
১। ‘বঙ্গভাষা’ কোন জাতীয় কবিতা?
উত্তর : বঙ্গভাষা বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট জাতীয় কবিতা। কবি মধুসূদন এর প্রবর্তক।
২। সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা কি?
উত্তর : সনেট রচিত হয় চৌদ্দ পংক্তিতে, আট ও ছয় পংক্তির বিভাজনে ভাবনাবস্তুর প্রস্তাবনা ও সম্প্রসারণ ঘটে একটি সুনির্দিষ্ট রীতিতে। এর প্রথম সূচনা হয় ইতালিতে, মধ্যযুগে। এর বৈশিষ্ট্য হল ১৪টি লাইনে ১৪টি করে অক্ষর থাকবে। আট পংক্তিকে বলা হয় অষ্টক (Octave) এবং ছয় পংক্তির নাম ষষ্টক (Sestet)। সনেটে প্রধানত দুটি রীতি অনুসৃত হয়ে থাকে— পেত্রার্কীয় ও শেক্সপীয়রীয়।
৩। বঙ্গভাষা কবিতার ছন্দ কি ?
উত্তর : বঙ্গভাষা’ কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত – এই তিনটি ছন্দরূপের মধ্যে অক্ষরবৃত্ত প্রধান ছন্দ। গম্ভীর ভাব, ওজস্বী শব্দ এই ছন্দটির বিকাশ ও বৈচিত্র্য বাংলা কাব্যজগতের বিশেষ সম্পদ। এখানে প্রতি চরণে ১৪ মাত্রার দুটি পর্ব রয়েছে, প্রথম পর্বে ৮ মাত্রা এবং দ্বিতীয় পর্বে ৬ মাত্রা। যেহেতু এটি সনেট, তাই এর অন্তমিল হল— কখ কখ, খক খক, গঘ ঘগ, ঙঙ।
৪। ‘পর-ধন লােভে মত্ত’ বলতে কবি কি বুঝিয়েছেন?
উত্তর : বঙ্গভাষা’ কবিতার উদ্ধৃত বাক্যাংশে পরধন অর্থাৎ ইংরেজি সাহিত্য-উপাদানের কথা বলা হয়েছে। মধুসূদনের আকাঙ্ক্ষা ছিল ইংরেজি ভাষায় বড় কবি হবেন, তাঁর সাহিত্য সাধনার আরম্ভও হয় ইংরেজি ভাষাতেই। উনিশ শতকে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য ছিল বাঙালি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তরুণদের কাছে আরাধ্য। কলকাতার নব্যশিক্ষিত যুবকদের চিন্তাচেতনায় ইংরেজ সভ্যতা-সংস্কৃতির যে প্রবল প্রভাব পড়েছিল তাতে তৈরি হয়েছিল এক পরানুকারী অথচ আলােকিত যুবসমাজ, ইতিহাসে যারা ইয়ং বেঙ্গল নামে অভিহিত। মাতৃভাষার প্রতি এদের ছিল অবহেলা। কবি নিজেও ইংরেজি কবিতা রচনার ভ্রান্ত পথানুসারী হয়েছিলেন।
৫। কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন – এই লাইনের ভাব সংক্ষেপে লিখ?
আলােচ্য চরণটি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘বঙ্গভাষা’ নামক সনেট থেকে গৃহীত হয়েছে।
এখানে কবি শৈবাল ও পদ্মকাননের সঙ্গে ইংরেজি ও বাংলা ভাষাকে উপমায়িত করেছেন। বাংলা ভাষার ঐশ্বর্য ও শক্তি অবহেলা করে কবি ইংরেজি ভাষায় কাব্যচর্চায় ব্রতী হয়েছিলেন। তাঁর প্রত্যাশা ছিল তিনি ঐ ভাষায় বড় কবি হবেন। কিন্তু এটা ছিল ব্যর্থ প্রয়াস, পরধনের প্রতি লােভ ভিক্ষাবৃত্তিতুল্য। কবির এই মানসিকতা ভ্রমাত্মক ও গানিময়। যে নিজ মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করে নিজের সৃষ্টিক্ষমতাকে অন্যভাষায় প্রকাশে নিয়ােজিত থাকে, সে অবশ্যই ব্যর্থ হতে বাধ্য। কেননা নিজ ভাষা অজস্র সম্পদে পরিপূর্ণ, বিশেষত বাংলাভাষার ঐতিহ্য, শব্দসম্পদ ও ছন্দরীতি অনন্য। কিন্তু ঔপনিবেশিক শিক্ষা ও আত্মজ্ঞানের অভাববশত তিনি ইংরেজিকেই শ্রেয়জ্ঞান করেছিলেন; অথচ ইংরেজি ভাষা শৈবালের মত পুষ্পহীন, বিপরীতে বাংলাভাষায় সৃষ্ট কাব্যনিদর্শনসমূহ যেন পদ্মবনের শােভা। কবি এই শােভা বিস্মৃত হয়ে শ্যাওলা নিয়ে খেলা করেছেন। কবির গভীর আত্মগানি ও মাতৃভাষার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ধারণা উক্ত কাব্যাংশে রূপায়িত হয়েছে। বক্তব্য উপস্থাপনে কবি প্রকৃতিজগতের শৈবাল ও পদ্মবনের প্রতিতুলনা ব্যবহার করেছেন।
৬। ইংরেজি ভাষা চর্চা করতে গিয়ে কবি মধুসূদনকে কী ধরনের কষ্ট স্বীকার করতে হয়েছিল?
উত্তর: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইংরেজ কবি হয়ে ওঠার প্রেরনা নিয়ে প্রথমে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন এবং ইংরাজি সাহিত্য চর্চায় মগ্ন হয়ে বিদেশে গিয়ে বসবাস শুরু করেন কিন্তু দুঃখজনকভাবে তাঁর সেই আশা পূর্ণ হয়নি, তিনি অনিদ্রায়, অনাহারে এবং প্রবল আর্থিক অনটনের দরুন অনেক কষ্টভোগ করেন।
৭। ইংরেজি ভাষা ছেড়ে মাতৃভাষা বাংলায় সাহিত্য রচনা করে কবির কি উপলব্ধি হয়েছিল?
উত্তর: ইংরেজি ভাষা ছেড়ে মাতৃভাষা বাংলার অপূর্ব সাহিত্য সৃষ্টি করে তাঁর উপলব্ধি হয়েছিল যে তিনি মাতৃভাষায় অপার এবং অশেষ মণিমুক্তার সন্ধান পেয়েছেন যা তিনি আগে অবহেলা ও অবজ্ঞায় ত্যাগ করেছিলেন।
৮। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি কবির কি ধরনের মনোভাবের প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর। ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় কবি মধুসূদন দত্ত তাঁর মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে তিনি শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছেন। এই ভাষার যে মাধুর্য অপার ঐশ্বর্য এবং সাহিত্য সৃষ্টির যে এত উপাদান মণিমুক্তার মতো ছড়িয়ে রয়েছে, তিনি পূর্বে তা উপলব্ধি করতে পারেননি তাই এই ভাষা তাঁর কাছে বরণীয়।
৯। ‘কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে’—এখানে ‘কুললক্ষ্মী’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর। এখানে ‘কুললক্ষ্মী’ বলতে কবি মধুসূদনের নিজের আত্মার উপলব্দিকেই বোঝানো হয়েছে।
Leave a comment