সংবাদপত্র প্রকাশনায় যেমন সম্পাদনা অত্যন্ত জরুরী। ঠিক তেমনি গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রেও সম্পাদনার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্পাদক জানেন একটি উৎকৃষ্ট মানের গ্রন্থ কীভাবে তৈরি হয়। কী কী শর্ত মানলে প্রকাশনার মান বজায় রাখা যায়। মলাট থেকে বাঁধাই, ছাপার মান, সজ্জা সবকিছুই সম্পাদনার মধ্যে পড়ে। শুধু বই ছাপলেই চলবে না, বই ছাপাকে পাঠকের কাছে গ্রহণযােগ্য করে তুলতে হবে। রুচি ও উপযােগিতার সমন্বয়ে আকর্ষণীয় উৎকৃষ্ট গ্রন্থ প্রকাশ করাই সম্পাদনার উদ্দেশ্য।
সম্পাদকের কর্তব্য –
লেখক হলেন গ্রন্থের স্রষ্টা। কিন্তু গ্রন্থ সম্পাদক হলেন গ্রন্থের রূপকার। গ্রন্থের প্রকাশনা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনার দায়িত্ব তার। লেখকের সঙ্গে যােগাযােগ রাখা থেকে মুদ্রণ, বাঁধাই পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্মের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত থাকেন। লেখক যখন রচনায় মগ্ন, সম্পাদক তখন সেই সৃজনশীল রচনাকে কত সার্থকভাবে রূপায়িত করা যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, পরীক্ষা নিরিক্ষায় ব্যস্ত থাকেন। প্রয়ােজনে লেখককেও তিনি পরামর্শ দিতে পারেন পরিচ্ছেদ ভাষা, লেখার আয়তন ও প্রকাশন সম্পর্কিত অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে।
ছাপার আগে রচনাটি খুঁটিয়ে পড়তে হয় সম্পাদককে। একজন দক্ষ সম্পাদক সবসময়ই হলেন একজন ভালাে পাঠক। পড়তে পড়তেই তিনি পাঠযােগ্যতার বিচার করেন। লেখাটি কীভাবে উপস্থাপিত হলে, পাঠকদের মন জয় করতে পারে সে সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা থাকে। পড়তে পড়তেই তিনি নােট রাখেন। পড়া শেষ করার পর যদি কোন অদলবদল প্রয়ােজন মনে করেন তবে তা তিনি লেখককে জানাবেন। লেখক সম্পাদকের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকেন। তিনি খুব ভালভাবেই জানেন সম্পাদকের হাতেই তাঁর বই নিখুঁত ও মনােরম হয়ে উঠবে।
লেখক লিখতে লিখতে অনেক সময় ছােট খাট ভুল করেন। বানান ভুল, অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত ত্রুটি, প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কিত ত্রুটি, একই বিষয় পুনরায় উপস্থাপনের বিষয় অনেক ক্ষেত্রে চোখ এড়িয়ে যায়। সম্পাদকের সজাগ দৃষ্টিতে এই সব ত্রুটি সহজেই ধরা পড়ে এবং তা সংশােধিত হয়। মুদ্রণ প্রমাদ যে কোন প্রকাশনের পক্ষে খুবই পীড়াদায়ক। যে বইয়ে বানান ভুল থাকে সে বই সম্পর্কে পাঠকের ধারণাও খারাপ হয়। সুতরাং সম্পাদনার অন্যতম কাজই হল মুদ্রণ প্রমাদের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনা। ছাপার কাজেও তদারকি করতে হয় তাঁকে। কী কাগজে, কী টাইপে ছাপা হবে তা তিনি নির্ধারণ করেন।
