ভূমিকাঃ প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ উপভােগ করবার এক একটি উৎসব। আছে যার মধ্যদিয়ে সেই জাতির জীবনের একটি সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায়, যে উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করে, তাকেই জাতীয় উৎসব বলে। বিহু প্রকৃতই আসামের জাতীয় উৎসব। উৎসবের দিন। প্রতিদিনের মালিন্য দূর করে, আত্মপরায়ণ জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডী ত্যাগ করে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মানুষ মিলিত হন। এই উৎসব কল্যাণ ও মিলনের উৎসব। এতে অসমীয়া জনসাধারণ অপরিমেয় উৎসাহে উৎসব-অঙ্গনে সমবেত হন।
বিহু উৎসবের উদ্ভব কাল : কোন সময় থেকে আসামে বিহুর প্রচলন হয়েছে তা প্রাচীন ইতিহাসের বিষয়। তাই নিশ্চিত করে তার সময় নির্দেশ করা যায় না। আদিম কৌম সমাজের বিশ্বাস ও সংস্কার যে এর মূলে রয়েছে সে বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত। বিহু কৃষি প্রধান সমাজের উৎসব। ধরিত্রীর উর্বরতা ও সৃষ্টিশীলতার জন্য প্রার্থনাই এর উৎস। এটা সকল দেশের আদিম সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আসামের বিহু উৎসব আজও সেই স্মৃতি বহন করে চলছে।
বিহুর প্রকার ভেদ : বিহু উৎসবের সূচনা হয় বৎসরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে। যা কিছু পুরাতন তার বিসর্জন ও নবীনের প্রাণময় আবির্ভাব – এ কামনা বিহু উৎসবের ভিত্তি। ‘বিহু’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘বিষুব’ শব্দ থেকে। এই উৎসব বৎসরে তিনবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, এ জন্য বলা যায় বিহু উৎসব তিন প্রকার
‘বহাগ বিহু’ বা ‘রঙ্গালী বিহু’, ‘মাঘ বিহু’ বা ‘ভােগালী বিহু’ এবং ‘কার্তিক বিহু’ বা ‘কাঙ্গালী বিহু’ । বিহু উৎসবের সঙ্গে ঋতু প্রকৃতির সম্পর্কও গভীর। বিহু মুখ্যত সৃষ্টি কামনার উৎসব। তাই কৃষি প্রধান সমাজের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠে।
উৎসবের বিবরণ : রঙ্গালী বিহু – চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে আরম্ভ হয়ে বৈশাখ মাসের ছয় তারিখ পর্যন্ত মােট সাতদিন এই উৎসব পালিত হয়। এ উৎসব। অবাদ আনন্দের উৎসব।।
আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুপম। বসন্ত সমাগমে প্রকৃতি এখানে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে সকলকে মােহিত করে। এরূপ মনােরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে উৎসবটি আরম্ভ হয়। রঙ্গালী বিহুর প্রথম দিনটিতে রাত্রি প্রভাতেই স্নান-দানাদি ও পজা অর্চনা করা হয়। তাছাড়া গৃহপালিত গরুগুলিকেও স্নান ও যত্ন পরিচর্চা করে সাজানাে হয়। তাই রঙ্গালী বিহুর প্রথম দিনটিকে ‘গাে-বিহু’ও বলা হয়। দ্বিতীয় দিন থেকে নব বস্ত্র পরিধান করে শুরু হয় আবালবৃদ্ধবনিতার আনন্দোৎসব। এই দিন আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে সাধ্যানুসারে পান ভােজন ইত্যাদি চলে। উৎসব উপলক্ষে সহস্তে প্রস্তুত ‘গামছা প্রীতির স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়।
