কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের গৌরবের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলি লিখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সত্যকে বিবেকানন্দ যে ভাবে জগৎ সভায় উপস্থাপিত করেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। ভারতবর্ষকে তিনি বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
জন্ম ও পরিচয় : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। শৈশবে তার নাম ছিল “বীরেশ্বর’ বা ‘বিলে’। তার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত সে যুগের একজন বিখ্যাত এটর্নি ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরীও ছিলেন তেজস্বী মহিলা। প্রথমে গৃহশিক্ষকের কাছে, পরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে, এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি পড়েন। ১৮৮৩ সালে তিনি বি. এ. পাশ করে আইন পড়তে আরম্ভ করেন বটে, কিন্তু হঠাৎ পিতার মৃত্যু হওয়ায় পড়াশুনা ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ঈশ্বরমুখী ছিলেন। সংকীর্ণ জাত-পাত তিনি মানতেন না।
রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্য :- বি. এ. পড়বার সময় তিনি পরমপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন। আর এই সংস্পর্শে আসার প্রথম দিনটি থেকেই তিনি রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁর বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এই তরুণ যুবকটিকে দান করে তাকে দীক্ষিত করেন নতুন নতুন মন্ত্রে। রামকৃষ্ণদেব ছিলেন নবযুগের আচার্য। সকল ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি তার। সাধনা ও জীবন চর্চার ভিতর দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন যে “যত মত তত পথ’।তাছাড়া জীব সেবার মধ্য দিয়েই যে ঈশ্বর সেবা হয়, এতে তিনি ছিলেন গভীর বিশ্বাসী।
ভারত পরিক্রমা : ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে তিন বছর ধরে সারা ভারত পরিক্রমা করেন। ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগাে শহরে ধর্মমহাসভায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য হিন্দু ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ভারত থেকে রওয়ানা হলেন। এই মহাসভায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকার বহু নর-নারী তার ধর্ম মতে আকৃষ্ট হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ভগিনী নিবেদিতা একজন।
মিশন ও আদর্শ :- বিজয়ীর সম্মান নিয়ে দেশে ফিরে এসে ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বেলুড় মঠ’। মানব সেবা, বেদান্ত দর্শন এবং রামকৃষ্ণের শিক্ষাপ্রচারই ছিল মিশন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। দয়া নয়, দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের সেবার মধ্যদিয়ে তিনি ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তার মতে ঈশ্বর আছেন আমাদের সামনে ‘বহুরূপে’ দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের মধ্যে। এদের সেবা করলেই ঈশ্বরকেই লাভ করা যাবে।
ভারত প্রীতি :- তিনি নিজদেশকে সকলের উপরে স্থান দিতেন। প্রতিটি ভারত বাসীকে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশকে গড়ে তুলার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখতেন, সেই দেশ গড়ার স্বপ্নকে তিনি চেয়েছেন বাস্তবে রূপায়ণ করতে। তার লক্ষ্যছিল সকলের কল্যাণের জন্য এক বৃহৎ অখণ্ড ভারতবর্ষ গড়ে তােলা। তিনিই এদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যবাসীর ভ্রান্তধারণা দূর করেছিলেন। স্বামীজী দেখতে চেয়েছিলেন এক শক্তিশালী ভারতবর্ষকে।
মানবতাবাদী বৈদান্তিকঃ স্বামী বিবেকানন্দ বৈদান্তিক সন্ন্যাসী হলেও আধুনিক মানবতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মের এই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটিকে গ্রহণ করেছিলেন। বেদান্তের এই নবভাস্যকার বলেন – ‘জগতে জ্ঞানালোেক বিস্তার কর; আলােক-অলােক লইয়া আইস। প্রত্যেকে যেন জ্ঞানের আলাে পায়, যতদিন না সকলেই ভগবান লাভ করে, ততদিন যেন তােমাদের কাজ শেষ না হয়। জগজ্জননীর কাছে তিনি মনুষ্যত্ব প্রার্থনা। করে বলেছেন, “হে জগদম্বে আমায় মনুষ্যত্ব দাও, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দুর কর, অমিয় মানুষ কর।’
