সেরা কবিতা
সেরা কবিতা
See lessLost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
Sorry, you do not have a permission to ask a question, You must login to ask question.
আমাদের গ্রাম ভূমিকা : আমাদের গ্রামের নাম চন্দনপুর । গ্রামখানি নদিয়া জেলার উত্তর পশ্চিম দিকে আবহনী অঞ্চলে অবস্থিত। গ্রামের পাশে ই রয়েছে একটি বড় ঝিল। আমাদের গ্রামটি শষ্য শ্যামলে ভরপুর, গ্রামের চারিদিকে সবুজের মেলা। গ্রামে বিভিন্ন ফল মূলের গাছ, শাক সবজি, সকালের পাখির ডাক, বিকালের গুধূলি গ্রামটিকে করে তRead more
ভূমিকা : আমাদের গ্রামের নাম চন্দনপুর । গ্রামখানি নদিয়া জেলার উত্তর পশ্চিম দিকে আবহনী অঞ্চলে অবস্থিত। গ্রামের পাশে ই রয়েছে একটি বড় ঝিল। আমাদের গ্রামটি শষ্য শ্যামলে ভরপুর, গ্রামের চারিদিকে সবুজের মেলা। গ্রামে বিভিন্ন ফল মূলের গাছ, শাক সবজি, সকালের পাখির ডাক, বিকালের গুধূলি গ্রামটিকে করে তোলেছে এক শান্তির দ্বীপ।
আয়তন ও লোকসংখ্যা : আমাদের গ্রামটি নাদিয়া জেলার সর্ব বৃহৎ গ্রাম। গ্রামটি উত্তর-দক্ষিণে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এবং পূর্ব-পশ্চিমে এক কিলোমিটার প্রস্থ। গ্রামে লোকসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার দুই শত। আমদের গ্রামটি মিলনের অনন্য নাজির এখানে বিভিন্ন ধর্মের লোকই মিলেমিশে শান্তিতে বসবাস করে।
ভূ-প্রকৃতি : আমাদের গ্রামটি গ্রাম বাংলার এক সুন্দর্যের প্রতীক । গ্রামের সম্পূর্ণ জমিই সমতল। মাঝেমধ্যে বসতবাড়ি ও তার চারপাশে বিভিন্ন ফলজ গাছপালা, ছোট-বড় বাঁশঝাড় গ্রামটিকে ঘিরে রেখেছে। গ্রামে পাশে থাকে ঝিল বেশিরভাগ গ্রামের মানুষের জীবনের মূল উৎস। এদের জীবনযাপন ঝিল থেকে পাওয়া মৎস্যের উপর নির্ভরশীল।
যাতায়াত ব্যবস্থা : যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়ে আমাদের গ্রাম অনেক উন্নত।পঞ্চায়েত রাস্তার মাধ্যমে গ্রামটি পাশের জাতীয় সড়কের সাথে যুক্ত। গ্রামের প্রধান সড়কগুলি পাকা এবং প্রশস্ত । তাই জেলার মহকুমার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্তা খুব ই সুন্দর । মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। তা ছাড়া সরকারের প্রচেষ্টায় যোগাযোগ ব্যবস্তা সহজ করার জন্য গ্রামের পাশ থেকে সরকারী বাস চালু করা হয়েছে।
উৎপন্ন দ্রব্য : মূলতঃ আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ মৎস বিক্রি করে জীবিকা উপার্জন করে। তাছাড়া উৎপন্ন দ্রব্যের মধ্যে ধান, পাট, গম, ডাল, সরিষা, আখ ও পাট ইত্যাদি প্রধান। জমি উর্বর হওয়ার দরুন বিশেষ কোনো আধুনিক টেকনোলজি না থাকা সত্ত্বেও কৃষকেরা ভালো ফসল পেয়ে থাকে।গ্রামের কৃষকরা খুবই পরিশ্রমী বলে জমি কখনোই পতিত ফেলে রাখে না। বছর জুড়ে নানা সময়ে নানা ফসল ফলানো হয় ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান : আমাদের গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ,একটি দাতব্য চিকিৎসালয়, একটি পোস্ট অফিস, একটি ডাকঘর রয়েছে । তাছাড়া সপ্তাহে দুই দিন হাট বাজার বসে । গ্রামবাসীরা এই বাজারে তাদের পণ্য ক্রয় বিক্রয় করে।
গ্রামের আবহাওয়া : আমাদের গ্রামের আবহাওয়া খুব মলিন ও সুন্দর। বিন্দুমাত্র কোনো শব্দদূষণ নেই। তাছাড়া গ্রামের মানুষ নিরীহ ও প্রকৃতি প্রিয়।গরম ঠান্ডা উভয় ঋতুতে গ্রাম ভিন্ন ভিন্ন রূপে পরিণত হয়।
উপসংহার : আমাদের গ্রাম আমাদের জেলার মধ্যে একটি আদর্শ গ্রাম।আমাদের গ্রাম দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ার ফলে সবাই পড়াশুনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং অনেক ছেলে মেয়েরা বাহিরে গিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমাদের গ্রামের প্রতি গর্ব অনুভব করি এবং ভালোবাসি।
See lessআমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ভুমিকা : আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি বলে পরিচিত। তাঁর কাব্যে পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মানব মর্যাদা ও সৌন্দর্যচেতনা সমন্বিত হয়েছে। জন্ম : কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠRead more
