সূচনাঃ বর্তমানে বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা।ক্রিকেট, ফুটবলের মতোই একটি বিদেশি খেলা। ফুটবল খেলা যদিও জনপ্রিয় খেলা তবু ক্রিকেটকেই বলা হয় খেলার রাজা। অনেক ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়ের খেলা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ক্রিকেট খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেট খেলার ইতিহাসঃ ক্রিকেট খেলার জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। খ্রিস্টীয় আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের মাটিতেই প্রথম ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। হ্যাম্পশায়ারের অন্তর্গত হাম্পবলডনে প্রথমে ক্রিকেট দল গড়ে উঠে। তারপর সমগ্র ইংল্যান্ডে এ খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর পূর্বাহ্নে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রিকেট খেলাও ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক সফরের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটপ্রিয় দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় অবর্তীণ হয়। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ কেনিয়, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও স্কটল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এ খেলা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেট খেলার প্রকারভেদঃ ক্রিকেট খেলা তিন ধরনের। যথা- টেস্ট ম্যাচ অর্থাৎ পাঁচ দিনের খেলা, ওয়ানডে ম্যাচ অর্থাৎ এক দিনের সীমিত ওভারের খেলা, এবং টি টোয়েন্টি ম্যাচ।
ক্রিকেট খেলার নিয়মঃ ক্রিকেট দু’দলে খেলতে হয়। প্রত্যেক দলে এগারোজন করে খেলোয়াড় থাকে। ক্রিকেট খেলার জন্য একটি কাঠের ব্যাট ও মুষ্টির ন্যায় আয়তনবিশিষ্ট একটি গোলাকার কাঠের বলের প্রয়োজন হয়। মাঠের মধ্যস্থলে পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে বাইশ গজ দূরে এক একদিকে তিনটি করে কাঠের দন্ড পোঁতা থাকে। এ পোঁতা কাঠের দন্ডকে ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘উইকেট’ বলা হয়। এ উইকেটের মাথায় একটি নির্দিষ্ট মানের দুটি করে কাঠখন্ড থাকে, এগুলোকে বলা হয়, ‘বেইল’। ক্রিকেট খেলা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে টস দেওয়া হয়। যে পক্ষ টসে জয়লাভ করে সে পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় কে আগে ব্যাট করবে। প্রতিপক্ষ ফিল্ডিং-এর জন্য প্রস্তুত হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উভয় দলকে পর্যায়ক্রমে দুবার করে ব্যাট করতে হয়। প্রত্যেকবারের খেলাকে একটি ইনিংস বলা হয়। ক্রিকেট খেলা যিনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করেন তাকে আম্পায়ার বলে। দুই পাশের উইকেটের জন্য দুইজন আম্পায়ার থাকেন। তবে বর্তমানে আরও এক আম্পায়ার অন্তরালে থাকে কাজ করেন, যাকে ‘থার্ড আম্পায়ার’ বলা হয়।
একদল ব্যাট করে আর অন্যদল মাঠের নির্দিষ্ট স্থান ঘিরে দাঁড়ায় যাতে বল আয়ত্তের বাইরে যেতে না পারে। দুজন ব্যাটধারী দুদিকে উইকেটের নিকট পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে একজন দল পিটায় আর অন্যজন প্রয়োজনবোধে দৌড়িয়ে দলের জন্য রান সংগ্রহ করতে সাহায্য করে, পরে পালাক্রমে নিজেরা ব্যাট করে। তাদের একজন একদিক হতে বল নিক্ষেপ করে ব্যাটধারীর উইকেট স্পর্শ বা আঘাত করতে চেষ্টা করে। বল নিক্ষেপকারীকে ‘বোলার’ বলে। একজন বোলার একধারে ছয় বল অর্থাৎ এক ওভার এবঙ একদিকে খেলায় বিরতি দিয়ে দিয়ে মোট দশ ওভার বল করতে পারে। ব্যাটধারীর উইকেটের পেছনে যে দাঁড়িয়ে থাকে তাকে ‘উইকেট রক্ষক’ বলে। তাদের লক্ষ্য থাকে উইকেট বলের দিক, বাকি খেলোয়াড় চতুর্দিকে নির্দিষ্ট স্থানে দাড়িঁয়ে বল আটকাবার চেষ্টা করে। এ জন্য তাদেরকে ফিল্ডার বলে। একদলের দশজন খেলোয়াড় আউট হলে তাদের এক ইনিংস শেষ হয়। তখন অপর দল ব্যাট করার সুযোগ পায়।
