Bengali Forum Latest Questions

  1. This answer was edited.

    কবিতা : প্রাক্তন (জয় গোস্বামী) ঠিক সময়ে অফিসে যায়? ঠিক মতো খায় সকালবেলা? টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি? না ক্যান্টিনেই টিফিন করে? জামা কাপড় কে কেচে দেয়? চা করে কে আগের মতো? দুগগার মা ক’টায় আসে? আমায় ভোরে উঠতে হত সেই শার্টটা পরে এখন? ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা? নিজের তো সব ওই পছন্দ আমি অলিভ দিয়েছিলাম কোন রাস্Read more

    কবিতা : প্রাক্তন (জয় গোস্বামী)

    ঠিক সময়ে অফিসে যায়?
    ঠিক মতো খায় সকালবেলা?
    টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি?
    না ক্যান্টিনেই টিফিন করে?
    জামা কাপড় কে কেচে দেয়?
    চা করে কে আগের মতো?
    দুগগার মা ক’টায় আসে?
    আমায় ভোরে উঠতে হত
    সেই শার্টটা পরে এখন?
    ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা?
    নিজের তো সব ওই পছন্দ
    আমি অলিভ দিয়েছিলাম
    কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে?
    দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে
    শিবমন্দির, জানলা থেকে
    দেখতে পেতাম রিক্সা থামল
    অফিস থেকে বাড়িই আসে?
    নাকি সোজা আড্ডাতে যায়?
    তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও
    বন্ধুরা সব আসে এখন?
    টেবিলঢাকা মেঝের ওপর
    সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো
    গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায়
    টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে
    কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার
    পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি
    তখন তো আর হুঁশ থাকে না
    রাতবিরেতে কে আর দেখবে।
    কেন, ওই যে সেই মেয়েটা।
    যার সঙ্গে ঘুরত তখন।
    কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা?
    সে তো কবেই সরে এসেছে!
    বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি
    অত কান্ড সামলাবে কে!
    মেয়েটা যে গণ্ডগোলের
    প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম
    কে তাহলে সঙ্গে আছে?
    দাদা বৌদি? মা ভাইবোন!
    তিন কূলে তো কেউ ছিল না
    এক্কেবারে একলা এখন।
    কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়?
    কে ডেকে দেয় সকাল সকাল?
    রাত্তিরে কে দরজা খোলে?
    ঝক্কি পোহায় হাজার রকম?
    কার বিছানায় ঘুমোয় তবে
    কার গায়ে হাত তোলে এখন
    কার গায়ে হাত তোলে এখন?

     

    In Bengali Phonetic

     

    Thik shomoye office jay?

    thik moto khay shokalbela?

    Tifin baksho shonge neye ki?

    Na canteen e tiffin kore?

    jama kapod ke keche de?

    Cha kore ke ager moto?

    Durgar ma kotay aashe?

    Amay vore uthte hoto

    shei shirt ta pore ekhon?

    katkete shei nil rongta?

    Nijer to shob oi pochondo

    Ami olive diyechilam

    Kun rastay bari fere?

    Dukan ghorer ba pash diye

    Shibmondir, dekhte petam riksha thamlo

    Office theke bari aashe?

    na ki shuja adday jai?

    Tader bandhu, chaipashero

    bandura shob aashe ekhon?

    table dhaka mejer upar

    Shomosto ghor chai chorano

    Gelas goday bottle goday

    dolte dolte shute jacche

    Kintu bottle venge abar

    paye dhukle roktarokti.

    Tokhon to r hush trhake na

    rat birate ke ar dekhbe.

    Keno oi je meyeta

    jar shonge gurto tokhon.

    kun meyeta? Shei meyeta?

    She to kobe e shore esheche

    Besh hoyeche, uchit shasti

    Eto kando shamlabe ke

    Meyeta je gondoguler

    Prothom theke bujechilam

    Ke tahole shonge aache?

    dada boudi? Ma bhai bon!

    Tin kule to keu chilo na

    Ekebare ekhla ekhon

    Ke tahole bhat bede de?

    Ke deke de shokal shokal?

    rattire ke darja khule?

    Jhokki puhay hazar rokom?

    kar bichanay ghumay tobe

    Kar gaye hat tule ekhon

    Kar gaye hat tule ekhon?

     

    See less
  1. This answer was edited.

    মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় – জয় গোস্বামী বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো? বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি আলাপ হলো, বেণীমাধব, সRead more

    মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় – জয় গোস্বামী

    বেণীমাধব, বেণীমাধব, তোমার বাড়ি যাবো
    বেণীমাধব, তুমি কি আর আমার কথা ভাবো?
    বেণীমাধব, মোহনবাঁশি তমাল তরুমূলে
    বাজিয়েছিলে, আমি তখন মালতী ইস্কুলে
    ডেস্কে বসে অঙ্ক করি, ছোট্ট ক্লাসঘর
    বাইরে দিদিমণির পাশে দিদিমণির বর
    আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন শাড়ি
    আলাপ হলো, বেণীমাধব, সুলেখাদের বাড়ি

    বেণীমাধব, বেণীমাধব, লেখাপড়ায় ভালো
    শহর থেকে বেড়াতে এলে, আমার রঙ কালো
    তোমায় দেখে এক দৌড়ে পালিয়ে গেছি ঘরে
    বেণীমাধব, আমার বাবা দোকানে কাজ করে
    কুঞ্জে অলি গুঞ্জে তবু, ফুটেছে মঞ্জরী
    সন্ধেবেলা পড়তে বসে অঙ্কে ভুল করি
    আমি তখন নবম শ্রেণী, আমি তখন ষোল
    ব্রীজের ধারে, বেণীমাধব, লুকিয়ে দেখা হলো

    বেণীমাধব, বেণীমাধব, এতদিনের পরে
    সত্যি বলো, সে সব কথা এখনো মনে পড়ে?
    সে সব কথা বলেছো তুমি তোমার প্রেমিকাকে?
    আমি কেবল একটি দিন তোমার পাশে তাকে
    দেখেছিলাম আলোর নীচে; অপূর্ব সে আলো!
    স্বীকার করি, দুজনকেই মানিয়েছিল ভালো
    জুড়িয়ে দিলো চোখ আমার, পুড়িয়ে দিলো চে|খ
    বাড়িতে এসে বলেছিলাম, ওদের ভালো হোক।

    রাতে এখন ঘুমাতে যাই একতলার ঘরে
    মেঝের উপর বিছানা পাতা, জ্যো‍‍‌ৎস্না এসে পড়ে
    আমার পরে যে বোন ছিলো চোরাপথের বাঁকে
    মিলিয়ে গেছে, জানি না আজ কার সঙ্গে থাকে
    আজ জুটেছে, কাল কী হবে? – কালের ঘরে শনি
    আমি এখন এই পাড়ায় সেলাই দিদিমণি
    তবু আগুন, বেণীমাধব, আগুন জ্বলে কই?
    কেমন হবে, আমিও যদি নষ্ট মেয়ে হই?

    কবিতা সম্বন্ধে:

    মালতীবালা বালিকা বিদ্যালয় শৈশবের স্মৃতি মুখর একটি কবিতা। কবিতার কবি তার ফেলে আসা দিনগুলোকে আবারও স্মৃতিচারণ করেছেন। “মালতি বালা বিদ্যালয়” এবং বেনীমাধব কে ঘিরে তার কতই না স্মৃতি। বেণীমাধবের সঙ্গে কাটিয়ে আসা স্কুলের দিনগুলি কবিকে হাতছানি দিয়ে যায়। শহর থেকে আসা বেণীমাধব যে অপূর্ব সুন্দরী তার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন। এখন রাত্রে ঘুমাতে গেলে সেই পুরনো স্মৃতিগুলো তার চোখের সামনে ভেসে যায় এবং বিভিন্ন প্রশ্ন তাকে আন্দোলিত করে।

    See less
  1. This answer was edited.

    পাগলী, তোমার সঙ্গে —জয় গোস্বামী পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু'কদম। অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল বসবে না বাড়িতে তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙRead more

    পাগলী, তোমার সঙ্গে —জয় গোস্বামী

    পাগলী, তোমার সঙ্গে ভয়াবহ জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোবালি কাটাব জীবন
    এর চোখে ধাঁধা করব, ওর জল করে দেব কাদা
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ঢেউ খেলতে যাব দু’কদম।
    অশান্তি চরমে তুলব, কাকচিল
    বসবে না বাড়িতে
    তুমি ছুঁড়বে থালা বাটি, আমি ভাঙব কাঁচের বাসন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে বঙ্গভঙ্গ জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ৪২ কাটাব জীবন।

    মেঘে মেঘে বেলা বাড়বে,
    ধনে পুত্রে লক্ষ্মী লোকসান লোকাসান
    পুষিয়ে তুমি রাঁধবে মায়া প্রপন্ঞ্চ
    ব্যন্জ্ঞন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে দশকর্ম জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার
    সঙ্গে দিবানিদ্রা কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে ঝোলভাত জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে মাংসরুটি কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে নিরক্ষর জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে চার অক্ষর কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে বই দেখব
    প্যারামাউন্ট হলে
    মাঝে মাঝে মুখ
    বদলে একাডেমি রবীন্দ্রসদন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে নাইট্যশালা জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে কলাকেন্দ্র
    কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে বাবুঘাট জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে দেশপ্রিয় কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে সদা সত্য জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘কী মিথ্যুক’
    কাটাব জীবন।

