বিশিষ্ট লেখক ডা. মুক্তাদীর এর বই “ভাষা শহীদের কথা ও স্বপ্ন” দেয়া বর্ণনা অনুজায়িঃ
১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ জন তরুণ তরুণী প্রাণ বির্সজন দেন। এরপর বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চত্রুবর্তী বাচ্চু নামে একজন মৃত্যুবরণ করেন। অক্টোবরে মারা যান মোজাম্মেল হক। ৭ আগষ্ট রহস্য জনক ভাবে নিরুদেষ্ট হন অনিল বরা। ১৯৮৫ সালের ২৪ জুন কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস ১৯ মে’র গুলিতে ক্ষতজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৬ সালে আসাম প্রদেশে অসমিয়া ভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার সার্কুলার জারি করলে বাঙালিরা এর প্রতিবাদ করেন। এতে ২ জন মারা যান। তাদের নাম দিব্যেন্দু দাস, জগন্ময় দেয়। আসামে বাংলা ভাষা শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে দেওয়া হল।
কমলা ভট্রাচার্য :
রামরমন ভট্রাচার্য ও সুপ্রভাসিনী ভট্রাচার্যের কন্যা কমলা ভট্রাচার্য বাংলা ভাষা আন্দোলনে একমাত্র মহিলা ভাষাশহীদ। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা শেষ করেই তিনি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পিতৃহীন কমলার ভাই শ্রী রামেন্দ্র ভট্রাচার্যের সঙ্গে শিলচর শহরের বিলপাড়ে অবস্থিত বাসায় থাকতেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাদের পরিবার ১৯৫০ সালে সিলেট জেলা থেকে কাছাড়ে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কন্যা হারানোর বেদনায় এক অতি সাধারণ রমণী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেন অভিশাপ দিয়ে ছিলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর উদ্দেশ্যে। এই মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যাহারা মা বলে উঠেছিলেন, ‘নেহেরু তুমি আমার মেয়ে কমলাকে গুলি করে মেরেছে, তোমার মেয়েরও এভাবে মৃত্যু হবে।’
কানাইলাল নিয়োগী :
জন্ম ১৯২২ সালে। পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল নিয়োগী, মায়ের নাম শান্তিকণা নিয়োগী। কানাইলাল ছিলেন তাদের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তাঁর বয়স ৩৭ বছর। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার খিলদা গ্রাম ছিল তার পিতৃভূমি। ১৯৪০ সালে মেট্রিক পাশ করে পরে রেলের চাকুরীতে যোগ দান করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।
হীতেশ বিশ্বাস :
পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস। পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস বাস্তাহারা হয়ে হবিগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে থেকে ত্রিপুরায় আসেন। বারো বছর খোয়াই শহরে উদ্বাস্ত কলোনীর বাসিন্দা হয়েই মা, ছোট ভাই ও এক বোন নিয়ে জীবন সংগ্রাম করেন। শিলচর শহরের অম্বিকাপট্রীতে ভগ্নীপতির বাসায় অবস্থানকালে ভাষা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনদান করেন।
চন্ডীচরণ সূত্রধর :
পিতা চিন্তাহরণ সূত্রধর। বয়স বাইশ বছর। ১৯৫০ সালে হবিগঞ্জের জাফরপুর গ্রামে থেকে উদ্বাস্ত হয়ে মামাা সুরেন্দ্র সুত্রধরের সঙ্গে শিলচরে আসেন। তিনি এম ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে কাঠমিস্তী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শিলচরের রাঙ্গিরখাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তিনি ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে আত্মদান করেন। সে সময় শিলচর শহরে তার কোন আত্মীয় ছিল না, প্রতিবেশী স্বজনেরাই তার শ্রাদ্ধ কাজ সম্পন্ন করেন।
