ভূতের মতন চেহারা যেমন,
নির্ব্বোধ অতি ঘোর!
যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন
কেষ্টা বেটাই চোর!
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,
শুনেও শোনে না কানে।
যত পায় বেত না পায় বেতন
তবু না চেতন মানে।
বড় প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ
চীৎকার করি’ “কেষ্টা,”-
যত করি তাড়া, নাহি পাই সাড়া,
খুজে ফিরি সারা দেশ্টা!
তিনখানা দিলে একখানা রাখে,
বাকি কোথা নাহি জানে।
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে
তিনখানা করে আনে!
যেখানে সেখানে দিবসে দুপরে
নিদ্রাটি আছে সাধা।
মহা কলরবে গালি দেই যবে
পাজি হতভাগা গাধা,
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে
দেখে’ জ্বলে’ যায় পিত্ত!
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার
বড় পুরাতন ভৃত্য!
ঘরের কর্ত্রী রুক্ষ মূর্ত্তি
বলে, “আর পারি না কো!
“রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার
কেষ্টারে লয়ে থাকো!
“না মানে শাসন, বসন বাসন
অশন আসন যত
“কোথায় কি গেলো, শুধু টাকাগুলো
যেতেছে জলের মত!
“গেলে সে বাজার, সারাদিনে আর
দেখা পাওয়া তার ভার!
“করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি
ভত্য মেলে না আর!”
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,
আনি তার টিকি ধরে,’-
বলি তারে “পাজি, বেরো তুই আজই,
দূর করে দিনু তোরে!”
ধীরে চলে যায়, ভাবি, গেল দায়;—
পরদিনে উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে
বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি!
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোন দুখ,
অতি অকাতর চিত্ত!
ছাড়ালে না ছাড়ে, কি করিব তারে,
মোর পুরাতন ভৃত্য!
সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা
করিয়া দালাল-গিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন
বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তার সাথে যেতে চায়,—
বুঝায়ে বলিনু তারে-
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য;—
নহিলে খরচ বাড়ে!
লয়ে রশারশি করি কশাকশি
পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি’
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে
গৃহিণী কহিল কাঁদি,—
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে
কষ্ট অনেক পাবে!”
আমি কহিলাম “আরে রাম রাম!
নিবারণ সাথে যাবে!”
রেলগাড়ি ধায়;—হেরিলাম হায়
নামিয়া বর্দ্ধমানে-
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত
তামাক্ সাজিয়া আনে!
স্পর্ধা তাহার হেন মতে আর
কত বা সহিব নিত্য!
যত তারে দুষি’ তবু হনু খুসি
হেরি পুরাতন ভৃত্য!
নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণে বামে
পিছনে সমুখে যত
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণ্টা
করিল কণ্ঠাগত!
জন ছয় সাতে মিলি একসাথে
পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা, মনে হল আশা
আরামে দিবস যাবে!
কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা,
কোথা বনমালী হরি!
কোথা, হা হন্ত, চিরবসন্ত!
আমি বসন্তে মরি!
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মত
বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ।
আমি একা ঘরে, ব্যাধি-খরশরে
ভরিল সকল অঙ্গ!
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ-
“কেষ্ট আয় রে কাছে!
এতদিনে শেষে আসিয়া বিদেশে
প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে!”
হেরি তার মুখ ভরে’ ওঠে বুক,
সে যেন পরম বিত্ত!
নিশিদিন ধরে’ দাঁড়ায়ে শিয়রে
মোর পুরাতন ভৃত্য!
মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল,
শিরে দেয় মোর হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম,
মুখে নাই তার ভাত।
বলে বার বার, “কর্ত্তা, তোমার
কোন ভয় নাই, শুন,
“যাবে দেশে ফিরে, মা-ঠাকুরাণীরে
দেখিতে পাইবে পুন।”
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম;
তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কাল-ব্যাধিভার
আপনার দেহ পরে!
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দুদিন
বন্ধ হইল নাড়ি।
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে,
এতদিনে গেল ছাড়ি’!
