1. Amaro porano jaha chai আমার পরান যাহা চায় তুমি  তাই, তুমি তাই গো । তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর  কেহ নাই, কিছু নাই গো ॥ তুমি  সুখ যদি নাহি পাও,  যাও  সুখের সন্ধানে যাও– আমি   তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,   আর কিছু নাহি চাই গো ॥ আমি   তোমারি বিরহে রহিব বিলীন,   তোমাতে করিব বাস– দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,  দীরRead more

    Amaro porano jaha chai

    আমার পরান যাহা চায় তুমি  তাই, তুমি তাই গো ।
    তোমা ছাড়া আর এ জগতে মোর  কেহ নাই, কিছু নাই গো ॥
    তুমি  সুখ যদি নাহি পাও,  যাও  সুখের সন্ধানে যাও–
    আমি   তোমারে পেয়েছি হৃদয়মাঝে,   আর কিছু নাহি চাই গো ॥
    আমি   তোমারি বিরহে রহিব বিলীন,   তোমাতে করিব বাস–
    দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী,  দীর্ঘ বরষ-মাস ।
    যদি    আর-কারে ভালোবাস,  যদি  আর ফিরে নাহি আস,
    তবে   তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও,   আমি যত দুখ পাই গো ॥

    See less
    • 0
  2. মাঝে মাঝে তব দেখা পাই | Majhe Majhe Tobo Dekha Pai মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না। কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না। ( মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না। অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না। ) ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে ওহে ‘হারাই হারাই’ সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিRead more

    মাঝে মাঝে তব দেখা পাই | Majhe Majhe Tobo Dekha Pai

    মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না।
    কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না।
    ( মোহমেঘে তোমারে দেখিতে দেয় না।
    অন্ধ করে রাখে, তোমারে দেখিতে দেয় না। )
    ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
    ওহে ‘হারাই হারাই’ সদা ভয় হয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে।
    ( আশ না মিটিতে হারাইয়া– পলক না পড়িতে হারাইয়া–
    হৃদয় না জুড়াতে হারাইয়া ফেলি চকিতে। )
    কী করিলে বলো পাইব তোমারে, রাখিব আঁখিতে আঁখিতে–
    ওহে এত প্রেম আমি কোথা পাব, নাথ, তোমারে হৃদয়ে রাখিতে।
    ( আমার সাধ্য কিবা তোমারে–
    দয়া না করিলে কে পারে–
    তুমি আপনি না এলে কে পারে হৃদয়ে রাখিতে। )
    আর-কারো পানে চাহিব না আর, করিব হে আমি প্রাণপণ–
    ওহে তুমি যদি বলো এখনি করিব বিষয় -বাসনা বিসর্জন।
    ( দিব শ্রীচরণে বিষয়– দিব অকাতরে বিষয়–
    দিব তোমার লাগি বিষয় -বাসনা বিসর্জন। )

    See less
    • 0
  3. মানুষ গাহি সাম্যের গান– মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান , নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি । ‘পুজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময় হলো !’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা- টাজা হয়েRead more

    মানুষ

    গাহি সাম্যের গান–
    মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
    নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
    সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি ।
    ‘পুজারী, দুয়ার খোল,
    ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময় হলো !’
    স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
    দেবতার বরে আজ রাজা- টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয় !
    জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
    ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনা তো সাত দিন !’
    সহসা বন্ধ হল মন্দির , ভুখারী ফিরিয়া চলে
    তিমির রাত্রি পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে !
    ভুখারী ফুকারি’ কয়,
    ‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
    মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
    বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি !
    এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
    বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন !’
    তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা–”ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
    ভুখা আছ মর গে-ভাগাড়ে গিয়ে ! নামাজ পড়িস বেটা ?”
    ভুখারী কহিল, ‘না বাবা !’ মোল্লা হাঁকিল- ‘তা হলে শালা
    সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা !
    ভুখারী ফিরিয়া চলে,
    চলিতে চলিতে বলে–
    “আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
    আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
    তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
    মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী !”
    কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড় ;
    ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া- দ্বার !
    খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা ?
    সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !
    হায় রে ভজনালয়
    তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় !
    মানুষেরে ঘৃণা করি
    ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
    ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
    যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে ।
    পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !–মুর্খরা সব শোনো
    মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।
    আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
    কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
    আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
    তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে !
    আমরা তাঁদেরি সন্তান , জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ
    কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ।
    হেস না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম
    আমিই কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম।
    হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদি ঈসা,
    কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা ?
    কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি ?
    হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন দিবারাতি !
    অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
    আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ–দহে,
    তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজানালয়
    ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় !
    হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর-বাসে
    জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে !
    যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
    আজিও বিশ্ব দেখেনি–হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে !
    ও কে ? চন্ডাল ? চমকাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্য জীব !
    ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
    আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
    তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী পাঠ ।
    রাখাল বলিয়া কারে কর হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে !
    হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে !
    চাষা বলে কর ঘৃণা !
    দেখো চাষা রুপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না !
    যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারও ধরিল হাল
    তারাই আনিল অমর বাণী–যা আছে র’বে চিরকাল ।
    দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
    তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি !
    তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে
    দ্বার দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলৈ ।
    সে মোর রহিল জমা –
    কে জানে তোমারে লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা !
    বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ দু’চোখ স্বার্থ ঠুলি,
    নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলী ।
    মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা মথিত সুধা
    তাই লুটে তুমি খাবে পশু ? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা ?
    তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
    তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোনখানে !
    তোমারি কামনা-রাণী
    যুগে যুগে পশু ফেলেছে তোমায় মৃত্যু বিবরে টানি ।

    – কাজী নজরুল ইসলাম

    See less
    • 0
  4. মানুষ গাহি সাম্যের গান– মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান , নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি, সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি । ‘পুজারী, দুয়ার খোল, ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময় হলো !’ স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয় দেবতার বরে আজ রাজা- টাজা হয়েRead more