সাহিত্য কৃতি : শুধু কর্মের জগতেই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকান্দ মানবতার বাণী প্রচার করেন গেছেন। তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থগুলি— ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। বাংলাভাষায় তাঁর পত্রগুচ্ছে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনাও করেছেন। বাংলা চলিত গদ্যরীতির তিনি অন্যতম পথিকৃৎ, কথ্য শব্দ প্রয়োগেও দুঃসাহসী পথ প্রদর্শক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের, শিক্ষিত ভারতবর্ষের, সংস্কারহীন ভারতবর্ষের। ভারতবর্ষই ছিল তার শৈশবের শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন আর বাধকের বারাণসী। তিনি বুকে হাত রেখে বলতে শিখিয়েছেন, “ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, আমার রক্ত। ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, ভারতের দীনতা আমার অপমান।”
উপসংহার : অত্যাধিক পরিশ্রম আর নিরলস কর্মসাধনায় এই কর্মী সন্ন্যাসীর শরীর ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বৎসর। বয়সে এই বীর সন্ন্যাসী বেলুড় মঠে চিরনিদ্রায় অভিভূত হন। স্বামীজীর জন্ম দিবস সারা ভারতবর্ষে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু স্বামীজীর সেই ত্যাগ, সেই জীব প্রেম, সেই উদ্যম বর্তমান ভারতবর্ষে কোথায় ? অন্ধকার থেকে আলাের দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে,অসৎ থেকে সৎ এর পথে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন যে মহামানব, সেই বিবেকানন্দই ভারতবর্ষের প্রকৃত বাতিঘর।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের গৌরবের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলি লিখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সত্যকে বিবেকানন্দ যে ভাবে জগৎ সভায় উপস্থাপিত করেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। ভারতবর্ষকে তিনি বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
জন্ম ও পরিচয় : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। শৈশবে তার নাম ছিল “বীরেশ্বর’ বা ‘বিলে’। তার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত সে যুগের একজন বিখ্যাত এটর্নি ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরীও ছিলেন তেজস্বী মহিলা। প্রথমে গৃহশিক্ষকের কাছে, পরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে, এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি পড়েন। ১৮৮৩ সালে তিনি বি. এ. পাশ করে আইন পড়তে আরম্ভ করেন বটে, কিন্তু হঠাৎ পিতার মৃত্যু হওয়ায় পড়াশুনা ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ঈশ্বরমুখী ছিলেন। সংকীর্ণ জাত-পাত তিনি মানতেন না।
রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্য :- বি. এ. পড়বার সময় তিনি পরমপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন। আর এই সংস্পর্শে আসার প্রথম দিনটি থেকেই তিনি রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁর বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এই তরুণ যুবকটিকে দান করে তাকে দীক্ষিত করেন নতুন নতুন মন্ত্রে। রামকৃষ্ণদেব ছিলেন নবযুগের আচার্য। সকল ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি তার। সাধনা ও জীবন চর্চার ভিতর দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন যে “যত মত তত পথ’।তাছাড়া জীব সেবার মধ্য দিয়েই যে ঈশ্বর সেবা হয়, এতে তিনি ছিলেন গভীর বিশ্বাসী।