রঙ্গালী বিহুর নৃত্য গীতি :- ‘রঙালী’ বিহু নৃত্য-গীতের বাহুল্য লক্ষ্য করা যায়। এই উৎসবে নৃত্য-সঙ্গীতে যৌবনের বাসনা-কামনার ভাবােচ্ছল প্রকাশ ঘটে। প্রেমের, মিলন-বিরহের নানা পর্যায় এই লােক সঙ্গীতগুলির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। উর্বরা ও উৎপাদনের প্রাণাবেগপূর্ণ এই বিহু উৎসব অসমীয়াদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের প্লাবন ডেকে আনে। লাল রঙের মেখলা তরুণীরা প্রণয়ী যুবকের ঢোল, করতাল ও বাঁশির ছন্দে যখন নৃত্য-চপল হয়ে উঠে তখন সত্যই মনােমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভােগালী বিহু বা মাঘ বিহুর বিবরণ : আসামে মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে ‘মাঘ বিহু’ উৎসব পালিত হয়ে থাকে। মাঘ বিহু’ চিন্তাহীনতার উৎসব। করণ এসময়ে কৃষকের ঘরে ঘরে পূর্ণ শস্য ভাণ্ডার। ‘ভােগালী বিহু’তে আহারের দিকটাই প্রধান থাকে। বিহুর পূর্বদিন মহিলারা নানা প্রকার পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। পুরুষ লােকেরা নদী, বিল, হাওয়রে মাছ ধরতে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া পূর্বদিন মাঠ বা বাসস্থান হতে কিছু দুরে বাঁশ, কাঠ, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি দিয়ে ‘মেজি’ বা ‘মেড়ামেড়ি ঘর’ তৈরি করে। আজকাল ওই রাত্রটি নাচে গানে আর নৃত্যে ভরপুর করে তুলে। পরের দিন অর্থাৎ বিহু বা সংক্রান্তির দিন ভােরবেলা উঠে যুবক ও বালকগণ স্নান করে ও ওই মেজিতে আগুন দিয়ে আনন্দ উপভােগ করে। তারপর ষাড়ের লড়াই, মুরগীর লড়াই ইত্যাদি ও প্রদর্শন করানাে হয়। ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয় সুস্বাদু আহার – পিঠা, সন্দেশ, নাড় পরমান্ন। নিজে খেয়ে অন্যদের খাওয়ায়ে অমনি তৃপ্তি লাভ করে। অবসরের দিনগুলিতে গ্রামের প্রান্তরে নানা প্রকার খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। তাই মাঘমাসের বিহুর ভােগালী বিহু নাম সার্থক।
কার্তিক বিহু বা কাঙালী বিহু : আশ্বিন ও কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক বিহু বা কাঙালী বিহু পালিত হয়। এতে আনন্দ উল্লাস ও ভােগ প্রাচুর্য নেই বললেও চলে। তাই বুঝি এর নাম কাঙালী বিহু। আড়ম্বর-বিলাস কম হলেও এই বিহুটিও তাৎপর্যপূর্ণ। শারদ প্রকৃতির অমলিন স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা কাঙালী বিহুর ভাব রূপ। কৃষকের ঘরে শষ্যভাণ্ডার প্রায় রিক্ত, নতুন ফসলের সঞ্চয় দূরবর্তী। তাই এই বিহুতে ভােগ বিলাসের পরিবর্তে একটি আধ্যাত্মিক ভাব প্রকাশ পায়। আকাশ প্রদীপ জ্বালানাে হয়, তুলসীতলায় ধূপদীপ জ্বেলে সমবেত কণ্ঠে ‘নামগান করা হয়। সমস্ত কার্তিক মাস ধরেই এভাবে চলে।
বিহু উৎসবের তাৎপর্য : আসামে পালিত হওয়া তিনটি বিহু উৎসবের সঙ্গে বিষুবীয় ঋতুর সম্পর্ক আছে। তিনটি বিহু উৎসব সুর্যের তিনটি বিশেষ অবস্থানকালে পালিত হয়। সেজন্য কোন কোন পণ্ডিতের মতে ‘বিষুব’ শব্দ থেকেই ‘বিহু’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। বিহু উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান, নাচ-গান, উৎসবের কাল প্রভৃতি বিচার করলে বােঝা যায় যে বিহু মূলত কৃষি উৎসব।
উপসংহারঃ বিহু গীত ও বিহু নাচ অসমীয়া সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট রূপময় প্রকাশ । বিহু উৎসব একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক শান্তি-কামনার উৎসব, তেমনি আবার যুবক-যুবতীর নৃত্যগীতে শক্তি ও স্বাধীনতার আভাস পাওয়া যায়। অতি প্রাচীন কাল হতে আসাম নানা ভাষা, নানা জাতি ও ধর্মের লােকগুলিকে আশ্রয় দিয়েছে। বিহু উৎসবে তারা সবাই ধর্মীয় ও অন্যান্য বিভেদ ভুলে অসমীয়া সংস্কৃতির মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করে।