    মানুষ

    গাহি সাম্যের গান–
    মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান ,
    নাই দেশ-কাল-পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
    সব দেশে, সব কালে, ঘরে-ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি ।
    ‘পুজারী, দুয়ার খোল,
    ক্ষুধার ঠাকুর দাঁড়ায়ে দুয়ারে পুজার সময় হলো !’
    স্বপ্ন দেখিয়া আকুল পূজারী খুলিল ভজনালয়
    দেবতার বরে আজ রাজা- টাজা হয়ে যাবে নিশ্চয় !
    জীর্ণ-বস্ত্র শীর্ণ-গাত্র, ক্ষুধায় কন্ঠ ক্ষীণ
    ডাকিল পান্থ, ‘দ্বার খোল বাবা, খাইনা তো সাত দিন !’
    সহসা বন্ধ হল মন্দির , ভুখারী ফিরিয়া চলে
    তিমির রাত্রি পথ জুড়ে তার ক্ষুধার মানিক জ্বলে !
    ভুখারী ফুকারি’ কয়,
    ‘ঐ মন্দির পুজারীর, হায় দেবতা, তোমার নয় !’
    মসজিদে কাল শিরনী আছিল, অঢেল গোস্ত রুটি
    বাঁচিয়া গিয়াছে, মোল্লা সাহেব হেসে তাই কুটিকুটি !
    এমন সময় এলো মুসাফির গায়ে-আজারির চিন্
    বলে, ‘বাবা, আমি ভুখা ফাকা আছি আজ নিয়ে সাত দিন !’
    তেরিয়াঁ হইয়া হাঁকিল মোল্লা–”ভ্যালা হলো দেখি লেঠা,
    ভুখা আছ মর গে-ভাগাড়ে গিয়ে ! নামাজ পড়িস বেটা ?”
    ভুখারী কহিল, ‘না বাবা !’ মোল্লা হাঁকিল- ‘তা হলে শালা
    সোজা পথ দেখ !’ গোস্ত-রুটি নিয়া মসজিদে দিল তালা !
    ভুখারী ফিরিয়া চলে,
    চলিতে চলিতে বলে–
    “আশিটা বছর কেটে গেল, আমি ডাকিনি তেমায় কভু,
    আমার ক্ষুধার অন্ন তা’বলে বন্ধ করোনি প্রভু !
    তব মজসিদ মন্দিরে প্রভু নাই মানুষের দাবী,
    মোল্লা-পুরুত লাগায়েছে তার সকল দুয়ারে চাবী !”
    কোথা চেঙ্গিস, গজনী-মামুদ, কোথায় কালাপাহাড় ;
    ভেঙ্গে ফেল ঐ ভজনালয়ের যত তালা-দেওয়া- দ্বার !
    খোদার ঘরে কে কপাট লাগায় কে দেয় সেখানে তালা ?
    সব দ্বার এর খোলা র’বে, চালা হাতুড়ি শাবল চালা !
    হায় রে ভজনালয়
    তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয় !
    মানুষেরে ঘৃণা করি
    ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি
    ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোর করে কেড়ে
    যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে ।
    পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল !–মুর্খরা সব শোনো
    মানুষ এনেছে গ্রন্থ,–গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো ।
    আদম দাউদ ঈসা মুসা ইব্রাহিম মোহাম্মদ
    কৃষ্ণ বুদ্ধ নানক কবীর,-বিশ্বের সম্পদ,
    আমাদেরি এরা পিতা পিতামহ, এই আমাদের মাঝে
    তাঁদেরি রক্ত কম-বেশী করে প্রতি ধমনীতে বাজে !
    আমরা তাঁদেরি সন্তান , জ্ঞাতি, তাঁদেরি মতন দেহ
    কে জানে কখন মোরাও অমনি হয়ে যেতে পারি কেহ ।
    হেস না বন্ধু ! আমার আমি সে কত অতল অসীম
    আমিই কি জানি কে জানে কে আছে আমাতে মহামহিম।
    হয়ত আমাতে আসিছে কল্কি, তোমাতে মেহেদি ঈসা,
    কে জানে কাহার অন্ত ও আদি, কে পায় কাহার দিশা ?
    কাহারে করিছ ঘৃণা তুমি ভাই, কাহারে মারিছ লাথি ?
    হয়তো উহারই বুকে ভগবান জাগিছেন দিবারাতি !
    অথবা হয়ত কিছুই নহে সে, মহান উচ্চ নহে,
    আছে ক্লেদাক্ত ক্ষত-বিক্ষত পড়িয়া দুঃখ–দহে,
    তবু জগতের যত পবিত্র গ্রন্থ ভজানালয়
    ঐ একখানি ক্ষুদ্র দেহের সম পবিত্র নয় !
    হয়ত ইহারি ঔরসে ভাই ইহারই কুটীর-বাসে
    জন্মিছে কেহ-জোড়া নাই যার জগতের ইতিহাসে !
    যে বাণী আজিও শোনেনি জগৎ, যে মহাশক্তিধরে
    আজিও বিশ্ব দেখেনি–হয়ত আসিছে সে এরই ঘরে !
    ও কে ? চন্ডাল ? চমকাও কেন ? নহে ও ঘৃণ্য জীব !
    ওই হতে পারে হরিশচন্দ্র, ওই শ্মশানের শিব।
    আজ চন্ডাল, কাল হতে পারে মহাযোগী-সম্রাট,
    তুমি কাল তারে অর্ঘ্য দানিবে, করিবে নান্দী পাঠ ।
    রাখাল বলিয়া কারে কর হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে !
    হয়ত গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে !
    চাষা বলে কর ঘৃণা !
    দেখো চাষা রুপে লুকায়ে জনক বলরাম এলো কি না !
    যত নবী ছিল মেষের রাখাল, তারও ধরিল হাল
    তারাই আনিল অমর বাণী–যা আছে র’বে চিরকাল ।
    দ্বারে গালি খেয়ে ফিরে যায় নিতি ভিখারী ও ভিখারিনী,
    তারি মাঝে কবে এলো ভোলা-নাথ গিরিজায়া, তা কি চিনি !
    তোমার ভোগের হ্রাস হয় পাছে ভিক্ষা-মুষ্টি দিলে
    দ্বার দিয়ে তাই মার দিয়ে তুমি দেবতারে খেদাইলৈ ।
    সে মোর রহিল জমা –
    কে জানে তোমারে লাঞ্ছিতা দেবী করিয়াছে কিনা ক্ষমা !
    বন্ধু, তোমার বুক-ভরা লোভ দু’চোখ স্বার্থ ঠুলি,
    নতুবা দেখিতে, তোমারে সেবিতে দেবতা হয়েছে কুলী ।
    মানুষের বুকে যেটুকু দেবতা, বেদনা মথিত সুধা
    তাই লুটে তুমি খাবে পশু ? তুমি তা দিয়ে মিটাবে ক্ষুধা ?
    তোমার ক্ষুধার আহার তোমার মন্দোদরীই জানে
    তোমার মৃত্যু-বাণ আছে তব প্রাসাদের কোনখানে !
    তোমারি কামনা-রাণী
    যুগে যুগে পশু ফেলেছে তোমায় মৃত্যু বিবরে টানি ।

    See less
    • 0
  5. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার  (Paribesh dushan o tar protikar)   ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আRead more

    পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার  (Paribesh dushan o tar protikar)

     

    ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই
    সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার
    নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের
    সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আজ নিঙড়ে নিচ্ছে পৃথিবীতে। এতে কার হচ্ছে
    সর্বনাশ ? কার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে বিপন্ন ? আজ পৃথিবীর হাজারও সমস্যার মধ্যে
    যেটা সবচাইতে বড় সমস্যা সেটাই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ।

    পরিবেশ : যে পারিপার্শ্বিকতা আমাদের দেহ মনকে প্রভাবিত করে তার
    সম্মিলিত সমাহারই হলাে আমাদের পরিবেশ। বাস্তবিকই আমাদের চারিপাশে অবস্থিত
    উদার আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছগাছালি, নানাজাতের প্রাণী, ঝোপ, লতা,
    গুল্ম, মরুপ্রান্তের কীট, পতঙ্গ, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এ সবাইকে নিয়েই বসবাস
    করাই আমাদের পরিবেশ।

    পরিবেশ দূষণ : দূষণ বা ইংরেজিতে Pollution শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
    Pollution হতে উৎপন্ন। সাধারণ অর্থে পরিবেশের ক্ষতিকর বস্তুর প্রাধান্যকে
    দূষণ বা Pollution বলা হয়। আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের কুলম্করপ
    আমাদের প্রকৃতিতে যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে, নান প্রকার রােগের সৃষ্টি হচ্ছে,
    পর্বের সে মুক্ত বাতাস আর বিশুদ্ধ জল আমরা আর পাচ্ছিনা। এটাই দুষণ। তাই
    বাতাস, জল আর মাটি দুষিত হওয়াকেই এক কথায় বলা হয় পরিবেশ দূষণ। তাছাড়া
    শব্দ দূষণের পরিবেশ দূষণের অন্তর্গত।

    পরিবেশ দূষণের কারণ : সৃষ্টির উষা-লগ্নে আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে
    একদিন এ পৃথিবীতে জীবন ছিল সুন্দর।খাদ্য ও জলে ছিল বিশুদ্ধতা । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি
    আর বিজ্ঞানের প্রাধান্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে এল এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
    ক্ষতি হয়ে চলল উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণীজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এভাবে
    এসে দাড়িয়েছে এক বিপদজনক অবস্থায়।