শচীন্দ্র পাল :
জন্ম ১৯ আশ্বিন ১৩৪৮। পিতা শ্রী গোপেন চন্দ্র পালের পাঁচ ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের মধ্য শচীন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় ছেলে। তিনি কাছাড় হাইস্কুল থেমে তেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার বয়স ছিল ১৯ বছর। হবিঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সন্দপুর গ্রামে ছিল তাদের পূর্বনিবাস। পরীক্ষা দিয়েই ছাত্র শচীন্দ্র মাতৃভাষার জন্যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ের এবং মৃত্যুবরণ করেন।
কুমুদ দাস :
জন্ম১৯৪০ সাল। পিতা শ্রী কুঞ্জমোহন দাস মৌলভীবাজারের জুরি থেকে বাস্তহারা হয়ে আসেন। মায়ের মৃত্যুর পর কুমুদ ৮ বছর বয়সে ত্রিপুরায় মামার বাড়িতে থেকে এম . ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে গাড়ী চালক হন। এই পেশায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি শিলচরে চলে আসেন এবং তারা পুরে এক দোকানে স্টল বয়ের কাজ করতে থাকেন। এই অবস্থাই তিনি তারাপুর রেলস্টেশনে আননন্দোনে অংশ গ্রহন করে জীবন দান করেন। বৃদ্ধ পিতা, চার বোন ও এক শিশু ভাইকে নিয়ে তাদের সংসারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপারজনকারী।
সত্যেন্দ্র দেব :
১৯৩৭ সালে হবিগঞ্জ জেলার দেওন্ডী গ্রামে জন্ম। পিতা প্রয়াত শশীমোহন দেব। বয়স ২৪ বছর। উদ্বাস্তা হয়ে তাঁদের পরিবার ত্রিপুরায় নতুন রাজনগর কলোনীতে বাসা বাধেন। সে খানে মা ও তিন বোনতে রেখে শিলচর শহরের জানীগঞ্জ বাজারে এক বেসরকারী মাতৃভাষার আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।
বীরেন্দ্র সূত্রধর :
জন্ম ১৯৩৭ সেপ্টেম্বর। পিতা নীলমণি বহরমপুর থেকে পিতা মাতার সঙ্গে আসামে আসেন। জীবিকার অম্বষণে বর্তমান মিজোরামের আইজল শহরে গিয়ে কাঠমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। ত্রিপুরায় ধর্মনগরে বিয়ে করে মণিপুর চা বাগানের (কাছা জেলায় অবস্থিত) নিকট ঘরভাড়া করে বাসা বেঁধে ছিলেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে তিনি যেদিন শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর। আর ঘরে আটারো বছরের স্ত্রীর কোলে ছিল ১ বছরের রানী।
সুকোমল পুরকায়স্থ :
জন্ম ১৯২৫ সালে। পিতা শ্রী সঞ্জীবচন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়ী ছিল করিমগঞ্জের বাগবাড়ী গ্রামে। তিনি ডিব্রুগড় শহরে ব্যবসা করতেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ভাষা আন্দোলোনের নামে যখন বাঙ্গাল খেদা আন্দোলন শুরু হয় তখন উৎপীড়িত হয়ে সপরিবারে গ্রামে চলে আসেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে সুকোল শহীদ হন।
সুনীল সরকার :
জন্ম ১৯৮৬ সালের পৌষমাসে। মাতা সুভাসিনী দে। পিতা শ্রী সুরেন্দ্র সরকার দেশবিভাগের পর ঢাকা মুন্সিবাজারে কামার পাড়া থেকে শিলচর শহরের নতুন পট্টিতে ঘর বাধেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্যবসা শুরু করেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুনীল হলেন সব চেয়ে ছোট। সুনীল এম.ই পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন।
তরণী দেবনাথ :
জন্ম ১৯৪৩ সালে। পিতা শ্রী যোগেন্দ্র দেবনাথ ব্রাহ্মণবাড়ীর শ্যামগ্রাম থেকে দেশ ভাগের সময় শিলচর এসে ব্যবসা শুরু করেন। তরণী শহীদদের মৃত্যুবরণ করার প্রায় ছয়মাস আগে একটি বযন যন্ত্র ত্রুয় করে রাঙ্গিরখাড়ী অঞ্চলে জয়দূর্গা কালোনীর ভিতি স্থাপন করেন। মৃত্যু সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর।
কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস :
১৯৬১ সালের ১৯ মে কমলা, শচীন, সুকোমল সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কৃষ্ণকান্ত দীর্ঘ ২৪ বছর এই গুলির ক্ষতজনিত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে ১৯৫৮ সালের ২৪ জুন দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুরকালটা ভিন্ন হলেও কারণটা একই। বরং এ মৃত্যু অনেক বেশী যন্ত্রণাক্লাষ্ট ও মহান। ফলে তার শহীদত্বের দাবি অনস্বীকার্য।
১৯৭২-এর শহীদ বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু :
১৯৪৯ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম যোগেশচন্দ্র চক্রবর্তী, মাতা যুই চক্রবর্তী। বিজন চক্রবর্তীর আদি নিবাস ছিল সিলেটের পঞ্চখণ্ডে। স্বাধীনতার পুর্বেই চল্লিশের দশকে তারা চলে আসেন করিমগঞ্জে জেলার পাথরকান্দিতে। বিজন চক্রবর্তী স্কুল জীবনে কেটেছে পাথরকান্দি মডেল হাইস্কুলে। ওখান থেকেই মেট্রিক পাশ করেন ১৯৬৮তে। করিমগঞ্জ কলেজ থেকে তিনি পি. ইউ পাশ করে বি.এ তে ভর্তি হন। করিমগঞ্জ কলেজ যখন পি. ইউ পড়তেন তখন থেকেই তিনি এস.এফ. আই ছাত্র সংগঠনে ছিলেন।
তারপর মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির যুব সংগঠন ডি ওয়াই এফ-এর সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর ১৯৭১ সালে বিশিষ্ট কমিউনিষ্ট নেতা নিশীথ রঞ্জুন দাস বিধান সভা নির্বাচনে দাঁড়ান। তার নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই শহীদদের সক্রিয় পার্টি রাজনীতিতে প্রবেশের পথে পদক্ষেপ। তখন থেকেই সব মিটিং মিছিল সভাতে তাঁর নিয়োমিত যাতায়াত শুরু। পার্টি তার ধ্যান-জ্ঞান। ৭২-এর ভাষা সংগ্রামে অণুপ্রাণিত হন নিশীথ দাসের প্রেরণাতে এবং উদ্বদ্ধ হন ভাষা সংগ্রামের বিষয়ে পার্টির সুস্পষ্ট নীতি ও কর্মসূচীকে শ্রদ্ধা করে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বরাক উপত্যকায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য তার মাতৃভাষা বাংলা অধিকার, একে যে কোন মুল্যে এমন কি জীবনের বিনিময় হলেও রক্ষা করতে হবে।
শহীদ মোজাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা :
১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমের প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ আসাম। একদিকে বরাক উপত্যকায় বাঙালিদের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও অন্যান্য অসমিয়াদের জন্য ইংরেজী রাখার দাবীতে চলছে ভাষা আন্দোলন, অন্য দিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শিক্ষার মাধ্যমে শুধু অসমিয়াই হবে, এই নিয়ে হচ্ছে ছাত্র আন্দোলন এবং বাঙালি নিধনজ্ঞ। ৫ অক্টোবর আসাম বনধ পালিত হয়। এর পরের দিন ৬ অক্টোবর গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় মোজাম্মেল হকের। ৭ অক্টোবর নওগা কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক অনিল বরা রহস্য জনক নিরুদ্দ্যেশ হন। শহীদ মোজ্জাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা এই দুই জনের জীবন বৃত্তান্ত পাওয়া যায়নি।
ডা. মনীষী দাস :
