ভূমিকা: আদিমকাল থেকে প্রাচীন সভ্যতা পর্যন্ত প্রাণী ও বৃক্ষরাজি কে বুকে ধরে পৃথিবী ক্রমশ সুন্দর হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে যেসব প্রাণী এসেছে তাদের মধ্যে নিজ গুণে, মানুষ হয়ে উঠেছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব। নিজের প্রয়োজনে মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ তাই মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে একে অপরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে মানুষ রচনা করেছে তার সুবিন্যস্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই সমাজে মানুষ একা নয় মানুষের কাছে রয়েছে তার সঙ্গেই মানুষেরা। মানুষের বাঁচার জন্য সমাজে এসেছে নানা আনুষঙ্গিক উপকরণ ।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আনুষঙ্গিক উপকরণ সমূহ । কিন্তু মনে রাখতে হবে মানুষের জন্য যে সবের সৃষ্টি সেগুলো যদি মানুষের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তবে তাদের সৃষ্টির সার্থকতা শুধু নষ্ট হবে না, সেই সঙ্গে মানুষের মানবিক গুরুত্ব ও রাস পাবে তাই কবি মন প্রকৃত তথ্য বুঝতে পেরে বলে উঠেছে
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
মানবতার আদর্শ: প্রত্যেক মানুষেরই দুটো পরিচয় আছে। এর মধ্যে একটি হলো সে ব্যক্তি মানুষ অপরটি সে সামাজিক মানুষ। সমাজবদ্ধ মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল, তাই সমাজে রয়েছে একতা, ভালোবাসা । কিন্তু মানুষ যখনই কূপমন্ডুক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে তখন এই ভালবাসাকে হারিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ জায়গা নেয়। কিন্তু মানুষকে বাঁচতে হবে প্রীতির বন্ধন প্রেমের ডোরে। যুগে যুগে তাই কবি শিল্পী প্রকৃতির গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে মানবপ্রেমের জয়গান করেছেন, এক জাতি এক প্রাণ গড়তে আহ্বান জানিয়েছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখনীতে তাই ধ্বনিত হয়েছে
‘মানুষে মানুষে নাইকো বিশেষ নিখিল জগৎ ব্রহ্মময়’
এই ব্রহ্মময় জগত কেই মানুষের সামনে তুলে ধরতে যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন ধর্ম গুরুগণ।
বিভেদ চেতনা: কিন্তু মানুষের দুর্ভাগ্য এই মহতী চিন্তাকে অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না । মানবকল্যাণ সর্বোত্তম মানবধর্ম সত্ত্বেও আত্মকেন্দ্রিক মানুষ স্বার্থপর হয়ে মানবসেবার মূলে কুঠারাঘাত করেন। তাদের লোভ, তাদের ঘৃণ্য নিঃস্বার্থপরতা সমাজের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলে । এইসব মানুষ ধর্মের মুখোশের আড়াল থেকে শুধু সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই নয় বরং ধর্মের ও ধ্বংস সাধন করে। ধর্মের নামে তারা শুরু করে ভন্ডামি, ধর্মের দোহাই দিয়ে এই সব মানুষের দল সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে শাসন-শোষণ চালায় ।তাই এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর বেজে উঠেছে।
ধর্ম ও মানবতা: ‘মানুষেরে ঘৃণা করি ও কারা কোরান বেদ বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি।’ ধর্ম মানবকল্যাণের নিমিত্তই। তাই ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষকে ছোট করা কখনও উচিত নয়। কারণ মানব ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই সত্য। কোন দেব, দেবী ধর্ম তার উপরে নেই। মানুষ এদের জন্ম দিয়েছে আবার মানুষের হাতেই এদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই কবি কালিদাস রায় বলেছেন।
“মানুষই দেবতা গড়ে দাড়ি কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর”