অনুচ্ছেদের উপযুক্ত প্রয়ােগ পাঠযােগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। খুব বড় বড় অনুচ্ছেদ হলে অক্ষর বিন্যাসের ধূসরতা বৃদ্ধি পায়। চোখের পক্ষে তা একেবারেই আরামদায়ক নয়। পাঠক যাতে পড়ার সময় স্বাচ্ছন্দ বােধ করে তার জন্যই সঠিকভাবে অনুচ্ছেদের ব্যবহার করা হয়। অনুচ্ছেদ দেওয়ার ফলে সাদা অংশের ব্যবহার হয় এবং তা অক্ষরের ধূসরতা ভাঙতে সাহায্য করে। একটি পৃষ্ঠায় যদি কমপক্ষে একটি অনুচ্ছেদ থাকে তাহলে পৃষ্ঠাসজ্জা মনােরম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে যেন অনুচ্ছেদ ব্যবহারের সাযুজ্য থাকে। শুধুমাত্র নান্দনিক হলেই চলবে না। বিষয়ের দাবির প্রতিও আনুগত্য রাখতে হবে। আবার এটাও সত্য যে অনুচ্ছেদ বিষয়ভাবনাকেও উপযুক্তভাবে মেলে ধরতে সাহায্য করে। একটি বিষয়ভাবনা পরতে পরতে প্রস্ফুটিত হয়, যদি প্রতি পরত অনুচ্ছেদের দাবী রাখে তাহলে অবশ্যই সেই দাবী মেটাতে হবে। অনুচ্ছেদ বিষয়ভাবনা এবং পৃষ্ঠাসজ্জা দুটি দিককেই সার্থকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কোন তথ্যগত ভ্রান্তি যদি থাকে তাহলে তা দূর করতে হবে। অনেক সময় লেখক বিষয়-ভাবনাকে ভালােভাবে পরিস্ফুট করার জন্য বিভিন্ন তথ্য ও অন্যান্য উপকরণের সাহায্য নেন। লেখার সময় সামান্য ভুল-ত্রুটি হতে পারে। হয়তাে লেখকের অজান্তে তথ্যগত কোন ভুল লেখার মধ্যে থেকে যেতে পারে। অনেক সময় উপন্যাসের চরিত্রের নাম বদলে যায়। সম্পাদক এই ভুল শুধরে দিতে পারেন। সম্পাদনার সময় সম্পাদক এই ত্রুটি সংশােধন করে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান পরিবেশন করবেন। এই পরিমার্জনা যে একটি লেখাকে কতখানি সাহায্য করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঘষে মেজে ঝকমকে করে গড়ে তুলতে সম্পাদনার কোন বিকল্প নেই।
প্রচ্ছদ বিন্যাসেও সম্পাদকের সক্রিয় ভূমিকা থাকে। গ্রন্থের বিষয় ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রচ্ছদ তৈরি করতে হয়। একজন শিল্পী বিন্যাসের রূপরেখা তৈরি করেন। কিন্তু শিল্পীকে দিয়ে উৎকর্ষ মলাট তৈরি করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সম্পাদকের। গ্রন্থটির দাবি শিল্পীকে বােঝাবেন তিনি। লেখকের ভাবনার সঙ্গে মলাট সৃজনকে মেলাবার দায়িত্ব বহন করেন সম্পাদক।
একই কথা অনেক সময় ঘুরে ফিরে চলে আসে। যে কোন রচনার পক্ষে তা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়। সজাগ সম্পাদক পুনরাবৃত্তি দেখলে সন্তর্পনে তা বাদ দিয়ে দেন। লেখক অজান্তে হয়তাে পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। ছাপা হয়ে গেলে তা পাঠের পক্ষে হয়ে উঠবে বিরক্তিকর। সম্পাদক তাই সর্বতােভাবে চেষ্টা করেন পুনরাবৃত্তির দোষ থেকে লেখাকে মুক্ত করতে। পুনরাবৃত্তি যদি না থাকে তাহলে লেখার উৎকর্য অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়।
সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী যে কোন বই-এর জন্যই সম্পাদনা প্রয়ােজন। সম্পাদনার সময় যে পরিমার্জনা হয় তাতে একটি লেখা প্রকৃতভাবে মুদ্রণ উপযােগী হয়ে ওঠে। ছাপার মতাে করে একটি গ্রন্থকে প্রস্তুত করার জন্যই দক্ষ সম্পাদক প্রয়ােজন। একটি ভালাে প্রকাশনা মানেই সেখানে রয়েছে। সম্পাদকের সযত্ন প্রয়াস যা রচনাকে গুণগত দিক দিয়ে উন্নত করে তুলবে।