    এক হাতে উপায় করব,
    দুহাতে উড়িয়ে দেবে তুমি
    রেস খেলব জুয়া ধরব ধারে কাটাব সহস্র রকম
    লটারি,
    তোমার সঙ্গে ধনলক্ষ্মী জীবন
    কাটাব
    লটারি, তোমার সঙ্গে মেঘধন কাটাব জীবন।

    দেখতে দেখতে পূজা আসবে,
    দুনিয়া চিত্কার করবে সেল
    দোকানে দোকানে খুঁজব
    রূপসাগরে অরূপরতন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে পূজাসংখ্যা জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে রিডাকশনে কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে কাঁচা প্রুফ জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ফুলপেজ কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে লে আউট জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে লে হালুয়া কাটাব জীবন।

    কবিত্ব ফুড়ুত্ করবে, পিছু পিছু ছুটব না হা করে
    বাড়ি ফিরে লিখে ফেলব বড়ো গল্প
    উপন্যাসোপম
    পাগলী, তোমার সঙ্গে কথাশিল্প জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে বকবকম কাটাব জীবন।

    নতুন মেয়ের সঙ্গে দেখা করব
    লুকিয়ে চুরিয়ে
    ধরা পড়ব তোমার হাতে,
    বাড়ি ফিরে হেনস্তা চরম
    পাগলী, তোমার
    সঙ্গে ভ্যাবাচ্যাকা জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে হেস্তনেস্ত
    কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে পাপবিদ্ধ জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ধর্মমতে কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে পূজা বেদি জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে মধুমালা কাটাব জীবন।

    দোঁহে মিলে টিভি দেখব, হাত
    দেখাতে যাব জ্যোতিষীকে
    একুশটা উপোস থাকবে, ছাব্বিশটা ব্রত উদযাপন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ভাড়া বাড়ি জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে নিজ ফ্ল্যাট
    কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার
    সঙ্গে শ্যাওড়াফুলি জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে শ্যামনগর কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে রেল রোকো জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে লেট স্লিপ কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে আশাপূর্ণা জীবন কাটাব
    আমি কিনব ফুল, তুমি ঘর
    সাজাবে যাবজ্জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় জওয়ান জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে জয় কিষান কাটাব জীবন।

    সন্ধ্যেবেলা ঝগড়া হবে, হবে দুই
    বিছানা আলাদা
    হপ্তা হপ্তা কথা বন্ধ
    মধ্যরাতে আচমকা মিলন
    পাগলী, তোমার
    সঙ্গে ব্রক্ষ্মচারী জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে আদম ইভ কাটাব জীবন।

    পাগলী, তোমার সঙ্গে রামরাজ্য জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার
    সঙ্গে প্রজাতন্ত্রী কাটাব জীবন
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ছাল চামড়া জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে দাঁতে দাঁত কাটাব জীবন।

    এর গায়ে কনুই মারব রাস্তা করব
    ওকে ধাক্কা দিয়ে
    এটা ভাঙলে ওটা গড়ব, ঢেউ খেলব দু দশ কদম
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ধুলোঝড় জীবন কাটাব
    পাগলী, তোমার সঙ্গে ‘ভোর ভয়োঁ’ কাটাব জীবন।

    In Bengali phonetic

    Pagli, Tomar shonge voyabhoho jibon Katabo
    Pagli, Tomar shonge dhulibalu katabo jibon
    Er choke dhada korbo, Or jol kore debo kada
    Pagli, Tomar shonge cholte jabo du kodom
    Oshanti chorobe tulbo, Kakchil boshbe na barite
    tumi churbe thala bati, ami bhangbo kacher bashon
    Pagli, Tomar shonge bongovongo jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge 42 katabo jibon.