মানবের মূঢ় অপব্যয় ইতিহাসে কখনও শাশ্বত অধ্যায়ে রচনা করতে পারে না। তাই ভারতীয় পুরাণের শাস্ত্রে মানুষের জয়গান গাওয়া হয়েছে। কোরআনে, বাইবেলে মানব সন্তানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে । এই প্রেম, মৈত্রী, করুনার জয় গান করেছেন বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ-
“বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর, জীবে প্রেম করে যেইজন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”
স্বার্থ প্রণোদিত ভ্রান্ত আদর্শ: এইসব মূল মত মানুষের জ্ঞাত থাকলেও রাষ্ট্রনায়কেরা অনেক সময় বিপথে চালিত হন। তাই তারা অস্ত্রের ঝংকারে মানবধর্ম কে রক্ত লাঞ্চিত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু প্রকৃত রাজ ধর্ম ও মানব ধর্ম বিচ্ছিন্ন নয়। সম্রাট অশোক তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ, যার ধর্ম ছিল, শাক্য মুনির শান্তির পথে চালিত রাজধর্ম। মানুষের জন্যই রাষ্ট্র, মানব কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য । একতা বর্তমান কালে ও স্বীকৃত। তাই মহাত্মা গান্ধী, লুথার কিং, মাদার তেরেসা প্রমুখ মানব মানবী কোন মানবধর্ম সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন।
উপসংহার: মানুষে মানুষের অবাধ মিলন ই মানুষের চিরন্তন কাম্য। যাবতীয় ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্যত্বের উষ্ণতা সঞ্চারিত করে দিলেই আমাদের পৃথিবীতে সুখের স্বর্গ নেমে আসবে। ও এই কাজে ছাত্রদলকে ই এগোতে হবে। কারণ এ পথ কুসুম বিস্তীর্ণ পথ নয়। স্বার্থলোভী ভন্ডদের দুস্তর বাধা এ পথের পাথেয়। তাই যুগের সারথি ছাত্রদলকে ধরতে হবে সমাজের হাল। তারাই হবে সু মহান কর্মের কান্ডারী। ছাত্রদলের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর ‘এক জাতি এক প্রাণ’ আদর্শ সফল হয়ে উঠবে এই আমাদের কাম্য। বাংলাদেশেরই এক গ্রাম্য কবি রেনেসাঁস মানবতাবাদ বা কোন তথ্য দর্শনে পান্ডিত্য অর্জন না করেও এই চিরন্তন বাণী উচ্চারণ করে গেছেন। ” সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” সহজিয়া সাধক কবি চন্ডীদাসের এই মরমী উপলব্ধি সর্বযুগে অনুসরণীয়।
Hridoy
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই- কবি চন্ডিদাস
ভূমিকা: আদিমকাল থেকে প্রাচীন সভ্যতা পর্যন্ত প্রাণী ও বৃক্ষরাজি কে বুকে ধরে পৃথিবী ক্রমশ সুন্দর হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে যেসব প্রাণী এসেছে তাদের মধ্যে নিজ গুণে, মানুষ হয়ে উঠেছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব। নিজের প্রয়োজনে মানুষ গড়ে তুলেছে সমাজ তাই মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সমাজে একে অপরের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে মানুষ রচনা করেছে তার সুবিন্যস্ত সমাজ ব্যবস্থা। এই সমাজে মানুষ একা নয় মানুষের কাছে রয়েছে তার সঙ্গেই মানুষেরা। মানুষের বাঁচার জন্য সমাজে এসেছে নানা আনুষঙ্গিক উপকরণ ।ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে আনুষঙ্গিক উপকরণ সমূহ । কিন্তু মনে রাখতে হবে মানুষের জন্য যে সবের সৃষ্টি সেগুলো যদি মানুষের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তবে তাদের সৃষ্টির সার্থকতা শুধু নষ্ট হবে না, সেই সঙ্গে মানুষের মানবিক গুরুত্ব ও রাস পাবে তাই কবি মন প্রকৃত তথ্য বুঝতে পেরে বলে উঠেছে
‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।’
মানবতার আদর্শ: প্রত্যেক মানুষেরই দুটো পরিচয় আছে। এর মধ্যে একটি হলো সে ব্যক্তি মানুষ অপরটি সে সামাজিক মানুষ। সমাজবদ্ধ মানুষ একে অপরের উপর নির্ভরশীল, তাই সমাজে রয়েছে একতা, ভালোবাসা । কিন্তু মানুষ যখনই কূপমন্ডুক ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে তখন এই ভালবাসাকে হারিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ জায়গা নেয়। কিন্তু মানুষকে বাঁচতে হবে প্রীতির বন্ধন প্রেমের ডোরে। যুগে যুগে তাই কবি শিল্পী প্রকৃতির গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করে মানবপ্রেমের জয়গান করেছেন, এক জাতি এক প্রাণ গড়তে আহ্বান জানিয়েছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখনীতে তাই ধ্বনিত হয়েছে