ভুমিকা : আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইসলাম দেশে-বিদেশে বিদ্রোহী কবি, বুলবুল কবি বলে পরিচিত। তাঁর কাব্যে পরাধীনতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং মানব মর্যাদা ও সৌন্দর্যচেতনা সমন্বিত হয়েছে।
জন্ম : কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসােল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামের কাজী পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন।
কেন তিনি আমার প্রিয় : নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা আমাকে মুগ্ধ ও আকর্ষণ করে। “বল বীর চির উন্নত মম শির’ একথা বলেই তাঁর ‘বিদ্রোহী’ নামক প্রসিদ্ধ কবিতা আরম্ভ। এ কথা কয়টি উচ্চারণ করার সাথে সাথে পাঠক ও শ্রোতা মাত্র যেন অন্য জগতে নীত হয়। আবার দুনিয়ায় অবিচার ও জুলুমবাজির প্রবাহ চলছে। মানুষের পরাধীনতা ও গােলামীর জিঞ্জির আজও ছিন্ন হয়নি। সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মক্ষেত্রের অবিচার-অনাচার আজ আকাশপর্শী হয়ে উঠেছে। মূর্তিমান অন্যায় ও অকল্যাণ জগদ্দল পাষাণের মত মানুষের বুকে চেপে আছে। মজলুম মানুষের কান্নার জলে আজ আকাশ-বাতাস আবিল হয়ে ওঠেছে। তার বিরুদ্ধে মানুষ বিদ্রোহ না করে থাকতে পারে না। যতদিন পৃথিবীর বুক হতে পাপ-তাপ দূর না হবে, ততদিন কোন সমাজ-সচেতন মানুষ শান্ত হতে পারে না। তাই কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে আমাকেও বলতে ইচ্ছা হয়
“যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রােল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত।
আমি সেই দিন হবো শান্ত।”
নজরুল ইসলামের বিদ্রোহের সুর তার প্রথম দিকের কাব্য রচনার প্রায় সবগুলােতেই অল্প-বিস্তর রয়েছে। তাঁর ‘অগ্নিবীণা, ‘ভাঙ্গার গান’ প্রভৃতি গ্রন্থে এর পরিচয় পাই। আগুনের মত উজ্জ্বল ও প্রােজ্জ্বল এসব বইয়ের কবিতাগুলােতে ভাবের সাথে। ভাষার সংগতি ও মিল অনবদ্য। মানুষের কবি নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাকে কাব্য ও গানে রূপ দান করেছেন। তাঁর রচিত দেশাত্মবােধক গান আজ ভারত উপমহাদেশের মানুষের মুখে মুখে, সভায় সভায় , আসরে আসরে গীত হয়।
ইসলামী ভাবধারা : নজরুল ইসলামের আর একটি বড় দান হল এই যে, তিনি ইসলামী ভাবধারাকে তাঁর কাব্য প্রথম সুন্দরভাবে রূপ দান করেছেন। তাঁর ‘জিঞ্জির’-এর বিভিন্ন কবিতায় এর অনবদ্য পরিচয় মিলে। তাঁর রচিত গজলেও ইসলামী ভাবধারার সুষ্ঠু প্রয়ােগ দেখতে পাই। এসব কারণেই নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষার পাঠকদের মন জয় করেছেন। আর এজন্যই তাঁর কবিতা আমার খুব ভাল লাগে।
মৃত্যু : ইংরেজি ১৯৪৫ সালের দিকে কবি কঠিন ব্যাধিতে আক্রান্ত হন। ১৯৭২ সালে কবিকে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে আনা হয় এবং নাগিরিকত্ব দেয়া হয়। ২৯শে আগস্ট ১৯৭৬ সালে (১২ই ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) তিনি ঢাকায় শেষ নিস্বাশ ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তাকে সমাহিত করা হয়।
উপসংহার : কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় শক্তি সাহস এবং চরিত্রের বাস্তব প্রতিমর্তি। আমাদের জাতীয় সমৃদ্ধিতে তার বহু অবদান রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তাঁর নামে ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট স্থাপন হয়েছে। আমাদের উচিত তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা।
See lessদূর্গা পূজা বা দুর্গোৎসব ভূমিকাঃ দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় বাংলার অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। দুর্গোৎসব নিয়ে আসে বাংলার জীবনে এক নতুন মাত্রা, বাংলার মানুষ মেতে উঠে খুশিতে আনন্দে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খুব কম উৎসবের সঙ্গেই তার তুলনা চলে। যদিও এটি মূলত: ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবুও সকল শ্রেRead more
