একই নামে দুটি কবিতা লেখা হয়েছে। দুটি কবিতায় নারীবাদী কবিতা যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীর নিত্য দিনের শোষণ ও দুঃখের কথা উল্লেখ হয়েছে।
আমি সেই মেয়ে – লিখেছেন শুভ দাসগুপ্ত
আমি সেই মেয়েটি – কবিতা সিংহ
আমিই সেই মেয়ে (শুভ দাশগুপ্ত)
আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।
রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।
সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।
আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।
বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ
হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।
English Transliteration:
Ami shei meye
Bus e train rastay aapni jake roj dekhen
Jar Shari, Kopaler tip kaner dul aar payer gorali
aapni roj dekhen
Aar
Aar o onek kichu dekhte parar shopno dekhen
Shopne jake icche moton dekhen.
Ami shei meye
Biharer protontyo grame diner aaloy jar chaya marano
Apnar dhorme nishiddo, r rater ghovire jake basti theke
tule aante paik barkondaz pathan aapni
Aar shushojjito bichanay jar jonno opekkhay odhin hoy
Apnar rajokiyo lampottyo
Ami e shei meye
Ami e shei meye- Assamer chabagane Jhupri kamin basti theke
Jake aapne niye jete chan shahebi bangloy moddorate
Fiar Placer jholshe utha aaloy modir chokhe dekhte chan
Jar onabrito shorir
Ami Shei meye.
Rajastaner shukno uthon theke pipashar jol aante jake aapni
Pathiye den dash mile dure shorkari idaray- Aar kuri mile
Hete klanto biddasto je ramani ghora kake ghore firlei jake bashiye den
Chulkar aaguner shamne apnar roti banate
Ami e shei meye.
Ami e shei meye- jake niye aaoni magna hote chan gangar dhare kingba
Vitoriar shabuje kingba Cinema haller nil ondokarte, jar
Chokhe aapni jhuta shopner kajol aar furiye jawa
Cigarater packeter moto jake pather pashe chure kele aapnar ful shajano
Gari shuvobibaho shushamponno korte chute jay shohorer pothe
kone dekha aalor gudhulite Eka dariye thaka
Ami e shei meye
Ami e shei meye- Emon ki debotarao jake khoma koren na. Ahankar
Aar shaktir dambhe jar garbe rekhe jan kumarir opman
Aar chokher jole kunti hoye nadir jole
bishorjon dite hoy karnake. Aattajke
Ami e shei meye
Shongshare oshomoyer aami e bhorosha.
Amar chatro poranor takay mayer oshudh kena hoy.
amar barti rojgaare bhai er boin kena hoy.
Amar shomosto shorir bristite vijte thake
Kalo aakash mathay niye
Ami chata hoye thaki.
chatar niche shukhe bache shongshar
Aapni
Apnara
Amar jonno onek korechen
Shahitte kabbe shastre lokachare amake
Maa bole pujo korechen
Prokriti bole aadikhetto korechen-Aar
Shahar ganjer kanagalite
Thote rang makhiye kupi haate dar koriyeo diyechen.
Ha Ami shei meye.
Ekdin hoyto- onno kono ek din
Amar shomosto pushak chure fele diye
Ami e hoye uthbo shei oshamanno!
Khola chul megher moto dhakbe amar khula pith
Du chokhe jolbe vishan aagun.
Kopal-thikre berube voyonkar tejrashmi
Haate jolshe uthbe shei khargo
Du payer nupure beje uthbe randundavi
Nrishansho ottohashite bhore uthbe aakash.
Debotara o aatonke shabda hoye bolte thakben
Mohameghprobang ghorang muktokeshing chaturbhujang
kalikang dokkinang munndomala bhibushitang.
bibhotsho dabanoler moto
ami egote thakbo! Aar amar egiye jawar pather dupashe
Munduhin oshonkhyo deho chotfot korte thakbe-
Shovhotar deho
Pragatir deho
Unnatir deho
Shomajer deho
hoyto ami shei meye! hoyto! hoyto ba!
আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়ে
যার জন্মের সময় কোন শাঁখ বাজেনি
জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষীর ছঁকে বন্দী
যার লগ্ন রাশি রাহু কেতুর
দিশা খোঁজা হয়েছে না, তার নিজের জন্য নয়
তার পিতার জন্য আর ভাই এর জন্য
তার স্বামীর জন্য তার পুত্রের জন্য
কিন্তু যার গর্ভ থেকে আমার জন্ম
সেই মায়ের কথা বলেনি কেউ।
আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়েটি
যে জন্ম থেকেই বিবাহের
জন্য বলি প্রদত্ত
যার বাইরের চেহারা
চোখ – নাক-মুখ- ত্বক- চুল – রঙ
নিয়েই দর কষাকষি
কাল না ফর্সা
খাঁদা না টিকালো
লম্বা না বেঁটে
খুতখুতে না টানা টানা
যার মাথার বাইরেটা নিয়েই সকলের ভাবনা
মাথার ভিতরটা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই
আমিই সেই মেয়েটি যে ছোটবেলা থেকে শুনেছে
জোরে জোরে কথা বলতে নেই
ছুটতে নেই -চেঁচাতে নেই- হাসতে নেই
এমন কি কাঁদলেও তা লুকিয়ে লুকিয়ে
আমিই সেই মেয়েটি যাকে বলতে নেই –
খিদে পেয়েছে – ঘুম পেয়েছে – ইচ্ছে করছেনা-
ক্লান্ত লাগছে -আর পারছিনা — আর পারছিনা।
আমিই সেই মেয়েটি খেলার জন্য যার
হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুতুল
পুতুলের আদল পাবার জন্য
পুতুলের সংসার বানাবার জন্য।
আমিই সেই মেয়েটি যে গত কোন
শতাব্দী তে পাঁচ বছর বয়সে মালা দিয়েছে –
গঙ্গা যাত্রীর গলায়
কুলীন ব্রাম্মন এর তিনশো পঁয়ষট্টি তম স্ত্রীর
অন্যতমা হয়ে স্বামীর গরবে হয়েছি গরবিনী
একাদশীর দিন অবুজ দশমীর বালিকার তৃষ্ণায় –
আটক ঘরের মাটি লেহন করতে করতে প্রান ত্যাগ করেছি
সন্তানের পর সন্তান জন্ম দিতে দিতে যন্ত্রণায়
মুখ থুবড়ে পরেছি সূতিকাগারে
জ্বলে পুড়ে মরেছি সতীদাহে।
আমি বুঝতে পারিনি যে চাকরীর জায়গায়
নিজের কাজের কুশলতা দেখাতে নেই
আমি বুঝতে পারিনি যে আমার প্রেমিককে
তার প্রেম পত্রের বানান ভুল গুল ধরিয়ে দেওটাই
আমার ভুল হয়ে ছিল
আমি বুঝতে পারিনি আমি যদি কবি হতে চাই
আমার বন্ধুরা বলবে ”ওটা কবিতা হয়নি পদ্য হয়েছে”
আমি বুঝতে পারিনি যে বিংশ শতাব্দীর শেষ সীমানায় এসে দাড়িয়েও
এইপুরুষ শাসিত সমাজ বুদ্ধিমতিদের জন্য অপ্রস্তুত
আমি সেই মেয়েটি যে দেখেছে একটি নারী
কেমন করে নিছক মেয়েছেলে বনে যায়
চরিত্রের উলটো দিকে হেঁটে যায় সফল স্বামীদের গিন্নীরা
শিক্ষার চেয়ে উজ্জলতা পায় বেনারসি সাড়ীর ফুলকি
বুদ্ধির চেয়ে দিপ্তিমান হয়ে ওঠে অন্ধকারে হীরা পান্না
আমি সেই মেয়েটি জানেন আমি সেই মেয়েটি
যে জীবনের কয়েকটি বছর ভুলের পরে ভুল
পুনরুপি ভুল করে চলেছি
অন্ধকারের দিনে ফিরতে পারিনা বলেই কি
আমি অপমানের জলন্ত কয়লার উপর দিকে হেঁটে যেতে চাই
যেতে চাই দুঃখের দিকে
আমি প্রনাম জানাই সেই প্রথম আগুনকে
যার নাম বর্ণপরিচয়
সেই অগ্নি সুদ্ধ পরম্পরাকে সেইসব পুরুষ রমণীকে
যারা উনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকারের হাতলে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে
এক জন্মে আমাকে জন্ম জন্মান্তরের দরজা খুলে দিয়েছে।
আমি আজ প্রেমের জন্য ফেলে যাচ্ছি আরাম-
শোকার্জিত শাকান্নের জন্য ফেলে যাচ্ছি ক্রীতদাসের চর্ব্যচোষ্য
জেগে থাকার জন্য ফেলে যাচ্ছি ভাত ঘুম,
যন্ত্রণার জন্য ফেলে যাচ্ছি সুখ –
জ্ঞানের জন্য ফেলে যাচ্ছি অন্ধতা
আনন্দের জন্য ফেলে যাচ্ছি সাফল্য
অমৃতের জন্য ঐশ্বর্য।
আমার হাতে জ্বলছে দিশারীদের শিক্ষার মহান আগুন
আমিই সেই মেয়েটি———
আপনারা নিজের দর্পণে দেখে আমাকে চিনুন
আমাকে চিনুন – আমাকে চিনুন।।
English Transliteration:
Ami Shei Meyeti, Shei meye
jar jonmer shomoy kono shakh bajeni
Jonmo thekei je Jyotishir choke bondi
jar logno rasi rahu ketur
Disha Khuja hoyeche na, tar nijer jonno noy
Tar pitar jonno r bhai er jonno
tar shamir jonno r putrer jonno
Kintu jar gorvo theke amar janma
Shei mayer kotha boleni keu.
Ami Shei Meyeti, Shei meyeti
Je janma thekei bibaher
Jonno bole prodotto
jar bairer chehara
chok-Nak-mukh-tak-chul-rang
Niyei dor koshakoshi
kalo na forsha
Khada na tikalo
lomba na bete
khutkhute na tantana
jar mathar baireta niyei shokoler bhabona
mathar vitorta niye kar o kuno matha byatha nei
Ami shei meyeti je chotobela theke shuneche
Jore jore kotha bolte nei
Chutte nei-chechate nei-hashte nei
Emonki kadleo ta lukiye lukiye
Ami shei meyeti jake bolte nei
Khide peyeche-ghum peyeche-icche korchena
Klanta lagche-aar parchi na- r parchi na
Ami Shei Meyeti khelar jonno jar
haate tule dewa hocche putul
Putuler aadol pawar jonno
Putuler shonshar banabar jonno
Ami Shei Meyeti Je goto kono
shotabdi te panch bachar boyoshe mala diyeche
Ganga jatrir golay
Kulin Brahmaner tin sho poyshotti tama strir
Onnotama hoye shamir garabe hoyechi garabini
ekadashir din abuj dashamir balikar trishnay
aatak ghorer mati lehon korte korte pran tyag korechi
Shontaner par shantan janma dite dite jantronay
Mukh thubre porechi shutikagare
Jole pure morechi shotidahe.
Ami bujhte parini je charir jaygay
Nijer kajer kushalata dekhate nei
Ami bujhte parini je amar premik ke
Tar prem potrer banan bhulgulo dhoriye dewatai
Amar bhul hoyechilo
Ami bujhte parini ami jodio kobi hote chai
Amar bandura bolbe “ota kobita hoini podyo hoyeche”
Ami bujhte parini je bingsho shotabdir shesh shimanay eshe dariye o
Ei purush shashito shomaj buddhimatider jonno oprastut
Ami shei meyeti je dekheche ekti naari
kemon kore nisok meyechele bone jay
Charitrer ulto dike hete jay shofol shamider ginnira
Shikkhar cheye ujjolota pay benarashi sharir fulki