    Meghe Meghe bela badbe,
    dhone putre lokkhi lokshan lokshan
    Pushiye tumi radhbe maya proponcho benjon
    Pagli, Tomar shonge doshkormo jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge dibaratri katabo jibon

    Pagli, Tomar shonge jhulbhat jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge mangsho ruti katabo jibon
    Pagli, Tomar shonge nirokkhor jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge char okkhor katabo jibon

    Pagli, Tomar shongeboi dekhbo paramount halle
    majhe majhe mukh badle academy Rabindra shadan
    Pagli, Tomar shonge nattyoshala jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge kolakendra katabo jibon

    Pagli, Tomar shonge babughat jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge deshprio katabo jibon
    Pagli, Tomar shonge shoda shoyttyo  jibon katabo
    Pagli, Tomar shonge ki mitthuk katabo jibon

    Ek hate upay korbo, du hate udiye debe tumi
    Race khelbo, juwa dhorbo dhare katabo shohosro rokom lotteri
    Tumar shonge dhon lokkhi jibon katabo
    Lotteri, Tumar shonge meghdhon katabo jibon

    See less
  1. কবিতা : নূন (জয় গোস্বামী) আমরা তো অল্পে খুশি, কী হবে দুঃখ করে? আমাদের দিন চলে যায় সাধারণ ভাতকাপড়ে। চলে যায় দিন আমাদের অসুখে ধারদেনাতে রাত্তিরে দুভায়ে মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে। সবদিন হয়না বাজার, হলে হয় মাত্রাছাড়া – বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা। কিন্তু পুঁতব কোথায়? ফুল কি হবেই তাতে? সে অRead more

    কবিতা : নূন (জয় গোস্বামী)

    আমরা তো অল্পে খুশি,
    কী হবে দুঃখ করে?
    আমাদের দিন চলে যায়
    সাধারণ ভাতকাপড়ে।

    চলে যায় দিন আমাদের
    অসুখে ধারদেনাতে
    রাত্তিরে দুভায়ে মিলে
    টান দিই গঞ্জিকাতে।

    সবদিন হয়না বাজার,
    হলে হয় মাত্রাছাড়া –
    বাড়িতে ফেরার পথে
    কিনে আনি গোলাপচারা।

    কিন্তু পুঁতব কোথায়?
    ফুল কি হবেই তাতে?
    সে অনেক পরের কথা
    টান দিই গঞ্জিকাতে।

    আমরা তো অল্পে খুশি,
    কী হবে দু : খ করে?
    আমাদের দিন চলে যায়
    সাধারণ ভাতকাপড়ে।

    মাঝে মাঝে চলেও না দিন
    বাড়ি ফিরি দুপুররাতে ;
    খেতে বসে রাগ চড়ে যায়
    নুন নেই ঠান্ডা ভাতে।

    রাগ চড়ে মাথায় আমার
    আমি তার মাথায় চড়ি,
    বাপব্যাটা দুভায়ে মিলে
    সারা পাড়া মাথায় করি।

    করি তো কার তাতে কী?
    আমরা তো সামান্য লোক।
    আমাদের ভাতের পাতে
    লবণের ব্যবস্থা হোক।

    কবিতা সম্বন্ধে:

    জয় গোস্বামীর লিখিত ‘নুন’ কবিতা সমাজের খেটে খাওয়া, গরিব শ্রেণীর মানুষের কবিতা। কবিতায় স্থান পেয়েছে তাদের দুঃখের কথা, তাদের অভাবের কথা। এই মানুষদের বেশি চাওয়া পাওয়া নেই । তারা অল্পতেই খুশি তাদের নেই কোন অভিযোগ অনেক বেশি পাওয়ার। এদের জীবন অতি সাধারন তারা সম্পূর্ণ দিন পরিশ্রম করে যা উপার্জন করে তাহাতেই তাদের সংসার চলে। অনেকদিন তারা অনেক কিছু ক্রয় করতে পারেনা তাদের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে। তাদের বাড়ি ফিরতে হয় অনেক কিছু না নিয়ে।

    যদিও তাহারা অভাবে ভোগে কিন্তু তাদের নেশা থেমে থাকে না। আর্থিক ভাবে সচ্ছল না হলে তাদের বিলাসিতার ইচ্ছে হয়। তাদের ইচ্ছে হয় কখনো বা একটি গোলাপ ফুলের চারা লাগানোর কিন্তু লাগাবার জায়গাটা ও তাদের নেই।

    অভাবের টানে অনেক সময় তাদের ঠান্ডা ভাতে নন টুকু ও জোটে না। তখনই শুরু হয় উৎপাত এবং এই উৎপাতের শব্দ শুনতে পায় সমস্ত পাড়ার মানুষ। কিন্তু ইহাতে তাদের কোন লজ্জা বোধ হয় না কারণ কেহই তাহাদের কথা ভাবে না। তাদের জীবন যাপনের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও কেউই তাদের দেয়নি। তাই তাদের কাতর আবেদন যে তাদের নুনের ব্যবস্থা হোক। ‌ অর্থাৎ তাহাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব গুছিয়ে যাক।