আউটবিধিঃ প্রত্যেক বোলার সর্বদা ব্যাটসম্যানকে আউট করা চেষ্টা করেন। আবার ব্যাটম্যান চেষ্টা করেন উইকেট রক্ষা করার। আর এভাবেই খেলা উপভোগ্য হয়ে উঠে। খিল্ডি-এ থাকা দলের খেলোয়াড়রা মাঠের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং বলকে সীমানা ছাড়িয়ে যেতে বাধা দেয়। ফিল্ডাররা বল মাটি স্পর্শ করার আগেই শূন্যে বলটি ধরে ব্যাটসম্যানকে ‘ক্যাচ আউট’ করেন। ক্যাচ আউট ছাড়াও বোল্ড আউট, রান আউট, লেগ বিফোর উইকেট, স্ট্যাম্প আউট ইত্যাদি রয়েছে।
জয়- পরাজয়ঃ একদিনের খেলায় জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট ওভারে রানের সংখ্যা এবং কতজন ব্যাটসম্যান নট আউট তার হিসাব দ¦ারা । সুতরাং এ খেলায় সব সময় লক্ষ রাখতে হয় রান বাড়াবার দিকে এবং উইকেট রক্ষার দিকে। অন্যদিকে টেস্ট ম্যাচে প্রতি দল দুইবার ব্যাট করার সুযোগ পায়। এর মধ্যে যে দল বেশি রান করতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষকে আউট করতে পারে সে দলই জয়ী হয় নতুবা খেলা ড্র হয়।
সাম্প্রতিক ক্রিকেট খেলাঃ সাম্প্রতিককালে এ খেলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এর অনেক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘ সময়ের অসুবিধা দূর করা জন্য টি-টোয়েন্টি খেলা চালু করা হয়েছে। এতে প্রত্যেক দল ২০ ওভার করে বল খেলার সুযোগ পায়; এতে যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কম সময়ে শেষ হয় বলে এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তা ছাড়া ৫০ ওভারের ওয়ান ডে ম্যাচ ও তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ ক্রিকেটের ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে ক্রিকেটের মহামিলন বিশ্বকাপ ক্রিকেট। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম, দ্বিতীয় এবঙ তৃতীয় বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত হয। প্রথম দুইবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তৃতীয়বার ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৭ সালে ভারত ও পরিস্তানে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত যষ্ঠ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত সপ্তম বিশ্বকাপ, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ^কাপ এবঙ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত নবম বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা যৌথভাবে আয়োজন করে দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। এ আসরে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৫ সালে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এগারোতম বিশ্বকাপ আয়োজন করে। দুই স্বাগতিক দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল ম্যাচ এবং এতে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে চ্যম্পিয়ন হয়।
উপকারিতাঃ অন্যান্য খেলাধুলার ন্যায় ক্রিকেট খেলাও আনন্দদায়ক ও স্বাস্থপ্রদ। শরীরচর্চার দিক ব্যতীত এর অন্য একটা দিকও আছে চরিত্র গছন, দৈর্য, সহিষষ্ণুতা, সতর্কতা, সহযোগিতা প্রভৃতি গুণ এ খেলা থেকেই লাভ করা যায়।
অপকারিতাঃ ক্রিকেট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খেলা। বোলার কর্তৃক সজোরে ছোড়া বল ব্যাটসম্যানকে মারাত্মকভঅবে আহত করতে পারে। এমনকি তা মৃত্যুর কারনও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফিল্ডারদেরও ফিল্ডিং করতে গিয়ে করুণ করিণতি বহন করত দেখা যায়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজ বলের আঘাতে মৃতুবরণ করেন। এরকম উদাহরণ আরও অনেকে রয়েছে। তা ছাড়া অনেকের মতে, ক্রিকেট খেলায় অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় হয়।
