শিল্পী ছোট গল্প মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (আলোচনা ও বাখ্যা) Shilpi Manik Bandopadhyay Short Stories in Bengali?
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
শিল্পী – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শিল্পী’ গল্পের মাধ্যমে এক সামাজিক উত্তরণ তথা জন জাগরণের ডাক দিয়েছেন –
মূলত বলা ভাল সামাজিক শােষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধাচরণে যে নিম্নশ্রেণীর মানুষেরও সমান অধিকার আছে তারই যেন প্রকাশ সােচ্চার হয়েছে এ গল্পে এছাড়া রয়েছে সংগ্রামী এক মানুষের শিল্প স্তত্বাকে বাঁচিয়ে রাখার টানাপােড়নে ‘শিল্পী’ থাকার প্রকৃত কাহিনী।
তাঁতিপাড়ার মানি তাঁতি এ গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্র। বস্তুত সে একজন শিল্পী। কেন? সে হাজার অভাবেও সস্তায় কাপড় বােনার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। সাতপুরুষের এই তাঁতির বংশ এককালে বেনারসী বুনত, এখনও বেশী দামের কাপড় না বুনলে মদনের মন ভরে না। এখানেই মদনের শিল্পী মন – মানসিকভাবে তার শিল্পী হয়ে ওঠা – তাই কিছুতেই মদন ভুবন বা মিহির বাবুর কাছ থেকে বেশি দামে সস্তা কাপড়ের সুতাে কিনতে রাজি হয় না। শত দারিদ্রের মধ্যে স্পর্ধা ও জাত্যাভিমান হারায় না মদন তাই ভুবনের ‘বােকা’ অপবাদের উত্তরে সঠিক প্রত্যুত্তর দিতে তার বাঁধে না। অসামান্য চরিত্রবল ও দৃঢ়তা নিয়ে অন্নহীন সংসার আসন্নপ্রবণা স্ত্রী, সাতদিন তাঁতবন্ধ থাকার বাস্তবের সামনে দাঁড়িয়েও মাথা উঁচু করে থাকে মদন। এই মদনকে বুঝতে পারে না ভুবন – মদনের অভাবে না ভেঙে পড়ে বড় বড় কথা বলা বা প্রাণ খুলে হেসে ওঠার অতল রহস্য সে বােঝে না কেননা সে মদনকে তাঁতি পরিচয়েই জেনেছিল, জানেনি মদন ছিল শিল্পী।
‘লেখকের কথা’ রচনায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন – খালের ধারে, নদীর ধারে, গ্রামের ধারে বসানাে গ্রামচাষি, মাঝি, জেলে, তাঁতিদের পীড়িত ক্লিষ্ট মুখ দেখতেন তিনি অহরহ আর ‘মধ্যবিত্ত আর চাষাভুষাের ওই মুখগুলি আমার মধ্যে মুখর অনুভুতি হয়ে চ্যাঁচাত – ভাষা দাও, ভাষা দাও। সেই ভাষাই তিনি দিয়েছিলেন শিল্পী’ গল্পের মদনের মুখে। সে অনায়াসে তাঁতি সমাজের আপােষহীন শ্রেণীসংগ্রামের নায়ক হয়ে ওঠে, তাকে নিয়ে তাই প্রবাদ তৈরি হয় মদন যখন গামছা বুনবে। সে অনমনীয়তা থেকে সে নিচুতলার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের ধারক হয়েই বলে বড়াে বাড় বেড়েছে বাবুদের – একথা কেবল ব্যক্তিপ্রত্যাখ্যানের প্রতিবাদ নয় – এ প্রতিবাদ সমস্ত শ্রেণীসংগ্রামী মানুষের প্রতিবাদ।।
এ গল্পের শেষ পর্বে ব্যক্তি মদনের সঙ্গে শিল্পীমদনের দ্বন্দ্ব দেখা যায় – সে দ্বন্দ্বে পরিস্থিতির হাতে বিকারগ্রস্থ মদনকে পাই আমরা। সাধারণ মানুষ হয়ে এই একবারই গল্পে আসে মদন যেখানে তার মানসিক সহ্য ক্ষমতা সামান্য সময়ের জন্য হলেও ভেস্তে যায়, ভুবনের দাদন গ্রহণ করে সে। কিন্তু শিল্পীর সবচেয়ে বড়াে সম্পদ আত্মাভিমান, তাই সে পরদিন সকালে সবকিছু ফেরত দিয়ে বলে ‘মদন তাঁতি যেদিন গামছা বুনবে – আর বুড়াে ভােলাকে বলে বেইমানি করব তােমাদের সাথে কথা দিয়ে। এখানেই শিল্পী সত্তাকে নষ্ট করতে পারে না। এভাবেই প্রকৃত শিল্প ভাবনার মধ্য দিয়ে শিল্পীসত্তা জয় লাভ করে।
‘শিল্পী’ গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় দেখালেন আত্মহত্যা বা নৈরাশ্য মানুষের জীবনের শেষ কথা নয় – তাই হাজার অভাব অতিক্রম করে শিল্পীর শিল্পসত্ত্বাই শেষ পর্যন্ত বেঁচে যায় অর্থাৎ সংগ্রামী মানুষ চির অপরাজেয়। এছাড়া নিম্নশ্রেণীর মানুষও যে একজন সামাজিক মানুষ তারও যে দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যবােধ রয়েছে এই সমাজের প্রতি-শিল্পী সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রেখে সৎ পথে আত্মবল সম্বল করে যে প্রকৃতই জয়ী হওয়া যায় – এবং যথার্থ শিল্পীর সার্থকতা অর্জন করা যায় তাই এই গল্পের প্রধান উপজীব্য – এক্ষেত্রে গল্পটির নামকরণটিও যথার্থ রূপেই সার্থক।