এম. বি. বি. এস. ডি. এল. ও এম (ই.এন.টি) ফাইন্যাল ইয়ারের পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছিলেন ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ১৯৭২ সালে জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যে সুপরিকল্পিত ভাষা দাঙ্গার সৃষ্টি হয় তারই শিকার হন মনীষী দাস। যারা বিনা প্রতিবাদে অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদের আগ্রাসনের নীতিকে মেনে নিতে তাদের সব কথায় সায় দিত, তিনি তাদের দলে ছিলেন না। বাঙালি হিসেবে তার স্বতন্ত্র ছিল তাঁর স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট। ডাক্তারী পড়ার পাহাড় প্রমাণ চাপের ফাঁকে কখনো কখনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতো স্বতস্ফূর্ত আবৃত্তি রবীন্দ্র-নজরুল সুকান্তের কবিতা। যদিও তিনি অসমিয়া ভাষাকে ও অসমিয়া ভাষীদের কখনোও অশ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। বরং তার ঘনিষ্টতম বন্ধুরা ছিলেন অসমিয়া ভাষীই। তবুও তার এই নীরব মাতৃভাষা প্রীতিই তার কাল হলো। অসমিয়াদের হাতেই তিনি নিহত হন। মৌলভী বাজার জেলার শারিয়া গ্রামে তার আদি বাড়ি। ১৩৫০ সালের ২৮ আশ্বিন মাসে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৮৬-এর শহীদ, শহীদ জগন্ময় দেব :
জগন্ময় দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে হবিগঞ্জ জেলার জলশুখা গ্রামে। মা যোগ মায়া দেবী, বাবা যোগেশ চন্দ্র দেব। পড়াশোনা করীমগনেঞ্জর নীলমনি পাঠশালা ও পালিক হাই স্কুলে। জগন্ময় দেবের গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মেজাজ খুব নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। দেখতেন। খেলাধুলায় নেশা ছিল। ফুটবলই বেশী ভালোবাসতেন। সঙ্গীতেও অণুরাগ ছিল। ১৯৬৮এর ২১ জুলাই আন্দোলনের সময় হঠাৎ গুলি এসে চোখের ভিতর দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়।
শহীদ বিদ্যেন্দু দাস :
বিদ্যেন্দু দাসের জন্ম ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্ম দিনে। বাবার নাম দিগ্রেন্দ্রদাস পুলিশের কাজ করতেন। মায়ের নাম অর্চনা দাস। বদরপুর কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২৪ বছর। ৮৬এর ভাষা সংগ্রামের শহীদ।
Nibedita Paul
আসামে বাংলাভাষা শহীদদের পরিচিতি
বিশিষ্ট লেখক ডা. মুক্তাদীর এর বই “ভাষা শহীদের কথা ও স্বপ্ন” দেয়া বর্ণনা অনুজায়িঃ
১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ জন তরুণ তরুণী প্রাণ বির্সজন দেন। এরপর বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চত্রুবর্তী বাচ্চু নামে একজন মৃত্যুবরণ করেন। অক্টোবরে মারা যান মোজাম্মেল হক। ৭ আগষ্ট রহস্য জনক ভাবে নিরুদেষ্ট হন অনিল বরা। ১৯৮৫ সালের ২৪ জুন কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস ১৯ মে’র গুলিতে ক্ষতজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৬ সালে আসাম প্রদেশে অসমিয়া ভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার সার্কুলার জারি করলে বাঙালিরা এর প্রতিবাদ করেন। এতে ২ জন মারা যান। তাদের নাম দিব্যেন্দু দাস, জগন্ময় দেয়। আসামে বাংলা ভাষা শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে দেওয়া হল।
কমলা ভট্রাচার্য :
রামরমন ভট্রাচার্য ও সুপ্রভাসিনী ভট্রাচার্যের কন্যা কমলা ভট্রাচার্য বাংলা ভাষা আন্দোলনে একমাত্র মহিলা ভাষাশহীদ। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা শেষ করেই তিনি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পিতৃহীন কমলার ভাই শ্রী রামেন্দ্র ভট্রাচার্যের সঙ্গে শিলচর শহরের বিলপাড়ে অবস্থিত বাসায় থাকতেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাদের পরিবার ১৯৫০ সালে সিলেট জেলা থেকে কাছাড়ে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কন্যা হারানোর বেদনায় এক অতি সাধারণ রমণী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেন অভিশাপ দিয়ে ছিলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর উদ্দেশ্যে। এই মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যাহারা মা বলে উঠেছিলেন, ‘নেহেরু তুমি আমার মেয়ে কমলাকে গুলি করে মেরেছে, তোমার মেয়েরও এভাবে মৃত্যু হবে।’
