প্রাকৃতিক দুর্যোগ | bangla rachana prakritik durjog
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (prakritik durjog)
ভূমিকা : বিজ্ঞানের আশীর্বাদ আর বিশ্বায়নের দৌলতে সৃষ্টির উষা-লগ্ন
থেকে প্রকৃতির নানা প্রতিকুলতার সঙ্গে মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে। যার
ফলস্বরূপ বলা যায় একদিন যে প্রকৃতি মানুষকে ভয় দেখাত সে প্রকৃতিকে মানুষ
অনেকটা বশীভূত করেছে। কিন্তু আকাশ, জলে স্থলে অন্তরিক্ষে মানুষ আজ আধিপত্য
বিস্তার করলেও আজও যা প্রতিনিয়ত মানুষের বুকে ভয় পুঞ্জীভূত করে রেখেছে তা
হলাে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রতি বছরই পৃথিবীর কোন না কোন অংশে ঘটে চলেছে এই
প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এই দুর্যোগে মানুষ যে কত অসহায় তা সহজে বুঝতে পারা যায়।
দূর্যোগ কাকে বলে : আগাম জানান না দিয়ে হঠাৎ করে যখন কোন
প্রাকৃতিক বা মনুষ্য সৃষ্টি বিপদজনক ঘটনা সংঘটিত হয়ে জনজীবন, পরিবেশ, সামাজিক
ও অর্থনৈতিক পরিকাঠামো প্রভৃতি সম্পূর্ণ ধ্বংস কিংবা তছনছ করে দেয় এই রকম
ঘটনাকে বলে দুর্যোগ। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলাে ভূমিকম্প, বন্যা, ভূমিখান,
সুনামি, আয়েলা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, হারিকেন, ঝটিতি প্লাবন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত,
অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি।
দুর্যোগের শ্রেণিবিভাগ : দুর্যোগ প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় –
যথা – (ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগ, (খ) কৃত্রিম বা আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ।
(ক) প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ঈশ্বর সৃষ্ট যে সব দুর্যোগ অর্থাৎ যে সব দুর্যোগের
পেছনে মানুষের কোন হাত থাকে না এবং যে দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি প্রাণ সংশয়ের ভয়
থাকে এগুলিই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগ গুলো হলাে – ভূমিগ্বলন, আগ্নেয়গিরির
অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, আয়লা, সুনামি, বন্যা, ভূমিস্থলন তথা ধস নামা, অতিবৃষ্টি,
অনাবৃষ্টি ইত্যাদি।
(খ) কৃত্রিম বা আকস্মিক দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ : মানুষের দ্বারা সৃষ্ট দুর্ঘটনাগুলিই
হলাে কৃত্রিম বা আকস্মিক দুর্ঘটনা। এগুলির মধ্যে যানবাহন জনিত দুর্ঘটনা, রাসায়নিক
কারখানায় সংঘটিত দুর্ঘটনা, বিদ্যুৎ সংক্রান্ত দুর্ঘটনা, বিশাল জমায়েতে মানুষের পদপিষ্ট
হওয়া, মানুষে মানুষে দাঙ্গা ইত্যাদি।
দুর্যোগের বৈশিষ্ট্য : দুর্যোগের বৈশিষ্ট্যগুলি হলাে (ক) আগাম জানান না
দিয়েই আকস্মিকভাবে এসে উপস্থিত হয়। (খ) এটা প্রাত্যহিক ঘটনা নয়। (গ) এ
অতি দ্রুতগতি সম্পন্ন। (ঘ) দুর্যোগের কাণ্ড কারখানা অনিশ্চয়তায় ভরা। (ঙ) জরুরি
অবস্থার সৃষ্টি করে থাকে। (চ) প্রায়শ অসংখ্য জীবনধ্বংসকারী। (ছ) অর্থনৈতিক ও
পরিকাঠামোগত সমস্ত কিছুকে মুহুর্তে বিধ্বস্ত করে ফেলে।
সরকার কর্তৃক দুর্যোগের শ্রেণিবিভাগ : দুর্যোগ গুলোর মােকাবিলার
জন্য ভারত সরকার ১৯৯৯ সালে এক উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করে দেন। এই
কমিটি বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ সম্পর্কে যথেষ্ট বিচার-বিবেচনা করে দুর্যোগ গুলো প্রধানতঃ
পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন। যথা – (১) জল ও জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্যোগ- এগুলির
মধ্যে পড়ে – বন্যা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, হারিকেন, আয়েলা প্রভৃতি। (২)
ভূতত্ত্বীয় বা ভূ স্তর সংক্রান্ত দুর্যোগ, (৩) রাসায়নিক ও ঔদ্যোগিক পরি ঘটনা সংক্রান্ত
দুর্যোগ, (৪) বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ ও (৫) জৈব-বিষয়ক দুর্যোগ।
৬। ভূ-তত্বীয় বা ভূ-স্তর সংক্রান্ত দুর্যোগ ও পৃথিবীর অভ্যন্তরে তাপ, চাপ, গ্যাস
প্রভৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলেই প্রচণ্ড আলােড়নের সৃষ্টি হয়। আর তারই ফলে ভীষণভাবে
কেঁপে উঠে পৃথিবী। প্রকৃতির রােষপ্ত এই প্রলয় নাচনে তখন নিমেষে নির্মমভাবে
ধ্বংস হয়ে যায় সভ্য মানুষের সাজানাে বাগান – অকাতরে নষ্ট হয় প্রাণ ও সম্পত্তি।
হাহাকারে ভরে যায় বাতাস। আর বিজ্ঞানের দানে অন্ধভােগবাদী মানুষ তখন ওুধুহ
নির্বাক দর্শক – নিরুপায় শিকার। ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বিরাট প্রাকৃতিক বিপর্যয়। মানুষের নিশ্চিন্ত জীবনে আচমকা ঝাপিয়ে পড়ে এধরনের বিপদ। এক একটি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির হার মারাত্মক রকমের। মানুষের কত সাধনায় সাজানাে গৌরব চুরমার হয়ে যায় এক
লহমায়। অসংখ্য মানুষ, পণ, পাখির প্রাণ ঝরে যায় গাছের পাতার মতাে কিন্তু
প্রকৃতির এই কাল অভিশাপের খবর আগাম পেতে ভ-তাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক গবেষণা
করে চলছেন।
উপসংহার : প্রাকৃতিক তাণ্ডব মানুষের বিজ্ঞান-বুদ্ধির বড়াইকে বুড়ো
আঙ্গুল দেখিয়ে চরম বিদ্রপ করে চলেছে এর মধ্যে কিছুটা মানুষের কৃত কর্মের ফলও
আছে। যার ফলে মাঝে মাঝে প্রকৃতি রৌদ্র মুক্তি ধারণ করে। মানুষ বহু চেষ্টায়
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ এবং কিছুটা আত্মরক্ষার উপায় বের করতে সক্ষম হলেও
সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানাের ব্যবস্থা করতে আজও
শেখেনি। হয়তাে শেখা সম্ভবও নয়। কেননা, প্রকৃতির বিশালতা ও প্রচণ্ডতার কাছে
মানুষের দুর্দশা বুঝি কোন মতেই ঘুচবার নয়।