Bengali Forum Latest Questions

  1. This answer was edited.

    সিঁড়ি (সুকান্ত ভট্টাচার্য ) কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু সুকান্ত ভট্টাচার্য দুঃখী-দরিদ্র সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখেছেন অধিকাংশ কবিতা। এসব কবিতার মধ্যে কিছু কবিতা আছে যা রূপকধর্মী। এগুলোতে অন্য বস্তুর রূপক-প্রতীকে কবি দরিদ্র-নিঃস্ব মানুষের বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এসব কবিতার মধ্যে সিঁড়ি, একটি মোরগের কাহRead more

    সিঁড়ি (সুকান্ত ভট্টাচার্য ) কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু

    সুকান্ত ভট্টাচার্য দুঃখী-দরিদ্র সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখেছেন অধিকাংশ কবিতা। এসব কবিতার মধ্যে কিছু কবিতা আছে যা রূপকধর্মী। এগুলোতে অন্য বস্তুর রূপক-প্রতীকে কবি দরিদ্র-নিঃস্ব মানুষের বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এসব কবিতার মধ্যে সিঁড়ি, একটি মোরগের কাহিনী, কলম, সিগারেট, দেশলাই কাঠি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব কবিতার রূপকের আড়ালে সুকান্ত তার প্রতিবাদী আওয়াজ কে তুলে ধরেছেন।

    “সিঁড়ি” কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সিঁড়ি কে দরিদ্র শ্রেণীর রূপক হিসাবে দেখিয়েছেন। যেভাবে সিঁড়িতে করে মানুষ উপরের দিকে উঠে যায় তেমনি সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষেরা বা বিত্তশালী মানুষেরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের কে শোষণ করে উপরে উঠে। তারপর আর ফিরে তাকায় না এই মানুষগুলোর দিকে। তাই যেভাবে একটি সিঁড়ি ক্ষতবিক্ষত হয় এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ গুলি শোষিত হয় নিরন্তর। যার ফলে তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জীবনে লেগেই থাকে।

    তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
    পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।

    যেভাবে সিঁড়ির আবরণ নষ্ট হলে কার্পেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয় ঠিক সেইরকম দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের দুঃখগুলোকে কেউই প্রাধান্য দেয় না। দরিদ্র মানুষগুলি কোন প্রতিবাদ করে না বলেই বিত্তশালীরা তাদের শোষণ চালিয়ে যায় অবিরত। মজুররা যাতে প্রতিবাদী হয়ে না ওঠে এবং এই প্রতিবাদ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই সব সময় এদের গলা চাপিয়ে রাখা হয়। তাই এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশা কেউই দেখতে পায় না।

    আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
    তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।

    কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য হুংকার ছেড়ে বলছেন এই অত্যাচার আর বেশিদিন টিকবে না। বিশ্ববাসীর কাছে আর চাপা থাকবে না চিরদিন।এই নির্মম অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশার সমাপ্তি ঘটতেই হবে যেমনটা হয়েছিল সম্রাট হুমায়ুনের।

    চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
    চাপা থাকবে না।
    আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।

    এই কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সমাজের দুইটি শ্রেণী ধনী এবং দরিদ্রের কথা উল্লেখ করেছেন। ধনীদের অত্যাচার আর শোষণের জন্যই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের আজ এই অবস্থা। কেউ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের হাল ধরতে চায় না। তাদের উন্নতির কথা কেউ চিন্তা করে না। তাদেরকে শুধুমাত্র কাজে লাগিয়ে যায় বিত্তশালীরা। এতে করে সমাজে সৃষ্টি হয় পার্থক্য, দ্বন্দ্ব। কিন্তু কবি সর্বশেষে বলেছেন যে বিত্তশালীর অত্যাচার ও অন্যায় চিরকাল চাপা থাকবে না বরং এর সমাপ্তি ঘটবে, বিত্তশালীদের পদস্খলন অনিবার্য।

    ____________

    সিঁড়ি

    আমরা সিঁড়ি,
    তোমরা আমাদের মাড়িয়ে
    প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,
    তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে;
    তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
    পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।

    তোমরাও তা জানো,
    তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষত
    ঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকে
    আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
    তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।

    তবুও আমরা জানি,
    চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
    চাপা থাকবে না।
    আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
    আর সম্রাট হুমায়ুনের মতো
    একদিন তোমাদেরও হতে পারে পদস্খলন।।

    See less
  1. চরম মূল্য (The last bargain) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "কে নিবি গো কিনে আমায়, কে নিবি গো কিনে?" পসরা মোর হেঁকে হেঁকে বেড়াই রাতে দিনে। এমনি কবে হায়, আমার দিন যে চলে যায়, মায়ার 'পরে বোঝা আমার বিষম হল দায়। কেউ বা আসে, কেউ বা হাসে, কেউ বা কেঁদে চায়। মধ্যদিনে বেড়াই রাজার পাষাণ-বাঁধা পথে, মুকুট-মাথে অস্ত্র-হাতেRead more

    চরম মূল্য (The last bargain) – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    “কে নিবি গো কিনে আমায়, কে নিবি গো কিনে?”

