সামাজিকীকরণ সামাজিকীকরণ হলো শিশুকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য করে তৈরি করার প্রক্রিয়া অর্থাৎ যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন, সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শিশু বয়স থেকে আরম্ভ হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতিটি মানুষ তার সামাজিক পরিRead more
সামাজিকীকরণ
সামাজিকীকরণ হলো শিশুকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য করে তৈরি করার প্রক্রিয়া অর্থাৎ যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন, সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শিশু বয়স থেকে আরম্ভ হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতিটি মানুষ তার সামাজিক পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কখনও সমাজকে প্রভাবিত করে, আবার কখনও সে সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যার ফলে তার জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে।
ধর্মীয় মূল্যবোধঃ সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা, সততা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে উদ্ভুত। অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতি সহনশীলতা ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচায়ক।
ধর্মীয় মূল্যবোধঃ সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা, সততা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে উদ্ভুত। অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতি সহনশীলতা ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচায়ক।
ব্যক্তিগত মূল্যবোধঃ যা ব্যক্তির আদর্শ, ধ্যান-ধারণা, রুচি ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এটা ব্যক্তির আচার-আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আত্ম-প্রতিষ্ঠা, সততা, নিয়মতান্ত্রিকতা ইত্যাদি |
ব্যক্তিগত মূল্যবোধঃ যা ব্যক্তির আদর্শ, ধ্যান-ধারণা, রুচি ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এটা ব্যক্তির আচার-আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আত্ম-প্রতিষ্ঠা, সততা, নিয়মতান্ত্রিকতা ইত্যাদি |
মূল্যবোধ সাধারণ অর্থে একজন আদর্শ ব্যক্তির জীবনের গুণাবলীকে মূল্যবোধ বলা যায়। মূল্যবোধ একটি জাতির দর্শন এবং শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নীতিমালা যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, “মূল্যবোধ হলো কতগুলো জৈব মানসিক (psycho physical) সংগঠনের এমন এক সRead more
মূল্যবোধ
সাধারণ অর্থে একজন আদর্শ ব্যক্তির জীবনের গুণাবলীকে মূল্যবোধ বলা যায়। মূল্যবোধ একটি জাতির দর্শন এবং শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নীতিমালা যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, “মূল্যবোধ হলো কতগুলো জৈব মানসিক (psycho physical) সংগঠনের এমন এক সমন্বয় যা পরিবেশের বহু বিস্তৃত অংশকে সক্রিয়তার দিক থেকে সমগুণসম্পন্ন করে তোলে এবং ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত আচরণ সৃষ্টি করে”। সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণধর্মী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ সৃষ্টিকারী জৈব-মানসিক প্রবণতাই হলো মূল্যবোধ।
প্রকৃতি অনুযায়ী মূল্যবোধকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন:
সামাজিক পরিবর্তনের কারণ সমাজ কোন একক কারণে পরিবর্তিত হয় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা পালন করে। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করা হল : (১) প্রাকৃতিক কারণ - বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের অর্থাৎ আবহাওয়া, জলRead more
সামাজিক পরিবর্তনের কারণ
সমাজ কোন একক কারণে পরিবর্তিত হয় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা
পালন করে। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করা হল :
(১) প্রাকৃতিক কারণ – বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে
প্রাকৃতিক পরিবেশের অর্থাৎ আবহাওয়া, জলবায়ু এবং ভূমির গঠন-প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে । এর
সাথে সাথে সমাজের জীবন-যাপন পদ্ধতিরও পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে সামাজিক পরিবর্তন হয়।
(২) অর্থনৈতিক কারণ – অর্থনৈতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ । উৎপাদন
পদ্ধতির পরিবর্তন হলে সমস্ত উপরিকাঠামোতে পরিবর্তন সাধিত হয়। উৎপাদন পদ্ধতি দুটি
উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। একটি হল উৎপাদন শক্তি আর অন্যটি হল উৎপাদন সম্পর্ক। মার্কসের
মতে যখন উৎপাদন শক্তিতে পরিবর্তন আসে তখন উৎপাদন সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়ে। এই
উৎপাদন সম্পর্ক দ্বারা সমথ সমাজের পরিবর্তন বুঝা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে, আদিম
সাম্যবাদী সমাজ থেকে পুঁজিবাদী সমাজে উত্তরণের কারণ হল অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থার
পরিবর্তন । তদ্রুপ শিল্পায়নের ফলে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তন ঘটে আধুনিক শিল্প নির্ভর
শহুরে সমাজের আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে সাদামাটা জীবন-যাপন প্রণালীর পরিবর্তে কৃত্রিম ও যান্ত্রিক
জীবন-যাপন পদ্ধতি সূচিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কারণ তাই সমাজ পরিবর্তনের গুরুতৃপূর্ণ উপাদান ।
(৩) রাজনৈতিক কারণ – রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতার
পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সমাজের রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তন ঘটে । এই
পরিবর্তন অনেক সময় সমাজের অর্থনৈতিক জীবন এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৪৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে সাম্যবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে সেখানে
উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা এবং শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটে। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয়
মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সমাজের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট
পরিবর্তনের ফলে শাসন ব্যবস্থা ও জনগণের রাজনৈতিক আশা-আকাজঙ্কার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে তা জনগণের আকাঙ্কার ক্ষেত্রে
বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে।
(৪) ধর্মীয় কারণ – ধর্মীয় কারণেও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন_ ম্যাক্স ওয়েবারের মতে
পুঁজিবাদী সমাজ সৃষ্টির জন্য প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম দায়ী। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রটেস্ট্ান্ট ধর্ম দ্বারা
পুঁজিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রটেস্ট্যান্টদের ধর্মীয় দর্শন ছিল, ‘কর্মই দেবতা” । “কাজ করেই
ঈশ্বরের নৈকট্য পাওয়া যাবে’। এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে প্রটেস্ট্যান্টরা কর্মে ঝাপিয়ে পড়ে। ব্যবসা-
বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা পুঁজির পাহাড় গড়ে তোলে ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি
স্থাপন করে। ধর্মীয় ধ্যান ধারণা ও আদর্শ সমাজের আমুল পরিবর্তন ঘটায় । যেমন_ ইসলাম ধর্মের
আবির্ভাবের ফলে পৌত্তলিক সমাজের পরিবর্তে এক আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য ভিত্তিক ইসলামী সমাজ
ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
৫) সাংস্কৃতিক কারণ – সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ । উইলিয়াম এফ.