Buddhir cheye diptoman hoye uthe ondhokare hira panna
Hridoy
একই নামে দুটি কবিতা লেখা হয়েছে। দুটি কবিতায় নারীবাদী কবিতা যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নারীর নিত্য দিনের শোষণ ও দুঃখের কথা উল্লেখ হয়েছে।
আমি সেই মেয়ে – লিখেছেন শুভ দাসগুপ্ত
আমি সেই মেয়েটি – কবিতা সিংহ
আমিই সেই মেয়ে (শুভ দাশগুপ্ত)
আমিই সেই মেয়ে।
বাসে ট্রেনে রাস্তায় আপনি যাকে রোজ দেখেন
যার শাড়ি, কপালের টিপ কানের দুল আর পায়ের গোড়ালি
আপনি রোজ দেখেন।
আর
আরও অনেক কিছু দেখতে পাবার স্বপ্ন দেখেন।
স্বপ্নে যাকে ইচ্ছে মতন দেখেন।
আমিই সেই মেয়ে।
বিহারের প্রত্যন্ত গ্রামে দিনের আলোয় যার ছায়া মাড়ানো
আপনার ধর্মে নিষিদ্ধ, আর রাতের গভীরে যাকে বস্তি থেকে
তুলে আনতে পাইক বরকন্দাজ পাঠান আপনি
আর সুসজ্জিত বিছানায় যার জন্য অপেক্ষায় অধীন হয়
আপনার রাজকীয় লাম্পট্য
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- আসামের চাবাগানে ঝুপড়ি কামিন বস্তি থেকে
যাকে আপনি নিয়ে যেতে চান সাহেবি বাংলোয় মধ্যরাতে
ফায়ার প্লেসের ঝলসে ওঠা আলোয় মদির চোখে দেখতে চান
যার অনাবৃত শরীর
আমি সেই মেয়ে।
রাজস্থানের শুকনো উঠোন থেকে পিপাসার জল আনতে যাকে আপনি
পাঠিয়ে দেন দশ মাইল দূরে সরকারি ইঁদারায়- আর কুড়ি মাইল
হেঁটে কান্ত বিধ্বস্ত যে রমণী ঘড়া কাঁখে ঘরে ফিরলেই যাকে বসিয়ে দেন
চুলার আগুনের সামনে আপনার রুটি বানাতে
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- যাকে নিয়ে আপনি মগ্ন হতে চান গঙ্গার ধারে কিংবা
ভিক্টোরিয়ার সবুজে কিংবা সিনেমা হলের নীল অন্ধকারে, যার
চোখে আপনি একে দিতে চান ঝুটা স্বপ্নের কাজল আর ফুরিয়ে যাওয়া
সিগারেটের প্যাকেটের মত যাকে পথের পাশে ছুঁড়ে ফেলে আপনার ফুল সাজানো
গাড়ি শুভবিবাহ সুসম্পন্ন করতে ছুটে যায় শহরের পথে-
কনে দেখা আলোর গোধুলিতে একা দাঁড়িয়ে থাকা
আমিই সেই মেয়ে।
আমিই সেই মেয়ে- এমন কি দেবতারাও যাকে ক্ষমা করেন না। অহংকার
আর শক্তির দম্ভে যার গর্ভে রেখে যান কুমারীর অপমান
আর চোখের জলে কুন্তী হয়ে নদীর জলে
বিসর্জন দিতে হয় কর্ণকে। আত্মজকে।
আমিই সেই মেয়ে।
সংসারে অসময়ের আমিই ভরসা।
আমার ছাত্র পড়ানো টাকায় মায়ের ওষুধ কেনা হয়।
আমার বাড়তি রোজগারে ভাইয়ের বই কেনা হয়।
আমার সমস্ত শরীর প্রবল বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে।
কালো আকাশ মাথায় নিয়ে
আমি ছাতা হয়ে থাকি।
ছাতার নিচে সুখে বাঁচে সংসার।
আপনি
আপনারা
আমার জন্য অনেক করেছেন।
সাহিত্যে কাব্যে শাস্ত্রে লোকাচারে আমাকে
মা বলে পুজো করেছেন।
প্রকৃতি বলে আদিখ্যেতা করেছেন- আর
শহর গঞ্জের কানাগলিতে
ঠোঁটে রঙ মাখিয়ে কুপি হাতে দাঁড় করিয়েও দিয়েছেন।
হ্যা, আমিই সেই মেয়ে।
একদিন হয়ত
হয়ত একদিন- হয়ত অন্য কোন এক দিন
আমার সমস্ত মিথ্যে পোশাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে
আমিই হয়ে উঠবো সেই অসামান্যা !