    বায়ু দূষণ – প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ যে ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করতে
    চলেছে তার মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। প্রাণী জগতে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়ােজন নিল
    বায়ুর। জল ও খাদ্য ছাড়া মানুষ দু-চার দিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু অর্থাৎ
    বাতাস ছাড়া মানুষ বা প্রাণী এক মুহূর্তও বেচে থাকতে পারে না। বায়ু দুষিত হলে
    অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক দুষিত গ্যাস আমাদের
    দেহে প্রবেশ করবে। এই অক্সিজেনের যােগান দেয় গাছ-পালা, এজন্য প্রাণী জগৎ বেঁচে
    আছে। তাই অরণ্য হল মানব জগতের ফুসফুস। সে অরণা আজ ফবংসের মুখে।
    মানুষ একদিন প্রয়ােজনের তাগিদে অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করেছিল আর
    আজ তাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য করেছে অরণ্য ছেদন। যান্ত্রিক সভ্যতায় কল
    কারখানার ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন শহরের ধুলা-বালু, রাস্তার ধারে জ্বালানাে কয়লার ঘোষ
    ইত্যাদি বাতাসকে করছে বিষাক্ত। ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রম বর্ধমান, অকাল
    বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় এর মূলে বায়ু দূষণের অভিশাপ। এই দূষিত বায়ু নিশ্বাসকে নিষ্ট করে
    ফুসফুসকে দ্রুত জীর্ণ করে দেয়, ফলে শ্বাস রােগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রােগ
    দেখা দেয়।

    জল দূষণ : জলের অপর নাম জীবন। জলছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।
    অথচ এই জলই দূষিত হয়ে মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত মুক্ত এ
    বস্তুটিও আধুনিক সভ্যতার করাল গ্রাস হতে রক্ষা পায়নি। বড় বড় নদীতে আজ দুষিত
    জলের ধারা বহে চলেছে। কল-কারখানার এবং পয়ঃ প্রণালীর পরিত্যজ্য জল নালা
    নর্দমার মাধ্যমে জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    হিন্দু ধর্মে ও লােকাচারে গঙ্গানদী অতি পবিত্র নদী। স্নান-পান ও স্পর্শে মুক্তি।
    গঙ্গা ভগীরথ আনিত ও বিষ্ণু পদ গলিত ধারা সে বিশ্বাস আজ আর নেই। গঙ্গার
    সুদীর্ঘ তীরবর্তী গ্রাম জনপথ ও শহরের বর্জ্য পদার্থ পূণ্য সলিলা গঙ্গায় বিসর্জিত
    হচ্ছে। কিভাবে দূষিত জলের সমস্যা আজ সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এই দূষণের
    ফলে বিনষ্ট হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। অকাল মৃত্যু হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে।

    মাটি দূষণ : পৃথিবীর অন্যতম উপাদান মাটি উদ্ভিদ জগৎকে প্রতাক্ষভাবে
    এবং প্রাণী জগৎকে পরােক্ষভাবে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু নানধরনের জঞ্জাল, পরিত্যক্ত
    পদার্থ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটি-দূষণের জন্য দায়ি।
    নিউক্লীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নিউক্লীয় বিস্ফোরণ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে
    দূষণ সৃষ্টি করে। এই মাটির উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সঞ্চিত হয়। আর এই উদ্ভিদ
    খাদ্য হিসেবে প্রাণীর দেহে গেলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
    গ্রাম দূষণ ও এই দূষণের হাত থেকে ছায়া সুনিবিড় গ্রামাঞ্চলও বাদ যায়নি।
    মাটি দূষণ তাে গ্রামের বুকেই ঘটছে। স্থানে স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ, শ্মশান, ভাগাড় ইত্যাদি
    দূষিত পদার্থ আর বর্জিত পদার্থের স্তুপ। সংস্কৃত পুকুর, ডােবার নােংরা পটা জাল
    নির্মল গ্রামকেও আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে।

    শব্দ-দূষণ : শব্দ দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। গ্রামের
    তুলনায় শহরে এর উপদ্রব বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা আছি শব্দের জগতে কিন্তু তা
    যখন কানের কাছে অসহ্য হয়ে উঠে তখনই তাকে বলে শব্দ দূষণ। বিজ্ঞানীদের মতে
    ২০থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করবার ক্ষমতা থাকে মানুষের কিন্তু তা যখন এর
    মাত্রা ছাড়ায় তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্রমাগত মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন,
    বাইক, বৈদ্যুতিক হর্ণের কর্কশতা, মাইকের শব্দ, বোমা বাজি, পটকার ধ্বনি ইত্যাদি
    অহরহ পাল্লা দিয়ে শব্দ দূষণ করে চলেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের
    কানের। তাছাড়া মানসিক ক্ষতিও করে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও অনিদ্রা
    রােগ দেখা দেয়।

    প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ রূপ ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূতের হাত থেকে পৃথিবী
    তথা প্রাণী জগৎকে রক্ষা করতে দেরিতে হলেও সচেতনতা শুধু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের
    বৈজ্ঞানিকগণ পরিবেশকে রক্ষা করতে সচেতন হয়ে ওঠেছেন।
    প্রকৃতির মধ্যেই বায়ু বিশুদ্ধকরণের চমৎকার ব্যবস্থা আছে। সবুজ উদ্ভিদরা
    বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণে দূষিত গ্যাস ও ক্ষতিকর সুক্ষ্ম কণিকা সংগ্রহ করে
    বাতাসকে বিশুদ্ধ করে থাকে। সুতরাং বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বনভূমি বাড়াতে হবে
    অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে শিলাঞ্চল ও শহরগুলিতে।
    কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহরাঞ্চলের নাগরিকদের ব্যবহৃত আবর্জনা নদী
    বা সাগরের জলে ফেলা বন্ধ করতে হবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত কীটনাশক ও
    সার যাতে জলের সাথে না মিশে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

    বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বিশ্ব জুড়েই আজ পরিবেশ সংকট। সেই সংকট
    দূর করতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা রত। দূষণের ভয়াবহতা ঘুম কেড়ে নিয়েছে মানবতাবাদী
    আর চিন্তাশীল মানুষের। চিন্তিত রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাই রাষ্ট্রসংঘ ৫ জুন কি ঘােষণা করেছে বিশ্ব
    পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করতে। যাতে মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
    ১৯৭২ সন থেকে প্রতি বছরই ওই দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারেই ওই দিনটি নাড়া
    দিয়ে যায় বিশ্ব বিবেককে। গ্রহণ করা হয় নতুন শপথ।

    উপসংহার : পরিবেশ যতই দুষিত হােক না কেন সুষ্ঠু ভাবে বাঁচতে হলে
    তাকে পরিশােধন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক
    মানসিকতা, শিক্ষা ও সচেতনতার। এই পৃথিবীকে অর্থাৎ আমাদের একমাত্র বাসস্থানকে
    আমরা যদি নিজেই ধ্বংস করি তা হলে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনব আমরা তাই এ
    কথা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীকে সুন্দর ও সুষ্টু রাখা আমাদের
    দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    See less
    • -1
  6. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার (Paribesh dushan o tar pratikar rachana |Paribesh dushan paragraph )   ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজেRead more

    পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

    (Paribesh dushan o tar pratikar rachana |Paribesh dushan paragraph )

     

    ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই
    সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার
    নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের
    সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আজ নিঙড়ে নিচ্ছে পৃথিবীতে। এতে কার হচ্ছে
    সর্বনাশ ? কার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে বিপন্ন ? আজ পৃথিবীর হাজারও সমস্যার মধ্যে
    যেটা সবচাইতে বড় সমস্যা সেটাই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ।

    পরিবেশ : যে পারিপার্শ্বিকতা আমাদের দেহ মনকে প্রভাবিত করে তার
    সম্মিলিত সমাহারই হলাে আমাদের পরিবেশ। বাস্তবিকই আমাদের চারিপাশে অবস্থিত
    উদার আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছগাছালি, নানাজাতের প্রাণী, ঝোপ, লতা,
    গুল্ম, মরুপ্রান্তের কীট, পতঙ্গ, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এ সবাইকে নিয়েই বসবাস
    করাই আমাদের পরিবেশ।