    পসরা মোর হেঁকে হেঁকে বেড়াই রাতে দিনে।

    এমনি কবে হায়, আমার

    দিন যে চলে যায়,

    মায়ার ‘পরে বোঝা আমার বিষম হল দায়।

    কেউ বা আসে, কেউ বা হাসে, কেউ বা কেঁদে চায়।

    মধ্যদিনে বেড়াই রাজার পাষাণ-বাঁধা পথে,

    মুকুট-মাথে অস্ত্র-হাতে রাজা এল রথে।

    বললে হাতে ধরে, “তোমায়

    কিনব আমি জোরে।”

    জোর যা ছিল ফুরিয়ে গেল টানাটানি করে।

    মুকুট-মাথে ফিরল রাজা সোনার রথে চড়ে।

    রুদ্ধ্ব দ্বারের সমুখ দিয়ে ফিরতেছিলেম গলি।

    দুয়ার খুলে বৃদ্ধ এল হাতে টাকার থলি।

    করলে বিবেচনা, বললে,

    “কিনব দিয়ে সোনা।”

    উজাড় করে দিয়ে থলি করলে আনাগোনা।

    বোঝা মাথায় নিয়ে কোথায় গেলেম অন্যমনা।

    সন্ধ্যাবেলায় জ্যোৎস্না নামে মুকুল-ভরা গাছে।

    সুন্দরী সে বেরিয়ে এল বকুলতলার কাছে।

    বললে কাছে এসে, “তোমায়

    কিনব আমি হেসে।”

    হাসিখানি চোখের জলে মিলিয়ে এল শেষে;

    ধীরে ধীরে ফিরে গেল বনছায়ার দেশে।

    সাগরতীরে রোদ পড়েছে ঢেউ দিয়েছে জলে,

    ঝিনুক নিয়ে খেলে শিশু বালুতটের তলে।

    যেন আমায় চিনে বললে,

    “অমনি নেব কিনে।”

    বোঝা আমার খালাস হল তখনি সেইদিনে।

    খেলার মুখে বিনামূল্যে নিল আমায় জিনে।

     

    About the Poem

    The poem was translated by Rabindranath himself under the “The last bargain” and it was published in his book “The cresent Moon” along with other poems.

    Here is the translated version of this poem:

     
    “Come and hire me,” I cried, while in the morning I was walking on the stone-paved road.
    Sword in hand, the King came in his chariot.
    He held my hand and said, “I will hire you with my power.”
    But his power counted for nought, and he went away in his chariot.

    In the heat of the midday the houses stood with shut doors.
    I wandered along the crooked lane.
    An old man came out with his bag of gold.
    He pondered and said, “I will hire you with my money.”
    He weighed his coins one by one, but I turned away.

    It was evening. The garden hedge was all aflower.
    The fair maid came out and said, “I will hire you with a smile.”
    Her smile paled and melted into tears, and she went back alone into the dark.

    The sun glistened on the sand, and the sea waves broke waywardly.
    A child sat playing with shells.
    He raised his head and seemed to know me, and said, “I hire you with nothing.”
    From thenceforward that bargain struck in child’s play made me a free man.

    See less
  1. স্বপ্ন (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু- “চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু। চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা-কড়িতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে। ইঁটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা চলিয়াছে, দুদ্দাড় জানালা দরজা। রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্‌ ধাপ্‌। দোকান বাজার সব নামে আরRead more

    স্বপ্ন (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

    একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু-
    “চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু।
    চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা-কড়িতে,
    কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।
    ইঁটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা
    চলিয়াছে, দুদ্দাড় জানালা দরজা।
    রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ,
    পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্‌ ধাপ্‌।
    দোকান বাজার সব নামে আর উঠে,
    ছাদের গায়েতে ছাদ মরে মাথা কুটে।
    হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে,
    হ্যারিসন্‌ রোড চলে তার পিছে পিছে।
    মনুমেণ্টের দোল যেন ক্ষ্যাপা হাতি
    শূন্যে দুলায়ে শুঁড় উঠিয়াছে মাতি।
    আমাদের ইস্‌কুল ছোটে হন্‌ হন্‌,
    অঙ্কের বই ছোটে, ছোটে ব্যাকরণ।
    ম্যাপগুলো দেয়ালেতে করে ছট্‌ ফট্‌,
    পাখি যেন মারিতেছে পাখার ঝাপট।
    ঘণ্টা কেবলি দোলে, ঢঙ্‌ ঢঙ্‌ বাজে—
    যত কেন বেলা হোক তবু থামে না যে।
    লক্ষ লক্ষ লোক বলে, “থামো থামো”,
    কোথা হতে কোথা যাবে, একী পাগ্‌লামো।”
    কলিকাতা শোনে না কো চলার খেয়ালে;
    নৃত্যের নেশা তার স্তম্ভে দেয়ালে।
    আমি মনে মনে ভাবি চিন্তা তো নাই,
    কলিকাতা যাক নাকো সোজা বোম্বাই।
    দিল্লি লাহোরে যাক, যাক না আগরা-
    মাথায় পাগ‍্‌ড়ি দেব পায়েতে নাগ্‌রা।
    কিম্বা সে যদি আজ বিলাতেই ছোটে
    ইংরেজ হবে সবে বুট-হ্যাট্‌-কোটে।
    কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল যেই-