খোলা চুল মেঘের মত ঢাকবে আমার খোলা পিঠ।
দু চোখে জ্বলবে ভীষণ আগুন।
কপাল-ঠিকরে বেরুবে ভয়ঙ্কর তেজরশ্মি।
হাতে ঝলসে উঠবে সেই খড়গ।
দুপায়ের নুপুরে বেজে উঠবে রণদুন্দভি।
নৃশংস অট্টহাসিতে ভরে উঠবে আকাশ।
দেবতারাও আতঙ্কে স্তব্ধ হয়ে বলতে থাকবেন
মহামেঘপ্রভাং ঘোরাং মুক্তকেশীং চতুর্ভুজাং
কালিকাং দক্ষিণাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাং।
বীভৎস দাবানলের মত
আমি এগোতে থাকবো ! আর আমার এগিয়ে যাবার পথের দুপাশে
মুণ্ডহীন অসংখ্য দেহ ছটফট করতে থাকবে-
সভ্যতার দেহ
প্রগতির দেহ-
উন্নতির দেহ-
সমাজের দেহ
হয়ত আমিই সেই মেয়ে ! হয়ত ! হয়ত বা।
English Transliteration:
Ami shei meye
Bus e train rastay aapni jake roj dekhen
Jar Shari, Kopaler tip kaner dul aar payer gorali
aapni roj dekhen
Aar
Aar o onek kichu dekhte parar shopno dekhen
Shopne jake icche moton dekhen.
Ami shei meye
Biharer protontyo grame diner aaloy jar chaya marano
Apnar dhorme nishiddo, r rater ghovire jake basti theke
tule aante paik barkondaz pathan aapni
Aar shushojjito bichanay jar jonno opekkhay odhin hoy
Apnar rajokiyo lampottyo
Ami e shei meye
Ami e shei meye- Assamer chabagane Jhupri kamin basti theke
Jake aapne niye jete chan shahebi bangloy moddorate
Fiar Placer jholshe utha aaloy modir chokhe dekhte chan
Jar onabrito shorir
Ami Shei meye.
Rajastaner shukno uthon theke pipashar jol aante jake aapni
Pathiye den dash mile dure shorkari idaray- Aar kuri mile
Hete klanto biddasto je ramani ghora kake ghore firlei jake bashiye den
Chulkar aaguner shamne apnar roti banate
Ami e shei meye.
Ami e shei meye- jake niye aaoni magna hote chan gangar dhare kingba
Vitoriar shabuje kingba Cinema haller nil ondokarte, jar
Chokhe aapni jhuta shopner kajol aar furiye jawa
Cigarater packeter moto jake pather pashe chure kele aapnar ful shajano
Gari shuvobibaho shushamponno korte chute jay shohorer pothe
kone dekha aalor gudhulite Eka dariye thaka
Ami e shei meye
Ami e shei meye- Emon ki debotarao jake khoma koren na. Ahankar
Aar shaktir dambhe jar garbe rekhe jan kumarir opman
Aar chokher jole kunti hoye nadir jole
bishorjon dite hoy karnake. Aattajke
Ami e shei meye
Shongshare oshomoyer aami e bhorosha.
Amar chatro poranor takay mayer oshudh kena hoy.
amar barti rojgaare bhai er boin kena hoy.
Amar shomosto shorir bristite vijte thake
Kalo aakash mathay niye
Ami chata hoye thaki.
chatar niche shukhe bache shongshar
Aapni
Apnara
Amar jonno onek korechen
Shahitte kabbe shastre lokachare amake
Maa bole pujo korechen
Prokriti bole aadikhetto korechen-Aar
Shahar ganjer kanagalite
Thote rang makhiye kupi haate dar koriyeo diyechen.
Ha Ami shei meye.
Ekdin hoyto- onno kono ek din
Amar shomosto pushak chure fele diye
Ami e hoye uthbo shei oshamanno!
Khola chul megher moto dhakbe amar khula pith
Du chokhe jolbe vishan aagun.
Kopal-thikre berube voyonkar tejrashmi
Haate jolshe uthbe shei khargo
Du payer nupure beje uthbe randundavi
Nrishansho ottohashite bhore uthbe aakash.
Debotara o aatonke shabda hoye bolte thakben
Mohameghprobang ghorang muktokeshing chaturbhujang
kalikang dokkinang munndomala bhibushitang.
bibhotsho dabanoler moto
ami egote thakbo! Aar amar egiye jawar pather dupashe
Munduhin oshonkhyo deho chotfot korte thakbe-
Shovhotar deho
Pragatir deho
Unnatir deho
Shomajer deho
hoyto ami shei meye! hoyto! hoyto ba!