    পরিবেশ দূষণ : দূষণ বা ইংরেজিতে Pollution শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
    Pollution হতে উৎপন্ন। সাধারণ অর্থে পরিবেশের ক্ষতিকর বস্তুর প্রাধান্যকে
    দূষণ বা Pollution বলা হয়। আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের কুলম্করপ
    আমাদের প্রকৃতিতে যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে, নান প্রকার রােগের সৃষ্টি হচ্ছে,
    পর্বের সে মুক্ত বাতাস আর বিশুদ্ধ জল আমরা আর পাচ্ছিনা। এটাই দুষণ। তাই
    বাতাস, জল আর মাটি দুষিত হওয়াকেই এক কথায় বলা হয় পরিবেশ দূষণ। তাছাড়া
    শব্দ দূষণের পরিবেশ দূষণের অন্তর্গত।

    পরিবেশ দূষণের কারণ : সৃষ্টির উষা-লগ্নে আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে
    একদিন এ পৃথিবীতে জীবন ছিল সুন্দর।খাদ্য ও জলে ছিল বিশুদ্ধতা । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি
    আর বিজ্ঞানের প্রাধান্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে এল এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
    ক্ষতি হয়ে চলল উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণীজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এভাবে
    এসে দাড়িয়েছে এক বিপদজনক অবস্থায়।

    বায়ু দূষণ – প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ যে ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করতে
    চলেছে তার মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। প্রাণী জগতে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়ােজন নিল
    বায়ুর। জল ও খাদ্য ছাড়া মানুষ দু-চার দিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু অর্থাৎ
    বাতাস ছাড়া মানুষ বা প্রাণী এক মুহূর্তও বেচে থাকতে পারে না। বায়ু দুষিত হলে
    অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক দুষিত গ্যাস আমাদের
    দেহে প্রবেশ করবে। এই অক্সিজেনের যােগান দেয় গাছ-পালা, এজন্য প্রাণী জগৎ বেঁচে
    আছে। তাই অরণ্য হল মানব জগতের ফুসফুস। সে অরণা আজ ফবংসের মুখে।
    মানুষ একদিন প্রয়ােজনের তাগিদে অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করেছিল আর
    আজ তাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য করেছে অরণ্য ছেদন। যান্ত্রিক সভ্যতায় কল
    কারখানার ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন শহরের ধুলা-বালু, রাস্তার ধারে জ্বালানাে কয়লার ঘোষ
    ইত্যাদি বাতাসকে করছে বিষাক্ত। ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রম বর্ধমান, অকাল
    বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় এর মূলে বায়ু দূষণের অভিশাপ। এই দূষিত বায়ু নিশ্বাসকে নিষ্ট করে
    ফুসফুসকে দ্রুত জীর্ণ করে দেয়, ফলে শ্বাস রােগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রােগ
    দেখা দেয়।

    জল দূষণ : জলের অপর নাম জীবন। জলছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।
    অথচ এই জলই দূষিত হয়ে মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত মুক্ত এ
    বস্তুটিও আধুনিক সভ্যতার করাল গ্রাস হতে রক্ষা পায়নি। বড় বড় নদীতে আজ দুষিত
    জলের ধারা বহে চলেছে। কল-কারখানার এবং পয়ঃ প্রণালীর পরিত্যজ্য জল নালা
    নর্দমার মাধ্যমে জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    হিন্দু ধর্মে ও লােকাচারে গঙ্গানদী অতি পবিত্র নদী। স্নান-পান ও স্পর্শে মুক্তি।
    গঙ্গা ভগীরথ আনিত ও বিষ্ণু পদ গলিত ধারা সে বিশ্বাস আজ আর নেই। গঙ্গার
    সুদীর্ঘ তীরবর্তী গ্রাম জনপথ ও শহরের বর্জ্য পদার্থ পূণ্য সলিলা গঙ্গায় বিসর্জিত
    হচ্ছে। কিভাবে দূষিত জলের সমস্যা আজ সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এই দূষণের
    ফলে বিনষ্ট হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। অকাল মৃত্যু হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে।

    মাটি দূষণ : পৃথিবীর অন্যতম উপাদান মাটি উদ্ভিদ জগৎকে প্রতাক্ষভাবে
    এবং প্রাণী জগৎকে পরােক্ষভাবে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু নানধরনের জঞ্জাল, পরিত্যক্ত
    পদার্থ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটি-দূষণের জন্য দায়ি।
    নিউক্লীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নিউক্লীয় বিস্ফোরণ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে
    দূষণ সৃষ্টি করে। এই মাটির উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সঞ্চিত হয়। আর এই উদ্ভিদ
    খাদ্য হিসেবে প্রাণীর দেহে গেলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
    গ্রাম দূষণ ও এই দূষণের হাত থেকে ছায়া সুনিবিড় গ্রামাঞ্চলও বাদ যায়নি।
    মাটি দূষণ তাে গ্রামের বুকেই ঘটছে। স্থানে স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ, শ্মশান, ভাগাড় ইত্যাদি
    দূষিত পদার্থ আর বর্জিত পদার্থের স্তুপ। সংস্কৃত পুকুর, ডােবার নােংরা পটা জাল
    নির্মল গ্রামকেও আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে।

    শব্দ-দূষণ : শব্দ দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। গ্রামের
    তুলনায় শহরে এর উপদ্রব বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা আছি শব্দের জগতে কিন্তু তা
    যখন কানের কাছে অসহ্য হয়ে উঠে তখনই তাকে বলে শব্দ দূষণ। বিজ্ঞানীদের মতে
    ২০থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করবার ক্ষমতা থাকে মানুষের কিন্তু তা যখন এর
    মাত্রা ছাড়ায় তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্রমাগত মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন,
    বাইক, বৈদ্যুতিক হর্ণের কর্কশতা, মাইকের শব্দ, বোমা বাজি, পটকার ধ্বনি ইত্যাদি
    অহরহ পাল্লা দিয়ে শব্দ দূষণ করে চলেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের
    কানের। তাছাড়া মানসিক ক্ষতিও করে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও অনিদ্রা
    রােগ দেখা দেয়।

    প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ রূপ ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূতের হাত থেকে পৃথিবী
    তথা প্রাণী জগৎকে রক্ষা করতে দেরিতে হলেও সচেতনতা শুধু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের
    বৈজ্ঞানিকগণ পরিবেশকে রক্ষা করতে সচেতন হয়ে ওঠেছেন।
    প্রকৃতির মধ্যেই বায়ু বিশুদ্ধকরণের চমৎকার ব্যবস্থা আছে। সবুজ উদ্ভিদরা
    বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণে দূষিত গ্যাস ও ক্ষতিকর সুক্ষ্ম কণিকা সংগ্রহ করে
    বাতাসকে বিশুদ্ধ করে থাকে। সুতরাং বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বনভূমি বাড়াতে হবে
    অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে শিলাঞ্চল ও শহরগুলিতে।
    কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহরাঞ্চলের নাগরিকদের ব্যবহৃত আবর্জনা নদী
    বা সাগরের জলে ফেলা বন্ধ করতে হবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত কীটনাশক ও
    সার যাতে জলের সাথে না মিশে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

    বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বিশ্ব জুড়েই আজ পরিবেশ সংকট। সেই সংকট
    দূর করতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা রত। দূষণের ভয়াবহতা ঘুম কেড়ে নিয়েছে মানবতাবাদী
    আর চিন্তাশীল মানুষের। চিন্তিত রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাই রাষ্ট্রসংঘ ৫ জুন কি ঘােষণা করেছে বিশ্ব
    পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করতে। যাতে মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
    ১৯৭২ সন থেকে প্রতি বছরই ওই দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারেই ওই দিনটি নাড়া
    দিয়ে যায় বিশ্ব বিবেককে। গ্রহণ করা হয় নতুন শপথ।

