ভূমিকা : “ধন ধান্যে পুষ্পেভরা আমাদেরই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।”
এই ধন ধান্যে ও পুষ্পে ভরা সুজলা সুফলা ধরণীর উত্তর পর্ব সীমান্তে ক্ষুদ্র রাজ্য আসাম । প্রকৃতিদেবী নিজের কনিষ্ঠা কন্যাকে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে পূর্ণ করে দিয়েছেন। যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধার জন্য এই রাজ্য শিল্প-কারখানা দিক দিয়ে উন্নত না হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে এই রাজ্যটিকে ধনী বলা যায়। পাহাড় পর্বত ও অরণ্যে পরিবেষ্টিত এই রাজ্যটি যেন প্রকৃতি দেবীর স্নেহ আঁচলের ছায়ায় আবৃত হয়ে রয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অসমের ভূমি বৎসরের বেশ কিছটা বর্ষণসিক্ত অবস্থায় থাকে। যার ফলে নানান সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে আসাম।
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকার : প্রকৃতি জাত সম্পদকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। প্রকৃতিবিদেরা এই সম্পদকে বনজ, খনিজ এবং প্রাণীজ এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। কৃষিজাত সম্পদগুলিও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে পড়ে।
বনজ সম্পদ : সকল সম্পদের মধ্যে আসামের বনজ সম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রাজ্যের ৩৫ শতাংশ বিস্তৃত এই বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শাল, সেগুন, চাম, সুন্দী, শিশু, গামাই প্রভৃতি মূল্যবান বৃক্ষরাজি আসামের অর্থনীতির মূল চাবি কাঠি । এই রাজ্যের অরণ্য বাঁশ ও বেত উৎপাদনেও উল্লেখযােগ্য। আসামের বাঁশ-বেত আসামের কুটির শিল্পকে উন্নত করে তুলেছে। আসামের কাগজ কলগুলি চালু রাখতে আসামের বাঁশই যথেষ্ট। তুলা, লাক্ষা প্রভৃতিও আসামের বনজ সম্পদকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।
কৃষিজ সম্পদ : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আসাম একটি বৃষ্টিবহুল রাজ্য বলে পরিচিত তাই এই অঞ্চলটি কৃষি প্রধান। ধান, পাট, কার্পাস, তিল, সরিষা, আলু, মাসকালাই, মুগ প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল কমলা, কলা, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা প্রভৃতি। অসমের চা জগৎ বিখ্যাত। উৎপাদনের প্রাচুর্যের জন্য পাট ও কার্পাস বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এণ্ডি ও মুগা প্রভৃতি গাছগুলি কেবলমাত্র অসমে জন্মে। তাই এ দুটি শিল্প আসামের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। আসামের অনেক নদী, বিল, হাওরও আছে। এগুলির জলে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায় ।
প্রাণীজ সম্পদ : প্রাণীজ সম্পদের মধ্যে অরণ্যজাত পশু-পাখিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাতী, বাঘ, ভাল্লক, হরিণ, বানর, গণ্ডার প্রভৃতি নিয়ে আসামের প্রাণী জগত গঠিত। এক খড়্গ বিশিষ্ট গণ্ডার আসামের অমূল্য সম্পদ। এই শ্রেণির গণ্ডার আসাম ছাড়া অন্য রাজ্যে দুর্লভ। তাই আসাম সরকার এদের সংরক্ষণের জন্য কাজিরাঙ্গার অভয়ারণ্যকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আসামের বনভূমিতে প্রায় ৭৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এদের মধ্যে ময়না, টিয়া, তােতা, শালিক, কিংগার, ধনেশ, শকুনী, বক প্রভৃতি পাখিই প্রধান।