Hridoy
বই সম্পাদনা
সংবাদপত্র প্রকাশনায় যেমন সম্পাদনা অত্যন্ত জরুরী। ঠিক তেমনি গ্রন্থ প্রকাশনার ক্ষেত্রেও সম্পাদনার যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সম্পাদক জানেন একটি উৎকৃষ্ট মানের গ্রন্থ কীভাবে তৈরি হয়। কী কী শর্ত মানলে প্রকাশনার মান বজায় রাখা যায়। মলাট থেকে বাঁধাই, ছাপার মান, সজ্জা সবকিছুই সম্পাদনার মধ্যে পড়ে। শুধু বই ছাপলেই চলবে না, বই ছাপাকে পাঠকের কাছে গ্রহণযােগ্য করে তুলতে হবে। রুচি ও উপযােগিতার সমন্বয়ে আকর্ষণীয় উৎকৃষ্ট গ্রন্থ প্রকাশ করাই সম্পাদনার উদ্দেশ্য।
সম্পাদকের কর্তব্য –
লেখক হলেন গ্রন্থের স্রষ্টা। কিন্তু গ্রন্থ সম্পাদক হলেন গ্রন্থের রূপকার। গ্রন্থের প্রকাশনা সংক্রান্ত যাবতীয় পরিকল্পনার দায়িত্ব তার। লেখকের সঙ্গে যােগাযােগ রাখা থেকে মুদ্রণ, বাঁধাই পর্যন্ত যাবতীয় কাজকর্মের সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত থাকেন। লেখক যখন রচনায় মগ্ন, সম্পাদক তখন সেই সৃজনশীল রচনাকে কত সার্থকভাবে রূপায়িত করা যায় তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা, পরীক্ষা নিরিক্ষায় ব্যস্ত থাকেন। প্রয়ােজনে লেখককেও তিনি পরামর্শ দিতে পারেন পরিচ্ছেদ ভাষা, লেখার আয়তন ও প্রকাশন সম্পর্কিত অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে।
ছাপার আগে রচনাটি খুঁটিয়ে পড়তে হয় সম্পাদককে। একজন দক্ষ সম্পাদক সবসময়ই হলেন একজন ভালাে পাঠক। পড়তে পড়তেই তিনি পাঠযােগ্যতার বিচার করেন। লেখাটি কীভাবে উপস্থাপিত হলে, পাঠকদের মন জয় করতে পারে সে সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা থাকে। পড়তে পড়তেই তিনি নােট রাখেন। পড়া শেষ করার পর যদি কোন অদলবদল প্রয়ােজন মনে করেন তবে তা তিনি লেখককে জানাবেন। লেখক সম্পাদকের দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত থাকেন। তিনি খুব ভালভাবেই জানেন সম্পাদকের হাতেই তাঁর বই নিখুঁত ও মনােরম হয়ে উঠবে।
লেখক লিখতে লিখতে অনেক সময় ছােট খাট ভুল করেন। বানান ভুল, অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত ত্রুটি, প্রাসঙ্গিক তথ্য সম্পর্কিত ত্রুটি, একই বিষয় পুনরায় উপস্থাপনের বিষয় অনেক ক্ষেত্রে চোখ এড়িয়ে যায়। সম্পাদকের সজাগ দৃষ্টিতে এই সব ত্রুটি সহজেই ধরা পড়ে এবং তা সংশােধিত হয়। মুদ্রণ প্রমাদ যে কোন প্রকাশনের পক্ষে খুবই পীড়াদায়ক। যে বইয়ে বানান ভুল থাকে সে বই সম্পর্কে পাঠকের ধারণাও খারাপ হয়। সুতরাং সম্পাদনার অন্যতম কাজই হল মুদ্রণ প্রমাদের সম্ভাবনাকে কমিয়ে আনা। ছাপার কাজেও তদারকি করতে হয় তাঁকে। কী কাগজে, কী টাইপে ছাপা হবে তা তিনি নির্ধারণ করেন।