    উপসংহার : পরিবেশ যতই দুষিত হােক না কেন সুষ্ঠু ভাবে বাঁচতে হলে
    তাকে পরিশােধন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক
    মানসিকতা, শিক্ষা ও সচেতনতার। এই পৃথিবীকে অর্থাৎ আমাদের একমাত্র বাসস্থানকে
    আমরা যদি নিজেই ধ্বংস করি তা হলে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনব আমরা তাই এ
    কথা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীকে সুন্দর ও সুষ্টু রাখা আমাদের
    দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    See less
    • 0
  7. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার  (Paribesh dushan o tar pratikar rachana)   ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেইRead more

    পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার  (Paribesh dushan o tar pratikar rachana)

     

    ভূমিকা : মানুষের হাতেই যেন ঝলসে ওঠেছে মানুষের মৃত্যুবাণ। নিজেই
    সে করতে চলেছে নিজের ধ্বংস সাধন। নইলে কেন আজ শুনা যায় সভ্যতার
    নাভিশ্বাস ? সর্বং সহা পৃথিবী যেন আজ হারিয়ে ফেলেছে তার সহ্যের সীমা। নিজের
    সর্বগ্রাসী ক্ষুধা মিটাতেই মানুষ আজ নিঙড়ে নিচ্ছে পৃথিবীতে। এতে কার হচ্ছে
    সর্বনাশ ? কার ভবিষ্যৎ হয়ে পড়েছে বিপন্ন ? আজ পৃথিবীর হাজারও সমস্যার মধ্যে
    যেটা সবচাইতে বড় সমস্যা সেটাই হচ্ছে পরিবেশ দূষণ।

    পরিবেশ : যে পারিপার্শ্বিকতা আমাদের দেহ মনকে প্রভাবিত করে তার
    সম্মিলিত সমাহারই হলাে আমাদের পরিবেশ। বাস্তবিকই আমাদের চারিপাশে অবস্থিত
    উদার আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, গাছগাছালি, নানাজাতের প্রাণী, ঝোপ, লতা,
    গুল্ম, মরুপ্রান্তের কীট, পতঙ্গ, নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর, এ সবাইকে নিয়েই বসবাস
    করাই আমাদের পরিবেশ।

    পরিবেশ দূষণ : দূষণ বা ইংরেজিতে Pollution শব্দটি ল্যাটিন শব্দ
    Pollution হতে উৎপন্ন। সাধারণ অর্থে পরিবেশের ক্ষতিকর বস্তুর প্রাধান্যকে
    দূষণ বা Pollution বলা হয়। আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের কুলম্করপ
    আমাদের প্রকৃতিতে যে অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে, নান প্রকার রােগের সৃষ্টি হচ্ছে,
    পর্বের সে মুক্ত বাতাস আর বিশুদ্ধ জল আমরা আর পাচ্ছিনা। এটাই দুষণ। তাই
    বাতাস, জল আর মাটি দুষিত হওয়াকেই এক কথায় বলা হয় পরিবেশ দূষণ। তাছাড়া
    শব্দ দূষণের পরিবেশ দূষণের অন্তর্গত।

    পরিবেশ দূষণের কারণ : সৃষ্টির উষা-লগ্নে আবহাওয়ার অনুকুল পরিবেশে
    একদিন এ পৃথিবীতে জীবন ছিল সুন্দর।খাদ্য ও জলে ছিল বিশুদ্ধতা । কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি
    আর বিজ্ঞানের প্রাধান্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে এল এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়।
    ক্ষতি হয়ে চলল উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণীজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম্য এভাবে
    এসে দাড়িয়েছে এক বিপদজনক অবস্থায়।

    বায়ু দূষণ – প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ যে ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করতে
    চলেছে তার মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। প্রাণী জগতে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়ােজন নিল
    বায়ুর। জল ও খাদ্য ছাড়া মানুষ দু-চার দিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু অর্থাৎ
    বাতাস ছাড়া মানুষ বা প্রাণী এক মুহূর্তও বেচে থাকতে পারে না। বায়ু দুষিত হলে
    অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক দুষিত গ্যাস আমাদের
    দেহে প্রবেশ করবে। এই অক্সিজেনের যােগান দেয় গাছ-পালা, এজন্য প্রাণী জগৎ বেঁচে
    আছে। তাই অরণ্য হল মানব জগতের ফুসফুস। সে অরণা আজ ফবংসের মুখে।
    মানুষ একদিন প্রয়ােজনের তাগিদে অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করেছিল আর
    আজ তাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য করেছে অরণ্য ছেদন। যান্ত্রিক সভ্যতায় কল
    কারখানার ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন শহরের ধুলা-বালু, রাস্তার ধারে জ্বালানাে কয়লার ঘোষ
    ইত্যাদি বাতাসকে করছে বিষাক্ত। ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রম বর্ধমান, অকাল
    বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় এর মূলে বায়ু দূষণের অভিশাপ। এই দূষিত বায়ু নিশ্বাসকে নিষ্ট করে
    ফুসফুসকে দ্রুত জীর্ণ করে দেয়, ফলে শ্বাস রােগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রােগ
    দেখা দেয়।

    জল দূষণ : জলের অপর নাম জীবন। জলছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না।
    অথচ এই জলই দূষিত হয়ে মানুষের ধ্বংসের কারণ হয়। প্রকৃতি প্রদত্ত মুক্ত এ
    বস্তুটিও আধুনিক সভ্যতার করাল গ্রাস হতে রক্ষা পায়নি। বড় বড় নদীতে আজ দুষিত
    জলের ধারা বহে চলেছে। কল-কারখানার এবং পয়ঃ প্রণালীর পরিত্যজ্য জল নালা
    নর্দমার মাধ্যমে জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
    হিন্দু ধর্মে ও লােকাচারে গঙ্গানদী অতি পবিত্র নদী। স্নান-পান ও স্পর্শে মুক্তি।
    গঙ্গা ভগীরথ আনিত ও বিষ্ণু পদ গলিত ধারা সে বিশ্বাস আজ আর নেই। গঙ্গার
    সুদীর্ঘ তীরবর্তী গ্রাম জনপথ ও শহরের বর্জ্য পদার্থ পূণ্য সলিলা গঙ্গায় বিসর্জিত
    হচ্ছে। কিভাবে দূষিত জলের সমস্যা আজ সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তুলছে। এই দূষণের
    ফলে বিনষ্ট হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। অকাল মৃত্যু হানা দিচ্ছে ঘরে ঘরে।

    মাটি দূষণ : পৃথিবীর অন্যতম উপাদান মাটি উদ্ভিদ জগৎকে প্রতাক্ষভাবে
    এবং প্রাণী জগৎকে পরােক্ষভাবে রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু নানধরনের জঞ্জাল, পরিত্যক্ত
    পদার্থ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ঔষধ, তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটি-দূষণের জন্য দায়ি।
    নিউক্লীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও নিউক্লীয় বিস্ফোরণ থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় পদার্থ মাটিতে
    দূষণ সৃষ্টি করে। এই মাটির উদ্ভিদ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সঞ্চিত হয়। আর এই উদ্ভিদ
    খাদ্য হিসেবে প্রাণীর দেহে গেলে নানা রোগের সৃষ্টি হয়।
    গ্রাম দূষণ ও এই দূষণের হাত থেকে ছায়া সুনিবিড় গ্রামাঞ্চলও বাদ যায়নি।
    মাটি দূষণ তাে গ্রামের বুকেই ঘটছে। স্থানে স্থানে মল-মূত্র ত্যাগ, শ্মশান, ভাগাড় ইত্যাদি
    দূষিত পদার্থ আর বর্জিত পদার্থের স্তুপ। সংস্কৃত পুকুর, ডােবার নােংরা পটা জাল
    নির্মল গ্রামকেও আজ ধ্বংসের পথে নিয়ে চলেছে।