    See less
  1. বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তাঁর রচনায়, কাব্যে বার বার ফুটে উঠেছে প্রকৃতির সুন্দর্য আর মাদুর্য।বর্ষাকাল বা বৃষ্টির দিনের পরিবেশ সবাইকে ছুঁয়ে যায় দিয়ে যায় এক বিশেষ আবেদন। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনাবলীতে এই বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে একটি স্থান দিয়েছেন।তিনি রচনা করেছেন অনেক গান ও কবিতা যাRead more

    বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ছিলেন একজন প্রকৃতি প্রেমিক। তাঁর রচনায়, কাব্যে বার বার ফুটে উঠেছে প্রকৃতির সুন্দর্য আর মাদুর্য।বর্ষাকাল বা বৃষ্টির দিনের পরিবেশ সবাইকে ছুঁয়ে যায় দিয়ে যায় এক বিশেষ আবেদন। তাই রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনাবলীতে এই বিষয়টিকে বিশেষ ভাবে একটি স্থান দিয়েছেন।তিনি রচনা করেছেন অনেক গান ও কবিতা যাহা আজও প্রতিটি প্রকৃতি প্রেমী হৃদয়কে নাড়া দেয়। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি গান এখানে দেয়া হলো।

    ১ম টি তাঁর ‘প্রকৃতি’ কব্যগ্রন্থ নেয়া।

    আজ বারি ঝরে ঝরঝর ভরা বাদরে,
    আকাশ-ভাঙা আকুল ধারা কোথাও না ধরে॥
    শালের বনে থেকে থেকে ঝড় দোলা দেয় হেঁকে হেঁকে,
    জল ছুটে যায় এঁকে বেঁকে মাঠের ‘পরে।
    আজ মেঘের জটা উড়িয়ে দিয়ে নৃত্য কে করে॥
    ওরে বৃষ্টিতে মোর ছুটেছে মন, লুটেছে এই ঝড়ে–
    বুক ছাপিয়ে তরঙ্গ মোর কাহার পায়ে পড়ে।
    অন্তরে আজ কী কলরোল, দ্বারে দ্বারে ভাঙল আগল–
    হৃদয়-মাঝে জাগল পাগল আজি ভাদরে।
    আজ এমন ক’রে কে মেতেছে বাহিরে ঘরে॥

    ২য় টি খুব বেশি বিখ্যাত একটি গান এটি ও ‘প্রকৃতি’ কব্যগ্রন্থ নেয়া।

    আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
    জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥
    এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
    মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
    মেঘমল্লার সারা দিনমান।
    বাজে ঝরনার গান।

    মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা– মন চায়
    মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥

    ৩য় গান ও টি খুব বেশি চর্চিত একটি গান এটি ও ‘প্রকৃতি’ কব্যগ্রন্থ নেয়া।

    পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে
    পাগল আমার মন জেগে ওঠে॥
    চেনাশোনার কোন্‌ বাইরে যেখানে পথ নাই নাই রে
    সেখানে অকারণে যায় ছুটে॥

    ঘরের মুখে আর কি রে কোনো দিন সে যাবে ফিরে।
    যাবে না, যাবে না–
    দেয়াল যত সব গেল টুটে॥

    বৃষ্টি-নেশা-ভরা সন্ধ্যাবেলা কোন্‌ বলরামের আমি চেলা,
    আমার স্বপ্ন ঘিরে নাচে মাতাল জুটে–
    যত মাতাল জুটে।
    যা না চাইবার তাই আজি চাই গো,

    যা না পাইবার তাই কোথা পাই গো।
    পাব না, পাব না,
    মরি অসম্ভবের পায়ে মাথা কুটে॥

    ৪ য় গান টি তাঁর প্রসিদ্ধ কাব্যগ্রন্থ ‘সোনার তরী’ থেকে নেয়া ।

    গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
    রাশি রাশি ভারা ভারা
    ধান কাটা হল সারা,
    ভরা নদী ক্ষুরধারা
    খরপরশা।
    কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
    একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
    চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
    পরপারে দেখি আঁকা
    তরুছায়ামসীমাখা
    গ্রামখানি মেঘে ঢাকা
    প্রভাতবেলা–
    এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
    গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
    দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
    ভরা-পালে চলে যায়,
    কোনো দিকে নাহি চায়,
    ঢেউগুলি নিরুপায়
    ভাঙে দু-ধারে–
    দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।

    ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,
    বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
    যেয়ো যেথা যেতে চাও,
    যারে খুশি তারে দাও,
    শুধু তুমি নিয়ে যাও
    ক্ষণিক হেসে
    আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
    যত চাও তত লও তরণী-‘পরে।
    আর আছে?– আর নাই, দিয়েছি ভরে।
    এতকাল নদীকূলে
    যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
    সকলি দিলাম তুলে
    থরে বিথরে–
    এখন আমারে লহ করুণা করে।
    ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই– ছোটো সে তরী
    আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
    শ্রাবণগগন ঘিরে
    ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
    শূন্য নদীর তীরে
    রহিনু পড়ি–
    যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।

    ৫ম টি ও তাঁর ‘প্রকৃতি’ কব্যগ্রন্থ নেয়া।

    মন মোর মেঘের সঙ্গী,
    উড়ে চলে দিগ্‌দিগন্তের পানে
    নিঃসীম শূন্যে শ্রাবণবর্ষণসঙ্গীতে
    রিমিঝিম রিমিঝিম রিমিঝিম॥
    মন মোর হংসবলাকার পাখায় যায় উড়ে
    ক্বচিৎ ক্বচিৎ চকিত তড়িত-আলোকে।
    ঝঞ্জনমঞ্জীর বাজায় ঝঞ্ঝা রুদ্র আনন্দে।
    কলো-কলো কলমন্দ্রে নির্ঝরিণী
    ডাক দেয় প্রলয়-আহ্বানে॥
    বায়ু বহে পূর্বসমুদ্র হতে
    উচ্ছল ছলো-ছলো তটিনীতরঙ্গে।
    মন মোর ধায় তারি মত্ত প্রবাহে
    তাল-তমাল-অরণ্যে
    ক্ষুব্ধ শাখার আন্দোলনে॥

    See less
  1. This answer was edited.

    তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা  কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু “হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে” শীর্ষক কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি কবির ‘বন্দিশিবির থেকে’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেক্ষাপটে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণRead more

    তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা  কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু

    “হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে” শীর্ষক কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি কবির ‘বন্দিশিবির থেকে’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেক্ষাপটে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা। কবি শামসুর রহমান এই কবিতাটি তে স্বাধীনতা যে একটি মৌলিক অধিকার এবং পরাধীন বাংলাদেশ বাসী তাদের এই মৌলিক অধিকারের জন্য যে কিভাবে প্রতীক্ষারত তাহার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও আশা এবং জাতির আত্ম বলিদান এর কথা ছন্দের মধ্যে ফুটে উঠেছে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে।

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
    তোমাকে পাওয়ার জন্যে
    আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
    আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

    স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য মানুষ কিভাবে তাদের আপনজনকে হারিয়েছে এবং কিভাবে তারা অপদস্থ হয়েছে তার একটি বর্ণনা এ কবিতা থেকে পাওয়া যায়। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বাসী দেখেছি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। শহরের পর শহর গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি সৈন্যরা চালিয়েছে হত্যাযজ্ঞ। চারিদিকে বয়েছে রক্তের গঙ্গা। প্রাণ দিয়েছে শত সহস্র মানুষ।

    তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
    তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার
    ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

    বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাকিনা বিবির মতো গ্রামীণ নারীর সহায়-সম্বল বিসর্জিত হয়েছে, হরিদাসী হয়েছে স্বামী হারা নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। ছাত্ররা হত্যা হয়েছে ছাত্রাবাসে শহরে চলছে গণহত্যা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রাম লোকালয়ে।

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
    সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।

    মানুষ প্রতিবাদ করেছে তা নয় পশুপাখিরাও শামিল হয়েছে এই প্রতিবাদে। আর্তনাদ করেছে কুকুরও। মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক থেকে শুরু করে, সাধারণ মানুষ সব শ্রেণীর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দিয়েছেন আত্মত্যাগ।স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার জন্য মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে তার সমস্ত প্রাণ দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে।

    তোমার জন্যে,
    সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
    কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
    মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
    গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
    রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
    এখন পোকার দখলে
    আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
    সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
    একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –

    মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান কবির মনে আশার আলো জাগিয়েছে তাই কবির দৃঢ় বিশ্বাস যে তাদের এই আত্ম বলিদান এবং আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না। স্বাধীনতা আসবেই অবশ্যই আসবে। একদিন বাঙালি তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিবেই।

    পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
    ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
    মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
    এই বাংলায়
    তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

    See less
  1. তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা- শামসুর রাহমান তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ? আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো, সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর। তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা, শহরের বুকে জলপাইয়েরRead more

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা- শামসুর রাহমান

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
    তোমাকে পাওয়ার জন্যে
    আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
    আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?