কানাইলাল নিয়োগী :
জন্ম ১৯২২ সালে। পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল নিয়োগী, মায়ের নাম শান্তিকণা নিয়োগী। কানাইলাল ছিলেন তাদের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তাঁর বয়স ৩৭ বছর। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার খিলদা গ্রাম ছিল তার পিতৃভূমি। ১৯৪০ সালে মেট্রিক পাশ করে পরে রেলের চাকুরীতে যোগ দান করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।
হীতেশ বিশ্বাস :
পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস। পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস বাস্তাহারা হয়ে হবিগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে থেকে ত্রিপুরায় আসেন। বারো বছর খোয়াই শহরে উদ্বাস্ত কলোনীর বাসিন্দা হয়েই মা, ছোট ভাই ও এক বোন নিয়ে জীবন সংগ্রাম করেন। শিলচর শহরের অম্বিকাপট্রীতে ভগ্নীপতির বাসায় অবস্থানকালে ভাষা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনদান করেন।
চন্ডীচরণ সূত্রধর :
পিতা চিন্তাহরণ সূত্রধর। বয়স বাইশ বছর। ১৯৫০ সালে হবিগঞ্জের জাফরপুর গ্রামে থেকে উদ্বাস্ত হয়ে মামাা সুরেন্দ্র সুত্রধরের সঙ্গে শিলচরে আসেন। তিনি এম ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে কাঠমিস্তী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শিলচরের রাঙ্গিরখাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তিনি ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে আত্মদান করেন। সে সময় শিলচর শহরে তার কোন আত্মীয় ছিল না, প্রতিবেশী স্বজনেরাই তার শ্রাদ্ধ কাজ সম্পন্ন করেন।
শচীন্দ্র পাল :
জন্ম ১৯ আশ্বিন ১৩৪৮। পিতা শ্রী গোপেন চন্দ্র পালের পাঁচ ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের মধ্য শচীন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় ছেলে। তিনি কাছাড় হাইস্কুল থেমে তেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার বয়স ছিল ১৯ বছর। হবিঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সন্দপুর গ্রামে ছিল তাদের পূর্বনিবাস। পরীক্ষা দিয়েই ছাত্র শচীন্দ্র মাতৃভাষার জন্যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ের এবং মৃত্যুবরণ করেন।
কুমুদ দাস :
জন্ম১৯৪০ সাল। পিতা শ্রী কুঞ্জমোহন দাস মৌলভীবাজারের জুরি থেকে বাস্তহারা হয়ে আসেন। মায়ের মৃত্যুর পর কুমুদ ৮ বছর বয়সে ত্রিপুরায় মামার বাড়িতে থেকে এম . ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে গাড়ী চালক হন। এই পেশায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি শিলচরে চলে আসেন এবং তারা পুরে এক দোকানে স্টল বয়ের কাজ করতে থাকেন। এই অবস্থাই তিনি তারাপুর রেলস্টেশনে আননন্দোনে অংশ গ্রহন করে জীবন দান করেন। বৃদ্ধ পিতা, চার বোন ও এক শিশু ভাইকে নিয়ে তাদের সংসারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপারজনকারী।
সত্যেন্দ্র দেব :
১৯৩৭ সালে হবিগঞ্জ জেলার দেওন্ডী গ্রামে জন্ম। পিতা প্রয়াত শশীমোহন দেব। বয়স ২৪ বছর। উদ্বাস্তা হয়ে তাঁদের পরিবার ত্রিপুরায় নতুন রাজনগর কলোনীতে বাসা বাধেন। সে খানে মা ও তিন বোনতে রেখে শিলচর শহরের জানীগঞ্জ বাজারে এক বেসরকারী মাতৃভাষার আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।
বীরেন্দ্র সূত্রধর :