উপসংহারঃ বর্তমানে দেশ বিদেশে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। এ খেলায় মাধ্যমে দেশে দেশে গড়ে উঠে সখ্যতা। মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন হয় দৃঢ়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এ খেলা সকল মানুষকে এক কাতারে সামিল করে। যা বিশ্ব শান্তির দ্বার উন্মোচিত করে সহজেই।
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ও অন্যতম খেলা হচ্ছে ফুটবল। কারও মতে চীন আবার কারো মতে ইতালি থেকে ফুটবল খেলা আরম্ব হয় এবং পরবর্তী কালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । জনপ্রিয়তার কারণে ইহা একটি আন্তর্জাতিক খেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতি চার বছর পর পর আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় । ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই ফুটবল একটি জাতীয় খেলা । আমাদের দেশে সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা দেখা যায়। মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়: ফুটবল খেলার মাঠ সাধারণত ১০০-১২০ গজ দীর্ঘ এবং ৫০-৫৬ গজ প্রস্থ হয়ে থাকে । মাঠের দুই প্রান্তে দু’টি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট এর উচ্চতা ৮ ফুট এবং একটি বার বা খুঁটির অপরটি থেকে ৮ গজ দূরে অবস্থিত। একটি আদর্শ ফুটবলের ওজন সাধারণত ১৪-১৬ আউন্স হয়ে থাকে। একটি ফুটবল খেলায় মোট ২২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে , যারা দুইটি দলে ১১ জন করে বিভক্ত হয়ে খেলে থাকে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান রেফারি ও তাকে সাহায্যের জন্য দু’ জন লাইন্সম্যান থাকে।
ফুটবল খেলার নিয়ম বা পদ্ধতি: পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী খেলার জন্য মাঠের মধ্যস্থলে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান করে। রেফারির বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু হয় এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের অবস্থানে চলে যায়। সাধারণত ১১ জন খেলোয়াড়ের পাঁচ জন সামনের ভাগে দাঁড়ায় যাদেরকে বলে ফরোয়ার্ড, তাদের পিছনে ৩ জন থাকে মিডফিল্ডার বা হাফ ব্যাক, তাদের পিছনে দু’ জন থাকে ডিফেন্স বা ফুল ব্যাক আর গোলবারের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক, যিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে বলকে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। একটি ফুটবল ম্যাচ মোট ৯০ মিনিটের হয়, মধ্যেখানে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকে।
খেলার নিয়ম কানুন: যে ভাবে প্রত্যেকটি খেলার একটি নিয়ম থাকে সে ভাবে ফুটবল খেলার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে । এসব নিয়মনীতি সবই ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তৈরী করে থাকে । যেমন প্রথমে বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখতে হবে। রেফারি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু করতে হবে। একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ বল হাত দিয়ে ধরতে বা মারতে পারবে না। এ নিয়ম না মানলে হ্যান্ডবল হয় এবং বিপক্ষ দলের দিকে বল ফ্রি কিক মারা হয়। অবৈধভাবে কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারলে রেফারি শাস্তি স্বরূপ উক্ত খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে শাস্তি দেন। লাল কার্ড পেলে ঐ খেলোয়াড় আর খেলতে পারেন না। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের সহজেই চিনতে প্রত্যেকটি খেলোয়াড় কে তাদের ইউনিফর্ম এ জার্সি নাম্বার দেয়া হয়।