    শব্দ-দূষণ : শব্দ দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। গ্রামের
    তুলনায় শহরে এর উপদ্রব বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা আছি শব্দের জগতে কিন্তু তা
    যখন কানের কাছে অসহ্য হয়ে উঠে তখনই তাকে বলে শব্দ দূষণ। বিজ্ঞানীদের মতে
    ২০থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করবার ক্ষমতা থাকে মানুষের কিন্তু তা যখন এর
    মাত্রা ছাড়ায় তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ক্রমাগত মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন,
    বাইক, বৈদ্যুতিক হর্ণের কর্কশতা, মাইকের শব্দ, বোমা বাজি, পটকার ধ্বনি ইত্যাদি
    অহরহ পাল্লা দিয়ে শব্দ দূষণ করে চলেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের
    কানের। তাছাড়া মানসিক ক্ষতিও করে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও অনিদ্রা
    রােগ দেখা দেয়।

    প্রতিকার : পরিবেশ দূষণ রূপ ভয়ঙ্কর মৃত্যুদূতের হাত থেকে পৃথিবী
    তথা প্রাণী জগৎকে রক্ষা করতে দেরিতে হলেও সচেতনতা শুধু হয়েছে। বিভিন্ন দেশের
    বৈজ্ঞানিকগণ পরিবেশকে রক্ষা করতে সচেতন হয়ে ওঠেছেন।
    প্রকৃতির মধ্যেই বায়ু বিশুদ্ধকরণের চমৎকার ব্যবস্থা আছে। সবুজ উদ্ভিদরা
    বাতাস থেকে বিপুল পরিমাণে দূষিত গ্যাস ও ক্ষতিকর সুক্ষ্ম কণিকা সংগ্রহ করে
    বাতাসকে বিশুদ্ধ করে থাকে। সুতরাং বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করে বনভূমি বাড়াতে হবে
    অর্থাৎ প্রচুর পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে শিলাঞ্চল ও শহরগুলিতে।
    কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ, শহরাঞ্চলের নাগরিকদের ব্যবহৃত আবর্জনা নদী
    বা সাগরের জলে ফেলা বন্ধ করতে হবে। কৃষিকাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত কীটনাশক ও
    সার যাতে জলের সাথে না মিশে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

    বিশ্ব পরিবেশ দিবস : বিশ্ব জুড়েই আজ পরিবেশ সংকট। সেই সংকট
    দূর করতে বিজ্ঞানীরা গবেষণা রত। দূষণের ভয়াবহতা ঘুম কেড়ে নিয়েছে মানবতাবাদী
    আর চিন্তাশীল মানুষের। চিন্তিত রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাই রাষ্ট্রসংঘ ৫ জুন কি ঘােষণা করেছে বিশ্ব
    পরিবেশ দিবস হিসাবে পালন করতে। যাতে মানুষের এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
    ১৯৭২ সন থেকে প্রতি বছরই ওই দিনটি পালিত হচ্ছে। প্রতিবারেই ওই দিনটি নাড়া
    দিয়ে যায় বিশ্ব বিবেককে। গ্রহণ করা হয় নতুন শপথ।

    উপসংহার : পরিবেশ যতই দুষিত হােক না কেন সুষ্ঠু ভাবে বাঁচতে হলে
    তাকে পরিশােধন করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এর জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক
    মানসিকতা, শিক্ষা ও সচেতনতার। এই পৃথিবীকে অর্থাৎ আমাদের একমাত্র বাসস্থানকে
    আমরা যদি নিজেই ধ্বংস করি তা হলে নিজেদেরই মৃত্যু ডেকে আনব আমরা তাই এ
    কথা সর্বদা আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবীকে সুন্দর ও সুষ্টু রাখা আমাদের
    দায়িত্ব ও কর্তব্য।

    See less
    • 1
  8. তােমার জীবনের লক্ষ্য (My aim in life) ভূমিকা : ফুল ফুটে, পাখি গান গাহে, নদী বহে যায়, গাছে ফল ধরে, পাকে। প্রকৃতির মধ্যে এ সব বস্তু সকলেরই এক একটি উদ্দেশ্য আছে। ফুল ফুটে আমাদেরকে গন্ধ দানের জন্য, পাখি গান গাহে মানুষের মনে আনন্দ দানের জন্য, নদী বহে চলে জল দানের জন্য, ফল ধরে পাকে মানুষের তৃপ্তি আর পুষ্Read more

    তােমার জীবনের লক্ষ্য (My aim in life)

    ভূমিকা : ফুল ফুটে, পাখি গান গাহে, নদী বহে যায়, গাছে ফল ধরে,
    পাকে। প্রকৃতির মধ্যে এ সব বস্তু সকলেরই এক একটি উদ্দেশ্য আছে। ফুল ফুটে
    আমাদেরকে গন্ধ দানের জন্য, পাখি গান গাহে মানুষের মনে আনন্দ দানের জন্য, নদী
    বহে চলে জল দানের জন্য, ফল ধরে পাকে মানুষের তৃপ্তি আর পুষ্টি দানের জন্য।
    জগতে সকল কিছুরই জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে। মানব জীবনের সেরকম
    একটি লক্ষ্য আছে। আমি আমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য একটি লক্ষ্য স্থির করে
    রেখেছি। কবির ভাষায় –

    ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই
    কেহ অবনি পরে।
    সকলেই আমরা পরের তরে।
    তাই আমাকেও অন্যের জন্য কিছু করতে হবে।

    লক্ষ্য কী হওয়া উচিত : সাধক রামপ্রসাদের একটি গানের কয়েকটি

    কলি মনরে কৃষি কাজ জানিস না।
    এমন মানব জমিন রইল পতিত
    আবাদ করলে ফলতাে সােনা।

    মানব জীবনের দুর্বলতা ও অসামান্য তাৎপর্য কথা এই কলি কটিতে ধ্বনিত
    হয়েছে। পৃথিবীর সকল মহামানব, ঋষি ও মনীষীরা একই কথা বলে গিয়েছেন।
    জীবনকে সফল করে তুলতে হবে, নতুবা শুধু শুধু আহার-নিদ্রায় জীবনে অতিবাহিত
    করলে পশুর জীবন এবং মানুষের জীবনের মধ্যে তফাৎ রইল কোথায়? মানুষ ঈশ্বরের
    শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই আমরা প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে এসেছি ঈশ্বরের বাণী বহন করে কিছু
    করতে। মনুষ্য জীবন একটি বিশাল কর্মক্ষেত্র। কর্মের ভিতর দিয়ে জীবনকে রূপারিত
    করতে হবে – তবেই জীবনের সার্থকতা।

    লক্ষ্য স্থির করবার প্রয়ােজনীয়তা : সুতরাং শৈশব থেকেই প্রত্যেরে
    জীবনে একটি স্থির ও নিশ্চিন্ত লক্ষ্য থাকা উচিত। নতুবা, অসীম সাগরের মধ্যে নাবিক
    বক্ষে নৌকার যা অবস্থা, সংসার সমুদ্রে লক্ষাহীন ভাসমান মানুষের অবস্থাও হয় ঠিক
    সেই রকম। শৈশব থেকে একটা লক্ষ্য সম্পর্কে স্থির নিশ্চিন্ত হয়ে একটি মহৎ জীবনাদর্শ
    অনুসরণ করে ঠিক মতাে অগ্রসর হতে না পারলে যথার্থ লক্ষ্যে পৌছানাে সম্ভব হয় না।
    বর্তমানযুগে সমাজে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে হলে অন্ততঃ শিক্ষিত হতেই হবে।
    তাই আমাকে আগে পড়াশুনায় মনােযােগী হতে হবে।