ভূমিকাঃ দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় বাংলার অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। দুর্গোৎসব নিয়ে আসে বাংলার জীবনে এক নতুন মাত্রা, বাংলার মানুষ মেতে উঠে খুশিতে আনন্দে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খুব কম উৎসবের সঙ্গেই তার তুলনা চলে। যদিও এটি মূলত: ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবুও সকল শ্রেণীর জনসাধারণের আন্তরিক মিলনের ফলে এক উদারতর সামাজিক ব্যপ্তি লাভ করেছে। সর্বমানবের মিলনই যদি জাতীয় উৎসবের বৈশিষ্ট্য হয়, তবে দুর্গোৎসবকে নিঃসন্দেহে বাংলা ও বাঙালী জাতির জাতীয় উৎসবরূপে স্বীকার করতে হবে।
সময় ও প্রস্তুতি : বৎসরের সুন্দরতম ঋতুতে বাংলার নিসর্গ-প্রকৃতি যখন সুস্নিগ্ধ লাবণ্যে অপরূপ হয়ে ওঠে, তখনই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। শারদ এই শুভলগ্নে প্রকৃতিই প্রকৃতি হয়ে উঠে নির্মেঘ আকাশ হয়ে উঠে সুনীল এরইমধ্যে প্রকৃতি তাঁর স্বর্ণোজ্জ্বল রৌদ্রের প্রদীপালােকে জগন্মাতার বন্দনার আয়ােজন করে। শরৎ ঋতুর আগমনে মৃৎ-শিল্পীর দিবারাত্রির পরিশ্রমে দেবী দুর্গা মৃন্ময়ীরূপে দৃষ্টিগােচর হয়ে ওঠেন, বিপণিতে নয়নলােভন পণ্য আনন্দোচ্ছল ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রবাসী কর্মীর দিন কাটে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলনের প্রতীক্ষায়। অবশেষে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতিথির পুণ্যলগ্নে কল্যাণী জননী-রূপে দেবী দুর্গা তাঁর মর্তের সন্তানদের সম্মুখে আবির্ভূত হন। গ্রাম-বাঙলার শারদ আকাশে বাজতে থাকে আগমনীর সুর।
দুর্গাপূজার ইতিহাস : ইতিহাস পুরাণে বিধৃত। গিরিরাজ হিমালয় ও তদীয় পত্রী মেনকার কন্যা এই দুর্গা, দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর স্বামী। সত্যযুগে সুরথ নামক জনৈক নরপতি শহস্তে পরাজিত হয়ে হতাশচিত্তে মেধস্ মুনির আশ্রমে যান। এই মুনির উপদেশেই তিনি সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন এবং দেবীর কৃপায় শত্রুকবলিত রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। রাজা সুরথ বসন্তঋতুতে দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে এই পূজা বাসন্তী পূজা’ নামে অভিহিত হয় । বাঙালী দেবী দুর্গার আরাধনায় রামচন্দ্রের শারদীয় অনুষ্ঠানকে গ্রহণ করেছে। তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রায় সাড়ে তিনশত বৎসর পূর্বে সর্বপ্রথম বাঙলাদেশে জগজ্জননীর পূজায় ব্রতী হন, এরূপ মত প্রচলিত আছে।
দুর্গা দশভুজা : তার দশটি হাতে শাণিত প্রহরণ। সিংহপৃষ্ঠে আরােহণ করে তিনি ভীষণদর্শন মহিষাসুর নিধনে উদ্যত। শক্তিরূপিণী জননী দুর্গার দক্ষিণে শােভা পান ঐশ্বর্যের দেবী কমলাসনা লক্ষ্মী, বামভাগে অবস্থান করেন বাণী বিদ্যাদায়িনী সর্বশুক্লা সরস্বতী। দুই পুত্র দেবসেনাপতি কার্তিকেয় এবং সিদ্ধিদাতা গণেশও একই সঙ্গে পূজিত হন । গণেশের পার্শ্বে প্রকৃতি-জননীর সৃষ্টির প্রতীক নবপত্রিকা অবস্থান করেন । অসুররূপী অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে বিশ্ববাসীকে শাস্তি ও কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যই আদ্যাশক্তি মহামায়া দশপ্রহরণ ধারিণী দুর্গারূপে আত্মপ্রকাশ।
মূল উৎসব : আলােকোজ্জ্বল আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বােধন করে দুর্গাপুজার অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুণ্য ষষ্ঠী তিথিতেই দেবীর আবাহন ও অধিবাসের কার্যটি সম্পন্ন করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী–পরবর্তী এই তিনটি দিন ধরে মহাসমারােহে অগণিত ভক্তের সম্মিলনে পূজা চলতে থাকে। অষ্টম ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে যে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, তার নাম ‘সন্ধিপূজা’ । চতুর্থ দিন দশমী তিথিতে পূজা সমাপন করে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় । বিসর্জনের পরবর্তী কৃত্যই হল প্রতিমা। নিরঞ্জন—অর্থাৎ বাদ্যভাণ্ড ও শোভাযাত্রা সহকারে দেবী প্রতিমাকে নদী-গর্ভে অথবা অন্য কোন জলাশয়ে নিমজ্জিত করা হয়। ভক্ত-পূজকদের দেহে নামে ক্লান্তির ভার, মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে প্রিয়জন বিচ্ছেদের বিষাদে। প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে প্রতিটি বাঙালী আত্মীয় প্রিয়জনের সঙ্গে স্নেহালিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পরকে ভক্তি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করে, এই অনুষ্ঠানটির নাম ‘বিজয়া।