আসামের বিহু উৎসব
ভূমিকাঃ প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ উপভােগ করবার এক একটি উৎসব। আছে যার মধ্যদিয়ে সেই জাতির জীবনের একটি সামগ্রিক পরিচয় পাওয়া যায়, যে উৎসবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ-ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ অংশ গ্রহণ করে, তাকেই জাতীয় উৎসব বলে। বিহু প্রকৃতই আসামের জাতীয় উৎসব। উৎসবের দিন। প্রতিদিনের মালিন্য দূর করে, আত্মপরায়ণ জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডী ত্যাগ করে বৃহত্তর কল্যাণের জন্য মানুষ মিলিত হন। এই উৎসব কল্যাণ ও মিলনের উৎসব। এতে অসমীয়া জনসাধারণ অপরিমেয় উৎসাহে উৎসব-অঙ্গনে সমবেত হন।
বিহু উৎসবের উদ্ভব কাল : কোন সময় থেকে আসামে বিহুর প্রচলন হয়েছে তা প্রাচীন ইতিহাসের বিষয়। তাই নিশ্চিত করে তার সময় নির্দেশ করা যায় না। আদিম কৌম সমাজের বিশ্বাস ও সংস্কার যে এর মূলে রয়েছে সে বিষয়ে পণ্ডিতগণ একমত। বিহু কৃষি প্রধান সমাজের উৎসব। ধরিত্রীর উর্বরতা ও সৃষ্টিশীলতার জন্য প্রার্থনাই এর উৎস। এটা সকল দেশের আদিম সমাজের সাধারণ বৈশিষ্ট্য। আসামের বিহু উৎসব আজও সেই স্মৃতি বহন করে চলছে।
বিহুর প্রকার ভেদ : বিহু উৎসবের সূচনা হয় বৎসরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তিতে। যা কিছু পুরাতন তার বিসর্জন ও নবীনের প্রাণময় আবির্ভাব – এ কামনা বিহু উৎসবের ভিত্তি। ‘বিহু’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে ‘বিষুব’ শব্দ থেকে। এই উৎসব বৎসরে তিনবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে, এ জন্য বলা যায় বিহু উৎসব তিন প্রকার
‘বহাগ বিহু’ বা ‘রঙ্গালী বিহু’, ‘মাঘ বিহু’ বা ‘ভােগালী বিহু’ এবং ‘কার্তিক বিহু’ বা ‘কাঙ্গালী বিহু’ । বিহু উৎসবের সঙ্গে ঋতু প্রকৃতির সম্পর্কও গভীর। বিহু মুখ্যত সৃষ্টি কামনার উৎসব। তাই কৃষি প্রধান সমাজের প্রার্থনার মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠে।
উৎসবের বিবরণ : রঙ্গালী বিহু – চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে আরম্ভ হয়ে বৈশাখ মাসের ছয় তারিখ পর্যন্ত মােট সাতদিন এই উৎসব পালিত হয়। এ উৎসব। অবাদ আনন্দের উৎসব।।
আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুপম। বসন্ত সমাগমে প্রকৃতি এখানে অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে সকলকে মােহিত করে। এরূপ মনােরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে উৎসবটি আরম্ভ হয়। রঙ্গালী বিহুর প্রথম দিনটিতে রাত্রি প্রভাতেই স্নান-দানাদি ও পজা অর্চনা করা হয়। তাছাড়া গৃহপালিত গরুগুলিকেও স্নান ও যত্ন পরিচর্চা করে সাজানাে হয়। তাই রঙ্গালী বিহুর প্রথম দিনটিকে ‘গাে-বিহু’ও বলা হয়। দ্বিতীয় দিন থেকে নব বস্ত্র পরিধান করে শুরু হয় আবালবৃদ্ধবনিতার আনন্দোৎসব। এই দিন আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে সাধ্যানুসারে পান ভােজন ইত্যাদি চলে। উৎসব উপলক্ষে সহস্তে প্রস্তুত ‘গামছা প্রীতির স্মারক হিসেবে উপহার দেওয়া হয়।