    মানুষের উচ্চ আকাঙ্ক্ষা : সমাজে প্রত্যেক বৃত্তি-সম্পন্ন মানুষেরই
    প্রয়ােজনীয়তা আছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল-ব্যারিস্টার, শিক্ষক অধ্যাপক, সাংবাদিক,
    কৃষক, ব্যবসায়ী সকল শ্রেণির বৃত্তিজীবি মানুষের মিলনে সমাজের সচলতা। তাই দেখা
    গেছে, আমাদের মধ্যে সকলেরই প্রবল আকাঙক্ষা উচ্চ পদের সরকারি অফিসার,
    ডাক্তার, ইৱিনিয়ার, অধ্যাপক ও ব্যাপ্ত কর্মচারী হওয়ার। কেউই মনে সাধারণ প্রাইমারী
    শিক্ষক, ব্যবসায়ী কিংবা কৃষিজীবি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না। অথচ আমদের
    দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা উচ্চ পদস্থ অফিসার
    হলেই চলবে না, দেশ গড়ে তুলার কাজে চাই আদর্শবাদী শিক্ষক, সুদক্ষ কৃষিজীবি,
    নির্ভীক নিরপেক্ষ সাংবাদিক, সাধু সচ্চরিত্র ব্যবসায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন বৃত্তিজীবি মানুষ।

    আমার লক্ষ্য : আমি স্থির করেছি একজন সাধু ও সঙ্চরিত্র ব্যবসায়ী হব।
    আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চাইতেন ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালি সুপ্রতিষ্ঠিত হােক। বাক্তিগতভাবে
    তিনি বাঙালি ব্যবসায়ীকে আর্থিক সাহায্য পর্যন্ত করেছিলেন। আমি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র
    রায়ের মনােভাবের গভীর প্রশংসা করি। বিশ্বাস করি, শুধু ডাক্তার, উকিল, বারিস্টার
    হলেই বাঙ্গালী সমাজের উন্নতি ঘটবে না। বাঙ্গালী ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়েও সাফল্য
    অর্জন করতে হবে। তাই আমি স্থির করেছি একজন সার্থক বাবসায়ী হব। এখানে প্রশ্ন
    উঠতে পারে ব্যবসার মাধ্যমে কতটুকু সমাজের উপকার সাধন করা যাবে কিংবা ব্যবসা
    কি এমন আদর্শ বৃত্তি। তার উত্তরে আমি বলব আজকাল সরকারি চাকরি লাভ করা
    বড় কঠিন ব্যাপার। তাই ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের উপায় আছে স্বাধীনভাবে থেকে।

    ব্যবসায় সততা : আজ যখন সমস্ত দেশ অসাধু ব্যবসায়ী ছেয়ে গেছে,
    কালােবাজারী, মুনাফা বাজীতে দেশ ভরে গেছে, তখন একথা বলার সময় এসেছে যে,
    ব্যবসা ভিত্তিতে আদর্শ, সততা ও স্থান সাধুতার অতি উচ্চে। দেশের মুদ্রাস্ফীতি ও
    নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হল অসাধু ব্যবসায়ীদের কালো টাকা
    সংগ্রহ। গভীর পরিতাপের বিষয়, আজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমেই বহিরাগত
    অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সততা
    সম্পন্ন দেশের যুবকদের শুধু সরকারি চাকরির দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে না
    থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে পড়া উচিত। ব্যবসার জন্য কিছু মূলধন অবশ্যই চাই।
    তবে স্বল্প মূলধনেও ব্যবসা করা যায়। কেবল চাই শ্রম, চাই উদ্যোগ ও অধ্যবসায়।
    তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন ব্যঙ্কি থেকে ঋণ হিসেবে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে
    সরকারি অনুকূল্য পাওয়াও কঠিন নয়।

    ব্যবসার উদ্দেশ্য ধনী হওয়া নয় । পৃথিবীর বড়-বড় ব্যবসায়ীর জীবন।
    ইতিহাস পাঠ করে দেখেছি তারা খুব সাধারণ অবস্থা থেকেই উন্নতি করেছেন। টাটা,
    রিলায়েন্স, কার্নেগী ব্যক্তিগণ তার উদাহরণ। অবশ্য টাটা-বিড়লার মতাে ধনী হওয়ার সাধ ও সাধ্য আমার নেই। ধন সম্পদের পাহাড় জমিয়ে কী হবে -যদি সেই ধন সম্পদ দেশের ও দশের কাজে না
    লাগে।
    উপসংহারঃ কথায় আছে ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালাে।’
    কর্মের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে জীবনে নিষ্ঠা লাভ করা যায়। এখানে প্রতিষ্ঠার অর্থ স্বচ্ছলতা
    আর স্বচ্ছলতা জীবনের পথে প্রয়োজন। এছাড়া, ব্যবসার সঙ্গে দেশের অতীত।
    ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যুক্ত। বহির্বাণিজ্য ভারতের গৌরবময় অতীতের কথা ভুলা যায়।
    । ব্যবসা একটি শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গ। কাজেই ব্যবসাকে অবহেলা করার যুক্তি নেই।
    সুতরাং আশা রাখি এ বৃত্তিতে যেন সকলের শুভেচ্ছা পাই।

    See less
    • 1
  9. তােমার জীবনের লক্ষ্য (Amar jiboner lokkho) ভূমিকা : ফুল ফুটে, পাখি গান গাহে, নদী বহে যায়, গাছে ফল ধরে, পাকে। প্রকৃতির মধ্যে এ সব বস্তু সকলেরই এক একটি উদ্দেশ্য আছে। ফুল ফুটে আমাদেরকে গন্ধ দানের জন্য, পাখি গান গাহে মানুষের মনে আনন্দ দানের জন্য, নদী বহে চলে জল দানের জন্য, ফল ধরে পাকে মানুষের তৃপ্তি আরRead more

    তােমার জীবনের লক্ষ্য (Amar jiboner lokkho)

    ভূমিকা : ফুল ফুটে, পাখি গান গাহে, নদী বহে যায়, গাছে ফল ধরে,
    পাকে। প্রকৃতির মধ্যে এ সব বস্তু সকলেরই এক একটি উদ্দেশ্য আছে। ফুল ফুটে
    আমাদেরকে গন্ধ দানের জন্য, পাখি গান গাহে মানুষের মনে আনন্দ দানের জন্য, নদী
    বহে চলে জল দানের জন্য, ফল ধরে পাকে মানুষের তৃপ্তি আর পুষ্টি দানের জন্য।
    জগতে সকল কিছুরই জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য আছে। মানব জীবনের সেরকম
    একটি লক্ষ্য আছে। আমি আমার ভবিষ্যত জীবনের জন্য একটি লক্ষ্য স্থির করে
    রেখেছি। কবির ভাষায় –

    ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই
    কেহ অবনি পরে।
    সকলেই আমরা পরের তরে।
    তাই আমাকেও অন্যের জন্য কিছু করতে হবে।

    লক্ষ্য কী হওয়া উচিত : সাধক রামপ্রসাদের একটি গানের কয়েকটি

    কলি মনরে কৃষি কাজ জানিস না।
    এমন মানব জমিন রইল পতিত
    আবাদ করলে ফলতাে সােনা।

    মানব জীবনের দুর্বলতা ও অসামান্য তাৎপর্য কথা এই কলি কটিতে ধ্বনিত
    হয়েছে। পৃথিবীর সকল মহামানব, ঋষি ও মনীষীরা একই কথা বলে গিয়েছেন।
    জীবনকে সফল করে তুলতে হবে, নতুবা শুধু শুধু আহার-নিদ্রায় জীবনে অতিবাহিত
    করলে পশুর জীবন এবং মানুষের জীবনের মধ্যে তফাৎ রইল কোথায়? মানুষ ঈশ্বরের
    শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তাই আমরা প্রতিটি মানুষ পৃথিবীতে এসেছি ঈশ্বরের বাণী বহন করে কিছু
    করতে। মনুষ্য জীবন একটি বিশাল কর্মক্ষেত্র। কর্মের ভিতর দিয়ে জীবনকে রূপারিত
    করতে হবে – তবেই জীবনের সার্থকতা।