বাংলার জীবনে দুর্গ উৎসবের মাহাত্ম্য : শুধু যে ধর্মীয় গুরুত্বেই জগন্মাতা দুর্গার আরাধনা বাঙালী হিন্দুর জীবনে প্রধানতম স্থান গ্রহণ করেছে তাই নয়, মানবিক সম্পর্কের সহজ আন্তরিকতার স্পশে এ উৎসবটি অনন্য। হিমালয়-দুহিতা উমা পুত্র-কন্যা সঙ্গে নিয়ে মাত্র তিনটি দিনের জন্য পিতৃগৃহে ফিরে আসেন, চতুর্থ দিনেই আবার মাতা মেনকাকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে স্বামী মহেশ্বরের আলয়ে প্রত্যাবর্তন করেন । মর্ত্য-পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আবির্ভাবের এই লৌকিক কাহিনীটি বাঙালীর পারিবারিক জীবনে একটি বিষন্ন-মধুর অভিজ্ঞতার সমান্তরালে চলে আসছে। বিবাহিতা কন্যার পিত্রালয়ে আগমন এবং বিদায়ে বাঙালী জননী বা মেনকার আনন্দোৎকণ্ঠা ও অশ্রুঘন বেদনার মর্মস্পর্শিতা অনুভব করেন। কাজেই, বাঙালী জননীর নিকট তখন দেবী দুর্গা আর স্বীয় কন্যা একই স্নেহবাৎসল্যের স্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে একাত্মতা লাভ করেন। মাতৃসাধন বাঙালী সঙ্গীতের সুরে বিবাহিত কন্যার সঙ্গে মিলনপ্রত্যাশী বাঙালী মাতার অন্তরবেদনাকেই মুক্তি দিয়েছে : “যাও যাও গিরি, আনিতে গৌরী, উমা আমার কত কেঁদেছে।
উপসংহার: শারদোৎসব প্রকৃতপক্ষে বাংলার পারিবারিক জীবনে মিলনােৎসবের মাধুর্য নিয়েই আবির্ভূত হয়। সুদীর্ঘে প্রবাসজীবনযাপন করে প্রিয়জন ফিরে আসে জননীর স্নেহাঞ্চলতলে, আনন্দ-হাসিতে মুখর হয় বাঙালীর গৃহ-প্রাঙ্গণ। ধরাতলে রচিত হয় গিরীশ মেনকার সুখতৃপ্ত সংসারের দ্বিতীয় রূপ। তাই বাঙালীই নিঃসঙ্কোচ সারল্যে বলতে পেরেছে-‘দেবতারে মােরা আত্মীয় জানি।
See lessদূর্গা পূজা বা দুর্গোৎসব ভূমিকাঃ দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় বাংলার অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। দুর্গোৎসব নিয়ে আসে বাংলার জীবনে এক নতুন মাত্রা, বাংলার মানুষ মেতে উঠে খুশিতে আনন্দে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খুব কম উৎসবের সঙ্গেই তার তুলনা চলে। যদিও এটি মূলত: ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবুও সকল শ্রেRead more
ভূমিকাঃ দুর্গোৎসব বা দুর্গাপূজা জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতায় বাংলার অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। দুর্গোৎসব নিয়ে আসে বাংলার জীবনে এক নতুন মাত্রা, বাংলার মানুষ মেতে উঠে খুশিতে আনন্দে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খুব কম উৎসবের সঙ্গেই তার তুলনা চলে। যদিও এটি মূলত: ধর্মীয় অনুষ্ঠান তবুও সকল শ্রেণীর জনসাধারণের আন্তরিক মিলনের ফলে এক উদারতর সামাজিক ব্যপ্তি লাভ করেছে। সর্বমানবের মিলনই যদি জাতীয় উৎসবের বৈশিষ্ট্য হয়, তবে দুর্গোৎসবকে নিঃসন্দেহে বাংলা ও বাঙালী জাতির জাতীয় উৎসবরূপে স্বীকার করতে হবে।
সময় ও প্রস্তুতি : বৎসরের সুন্দরতম ঋতুতে বাংলার নিসর্গ-প্রকৃতি যখন সুস্নিগ্ধ লাবণ্যে অপরূপ হয়ে ওঠে, তখনই দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। শারদ এই শুভলগ্নে প্রকৃতিই প্রকৃতি হয়ে উঠে নির্মেঘ আকাশ হয়ে উঠে সুনীল এরইমধ্যে প্রকৃতি তাঁর স্বর্ণোজ্জ্বল রৌদ্রের প্রদীপালােকে জগন্মাতার বন্দনার আয়ােজন করে। শরৎ ঋতুর আগমনে মৃৎ-শিল্পীর দিবারাত্রির পরিশ্রমে দেবী দুর্গা মৃন্ময়ীরূপে দৃষ্টিগােচর হয়ে ওঠেন, বিপণিতে নয়নলােভন পণ্য আনন্দোচ্ছল ক্রেতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। প্রবাসী কর্মীর দিন কাটে প্রিয়জনের সঙ্গে মিলনের প্রতীক্ষায়। অবশেষে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠীতিথির পুণ্যলগ্নে কল্যাণী জননী-রূপে দেবী দুর্গা তাঁর মর্তের সন্তানদের সম্মুখে আবির্ভূত হন। গ্রাম-বাঙলার শারদ আকাশে বাজতে থাকে আগমনীর সুর।