বহুদিন পরে আপনার ঘরে
ফিরিনু সারিয়া তীর্থ।
আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই
মোর পুরাতন ভৃত্য।
Puraton Vritto Kobita Recitation:
Puraton Vritto Kobita Lyrics:
Bhuter matan chehara jemon nirbodh ati ghor
Ja kichu haray, ginni bolen, Kesto betai chor
Uthite bashite kori bapanta shuneo shune na kane
jata pay bet na pay betan, tabu na chetan mane
Boro pryojon Daki pranpon chitkar kori kesta
jata kori tara nahi paai shara, khuje firi shara deshta
Tinkhana dile ekhaana rakhe , baki kotha nahi jane
Ekhana dile nimesh felite tinkhana kore aane
Jekhane shekhane dibosh dupure nidrati aache sadha
Mohakolorobe gaali dei jabe “paji hatabhaga gadha”
Darjar pashe dariye shey hashe, Dekhe jole jaay pitto
tabu maya tar tyag kora bhar, Boro puraton vrityo
Gharer korti rukkho murti bole, “aar pari nako”
Rahilo tumar e ghar duar, Kestaye loye thako
Na mane shashon bashan bashon oshon aashon jata
Kothay ki gelo, sudhu takagulo jeteche joler mata
Gele shey bazar sara din aar dekha pawa jay tar bhar
Korile chesta kesta chara ki bhrityo mele na aar
Shune moha rege chute jay bege, aani tar tiki dhore
Boli tare paj, Ber ho tui aji, dur kore dinu tore
dhire chole jaay, bhabi gelo day, pordin uthe dekhi
HUkati baraye, royeche daraye beta buddhir deki
Prashanna mukh, nahi kuno dukh, ati okatar chitto
Charle na chare, ki korbo tare – mor puratan bhrityo
Nibedita Paul
পুরাতন ভৃত্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থঃ চিত্রা
ভূতের মতন চেহারা যেমন,
নির্ব্বোধ অতি ঘোর!
যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন
কেষ্টা বেটাই চোর!
উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,
শুনেও শোনে না কানে।
যত পায় বেত না পায় বেতন
তবু না চেতন মানে।
বড় প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ
চীৎকার করি’ “কেষ্টা,”-
যত করি তাড়া, নাহি পাই সাড়া,
খুজে ফিরি সারা দেশ্টা!
তিনখানা দিলে একখানা রাখে,
বাকি কোথা নাহি জানে।
একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে
তিনখানা করে আনে!
যেখানে সেখানে দিবসে দুপরে
নিদ্রাটি আছে সাধা।
মহা কলরবে গালি দেই যবে
পাজি হতভাগা গাধা,
দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে
দেখে’ জ্বলে’ যায় পিত্ত!
তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার
বড় পুরাতন ভৃত্য!
ঘরের কর্ত্রী রুক্ষ মূর্ত্তি
বলে, “আর পারি না কো!
“রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার
কেষ্টারে লয়ে থাকো!
“না মানে শাসন, বসন বাসন
অশন আসন যত
“কোথায় কি গেলো, শুধু টাকাগুলো
যেতেছে জলের মত!
“গেলে সে বাজার, সারাদিনে আর
দেখা পাওয়া তার ভার!
“করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি
ভত্য মেলে না আর!”
শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,
আনি তার টিকি ধরে,’-
বলি তারে “পাজি, বেরো তুই আজই,
দূর করে দিনু তোরে!”
ধীরে চলে যায়, ভাবি, গেল দায়;—
পরদিনে উঠে দেখি
হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে
বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি!
প্রসন্ন মুখ, নাহি কোন দুখ,
অতি অকাতর চিত্ত!
ছাড়ালে না ছাড়ে, কি করিব তারে,
মোর পুরাতন ভৃত্য!
সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা
করিয়া দালাল-গিরি।
করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন
বারেক আসিব ফিরি।
পরিবার তার সাথে যেতে চায়,—
বুঝায়ে বলিনু তারে-
পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য;—
নহিলে খরচ বাড়ে!
লয়ে রশারশি করি কশাকশি
পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি’
বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে
গৃহিণী কহিল কাঁদি,—
“পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে
কষ্ট অনেক পাবে!”
আমি কহিলাম “আরে রাম রাম!
নিবারণ সাথে যাবে!”
রেলগাড়ি ধায়;—হেরিলাম হায়
নামিয়া বর্দ্ধমানে-
কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত
তামাক্ সাজিয়া আনে!
স্পর্ধা তাহার হেন মতে আর
কত বা সহিব নিত্য!
যত তারে দুষি’ তবু হনু খুসি
হেরি পুরাতন ভৃত্য!
নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণে বামে
পিছনে সমুখে যত
লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণ্টা
করিল কণ্ঠাগত!
জন ছয় সাতে মিলি একসাথে
পরম বন্ধুভাবে
করিলাম বাসা, মনে হল আশা
আরামে দিবস যাবে!
কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা,
কোথা বনমালী হরি!
কোথা, হা হন্ত, চিরবসন্ত!
আমি বসন্তে মরি!
বন্ধু যে যত স্বপ্নের মত
বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ।
আমি একা ঘরে, ব্যাধি-খরশরে
ভরিল সকল অঙ্গ!
ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ-
“কেষ্ট আয় রে কাছে!
এতদিনে শেষে আসিয়া বিদেশে
প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে!”
হেরি তার মুখ ভরে’ ওঠে বুক,
সে যেন পরম বিত্ত!
নিশিদিন ধরে’ দাঁড়ায়ে শিয়রে
মোর পুরাতন ভৃত্য!
মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল,
শিরে দেয় মোর হাত;
দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম,
মুখে নাই তার ভাত।
বলে বার বার, “কর্ত্তা, তোমার
কোন ভয় নাই, শুন,
“যাবে দেশে ফিরে, মা-ঠাকুরাণীরে
দেখিতে পাইবে পুন।”
লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম;
তাহারে ধরিল জ্বরে;
নিল সে আমার কাল-ব্যাধিভার
আপনার দেহ পরে!
হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দুদিন
বন্ধ হইল নাড়ি।
এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে,
এতদিনে গেল ছাড়ি’!
বহুদিন পরে আপনার ঘরে
ফিরিনু সারিয়া তীর্থ।
আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই
মোর পুরাতন ভৃত্য।
Puraton Vritto Kobita Recitation:
Puraton Vritto Kobita Lyrics:
Bhuter matan chehara jemon nirbodh ati ghor
Ja kichu haray, ginni bolen, Kesto betai chor
Uthite bashite kori bapanta shuneo shune na kane
jata pay bet na pay betan, tabu na chetan mane
Boro pryojon Daki pranpon chitkar kori kesta
jata kori tara nahi paai shara, khuje firi shara deshta
Tinkhana dile ekhaana rakhe , baki kotha nahi jane
Ekhana dile nimesh felite tinkhana kore aane
Jekhane shekhane dibosh dupure nidrati aache sadha
Mohakolorobe gaali dei jabe “paji hatabhaga gadha”
Darjar pashe dariye shey hashe, Dekhe jole jaay pitto
tabu maya tar tyag kora bhar, Boro puraton vrityo
Gharer korti rukkho murti bole, “aar pari nako”
Rahilo tumar e ghar duar, Kestaye loye thako
Na mane shashon bashan bashon oshon aashon jata
Kothay ki gelo, sudhu takagulo jeteche joler mata
Gele shey bazar sara din aar dekha pawa jay tar bhar
Korile chesta kesta chara ki bhrityo mele na aar
Shune moha rege chute jay bege, aani tar tiki dhore
Boli tare paj, Ber ho tui aji, dur kore dinu tore
dhire chole jaay, bhabi gelo day, pordin uthe dekhi
HUkati baraye, royeche daraye beta buddhir deki
Prashanna mukh, nahi kuno dukh, ati okatar chitto
Charle na chare, ki korbo tare – mor puratan bhrityo
Shey bachare faka penu kichu taka koriya dalalgiri
Korilam mono sribrindaban barek aashibo firi
Poribar tay sathe jete chay, bujhaye balinu tare
Patir punne satir punno, nohile kharach bare
Loye rasharoshi kore khoshakhoshi putaputli badhi
Balay bajaye bakso sajaye grihini kohilo kandi
Pardeshe giye kestare niye kasto onek pabe
Ami kohilam arey ram ram! Nibaran shathe jabe
Rail gari dhay, Herilam haay namiya bardhomane
Krishnokanto ati prashanto tamak shajiye aane
Sporda tahar henomate aar kata ba shohibo nityo
Jata tare dushi tabu hani khushi Heri puratan bhritya
kasturi chatterjee
Need complete poem