    কবিতা সম্মন্দে

    “একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু” রবীন্দ্রনাথের লিখিত একটি কৌতুকপূর্ণ কবিতা । কবি তাঁর স্বপ্নে তাঁর প্রিয় কলকাতা শহরকে দেখেছেন একটি চলমান শহর হিসাবে। কলকাতার বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গাগুলি যেমন হাওড়া ব্রিজ, হ্যারিসন রোড সহ জায়গার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি স্বপ্নে সব কিছুকে চলতে দেখেছেন।
    দেখি, কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই॥

    See less
  1. স্বপ্ন (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু- “চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু। চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা-কড়িতে, কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে। ইঁটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা চলিয়াছে, দুদ্দাড় জানালা দরজা। রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ, পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্‌ ধাপ্‌। দোকান বাজার সব নামে আরRead more

    স্বপ্ন (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

    একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু-
    “চেয়ে দেখো” “চেয়ে দেখো” বলে যেন বিনু।
    চেয়ে দেখি, ঠোকাঠুকি বরগা-কড়িতে,
    কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে।
    ইঁটে-গড়া গণ্ডার বাড়িগুলো সোজা
    চলিয়াছে, দুদ্দাড় জানালা দরজা।
    রাস্তা চলেচে যত অজগর সাপ,
    পিঠে তার ট্রামগাড়ি পড়ে ধুপ্‌ ধাপ্‌।
    দোকান বাজার সব নামে আর উঠে,
    ছাদের গায়েতে ছাদ মরে মাথা কুটে।
    হাওড়ার ব্রিজ চলে মস্ত সে বিছে,
    হ্যারিসন্‌ রোড চলে তার পিছে পিছে।
    মনুমেণ্টের দোল যেন ক্ষ্যাপা হাতি
    শূন্যে দুলায়ে শুঁড় উঠিয়াছে মাতি।
    আমাদের ইস্‌কুল ছোটে হন্‌ হন্‌,
    অঙ্কের বই ছোটে, ছোটে ব্যাকরণ।
    ম্যাপগুলো দেয়ালেতে করে ছট্‌ ফট্‌,
    পাখি যেন মারিতেছে পাখার ঝাপট।
    ঘণ্টা কেবলি দোলে, ঢঙ্‌ ঢঙ্‌ বাজে—
    যত কেন বেলা হোক তবু থামে না যে।
    লক্ষ লক্ষ লোক বলে, “থামো থামো”,
    কোথা হতে কোথা যাবে, একী পাগ্‌লামো।”
    কলিকাতা শোনে না কো চলার খেয়ালে;
    নৃত্যের নেশা তার স্তম্ভে দেয়ালে।
    আমি মনে মনে ভাবি চিন্তা তো নাই,
    কলিকাতা যাক নাকো সোজা বোম্বাই।
    দিল্লি লাহোরে যাক, যাক না আগরা-
    মাথায় পাগ‍্‌ড়ি দেব পায়েতে নাগ্‌রা।
    কিম্বা সে যদি আজ বিলাতেই ছোটে
    ইংরেজ হবে সবে বুট-হ্যাট্‌-কোটে।
    কিসের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল যেই-

    কবিতা সম্মন্দে

    “একদিন রাতে আমি স্বপ্ন দেখিনু” রবীন্দ্রনাথের লিখিত একটি কৌতুকপূর্ণ কবিতা । কবি তাঁর স্বপ্নে তাঁর প্রিয় কলকাতা শহরকে দেখেছেন একটি চলমান শহর হিসাবে। কলকাতার বিভিন্ন বিখ্যাত জায়গাগুলি যেমন হাওড়া ব্রিজ, হ্যারিসন রোড সহ জায়গার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি স্বপ্নে সব কিছুকে চলতে দেখেছেন।
    দেখি, কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই॥

    See less
  1. ব্যান্ড-পৃথিবী গান -লজ্জা আমার শরীর আজ ভিজে যায় রক্তে নাকি ভারী বর্ষায়, কিছু চোখ গিলছে আমায় ভীষন সস্তায়, ফাঁকা রাস্তায়। জন্মের আগে মৃত্যুকে দেখি বার-বার সময় কি আছে আমাকে নিয়ে ভাববার? আগুনে পুড়ে প্রমাণ করেছি কতবার শুধু বাঁচবার নেই কোনো অধিকার। তুমি ফানুস হয়েই ফেটে যাও আমি আগুন ফাগুনে ধর্ষিতা, ফুলশয্যRead more