‘মানুষে মানুষে নাইকো বিশেষ নিখিল জগৎ ব্রহ্মময়’
এই ব্রহ্মময় জগত কেই মানুষের সামনে তুলে ধরতে যুগে যুগে আবির্ভূত হয়েছেন ধর্ম গুরুগণ।
বিভেদ চেতনা: কিন্তু মানুষের দুর্ভাগ্য এই মহতী চিন্তাকে অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেন না । মানবকল্যাণ সর্বোত্তম মানবধর্ম সত্ত্বেও আত্মকেন্দ্রিক মানুষ স্বার্থপর হয়ে মানবসেবার মূলে কুঠারাঘাত করেন। তাদের লোভ, তাদের ঘৃণ্য নিঃস্বার্থপরতা সমাজের পরিবেশকে বিষাক্ত করে তুলে । এইসব মানুষ ধর্মের মুখোশের আড়াল থেকে শুধু সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই নয় বরং ধর্মের ও ধ্বংস সাধন করে। ধর্মের নামে তারা শুরু করে ভন্ডামি, ধর্মের দোহাই দিয়ে এই সব মানুষের দল সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে শাসন-শোষণ চালায় ।তাই এদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর বেজে উঠেছে।
ধর্ম ও মানবতা: ‘মানুষেরে ঘৃণা করি ও কারা কোরান বেদ বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি।’ ধর্ম মানবকল্যাণের নিমিত্তই। তাই ধর্মকে প্রাধান্য দিয়ে মানুষকে ছোট করা কখনও উচিত নয়। কারণ মানব ধর্মই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই সত্য। কোন দেব, দেবী ধর্ম তার উপরে নেই। মানুষ এদের জন্ম দিয়েছে আবার মানুষের হাতেই এদের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। তাই কবি কালিদাস রায় বলেছেন।
“মানুষই দেবতা গড়ে দাড়ি কৃপার পরে করে দেব মহিমা নির্ভর”
মানবের মূঢ় অপব্যয় ইতিহাসে কখনও শাশ্বত অধ্যায়ে রচনা করতে পারে না। তাই ভারতীয় পুরাণের শাস্ত্রে মানুষের জয়গান গাওয়া হয়েছে। কোরআনে, বাইবেলে মানব সন্তানকে মহিমান্বিত করা হয়েছে । এই প্রেম, মৈত্রী, করুনার জয় গান করেছেন বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ-
“বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর, জীবে প্রেম করে যেইজন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”
স্বার্থ প্রণোদিত ভ্রান্ত আদর্শ: এইসব মূল মত মানুষের জ্ঞাত থাকলেও রাষ্ট্রনায়কেরা অনেক সময় বিপথে চালিত হন। তাই তারা অস্ত্রের ঝংকারে মানবধর্ম কে রক্ত লাঞ্চিত করতে উদ্যত হয়। কিন্তু প্রকৃত রাজ ধর্ম ও মানব ধর্ম বিচ্ছিন্ন নয়। সম্রাট অশোক তার জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ, যার ধর্ম ছিল, শাক্য মুনির শান্তির পথে চালিত রাজধর্ম। মানুষের জন্যই রাষ্ট্র, মানব কল্যাণ রাষ্ট্রের লক্ষ্য । একতা বর্তমান কালে ও স্বীকৃত। তাই মহাত্মা গান্ধী, লুথার কিং, মাদার তেরেসা প্রমুখ মানব মানবী কোন মানবধর্ম সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন।
উপসংহার: মানুষে মানুষের অবাধ মিলন ই মানুষের চিরন্তন কাম্য। যাবতীয় ভেদবুদ্ধির ঊর্ধ্বে উঠে মনুষ্যত্বের উষ্ণতা সঞ্চারিত করে দিলেই আমাদের পৃথিবীতে সুখের স্বর্গ নেমে আসবে। ও এই কাজে ছাত্রদলকে ই এগোতে হবে। কারণ এ পথ কুসুম বিস্তীর্ণ পথ নয়। স্বার্থলোভী ভন্ডদের দুস্তর বাধা এ পথের পাথেয়। তাই যুগের সারথি ছাত্রদলকে ধরতে হবে সমাজের হাল। তারাই হবে সু মহান কর্মের কান্ডারী। ছাত্রদলের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর ‘এক জাতি এক প্রাণ’ আদর্শ সফল হয়ে উঠবে এই আমাদের কাম্য। বাংলাদেশেরই এক গ্রাম্য কবি রেনেসাঁস মানবতাবাদ বা কোন তথ্য দর্শনে পান্ডিত্য অর্জন না করেও এই চিরন্তন বাণী উচ্চারণ করে গেছেন। ” সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” সহজিয়া সাধক কবি চন্ডীদাসের এই মরমী উপলব্ধি সর্বযুগে অনুসরণীয়।