দুর্গাপূজার ইতিহাস : ইতিহাস পুরাণে বিধৃত। গিরিরাজ হিমালয় ও তদীয় পত্রী মেনকার কন্যা এই দুর্গা, দেবাদিদেব মহাদেব তাঁর স্বামী। সত্যযুগে সুরথ নামক জনৈক নরপতি শহস্তে পরাজিত হয়ে হতাশচিত্তে মেধস্ মুনির আশ্রমে যান। এই মুনির উপদেশেই তিনি সর্বপ্রথম দুর্গাপূজা করেন এবং দেবীর কৃপায় শত্রুকবলিত রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। রাজা সুরথ বসন্তঋতুতে দুর্গাপূজা করেছিলেন বলে এই পূজা বাসন্তী পূজা’ নামে অভিহিত হয় । বাঙালী দেবী দুর্গার আরাধনায় রামচন্দ্রের শারদীয় অনুষ্ঠানকে গ্রহণ করেছে। তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ প্রায় সাড়ে তিনশত বৎসর পূর্বে সর্বপ্রথম বাঙলাদেশে জগজ্জননীর পূজায় ব্রতী হন, এরূপ মত প্রচলিত আছে।
দুর্গা দশভুজা : তার দশটি হাতে শাণিত প্রহরণ। সিংহপৃষ্ঠে আরােহণ করে তিনি ভীষণদর্শন মহিষাসুর নিধনে উদ্যত। শক্তিরূপিণী জননী দুর্গার দক্ষিণে শােভা পান ঐশ্বর্যের দেবী কমলাসনা লক্ষ্মী, বামভাগে অবস্থান করেন বাণী বিদ্যাদায়িনী সর্বশুক্লা সরস্বতী। দুই পুত্র দেবসেনাপতি কার্তিকেয় এবং সিদ্ধিদাতা গণেশও একই সঙ্গে পূজিত হন । গণেশের পার্শ্বে প্রকৃতি-জননীর সৃষ্টির প্রতীক নবপত্রিকা অবস্থান করেন । অসুররূপী অশুভ শক্তিকে বিনাশ করে বিশ্ববাসীকে শাস্তি ও কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত করবার জন্যই আদ্যাশক্তি মহামায়া দশপ্রহরণ ধারিণী দুর্গারূপে আত্মপ্রকাশ।
মূল উৎসব : আলােকোজ্জ্বল আশ্বিনের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে বােধন করে দুর্গাপুজার অনুষ্ঠান শুরু হয়। পুণ্য ষষ্ঠী তিথিতেই দেবীর আবাহন ও অধিবাসের কার্যটি সম্পন্ন করা হয়। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী–পরবর্তী এই তিনটি দিন ধরে মহাসমারােহে অগণিত ভক্তের সম্মিলনে পূজা চলতে থাকে। অষ্টম ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে যে পূজা অনুষ্ঠিত হয়, তার নাম ‘সন্ধিপূজা’ । চতুর্থ দিন দশমী তিথিতে পূজা সমাপন করে দেবীকে বিসর্জন দেওয়া হয় । বিসর্জনের পরবর্তী কৃত্যই হল প্রতিমা। নিরঞ্জন—অর্থাৎ বাদ্যভাণ্ড ও শোভাযাত্রা সহকারে দেবী প্রতিমাকে নদী-গর্ভে অথবা অন্য কোন জলাশয়ে নিমজ্জিত করা হয়। ভক্ত-পূজকদের দেহে নামে ক্লান্তির ভার, মন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে প্রিয়জন বিচ্ছেদের বিষাদে। প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে প্রতিটি বাঙালী আত্মীয় প্রিয়জনের সঙ্গে স্নেহালিঙ্গনে আবদ্ধ হয়ে পরস্পরকে ভক্তি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছাজ্ঞাপন করে, এই অনুষ্ঠানটির নাম ‘বিজয়া।
বাংলার জীবনে দুর্গ উৎসবের মাহাত্ম্য : শুধু যে ধর্মীয় গুরুত্বেই জগন্মাতা দুর্গার আরাধনা বাঙালী হিন্দুর জীবনে প্রধানতম স্থান গ্রহণ করেছে তাই নয়, মানবিক সম্পর্কের সহজ আন্তরিকতার স্পশে এ উৎসবটি অনন্য। হিমালয়-দুহিতা উমা পুত্র-কন্যা সঙ্গে নিয়ে মাত্র তিনটি দিনের জন্য পিতৃগৃহে ফিরে আসেন, চতুর্থ দিনেই আবার মাতা মেনকাকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে স্বামী মহেশ্বরের আলয়ে প্রত্যাবর্তন করেন । মর্ত্য-পৃথিবীতে দেবী দুর্গার আবির্ভাবের এই লৌকিক কাহিনীটি বাঙালীর পারিবারিক জীবনে একটি বিষন্ন-মধুর অভিজ্ঞতার সমান্তরালে চলে আসছে। বিবাহিতা কন্যার পিত্রালয়ে আগমন এবং বিদায়ে বাঙালী জননী বা মেনকার আনন্দোৎকণ্ঠা ও অশ্রুঘন বেদনার মর্মস্পর্শিতা অনুভব করেন। কাজেই, বাঙালী জননীর নিকট তখন দেবী দুর্গা আর স্বীয় কন্যা একই স্নেহবাৎসল্যের স্পর্শে দ্রবীভূত হয়ে একাত্মতা লাভ করেন। মাতৃসাধন বাঙালী সঙ্গীতের সুরে বিবাহিত কন্যার সঙ্গে মিলনপ্রত্যাশী বাঙালী মাতার অন্তরবেদনাকেই মুক্তি দিয়েছে : “যাও যাও গিরি, আনিতে গৌরী, উমা আমার কত কেঁদেছে।
উপসংহার: শারদোৎসব প্রকৃতপক্ষে বাংলার পারিবারিক জীবনে মিলনােৎসবের মাধুর্য নিয়েই আবির্ভূত হয়। সুদীর্ঘে প্রবাসজীবনযাপন করে প্রিয়জন ফিরে আসে জননীর স্নেহাঞ্চলতলে, আনন্দ-হাসিতে মুখর হয় বাঙালীর গৃহ-প্রাঙ্গণ। ধরাতলে রচিত হয় গিরীশ মেনকার সুখতৃপ্ত সংসারের দ্বিতীয় রূপ। তাই বাঙালীই নিঃসঙ্কোচ সারল্যে বলতে পেরেছে-‘দেবতারে মােরা আত্মীয় জানি।