    ব্যান্ড-পৃথিবী
    গান -লজ্জা

    আমার শরীর আজ ভিজে যায়
    রক্তে নাকি ভারী বর্ষায়,
    কিছু চোখ গিলছে আমায়
    ভীষন সস্তায়, ফাঁকা রাস্তায়।

    জন্মের আগে মৃত্যুকে দেখি বার-বার
    সময় কি আছে আমাকে নিয়ে ভাববার?
    আগুনে পুড়ে প্রমাণ করেছি কতবার
    শুধু বাঁচবার নেই কোনো অধিকার।

    তুমি ফানুস হয়েই ফেটে যাও
    আমি আগুন ফাগুনে ধর্ষিতা, ফুলশয্যায়
    ভীষণ লজ্জায়, ফুলশয্যায়
    ফাঁকা রাস্তায়, শরশয্যায়।

    আমার দুচোখ আজ ভিজে যায়
    কান্নায় নাকি মিথ্যে কোনো ভরসায়,
    নিঃসঙ্গ আমি ফাঁকা রাস্তায়
    করা হেটে যায়..
    আমার পেতে চায়।

    প্রতিদিন কি এইভাবে ঠিক লুটে নাও
    মাছ-ভাত নয় আমার শরীর খেতে চাও,
    আরো বেশি আরো দর কষাকষী করে যাও
    হাসপাতালে, আমায় বেচে দাও।

    তুমি অভিশাপ নিয়ে একবার শুধু
    আমার মতোই জন্মাও, শরশয্যায়
    ভীষণ লজ্জায়, ফুলশয্যায়
    একা রাস্তায়, শরশয্যায়..

    ভীষণ লজ্জায়, ফুলশয্যায়
    ফাঁকা রাস্তায়, শরশয্যায়,
    ভীষণ লজ্জায়, ফুলশয্যায়
    একা রাস্তায়, ধরো সস্তায়।

    See less
  1. ব্যান্ড-পৃথিবী গান -নিষিদ্ধ পরোয়ানা রাতজাগা নারীর শোকে, দেখছি প্রথম কালো যৌনতা শুধু কালো রঙে সেজে রাত, দালালবৃত্তি ভালো দেহবিক্রির সাজানো বাগানে ফুটেছে নতুন ফুল পুরুষপিতার ভুল তুমি জদিও রুক্সানা বুলবুল তবু বাড়ে বয়স অন্ধ গলিতে ছখের সামনে ধর্ষিত মায়ের বুকে একবাটি দুধ রুটি করছে তাড়া তৃপ্ত দেহের চিৎকারRead more

    ব্যান্ড-পৃথিবী
    গান -নিষিদ্ধ পরোয়ানা

    রাতজাগা নারীর শোকে, দেখছি প্রথম কালো
    যৌনতা শুধু কালো রঙে সেজে রাত, দালালবৃত্তি ভালো
    দেহবিক্রির সাজানো বাগানে ফুটেছে নতুন ফুল
    পুরুষপিতার ভুল তুমি জদিও রুক্সানা বুলবুল

    তবু বাড়ে বয়স অন্ধ গলিতে
    ছখের সামনে ধর্ষিত মায়ের বুকে
    একবাটি দুধ রুটি করছে তাড়া
    তৃপ্ত দেহের চিৎকার দিচ্ছে আস্কারা

    ভেঙে দাও, চিবিয়ে খাও, এই নষ্ট কাঙালপনা
    নষ্ট মায়ের স্পষ্ট ভ্রূণকে দেব নতুন ঠিকানা
    যেখানে আলো কালো মিশে লাল হয়েছে এই আকাশে
    সে লালে রক্তের পরিচয় বিনিময়ে জারি হয় নিষিদ্ধ পরোয়ানা…

    অন্ধকারের অভিশাপ কুড়োনোয়, তুমি এখনও মত্ত
    বাজি রেখে দাও নিজের জরায়ূ, বাঁচার এটাই শর্ত
    সকাল হলে রাত নামে নিলামে, ভাঙতি পয়সা দিয়ে
    খুচরো বয়স টুকরো স্বপ্ন চোখে, বিছানায় গা এলিয়ে

    তবু চলে দরদাম ভদ্র বেশীদের
    ময়লা দেহের খিস্তি খেউরে চাপা হাসিতে
    ভেবে খুন বাড়ে সন্তান প্রমাদ গোনে
    কি দেবে বর্ণপরিচয় না পিত্রিপরিচয়

    ভেঙে দাও, চিবিয়ে খাও, এই নষ্ট কাঙালপনা
    নষ্ট মায়ের স্পষ্ট ভ্রূণকে দেব নতুন ঠিকানা
    যেখানে আলো কালো মিশে লাল হয়েছে এই আকাশে
    সে লালে রক্তের পরিচয় বিনিময়ে জারি হয় নিষিদ্ধ পরোয়ানা..