খনিজ সম্পদ : খনিজ সম্পদে আসাম একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। আসামের প্রধানতম সম্পদ তার খনিজ তৈলের ভাণ্ডার। ভারতবর্ষে উত্তোলিত খনিজ তৈলের প্রায় সমস্তটুকুই আসাম হতে গৃহিত হয়। উত্তর আসামের ডিগবয় তৈলক্ষেত্রেই ভারতের বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র। স্বাধীন ভারতে আসামের ডিগবয়েই প্রথম তৈল শােধনাগার স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে আসামে চারটি তৈল শােধনাগার আছে। এগুলি হলাে ডিগবয়, নাহারকাটিয়া, মরিয়ানী ও নৃমলিগড়। খনিজ তৈল শােধন করে বিভিন্ন প্রকার প্রয়ােজনীয় সামগ্রী যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন করা হয়েছে। আসামে খনিজ কয়লার সম্পদ সুপ্রচুর। ডিগবয়ের পূর্বে অবস্থিত লিড়, শিবসাগর জিলার নাজিরা আসামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়লাক্ষেত্র।
উপসংহার : আসামের প্রকৃতির ভাণ্ডারে যে অমূল্য সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে, পরিবহনের অসুবিধার জন্য সেগুলি সম্পূর্ণরূপে বিনিয়ােগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করা যায় হয়তাে অদূর ভবিষ্যতে সকল প্রতিকূলতা, বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে আসামের সম্পদগুলি পূর্ণ বিনিয়ােগ হবে। ফলস্বরূপ : আসাম শিল্পে উন্নত হবে এবং আসামবাসী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাবলম্বী হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। সেদিন কবির স্বপ্ন স্বার্থক হবে এবং আমরা বলে উঠব – এমন দেশটি কোথাও
খােজে পাবে না গাে তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
Hridoy
আসামের প্রাকৃতিক সম্পদ
ভূমিকা : “ধন ধান্যে পুষ্পেভরা আমাদেরই বসুন্ধরা তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।”
এই ধন ধান্যে ও পুষ্পে ভরা সুজলা সুফলা ধরণীর উত্তর পর্ব সীমান্তে ক্ষুদ্র রাজ্য আসাম । প্রকৃতিদেবী নিজের কনিষ্ঠা কন্যাকে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে পূর্ণ করে দিয়েছেন। যাতায়াত ও পরিবহনের সুবিধার জন্য এই রাজ্য শিল্প-কারখানা দিক দিয়ে উন্নত না হলেও প্রাকৃতিক সম্পদে এই রাজ্যটিকে ধনী বলা যায়। পাহাড় পর্বত ও অরণ্যে পরিবেষ্টিত এই রাজ্যটি যেন প্রকৃতি দেবীর স্নেহ আঁচলের ছায়ায় আবৃত হয়ে রয়েছে। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অসমের ভূমি বৎসরের বেশ কিছটা বর্ষণসিক্ত অবস্থায় থাকে। যার ফলে নানান সম্পদে সমৃদ্ধ হয়েছে আসাম।
প্রাকৃতিক সম্পদের প্রকার : প্রকৃতি জাত সম্পদকেই প্রাকৃতিক সম্পদ বলে। প্রকৃতিবিদেরা এই সম্পদকে বনজ, খনিজ এবং প্রাণীজ এই তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। কৃষিজাত সম্পদগুলিও প্রাকৃতিক সম্পদের মধ্যে পড়ে।
বনজ সম্পদ : সকল সম্পদের মধ্যে আসামের বনজ সম্পদ বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। রাজ্যের ৩৫ শতাংশ বিস্তৃত এই বনাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে শাল, সেগুন, চাম, সুন্দী, শিশু, গামাই প্রভৃতি মূল্যবান বৃক্ষরাজি আসামের অর্থনীতির মূল চাবি কাঠি । এই রাজ্যের অরণ্য বাঁশ ও বেত উৎপাদনেও উল্লেখযােগ্য। আসামের বাঁশ-বেত আসামের কুটির শিল্পকে উন্নত করে তুলেছে। আসামের কাগজ কলগুলি চালু রাখতে আসামের বাঁশই যথেষ্ট। তুলা, লাক্ষা প্রভৃতিও আসামের বনজ সম্পদকে সমৃদ্ধ করে রেখেছে।