রঙ্গালী বিহুর নৃত্য গীতি :- ‘রঙালী’ বিহু নৃত্য-গীতের বাহুল্য লক্ষ্য করা যায়। এই উৎসবে নৃত্য-সঙ্গীতে যৌবনের বাসনা-কামনার ভাবােচ্ছল প্রকাশ ঘটে। প্রেমের, মিলন-বিরহের নানা পর্যায় এই লােক সঙ্গীতগুলির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। উর্বরা ও উৎপাদনের প্রাণাবেগপূর্ণ এই বিহু উৎসব অসমীয়াদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের প্লাবন ডেকে আনে। লাল রঙের মেখলা তরুণীরা প্রণয়ী যুবকের ঢোল, করতাল ও বাঁশির ছন্দে যখন নৃত্য-চপল হয়ে উঠে তখন সত্যই মনােমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
ভােগালী বিহু বা মাঘ বিহুর বিবরণ : আসামে মাঘ মাসের সংক্রান্তিতে ‘মাঘ বিহু’ উৎসব পালিত হয়ে থাকে। মাঘ বিহু’ চিন্তাহীনতার উৎসব। করণ এসময়ে কৃষকের ঘরে ঘরে পূর্ণ শস্য ভাণ্ডার। ‘ভােগালী বিহু’তে আহারের দিকটাই প্রধান থাকে। বিহুর পূর্বদিন মহিলারা নানা প্রকার পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত থাকে। পুরুষ লােকেরা নদী, বিল, হাওয়রে মাছ ধরতে ব্যস্ত থাকে। তাছাড়া পূর্বদিন মাঠ বা বাসস্থান হতে কিছু দুরে বাঁশ, কাঠ, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি দিয়ে ‘মেজি’ বা ‘মেড়ামেড়ি ঘর’ তৈরি করে। আজকাল ওই রাত্রটি নাচে গানে আর নৃত্যে ভরপুর করে তুলে। পরের দিন অর্থাৎ বিহু বা সংক্রান্তির দিন ভােরবেলা উঠে যুবক ও বালকগণ স্নান করে ও ওই মেজিতে আগুন দিয়ে আনন্দ উপভােগ করে। তারপর ষাড়ের লড়াই, মুরগীর লড়াই ইত্যাদি ও প্রদর্শন করানাে হয়। ঘরে ঘরে প্রস্তুত হয় সুস্বাদু আহার – পিঠা, সন্দেশ, নাড় পরমান্ন। নিজে খেয়ে অন্যদের খাওয়ায়ে অমনি তৃপ্তি লাভ করে। অবসরের দিনগুলিতে গ্রামের প্রান্তরে নানা প্রকার খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। তাই মাঘমাসের বিহুর ভােগালী বিহু নাম সার্থক।
কার্তিক বিহু বা কাঙালী বিহু : আশ্বিন ও কার্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্তিক বিহু বা কাঙালী বিহু পালিত হয়। এতে আনন্দ উল্লাস ও ভােগ প্রাচুর্য নেই বললেও চলে। তাই বুঝি এর নাম কাঙালী বিহু। আড়ম্বর-বিলাস কম হলেও এই বিহুটিও তাৎপর্যপূর্ণ। শারদ প্রকৃতির অমলিন স্নিগ্ধতা ও পবিত্রতা কাঙালী বিহুর ভাব রূপ। কৃষকের ঘরে শষ্যভাণ্ডার প্রায় রিক্ত, নতুন ফসলের সঞ্চয় দূরবর্তী। তাই এই বিহুতে ভােগ বিলাসের পরিবর্তে একটি আধ্যাত্মিক ভাব প্রকাশ পায়। আকাশ প্রদীপ জ্বালানাে হয়, তুলসীতলায় ধূপদীপ জ্বেলে সমবেত কণ্ঠে ‘নামগান করা হয়। সমস্ত কার্তিক মাস ধরেই এভাবে চলে।
বিহু উৎসবের তাৎপর্য : আসামে পালিত হওয়া তিনটি বিহু উৎসবের সঙ্গে বিষুবীয় ঋতুর সম্পর্ক আছে। তিনটি বিহু উৎসব সুর্যের তিনটি বিশেষ অবস্থানকালে পালিত হয়। সেজন্য কোন কোন পণ্ডিতের মতে ‘বিষুব’ শব্দ থেকেই ‘বিহু’ শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। বিহু উৎসবের আচার-অনুষ্ঠান, নাচ-গান, উৎসবের কাল প্রভৃতি বিচার করলে বােঝা যায় যে বিহু মূলত কৃষি উৎসব।
উপসংহারঃ বিহু গীত ও বিহু নাচ অসমীয়া সংস্কৃতির একটি বিশিষ্ট রূপময় প্রকাশ । বিহু উৎসব একদিকে যেমন আধ্যাত্মিক শান্তি-কামনার উৎসব, তেমনি আবার যুবক-যুবতীর নৃত্যগীতে শক্তি ও স্বাধীনতার আভাস পাওয়া যায়। অতি প্রাচীন কাল হতে আসাম নানা ভাষা, নানা জাতি ও ধর্মের লােকগুলিকে আশ্রয় দিয়েছে। বিহু উৎসবে তারা সবাই ধর্মীয় ও অন্যান্য বিভেদ ভুলে অসমীয়া সংস্কৃতির মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করে।