    See less
  1. জন্মান্তর (পৃথিবী ব্যান্ড) ব্যান্ড-পৃথিবী গান -জন্মান্তর লিরিক্স -কৌশিক চক্রবর্তী পথের ধারে পড়ে পাওয়া, ছেঁড়া খাতায় হাজার বছর কেটেছে অনেক, যাওয়া আসায়। হিসেবে নিকেশ নিয়ম করে, রেখেছি তুলে পথ হারাবো পথেই নেমে, পথেরই ভুলে.. গত জন্মান্তরের হিসেব লিখে রাখা সেই খাতায়, তুমি দেখতে চাইলেই পাবে সময়ের ঝরাপাতায়..Read more

    জন্মান্তর (পৃথিবী ব্যান্ড)

    ব্যান্ড-পৃথিবী
    গান -জন্মান্তর
    লিরিক্স -কৌশিক চক্রবর্তী

    পথের ধারে পড়ে পাওয়া, ছেঁড়া খাতায়
    হাজার বছর কেটেছে অনেক, যাওয়া আসায়।
    হিসেবে নিকেশ নিয়ম করে, রেখেছি তুলে
    পথ হারাবো পথেই নেমে, পথেরই ভুলে..

    গত জন্মান্তরের হিসেব
    লিখে রাখা সেই খাতায়,
    তুমি দেখতে চাইলেই পাবে
    সময়ের ঝরাপাতায়..
    সময়ের ঝরাপাতায় ..
    আলোকিত এই নগরে
    কোনায় কোনায় অন্ধকার,
    পোড়া সভ্যতার শেষ বন্দরে..
    আমি পুড়েছি বহু রাত ….

    তবু কেন বারেবারে, ফিরে আসা
    আমার চারপাশ নিচ্ছে নিঃশ্বাস,
    গানের ভাষায়।
    পথের ধরে তোমায় খুঁজি,
    সময় অসময়,
    কেন জানি আমার আজকাল
    বাড়ছে মৃত্যু ভয় …
    গত জন্মান্তরের শেষে,
    অমরত্ব পাওয়া যায়
    তুমি চাইলেই পেতে পারো
    সময়ের ঝরাপাতায়..
    সময়ের ঝরাপাতায় …

    See less
  1. তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে। এসো গন্ধে বরনে, এসো গানে। এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে, এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে, এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে॥ এসো নির্মল উজ্জ্বল কান্ত, এসো সুন্দর স্নিগ্ধ প্রশান্ত, এসো এসো হে বিচিত্র বিধানে। এসো দু:খে সুখে, এসো মর্মে, এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে; এসো সকল-কর্ম-অবসানে॥

    তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে।

    এসো গন্ধে বরনে, এসো গানে।

    এসো অঙ্গে পুলকময় পরশে,

    এসো চিত্তে অমৃতময় হরষে,

    এসো মুগ্ধ মুদিত দু নয়ানে॥

    এসো নির্মল উজ্জ্বল কান্ত,

    এসো সুন্দর স্নিগ্ধ প্রশান্ত,

    এসো এসো হে বিচিত্র বিধানে।

    এসো দু:খে সুখে, এসো মর্মে,

    এসো নিত্য নিত্য সব কর্মে;

    এসো সকল-কর্ম-অবসানে॥

    See less
  1. ইলিয়াস লেখকঃ লিও তলস্তয় অনুবাদ : মণীন্দ্র দত্ত উফা প্রদেশে ইলিয়াস নামে একজন বাকির বাস করত।ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পরে যখন তার বাবা মারা গেল তখন সে না ধনী, না দরিদ্র। সাতটা ঘােটকী, দুটো গােরু আর কুড়িটা ভেড়া—এই তার যা কিছু বিষয়-সম্পত্তি। কিন্তু ইলিয়াসের সুব্যবস্থায় তার সম্পত্তি কিছু কিছু করে বRead more

    ইলিয়াস

    লেখকঃ লিও তলস্তয়
    অনুবাদ : মণীন্দ্র দত্ত

    উফা প্রদেশে ইলিয়াস নামে একজন বাকির বাস করত।ইলিয়াসের বিয়ের এক বছর পরে যখন তার বাবা মারা গেল তখন সে না ধনী, না দরিদ্র। সাতটা ঘােটকী, দুটো গােরু আর কুড়িটা ভেড়া—এই তার যা কিছু বিষয়-সম্পত্তি। কিন্তু ইলিয়াসের সুব্যবস্থায় তার সম্পত্তি কিছু কিছু করে বাড়তে লাগল। সে আর তার স্ত্রী সকলের আগে ঘুম থেকে ওঠে আর সকলের পরে ঘুমােতে যায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে। ফলে প্রতি বছরই তার অবস্থার উন্নতি হতে লাগল।এইভাবে পঁয়ত্রিশ বছর পরিশ্রম করে সে প্রচুর সম্পত্তি করে ফেলল। তখন তার দুশাে ঘােড়া, দেড়শাে। গােরু-মােষ, আর বারােশাে ভেড়া। ভাড়াটে মজুররা তার গােরু-ঘােড়ার দেখাশােনা করে, ভাড়াটে মজুরানিরা দুধ দোয়, কুমিস, মাখন আর পনির তৈরি করে। মােট কথা, ইলিয়াসের তখন খুব বােলবােলাও, পাশেপাশের সকলেই তাকে ঈর্ষা করে। বলে: ‘ইলিয়াস তাে ভাগ্যবান পুরুষ; কোনাে কিছুরই অভাব নেই; ওর তাে মরবারই দরকার নেই।