কৃষিজ সম্পদ : দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আসাম একটি বৃষ্টিবহুল রাজ্য বলে পরিচিত তাই এই অঞ্চলটি কৃষি প্রধান। ধান, পাট, কার্পাস, তিল, সরিষা, আলু, মাসকালাই, মুগ প্রভৃতি এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিজাত দ্রব্য। তাছাড়া রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল কমলা, কলা, আনারস, পেঁপে, পেয়ারা প্রভৃতি। অসমের চা জগৎ বিখ্যাত। উৎপাদনের প্রাচুর্যের জন্য পাট ও কার্পাস বিদেশেও রপ্তানি হয়ে থাকে। এণ্ডি ও মুগা প্রভৃতি গাছগুলি কেবলমাত্র অসমে জন্মে। তাই এ দুটি শিল্প আসামের একান্ত নিজস্ব সম্পদ। আসামের অনেক নদী, বিল, হাওরও আছে। এগুলির জলে নানা জাতের মাছ পাওয়া যায় ।
প্রাণীজ সম্পদ : প্রাণীজ সম্পদের মধ্যে অরণ্যজাত পশু-পাখিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাতী, বাঘ, ভাল্লক, হরিণ, বানর, গণ্ডার প্রভৃতি নিয়ে আসামের প্রাণী জগত গঠিত। এক খড়্গ বিশিষ্ট গণ্ডার আসামের অমূল্য সম্পদ। এই শ্রেণির গণ্ডার আসাম ছাড়া অন্য রাজ্যে দুর্লভ। তাই আসাম সরকার এদের সংরক্ষণের জন্য কাজিরাঙ্গার অভয়ারণ্যকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। তাছাড়া আসামের বনভূমিতে প্রায় ৭৫০ প্রজাতির পাখি আছে। এদের মধ্যে ময়না, টিয়া, তােতা, শালিক, কিংগার, ধনেশ, শকুনী, বক প্রভৃতি পাখিই প্রধান।
খনিজ সম্পদ : খনিজ সম্পদে আসাম একটি সমৃদ্ধ রাজ্য। আসামের প্রধানতম সম্পদ তার খনিজ তৈলের ভাণ্ডার। ভারতবর্ষে উত্তোলিত খনিজ তৈলের প্রায় সমস্তটুকুই আসাম হতে গৃহিত হয়। উত্তর আসামের ডিগবয় তৈলক্ষেত্রেই ভারতের বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র। স্বাধীন ভারতে আসামের ডিগবয়েই প্রথম তৈল শােধনাগার স্থাপিত হয়েছিল। বর্তমানে আসামে চারটি তৈল শােধনাগার আছে। এগুলি হলাে ডিগবয়, নাহারকাটিয়া, মরিয়ানী ও নৃমলিগড়। খনিজ তৈল শােধন করে বিভিন্ন প্রকার প্রয়ােজনীয় সামগ্রী যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন করা হয়েছে। আসামে খনিজ কয়লার সম্পদ সুপ্রচুর। ডিগবয়ের পূর্বে অবস্থিত লিড়, শিবসাগর জিলার নাজিরা আসামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কয়লাক্ষেত্র।
উপসংহার : আসামের প্রকৃতির ভাণ্ডারে যে অমূল্য সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে, পরিবহনের অসুবিধার জন্য সেগুলি সম্পূর্ণরূপে বিনিয়ােগ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশা করা যায় হয়তাে অদূর ভবিষ্যতে সকল প্রতিকূলতা, বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে আসামের সম্পদগুলি পূর্ণ বিনিয়ােগ হবে। ফলস্বরূপ : আসাম শিল্পে উন্নত হবে এবং আসামবাসী অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাবলম্বী হয়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। সেদিন কবির স্বপ্ন স্বার্থক হবে এবং আমরা বলে উঠব – এমন দেশটি কোথাও
খােজে পাবে না গাে তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।