ঘন ঘন পরিবর্তনে আপনা চিনিতে নারি,
    স্থির হয়ে যাই ভাবিবারে চাই,পড়ে হাতুড়ির বাড়ি।

    আগুনের তাপে সাঁড়াশির চাপে আমি চির নিরুপায়,
    তবু সগর্বে ভুলি নি ফিরাতে প্রতি হাতুড়ির ঘায়।
    যাহা অন্যায়, হোক না প্রবল, করিয়াছি প্রতিবাদ,
    আমার বুকের কোমল অংশ কে বলিল তারে খাদ;
    তোমার হস্তে ইস্পাত হয়ে সহি শান, পান, পোড়;
    রামের শত্রু শ্যামে কাটি যদি তাতে কিবা সুখ মাের;
    তোমার হাতের যন্ত্র যাহারা দিনরাত মরে খেটে,
    না বুঝে চাতুরী, নেহাই হাতুড়ি ভাই হয়ে ভায়ে পেটে!

    ও ভাই কর্মকার!
    রাত্রি সাক্ষী, তােমার উপরে দিলাম ধর্মভার–
    কহো গাে বন্ধু কহো কানে কানে, আপনার প্রাণে বুঝি,
    আমি না থাকিলে, মারা যেত কিনা তােমার দিনের রুজি?
    তুমি না থাকিলে আমার বন্ধু কিবা হত তাহে ক্ষতি?
    কৃতজ্ঞতা কি পাঠাইছ তাই হাতুড়ির মারফতি!
    কি কহিছ ভাই, আমি হব ‘তুমি’ এই প্রেম সহি যদি
    পিটনের গুণে লােহা কবে হায় পায় কামারের গদি!

    See less
    • 0