কাজী নজরুল ইসলামের লিখিত নারী কবিতার সারমর্ম ও মূলভাব: সাম্যের গান গাওয়া কবির কাছে নারী-পুরুষে কোনাে ভেদাভেদ নেই। বিশ্বের সমস্ত কল্যাণ অকল্যাণ সবেতেই নারী পুরুষের ভূমিকা আছে। খ্রিস্টিয় আদি পাপের পিছনে যে শয়তানের (Satan) কথা ভাবা হয় সেই অমঙ্গলের শক্তি নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকা সম্ভব। তাই নারীRead more
কাজী নজরুল ইসলামের লিখিত নারী কবিতার সারমর্ম ও মূলভাব:
সাম্যের গান গাওয়া কবির কাছে নারী-পুরুষে কোনাে ভেদাভেদ নেই। বিশ্বের সমস্ত কল্যাণ অকল্যাণ সবেতেই নারী পুরুষের ভূমিকা আছে। খ্রিস্টিয় আদি পাপের পিছনে যে শয়তানের (Satan) কথা ভাবা হয় সেই অমঙ্গলের শক্তি নারী পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকা সম্ভব। তাই নারীকে এজন্য হেয় করা ঠিক নয়। বরং পৃথিবীর যা কিছু ভালাে সেই সব সৃষ্টি—যা মঙ্গলময়-সম্পদ, জ্ঞান, গুণ সৌন্দর্য সমস্তেই নারীর অবদান আছে। দিনের শেষে তপ্ত দেহ মন নিয়ে পুরুষ ঘরে ফিরে নারীর কল্যাণস্পর্শে স্বস্তি শান্তি পেয়েছে। নারী বাইরে কমেৰ্ষণা জোগায়, ঘরে সে-ই কল্যাণী। দুয়ের শক্তিতেই সৃষ্টি রয়েছে সচল।
অলঙ্কার সে তাে নারীদেহ স্পর্শেই সুন্দর। নারীর মিলন-বিরহে কাব্যসৃষ্টি। ক্ষুধা-সুধার মধ্য দিয়ে নিত্য নতুন সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে। পৃথিবীর অনেক বিজয় অভিযান, মানুষের সমস্ত কীর্তির পিছনে নারীর অবদান সীমাহীন।নারীর উৎসাহ ও প্রেরণাতেই পৃথিবীতে অমর মনীষীরা মহান সব প্রয়াস করেছেন। নারীর কোমল হৃদয়ের স্পর্শেই শিশু-পুরুষ নির্বিশেষে স্নেহ প্রেম-প্রীতি দয়ামায়ায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে।
নারীর প্রেরণায়, শক্তিতে এতদিন যাঁরা আশ্রয় পেয়েছে, তারাই আজ নারীর মর্যাদাকে স্বীকার করছে না, এ বড়াে বিস্ময়। আজ সাম্যবাদের যুগ—নারী পুরুষের সমানাধিকার। পুরুষ নারীর উপর আধিপত্য বিস্তার বা তাকে বন্দী করতে চাইলে, তাকেই এক সময়, তারই সৃষ্ট কারাগারে বন্দী হতে হবে। কেননা এটাই যুগধর্মপীড়ন করলে নিজেকেই পীড়িত হতে হবে। সেই সঙ্গে নারীকেও আর স্বর্ণ-রৌপ্যের অন্ধকারে বন্দিনী থাকা চলবে না ; হাতের রুবি, পায়ের মল-শিকল, মাথার ঘােমটা ফেলে বেরিয়ে আসতে হবে। যারা একসময় পদানত করে রেখেছিল, তাদের সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে, প্রয়ােজনে পরাভূত করে, নারীকে বিশ্বজয় করতে হবে। আর তা হলেই অনাগত ভবিষ্যতে পুরুষের সঙ্গে নারীর জয় ঘােষিত হবে।।
Hridoy
কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত 'দারিদ্র্য' কবিতার মূলভাবঃ দারিদ্র্য কবিতা প্রত্যক্ষত কবির নিজের দুর্দিনের প্রেক্ষাপটে রচিত। কবিতাটি প্রথম ‘কল্লোল' পত্রিকায়, অগ্রহায়ণ ১৩৩৩ সনে পরে ‘সত্তগাত'-এ মাঘ ১৩৩৩ সনে পুনর্মুদ্রিত হয়। পরে কবির সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কবিতার সংগ্রহ গ্রন্থ ‘সিন্ধু হিল্লোল (১৩৩৪)-এ সংকলিত হযRead more
কাজী নজরুল ইসলাম লিখিত ‘দারিদ্র্য’ কবিতার মূলভাবঃ
দারিদ্র্য কবিতা প্রত্যক্ষত কবির নিজের দুর্দিনের প্রেক্ষাপটে রচিত। কবিতাটি প্রথম ‘কল্লোল’ পত্রিকায়, অগ্রহায়ণ ১৩৩৩ সনে পরে ‘সত্তগাত’-এ মাঘ ১৩৩৩ সনে পুনর্মুদ্রিত হয়। পরে কবির সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কবিতার সংগ্রহ গ্রন্থ ‘সিন্ধু হিল্লোল (১৩৩৪)-এ সংকলিত হয়।
দারিদ্র মানুষকে তার যথার্থ স্বরূপ প্রকাশ করে। মানুষের প্রকৃত সত্তা, তাঁর মনুষ্যত্বের প্রকৃত চেহারা এ সময়েই ফুটে ওঠে। ভারতীয় জীবনবােধের মধ্যে যে ত্যাগ-তিতিক্ষার পরিচয় আছে, তা কখনই ঐশ্বর্য বিকাশের মধ্যে ফুটে ওঠে না। তাই দারিদ্রই মানুষকে মহতের সম্মানে প্রতিষ্ঠিত করে। প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই যথার্থ শক্তির তীব্রতা প্রকাশ পায়।
দুঃখের দহন তাপে জীবনের সমস্ত রস যখন শুকিয়ে যায় তখন দু চোখে শুধু আগুন জ্বলে। ফুলের সৌরভ আর তেমন ছড়ায় না। পৃথিবীর সমস্ত করুণা ধারা যখন সূর্যের খরতাপে শুষ্ক হয় তখন আর জীবনের স্বপ্ন, তার সুন্দর কোনাে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সমস্ত জ্বালা যন্ত্রণা বেদনার ভার নিয়ে যে গান রচনা হয় তা তাে বেদনারই গান। তখন মনে হয় দারিদ্র্য ছাড়া জীবনের কোনাে কিছুই আর সত্য নয়। মহা দারিদ্র্যের প্রলয়ঙ্কর শক্তি সর্বস্ব গ্রাস করতে উদ্যত।
এরই মধ্যে পৃথিবী যখন অপরূপ সৌন্দর্যে পূর্ণ হয়, আগমনীর আনন্দের সুর ধ্বনিত হয়, তখন আশা জাগে, ম্লানমুখী শেফালিকাও ঝরে পড়বার আগে গন্ধ বিলিয়ে যায়। প্রজাপতি নেচে বেড়ায় পুষ্প থেকে পুষ্পে চঞ্চল পাখায়। এর মধ্যে কবি-প্রাণে বেদনার করুণ সুর বেজে ওঠে। আগমনী গানের মধ্যে যেন শুনতে পাওয়া যায়, নাই, কিছু নাই।
See less