    ক্রমে ভালাে ভালাে লােকের সঙ্গে তার পরিচয় হতে লাগল। দূর দূরান্তর থেকে অতিথিরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসে। সকলকেই স্বাগত জানিয়ে সে তাদের ভােজ্য পানীয় দিয়ে সেবা করে। যে যখনই আসুক, কুমিস, চা, শরবত আর মাংস সব সময়েই হাজির। অতিথি এলেই একটা বা দুটো ভেড়া মারা হয়; সংখ্যায় বেশি হলে ঘােটকীও মারা হয়। |

    ইলিয়াসের দুই ছেলে, এক মেয়ে। সকলেরই বিয়ে হয়ে গেছে। ইলিয়াস যখন গরিব ছিল, ছেলেরা তার সঙ্গে কাজ করত, গােরু-ভেড়া চরাত। কিন্তু বড়লােক হওয়ার পরে তারা আয়েশি হয়ে উঠল। বড়ােটি এক মারামারিতে পড়ে মারা গেল। ছােটোটি এমন এক ঝগড়াটে বউ বিয়ে করল যে তারা বাপের আদেশই অমান্য করতে শুরু করল। ফলে ইলিয়াসের বাড়ি থেকে তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হলাে। |

    ইলিয়াস তাকে একটা বাড়ি দিল, কিছু গােরু-ঘােড়াও দিল। ফলে ইলিয়াসের সম্পত্তিতে টান পড়ল। তারপরেই ইলিয়াসের ভেড়ার পালে মড়ক লেগে অনেকগুলাে মরে গেল। তার পরের বছর দেখা দিল দুর্ভিক্ষ। খড় পাওয়া গেল না একেবারে। ফলে সে-বছর শীতকালে অনেক গােরু-মােষ না খেয়ে মরল। তারপর কিরবিজ’রা তার সবচাইতে ভালাে ঘােড়াগুলাে চুরি করে নিয়ে গেল। ইলিয়াসের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ল। যত তার অবস্থা পড়তে লাগল ততই তার শরীরের জোরও কমতে লাগল। এমনি করে সত্তর বছর বয়সে ইলিয়াস বাধ্য হয়ে তার পশমের কোট, কম্বল, ঘােড়ার জিন, তাঁবু এবং সবশেষে গৃহপালিত পশুগুলােকে বিক্রি করে দিয়ে দুর্দশার একেবারে চরমে নেমে গেল। আসল অবস্থা বুঝে উঠবার আগেই সে একেবারে সর্বহারা হয়ে পড়ল। ফলে বৃদ্ধ বয়সে স্বামী-স্ত্রীকে অজানা লােকের বাড়িতে বাস করে, তাদের কাজ করে খেতে হতাে। সম্বলের মধ্যে রইল শুধু কাঁধে একটা বোঁচকা—তাতে ছিল একটা লােমের তৈরি কোট, টুপি, জুতাে আর বুট, আর তার বৃদ্ধা স্ত্রী শাম-শেমাগি। বিতাড়িত পুত্র অনেক দূর দেশে চলে গেছে, মেয়েটিও মারা গেছে। বৃদ্ধ দম্পতিকে সাহায্য করবার তখন কেউ নেই!

    মহম্মদ শা নামে এক প্রতিবেশীর করুণা হলাে বুড়াে-বুড়ির জন্য। সে নিজে ধনীও নয়, গরিবও নয়, তবে থাকত সুখে, আর লােকও ভালাে। ইলিয়াসের অতিথি-বৎসলতার কথা স্মরণ করে তার খুব দুঃখ হলাে। বলল :
    ‘ইলিয়াস, তুমি আমার বাড়ি এসে আমার সঙ্গে থাকো। বুড়িকেও নিয়ে এসাে। যতটা ক্ষমতায় কুলােয় গ্রীষ্মে আমার তরমুজের ক্ষেতে কাজ করবে আর শীতকালে গােরু-ঘােড়াগুলােকে খাওয়াবে। শাম-শেমাগিও ঘােটকীগুলােকে দুইতে পারবে, কুমিস তৈরি করতে পারবে। আমি তােমাদের দুজনেরই খাওয়া-পরা দেবাে। এছাড়া যদি কখনও কিছু লাগে, বলবে, তাও দেবাে।।

    ইলিয়াস প্রতিবেশীকে ধন্যবাদ দিল। সে আর তার স্ত্রী মহম্মদ শার বাড়িতে ভাড়াটে মজুরের মতাে কাজ করে খেতে লাগল। প্রথমে বেশ কষ্ট হতাে, কিন্তু ক্রমে ক্রমে সব সয়ে গেল। যতটা পারত কাজ করত আর থাকত।