See lessশীতের সকাল বা একটি শীতের সকালের বর্ণনা ভূমিকা : শীতকাল বলতে পৌষ ও মাঘ মাসকে বুঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে শীতের আগমন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। পৌষের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়ে উঠলেও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। সাধারণত এ সময় ফসল কাটা হলে চারিদিকে এক উৎসব মুখর আবহাওয়া লক্ষ্য করাRead more
ভূমিকা : শীতকাল বলতে পৌষ ও মাঘ মাসকে বুঝানো হলেও প্রকৃতপক্ষে শীতের আগমন শুরু হয় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম দিকে। পৌষের শেষের দিকে শীতের প্রকোপ তীব্র হয়ে উঠলেও ফাল্গুন মাস পর্যন্ত শীতের আমেজ থাকে। সাধারণত এ সময় ফসল কাটা হলে চারিদিকে এক উৎসব মুখর আবহাওয়া লক্ষ্য করা যায় । শীতের সময় কাবু হয়ে পড়লেও শীতের সকালে রয়েছে এক বিশেষ আমেজ । এজন্যেই শীতকালের সকলগুলি সবার কাছে পছন্দনীয় ।
শীতের সকালের বর্ণনা : শীতের সকালের কল্পনা ঘন কুয়াশা আর জড়ো সড়ো করা আবহাওয়া ছাড়া অসম্ভব । কুয়াশা ঘন চাদরের ফাক দিয়ে উকি মেরে ঘােষণা করে সে তার হিম-শীতল আগমনী বার্তা। প্রকৃতির সর্বত্র দেখা যায় এ ধরনের আঁকালাে শুষ্কতার জমজমাট রেশ। প্রকৃতি তার রূপ-রস-বর্ণ ঝেড়ে ফেলে দিয়ে সন্ন্যাসব্রত পালনে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। পশুপাখি ও জীবজন্তুর জীবন হয়ে ওঠে পাণ্ডুর ও বিবর্ণ। এর মাঝে নীরবে পদচারণা করে শুভ্রসুন্দর আর নির্মল পবিত্রতা। শীতের রাত অত্যন্ত দীর্ঘ, যেন শেষ হতে চায় না। তাই কাক ডাকা ভাের হতে সবাই অপেক্ষা করে একটু মিষ্টি মধুর সূর্যালােকের পরশের জন্য। কিন্তু কুয়াশার ঘন প্রাচীর ভেদ করে ওকে ভীষণ বেগ পেতে হয় একটু একটু আলােক ছড়ানাের জন্যে।
গ্রাম্য শীতের সকাল: গ্রামে শীতের সকাল গুলি হয় অনন্য। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত সৌন্দর্য ঢেলে দেয় চারিপাশের আবহাওয়ায়। ভুলগুলোসকালগুলো হয় ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন, মাঠের অপরপ্রান্তে তাকালে বিস্তীর্ণ সাদা রাশি ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। কিন্তু এই ঠান্ডা উপেক্ষা করেও কৃষক তার মাঠের দিকে এগিয়ে যায়। গ্রামের মানুষেরা ঠান্ডার কবল থেকে রক্ষা পেতে আগুন পোহায়। তৈরি হয় নানা ধরনের খাবার বিশেষ করে খেজুরের রস দিয়ে তৈরি হয় অনেক সুমিষ্ট পিঠা পুলি।গ্রামে মানুষ সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে রোদের আলোয় দাঁড়িয়ে উষ্ণতার আমেজ নেয়।
শহরাঞ্চলে শীতের সকাল: গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলের চিত্র হয় ভিন্ন। তুলনামূলকভাবে শহরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ কম হয়। গ্রামের মতো মানুষ শহরাঞ্চলে সূর্যের আলোয় উষ্ণতার আমেজ নেয়ার সুযোগ পায় না। অনেককেই ঘরের মধ্যে হিটার বা অন্য যন্ত্র চালিয়েই শীত নিবারণের চেষ্টা করে। শীতের সকালে শহরাঞ্চলে বিভিন্ন তাজা
শাকসবজি দিয়ে বাজার সাজানো হয় এবং শহুরে মানুষেরা ছুটে চলে বাজারের উদ্দেশ্যে।
উপসংহার: কুয়াশাঘেরা এক মধুর দৃশ্য নিয়ে উপস্থিত হয় শীতের সকাল। সকালবেলা সূর্য তার উষ্ণ আলোয়, শিশির ভেজা পাতায়, নানা রকম সুস্বাদু খাবার সব মিলিয়ে আমাদেরকে দিয়ে যায় এক অনন্য আমেজ। তাই শীতের সকালের আনন্দ অন্যান্য ঋতুর সকালের তুলনায় ভিন্ন ও মাধুর্য।
See lessমাতা-পিতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য ভূমিকা: মাতাপিতার কাছে তাঁর সন্তানের থেকে বড় কোনো অমূল্য বস্তূ নেই। তাই পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ট সম্পর্ক হয় সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। তাঁদের জন্যই আমরা আজ এই পৃথিবীর আলো দেখেছি । একটি শিশু পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধRead more
ভূমিকা: মাতাপিতার কাছে তাঁর সন্তানের থেকে বড় কোনো অমূল্য বস্তূ নেই। তাই পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ট সম্পর্ক হয় সন্তান এবং মাতাপিতার মধ্যে। তাঁদের জন্যই আমরা আজ এই পৃথিবীর আলো দেখেছি । একটি শিশু পৃথিবীতে এসে পিতা-মাতার যথাযথ লালন-পালন, আদর, স্নেহ, মমতা ও শিক্ষা-দীক্ষার মাধ্যমেই বড় হয়ে উঠে। সুতরাং সন্তানের জীবনে পিতামাতার অবদান অসীম। তাই প্রত্যেক সন্তানের উচিত মাতা-পিতার প্রতি দায়িত্বশীল হয়ে তাহাদের কর্তব্য পালন করা।