অগবার্ন বলেন, “সংস্কৃতির ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে পুরাতন সংস্কৃতির বিলোপ এবং নতুন সংস্কৃতি
নির্ভর সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে।” তিনি সংস্কৃতির দুটি ভাগ করেছেন_বস্তগত সংস্কৃতি ও অবস্তগত
সংস্কৃতি। অগবার্ন বলেন, যখন বস্তগত সংস্কৃতির মধ্যে পরিবর্তন আসে তখন ধীরে বা মন্থর গতিতে
অবস্তগত সংস্কৃতির মধ্যেও একটা পরিবর্তন দেখা দেয়। এই অবস্তগত সংস্কৃতির পরিবর্তন সামাজিক
পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। যেমন ডিস এ্যানটিনা ও কম্পিউটারের মাধ্যমে বন্তগত সংস্কৃতির
পরিবর্তনের ফলে সমাজের চিন্তাধারা ও কাজের ধরনের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়ে সামাজিক
পরিবর্তন ঘটছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ফলে প্রচলিত সংস্কৃতি ধীর গতিতে লোপ পাচ্ছে।
সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ও বিস্তরণের ফলে এবং বিদেশী সংস্কৃতির ভাল দিক সংযোজিত হওয়ার ফলে দেশীয়
সংস্কৃতির ইতিবাচক উন্নয়ন সামাজিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
(৬) সংস্কার ও বিপ্লব – সংস্কার ও বিপ্লবের ফলেও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে । সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাযখন জনকল্যাণ বিরোধী এবং অথ্গতির পথে বাধা হয়ে দীড়ায় তখন সমাজ সংক্কারকদের আন্দোলনসমাজের কাঙ্কিত পরিবর্তন আনয়ন করে। রাজা রাম মোহন রায়ের সংস্কার হিন্দু সমাজের প্রচলিত সতীদাহ প্রথা বিলোপ এবং বিধবা বিবাহ প্রথার জন্ম দেয়।
ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্কঃ ব্যক্তি ও সমাজ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। অপরপক্ষে সমাজ ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ সম্পর্কে ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।” নিন্নে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক আলোচনা করা হল:Read more
ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্কঃ
ব্যক্তি ও সমাজ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। অপরপক্ষে সমাজ ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ সম্পর্কে ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।” নিন্নে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক আলোচনা করা হল:
প্রথমত: ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য – ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত। ব্যক্তির অবদানে সমাজ সমৃদ্ধ হয়। আর সমাজ ব্যক্তির বহুবিধ চাহিদা পূরণ করে। পারস্পরিক লেনদেন ও সহযোগিতায় সমাজ ব্যক্তির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, গৃহস্থালীর দ্রব্যসামগ্রী ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করে।
দ্বিতীয়ত: সমাজ ব্যক্তিকে মূল্যবোধে সম্ীবিত করে – ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিতের ধারণা ব্যক্তি সমাজ থেকেই লাভ করে। সমাজে বাস করার ফলে কতকগুলো প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি, যেমন_ সততা, নিষ্ঠা, শৃংখলাবোধ প্রভৃতি ব্যক্তির মধ্যে জন্য নেয়। সমাজ সেগুলো লালন ও সংরক্ষণ করে। অপরপক্ষে সমাজ এ সমস্ত নিয়ম-রীতি দ্বারা ব্যক্তিকে পরিচালিত করে।
তৃতীয়ত: সমাজ ব্যক্তির সামাজিকীকরণ করে – সামাজিকীকরণ বলতে বুঝায় ব্যক্তিকে সমাজের আকাজিফষত পথে পরিচালিত করা। ব্যক্তি তার জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় জীবনযাপন পদ্ধতি সমাজ থেকেই লাভ করে। পরিবার, ধর্ম, জ্ঞাতি-সম্পর্ক প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজ ব্যক্তির সামাজিকীকরণ করে থাকে।
চতুর্থত: সমাজ ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দান করে – বিচ্ছিন্রভাবে বসবাস করলে জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। সমাজ ব্যক্তিকে জীবন-যাপনের উপকরণ সরবরাহ করে ও অন্য ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে নিরাপত্তা দান করে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ থেকেই ব্যক্তি তার জীবন, সম্পত্তি ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করে।
সমাজের সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো হলঃ (১) মৌলিক চাহিদা পূরণ করাঃ সমাজ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করে। সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে গড়ে উঠা ব্যাপক ও বিপুল কর্মক্ষেত্রে কাজ করে মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। ২) নিরাপত্তা প্রদান করাঃ নিরাপত্তা লাভের জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধRead more
সমাজের সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো হলঃ
(১) মৌলিক চাহিদা পূরণ করাঃ সমাজ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান
করে। সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে গড়ে উঠা ব্যাপক ও বিপুল কর্মক্ষেত্রে কাজ করে মানুষ তাদের
মৌলিক চাহিদা পূরণ করে।
২) নিরাপত্তা প্রদান করাঃ নিরাপত্তা লাভের জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়। সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষ
পরাক্রমশালীদের আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
(৩) ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ সমাজ মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলীর বিকাশ সাধনের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ
করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়।
€৪) মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধনঃ মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো সমাজের মধ্যে লালিত ও
অনুশীলিত হয়। দয়া, মায়া, গ্নেহ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সমঝোতা, সহনশীলতা ও একে অপরকে বিপদে
সাহায্য করা প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী সমাজবদ্ধ জীবনেই বিকশিত হয়। অন্যদিকে এসব গুণাবলীই
সমাজের ভিত্তি।
(৫) মনের সংকীর্ণতা দূর করাঃ সমাজ মানুষকে ব্যক্তিস্বর্থের সাথে সামথিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন
করতে শেখায়। সমাজের স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থকে বর্জন করার শিক্ষা মানুষ সমাজ থেকেই লাভ করে।
এরূপে মনের সংকীর্ণতা দূর হয়।
(৬) শিক্ষা দান করাঃ সামাজিক জ্ঞান ও নৈতিকতার শিক্ষা ব্যক্তি সমাজ থেকেই লাভ করে। ধর্মীয়
অনুশাসন মেনে চলা ও অন্যের সাথে সামঞ্স্য বিধান করার শিক্ষাও মানুষ সমাজ থেকেই অর্জন করে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষের মৌলিক জ্ঞান বিস্তার করে।
সমাজের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায় : (১) এক্য_ এক্য সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য । অভ্যাস, মনোভাব, চাওয়া-পাওয়া ও আদর্শগত এঁক্ের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠে। ২) স্থায়িতৃ- সমাজ একটি স্থায়ী বর্গ। তার অর্থ এই নয় যে সমাজের পরিবর্তন হবে না। সমাজের চিন্তাভাবনRead more
সমাজের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায় :
(১) এক্য_ এক্য সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য । অভ্যাস, মনোভাব, চাওয়া-পাওয়া ও আদর্শগত এঁক্ের
ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠে।
২) স্থায়িতৃ- সমাজ একটি স্থায়ী বর্গ। তার অর্থ এই নয় যে সমাজের পরিবর্তন হবে না। সমাজের
চিন্তাভাবনা, অগ্রগতি, শিক্ষাদীক্ষা ও বিজ্ঞানের অবদানের কারণে সমাজের পরিবর্তন ঘটে। সমাজের
পরিবর্তন ঘটলেও সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় না।
(৩) সাধারণ উদ্দেশ্য_ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রভৃতি সাধারণ
উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়।
(৪) ভৌগোলিক সীমারেখা- সমাজের সাথে ভুখন্ডের সম্পর্ক না থাকলেও একটি সমাজকে আর একটি