ভারত পরিক্রমা : ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে তিন বছর ধরে সারা ভারত পরিক্রমা করেন। ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগাে শহরে ধর্মমহাসভায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য হিন্দু ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ভারত থেকে রওয়ানা হলেন। এই মহাসভায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকার বহু নর-নারী তার ধর্ম মতে আকৃষ্ট হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ভগিনী নিবেদিতা একজন।
মিশন ও আদর্শ :- বিজয়ীর সম্মান নিয়ে দেশে ফিরে এসে ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বেলুড় মঠ’। মানব সেবা, বেদান্ত দর্শন এবং রামকৃষ্ণের শিক্ষাপ্রচারই ছিল মিশন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। দয়া নয়, দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের সেবার মধ্যদিয়ে তিনি ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তার মতে ঈশ্বর আছেন আমাদের সামনে ‘বহুরূপে’ দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের মধ্যে। এদের সেবা করলেই ঈশ্বরকেই লাভ করা যাবে।
ভারত প্রীতি :- তিনি নিজদেশকে সকলের উপরে স্থান দিতেন। প্রতিটি ভারত বাসীকে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশকে গড়ে তুলার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখতেন, সেই দেশ গড়ার স্বপ্নকে তিনি চেয়েছেন বাস্তবে রূপায়ণ করতে। তার লক্ষ্যছিল সকলের কল্যাণের জন্য এক বৃহৎ অখণ্ড ভারতবর্ষ গড়ে তােলা। তিনিই এদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যবাসীর ভ্রান্তধারণা দূর করেছিলেন। স্বামীজী দেখতে চেয়েছিলেন এক শক্তিশালী ভারতবর্ষকে।
মানবতাবাদী বৈদান্তিকঃ স্বামী বিবেকানন্দ বৈদান্তিক সন্ন্যাসী হলেও আধুনিক মানবতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মের এই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটিকে গ্রহণ করেছিলেন। বেদান্তের এই নবভাস্যকার বলেন – ‘জগতে জ্ঞানালোেক বিস্তার কর; আলােক-অলােক লইয়া আইস। প্রত্যেকে যেন জ্ঞানের আলাে পায়, যতদিন না সকলেই ভগবান লাভ করে, ততদিন যেন তােমাদের কাজ শেষ না হয়। জগজ্জননীর কাছে তিনি মনুষ্যত্ব প্রার্থনা। করে বলেছেন, “হে জগদম্বে আমায় মনুষ্যত্ব দাও, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দুর কর, অমিয় মানুষ কর।’
সাহিত্য কৃতি : শুধু কর্মের জগতেই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকান্দ মানবতার বাণী প্রচার করেন গেছেন। তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থগুলি— ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। বাংলাভাষায় তাঁর পত্রগুচ্ছে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনাও করেছেন। বাংলা চলিত গদ্যরীতির তিনি অন্যতম পথিকৃৎ, কথ্য শব্দ প্রয়োগেও দুঃসাহসী পথ প্রদর্শক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের, শিক্ষিত ভারতবর্ষের, সংস্কারহীন ভারতবর্ষের। ভারতবর্ষই ছিল তার শৈশবের শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন আর বাধকের বারাণসী। তিনি বুকে হাত রেখে বলতে শিখিয়েছেন, “ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, আমার রক্ত। ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, ভারতের দীনতা আমার অপমান।”
উপসংহার : অত্যাধিক পরিশ্রম আর নিরলস কর্মসাধনায় এই কর্মী সন্ন্যাসীর শরীর ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বৎসর। বয়সে এই বীর সন্ন্যাসী বেলুড় মঠে চিরনিদ্রায় অভিভূত হন। স্বামীজীর জন্ম দিবস সারা ভারতবর্ষে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু স্বামীজীর সেই ত্যাগ, সেই জীব প্রেম, সেই উদ্যম বর্তমান ভারতবর্ষে কোথায় ? অন্ধকার থেকে আলাের দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে,অসৎ থেকে সৎ এর পথে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন যে মহামানব, সেই বিবেকানন্দই ভারতবর্ষের প্রকৃত বাতিঘর।
স্বামী বিবেকানন্দ
ভূমিকা “বীর সন্ন্যাসী বিবেক বাণী ছুটেছে জগৎময়,
বাঙ্গালীর ছেলে ব্যাঘ্রে-বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।”