    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
    সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলো
    দানবের মত চিৎকার করতে করতে
    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস রাইফেল
    আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
    তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
    তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার
    ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
    তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
    অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।

    তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
    আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
    আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুডো
    উদাস দাওয়ায় ব’সে আছেন – তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্ণের
    দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নডছে চুল।
    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
    মোল্লাবাডির এক বিধবা দাঁডিয়ে আছে
    নডবডে খুঁটি ধ’রে দগ্ধ ঘরের।

    স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
    হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
    বসে আছে পথের ধারে।
    তোমার জন্যে,
    সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
    কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
    মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
    গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
    রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
    এখন পোকার দখলে
    আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
    সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
    একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –
    সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।

    পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
    ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
    মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
    এই বাংলায়
    তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।

    কবিতা সম্মন্দে

    “হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে” শীর্ষক কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি কবির ‘বন্দিশিবির থেকে’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেক্ষাপটে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা। কবি শামসুর রহমান এই কবিতাটি তে স্বাধীনতা যে একটি মৌলিক অধিকার এবং পরাধীন বাংলাদেশ বাসী তাদের এই মৌলিক অধিকারের জন্য যে কিভাবে প্রতীক্ষারত তাহার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও আশা এবং জাতির আত্ম বলিদান এর কথা ছন্দের মধ্যে ফুটে উঠেছে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে। স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য মানুষ কিভাবে তাদের আপনজনকে হারিয়েছে এবং কিভাবে তারা অপদস্থ হয়েছে তার একটি বর্ণনা এ কবিতা থেকে পাওয়া যায়। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বাসী দেখেছি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। শহরের পর শহর গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি সৈন্যরা চালিয়েছে হত্যাযজ্ঞ। চারিদিকে বয়েছে রক্তের গঙ্গা। প্রাণ দিয়েছে শত সহস্র মানুষ।
    বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাকিনা বিবির মতো গ্রামীণ নারীর সহায়-সম্বল বিসর্জিত হয়েছে, হরিদাসী হয়েছে স্বামী হারা নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। ছাত্ররা হত্যা হয়েছে ছাত্রাবাসে শহরে চলছে গণহত্যা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রাম লোকালয়ে।মানুষের প্রতিবাদ করেছে তা নয় পশুপাখিরাও শামিল হয়েছে এই প্রতিবাদে। আর্তনাদ করেছে কুকুরও। মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক থেকে শুরু করে, সাধারণ মানুষ সব শ্রেণীর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দিয়েছেন আত্মত্যাগ।স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার জন্য মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে তার সমস্ত প্রাণ দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে।মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান কবির মনে আশার আলো জাগিয়েছে তাই কবির দৃঢ় বিশ্বাস যে তাদের এই আত্ম বলিদান এবং আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না। স্বাধীনতা আসবেই অবশ্যই আসবে। একদিন বাঙালি তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিবেই।

    See less
  1. This answer was edited.

    শীতের সকাল বা একটি শীতের সকালের বর্ণনা ভূমিকা : শীতকাল বলতে পৌষ ও মাঘ মাসকে বুঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে শীতের আগমন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। পৌষের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়ে উঠলেও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। সাধারণত এ সময় ফসল কাটা হলে চারিদিকে এক উৎসব মুখর আবহাওয়া লক্ষ্য করাRead more

    শীতের সকাল বা একটি শীতের সকালের বর্ণনা

    ভূমিকা : শীতকাল বলতে পৌষ ও মাঘ মাসকে বুঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে শীতের আগমন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। পৌষের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়ে উঠলেও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। সাধারণত এ সময় ফসল কাটা হলে চারিদিকে এক উৎসব মুখর আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায় । শীতের সময় কাবু হয়ে পড়লেও শীতের সকালে রয়েছে এক বিশেষ আমেজ । এজন্যেই শীতকালের সকলগুলি সবার কাছে পছন্দনীয় ।

    শীতের সকালের বর্ণনা : শীতের সকালের কল্পনা ঘন কুয়াশা আর জড়ো সড়ো করা আবহাওয়া ছাড়া অসম্ভব । কুয়াশা ঘন চাদরের ফাক দিয়ে উকি মেরে ঘােষণা করে সে তার হিম-শীতল আগমনী বার্তা। প্রকৃতির সর্বত্র দেখা যায় এ ধরনের আঁকালাে শুষ্কতার জমজমাট রেশ। প্রকৃতি তার রূপ-রস-বর্ণ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সন্ন্যাসব্রত পালনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পশুপাখি ও জীবজন্তুর জীবন হয়ে ওঠে পাণ্ডুর ও বিবর্ণ। এর মাঝে নীরবে পদচারণা করে শুভ্রসুন্দর আর নির্মল পবিত্রতা। শীতের রাত অত্যন্ত দীর্ঘ, যেন শেষ হতে চায় না। তাই কাক ডাকা ভাের হতে সবাই অপেক্ষা করে একটু মিষ্টি মধুর সূর্যালােকের পরশের জন্য। কিন্তু কুয়াশার ঘন প্রাচীর ভেদ করে ওকে ভীষণ বেগ পেতে হয় একটু একটু আলােক ছড়ানাের জন্যে।

