রচনাঃ ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় | Prakritik Biporjoy Essay in Bengali?
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
ভয়ংকর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়
ভূমিকা – প্রকৃতির রূপমুগ্ধতায় মানুষ যেমন দিশেহারা হয় তেমনি প্রকৃতির রুদ্র ভয়ংকর রূপের কাছে মানুষের অসহায়তার সীমা থাকে না। মানুষ প্রকৃতিকে আজও ১ শতাংশ বুঝে উঠতে পারে নি – তাই তাে তার প্রলয়ংকরী রূপ মাঝে মাঝে মানুষকে নাস্তানাবুদ করে তােলে। মানুষের হাজারাে গবেষণা তাই তাে বার বার পর্যদস্ত হয়। বর্ষার নদীর উন্মত্ত তরঙ্গকে যেমন বেঁধে রাখতে পারে নি মানুষ তেমনি আজও পারেনি সমুদ্রের দিকে অঙ্গলি সংকেত করে বিশেষ সীমায় তাকে বেঁধে রাখতে। আর মানুষের সভ্য সুন্দর সভ্যতা বার বার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় যখনই প্রকৃতি নির্মম শােধ নেয়। প্রকৃতির এই আচরণকে ইংরেজিতে বলে –‘Nature red in tooth and claws। প্রকৃতির এমনই এক নির্মম মূর্তির মুখােমুখি হল ২০০৪ সালের ২৬শে ডিসেম্বর রবিবার সকালে। প্রকৃতির নির্মমতা রূপ নিল সুনামী নাম্নী সমুদ্রদানবরূপে। সুনামি আজ গােটা বিশ্বের মানুষের কাছে আতঙ্কগ্রস্ত দুঃখ বিহুল করা ভয়ংকর এক শব্দ, ভয়ংকর এক নাম।
সুনামি কী? সুনামি (Tsunami) কথাটি জাপানী শব্দ। সমুদ্রতলে প্রচণ্ড ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রতীর ছাপিয়ে যে ভয়ংকর জলােচ্ছ্বাস দেখা দেয় – তাই সুনামি। ভূবিজ্ঞানীদের অভিমতানুযায়ী, সমুদ্র তলদেশে ভূকম্পনের দরুণ একটি স্তর আর একটি স্তরের উপরে উঠে গেলে যে ফাটলের সৃষ্টি হয় ও সেই ফাটল দিয়ে পাক খেয়ে। জল ওপরের দিকে ওঠে এবং যার ফলে ঢেউ তৈরি হয় সেই ঢেউ প্রচণ্ড গতিবেগে গভীর সমুদ্র দিয়ে এগিয়ে যায়। তীরের কাছে এসে সেই জলরাশির গতিবেগ কমে গেলেও বেড়ে যায় উচ্চতা। প্রায় ১০ মিটার উচ্চতার জলরাশি সমুদ্রের তীরভূমিতে ছাপিয়ে পরে। আর তাতেই ধুয়ে মুছে একাকার হয়ে যায় মানুষের হাতে তৈরি সুন্দর সভ্য জনজীবন।
২৬শে ডিসেম্বরের সুনামির আঘাত – ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূলের কাছে ভারত মহাসাগরের ৪০ কিলােমিটার নিচে ৮.৯ মাত্রার যে ভূমিকম্প হয় সেই ভূমিকম্পই দক্ষিণ-পূর্ব। এশিয়ার কয়েকটি দেশে চরম বিপর্যয় ডেকে আনে। সুমাত্রার সমুদ্রতলে এই ভূকম্পনের পর পরই আন্দামানের নিকটবর্তী সমুদ্রতলে আর একটি কম্পন হয়, ফলে সমস্যা আরও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। ভূকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, সুমাত্রা কাছে সমুদ্রতলে কেন্দ্রীভূত ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক শক্তি ছিল একটি পারমাণবিক বােমার থেকেও ১০ লক্ষ গুণ অধিক। এই ভয়ংকর তাণ্ডবের অনিবার্য প্রভাবে উপকূলে ঝাপিয়ে পড়ে সুনামি।।
ক্ষয়ক্ষতি – ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলি হল ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপ, কেরালা, তামিলনাড়ু, ওড়িশা আর আফ্রিকার সােমালিয়া। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ সামগ্রিকভাবে কোনদিনই জানা যাবে না। বিগত ৪০ বছরের মধ্যে ভয়ংকরতম দুর্বিপাক। গত একশ বছরের শক্তির নিরিখে পঞ্চম স্থানাধিকারী সুনামি। সুনামির আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে হাজার হাজার বাসভূমি, মারা গেছে ৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ, নষ্ট হয়েছে ফসল, বনসম্পদ, প্রাণ হারিয়েছে জীবজন্তু – বহু মানুষ যারা সুনামিতে প্রাণে বেঁচে গেছেন তাঁরা মানসিক ব্যাধিতে ভুগছেন, পরিবর্তন হয়েছে কোথাও কোথাও ভৌগলিক মানচিত্রও। প্রিয়জন হারানাের যন্ত্রণা নিয়ে আজও বেঁচে আছে বহু মানুষ।
ত্রাণ ও পুণর্গঠন – এই চরম বিপর্যয়ে পূর্ণ উদ্যমে বহু মানুষ ত্রাণ ও পুণর্গঠনের কাজে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জ ঘােষণা করেছে ৫০০ কোটি ডলার সাহায্যের ব্যবস্থা করবে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, চীন, জাপানও সাহায্য করবে বলে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। ভারতবর্ষের সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং জনসাধারণও ত্রাণ ও পুণর্গঠনের কাজে এগিয়ে এসেছে, এছাড়া বেশ কিছু সংবাদপত্র ত্রাণ তহবিলের মাধ্যমে অর্থসাহায্য করেছে।
উপসংহার – সুনামি আমাদের কাছে এক বাস্তবচিত্র রেখে গেছে – আজও যে প্রকৃতির কাছে মানুষ শিশু এরই প্রমাণ দিয়ে গেছে – এছাড়া নানা সামাজিক অবক্ষয়ে মানুষের মানবিকতাবােধ মূল্যহীন হয়ে গেছে এই ভাবনাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করে মানুষ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে অকপটে। এখন ভাবনা কিভাবে আমরা এই সুনামির কবল থেকে রক্ষা পাব? দিল্লির মৌসম ভবনের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ দপ্তরের বিশেষজ্ঞ, অসীমকুমার ঘােষ বলেছেন, “ঘূর্ণিঝড়ের আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হলেও ভূমিকম্পের পূর্বাভাস আমরা দিতে পারি না।” তাহলে সুনামি থেকে পরিত্রানের উপায়? বিশেষজ্ঞদের মতে ‘সুনামি’ থেকে পরিত্রাণের উপায় প্রবাল প্রাচীর আর ম্যানগ্রোভ বা লবণাম্ব উদ্ভিদ, দুটোই প্রাকৃতিক – মানুষের চেষ্টা থাকবে এই দুটোরই সমুদ্র উপকূলভাগে বাড়ানাের উদ্যোগ। কালক্রমে আর সুনামি ভয়ংকর। রূপ নিতে নিজেই যেন ভয় পায় এমন চেষ্টা মানুষকে করতে হবে।