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের গৌরবের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলি লিখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সত্যকে বিবেকানন্দ যে ভাবে জগৎ সভায় উপস্থাপিত করেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। ভারতবর্ষকে তিনি বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
জন্ম ও পরিচয় : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। শৈশবে তার নাম ছিল “বীরেশ্বর’ বা ‘বিলে’। তার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত সে যুগের একজন বিখ্যাত এটর্নি ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরীও ছিলেন তেজস্বী মহিলা। প্রথমে গৃহশিক্ষকের কাছে, পরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে, এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি পড়েন। ১৮৮৩ সালে তিনি বি. এ. পাশ করে আইন পড়তে আরম্ভ করেন বটে, কিন্তু হঠাৎ পিতার মৃত্যু হওয়ায় পড়াশুনা ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ঈশ্বরমুখী ছিলেন। সংকীর্ণ জাত-পাত তিনি মানতেন না।
রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্য :- বি. এ. পড়বার সময় তিনি পরমপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন। আর এই সংস্পর্শে আসার প্রথম দিনটি থেকেই তিনি রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁর বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এই তরুণ যুবকটিকে দান করে তাকে দীক্ষিত করেন নতুন নতুন মন্ত্রে। রামকৃষ্ণদেব ছিলেন নবযুগের আচার্য। সকল ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি তার। সাধনা ও জীবন চর্চার ভিতর দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন যে “যত মত তত পথ’।তাছাড়া জীব সেবার মধ্য দিয়েই যে ঈশ্বর সেবা হয়, এতে তিনি ছিলেন গভীর বিশ্বাসী।
ভারত পরিক্রমা : ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে তিন বছর ধরে সারা ভারত পরিক্রমা করেন। ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগাে শহরে ধর্মমহাসভায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য হিন্দু ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ভারত থেকে রওয়ানা হলেন। এই মহাসভায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকার বহু নর-নারী তার ধর্ম মতে আকৃষ্ট হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ভগিনী নিবেদিতা একজন।
মিশন ও আদর্শ :- বিজয়ীর সম্মান নিয়ে দেশে ফিরে এসে ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বেলুড় মঠ’। মানব সেবা, বেদান্ত দর্শন এবং রামকৃষ্ণের শিক্ষাপ্রচারই ছিল মিশন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। দয়া নয়, দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের সেবার মধ্যদিয়ে তিনি ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তার মতে ঈশ্বর আছেন আমাদের সামনে ‘বহুরূপে’ দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের মধ্যে। এদের সেবা করলেই ঈশ্বরকেই লাভ করা যাবে।
‘বহুরূপে সম্মুখে তােমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর; |
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
ভারত প্রীতি :- তিনি নিজদেশকে সকলের উপরে স্থান দিতেন। প্রতিটি ভারত বাসীকে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশকে গড়ে তুলার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখতেন, সেই দেশ গড়ার স্বপ্নকে তিনি চেয়েছেন বাস্তবে রূপায়ণ করতে। তার লক্ষ্যছিল সকলের কল্যাণের জন্য এক বৃহৎ অখণ্ড ভারতবর্ষ গড়ে তােলা। তিনিই এদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যবাসীর ভ্রান্তধারণা দূর করেছিলেন। স্বামীজী দেখতে চেয়েছিলেন এক শক্তিশালী ভারতবর্ষকে।
