সারমর্ম ও বিষয়বস্তু : কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম বাংলাদেশে। তিনি নিজের জন্মভূমির নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভাের। তিনি তাঁর সমগ্র সত্তা, সমগ্র চেতনা ও সমগ্র ব্যক্তিবােধের সমন্বয় খুঁজেছেন এই বাংলায়। অত্যন্ত গভীর ও অন্তর্লীন তাঁর সন্ধান। পাঠ্য কবিতায় এক চিত্ররূপময় বাংলার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে। কবির ব্যক্তিসত্তার অভিনব প্রকাশ ঘটেছে এই কবিতায়।।
কবির জন্ম ধানসিঁড়ি নদীর তীরে বরিশাল শহরে। তিনি মৃত্যুর পরেও বারে বারে ফিরে আসতে চান এই বাংলায়। মানুষ হয়ে ফিরে না-এলেও অন্য কোনও প্রাণীর রূপে বা অন্য কোনও ভাবে। তাই তিনি বলেন শঙ্খচিল বা শালিখের বেশে
আসবেন। কার্তিকের নবান্নের দেশ এই বাংলাদেশে কুয়াশায় ভেসে ভেসে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন ভােরের কাক হয়ে। হয়তাে বা আসবেন হাঁস হয়ে। বাংলার নদী, মাঠ, ক্ষেত ভালোবেসে জলঙ্গি নদীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা সবুজ ডাঙায় কবি ফিরে। আসতে চান হয়তাে কোনও সুদর্শন হয়ে বা শিমূল ডালে বসে থাকা লক্ষ্মীপ্যাচা বা কোনও ধবল বকের বেশে। কবির বিশ্বাস জন্ম-জন্মান্তর ধরে তাকে পাওয়া যাবে এই বাংলায় বিভিন্ন বেশে।
কবিতার প্রেক্ষাপট: ১৯৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দিন এগুতে থাকলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্ব ছিল ধর্মীয় সীমারেখায় ভারতের দিখন্ডতা। তৎকালীন মুসলিম লীগের লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশের দাবি করেন। আর এই প্রেক্ষিতেই ভারতবর্ষ বিভক্ত হয় পাকিস্তান ও ভারতবর্ষে। সেই সঙ্গে পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করা হয়। যার ফলে সমস্ত বাংলায় দেখা দেয় এক করুন ছবি। বাংলায় হিন্দু মুসলমান থাকলেও সবাই ছিল বাঙালি, তাদের বসবাস ছিল একত্রে, ছিল এক সংস্কৃতি আর ছিল মিলন, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দেশভাগের ফলে অনেক মানুষ অনেক জায়গায় যেতে বাধ্য হয়। ছাড়তে বাধ্য হয়ে তাদের নিজ গ্রাম নিজ শহর, তাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
আর কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার আর বেদনার কথা তুলে ধরেছেন এই কবিতার মাধ্যমে।
মানুষের তার মাতৃভূমির প্রতি তাকে অফুরন্ত টান ও ভালোবাসা। তার মাতৃভূমি তাকে জড়িয়ে রাখে মাটির সঙ্গে মানুষের সঙ্গে। আর সেই ভালোবাসা সে কখনো ভুলতে পারে না। এইজন্য জীবনানন্দ দাশ বলেছেন আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়। যদিও মানুষকে তাদের প্রিয় ভূমি ছেড়ে যেতে হচ্ছে কিন্তু তার ভালোবাসার টান এই মাটির প্রতি, প্রকৃতির প্রতি তাকে হয়তো, আবারো নিয়ে আসবে এই বাংলায়।
আবার আসিব ফিরে (abar asibo fire
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর- ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এই সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।
Hridoy
আবার আসিব ফিরে
সারমর্ম ও বিষয়বস্তু : কবি জীবনানন্দ দাশের জন্ম বাংলাদেশে। তিনি নিজের জন্মভূমির নিসর্গ সৌন্দর্যে বিভাের। তিনি তাঁর সমগ্র সত্তা, সমগ্র চেতনা ও সমগ্র ব্যক্তিবােধের সমন্বয় খুঁজেছেন এই বাংলায়। অত্যন্ত গভীর ও অন্তর্লীন তাঁর সন্ধান। পাঠ্য কবিতায় এক চিত্ররূপময় বাংলার সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়েছে। কবির ব্যক্তিসত্তার অভিনব প্রকাশ ঘটেছে এই কবিতায়।।