সমাজ থেকে ভৌগোলিক সীমারেখার দ্বারাই পৃথক করা যায়। তবে কোন কোন সমাজ সারা পৃথিবী
জুড়ে বিরাজমান ।
(৫) গ্রুপের সমষ্টি- সমাজ কতকগুলো দল বা গ্রপের সমষ্টি এবং এই গ্র্পগুলো জনসাধারণের
মৌলিক সামাজিক চাহিদা পূরণ করে । যেমন-_ কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী গ্রভৃতি।
(৬) বৈচিত্র্য সমাজ বিচিত্র রূপের একটি মানবিক সংগঠন। সমাজে হাসি-কানা, এক্য-অনৈক্য,
বিরোধিতা-সহযোগিতা, অবহেলা-সহমর্মিতা সবকিছুই বিদ্যমান। ব্যাপক মানবিক সম্পর্কের বৈচিত্র্যময়
রূপ হল সমাজ।
(৭) নৈতিক মূল্যবোধ_ সমাজের ভিত্তি হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধ । সমাজ কতকগুলো নীতিমালা মেনে
চলে এবং নীতিগুলো সমাজকে ধরে রাখে। যেমন- নিষ্ঠা, সততা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা প্রভৃতি
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসনRead more
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা
ভূমিকা:
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসন ব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন প্রধান এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হত । রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল আইন প্রণয়ন, ক্ষমতার বন্টন, শাসন পরিচালনা এবং সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের চুড়ান্ত এখতিয়ার। রাজা হর্ষবর্ধন (মৃত্যু ৬৪৫খ্রি.) এর মৃত্যুর পর ভারতবর্ষ রাজনৈতিক বিশৃংঙ্খলায় পতিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে । এ বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্যময় অবস্থা মুসলিম বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল । মুসলিম বিজয়ের সময় উত্তর-পশ্চিম ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এ সময় ভারতবর্ষের কেন্দ্রিয় শাসন ও সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। জাতিভেদ প্রথা হিন্দুসমাজের এঁক্য ও সংহতির মূলে প্রবল আঘাত হানে ।
ধর্মীয় ও প্রশাসনিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে হিন্দুধর্ম দেশের প্রধান ধর্ম হিসেবে পরিণত হয়। অধিকাংশ রাজাই ছিলেন হিন্দু এবং তারা সকলেই হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন । সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপ্রতিহত প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিদ্যমান ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারে ও শাসনকার্ধে তাদের অধিকার ছিল একচেটিয়া। বৈশ্য ও শুদ্রগণ ছিল নির্যাতিত, নিম্পেষিত এবং নিম্ন শ্রেণির হিন্দুরা ছিল অস্পৃশ্য । ব্রাহ্মণগণ ধর্মীয় ব্যাপারে সর্বেসর্বা ছিলেন। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে ধর্মীয় অসন্তোষ, অরাজকতা ও নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করে । সাম্প্রাদায়িক কলহ ও ধর্মীয় কোন্দল মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। প্রাক-মুসলিম যুগে বংশানুক্রমিকভাবে ভারতবর্ষের রাজা নিযুক্ত হতেন। রাজকুমারীগণও শাসনকার্ষে অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। রাজার হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা । তিনি আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। ন্যায় বিচারের উৎস এবং প্রধান সেনাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত পালন করতেন । তিনি রাজধর্মের আলোকে শাসনকার্ পরিচালনা করতেন । রাজকার্য পরিচালনার ব্যাপারে মন্ত্রীগণ রাজাকে পরামর্শ দিতেন এবং সাহায্য করতেন। তবে রাজা তাঁদের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য ছিলেন না। এ সময় সাম্রাজ্য বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রাদেশিক প্রধানকে বলা হত “উপারিক’ । তাঁর প্রধান কর্তব্য ছিল প্রদেশের শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করা রাজার আদেশকে কার্যকরী করা এবং প্রয়োজনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। প্রদেশগুলি জেলায় বিভক্ত ছিল। জেলাকে বলা হত “বিষয়’। জেলার শাসনকর্তা বিষয়পতি নামে অভিহিত হতেন । দেশের শাসন ব্যবস্থার সর্বনিমনস্তরে ছিল গ্রাম । গ্রামের শাসন ব্যবস্থা মোড়ল বা পঞ্চায়েত কর্তৃক সম্পাদিত হত।
অর্থনৈতিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রান্কালে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও ধর্বর্ষে পরিপূর্ণ ছিল ভারতবর্ষ। এ দেশের মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ । অভিজাত ও উঁচু শ্রেণির অধিকাংশ লোক বিলাসবহুল জীবন যাপন করত। প্রাচীন অর্থশান্ত্রবিদ কৌটিল্যের বিবরণ অনুযায়ী তিনটি মৃখ্য উৎস থেকে রাষ্ট্রের আয় ছিল: ক) ভূমি রাজস্ব, খ) সামন্ত প্রভূ ও জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত কর, এবং গ) আবগারী ও বাণিজ্য শুন্ক। পরবর্তীতে এদেশে শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে । গুজরাট ও বাংলা কাপার্স বন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্যেও উৎকর্ষ সাধিত হয়। বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হতে থাকে। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো ছিল বলে এদেশে সংস্কৃতি ও সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটেছিল । চীনা পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনা থেকে পঞ্চম শতাব্দির শুরুতে ভারতবর্ষের উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মগধের লোকেরা ধনী ও সমৃদ্ধশালী ছিল। পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর বর্ণনায় জানা যায় যে, সপ্তম শতাব্দিতেও ভারতবর্ষের অধিবাসীগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করত ও নির্বিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। এদেশের অতুল এশ্বর্ষে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশী বণিকগণ যেমন এদেশে বারবার এসেছেন আবার বিদেশী আক্রমণকারীগণও এ দেশ বার বার লুগ্ঠন করে তাদের কর্তৃত প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস চালিয়েছেন ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা
তৎকালীন হিন্দু সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র-এই চারটি বর্ণ স্তরে বিভক্ত ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপরিসীম প্রভাব বিস্তৃত ছিল। আর বৈশ্য ও শুদ্রদের অবস্থান ছিল সমাজের নিমস্তরে । শুদ্রদের সমাজে অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হত। জাতিভেদ প্রথা খুব কঠোর ছিল । জনসাধারণ স্ব স্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ করতে পছন্দ করত । ব্রাহ্মণরা শিক্ষা, ধর্মকর্ম, আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও কখনো কখনো যুদ্ধ বিগ্রহে নিয়োজিত থাকতো । ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ধ বিরহ, বৈশ্যরা ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং শুদ্রগণ কৃষিকাজ ও সাধারণ কাজ কর্ম করত। বর্ণপ্রথার কারণে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্ভ্বীতির অভাব ছিল । সমাজে বহু বিবাহ, সতীদাহ ও সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিল । কিন্তু বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল না। নারীরা অন্ত:পুরে জীবন যাপন করতেন। তাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্য ছিল না। দাসপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। এতদ্বস্েও অভিজাত শ্রেণির মেয়েরা উদার শিক্ষা লাভ করত। তারা শাসন ক্ষেত্রে ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করত । মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রভূত অগ্গতি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলা চর্চায় ভারতীয়গণ কৃতিতৃ অর্জন করেন। সে যুগে ভারতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । ভারতের স্বনামধন্য বল্পভী এবং বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও উদন্তপুর, বিক্রমশীলা, বারানসী প্রভৃতি স্থানে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল। মালব ও আজমীরে সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়েছিল । জ্যোর্তিবিদ্যা, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন ও সাহিত্য প্রভৃতি জ্ঞানের চর্চা করা হত। সে যুগে স্থাপত্য ও ভাক্কর্য শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল ।