মানবতাবাদী বৈদান্তিকঃ স্বামী বিবেকানন্দ বৈদান্তিক সন্ন্যাসী হলেও আধুনিক মানবতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মের এই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটিকে গ্রহণ করেছিলেন। বেদান্তের এই নবভাস্যকার বলেন – ‘জগতে জ্ঞানালোেক বিস্তার কর; আলােক-অলােক লইয়া আইস। প্রত্যেকে যেন জ্ঞানের আলাে পায়, যতদিন না সকলেই ভগবান লাভ করে, ততদিন যেন তােমাদের কাজ শেষ না হয়। জগজ্জননীর কাছে তিনি মনুষ্যত্ব প্রার্থনা। করে বলেছেন, “হে জগদম্বে আমায় মনুষ্যত্ব দাও, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দুর কর, অমিয় মানুষ কর।’
সাহিত্য কৃতি : শুধু কর্মের জগতেই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকান্দ মানবতার বাণী প্রচার করেন গেছেন। তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থগুলি— ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। বাংলাভাষায় তাঁর পত্রগুচ্ছে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনাও করেছেন। বাংলা চলিত গদ্যরীতির তিনি অন্যতম পথিকৃৎ, কথ্য শব্দ প্রয়োগেও দুঃসাহসী পথ প্রদর্শক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের, শিক্ষিত ভারতবর্ষের, সংস্কারহীন ভারতবর্ষের। ভারতবর্ষই ছিল তার শৈশবের শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন আর বাধকের বারাণসী। তিনি বুকে হাত রেখে বলতে শিখিয়েছেন, “ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, আমার রক্ত। ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, ভারতের দীনতা আমার অপমান।”
উপসংহার : অত্যাধিক পরিশ্রম আর নিরলস কর্মসাধনায় এই কর্মী সন্ন্যাসীর শরীর ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বৎসর। বয়সে এই বীর সন্ন্যাসী বেলুড় মঠে চিরনিদ্রায় অভিভূত হন। স্বামীজীর জন্ম দিবস সারা ভারতবর্ষে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু স্বামীজীর সেই ত্যাগ, সেই জীব প্রেম, সেই উদ্যম বর্তমান ভারতবর্ষে কোথায় ? অন্ধকার থেকে আলাের দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে,অসৎ থেকে সৎ এর পথে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন যে মহামানব, সেই বিবেকানন্দই ভারতবর্ষের প্রকৃত বাতিঘর।
Sattystyle
বাঙ্গালীর ছেলে ব্যাঘ্রে-বৃষভে ঘটাবে সমন্বয়।”
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত আমাদের গৌরবের কথা বলতে গিয়ে এই কথাগুলি লিখেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে। ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক সত্যকে বিবেকানন্দ যে ভাবে জগৎ সভায় উপস্থাপিত করেছিলেন, তার সত্যিই তুলনা হয় না। ভারতবর্ষকে তিনি বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।
জন্ম ও পরিচয় : ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দের জন্ম হয়। শৈশবে তার নাম ছিল “বীরেশ্বর’ বা ‘বিলে’। তার পিতা বিশ্বনাথ দত্ত সে যুগের একজন বিখ্যাত এটর্নি ছিলেন। মাতা ভুবনেশ্বরীও ছিলেন তেজস্বী মহিলা। প্রথমে গৃহশিক্ষকের কাছে, পরে মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে, এবং তারপর প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি পড়েন। ১৮৮৩ সালে তিনি বি. এ. পাশ করে আইন পড়তে আরম্ভ করেন বটে, কিন্তু হঠাৎ পিতার মৃত্যু হওয়ায় পড়াশুনা ছাড়তে তিনি বাধ্য হন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ঈশ্বরমুখী ছিলেন। সংকীর্ণ জাত-পাত তিনি মানতেন না।
রামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্য :- বি. এ. পড়বার সময় তিনি পরমপুরুষ রামকৃষ্ণদেবের সংস্পর্শে আসেন। আর এই সংস্পর্শে আসার প্রথম দিনটি থেকেই তিনি রামকৃষ্ণ দেবের প্রতি এক গভীর আকর্ষণ অনুভব করেন। তাঁর বিশেষ আধ্যাত্মিক ক্ষমতা এই তরুণ যুবকটিকে দান করে তাকে দীক্ষিত করেন নতুন নতুন মন্ত্রে। রামকৃষ্ণদেব ছিলেন নবযুগের আচার্য। সকল ধর্ম ও মতের প্রতি তিনি ছিলেন শ্রদ্ধাশীল এবং তিনি তার। সাধনা ও জীবন চর্চার ভিতর দিয়ে আবিষ্কার করেছিলেন যে “যত মত তত পথ’।তাছাড়া জীব সেবার মধ্য দিয়েই যে ঈশ্বর সেবা হয়, এতে তিনি ছিলেন গভীর বিশ্বাসী।
