“রাস্তা কারাে একার নয়” (মূলগ্রন্থঃ অথচ ভারতবর্ষ তাদের) কবিতায় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাধারণ লােকসমাজের জীবনপথের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। ব্যঞ্জনাধর্মী এ কবিতায় তিনি মানুষের, মানবসভ্যতার অগ্রগতি, প্রগতিপথকে ‘রাস্তা’ বলে আখ্যাত করেছেন।
সভ্যতাসূচনা থেকেই মানবজীবনের সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতাে জড়িয়ে আছে ধর্ম ও বিজ্ঞান। ধর্ম মানুষের পুণ্য কর্ম, সৎ কর্ম, পরম্পরাগত জীবন আচরণ ও রীতিনীতি আর বিজ্ঞান কোন বিষয় সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞান, কর্ম সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠা জ্ঞান, মানবজীবনের আচরণ ও মননকে সমৃদ্ধকারী জ্ঞান। এ দুয়ের হাত ধরে মানবসভ্যতার সাবালক হয়ে ওঠার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু কালপ্রবাহে লােভী মানুষের লােভ সভ্যতাকে বিচ্ছিন্ন, শ্রেণিবিভক্ত, রক্তাক্ত করলাে। ধর্ম রূপান্তরিত হলাে সংস্কারে, বিজ্ঞান বদলে গেলাে অস্ত্রে। আর শুরু হােলাে তাদের সংঘাত।
ধর্মসংস্কার লিওনার্দো বা গ্যালিলিওর মতাে বিজ্ঞানসাধকদের তপস্যা থেকে বিরত করতে পারলাে না। সত্য নিষ্ঠায় অবিচ্ছিন্ন থেকে বিজ্ঞান মানুষকে সভ্যতার মুক্ত প্রবাহে, সংস্কারমুক্ত আলােকপ্রান্তরে এগিয়ে নিয়ে গেলাে। ধর্মের অন্ধত্ব মহাজাগতিক সারসত্যকে আবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে বারবার বিজ্ঞানসাধকদের সাময়িক অত্যাচার, এমনকি প্রাণহানিতেও বিজ্ঞানের সারস্বত জয়ধারাকে রুদ্ধ করতে পারলাে না।
ধর্ম যতদিন দুঃখী মানুষদের আশ্রয়দাতা, জীবনপথের পাশাপাশি চলা বন্ধ ততদিন ধর্ম সংক্রান্ত সংঘাত বা সংস্কার সভ্যতাকে আচ্ছন্ন করে না। কিন্তু বেঁচে থাকার সাহস যােগানাের বদলে ধর্ম যখন বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ করে মানুষকে অচলায়তনে আবদ্ধ করে তখনই সর্বনাশ সূচিত হয়। ধর্মতাত্ত্বিকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বারবার যেহেতু তারা ভুলে যায় রাস্তা কারাে একার নয়। যেমনভাবে আত্ম, শ্রেণি বা রাষ্ট্রস্বার্থে বিজ্ঞানকে শাস্ত্রে রূপান্তরিত করা রাজনীতির বাদশাদের আস্ফালনও ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হয় ভাড়াটে জল্লাদের পােশাক গায়ে চাপানাে বণিকতান্ত্রিক, সামন্ততান্ত্রিক সাম্রাজ্যলােভীদের আস্ফালন।
রাস্তা কারাে একার নয় কবিতায় ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্কে এভাবেই কবি তাঁর সুচিন্তিত মতামত প্রদর্শনে ধর্ম বিজ্ঞান উভয়েই মানব আশ্রয়দাতার ভূমিকা হারালে ব্যর্থ, প্রত্যাখ্যাত হয় বলেছেন।
Hridoy
সারাংশ ও সারমর্ম
“রাস্তা কারাে একার নয়” (মূলগ্রন্থঃ অথচ ভারতবর্ষ তাদের) কবিতায় কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাধারণ লােকসমাজের জীবনপথের রূপরেখা তুলে ধরেছেন। ব্যঞ্জনাধর্মী এ কবিতায় তিনি মানুষের, মানবসভ্যতার অগ্রগতি, প্রগতিপথকে ‘রাস্তা’ বলে আখ্যাত করেছেন।
সভ্যতাসূচনা থেকেই মানবজীবনের সঙ্গে শ্বাসপ্রশ্বাসের মতাে জড়িয়ে আছে ধর্ম ও বিজ্ঞান। ধর্ম মানুষের পুণ্য কর্ম, সৎ কর্ম, পরম্পরাগত জীবন আচরণ ও রীতিনীতি আর বিজ্ঞান কোন বিষয় সম্পর্কে সুসংবদ্ধ জ্ঞান, কর্ম সম্পর্কে বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠা জ্ঞান, মানবজীবনের আচরণ ও মননকে সমৃদ্ধকারী জ্ঞান। এ দুয়ের হাত ধরে মানবসভ্যতার সাবালক হয়ে ওঠার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু কালপ্রবাহে লােভী মানুষের লােভ সভ্যতাকে বিচ্ছিন্ন, শ্রেণিবিভক্ত, রক্তাক্ত করলাে। ধর্ম রূপান্তরিত হলাে সংস্কারে, বিজ্ঞান বদলে গেলাে অস্ত্রে। আর শুরু হােলাে তাদের সংঘাত।
ধর্মসংস্কার লিওনার্দো বা গ্যালিলিওর মতাে বিজ্ঞানসাধকদের তপস্যা থেকে বিরত করতে পারলাে না। সত্য নিষ্ঠায় অবিচ্ছিন্ন থেকে বিজ্ঞান মানুষকে সভ্যতার মুক্ত প্রবাহে, সংস্কারমুক্ত আলােকপ্রান্তরে এগিয়ে নিয়ে গেলাে। ধর্মের অন্ধত্ব মহাজাগতিক সারসত্যকে আবদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়ে বারবার বিজ্ঞানসাধকদের সাময়িক অত্যাচার, এমনকি প্রাণহানিতেও বিজ্ঞানের সারস্বত জয়ধারাকে রুদ্ধ করতে পারলাে না।
ধর্ম যতদিন দুঃখী মানুষদের আশ্রয়দাতা, জীবনপথের পাশাপাশি চলা বন্ধ ততদিন ধর্ম সংক্রান্ত সংঘাত বা সংস্কার সভ্যতাকে আচ্ছন্ন করে না। কিন্তু বেঁচে থাকার সাহস যােগানাের বদলে ধর্ম যখন বেঁচে থাকার পথ রুদ্ধ করে মানুষকে অচলায়তনে আবদ্ধ করে তখনই সর্বনাশ সূচিত হয়। ধর্মতাত্ত্বিকদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় বারবার যেহেতু তারা ভুলে যায় রাস্তা কারাে একার নয়। যেমনভাবে আত্ম, শ্রেণি বা রাষ্ট্রস্বার্থে বিজ্ঞানকে শাস্ত্রে রূপান্তরিত করা রাজনীতির বাদশাদের আস্ফালনও ব্যর্থ হয়। ব্যর্থ হয় ভাড়াটে জল্লাদের পােশাক গায়ে চাপানাে বণিকতান্ত্রিক, সামন্ততান্ত্রিক সাম্রাজ্যলােভীদের আস্ফালন।
রাস্তা কারাে একার নয় কবিতায় ধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্কে এভাবেই কবি তাঁর সুচিন্তিত মতামত প্রদর্শনে ধর্ম বিজ্ঞান উভয়েই মানব আশ্রয়দাতার ভূমিকা হারালে ব্যর্থ, প্রত্যাখ্যাত হয় বলেছেন।