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা:
আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও কনৌজ: মৌর্য বংশের শাসনামল থেকেই আফগানিস্তান ছিল ভারতের একটি অংশ । মুসলিম এঁতিহাসিকগণ এটিকে হিন্দুশাহী রাজ্য বলে অভিহিত করেন। সপ্তম শতাব্দিতে কর্কট রাজবংশীয় দুর্লভ বর্ধনের অধীনে কাশ্মীর ছিল উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। বিজেতা, বিদ্যোৎসাহী ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় ছিলেন কাশ্মীরের রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর । তিনি কনৌজ, কামরূপ, কলিঙ্গ ও গুজরাট জয় করেন বলে জানা যায়। কর্কট বংশের অপর একজন শাসক জয়গীড় গৌড় ও কনৌজের নৃপতিদের পরাজিত করেন। অষ্টম শতাব্দির প্রথম দিকে কনৌজ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হত। উত্তর-ভারতের অন্যতম পরাক্রমশালী রাজা যশোবর্মণ কনৌজের হত গৌরব ও আধিপত্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি গৌড় জয় করে এর রাজাকে হত্যা করেন এবং কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের সহায়তায় তিব্বত অভিযান করেন। তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন। কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য কর্তৃক তিনি পরাজিত ও নিহত হন। রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সিন্ধু ও মালব-দিল্লি ও আজমীর
সপ্তম শতকে সিন্ধু ছিল হ্র্ষবর্ধনের সাগ্রাজ্যভূক্ত। পরবর্তীতে “চাচ” নামক সিদ্ধুর জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী সিন্ধুতে স্বাধীন রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন । চাচের পুত্র রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ইমাদউদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ সালে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। প্রতিহার রাজপুতদের দ্বারা শাসিত মালব ছিল উত্তর- ভারতের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র । উজ্জয়িনী ছিল এ রাজ্যের রাজধানী । দ্বাদশ শতকে মুসলিম অভিযানের প্রান্কালে দিল্লি ও আজমীরে শক্তিশালী চৌহান বংশীয় রাজপুব্রগণ রাজত্র করত । এ বংশের শাসক বিশালদেব চৌহান প্রতিহর বংশের নিকট থেকে দিল্লি দখল করেন। রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে তারা একটি বিশাল রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
গুজরাট, আসাম ও নেপাল
প্রতীহার বংশের অধীনে অত:পর তাদের আধিপত্য ক্ষুন্ন করে চালক্য ও ভাগেলা বংশ পর্যায়ক্রমে গুজরাট শাসন করে। নবম শতাব্দিতে চান্দেলা বংশ বুন্দেলখন্ডে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শেষ রাজা গন্ড ১০১৯ হন। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব প্ান্তসীমায় অবস্থিত একটি রাজ্য হল আসাম । এটি হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়। এ সময় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার স্বাধীন নৃপতি। হ্র্ষবর্ধনের সমসাময়িক এই শাসকের মৃত্যুর পর বাংলায় মারাত্মক গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নেপাল সপ্তম শতাব্দিতে উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। নেপালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
English বাংলা So Proud of you. Very proud of you . তোমার জন্য গর্বিত। তোমাকে নিয়ে খুবই গর্ববোধ করি। - You have done a wonderful job, so proud you. - You are a gem, I am so proud of you.
সামাজিকীকরণ কাকে বলে?
Nibedita Paul
সামাজিকীকরণ সামাজিকীকরণ হলো শিশুকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য করে তৈরি করার প্রক্রিয়া অর্থাৎ যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন, সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শিশু বয়স থেকে আরম্ভ হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতিটি মানুষ তার সামাজিক পরিRead more
সামাজিকীকরণ
সামাজিকীকরণ হলো শিশুকে সমাজের উপযুক্ত সদস্য করে তৈরি করার প্রক্রিয়া অর্থাৎ যেই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তি সামাজিক মূল্যবোধ অর্জন, সমাজের রীতিনীতি অনুযায়ী চিন্তা ও কাজ করতে শেখে। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শিশু বয়স থেকে আরম্ভ হয় এবং মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। প্রতিটি মানুষ তার সামাজিক পরিবেশের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কখনও সমাজকে প্রভাবিত করে, আবার কখনও সে সমাজ দ্বারা প্রভাবিত হয়। যার ফলে তার জ্ঞান, দক্ষতা ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে।
See lessধর্মীয় মূল্যবোধ কি?
Nibedita Paul
ধর্মীয় মূল্যবোধঃ সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা, সততা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে উদ্ভুত। অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতি সহনশীলতা ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচায়ক।
ধর্মীয় মূল্যবোধঃ সত্যবাদিতা, কর্তব্যপরায়ণতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতা, সততা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে উদ্ভুত। অন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান উদযাপনের প্রতি সহনশীলতা ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিচায়ক।
See lessব্যক্তিগত মূল্যবোধ কি?
Nibedita Paul
ব্যক্তিগত মূল্যবোধঃ যা ব্যক্তির আদর্শ, ধ্যান-ধারণা, রুচি ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এটা ব্যক্তির আচার-আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আত্ম-প্রতিষ্ঠা, সততা, নিয়মতান্ত্রিকতা ইত্যাদি |
ব্যক্তিগত মূল্যবোধঃ যা ব্যক্তির আদর্শ, ধ্যান-ধারণা, রুচি ও বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। এটা ব্যক্তির আচার-আচরণ ও কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন আত্ম-প্রতিষ্ঠা, সততা, নিয়মতান্ত্রিকতা ইত্যাদি |
See lessমূল্যবোধের অর্থ ও ধারণাটি সংক্ষেপে লেখো?
Nibedita Paul
মূল্যবোধ সাধারণ অর্থে একজন আদর্শ ব্যক্তির জীবনের গুণাবলীকে মূল্যবোধ বলা যায়। মূল্যবোধ একটি জাতির দর্শন এবং শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নীতিমালা যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, “মূল্যবোধ হলো কতগুলো জৈব মানসিক (psycho physical) সংগঠনের এমন এক সRead more
মূল্যবোধ
সাধারণ অর্থে একজন আদর্শ ব্যক্তির জীবনের গুণাবলীকে মূল্যবোধ বলা যায়। মূল্যবোধ একটি জাতির দর্শন এবং শিক্ষাব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার নীতিমালা যা সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক। আধুনিক ধারণা অনুযায়ী, “মূল্যবোধ হলো কতগুলো জৈব মানসিক (psycho physical) সংগঠনের এমন এক সমন্বয় যা পরিবেশের বহু বিস্তৃত অংশকে সক্রিয়তার দিক থেকে সমগুণসম্পন্ন করে তোলে এবং ব্যক্তির মধ্যে উপযুক্ত আচরণ সৃষ্টি করে”। সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, পরিবেশ ও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণধর্মী ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ সৃষ্টিকারী জৈব-মানসিক প্রবণতাই হলো মূল্যবোধ।
প্রকৃতি অনুযায়ী মূল্যবোধকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন:
১। ব্যক্তিগত মূল্যবোধ
২। সামাজিক মূল্যবোধ
৩। ধর্মীয় মূল্যবোধ
৪। প্রাতিষ্ঠানিক মূল্যবোধ
৫। পেশাগত মূল্যবোধ
৬। বিনোদনমূলক ও সৌন্দর্যবোধমূলক মূল্যবোধ
See lessসামাজিক পরিবর্তনের কারণ গুলি কি কি?