    লক্ষ্য স্থির করবার প্রয়ােজনীয়তা : সুতরাং শৈশব থেকেই প্রত্যেরে
    জীবনে একটি স্থির ও নিশ্চিন্ত লক্ষ্য থাকা উচিত। নতুবা, অসীম সাগরের মধ্যে নাবিক
    বক্ষে নৌকার যা অবস্থা, সংসার সমুদ্রে লক্ষাহীন ভাসমান মানুষের অবস্থাও হয় ঠিক
    সেই রকম। শৈশব থেকে একটা লক্ষ্য সম্পর্কে স্থির নিশ্চিন্ত হয়ে একটি মহৎ জীবনাদর্শ
    অনুসরণ করে ঠিক মতাে অগ্রসর হতে না পারলে যথার্থ লক্ষ্যে পৌছানাে সম্ভব হয় না।
    বর্তমানযুগে সমাজে সম্মানের সঙ্গে বসবাস করতে হলে অন্ততঃ শিক্ষিত হতেই হবে।
    তাই আমাকে আগে পড়াশুনায় মনােযােগী হতে হবে।

    মানুষের উচ্চ আকাঙ্ক্ষা : সমাজে প্রত্যেক বৃত্তি-সম্পন্ন মানুষেরই
    প্রয়ােজনীয়তা আছে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল-ব্যারিস্টার, শিক্ষক অধ্যাপক, সাংবাদিক,
    কৃষক, ব্যবসায়ী সকল শ্রেণির বৃত্তিজীবি মানুষের মিলনে সমাজের সচলতা। তাই দেখা
    গেছে, আমাদের মধ্যে সকলেরই প্রবল আকাঙক্ষা উচ্চ পদের সরকারি অফিসার,
    ডাক্তার, ইৱিনিয়ার, অধ্যাপক ও ব্যাপ্ত কর্মচারী হওয়ার। কেউই মনে সাধারণ প্রাইমারী
    শিক্ষক, ব্যবসায়ী কিংবা কৃষিজীবি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন না। অথচ আমদের
    দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হলে শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা উচ্চ পদস্থ অফিসার
    হলেই চলবে না, দেশ গড়ে তুলার কাজে চাই আদর্শবাদী শিক্ষক, সুদক্ষ কৃষিজীবি,
    নির্ভীক নিরপেক্ষ সাংবাদিক, সাধু সচ্চরিত্র ব্যবসায়ী প্রভৃতি বিভিন্ন বৃত্তিজীবি মানুষ।

    আমার লক্ষ্য : আমি স্থির করেছি একজন সাধু ও সঙ্চরিত্র ব্যবসায়ী হব।
    আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় চাইতেন ব্যবসা-বাণিজ্যে বাঙালি সুপ্রতিষ্ঠিত হােক। বাক্তিগতভাবে
    তিনি বাঙালি ব্যবসায়ীকে আর্থিক সাহায্য পর্যন্ত করেছিলেন। আমি আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র
    রায়ের মনােভাবের গভীর প্রশংসা করি। বিশ্বাস করি, শুধু ডাক্তার, উকিল, বারিস্টার
    হলেই বাঙ্গালী সমাজের উন্নতি ঘটবে না। বাঙ্গালী ব্যবসা বাণিজ্যের দিক দিয়েও সাফল্য
    অর্জন করতে হবে। তাই আমি স্থির করেছি একজন সার্থক বাবসায়ী হব। এখানে প্রশ্ন
    উঠতে পারে ব্যবসার মাধ্যমে কতটুকু সমাজের উপকার সাধন করা যাবে কিংবা ব্যবসা
    কি এমন আদর্শ বৃত্তি। তার উত্তরে আমি বলব আজকাল সরকারি চাকরি লাভ করা
    বড় কঠিন ব্যাপার। তাই ব্যবসার মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের উপায় আছে স্বাধীনভাবে থেকে।

    ব্যবসায় সততা : আজ যখন সমস্ত দেশ অসাধু ব্যবসায়ী ছেয়ে গেছে,
    কালােবাজারী, মুনাফা বাজীতে দেশ ভরে গেছে, তখন একথা বলার সময় এসেছে যে,
    ব্যবসা ভিত্তিতে আদর্শ, সততা ও স্থান সাধুতার অতি উচ্চে। দেশের মুদ্রাস্ফীতি ও
    নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ হল অসাধু ব্যবসায়ীদের কালো টাকা
    সংগ্রহ। গভীর পরিতাপের বিষয়, আজ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমেই বহিরাগত
    অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে চলে গেছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে সততা
    সম্পন্ন দেশের যুবকদের শুধু সরকারি চাকরির দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে না
    থেকে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমে পড়া উচিত। ব্যবসার জন্য কিছু মূলধন অবশ্যই চাই।
    তবে স্বল্প মূলধনেও ব্যবসা করা যায়। কেবল চাই শ্রম, চাই উদ্যোগ ও অধ্যবসায়।
    তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন ব্যঙ্কি থেকে ঋণ হিসেবে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে
    সরকারি অনুকূল্য পাওয়াও কঠিন নয়।

    ব্যবসার উদ্দেশ্য ধনী হওয়া নয় । পৃথিবীর বড়-বড় ব্যবসায়ীর জীবন।
    ইতিহাস পাঠ করে দেখেছি তারা খুব সাধারণ অবস্থা থেকেই উন্নতি করেছেন। টাটা,
    রিলায়েন্স, কার্নেগী ব্যক্তিগণ তার উদাহরণ। অবশ্য টাটা-বিড়লার মতাে ধনী হওয়ার সাধ ও সাধ্য আমার নেই। ধন সম্পদের পাহাড় জমিয়ে কী হবে -যদি সেই ধন সম্পদ দেশের ও দশের কাজে না
    লাগে।
    উপসংহারঃ কথায় আছে ‘জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালাে।’
    কর্মের প্রতি নিষ্ঠা থাকলে জীবনে নিষ্ঠা লাভ করা যায়। এখানে প্রতিষ্ঠার অর্থ স্বচ্ছলতা
    আর স্বচ্ছলতা জীবনের পথে প্রয়োজন। এছাড়া, ব্যবসার সঙ্গে দেশের অতীত।
    ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি যুক্ত। বহির্বাণিজ্য ভারতের গৌরবময় অতীতের কথা ভুলা যায়।
    । ব্যবসা একটি শিল্প সংস্কৃতির অঙ্গ। কাজেই ব্যবসাকে অবহেলা করার যুক্তি নেই।
    সুতরাং আশা রাখি এ বৃত্তিতে যেন সকলের শুভেচ্ছা পাই।

    See less
    • 1
  10. অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (aster biruddhe gan kobita) জয় গোস্বামী অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে আমি এখন হাজার হাতে পায়ে এগিয়ে আসি , উঠে দাড়াই হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে গান তো জানি একটা দুটো আঁকড়ে ধরে সে-খরকুটো রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে মাথায় কত শকুন বা চিল আমার শুধু একটRead more

    অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান (aster biruddhe gan kobita)

    জয় গোস্বামী

    অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে

    আমি এখন হাজার হাতে পায়ে

    এগিয়ে আসি , উঠে দাড়াই

    হাত নাড়িয়ে বুলেট তাড়াই

    গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে

    গান তো জানি একটা দুটো

    আঁকড়ে ধরে সে-খরকুটো

    রক্ত মুছি শুধু গানের গায়ে

    মাথায় কত শকুন বা চিল

    আমার শুধু একটা কোকিল

    গান-বাঁধবে সহস্র উপায়ে

    অস্ত্র রাখো অস্ত্র ফ্যালো পায়ে

    বর্ম খুলে দেখো আদুরে গায়ে

    গান দাঁড়াল ঋষি বালক

    মাথায় গোঁজা ময়ূর পালক

    তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান

    নদীতে , দেশে গায়ে

    অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানের দুটি পায়ে

    See less
    • 0