    গ্রাম্য শীতের সকাল: গ্রামে শীতের সকাল গুলি হয় অনন্য। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দেয় চারিপাশের আবহাওয়ায়। ভুলগুলোসকালগুলো হয় ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন, মাঠের অপরপ্রান্তে তাকালে বিস্তীর্ণ সাদা রাশি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। কিন্তু এই ঠান্ডা উপেক্ষা করেও কৃষক তার মাঠের দিকে এগিয়ে যায়। গ্রামের মানুষেরা ঠান্ডার কবল থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহায়। তৈরি হয় নানা ধরনের খাবার বিশেষ করে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হয় অনেক সুমিষ্ট পিঠা পুলি।গ্রামে মানুষ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রোদের আলোয় দাঁড়িয়ে উষ্ণতার আমেজ নেয়।

    শহরাঞ্চলে শীতের সকাল: গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলের চিত্র হয় ভিন্ন। তুলনামূলকভাবে শহরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ কম হয়। গ্রামের মতো মানুষ শহরাঞ্চলে সূর্যের আলোয় উষ্ণতার আমেজ নেয়ার সুযোগ পায় না। অনেককেই ঘরের মধ্যে হিটার বা অন্য যন্ত্র চালিয়েই শীত নিবারণের চেষ্টা করে। শীতের সকালে শহরাঞ্চলে বিভিন্ন তাজা
    শাকসবজি দিয়ে বাজার সাজানো হয় এবং শহুরে মানুষেরা ছুটে চলে বাজারের উদ্দেশ্যে।

    উপসংহার: কুয়াশাঘেরা এক মধুর দৃশ্য নিয়ে উপস্থিত হয় শীতের সকাল। সকালবেলা সূর্য তার উষ্ণ আলোয়, শিশির ভেজা পাতায়, নানা রকম সুস্বাদু খাবার সব মিলিয়ে আমাদেরকে দিয়ে যায় এক অনন্য আমেজ। তাই শীতের সকালের আনন্দ অন্যান্য ঋতুর সকালের তুলনায় ভিন্ন ও মাধুর্য।

    See less
  1. কিশোর (গোলাম মোস্তফা ) আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন-নন্দনে, ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে। লক্ষ আশা অন্তরে ঘুমিয়ে আছে মন্তরে ঘুমিয়ে আছে বুকের ভাষা পাঁপড়ি-পাতার বন্ধনে। সাগর-জলে পাল তুলে দে' কেউ বা হবো নিরুদ্দেশ, কলম্বাসের মতই বা কেউ পৌঁছে যাবো নূতন দেশ। জাগবে সাড়া বিশ্বময় এই বাঙালি নিRead more

    কিশোর (গোলাম মোস্তফা )

    আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন-নন্দনে,

    ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে।

    লক্ষ আশা অন্তরে

    ঘুমিয়ে আছে মন্তরে

    ঘুমিয়ে আছে বুকের ভাষা পাঁপড়ি-পাতার বন্ধনে।

    সাগর-জলে পাল তুলে দে’ কেউ বা হবো নিরুদ্দেশ,

    কলম্বাসের মতই বা কেউ পৌঁছে যাবো নূতন দেশ।

    জাগবে সাড়া বিশ্বময়

    এই বাঙালি নিঃস্ব নয়,

    জ্ঞান-গরিমা শক্তি সাহস আজও এদের হয়নি শেষ।

    কেউ বা হবো সেনানায়ক গড়বো নূতন সৈন্যদল,

    সত্য-ন্যায়ের অস্ত্র ধরি, নাই বা থাকুক অন্য বল।

    দেশমাতাকে পূজবো গো,

    ব্যথীর ব্যথা বুঝবো গো,

    ধন্য হবে দেশের মাটি, ধন্য হবে অন্নজল।

    ভবিষ্যতের লক্ষ আশা মোদের মাঝে সন্তরে,

    ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।

    আকাশ-আলোর আমরা সুত,

    নূত বাণীর অগ্রদূত,

    কতই কি যে করবো মোরা-নাইকো তার অন্ত-রে।

    See less