    বুড়াে-বুড়িকে রেখে মহম্মদ শারও লাভ হলাে, কারণ নিজেরা একদিন মনিব ছিল বলে সব কাজই তারা ভালােভাবে করতে পারত। তা ছাড়া তারা অলস নয়, সাধ্যমতাে কাজকর্ম করত। তবু এই সম্পন্ন মানুষ দুটির দুরবস্থা দেখে মহম্মদ শার দুঃখ হতাে।

    একদিন মহম্মদ শার একদল আত্মীয় অনেক দূর থেকে এসে তার বাড়িতে অতিথি হলাে। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মােল্লা। মহম্মদ শা ইলিয়াসকে একটা ভেড়া এনে মারতে বলল। ইলিয়াস তার চামড়া ছাড়িয়ে, সেদ্ধ করে অতিথিদের কাছে পাঠিয়ে দিল। অতিথিরা খাওয়া-দাওয়া করল, চা খেল, তারপর কুমিস-এ হাত দিল। মেঝেয় কম্বলের উপরে পাতা কুশনে গৃহস্বামীর সঙ্গে বসে অতিথিরা বাটি থেকে কুমিস পান করতে করতে গল্প করছিল। এমন সময় কাজ শেষ করে ইলিয়াস দরজার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। তাকে দেখতে পেয়ে মহম্মদ শা অতিথিদের বলল :

    ‘দরজার পাশ দিয়ে যে বুড়াে মানুষটি চলে গেল তাকে আপনারা লক্ষ করেছেন কি?
    একজন বলল, ‘আমি তাকে দেখিনি। কিন্তু ওর মধ্যে বিশেষ করে দেখবার কিছু আছে নাকি?
    ‘বিশেষত্ব এই যে, একসময় সে এ তল্লাটের সবচেয়ে ধনী ছিল। নাম ইলিয়াস। নামটা আপনারা হয়তাে শুনে থাকবেন।
    অতিথি বলল, ‘নিশ্চয়ই। না শােনবার জো কী? লােকটিকে কখনও চোখে দেখিনি, কিন্তু তার সুনাম ছড়িয়েছিল বহুদূর।

    ‘অথচ আজ তার কিছু নেই। আমার কাছে মজুরের মতাে থাকে, আর তার স্ত্রী আমার ঘােটকীদের দুধ দোয়।
    অতিথি সবিস্ময়ে জিভ দিয়ে চুকচু শব্দ করল। ঘাড় নাড়তে নাড়তে বলল, ‘সত্যি, ভাগ্য যেন চাকার মতাে ঘােরে; একজন উপরে ওঠে তাে আর একজন তলায় পড়ে যায়। আহা, বলুন তাে, বুড়াে লােকটা এখন নিশ্চয়ই খুব বিষন্ন?
    ‘কী জানি, খুব চুপচাপ আর শান্ত হয়ে থাকে। কাজও করে ভালাে।
    অতিথি বলল, ‘লােকটির সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি কি? জীবন সম্পর্কে ওকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই আমি।
    গৃহস্বামী বলল, ‘নিশ্চয়ই পারেন। তারপর তাঁবুর বাইরে গিয়ে ডাকল : ‘বাবাই, একবার এদিকে এসাে তাে। তােমার বুড়িকেও সঙ্গে নিয়ে এসাে। আমাদের সঙ্গে একটু কুমিস পান করবে।

    ইলিয়াস আর তার স্ত্রী এল। ইলিয়াস অতিথি ও গৃহস্বামীকে নমস্কার করল, প্রার্থনা করল, তারপর দরজার পাশে এক কোণে বসল। তার স্ত্রী পর্দার আড়ালে গিয়ে কত্রীর পাশে বসল। | ইলিয়াসকে এক বাটি কুমিস দেওয়া হলাে। সে আবার অতিথি ও গৃহস্বামীকে মাথা নীচু করে নমস্কার করল এবং একটু খেয়ে বাকিটা নামিয়ে রাখল।

    অতিথি তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আচ্ছা বাবাই, আমাদের দেখে তােমার অতীত জীবনের সুখ-সমৃদ্ধির কথা স্মরণ করে এবং এখনকার দুরবস্থার কথা ভেবে কি খুব কষ্ট হচ্ছে?
    ইলিয়াস হেসে বলল, সুখ-দুঃখের কথা যদি বলি, আপনারা হয়তাে আমার কথা বিশ্বাস করবেন না। বরং আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করুন। তিনি মেয়েমানুষ, তাঁর মনেও যা মুখেও তাই। এ বিষয়ে তিনিই পুরাে সত্য বলতে পারবেন।

    অতিথি তখন পর্দার দিকে তাকিয়ে বলল, “আচ্ছা ঠাকুমা , আগেকার সুখ আর এখনকার দুঃখ সম্পর্কে তােমার মনের কথাটা বলাে তাে!’
    পর্দার আড়াল থেকে শাম-শেমাগি বলতে লাগল :‘এই হলাে আমার মনের কথা : পঞ্চাশ বছর এই বুড়াে আর আমি একত্র বাস করেছি, সুখ খুঁজেছি; কিন্তু কখনও পাইনি। আর আজ এখানে এই আমাদের দ্বিতীয় বছর, যখন আমাদের কিছুই নেই, যখন আমরা ভাড়াটে মানুষের মতাে বেঁচে আছি, তখন আমরা পেয়েছি সত্যিকারের সুখ; আজ আর কিছুই চাই না।