ফুটবল ও ভারতবর্ষ : বিদেশি খেলা হলেও ফুটবল খেলা ভারতবর্ষের একটি জনপ্রিয় খেলা । বিশেষ করে বাংলায় সঙ্গে ফটবললের অনন্য সম্পর্ক । বিশ্বকাপ এলেই সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় ফুটবল উন্মাদনা। পতাকা টানিয়ে বা সমর্থিত দলের জার্সি গায়ে দিয়ে দলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে বাঙালিরা।ভারতবর্ষে ফুটবল আসে ইংরেজ দের হাত ধরে এবং ১৮৭২ সালে প্রথম “কলকাতা ফটবল ক্লাব” স্হাপিত হয়। বর্তমানে “অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন” ভারতে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভারত একাধিকবার অলিম্পিক এবং এশিয়ান কাপ সহ অনেক প্রতিজোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।হাল আমলে ভারতবর্ষে ফুটবল কে আরও জনপ্রিয় করতে ২০১৩ সালে একটি প্রিমিয়াম ঘরোয়া প্রতিজুগিতা “ইন্ডিয়ান সুপার লিগ” নামে শুরু করা হয়।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা): বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় FIFA (Federation of International Football Association). ২১ মে, ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্থাটি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এটির সদরদপ্তর। ফিফা এর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার। ফিফার বর্তমান সদস্য ২০৯টি। এ সংস্থা প্রতি ৪ বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। পুরুষদের ন্যায় নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপেরও প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থা। প্রতিবছর এ সংস্থা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচন ও দলগত র্যাংকিং করে থাকে।
ফুটবল বিশ্বকাপ: ফুটবল খেলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফার অধীনে প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২১ তম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে রাশিয়ায় । এ আসরে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স । তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট সম্মাননা দেওয়া হয়। ফুটবল বিশ্বকাপের ২২ তম আসর হবে কাতারে ২০২২ সালে।
ফুটবল খেলার উপকারিতা: ফুটবল খেলা শুধু খেলা নয়, এটির মাধ্যমে যেমন আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল খেলা আজ বিশ্বব্যাপী বিশাল লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবল বাণিজ্যের অন্যতম উদাহরণ। ফুটবল খেলার মাধ্যমে যেমন মানসিক অবসাদ দূর হয় তেমনি এর উত্তেজনা-উপভোগ মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ফুটবল খেলতে যথেষ্ট ছুটাছুটি ও পরিশ্রম করতে হয় বলে শরীর সর্বদাই ফিট থাকে। খেলার কঠোর আইন-কানুন খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
বিশ্বের উল্লেখিত ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ: ফুটবলের জগতে জীবন্ত কিংবদন্তী হলো ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজপুত্র নামে পরিচিত। এ ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, নেইমার, জিদান বর্তমান ফুটবলের অন্যতম তারকা। বার্সালোনা, রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ান মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, চেলসি, ম্যানচেষ্টার সিটি প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন কাপ, এশিয়া কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ লীগ, প্রভৃতির মাধ্যমে ফুটবল সারা পৃথিবীতে উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার: ফুটবল খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস। ফুটবল খেলায় থাকে হার-জিত, থাকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু। সেই আনন্দ বেদনার ঊর্ধ্বে থাকে মনোরম লড়াই আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন, স্বদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি আর বিজয়ের তীব্র বাসনা। ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এ জন্যই ফুটবল খেলা সকল খেলাকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।
Hridoy
ক্রিকেট