কবির জন্ম ধানসিঁড়ি নদীর তীরে বরিশাল শহরে। তিনি মৃত্যুর পরেও বারে বারে ফিরে আসতে চান এই বাংলায়। মানুষ হয়ে ফিরে না-এলেও অন্য কোনও প্রাণীর রূপে বা অন্য কোনও ভাবে। তাই তিনি বলেন শঙ্খচিল বা শালিখের বেশে
আসবেন। কার্তিকের নবান্নের দেশ এই বাংলাদেশে কুয়াশায় ভেসে ভেসে কাঁঠাল ছায়ায় আসবেন ভােরের কাক হয়ে। হয়তাে বা আসবেন হাঁস হয়ে। বাংলার নদী, মাঠ, ক্ষেত ভালোবেসে জলঙ্গি নদীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলা সবুজ ডাঙায় কবি ফিরে। আসতে চান হয়তাে কোনও সুদর্শন হয়ে বা শিমূল ডালে বসে থাকা লক্ষ্মীপ্যাচা বা কোনও ধবল বকের বেশে। কবির বিশ্বাস জন্ম-জন্মান্তর ধরে তাকে পাওয়া যাবে এই বাংলায় বিভিন্ন বেশে।
কবিতার প্রেক্ষাপট: ১৯৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার দিন এগুতে থাকলে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্ব ছিল ধর্মীয় সীমারেখায় ভারতের দিখন্ডতা। তৎকালীন মুসলিম লীগের লীগের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য পৃথক স্বাধীন দেশের দাবি করেন। আর এই প্রেক্ষিতেই ভারতবর্ষ বিভক্ত হয় পাকিস্তান ও ভারতবর্ষে। সেই সঙ্গে পূর্ব বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তান ঘোষণা করা হয়। যার ফলে সমস্ত বাংলায় দেখা দেয় এক করুন ছবি। বাংলায় হিন্দু মুসলমান থাকলেও সবাই ছিল বাঙালি, তাদের বসবাস ছিল একত্রে, ছিল এক সংস্কৃতি আর ছিল মিলন, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। দেশভাগের ফলে অনেক মানুষ অনেক জায়গায় যেতে বাধ্য হয়। ছাড়তে বাধ্য হয়ে তাদের নিজ গ্রাম নিজ শহর, তাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
আর কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার মানুষের দুঃখ-দুর্দশার আর বেদনার কথা তুলে ধরেছেন এই কবিতার মাধ্যমে।
মানুষের তার মাতৃভূমির প্রতি তাকে অফুরন্ত টান ও ভালোবাসা। তার মাতৃভূমি তাকে জড়িয়ে রাখে মাটির সঙ্গে মানুষের সঙ্গে। আর সেই ভালোবাসা সে কখনো ভুলতে পারে না। এইজন্য জীবনানন্দ দাশ বলেছেন আবার আসিব ফিরে এই বাংলায়। যদিও মানুষকে তাদের প্রিয় ভূমি ছেড়ে যেতে হচ্ছে কিন্তু তার ভালোবাসার টান এই মাটির প্রতি, প্রকৃতির প্রতি তাকে হয়তো, আবারো নিয়ে আসবে এই বাংলায়।
আবার আসিব ফিরে (abar asibo fire
আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে,
হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে
কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।
হয়তো বা হাঁস হব- কিশোরীর- ঘুঙুর রহিবে লাল পায়
সারাদিন কেটে যাবে কলমীর গন্ধভরা জলে ভেসে ভেসে।
আবার আসিব আমি বাংলার নদী মাঠ ক্ষেত ভালোবেসে
জলাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেজা বাংলার এই সবুজ করুণ ডাঙ্গায়।
হয়তো দেখিবে চেয়ে সুদর্শন উড়িতেছে সন্ধ্যার বাতাসে।
হয়তো শুনিবে এক লক্ষ্মীপেঁচা ডাকিতেছে শিমূলের ডালে।
হয়তো খইয়ের ধান ছড়াতেছে শিশু এক উঠানের ঘাসে।
রূপসার ঘোলা জলে হয়তো কিশোর এক সাদা ছেঁড়া পালে
ডিঙ্গা বায়; রাঙ্গা মেঘ সাঁতরায়ে অন্ধকারে আসিতেছে নীড়ে
দেখিবে ধবল বক; আমারেই পাবে তুমি ইহাদের ভীড়ে।