জন্ম ১৯৩৭ সেপ্টেম্বর। পিতা নীলমণি বহরমপুর থেকে পিতা মাতার সঙ্গে আসামে আসেন। জীবিকার অম্বষণে বর্তমান মিজোরামের আইজল শহরে গিয়ে কাঠমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। ত্রিপুরায় ধর্মনগরে বিয়ে করে মণিপুর চা বাগানের (কাছা জেলায় অবস্থিত) নিকট ঘরভাড়া করে বাসা বেঁধে ছিলেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে তিনি যেদিন শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর। আর ঘরে আটারো বছরের স্ত্রীর কোলে ছিল ১ বছরের রানী।
সুকোমল পুরকায়স্থ :
জন্ম ১৯২৫ সালে। পিতা শ্রী সঞ্জীবচন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়ী ছিল করিমগঞ্জের বাগবাড়ী গ্রামে। তিনি ডিব্রুগড় শহরে ব্যবসা করতেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ভাষা আন্দোলোনের নামে যখন বাঙ্গাল খেদা আন্দোলন শুরু হয় তখন উৎপীড়িত হয়ে সপরিবারে গ্রামে চলে আসেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে সুকোল শহীদ হন।
সুনীল সরকার :
জন্ম ১৯৮৬ সালের পৌষমাসে। মাতা সুভাসিনী দে। পিতা শ্রী সুরেন্দ্র সরকার দেশবিভাগের পর ঢাকা মুন্সিবাজারে কামার পাড়া থেকে শিলচর শহরের নতুন পট্টিতে ঘর বাধেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্যবসা শুরু করেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুনীল হলেন সব চেয়ে ছোট। সুনীল এম.ই পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন।
তরণী দেবনাথ :
জন্ম ১৯৪৩ সালে। পিতা শ্রী যোগেন্দ্র দেবনাথ ব্রাহ্মণবাড়ীর শ্যামগ্রাম থেকে দেশ ভাগের সময় শিলচর এসে ব্যবসা শুরু করেন। তরণী শহীদদের মৃত্যুবরণ করার প্রায় ছয়মাস আগে একটি বযন যন্ত্র ত্রুয় করে রাঙ্গিরখাড়ী অঞ্চলে জয়দূর্গা কালোনীর ভিতি স্থাপন করেন। মৃত্যু সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর।
কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস :
১৯৬১ সালের ১৯ মে কমলা, শচীন, সুকোমল সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কৃষ্ণকান্ত দীর্ঘ ২৪ বছর এই গুলির ক্ষতজনিত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে ১৯৫৮ সালের ২৪ জুন দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুরকালটা ভিন্ন হলেও কারণটা একই। বরং এ মৃত্যু অনেক বেশী যন্ত্রণাক্লাষ্ট ও মহান। ফলে তার শহীদত্বের দাবি অনস্বীকার্য।
১৯৭২-এর শহীদ বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু :
১৯৪৯ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম যোগেশচন্দ্র চক্রবর্তী, মাতা যুই চক্রবর্তী। বিজন চক্রবর্তীর আদি নিবাস ছিল সিলেটের পঞ্চখণ্ডে। স্বাধীনতার পুর্বেই চল্লিশের দশকে তারা চলে আসেন করিমগঞ্জে জেলার পাথরকান্দিতে। বিজন চক্রবর্তী স্কুল জীবনে কেটেছে পাথরকান্দি মডেল হাইস্কুলে। ওখান থেকেই মেট্রিক পাশ করেন ১৯৬৮তে। করিমগঞ্জ কলেজ থেকে তিনি পি. ইউ পাশ করে বি.এ তে ভর্তি হন। করিমগঞ্জ কলেজ যখন পি. ইউ পড়তেন তখন থেকেই তিনি এস.এফ. আই ছাত্র সংগঠনে ছিলেন।
তারপর মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির যুব সংগঠন ডি ওয়াই এফ-এর সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর ১৯৭১ সালে বিশিষ্ট কমিউনিষ্ট নেতা নিশীথ রঞ্জুন দাস বিধান সভা নির্বাচনে দাঁড়ান। তার নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই শহীদদের সক্রিয় পার্টি রাজনীতিতে প্রবেশের পথে পদক্ষেপ। তখন থেকেই সব মিটিং মিছিল সভাতে তাঁর নিয়োমিত যাতায়াত শুরু। পার্টি তার ধ্যান-জ্ঞান। ৭২-এর ভাষা সংগ্রামে অণুপ্রাণিত হন নিশীথ দাসের প্রেরণাতে এবং উদ্বদ্ধ হন ভাষা সংগ্রামের বিষয়ে পার্টির সুস্পষ্ট নীতি ও কর্মসূচীকে শ্রদ্ধা করে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বরাক উপত্যকায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য তার মাতৃভাষা বাংলা অধিকার, একে যে কোন মুল্যে এমন কি জীবনের বিনিময় হলেও রক্ষা করতে হবে।