সূচনাঃ বর্তমানে বিশ্বে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা।ক্রিকেট, ফুটবলের মতোই একটি বিদেশি খেলা। ফুটবল খেলা যদিও জনপ্রিয় খেলা তবু ক্রিকেটকেই বলা হয় খেলার রাজা। অনেক ব্যয়বহুল ও দীর্ঘ সময়ের খেলা হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ক্রিকেট খেলা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেট খেলার ইতিহাসঃ ক্রিকেট খেলার জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। খ্রিস্টীয় আঠারো শতকে ইংল্যান্ডের মাটিতেই প্রথম ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয়। হ্যাম্পশায়ারের অন্তর্গত হাম্পবলডনে প্রথমে ক্রিকেট দল গড়ে উঠে। তারপর সমগ্র ইংল্যান্ডে এ খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ঊনবিংশ এবং বিংশ শতাব্দীর পূর্বাহ্নে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে ক্রিকেট খেলাও ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক সফরের মাধ্যমে বিশ্ব ক্রিকেটপ্রিয় দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় অবর্তীণ হয়। পরবর্তীতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, বাংলাদেশ কেনিয়, আয়ারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও স্কটল্যান্ড প্রভৃতি দেশে এ খেলা ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ক্রিকেট খেলার প্রকারভেদঃ ক্রিকেট খেলা তিন ধরনের। যথা- টেস্ট ম্যাচ অর্থাৎ পাঁচ দিনের খেলা, ওয়ানডে ম্যাচ অর্থাৎ এক দিনের সীমিত ওভারের খেলা, এবং টি টোয়েন্টি ম্যাচ।
ক্রিকেট খেলার নিয়মঃ ক্রিকেট দু’দলে খেলতে হয়। প্রত্যেক দলে এগারোজন করে খেলোয়াড় থাকে। ক্রিকেট খেলার জন্য একটি কাঠের ব্যাট ও মুষ্টির ন্যায় আয়তনবিশিষ্ট একটি গোলাকার কাঠের বলের প্রয়োজন হয়। মাঠের মধ্যস্থলে পরস্পরের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে বাইশ গজ দূরে এক একদিকে তিনটি করে কাঠের দন্ড পোঁতা থাকে। এ পোঁতা কাঠের দন্ডকে ক্রিকেটের পরিভাষায় ‘উইকেট’ বলা হয়। এ উইকেটের মাথায় একটি নির্দিষ্ট মানের দুটি করে কাঠখন্ড থাকে, এগুলোকে বলা হয়, ‘বেইল’। ক্রিকেট খেলা আরম্ভ হওয়ার পূর্বে টস দেওয়া হয়। যে পক্ষ টসে জয়লাভ করে সে পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় কে আগে ব্যাট করবে। প্রতিপক্ষ ফিল্ডিং-এর জন্য প্রস্তুত হয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে উভয় দলকে পর্যায়ক্রমে দুবার করে ব্যাট করতে হয়। প্রত্যেকবারের খেলাকে একটি ইনিংস বলা হয়। ক্রিকেট খেলা যিনি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রন করেন তাকে আম্পায়ার বলে। দুই পাশের উইকেটের জন্য দুইজন আম্পায়ার থাকেন। তবে বর্তমানে আরও এক আম্পায়ার অন্তরালে থাকে কাজ করেন, যাকে ‘থার্ড আম্পায়ার’ বলা হয়।
একদল ব্যাট করে আর অন্যদল মাঠের নির্দিষ্ট স্থান ঘিরে দাঁড়ায় যাতে বল আয়ত্তের বাইরে যেতে না পারে। দুজন ব্যাটধারী দুদিকে উইকেটের নিকট পরস্পর মুখোমুখি দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে একজন দল পিটায় আর অন্যজন প্রয়োজনবোধে দৌড়িয়ে দলের জন্য রান সংগ্রহ করতে সাহায্য করে, পরে পালাক্রমে নিজেরা ব্যাট করে। তাদের একজন একদিক হতে বল নিক্ষেপ করে ব্যাটধারীর উইকেট স্পর্শ বা আঘাত করতে চেষ্টা করে। বল নিক্ষেপকারীকে ‘বোলার’ বলে। একজন বোলার একধারে ছয় বল অর্থাৎ এক ওভার এবঙ একদিকে খেলায় বিরতি দিয়ে দিয়ে মোট দশ ওভার বল করতে পারে। ব্যাটধারীর উইকেটের পেছনে যে দাঁড়িয়ে থাকে তাকে ‘উইকেট রক্ষক’ বলে। তাদের লক্ষ্য থাকে উইকেট বলের দিক, বাকি খেলোয়াড় চতুর্দিকে নির্দিষ্ট স্থানে দাড়িঁয়ে বল আটকাবার চেষ্টা করে। এ জন্য তাদেরকে ফিল্ডার বলে। একদলের দশজন খেলোয়াড় আউট হলে তাদের এক ইনিংস শেষ হয়। তখন অপর দল ব্যাট করার সুযোগ পায়।