ভারত পরিক্রমা : ১৮৮৬ খৃষ্টাব্দে রামকৃষ্ণদেবের মৃত্যুর পর বিবেকানন্দ পরিব্রাজক হয়ে তিন বছর ধরে সারা ভারত পরিক্রমা করেন। ১৮৯৩ খৃষ্টাব্দে আমেরিকার শিকাগাে শহরে ধর্মমহাসভায় বক্তৃতা দেওয়ার জন্য হিন্দু ধর্মের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ভারত থেকে রওয়ানা হলেন। এই মহাসভায় হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে বক্তৃতা দিয়ে তিনি অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করেন। ইংল্যাণ্ড ও আমেরিকার বহু নর-নারী তার ধর্ম মতে আকৃষ্ট হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ভগিনী নিবেদিতা একজন।
মিশন ও আদর্শ :- বিজয়ীর সম্মান নিয়ে দেশে ফিরে এসে ১৮৯৭ খৃষ্টাব্দে ‘রামকৃষ্ণ মিশন’ এবং ১৮৯৯ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘বেলুড় মঠ’। মানব সেবা, বেদান্ত দর্শন এবং রামকৃষ্ণের শিক্ষাপ্রচারই ছিল মিশন প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য। দয়া নয়, দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের সেবার মধ্যদিয়ে তিনি ঈশ্বর প্রাপ্তির পথ দেখিয়েছিলেন। তার মতে ঈশ্বর আছেন আমাদের সামনে ‘বহুরূপে’ দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষদের মধ্যে। এদের সেবা করলেই ঈশ্বরকেই লাভ করা যাবে।
‘বহুরূপে সম্মুখে তােমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর; |
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।
ভারত প্রীতি :- তিনি নিজদেশকে সকলের উপরে স্থান দিতেন। প্রতিটি ভারত বাসীকে তিনি জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে আহ্বান জানিয়েছেন। দেশকে গড়ে তুলার জন্য তিনি স্বপ্ন দেখতেন, সেই দেশ গড়ার স্বপ্নকে তিনি চেয়েছেন বাস্তবে রূপায়ণ করতে। তার লক্ষ্যছিল সকলের কল্যাণের জন্য এক বৃহৎ অখণ্ড ভারতবর্ষ গড়ে তােলা। তিনিই এদেশ সম্পর্কে পাশ্চাত্যবাসীর ভ্রান্তধারণা দূর করেছিলেন। স্বামীজী দেখতে চেয়েছিলেন এক শক্তিশালী ভারতবর্ষকে।
মানবতাবাদী বৈদান্তিকঃ স্বামী বিবেকানন্দ বৈদান্তিক সন্ন্যাসী হলেও আধুনিক মানবতাবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হিন্দুধর্মের এই শ্রেষ্ঠ গ্রন্থটিকে গ্রহণ করেছিলেন। বেদান্তের এই নবভাস্যকার বলেন – ‘জগতে জ্ঞানালোেক বিস্তার কর; আলােক-অলােক লইয়া আইস। প্রত্যেকে যেন জ্ঞানের আলাে পায়, যতদিন না সকলেই ভগবান লাভ করে, ততদিন যেন তােমাদের কাজ শেষ না হয়। জগজ্জননীর কাছে তিনি মনুষ্যত্ব প্রার্থনা। করে বলেছেন, “হে জগদম্বে আমায় মনুষ্যত্ব দাও, আমার দুর্বলতা কাপুরুষতা দুর কর, অমিয় মানুষ কর।’
সাহিত্য কৃতি : শুধু কর্মের জগতেই নয়, চিন্তা ও মননশীলতার ক্ষেত্রে স্বামী বিবেকান্দ মানবতার বাণী প্রচার করেন গেছেন। তাঁর রচিত প্রধান গ্রন্থগুলি— ‘পরিব্রাজক’, ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত’ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। বাংলাভাষায় তাঁর পত্রগুচ্ছে কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক আলােচনাও করেছেন। বাংলা চলিত গদ্যরীতির তিনি অন্যতম পথিকৃৎ, কথ্য শব্দ প্রয়োগেও দুঃসাহসী পথ প্রদর্শক। তিনি স্বপ্ন দেখতেন সমৃদ্ধ ভারতবর্ষের, শিক্ষিত ভারতবর্ষের, সংস্কারহীন ভারতবর্ষের। ভারতবর্ষই ছিল তার শৈশবের শিশুশয্যা, যৌবনের উপবন আর বাধকের বারাণসী। তিনি বুকে হাত রেখে বলতে শিখিয়েছেন, “ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষ আমার ভাই, আমার রক্ত। ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ, ভারতের দীনতা আমার অপমান।”
উপসংহার : অত্যাধিক পরিশ্রম আর নিরলস কর্মসাধনায় এই কর্মী সন্ন্যাসীর শরীর ভেঙ্গে পড়ে। অবশেষে ১৯০২ সালের ৪ জুলাই মাত্র ৩৯ বৎসর। বয়সে এই বীর সন্ন্যাসী বেলুড় মঠে চিরনিদ্রায় অভিভূত হন। স্বামীজীর জন্ম দিবস সারা ভারতবর্ষে ‘জাতীয় যুব দিবস’ হিসাবে পালিত হয়। কিন্তু স্বামীজীর সেই ত্যাগ, সেই জীব প্রেম, সেই উদ্যম বর্তমান ভারতবর্ষে কোথায় ? অন্ধকার থেকে আলাের দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে,অসৎ থেকে সৎ এর পথে আমাদের যাত্রা শুরু করেছিলেন যে মহামানব, সেই বিবেকানন্দই ভারতবর্ষের প্রকৃত বাতিঘর।