মাতা-পিতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য: একজন পিতা-মাতা যেভাবে আদর যত্নে একটি সন্তান কে মানুষ করে তুলে সেভাবে সন্তানের ও দায়িত্ব মা-বাবার যত্ন নেয়া। তাই একটি সন্তানের সর্বপ্রথম দায়িত্ব পিতা-মাতার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, তাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা। বাবা-মা’র সন্তুষ্টি অনুযায়ী সন্তানের পথ চলা উচিত। প্রত্যেক সন্তানের উচিত সব সময় পিতা-মাতার বাধ্য থাকা এবং তাদের আদেশ নিষেধ মেনে চলা। বাবা-মায়ের যখন বার্ধক্য চলে আসে তখন তারা নবজাতক শিশুর মতোই অসহায় হয়ে পড়েন। এক্ষেত্রে পিতা-মাতাকে বোঝা, না ভেবে তাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করা সন্তানের দায়িত্ব। প্রায় প্রতিটি ধর্ম মা বাবার প্রতি আনুগত্য
হওয়ার শিক্ষা দে। কিন্তু আজকাল তথাকথিত অভিজাত সমাজে নিজের মূল্যবোধ বজায় রাখতে গিয়ে সন্তানের কাছে তার নিজের বৃদ্ধ বাবা-মার স্থান হয় বৃদ্ধাশ্রম। আমাদের শিক্ষিত সচেতন সমাজের উচিত এটা রোধ করা একান্ত কর্তব্য।
শ্রদ্ধাশীল মহান ব্যক্তিদের দৃষ্টান্ত: ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবীতে মরেও যারা অমর এবং চিরস্মরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন। তাঁরা সকলেই মাতৃ ও পিতৃভক্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম ইতিহাসে মাতৃভক্তদের তালিকায় চিরকালই স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাম পিতৃসত্ব পালনের উদ্দেশ্যে চৌদ্দবছর বনবাস কাটিয়েছিলেন। জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেকজান্ডার প্রমুখ মহান ব্যক্তিগণ মাতা-পিতার প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ইতিহাসে যুগ-যুগান্তর ধরে চির স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন এবং থাকবেন।
প্রধান কয়েকটি দায়িত্ব: প্রধান দায়িত্বের মধ্যে মা বাবার প্রত্যাশা পূর্ণ করা হচ্ছে অন্যতম। প্রত্যেক মা-বাবাই তার সন্তানদের বিভিন্ন আশা ভরসায় লালন পালন করে। তারা চায় তাদের সন্তান জীবনে সাফল্য অর্জন করুক এবং সুখী জীবন যাপন করুক। এর জন্যই মা-বাবা প্রত্যেক সন্তানের পিছনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। এইজন্য সন্তানের দায়িত্ব তার মা-বাবার আশা-প্রত্যাশা পূর্ণ করে দায়িত্ব পালন করা।
দ্বিতীয়তঃ মা-বাবার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। সর্ব অবস্থায় মা-বাবার প্রতি অনুগত থাকা। তাদের নেয়া বিচারের উপর আস্থা রাখা।তাদের প্রতি বিনয়ী আচরণ করা আমাদের একান্ত কর্তব্য।
তৃতীয়তঃ পিতামাতার আদর্শ ও সম্মান বজায় রাখা। প্রত্যেক সন্তানেরই উচিত তাদের পিতামাতার আদর্শ ও ন্যায়নীতি অনুসরণ করে চলা। সমাজে তাদের মান সম্মান ক্ষুন্ন হয় এমন কোনো কাজ না করে যে কাজে মা বাবার সম্মান বৃদ্ধি পায় সেই কাজ করা।
উপসংহার: মাতা-পিতার সন্তানের পরম বন্ধু সন্তানের জন্য মা বাবার মতো কেহই আপন নহে। সুতরাং ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করতে হলে পিতামাতার প্রতি কর্তব্যগুলো যথাযত পালন করা সন্তানের একান্ত কর্তব্য।
See lessরচনা: বাংলাদেশের নদ নদী ভুমিকা : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম একটি অংশ এখানকার নদনদী। নদীবিহীন সবুজ বাংলাদেশের কল্পনা অসম্ভব । বাংলাদেশকে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সৌন্দর্য মন্ডিত করার পিছনে নদ নদী গুলির ভূমিকাই প্রধান। নদী গুলি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য, প্রাচুর্য্য তৎসঙRead more
ভুমিকা : প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম একটি অংশ এখানকার নদনদী। নদীবিহীন সবুজ বাংলাদেশের কল্পনা অসম্ভব । বাংলাদেশকে অপরূপ সৌন্দর্য্যে সৌন্দর্য মন্ডিত করার পিছনে নদ নদী গুলির ভূমিকাই প্রধান। নদী গুলি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে এনে দিয়েছে বৈচিত্র্য, প্রাচুর্য্য তৎসঙ্গে করেছে সমৃদ্দ। তাই বাংলাদেশ নদীর দেশ বা নদীমাতৃক দেশ।
