তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা (শামসুর রহমান) কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু | shadhinota tumi summary in bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু
“হে স্বাধীনতা তোমাকে পাওয়ার জন্যে” শীর্ষক কবিতাটি শামসুর রাহমানের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ নামক কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। কবিতাটি কবির ‘বন্দিশিবির থেকে’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেক্ষাপটে লেখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা। কবি শামসুর রহমান এই কবিতাটি তে স্বাধীনতা যে একটি মৌলিক অধিকার এবং পরাধীন বাংলাদেশ বাসী তাদের এই মৌলিক অধিকারের জন্য যে কিভাবে প্রতীক্ষারত তাহার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও আশা এবং জাতির আত্ম বলিদান এর কথা ছন্দের মধ্যে ফুটে উঠেছে অত্যন্ত স্পষ্ট ভাবে।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?
আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ?
স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য মানুষ কিভাবে তাদের আপনজনকে হারিয়েছে এবং কিভাবে তারা অপদস্থ হয়েছে তার একটি বর্ণনা এ কবিতা থেকে পাওয়া যায়। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ বাসী দেখেছি তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন। শহরের পর শহর গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি সৈন্যরা চালিয়েছে হত্যাযজ্ঞ। চারিদিকে বয়েছে রক্তের গঙ্গা। প্রাণ দিয়েছে শত সহস্র মানুষ।
তুমি আসবে ব’লে, ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে ব’লে, বিধ্বস্ত পাডায় প্রভূর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁডিয়ে একটানা আর্তনাদ করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতামাতার লাশের উপর।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সাকিনা বিবির মতো গ্রামীণ নারীর সহায়-সম্বল বিসর্জিত হয়েছে, হরিদাসী হয়েছে স্বামী হারা নবজাতক হারিয়েছে মা-বাবাকে। ছাত্ররা হত্যা হয়েছে ছাত্রাবাসে শহরে চলছে গণহত্যা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রাম লোকালয়ে।
তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
মানুষ প্রতিবাদ করেছে তা নয় পশুপাখিরাও শামিল হয়েছে এই প্রতিবাদে। আর্তনাদ করেছে কুকুরও। মুক্তিযুদ্ধে শ্রমিক থেকে শুরু করে, সাধারণ মানুষ সব শ্রেণীর মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দিয়েছেন আত্মত্যাগ।স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার জন্য মানুষ উঠে দাঁড়িয়েছে তার সমস্ত প্রাণ দিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, বৈদেশিক শাসনের বিরুদ্ধে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাডার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
মতলব মিয়া, মেঘনা নদীর দক্ষ মাঝি,
গাজী গাজী ব’লে নৌকা চালায় উদ্দান ঝডে
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিকশাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুডে বেডানো
সেই তেজী তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হ’তে চলেছে –
মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগদান কবির মনে আশার আলো জাগিয়েছে তাই কবির দৃঢ় বিশ্বাস যে তাদের এই আত্ম বলিদান এবং আত্মত্যাগ কখনোই বৃথা যাবে না। স্বাধীনতা আসবেই অবশ্যই আসবে। একদিন বাঙালি তার স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিবেই।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনিপ্রতিধ্বনি তুলে,
মতুন নিশান উডিয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকেই আসতে হবে, হে স্বাধীনতা।
Hridoy