অনুচ্ছেদের উপযুক্ত প্রয়ােগ পাঠযােগ্যতা বাড়িয়ে দেয়। খুব বড় বড় অনুচ্ছেদ হলে অক্ষর বিন্যাসের ধূসরতা বৃদ্ধি পায়। চোখের পক্ষে তা একেবারেই আরামদায়ক নয়। পাঠক যাতে পড়ার সময় স্বাচ্ছন্দ বােধ করে তার জন্যই সঠিকভাবে অনুচ্ছেদের ব্যবহার করা হয়। অনুচ্ছেদ দেওয়ার ফলে সাদা অংশের ব্যবহার হয় এবং তা অক্ষরের ধূসরতা ভাঙতে সাহায্য করে। একটি পৃষ্ঠায় যদি কমপক্ষে একটি অনুচ্ছেদ থাকে তাহলে পৃষ্ঠাসজ্জা মনােরম হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে বিষয়ের প্রাসঙ্গিকতার সঙ্গে যেন অনুচ্ছেদ ব্যবহারের সাযুজ্য থাকে। শুধুমাত্র নান্দনিক হলেই চলবে না। বিষয়ের দাবির প্রতিও আনুগত্য রাখতে হবে। আবার এটাও সত্য যে অনুচ্ছেদ বিষয়ভাবনাকেও উপযুক্তভাবে মেলে ধরতে সাহায্য করে। একটি বিষয়ভাবনা পরতে পরতে প্রস্ফুটিত হয়, যদি প্রতি পরত অনুচ্ছেদের দাবী রাখে তাহলে অবশ্যই সেই দাবী মেটাতে হবে। অনুচ্ছেদ বিষয়ভাবনা এবং পৃষ্ঠাসজ্জা দুটি দিককেই সার্থকভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
কোন তথ্যগত ভ্রান্তি যদি থাকে তাহলে তা দূর করতে হবে। অনেক সময় লেখক বিষয়-ভাবনাকে ভালােভাবে পরিস্ফুট করার জন্য বিভিন্ন তথ্য ও অন্যান্য উপকরণের সাহায্য নেন। লেখার সময় সামান্য ভুল-ত্রুটি হতে পারে। হয়তাে লেখকের অজান্তে তথ্যগত কোন ভুল লেখার মধ্যে থেকে যেতে পারে। অনেক সময় উপন্যাসের চরিত্রের নাম বদলে যায়। সম্পাদক এই ভুল শুধরে দিতে পারেন। সম্পাদনার সময় সম্পাদক এই ত্রুটি সংশােধন করে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যান পরিবেশন করবেন। এই পরিমার্জনা যে একটি লেখাকে কতখানি সাহায্য করে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঘষে মেজে ঝকমকে করে গড়ে তুলতে সম্পাদনার কোন বিকল্প নেই।
প্রচ্ছদ বিন্যাসেও সম্পাদকের সক্রিয় ভূমিকা থাকে। গ্রন্থের বিষয় ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে প্রচ্ছদ তৈরি করতে হয়। একজন শিল্পী বিন্যাসের রূপরেখা তৈরি করেন। কিন্তু শিল্পীকে দিয়ে উৎকর্ষ মলাট তৈরি করিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব সম্পাদকের। গ্রন্থটির দাবি শিল্পীকে বােঝাবেন তিনি। লেখকের ভাবনার সঙ্গে মলাট সৃজনকে মেলাবার দায়িত্ব বহন করেন সম্পাদক।
একই কথা অনেক সময় ঘুরে ফিরে চলে আসে। যে কোন রচনার পক্ষে তা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত নয়। সজাগ সম্পাদক পুনরাবৃত্তি দেখলে সন্তর্পনে তা বাদ দিয়ে দেন। লেখক অজান্তে হয়তাে পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন। ছাপা হয়ে গেলে তা পাঠের পক্ষে হয়ে উঠবে বিরক্তিকর। সম্পাদক তাই সর্বতােভাবে চেষ্টা করেন পুনরাবৃত্তির দোষ থেকে লেখাকে মুক্ত করতে। পুনরাবৃত্তি যদি না থাকে তাহলে লেখার উৎকর্য অনেক পরিমাণে বেড়ে যায়।
সাহিত্য ও গবেষণাধর্মী যে কোন বই-এর জন্যই সম্পাদনা প্রয়ােজন। সম্পাদনার সময় যে পরিমার্জনা হয় তাতে একটি লেখা প্রকৃতভাবে মুদ্রণ উপযােগী হয়ে ওঠে। ছাপার মতাে করে একটি গ্রন্থকে প্রস্তুত করার জন্যই দক্ষ সম্পাদক প্রয়ােজন। একটি ভালাে প্রকাশনা মানেই সেখানে রয়েছে। সম্পাদকের সযত্ন প্রয়াস যা রচনাকে গুণগত দিক দিয়ে উন্নত করে তুলবে।