Nibedita Paul
সামাজিক পরিবর্তনের কারণ সমাজ কোন একক কারণে পরিবর্তিত হয় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা পালন করে। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করা হল : (১) প্রাকৃতিক কারণ - বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের অর্থাৎ আবহাওয়া, জলRead more
সামাজিক পরিবর্তনের কারণ
সমাজ কোন একক কারণে পরিবর্তিত হয় না। সামাজিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপাদান ভূমিকা
পালন করে। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা করা হল :
(১) প্রাকৃতিক কারণ – বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্যুৎপাত প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণে
প্রাকৃতিক পরিবেশের অর্থাৎ আবহাওয়া, জলবায়ু এবং ভূমির গঠন-প্রকৃতি পরিবর্তিত হতে পারে । এর
সাথে সাথে সমাজের জীবন-যাপন পদ্ধতিরও পরিবর্তন আসতে পারে। ফলে সামাজিক পরিবর্তন হয়।
(২) অর্থনৈতিক কারণ – অর্থনৈতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ । উৎপাদন
পদ্ধতির পরিবর্তন হলে সমস্ত উপরিকাঠামোতে পরিবর্তন সাধিত হয়। উৎপাদন পদ্ধতি দুটি
উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। একটি হল উৎপাদন শক্তি আর অন্যটি হল উৎপাদন সম্পর্ক। মার্কসের
মতে যখন উৎপাদন শক্তিতে পরিবর্তন আসে তখন উৎপাদন সম্পর্কের উপর তার প্রভাব পড়ে। এই
উৎপাদন সম্পর্ক দ্বারা সমথ সমাজের পরিবর্তন বুঝা যায়। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন যে, আদিম
সাম্যবাদী সমাজ থেকে পুঁজিবাদী সমাজে উত্তরণের কারণ হল অর্থনৈতিক উৎপাদন ব্যবস্থার
পরিবর্তন । তদ্রুপ শিল্পায়নের ফলে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের পরিবর্তন ঘটে আধুনিক শিল্প নির্ভর
শহুরে সমাজের আবির্ভাব ঘটেছে। ফলে সাদামাটা জীবন-যাপন প্রণালীর পরিবর্তে কৃত্রিম ও যান্ত্রিক
জীবন-যাপন পদ্ধতি সূচিত হয়েছে। অর্থনৈতিক কারণ তাই সমাজ পরিবর্তনের গুরুতৃপূর্ণ উপাদান ।
(৩) রাজনৈতিক কারণ – রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। ক্ষমতার
পরিবর্তন ও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে সমাজের রাজনৈতিক আদর্শের পরিবর্তন ঘটে । এই
পরিবর্তন অনেক সময় সমাজের অর্থনৈতিক জীবন এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটায়।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ১৯৪৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে সাম্যবাদী ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে সেখানে
উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা এবং শাসন ব্যবস্থায় পরিবর্তন ঘটে। ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয়
মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সমাজের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট
পরিবর্তনের ফলে শাসন ব্যবস্থা ও জনগণের রাজনৈতিক আশা-আকাজঙ্কার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটে তা জনগণের আকাঙ্কার ক্ষেত্রে
বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে।
(৪) ধর্মীয় কারণ – ধর্মীয় কারণেও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন_ ম্যাক্স ওয়েবারের মতে
পুঁজিবাদী সমাজ সৃষ্টির জন্য প্রটেস্ট্যান্ট ধর্ম দায়ী। তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে প্রটেস্ট্ান্ট ধর্ম দ্বারা
পুঁজিবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রটেস্ট্যান্টদের ধর্মীয় দর্শন ছিল, ‘কর্মই দেবতা” । “কাজ করেই
ঈশ্বরের নৈকট্য পাওয়া যাবে’। এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে প্রটেস্ট্যান্টরা কর্মে ঝাপিয়ে পড়ে। ব্যবসা-
বাণিজ্য ও শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তারা পুঁজির পাহাড় গড়ে তোলে ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার ভিত্তি
স্থাপন করে। ধর্মীয় ধ্যান ধারণা ও আদর্শ সমাজের আমুল পরিবর্তন ঘটায় । যেমন_ ইসলাম ধর্মের
আবির্ভাবের ফলে পৌত্তলিক সমাজের পরিবর্তে এক আল্লাহ্র প্রতি আনুগত্য ভিত্তিক ইসলামী সমাজ
ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
৫) সাংস্কৃতিক কারণ – সাংস্কৃতিক পরিবর্তন সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম কারণ । উইলিয়াম এফ.
অগবার্ন বলেন, “সংস্কৃতির ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে পুরাতন সংস্কৃতির বিলোপ এবং নতুন সংস্কৃতি
নির্ভর সমাজব্যবস্থা গড়ে উঠে।” তিনি সংস্কৃতির দুটি ভাগ করেছেন_বস্তগত সংস্কৃতি ও অবস্তগত
সংস্কৃতি। অগবার্ন বলেন, যখন বস্তগত সংস্কৃতির মধ্যে পরিবর্তন আসে তখন ধীরে বা মন্থর গতিতে
অবস্তগত সংস্কৃতির মধ্যেও একটা পরিবর্তন দেখা দেয়। এই অবস্তগত সংস্কৃতির পরিবর্তন সামাজিক
পরিবর্তনের অন্যতম কারণ। যেমন ডিস এ্যানটিনা ও কম্পিউটারের মাধ্যমে বন্তগত সংস্কৃতির
পরিবর্তনের ফলে সমাজের চিন্তাধারা ও কাজের ধরনের মধ্যে পরিবর্তন সূচিত হয়ে সামাজিক
পরিবর্তন ঘটছে। বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশের ফলে প্রচলিত সংস্কৃতি ধীর গতিতে লোপ পাচ্ছে।
সাংস্কৃতিক ব্যাপ্তি ও বিস্তরণের ফলে এবং বিদেশী সংস্কৃতির ভাল দিক সংযোজিত হওয়ার ফলে দেশীয়
সংস্কৃতির ইতিবাচক উন্নয়ন সামাজিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে।
(৬) সংস্কার ও বিপ্লব – সংস্কার ও বিপ্লবের ফলেও সামাজিক পরিবর্তন ঘটে । সমাজের প্রচলিত ব্যবস্থাযখন জনকল্যাণ বিরোধী এবং অথ্গতির পথে বাধা হয়ে দীড়ায় তখন সমাজ সংক্কারকদের আন্দোলনসমাজের কাঙ্কিত পরিবর্তন আনয়ন করে। রাজা রাম মোহন রায়ের সংস্কার হিন্দু সমাজের প্রচলিত সতীদাহ প্রথা বিলোপ এবং বিধবা বিবাহ প্রথার জন্ম দেয়।
See lessব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক আলোচনা কর?