আউটবিধিঃ প্রত্যেক বোলার সর্বদা ব্যাটসম্যানকে আউট করা চেষ্টা করেন। আবার ব্যাটম্যান চেষ্টা করেন উইকেট রক্ষা করার। আর এভাবেই খেলা উপভোগ্য হয়ে উঠে। খিল্ডি-এ থাকা দলের খেলোয়াড়রা মাঠের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় এবং বলকে সীমানা ছাড়িয়ে যেতে বাধা দেয়। ফিল্ডাররা বল মাটি স্পর্শ করার আগেই শূন্যে বলটি ধরে ব্যাটসম্যানকে ‘ক্যাচ আউট’ করেন। ক্যাচ আউট ছাড়াও বোল্ড আউট, রান আউট, লেগ বিফোর উইকেট, স্ট্যাম্প আউট ইত্যাদি রয়েছে।
জয়- পরাজয়ঃ একদিনের খেলায় জয় পরাজয় নির্ধারিত হয় নির্দিষ্ট ওভারে রানের সংখ্যা এবং কতজন ব্যাটসম্যান নট আউট তার হিসাব দ¦ারা । সুতরাং এ খেলায় সব সময় লক্ষ রাখতে হয় রান বাড়াবার দিকে এবং উইকেট রক্ষার দিকে। অন্যদিকে টেস্ট ম্যাচে প্রতি দল দুইবার ব্যাট করার সুযোগ পায়। এর মধ্যে যে দল বেশি রান করতে পারে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিপক্ষকে আউট করতে পারে সে দলই জয়ী হয় নতুবা খেলা ড্র হয়।
সাম্প্রতিক ক্রিকেট খেলাঃ সাম্প্রতিককালে এ খেলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং এর অনেক নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। বর্তমানে দীর্ঘ সময়ের অসুবিধা দূর করা জন্য টি-টোয়েন্টি খেলা চালু করা হয়েছে। এতে প্রত্যেক দল ২০ ওভার করে বল খেলার সুযোগ পায়; এতে যে দল বেশি রান করতে পারে সে দল বিজয়ী বলে ঘোষিত হয়। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ কম সময়ে শেষ হয় বলে এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তা ছাড়া ৫০ ওভারের ওয়ান ডে ম্যাচ ও তার জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটঃ ক্রিকেটের ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হয়েছে ক্রিকেটের মহামিলন বিশ্বকাপ ক্রিকেট। প্রত্যেক চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম, দ্বিতীয় এবঙ তৃতীয় বিশ্বকাপ ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত হয। প্রথম দুইবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং তৃতীয়বার ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। ১৯৮৭ সালে ভারত ও পরিস্তানে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড অনুষ্ঠিত পঞ্চম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত যষ্ঠ বিশ্বকাপ ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলংকা। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ড অনুষ্ঠিত সপ্তম বিশ্বকাপ, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত অষ্টম বিশ^কাপ এবঙ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠিত নবম বিশ্বকাপ জয় করে অস্ট্রেলিয়া। ২০১১ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলংকা যৌথভাবে আয়োজন করে দশম বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর। এ আসরে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৫ সালে যৌথভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এগারোতম বিশ্বকাপ আয়োজন করে। দুই স্বাগতিক দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল ম্যাচ এবং এতে অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে চ্যম্পিয়ন হয়।
উপকারিতাঃ অন্যান্য খেলাধুলার ন্যায় ক্রিকেট খেলাও আনন্দদায়ক ও স্বাস্থপ্রদ। শরীরচর্চার দিক ব্যতীত এর অন্য একটা দিকও আছে চরিত্র গছন, দৈর্য, সহিষষ্ণুতা, সতর্কতা, সহযোগিতা প্রভৃতি গুণ এ খেলা থেকেই লাভ করা যায়।
অপকারিতাঃ ক্রিকেট অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খেলা। বোলার কর্তৃক সজোরে ছোড়া বল ব্যাটসম্যানকে মারাত্মকভঅবে আহত করতে পারে। এমনকি তা মৃত্যুর কারনও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ফিল্ডারদেরও ফিল্ডিং করতে গিয়ে করুণ করিণতি বহন করত দেখা যায়। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ফিল হিউজ বলের আঘাতে মৃতুবরণ করেন। এরকম উদাহরণ আরও অনেকে রয়েছে। তা ছাড়া অনেকের মতে, ক্রিকেট খেলায় অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় হয়।