Hridoy
আমিই সেই মেয়ে- কবিতা সিংহ
আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়ে
যার জন্মের সময় কোন শাঁখ বাজেনি
জন্ম থেকেই যে জ্যোতিষীর ছঁকে বন্দী
যার লগ্ন রাশি রাহু কেতুর
দিশা খোঁজা হয়েছে না, তার নিজের জন্য নয়
তার পিতার জন্য আর ভাই এর জন্য
তার স্বামীর জন্য তার পুত্রের জন্য
কিন্তু যার গর্ভ থেকে আমার জন্ম
সেই মায়ের কথা বলেনি কেউ।
আমিই সেই মেয়েটি সেই মেয়েটি
যে জন্ম থেকেই বিবাহের
জন্য বলি প্রদত্ত
যার বাইরের চেহারা
চোখ – নাক-মুখ- ত্বক- চুল – রঙ
নিয়েই দর কষাকষি
কাল না ফর্সা
খাঁদা না টিকালো
লম্বা না বেঁটে
খুতখুতে না টানা টানা
যার মাথার বাইরেটা নিয়েই সকলের ভাবনা
মাথার ভিতরটা নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই
আমিই সেই মেয়েটি যে ছোটবেলা থেকে শুনেছে
জোরে জোরে কথা বলতে নেই
ছুটতে নেই -চেঁচাতে নেই- হাসতে নেই
এমন কি কাঁদলেও তা লুকিয়ে লুকিয়ে
আমিই সেই মেয়েটি যাকে বলতে নেই –
খিদে পেয়েছে – ঘুম পেয়েছে – ইচ্ছে করছেনা-
ক্লান্ত লাগছে -আর পারছিনা — আর পারছিনা।
আমিই সেই মেয়েটি খেলার জন্য যার
হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে পুতুল
পুতুলের আদল পাবার জন্য
পুতুলের সংসার বানাবার জন্য।
আমিই সেই মেয়েটি যে গত কোন
শতাব্দী তে পাঁচ বছর বয়সে মালা দিয়েছে –
গঙ্গা যাত্রীর গলায়
কুলীন ব্রাম্মন এর তিনশো পঁয়ষট্টি তম স্ত্রীর
অন্যতমা হয়ে স্বামীর গরবে হয়েছি গরবিনী
একাদশীর দিন অবুজ দশমীর বালিকার তৃষ্ণায় –
আটক ঘরের মাটি লেহন করতে করতে প্রান ত্যাগ করেছি
সন্তানের পর সন্তান জন্ম দিতে দিতে যন্ত্রণায়
মুখ থুবড়ে পরেছি সূতিকাগারে
জ্বলে পুড়ে মরেছি সতীদাহে।
আমি বুঝতে পারিনি যে চাকরীর জায়গায়
নিজের কাজের কুশলতা দেখাতে নেই
আমি বুঝতে পারিনি যে আমার প্রেমিককে
তার প্রেম পত্রের বানান ভুল গুল ধরিয়ে দেওটাই
আমার ভুল হয়ে ছিল
আমি বুঝতে পারিনি আমি যদি কবি হতে চাই
আমার বন্ধুরা বলবে ”ওটা কবিতা হয়নি পদ্য হয়েছে”
আমি বুঝতে পারিনি যে বিংশ শতাব্দীর শেষ সীমানায় এসে দাড়িয়েও
এইপুরুষ শাসিত সমাজ বুদ্ধিমতিদের জন্য অপ্রস্তুত
আমি সেই মেয়েটি যে দেখেছে একটি নারী
কেমন করে নিছক মেয়েছেলে বনে যায়
চরিত্রের উলটো দিকে হেঁটে যায় সফল স্বামীদের গিন্নীরা
শিক্ষার চেয়ে উজ্জলতা পায় বেনারসি সাড়ীর ফুলকি
বুদ্ধির চেয়ে দিপ্তিমান হয়ে ওঠে অন্ধকারে হীরা পান্না
আমি সেই মেয়েটি জানেন আমি সেই মেয়েটি
যে জীবনের কয়েকটি বছর ভুলের পরে ভুল
পুনরুপি ভুল করে চলেছি
অন্ধকারের দিনে ফিরতে পারিনা বলেই কি
আমি অপমানের জলন্ত কয়লার উপর দিকে হেঁটে যেতে চাই
যেতে চাই দুঃখের দিকে
আমি প্রনাম জানাই সেই প্রথম আগুনকে
যার নাম বর্ণপরিচয়
সেই অগ্নি সুদ্ধ পরম্পরাকে সেইসব পুরুষ রমণীকে
যারা উনবিংশ শতাব্দীর অন্ধকারের হাতলে জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে
এক জন্মে আমাকে জন্ম জন্মান্তরের দরজা খুলে দিয়েছে।
আমি আজ প্রেমের জন্য ফেলে যাচ্ছি আরাম-
শোকার্জিত শাকান্নের জন্য ফেলে যাচ্ছি ক্রীতদাসের চর্ব্যচোষ্য
জেগে থাকার জন্য ফেলে যাচ্ছি ভাত ঘুম,
যন্ত্রণার জন্য ফেলে যাচ্ছি সুখ –
জ্ঞানের জন্য ফেলে যাচ্ছি অন্ধতা
আনন্দের জন্য ফেলে যাচ্ছি সাফল্য
অমৃতের জন্য ঐশ্বর্য।
আমার হাতে জ্বলছে দিশারীদের শিক্ষার মহান আগুন
আমিই সেই মেয়েটি———
আপনারা নিজের দর্পণে দেখে আমাকে চিনুন
আমাকে চিনুন – আমাকে চিনুন।।
English Transliteration:
Ami Shei Meyeti, Shei meye
jar jonmer shomoy kono shakh bajeni
Jonmo thekei je Jyotishir choke bondi
jar logno rasi rahu ketur
Disha Khuja hoyeche na, tar nijer jonno noy
Tar pitar jonno r bhai er jonno
tar shamir jonno r putrer jonno
Kintu jar gorvo theke amar janma
Shei mayer kotha boleni keu.
Ami Shei Meyeti, Shei meyeti
Je janma thekei bibaher
Jonno bole prodotto
jar bairer chehara
chok-Nak-mukh-tak-chul-rang
Niyei dor koshakoshi
kalo na forsha
Khada na tikalo
lomba na bete
khutkhute na tantana
jar mathar baireta niyei shokoler bhabona
mathar vitorta niye kar o kuno matha byatha nei
Ami shei meyeti je chotobela theke shuneche
Jore jore kotha bolte nei
Chutte nei-chechate nei-hashte nei
Emonki kadleo ta lukiye lukiye
Ami shei meyeti jake bolte nei
Khide peyeche-ghum peyeche-icche korchena
Klanta lagche-aar parchi na- r parchi na
Ami Shei Meyeti khelar jonno jar
haate tule dewa hocche putul
Putuler aadol pawar jonno
Putuler shonshar banabar jonno
Ami Shei Meyeti Je goto kono
shotabdi te panch bachar boyoshe mala diyeche
Ganga jatrir golay
Kulin Brahmaner tin sho poyshotti tama strir
Onnotama hoye shamir garabe hoyechi garabini
ekadashir din abuj dashamir balikar trishnay
aatak ghorer mati lehon korte korte pran tyag korechi
Shontaner par shantan janma dite dite jantronay
Mukh thubre porechi shutikagare
Jole pure morechi shotidahe.
Ami bujhte parini je charir jaygay
Nijer kajer kushalata dekhate nei
Ami bujhte parini je amar premik ke
Tar prem potrer banan bhulgulo dhoriye dewatai
Amar bhul hoyechilo
Ami bujhte parini ami jodio kobi hote chai
Amar bandura bolbe “ota kobita hoini podyo hoyeche”
Ami bujhte parini je bingsho shotabdir shesh shimanay eshe dariye o
Ei purush shashito shomaj buddhimatider jonno oprastut
Ami shei meyeti je dekheche ekti naari
kemon kore nisok meyechele bone jay
Charitrer ulto dike hete jay shofol shamider ginnira
Shikkhar cheye ujjolota pay benarashi sharir fulki
Buddhir cheye diptoman hoye uthe ondhokare hira panna