Nibedita Paul
ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্কঃ ব্যক্তি ও সমাজ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। অপরপক্ষে সমাজ ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ সম্পর্কে ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।” নিন্নে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক আলোচনা করা হল:Read more
ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্কঃ
ব্যক্তি ও সমাজ পারস্পরিকভাবে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত হয়। অপরপক্ষে সমাজ ছাড়া ব্যক্তির অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ সম্পর্কে ম্যাকাইভার বলেন, “সমাজ হচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের এক জটিল জাল যার মধ্যে আমরা বাস করি।” নিন্নে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক আলোচনা করা হল:
প্রথমত: ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য – ব্যক্তিকে নিয়েই সমাজ গঠিত। ব্যক্তির অবদানে সমাজ সমৃদ্ধ হয়। আর সমাজ ব্যক্তির বহুবিধ চাহিদা পূরণ করে। পারস্পরিক লেনদেন ও সহযোগিতায় সমাজ ব্যক্তির অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, গৃহস্থালীর দ্রব্যসামগ্রী ও অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করে।
দ্বিতীয়ত: সমাজ ব্যক্তিকে মূল্যবোধে সম্ীবিত করে – ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিতের ধারণা ব্যক্তি সমাজ থেকেই লাভ করে। সমাজে বাস করার ফলে কতকগুলো প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি, যেমন_ সততা, নিষ্ঠা, শৃংখলাবোধ প্রভৃতি ব্যক্তির মধ্যে জন্য নেয়। সমাজ সেগুলো লালন ও সংরক্ষণ করে। অপরপক্ষে সমাজ এ সমস্ত নিয়ম-রীতি দ্বারা ব্যক্তিকে পরিচালিত করে।
তৃতীয়ত: সমাজ ব্যক্তির সামাজিকীকরণ করে – সামাজিকীকরণ বলতে বুঝায় ব্যক্তিকে সমাজের আকাজিফষত পথে পরিচালিত করা। ব্যক্তি তার জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় জীবনযাপন পদ্ধতি সমাজ থেকেই লাভ করে। পরিবার, ধর্ম, জ্ঞাতি-সম্পর্ক প্রভৃতির মাধ্যমে সমাজ ব্যক্তির সামাজিকীকরণ করে থাকে।
চতুর্থত: সমাজ ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দান করে – বিচ্ছিন্রভাবে বসবাস করলে জীবনের নিরাপত্তা থাকে না। সমাজ ব্যক্তিকে জীবন-যাপনের উপকরণ সরবরাহ করে ও অন্য ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে নিরাপত্তা দান করে। সামাজিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ থেকেই ব্যক্তি তার জীবন, সম্পত্তি ও ব্যক্তি স্বাধীনতার নিশ্চয়তা লাভ করে।
See lessসমাজের সাধারণ উদ্দেশ্য কি কি?
Nibedita Paul
সমাজের সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো হলঃ (১) মৌলিক চাহিদা পূরণ করাঃ সমাজ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান করে। সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে গড়ে উঠা ব্যাপক ও বিপুল কর্মক্ষেত্রে কাজ করে মানুষ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে। ২) নিরাপত্তা প্রদান করাঃ নিরাপত্তা লাভের জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধRead more
সমাজের সাধারণ উদ্দেশ্যগুলো হলঃ
(১) মৌলিক চাহিদা পূরণ করাঃ সমাজ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা বিধান
করে। সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে গড়ে উঠা ব্যাপক ও বিপুল কর্মক্ষেত্রে কাজ করে মানুষ তাদের
মৌলিক চাহিদা পূরণ করে।
২) নিরাপত্তা প্রদান করাঃ নিরাপত্তা লাভের জন্যই মানুষ সমাজবদ্ধ হয়। সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষ
পরাক্রমশালীদের আক্রমণ প্রতিহত করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
(৩) ব্যক্তিত্বের বিকাশঃ সমাজ মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলীর বিকাশ সাধনের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ
করে ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটায়।
€৪) মানবিক গুণাবলীর বিকাশ সাধনঃ মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো সমাজের মধ্যে লালিত ও
অনুশীলিত হয়। দয়া, মায়া, গ্নেহ, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সমঝোতা, সহনশীলতা ও একে অপরকে বিপদে
সাহায্য করা প্রভৃতি মানবিক গুণাবলী সমাজবদ্ধ জীবনেই বিকশিত হয়। অন্যদিকে এসব গুণাবলীই
সমাজের ভিত্তি।
(৫) মনের সংকীর্ণতা দূর করাঃ সমাজ মানুষকে ব্যক্তিস্বর্থের সাথে সামথিক স্বার্থের সমন্বয় সাধন
করতে শেখায়। সমাজের স্বার্থে ব্যক্তিস্বার্থকে বর্জন করার শিক্ষা মানুষ সমাজ থেকেই লাভ করে।
এরূপে মনের সংকীর্ণতা দূর হয়।
(৬) শিক্ষা দান করাঃ সামাজিক জ্ঞান ও নৈতিকতার শিক্ষা ব্যক্তি সমাজ থেকেই লাভ করে। ধর্মীয়
অনুশাসন মেনে চলা ও অন্যের সাথে সামঞ্স্য বিধান করার শিক্ষাও মানুষ সমাজ থেকেই অর্জন করে।
সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজ পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষের মৌলিক জ্ঞান বিস্তার করে।
See lessসমাজের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো?
Nibedita Paul
সমাজের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায় : (১) এক্য_ এক্য সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য । অভ্যাস, মনোভাব, চাওয়া-পাওয়া ও আদর্শগত এঁক্ের ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠে। ২) স্থায়িতৃ- সমাজ একটি স্থায়ী বর্গ। তার অর্থ এই নয় যে সমাজের পরিবর্তন হবে না। সমাজের চিন্তাভাবনRead more
সমাজের সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করলে সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ করা যায় :
(১) এক্য_ এক্য সমাজের প্রধান বৈশিষ্ট্য । অভ্যাস, মনোভাব, চাওয়া-পাওয়া ও আদর্শগত এঁক্ের
ভিত্তিতে সমাজ গড়ে উঠে।
২) স্থায়িতৃ- সমাজ একটি স্থায়ী বর্গ। তার অর্থ এই নয় যে সমাজের পরিবর্তন হবে না। সমাজের
চিন্তাভাবনা, অগ্রগতি, শিক্ষাদীক্ষা ও বিজ্ঞানের অবদানের কারণে সমাজের পরিবর্তন ঘটে। সমাজের
পরিবর্তন ঘটলেও সমাজের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয় না।
(৩) সাধারণ উদ্দেশ্য_ অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা, বাসস্থানের নিশ্চয়তা প্রভৃতি সাধারণ
উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষ সমাজবদ্ধ হয়।
(৪) ভৌগোলিক সীমারেখা- সমাজের সাথে ভুখন্ডের সম্পর্ক না থাকলেও একটি সমাজকে আর একটি
সমাজ থেকে ভৌগোলিক সীমারেখার দ্বারাই পৃথক করা যায়। তবে কোন কোন সমাজ সারা পৃথিবী
জুড়ে বিরাজমান ।
(৫) গ্রুপের সমষ্টি- সমাজ কতকগুলো দল বা গ্রপের সমষ্টি এবং এই গ্র্পগুলো জনসাধারণের
মৌলিক সামাজিক চাহিদা পূরণ করে । যেমন-_ কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী গ্রভৃতি।
(৬) বৈচিত্র্য সমাজ বিচিত্র রূপের একটি মানবিক সংগঠন। সমাজে হাসি-কানা, এক্য-অনৈক্য,
বিরোধিতা-সহযোগিতা, অবহেলা-সহমর্মিতা সবকিছুই বিদ্যমান। ব্যাপক মানবিক সম্পর্কের বৈচিত্র্যময়
রূপ হল সমাজ।
(৭) নৈতিক মূল্যবোধ_ সমাজের ভিত্তি হচ্ছে নৈতিক মূল্যবোধ । সমাজ কতকগুলো নীতিমালা মেনে
চলে এবং নীতিগুলো সমাজকে ধরে রাখে। যেমন- নিষ্ঠা, সততা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা প্রভৃতি
See lessমুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা কেমন ছিল?