উপসংহারঃ বর্তমানে দেশ বিদেশে ক্রিকেট একটি জনপ্রিয় খেলা। এ খেলায় মাধ্যমে দেশে দেশে গড়ে উঠে সখ্যতা। মানুষের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন হয় দৃঢ়। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এ খেলা সকল মানুষকে এক কাতারে সামিল করে। যা বিশ্ব শান্তির দ্বার উন্মোচিত করে সহজেই।
Hridoy
ফুটবল খেলা
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের একটি জনপ্রিয় ও অন্যতম খেলা হচ্ছে ফুটবল। কারও মতে চীন আবার কারো মতে ইতালি থেকে ফুটবল খেলা আরম্ব হয় এবং পরবর্তী কালে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে । জনপ্রিয়তার কারণে ইহা একটি আন্তর্জাতিক খেলা হিসাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রতি চার বছর পর পর আন্তর্জাতিক স্তরে ফুটবল বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয় । ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশেই ফুটবল একটি জাতীয় খেলা । আমাদের দেশে সর্বত্রই এই খেলার প্রচলন ও জনপ্রিয়তা দেখা যায়।
মাঠের বর্ণনা ও খেলোয়াড়: ফুটবল খেলার মাঠ সাধারণত ১০০-১২০ গজ দীর্ঘ এবং ৫০-৫৬ গজ প্রস্থ হয়ে থাকে । মাঠের দুই প্রান্তে দু’টি করে গোলপোস্ট থাকে। প্রতিটি গোলপোস্ট এর উচ্চতা ৮ ফুট এবং একটি বার বা খুঁটির অপরটি থেকে ৮ গজ দূরে অবস্থিত। একটি আদর্শ ফুটবলের ওজন সাধারণত ১৪-১৬ আউন্স হয়ে থাকে। একটি ফুটবল খেলায় মোট ২২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে , যারা দুইটি দলে ১১ জন করে বিভক্ত হয়ে খেলে থাকে। খেলা পরিচালনার জন্য একজন প্রধান রেফারি ও তাকে সাহায্যের জন্য দু’ জন লাইন্সম্যান থাকে।
ফুটবল খেলার নিয়ম বা পদ্ধতি: পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী খেলার জন্য মাঠের মধ্যস্থলে দুই দল মুখোমুখি অবস্থান করে। রেফারির বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু হয় এবং প্রত্যেক খেলোয়াড় নিজের অবস্থানে চলে যায়। সাধারণত ১১ জন খেলোয়াড়ের পাঁচ জন সামনের ভাগে দাঁড়ায় যাদেরকে বলে ফরোয়ার্ড, তাদের পিছনে ৩ জন থাকে মিডফিল্ডার বা হাফ ব্যাক, তাদের পিছনে দু’ জন থাকে ডিফেন্স বা ফুল ব্যাক আর গোলবারের সামনে থাকে একজন গোলরক্ষক, যিনি সর্বাঙ্গ দিয়ে বলকে গোল হওয়া থেকে রক্ষা করেন। একটি ফুটবল ম্যাচ মোট ৯০ মিনিটের হয়, মধ্যেখানে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকে।
খেলার নিয়ম কানুন: যে ভাবে প্রত্যেকটি খেলার একটি নিয়ম থাকে সে ভাবে ফুটবল খেলার কয়েকটি নিয়ম রয়েছে । এসব নিয়মনীতি সবই ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা তৈরী করে থাকে । যেমন প্রথমে বলটি মাঠের মধ্যস্থলে রাখতে হবে। রেফারি বাঁশি বাজানোর সাথে সাথে খেলা শুরু করতে হবে। একমাত্র গোলরক্ষক ছাড়া অন্য কেউ বল হাত দিয়ে ধরতে বা মারতে পারবে না। এ নিয়ম না মানলে হ্যান্ডবল হয় এবং বিপক্ষ দলের দিকে বল ফ্রি কিক মারা হয়। অবৈধভাবে কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারলে রেফারি শাস্তি স্বরূপ উক্ত খেলোয়াড়কে লাল বা হলুদ কার্ড দেখিয়ে শাস্তি দেন। লাল কার্ড পেলে ঐ খেলোয়াড় আর খেলতে পারেন না। এ ছাড়া খেলোয়াড়দের সহজেই চিনতে প্রত্যেকটি খেলোয়াড় কে তাদের ইউনিফর্ম এ জার্সি নাম্বার দেয়া হয়।
ফুটবল ও ভারতবর্ষ : বিদেশি খেলা হলেও ফুটবল খেলা ভারতবর্ষের একটি জনপ্রিয় খেলা । বিশেষ করে বাংলায় সঙ্গে ফটবললের অনন্য সম্পর্ক । বিশ্বকাপ এলেই সারাদেশ জুড়ে শুরু হয় ফুটবল উন্মাদনা। পতাকা টানিয়ে বা সমর্থিত দলের জার্সি গায়ে দিয়ে দলের প্রতি নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করে বাঙালিরা।ভারতবর্ষে ফুটবল আসে ইংরেজ দের হাত ধরে এবং ১৮৭২ সালে প্রথম “কলকাতা ফটবল ক্লাব” স্হাপিত হয়। বর্তমানে “অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন” ভারতে ফুটবল খেলা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ভারত একাধিকবার অলিম্পিক এবং এশিয়ান কাপ সহ অনেক প্রতিজোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।হাল আমলে ভারতবর্ষে ফুটবল কে আরও জনপ্রিয় করতে ২০১৩ সালে একটি প্রিমিয়াম ঘরোয়া প্রতিজুগিতা “ইন্ডিয়ান সুপার লিগ” নামে শুরু করা হয়।