বাংলাদেশের নদ নদী : বাংলাদেশে নদী, উপনদী ও শাখানদী মিলিয়ে মোট ৭০০ থেকে বেশি নদী রয়েছে, যে গুলি প্রবাহিত হয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দিয়ে। বাংলাদেশের প্রধান নদী গুলির মধ্যে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র উল্লেখযোগ্য। এই নদীগুলির বেশিরভাগ প্রবাহিত হয়েছে দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ মুখী হয়ে। এই প্রধান নদীগুলি ছাড়াও কর্ণফুলী, কপোতাক্ষ, তিতাস, গোমতী, শীতলক্ষ্যা বাংলাদেশের অন্যতম নদনদী।
পদ্মা : বাংলাদেশের প্রধান বৃহত্তম নদী যাহার দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৬৬ কিলোমিটার। ইহা হিমালয়ের হিমবাহ থেকে উৎপত্তি লাভ করে ভারতবর্ষের বুকে সুদীর্ঘ অঞ্চল প্রবাহিত হয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে পদ্মা নদী নামে। তারপর পদ্মা নদী গোয়ালন্দে গিয়ে মিলিত হয়েছে যমুনার সাথে । মিলনের এই ধারা অব্যাহত রেখে মেঘনার সাথে আবার মিলিত হয় চাঁদপুরে এবং শেষমেষ মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।
মেঘনা : মেঘনার উৎপত্তিস্থল ভারতবর্ষের মনিপুর রাজ্যে। এই নদী উৎপত্তিস্থল থেকে বরাক নদী নামে প্রবাহিত হয়ে পৃথক দুইটি শাখা কুশিয়ারা ও সুরমা নামে বাংলাদেশে সিলেট অঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করেছে। এই দুইটি শাখা আজমিরীগঞ্জে আবার মিলিত হয়েছে কালনী নদীর ধারায়। পরে কিছুদূর এগিয়ে এই তিনটি নদী মেঘনা নামে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। মেঘনার উপনদী গুলি হচ্ছে গোমতি, তিতাস, মনু বাউলাই ইত্যাদি।
ব্রহ্মপুত্র : ব্রহ্মপুত্র হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গ থেকে উৎপত্তি লাভ করে প্রথমে তিব্বত এবং পরে ভারতবর্ষের আসাম রাজ্য অতিক্রম করে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। পরে এই নদী দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যমুনা এবং মেঘনা নদীতে মিলিত হয়। ব্রম্মপুত্রের প্রধান উপনদী গুলি হল ধরলা এবং তিস্তা।
যমুনা : যমুনার উৎপত্তি ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা থেকে। ইহা দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রম্মপুত্রের প্রধান শাখা থেকে যমুনা নামে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয় এবং পরে আবার মিলিত হয় পদ্মার সঙ্গে। ইহা বাংলাদেশের প্রশস্ততম নদী। যমুনার উপনদী গুলি হল ধরলা, তিস্তা, করতোয়া, আত্রাই ইত্যাদি।
জনজীবনে নদীর প্রভাব : বাংলাদেশের জনজীবনে নদ নদীর ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের সভ্যতা সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিতে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে এখানকার নদীগুলি। নদী তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল নগর ও বন্দর, গড়ে উঠেছে নৌপথ। যা সহজ করে দিয়েছে ব্যবসা বাণিজ্য ও আদান প্রদানের কাজ। আর অন্যদিকে এই নদীর জল বাংলার মাটিকে করেছে উর্বর। চাষাবাদের ক্ষেত্রে এখানকার নদীগুলিই যোগান দিচ্ছে অধিকাংশ জল। তাছাড়া শিল্প কারখানা, মৎস্য সম্পদ, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পরিবহন ব্যবস্থায় নদ-নদী পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
নদী ভাঙ্গন ও বিপর্যয় : প্রকৃতির দান এই নদ নদী গুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষের মঙ্গল সাধন করে থাকলেও কখনো কখনো এই নদীগুলি মানুষের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বর্ষাকালে নদী অতিরিক্ত প্রবাহের কারণে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তীরবর্তী ফসলের মাঠ, ডুবে যায় জনপদ। নদীর ভাঙ্গনের ফলে ধ্বংস হয় ঘরবাড়ি, মানুষ হয়ে ওঠে অসহায়।
উপসংহার : নদ নদী গুলি আমাদের জাতীয় সম্পদ। বাংলার মাটিকে পরিপূর্ণতা দান করেছে এই নদ-নদীগুলি। নদীর জলধারা থেকে আমরা নানাভাবে উপকৃত হয়েছি অনাদিকাল থেকে। তাই আমাদের দায়িত্ব নদী গুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ।
See less
Sanjay Makal