রচনা: ভূমিকম্প | earthquake essay in bengali language
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
ভূমিকম্প
ভূমিকা : ধীর, শান্ত মানুষ যেমনি একেক সময় প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়তে চায়, ঠিক সেভাবে প্রকতিও যেন একেকবার একেক রূপে প্রকাশ কে রুদ্রমূর্তি। খরা, বন্যা, অগ্ন্যুৎপাত, জলোচ্ছাসের মতাে ভূমিকম্প প্রকৃতির একটি ভয়ঙ্কর দুর্যোগ।
ভূমিকম্পের কারণ : পথিবীর অভ্যন্তরে তাপ, চাপ, গ্রাস প্রভৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলেই প্রচণ্ড আলােড়নের সৃষ্টি হয়। আর তারই ফলে ভীষণভাবে প্রকম্পিতা হন বসুন্ধরা। প্রকৃতির রােষতপ্ত এই প্রলয় নাচনে তখন চোখের পলকে নির্মমভাবে শেষ হয়ে যায় সভ্য মানুষের সাজানাে বাগান – অকাতরে নষ্ট হয় শতশত প্রাণ ও সম্পত্তি । হাহাকারে ভরে যায় আকাশ-বাতাস। আর বিজ্ঞানের দানে অন্ধ ভােগবদিী মানুষ তখন শুধুই নির্বাক দর্শক, নিরূপায় শিকার। পৃথিবীতে বার বার ঘটে গেছে এমনকী প্রয়লংকার ভূমিকম্পের তাণ্ডব।
অতীতে ভূমিকম্প : বর্তমানের ন্যায় অতীতেও পৃথিবীতে বহু ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঘটনা ঘটে গেছে। ইতিহাসের তত্ত্বমতে খ্রিষ্টপূর্ব ১৯০০ অব্দে ভূমিকম্পের ফলে ক্রীট দ্বীপের সভ্যতাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। ১৭০৩ সালে জাপানের টোকিও শহরে, ১৭৩৭ সালে কলকাতায়, ভূমিকম্প ছিল মারাত্মক। ১৯৫০ সালে আসামের ভূমিকম্প ব্রহ্মপুত্র নদের গতি পথটাই পালটে দিয়েছিল। ২০০১ সালের ২৬ জানুয়ারি গুজরাটের ভূমিকম্প ছিল ভারতের ভয়ঙ্করতম ভূমিকম্পগুলির মধ্যে দ্বিতীয়। এই ভূমিকম্পে তাসের ঘরের মতাে ভেঙে পড়েছিল সাজানাে সভ্যতার ইমারতগুলি। এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫০,০০০ মানুষ।
সাম্প্রতিককালে ভূমিকম্প : ২০০৫ সালের ৮ অক্টোবর বাংলায় যখন শারদীয়া উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে তখনই ভারতীয় সময় সকাল ৯-২০ মিনিটে। কেঁপে উঠে সমগ্র কাশ্মীর, পাকিস্থান, আফগানিস্থান এবং উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। রিখটার স্কেলে এই কম্পণের সর্বোচ্চ তীব্রতা ছিল ৭.৫। এই ভূমিকম্পের উৎস ছিল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের উত্তর পশ্চিমে শিপাল মসজিদ এলাকায়। এই ভূমিকম্পে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ নিহত হয়। আহত ও নিখোঁজ হয় আরও বহু মানুষ। ২৫ এপ্রিল ২০১৫ইং তারিখে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের ভূমিকম্প পূর্বে বর্ণিত ভূমিকম্পগুলি থেকে কম মারাত্মক ছিল না। এ ভূমিকম্পে ১০,০০০ এরও অধিক লােক নিহত হয়। সাম্প্রতিককালে ২০১৬ইং ৩রা জানুয়ারি ভারতের হম্মল, আসাম ও এদের আশপাশ অঞ্চলে ভূমিকম্প তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও সাবধানবাণী জানান দিয়ে গেল।
ত্রাণকার্য : ভূকম্পনের প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে দেশ জুড়ে শুরু হয় ত্রাণের তৎপরতা। মানুষ সামাজিক জীব তাই মানুষ দুর্গত মানুষকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন সংঘটনও উদ্ধার কার্যে ঝাপিয়ে পড়ে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায় ত্রাণ সামগ্রী খাদ্য, ঔষধ ইত্যাদি নিয়ে । ভারত শুধু নিজের দেশেই নয়, প্রতিবেশী পাকিস্তান, নেপাল, চীন প্রবৃত্তি দেশের জন্য ত্রাণ সামগ্রী পাঠায়। ভারতীয় সেনাবাহিনী বিপুল উদ্যমে ত্রাণ ও উদ্ধারে ঝাপিয়ে পড়ে।
ক্ষয়ক্ষতি ও প্রতিরােধের ভাবনা : ভূমিকম্প এক বিরাট সাত বিপর্যয়। মানুষের নিশ্চিন্ত জীবনে আচমকা ঝাপিয়ে পড়ে এই বিপদ। ‘ ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির হার মারাত্মক রকমের। মানুষের কত সাধনায় সাজানাে সে চুরমার হয়ে যায় এক লহমায়। অসংখ্য মানুষ, পশু-পাখির প্রাণ ঝরে যায় পাতার মতাে। কিন্তু প্রকৃতির এই করাল অভিশাপের খবর আগাম পেতে যে ব্যবহার হয়, তা পৃথিবীর মুষ্টিমেয় কয়েকটি ধনী দেশেরই করায়ত্ত। আমাদের কে এই যন্ত্র বসানাে হয়েছে – এটা সুখের বিষয়। আশা করা যায় এর সাহায্যে ভাবান ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্পের বিপর্যয় এড়াতে পারবে।
উপসংহার : একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের বিজ্ঞান-বুদ্ধির বড়াইকে বুড়াে আঙ্গুল দেখিয়ে চরম বিদ্রুপ করেছে। মানুষ ভুমিকম্পের আগাম বার্তা পেতে শিখেছে, কম্পনের তীব্রতাকে মাপজোখ করতে শিখেছে। কিন্তু তার হাত থেকে। নিজেকে বাঁচানাের ব্যবস্থা করতে আজও শেখেনি। হয়তাে শেখা সম্ভবও নয়। কেননা, প্রকৃতির বিশালতা ও প্রচণ্ডতার কাছে মানুষের দুর্দশা বুঝি কোনমতেই ঘােচাবার নয়।