বিশ্ব ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ফিফা): বিশ্বব্যাপী ফুটবল খেলার আইন-কানুন প্রচলন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় FIFA (Federation of International Football Association). ২১ মে, ১৯০৪ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সংস্থাটি। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে এটির সদরদপ্তর। ফিফা এর বর্তমান সভাপতি সেপ ব্লাটার। ফিফার বর্তমান সদস্য ২০৯টি। এ সংস্থা প্রতি ৪ বছর পর পর আয়োজন করে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। পুরুষদের ন্যায় নারীদের ফুটবল বিশ্বকাপেরও প্রতিনিধিত্ব করে এ সংস্থা। প্রতিবছর এ সংস্থা বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচন ও দলগত র্যাংকিং করে থাকে।
ফুটবল বিশ্বকাপ: ফুটবল খেলার ইতিহাস দীর্ঘদিনের হলেও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা ফিফার অধীনে প্রতি ৪ বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২১ তম বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে রাশিয়ায় । এ আসরে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রান্স । তবে বিশ্বকাপ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ফুটবলে সেরা খেলোয়াড়কে গোল্ডেন বল এবং সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট সম্মাননা দেওয়া হয়। ফুটবল বিশ্বকাপের ২২ তম আসর হবে কাতারে ২০২২ সালে।
ফুটবল খেলার উপকারিতা: ফুটবল খেলা শুধু খেলা নয়, এটির মাধ্যমে যেমন আনন্দ-বিনোদন পাওয়া যায়, তেমনি এ খেলার মাধ্যমে শারীরিক ব্যায়ামও হয়ে থাকে। তাছাড়া ফুটবল খেলা আজ বিশ্বব্যাপী বিশাল লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ইউরোপ আমেরিকার ফুটবল ক্লাবগুলো ফুটবল বাণিজ্যের অন্যতম উদাহরণ। ফুটবল খেলার মাধ্যমে যেমন মানসিক অবসাদ দূর হয় তেমনি এর উত্তেজনা-উপভোগ মনকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ফুটবল খেলতে যথেষ্ট ছুটাছুটি ও পরিশ্রম করতে হয় বলে শরীর সর্বদাই ফিট থাকে। খেলার কঠোর আইন-কানুন খেলোয়াড়দের চারিত্রিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে।
বিশ্বের উল্লেখিত ফুটবল তারকা ও ক্লাবসমূহ: ফুটবলের জগতে জীবন্ত কিংবদন্তী হলো ফুটবল সম্রাট ব্রাজিলের পেলে। তাছাড়া আর্জেন্টিনার ম্যারাডোনা ফুটবলের রাজপুত্র নামে পরিচিত। এ ছাড়া রোনাল্ডো, মেসি, নেইমার, জিদান বর্তমান ফুটবলের অন্যতম তারকা। বার্সালোনা, রিয়েল মাদ্রিদ, বায়ান মিউনিখ, ডর্টমুন্ড, চেলসি, ম্যানচেষ্টার সিটি প্রভৃতি বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবল ক্লাব। কোপা আমেরিকা, কনফেডারেশন কাপ, এশিয়া কাপ, ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নস্ লীগ, প্রভৃতির মাধ্যমে ফুটবল সারা পৃথিবীতে উন্মাদনা ছড়িয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার: ফুটবল খেলা বিশ্বের কোটি কোটি দর্শকের কাছে এক অনাবিল আনন্দের উৎস। ফুটবল খেলায় থাকে হার-জিত, থাকে আনন্দ-বেদনার অশ্রু। সেই আনন্দ বেদনার ঊর্ধ্বে থাকে মনোরম লড়াই আর নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন, স্বদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি আর বিজয়ের তীব্র বাসনা। ফুটবল খেলা বিশ্বব্যাপী মানুষের মাঝে প্রীতি-সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে। এ জন্যই ফুটবল খেলা সকল খেলাকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছে।