ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে
তােমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘাের ব্যবধান। কিন্তু সেই বাণী হেলায় আমাদের রাষ্ট্রনেতারা উপেক্ষা করেছিলেন। তারা হয়তাে ভেবেছিলেন এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। কিন্তু এখন তারা বুঝেছেন, দেরিতে হলেও অন্য সব দেশ জাগছে জ্ঞানের গৌরবে, ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়। তাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভেঙ্গেছে। যৌথ উদ্যোগে আমাদের রাজ্যে শুরু হয়েছে সর্বশিক্ষা অভিযান।
বাস্তবতা : ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম ‘ভিশন ২০১০ পরিকল্পনা ঘােষণা করেন। তাতে প্রকাশিত রিপাের্টে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৬৯.২২ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশ ৭৭.১৩ শতাংশ এবং কেরলে ৯০.২২ শতাংশ। আসামে ৬৮.৫৮ শতাংশ। এই বাস্তব অবস্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে সর্ব শিক্ষা অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বশিক্ষা অভিযান কী ? সকলের জন্য শিক্ষা, তাই হলাে সর্বশিক্ষা। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে এই শিক্ষার সমাধান করার নাম সর্বশিক্ষা অভিযান। স্বাস্থ্যের জন্য যেমন পালস পােলিওর অভিযান – পােলিও মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য, তেমনি সকল শিশুর জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান। আসলে সর্বশিক্ষা অভিযান সকলের শিক্ষার জন্য সবশ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে করে পথ চলার একটা পদ্ধতি মাত্র। যারা সমাজে নিজেদের শিক্ষিত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে, তাদের যে অশিক্ষিত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে এই সর্বশিক্ষা অভিযান।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ : এই সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্যতম কারণ শুধু সব শিশুকেই শিক্ষা দান নয়, মাঝপথে শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া শিশুদেরও শিক্ষার মূল স্রোতে অঙ্গীভূত করা। কারণ, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনও নিজেদের সম্পূর্ণরূপে জানে না, নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কারণগুলি সম্পর্কেও আদৌ সচেতন নয়। সেজন্য পারস্পরিক লেনদেনের প্রয়ােজনে চাই যাতায়াতের পথ। সেটা যদি রাজপথ না হয় তাে অন্তত গলি রাস্তা হওয়া চাই। সর্বশিক্ষা অভিযান সে পল্লি গ্রামের মেটে পথ। দ্বিতীয়তঃ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও বিশ্বাস আছে যে শিক্ষার জন্য ব্যয় করা বিলাসিতা মাত্র। তাই শিক্ষা এখনাে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েনি। অথচ ভারতীয় সংবিধানের ৪৫নং ধারায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়স্ক শিশুরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা পাবে। তবুও আজও পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়নি। তৃতীয়তঃ জন্মসূত্রে পেশাগত কাজে যারা নিয়ােজিত তারা নিজেদের মতাে তাদের সন্তানদের নিজের মৌলিক কাজে নিয়ােজিত করতে গিয়ে মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দেন, তাদের জন্য এই কর্মসূচির গুরুত্ব রয়েছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের সমস্যা : সর্বশিক্ষা অভিযানের পথ কঠিন। গরিব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিশু শ্রমিক হিসাবে চায়ের দোকানে, হােটেলে, মিষ্টির দোকানে কাজ করে। তাদের পিতা-মাতাদের কাছে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়ানাে সময়ের অপব্যয় মাত্র। এদের মধ্যে যারা স্কুলে যায়, তারাও পরে স্কুলছুট হয়ে যায়। এজন্য সর্বশিক্ষা প্রকল্প মার খাচ্ছে। ফলে সব শিশুকে স্কুলে পাঠানাের লক্ষ্যমাত্রা আজও ষােলাে আনা পূরণ হয়নি।
গৃহীত কর্মসূচি : প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে গরিব পরিবারের শিশুদের অনাহা কাটানাের জন্য চালু হয়েছে Midday Meal অর্থাৎ মধ্যাহ্ন ভােজন। বর্তমানে
হালেবা সংস্থা সৰ্বশিক্ষার প্রচারে ও পসারে এগিয়ে এসেছে। জেলায় জেলায় ৪টি গঠন করে পরিকাঠামাে নির্মাণ করে শিক্ষকদেরও এই অভিযানে সামিল রা হয়েছে।
উপসংহার : UNESCO এর মাধ্যমে “সকলের জন্য শিক্ষা” সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ভারতে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার আগেই ৭৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে যায় ।জনসাধারণকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে শিক্ষিত মানুষদের গা-ছাড়া মনােভাব কম দায়ী নয় । এব্যাপারে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত কারণ শিক্ষা না পেলে মানুষের কার্যকরী শক্তি জেগে উঠতে পারে না। মানুষ সমাজের সেবায় লাগার উপযুক্ত হয়ে উঠে না।
Hridoy
সর্বশিক্ষা অভিযান
ভূমিকা : রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন ‘অজ্ঞানের অন্ধকারে আড়ালে ঢাকিছ যারে
তােমার মঙ্গল ঢাকি গড়িছে সে ঘাের ব্যবধান। কিন্তু সেই বাণী হেলায় আমাদের রাষ্ট্রনেতারা উপেক্ষা করেছিলেন। তারা হয়তাে ভেবেছিলেন এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না। কিন্তু এখন তারা বুঝেছেন, দেরিতে হলেও অন্য সব দেশ জাগছে জ্ঞানের গৌরবে, ভারত শুধুই ঘুমায়ে রয়। তাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কুম্ভকর্ণের নিদ্রা ভেঙ্গেছে। যৌথ উদ্যোগে আমাদের রাজ্যে শুরু হয়েছে সর্বশিক্ষা অভিযান।
বাস্তবতা : ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল কালাম ‘ভিশন ২০১০ পরিকল্পনা ঘােষণা করেন। তাতে প্রকাশিত রিপাের্টে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গে সাক্ষরতার হার ৬৯.২২ শতাংশ, হিমাচল প্রদেশ ৭৭.১৩ শতাংশ এবং কেরলে ৯০.২২ শতাংশ। আসামে ৬৮.৫৮ শতাংশ। এই বাস্তব অবস্থানের প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে সর্ব শিক্ষা অভিযানের গুরুত্ব অপরিসীম।
সর্বশিক্ষা অভিযান কী ? সকলের জন্য শিক্ষা, তাই হলাে সর্বশিক্ষা। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে এই শিক্ষার সমাধান করার নাম সর্বশিক্ষা অভিযান। স্বাস্থ্যের জন্য যেমন পালস পােলিওর অভিযান – পােলিও মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য, তেমনি সকল শিশুর জন্য সর্বশিক্ষা অভিযান। আসলে সর্বশিক্ষা অভিযান সকলের শিক্ষার জন্য সবশ্রেণির মানুষকে একসঙ্গে করে পথ চলার একটা পদ্ধতি মাত্র। যারা সমাজে নিজেদের শিক্ষিত বলে পরিচয় দিয়ে থাকে, তাদের যে অশিক্ষিত মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে, সেই দায়বদ্ধতা সুনিশ্চিত করতে এই সর্বশিক্ষা অভিযান।
সর্বশিক্ষা অভিযানের কারণ : এই সর্বশিক্ষা অভিযানের অন্যতম কারণ শুধু সব শিশুকেই শিক্ষা দান নয়, মাঝপথে শিক্ষা বন্ধ করে দেওয়া শিশুদেরও শিক্ষার মূল স্রোতে অঙ্গীভূত করা। কারণ, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ এখনও নিজেদের সম্পূর্ণরূপে জানে না, নিজেদের দুঃখ দুর্দশার কারণগুলি সম্পর্কেও আদৌ সচেতন নয়। সেজন্য পারস্পরিক লেনদেনের প্রয়ােজনে চাই যাতায়াতের পথ। সেটা যদি রাজপথ না হয় তাে অন্তত গলি রাস্তা হওয়া চাই। সর্বশিক্ষা অভিযান সে পল্লি গ্রামের মেটে পথ। দ্বিতীয়তঃ অনেক সাধারণ মানুষের মধ্যে এখনও বিশ্বাস আছে যে শিক্ষার জন্য ব্যয় করা বিলাসিতা মাত্র। তাই শিক্ষা এখনাে সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়েনি। অথচ ভারতীয় সংবিধানের ৪৫নং ধারায় বলা হয়েছে, ১৪ বছরের কম বয়স্ক শিশুরা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা পাবে। তবুও আজও পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়নি। তৃতীয়তঃ জন্মসূত্রে পেশাগত কাজে যারা নিয়ােজিত তারা নিজেদের মতাে তাদের সন্তানদের নিজের মৌলিক কাজে নিয়ােজিত করতে গিয়ে মাঝপথে পড়া বন্ধ করে দেন, তাদের জন্য এই কর্মসূচির গুরুত্ব রয়েছে।
সর্বশিক্ষা অভিযানের সমস্যা : সর্বশিক্ষা অভিযানের পথ কঠিন। গরিব পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিশু শ্রমিক হিসাবে চায়ের দোকানে, হােটেলে, মিষ্টির দোকানে কাজ করে। তাদের পিতা-মাতাদের কাছে ছেলেমেয়েকে স্কুলে পড়ানাে সময়ের অপব্যয় মাত্র। এদের মধ্যে যারা স্কুলে যায়, তারাও পরে স্কুলছুট হয়ে যায়। এজন্য সর্বশিক্ষা প্রকল্প মার খাচ্ছে। ফলে সব শিশুকে স্কুলে পাঠানাের লক্ষ্যমাত্রা আজও ষােলাে আনা পূরণ হয়নি।
গৃহীত কর্মসূচি : প্রথাগত শিক্ষার ব্যাপারে গরিব পরিবারের শিশুদের অনাহা কাটানাের জন্য চালু হয়েছে Midday Meal অর্থাৎ মধ্যাহ্ন ভােজন। বর্তমানে
হালেবা সংস্থা সৰ্বশিক্ষার প্রচারে ও পসারে এগিয়ে এসেছে। জেলায় জেলায় ৪টি গঠন করে পরিকাঠামাে নির্মাণ করে শিক্ষকদেরও এই অভিযানে সামিল রা হয়েছে।
উপসংহার : UNESCO এর মাধ্যমে “সকলের জন্য শিক্ষা” সমীক্ষার ফলাফল থেকে জানা যায়, ভারতে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠার আগেই ৭৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুল ছেড়ে যায় ।জনসাধারণকে শিক্ষিত করার ব্যাপারে শিক্ষিত মানুষদের গা-ছাড়া মনােভাব কম দায়ী নয় । এব্যাপারে আমাদেরও এগিয়ে আসা উচিত কারণ শিক্ষা না পেলে মানুষের কার্যকরী শক্তি জেগে উঠতে পারে না। মানুষ সমাজের সেবায় লাগার উপযুক্ত হয়ে উঠে না।