Nibedita Paul
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসনRead more
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতের অবস্থা
ভূমিকা:
প্রাচীনকাল থেকেই ভারতবর্ষ সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রাকৃতিক সম্পদ ও এশ্বর্ষে ভরপুর ছিল ভারতবর্ষ মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে প্রধানত: তিনটি ধর্ম প্রচলিত ছিল। এগুলো হল বৌদ্ধ ধর্ম, জৈন ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম । প্রাক-মুসলিম যুগে ভারতবর্ষের শাসন ব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন প্রধান এবং সকল ক্ষেত্রে তাঁর মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হত । রাজার হাতে ন্যস্ত ছিল আইন প্রণয়ন, ক্ষমতার বন্টন, শাসন পরিচালনা এবং সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগের চুড়ান্ত এখতিয়ার। রাজা হর্ষবর্ধন (মৃত্যু ৬৪৫খ্রি.) এর মৃত্যুর পর ভারতবর্ষ রাজনৈতিক বিশৃংঙ্খলায় পতিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে । এ বিশৃংঙ্খলা ও নৈরাজ্যময় অবস্থা মুসলিম বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত ছিল । মুসলিম বিজয়ের সময় উত্তর-পশ্চিম ভারত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এ সময় ভারতবর্ষের কেন্দ্রিয় শাসন ও সামাজিক অবস্থা সন্তোষজনক ছিল না। জাতিভেদ প্রথা হিন্দুসমাজের এঁক্য ও সংহতির মূলে প্রবল আঘাত হানে ।
ধর্মীয় ও প্রশাসনিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে হিন্দুধর্ম দেশের প্রধান ধর্ম হিসেবে পরিণত হয়। অধিকাংশ রাজাই ছিলেন হিন্দু এবং তারা সকলেই হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন । সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপ্রতিহত প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিদ্যমান ছিল। ধর্মীয় ব্যাপারে ও শাসনকার্ধে তাদের অধিকার ছিল একচেটিয়া। বৈশ্য ও শুদ্রগণ ছিল নির্যাতিত, নিম্পেষিত এবং নিম্ন শ্রেণির হিন্দুরা ছিল অস্পৃশ্য । ব্রাহ্মণগণ ধর্মীয় ব্যাপারে সর্বেসর্বা ছিলেন। মুসলিম বিজয়ের প্রাক্কালে ভারতবর্ষে ধর্মীয় অসন্তোষ, অরাজকতা ও নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করে । সাম্প্রাদায়িক কলহ ও ধর্মীয় কোন্দল মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সহায়ক ছিল। প্রাক-মুসলিম যুগে বংশানুক্রমিকভাবে ভারতবর্ষের রাজা নিযুক্ত হতেন। রাজকুমারীগণও শাসনকার্ষে অংশগ্রহণ করতেন বলে জানা যায়। রাজার হাতেই ছিল সমস্ত ক্ষমতা । তিনি আইন প্রণয়ন ও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। ন্যায় বিচারের উৎস এবং প্রধান সেনাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত পালন করতেন । তিনি রাজধর্মের আলোকে শাসনকার্ পরিচালনা করতেন । রাজকার্য পরিচালনার ব্যাপারে মন্ত্রীগণ রাজাকে পরামর্শ দিতেন এবং সাহায্য করতেন। তবে রাজা তাঁদের পরামর্শ গ্রহণে বাধ্য ছিলেন না। এ সময় সাম্রাজ্য বিভিন্ন প্রদেশে বিভক্ত ছিল। প্রাদেশিক প্রধানকে বলা হত “উপারিক’ । তাঁর প্রধান কর্তব্য ছিল প্রদেশের শান্তি ও শৃংখলা রক্ষা করা রাজার আদেশকে কার্যকরী করা এবং প্রয়োজনে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা। প্রদেশগুলি জেলায় বিভক্ত ছিল। জেলাকে বলা হত “বিষয়’। জেলার শাসনকর্তা বিষয়পতি নামে অভিহিত হতেন । দেশের শাসন ব্যবস্থার সর্বনিমনস্তরে ছিল গ্রাম । গ্রামের শাসন ব্যবস্থা মোড়ল বা পঞ্চায়েত কর্তৃক সম্পাদিত হত।
অর্থনৈতিক অবস্থা
মুসলিম বিজয়ের প্রান্কালে ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। বিপুল প্রাকৃতিক সম্পদ ও ধর্বর্ষে পরিপূর্ণ ছিল ভারতবর্ষ। এ দেশের মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষিকাজ । অভিজাত ও উঁচু শ্রেণির অধিকাংশ লোক বিলাসবহুল জীবন যাপন করত। প্রাচীন অর্থশান্ত্রবিদ কৌটিল্যের বিবরণ অনুযায়ী তিনটি মৃখ্য উৎস থেকে রাষ্ট্রের আয় ছিল: ক) ভূমি রাজস্ব, খ) সামন্ত প্রভূ ও জনগণের কাছ থেকে প্রাপ্ত কর, এবং গ) আবগারী ও বাণিজ্য শুন্ক। পরবর্তীতে এদেশে শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটে । গুজরাট ও বাংলা কাপার্স বন্ত্র উৎপাদন ও রপ্তানির জন্য বিখ্যাত ছিল। ব্যবসায়-বাণিজ্যেও উৎকর্ষ সাধিত হয়। বিভিন্ন পণ্য আমদানি ও রপ্তানি হতে থাকে। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো ছিল বলে এদেশে সংস্কৃতি ও সভ্যতার চরম বিকাশ ঘটেছিল । চীনা পর্যটক ফা-হিয়েনের বর্ণনা থেকে পঞ্চম শতাব্দির শুরুতে ভারতবর্ষের উন্নত অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, মগধের লোকেরা ধনী ও সমৃদ্ধশালী ছিল। পর্যটক হিউয়েন সাঙ-এর বর্ণনায় জানা যায় যে, সপ্তম শতাব্দিতেও ভারতবর্ষের অধিবাসীগণ সুখে-শান্তিতে বসবাস করত ও নির্বিয়ে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত। এদেশের অতুল এশ্বর্ষে আকৃষ্ট হয়ে বিদেশী বণিকগণ যেমন এদেশে বারবার এসেছেন আবার বিদেশী আক্রমণকারীগণও এ দেশ বার বার লুগ্ঠন করে তাদের কর্তৃত প্রতিষ্ঠা করতে প্রয়াস চালিয়েছেন ।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা
তৎকালীন হিন্দু সমাজ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শুদ্র-এই চারটি বর্ণ স্তরে বিভক্ত ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের অপরিসীম প্রভাব বিস্তৃত ছিল। আর বৈশ্য ও শুদ্রদের অবস্থান ছিল সমাজের নিমস্তরে । শুদ্রদের সমাজে অস্পৃশ্য বলে গণ্য করা হত। জাতিভেদ প্রথা খুব কঠোর ছিল । জনসাধারণ স্ব স্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে বিবাহ করতে পছন্দ করত । ব্রাহ্মণরা শিক্ষা, ধর্মকর্ম, আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও কখনো কখনো যুদ্ধ বিগ্রহে নিয়োজিত থাকতো । ক্ষত্রিয়গণ যুদ্ধ বিরহ, বৈশ্যরা ব্যবসায়-বাণিজ্য এবং শুদ্রগণ কৃষিকাজ ও সাধারণ কাজ কর্ম করত। বর্ণপ্রথার কারণে সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্ভ্বীতির অভাব ছিল । সমাজে বহু বিবাহ, সতীদাহ ও সহমরণ প্রথা প্রচলিত ছিল । কিন্তু বিধবা বিবাহের প্রচলন ছিল না। নারীরা অন্ত:পুরে জীবন যাপন করতেন। তাদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্য ছিল না। দাসপ্রথা একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। এতদ্বস্েও অভিজাত শ্রেণির মেয়েরা উদার শিক্ষা লাভ করত। তারা শাসন ক্ষেত্রে ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করত । মুসলিম বিজয়ের পূর্বে ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে প্রভূত অগ্গতি লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্পকলা চর্চায় ভারতীয়গণ কৃতিতৃ অর্জন করেন। সে যুগে ভারতে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । ভারতের স্বনামধন্য বল্পভী এবং বিহারের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও উদন্তপুর, বিক্রমশীলা, বারানসী প্রভৃতি স্থানে উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ছিল। মালব ও আজমীরে সংস্কৃত কলেজ স্থাপিত হয়েছিল । জ্যোর্তিবিদ্যা, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, দর্শন ও সাহিত্য প্রভৃতি জ্ঞানের চর্চা করা হত। সে যুগে স্থাপত্য ও ভাক্কর্য শিল্পে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল ।
মুসলিম বিজয়ের পূর্বে তৎকালীন ভারতের রাজনৈতিক অবস্থা:
আফগানিস্তান, কাশ্মীর ও কনৌজ: মৌর্য বংশের শাসনামল থেকেই আফগানিস্তান ছিল ভারতের একটি অংশ । মুসলিম এঁতিহাসিকগণ এটিকে হিন্দুশাহী রাজ্য বলে অভিহিত করেন। সপ্তম শতাব্দিতে কর্কট রাজবংশীয় দুর্লভ বর্ধনের অধীনে কাশ্মীর ছিল উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। বিজেতা, বিদ্যোৎসাহী ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় ছিলেন কাশ্মীরের রাজাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষমতাধর । তিনি কনৌজ, কামরূপ, কলিঙ্গ ও গুজরাট জয় করেন বলে জানা যায়। কর্কট বংশের অপর একজন শাসক জয়গীড় গৌড় ও কনৌজের নৃপতিদের পরাজিত করেন। অষ্টম শতাব্দির প্রথম দিকে কনৌজ ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হিসেবে পরিগণিত হত। উত্তর-ভারতের অন্যতম পরাক্রমশালী রাজা যশোবর্মণ কনৌজের হত গৌরব ও আধিপত্য পুনরুদ্ধার করেন। তিনি গৌড় জয় করে এর রাজাকে হত্যা করেন এবং কাশ্মীর রাজ ললিতাদিত্যের সহায়তায় তিব্বত অভিযান করেন। তিনি চীনে দূত প্রেরণ করেন। কাশ্মীরের রাজা ললিতাদিত্য কর্তৃক তিনি পরাজিত ও নিহত হন। রাজবংশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।
সিন্ধু ও মালব-দিল্লি ও আজমীর
সপ্তম শতকে সিন্ধু ছিল হ্র্ষবর্ধনের সাগ্রাজ্যভূক্ত। পরবর্তীতে “চাচ” নামক সিদ্ধুর জনৈক ব্রাহ্মণ মন্ত্রী সিন্ধুতে স্বাধীন রাজবংশের গোড়াপত্তন করেন । চাচের পুত্র রাজা দাহিরকে পরাজিত করে ইমাদউদ্দীন মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ সালে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এ রাজ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। প্রতিহার রাজপুতদের দ্বারা শাসিত মালব ছিল উত্তর- ভারতের একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র । উজ্জয়িনী ছিল এ রাজ্যের রাজধানী । দ্বাদশ শতকে মুসলিম অভিযানের প্রান্কালে দিল্লি ও আজমীরে শক্তিশালী চৌহান বংশীয় রাজপুব্রগণ রাজত্র করত । এ বংশের শাসক বিশালদেব চৌহান প্রতিহর বংশের নিকট থেকে দিল্লি দখল করেন। রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে তারা একটি বিশাল রাজ্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়।
গুজরাট, আসাম ও নেপাল
প্রতীহার বংশের অধীনে অত:পর তাদের আধিপত্য ক্ষুন্ন করে চালক্য ও ভাগেলা বংশ পর্যায়ক্রমে গুজরাট শাসন করে। নবম শতাব্দিতে চান্দেলা বংশ বুন্দেলখন্ডে এক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। শেষ রাজা গন্ড ১০১৯ হন। ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্ব প্ান্তসীমায় অবস্থিত একটি রাজ্য হল আসাম । এটি হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়। এ সময় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন বাংলার স্বাধীন নৃপতি। হ্র্ষবর্ধনের সমসাময়িক এই শাসকের মৃত্যুর পর বাংলায় মারাত্মক গোলযোগ ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। নেপাল সপ্তম শতাব্দিতে উত্তর ভারতের অপর একটি স্বাধীন রাজ্য। নেপালের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল।
See lessবাংলা অর্থ | So Proud of you meaning in Bengali?
Nibedita Paul
English বাংলা So Proud of you. Very proud of you . তোমার জন্য গর্বিত। তোমাকে নিয়ে খুবই গর্ববোধ করি। - You have done a wonderful job, so proud you. - You are a gem, I am so proud of you.
Very proud of you .
তোমার জন্য গর্বিত।
তোমাকে নিয়ে খুবই গর্ববোধ করি।
– You have done a wonderful job, so proud you.
– You are a gem, I am so proud of you.
See less