    অতিথিরা বিস্মিত। গৃহস্বামীও বিস্মিত। সে উঠে দাঁড়াল। পর্দা সরিয়ে বুড়ির দিকে তাকাল। দুই হাত ভেঙে বসে সে স্বামীর দিকে চেয়ে হাসছে। স্বামীও হাসছে।
    বুড়ি আবার কথা বলল: ‘আমি সত্য কথাই বলছি, তামাশা করছি না। অর্ধ-শতাব্দী ধরে আমরা সুখ খুঁজেছি; যতদিন ধনী ছিলাম, কখনও সুখ পাইনি। কিন্তু আজ এমন সুখের সন্ধান আমরা পেয়েছি যে আর কিছুই আমরা চাই না।’
    ‘কিন্তু এখন কীসে তােমাদের সুখ হচ্ছে?

    ‘বলছি। যখন ধনী ছিলাম, বুড়াের বা আমার এক মুহূর্তের জন্যও শান্তি ছিল না,কথা বলবার সময় নেই। অন্তরের কথা ভাববার সময় নেই, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবার সময় নেই। দুশ্চিন্তারও অন্ত ছিল না। হয়তাে অতিথিরা এলেন—এক দুশ্চিন্তা : কাকে কী খেতে দিই, কী উপহার দিই যাতে লােকে নিন্দা না করে। আবার অতিথিরা চলে গেলে মজুরদের দিকে নজর দিতে হয়; তারা যেমন কম খেটে বেশি খেতেই ব্যস্ত, তেমনি আমরাও নিজেদের স্বার্থে তাদের উপর কড়া নজর রাখি,—সেও তাে পাপ। অন্যদিকে দুশ্চিন্তা—এই বুঝি নেকড়েতে ঘােড়ার বাচ্চা বা গােরুর বাছুরটা নিয়ে গেল। কিংবা চোর এসে ঘােড়াগুলােই নিয়ে সরে পড়ল। রাতে ঘুমােতে গেলাম, কিন্তু ঘুমােবার উপায় নেই, মনে দুশ্চিন্তা ভেড়ি বুঝি ছানাগুলােকে চেপে মেরে ফেলল। ফলে সারারাত ঘুমই ছিল না। একটা দুশ্চিন্তা পেরােতেই আর একটা এসে মাথা চাড়া দিত,শীতের জন্য যথেষ্ট খড় মজুত আছে তাে! এছাড়া বুড়াের সঙ্গে মতবিরােধ ছিল; সে হয়তাে বলল এটা এভাবে করা হােক, আমি বললাম অন্যরকম। ফলে ঝগড়া। সেও তাে পাপ। কাজেই এক দুশ্চিন্তা থেকে আর এক দুশ্চিন্তায়, এক পাপ থেকে আর এক পাপেই দিন কাটত, সুখী জীবন কাকে বলে কোনােদিন বুঝিনি।
    ‘আর এখন?
    ‘এখন বুড়াে আর আমি একসঙ্গে সকালে উঠি, দুটো সুখ-শান্তির কথা বলি। ঝগড়াও কিছু নেই, দুশ্চিন্তাও কিছু নেই,—আমাদের একমাত্র কাজ প্রভুর সেবা করা। যতটা খাটতে পারি স্বেচ্ছায়ই খাটি, কাজেই প্রভুর কাজে আমাদের লাভ বই লােকসান নেই। বাড়িতে এলেই খাবার ও কুমিস পাই। শীতকালে গরম হবার জন্য লােমের কোট আছে, জ্বালানি আছে। আত্মার কথা আলােচনা করবার বা ভাববার মতাে সময় আছে, সময় আছে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করবার। পাশ বছর ধরে সুখ খুঁজে খুঁজে এতদিনে পেয়েছি।
    অতিথিরা হেসে উঠল। কিন্তু ইলিয়াস বলল, ‘বন্ধুগণ হাসবেন না। এটা তামাশা নয়। এটাই মানুষের জীবন, আমার স্ত্রী আর আমি অবুঝ ছিলাম, তাই সম্পত্তি হারিয়ে কেঁদেছিলাম। কিন্তু ঈশ্বর আমাদের কাছে সত্যকে উন্মুক্ত করেছেন। আর সে কথা যে আমরা আপনাদের বললাম তা ফুর্তির জন্য নয়, আপনাদের কল্যাণের জন্য।
    তখন মােল্লা বললেন ‘এটা খুবই জ্ঞানের কথা। ইলিয়াস যা বলল সবই সত্য এবং পবিত্র গ্রন্থে লেখা আছে। শুনে অতিথিরা ভাবতে বসল।

    See less