শহীদ মোজাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা :
১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমের প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ আসাম। একদিকে বরাক উপত্যকায় বাঙালিদের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও অন্যান্য অসমিয়াদের জন্য ইংরেজী রাখার দাবীতে চলছে ভাষা আন্দোলন, অন্য দিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শিক্ষার মাধ্যমে শুধু অসমিয়াই হবে, এই নিয়ে হচ্ছে ছাত্র আন্দোলন এবং বাঙালি নিধনজ্ঞ। ৫ অক্টোবর আসাম বনধ পালিত হয়। এর পরের দিন ৬ অক্টোবর গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় মোজাম্মেল হকের। ৭ অক্টোবর নওগা কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক অনিল বরা রহস্য জনক নিরুদ্দ্যেশ হন। শহীদ মোজ্জাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা এই দুই জনের জীবন বৃত্তান্ত পাওয়া যায়নি।
ডা. মনীষী দাস :
এম. বি. বি. এস. ডি. এল. ও এম (ই.এন.টি) ফাইন্যাল ইয়ারের পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছিলেন ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ১৯৭২ সালে জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যে সুপরিকল্পিত ভাষা দাঙ্গার সৃষ্টি হয় তারই শিকার হন মনীষী দাস। যারা বিনা প্রতিবাদে অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদের আগ্রাসনের নীতিকে মেনে নিতে তাদের সব কথায় সায় দিত, তিনি তাদের দলে ছিলেন না। বাঙালি হিসেবে তার স্বতন্ত্র ছিল তাঁর স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট। ডাক্তারী পড়ার পাহাড় প্রমাণ চাপের ফাঁকে কখনো কখনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতো স্বতস্ফূর্ত আবৃত্তি রবীন্দ্র-নজরুল সুকান্তের কবিতা। যদিও তিনি অসমিয়া ভাষাকে ও অসমিয়া ভাষীদের কখনোও অশ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। বরং তার ঘনিষ্টতম বন্ধুরা ছিলেন অসমিয়া ভাষীই। তবুও তার এই নীরব মাতৃভাষা প্রীতিই তার কাল হলো। অসমিয়াদের হাতেই তিনি নিহত হন। মৌলভী বাজার জেলার শারিয়া গ্রামে তার আদি বাড়ি। ১৩৫০ সালের ২৮ আশ্বিন মাসে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
৮৬-এর শহীদ, শহীদ জগন্ময় দেব :
জগন্ময় দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে হবিগঞ্জ জেলার জলশুখা গ্রামে। মা যোগ মায়া দেবী, বাবা যোগেশ চন্দ্র দেব। পড়াশোনা করীমগনেঞ্জর নীলমনি পাঠশালা ও পালিক হাই স্কুলে। জগন্ময় দেবের গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মেজাজ খুব নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। দেখতেন। খেলাধুলায় নেশা ছিল। ফুটবলই বেশী ভালোবাসতেন। সঙ্গীতেও অণুরাগ ছিল। ১৯৬৮এর ২১ জুলাই আন্দোলনের সময় হঠাৎ গুলি এসে চোখের ভিতর দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়।
শহীদ বিদ্যেন্দু দাস :
বিদ্যেন্দু দাসের জন্ম ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্ম দিনে। বাবার নাম দিগ্রেন্দ্রদাস পুলিশের কাজ করতেন। মায়ের নাম অর্চনা দাস। বদরপুর কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২৪ বছর। ৮৬এর ভাষা সংগ্রামের শহীদ।