রচনা: মাদার টেরেসা ও তার সমাজসেবা | bangla rachana mother teresa
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
বিশ্বজননী মা টেরেসা
ভূমিকা: মানব চরিত্রের শ্রেষ্ঠ গুণ সেবা ও প্রেম। সেবা ও প্রেম দিয়ে যারা পৃথিবীর মানব সমাজে অমরত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন মাদার টেরেসা তাদের মধ্যে অন্যতম। শৈশবকাল থেকে বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত তিনি ছিলেন মানবসেবায় নিয়ােজিত প্রাণ। রােগগ্রস্ত শােক সন্তপ্ত মানুষের কাছে তিনি দেবমূর্তি। তার সেবা যত্নে, আদর আর ভালবাসায় অগণিত মানুষ রােগ মুক্ত হয়ে স্বস্তি পেয়েছে, তার স্নেহধন্য হয়ে কেউ পরম সুখে জীবন যাপন করছে। আর্ত লােকদের অতি কাছের মানুষ ছিলেন মাদার টেরেসা।
জন্ম ও বাল্য জীবন : টেরেসা মায়ের নিজের দেশ ভারতবর্ষ, যদিও তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৯১০ খৃষ্টাব্দের ২৭শে আগষ্ট যুগােশ্লাভিয়ার স্কপেজ শহরের এক আলবেনীয় দম্পতির ঘরে। তার পূর্বনাম অ্যাগনেস গংক্সা বােজাক্সিউ। বাল্যকালে পড়াশুনা শুরু হয় একটি সরকারি বিদ্যালয়ে। স্কুলের পড়া-শুনা যেমন তার ভালাে লাগত তেমনি ভালাে লাগত সেবামূলক কাজ। স্কুলের শিক্ষিকার নিকট হতে জানতে পারেন যে সেবামলক কাজ করবার জন্য পথিবীতে বেশ কয়টি সংগঠন আছে। অ্যাগনেস মনে মনে স্থির করেন যে এ সব সংগঠনে যােগ দান করবেন। এর সঙ্গে এক অধ্যাত্ববােধও তার মনে বাসা বাঁধে, তাই মাত্র আঠারাে বছর বয়সে তিনি একটি খ্রিষ্টীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন।
কর্মজীবন : মিশনারির ব্রত নেওয়ার পর তার নাম রাখা হয় টেরেসা। তারপর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ডাবলিনের লরেটো অ্যাবেতে ভারতের বৈচিত্র্যময় জীবনের কথা শুনে তিনি ভারতবর্ষের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯২৮ খৃষ্টাব্দে মাদার ভারতে আসেন। প্রথমে মার্গারেট স্কুলে শিক্ষকতা, ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচালনা ও পরে অধ্যক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ওই শিক্ষকতার ফাকে বস্তির দুঃস্থ অসহায় মানুষের সেবা করতেন।
সেবায় নিজেকে নিয়ােগ : ১৯৪৬ খৃষ্টাব্দে দার্জিলিং যাত্রার পথে টেরেসার জীবনে এক ভাবান্তর দেখা যায়। শিক্ষকতা ছেড়ে তিনি একমাত্র সেবাব্রত গ্রহণে মনস্থ করেন। নীল পাড়যুক্ত সাদা সুতী শাড়ি পরিহিতা বিশ্বজননী মাদার এর এ সময় থেকে। শুরু হল জীবনের এক উজ্জ্বলতম অধ্যায়। ১৯৪৮ খৃষ্টাব্দে তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করেন। পাটনা থেকে নার্সিং ট্রেনিং নিয়ে তিনি এ বৎসরেই মতিঝিল বস্তিতে একটি বিদ্যালয় খুলেন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ‘মিশনারিজ অব চ্যারিটিজ’ প্রতিষ্ঠা। করেন। তাঁর শুভ প্রচেষ্টায় কলকাতার কালীঘাটে গড়ে উঠে মরণাপন্নদের জন্য আতুর ভবন নির্মল হৃদয়’। সােদপুরে ‘প্রেমনিবাস’, ‘নির্মলা কেনেডি কেন্দ্রের মতাে অগণিত প্রতিষ্ঠান দুঃস্থ, আতুর অসহায় মানুষের জন্য মাদার গড়ে তুলেন। ভারতের গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে আছে মাদাদের প্রতিষ্ঠান গুলি। ভারতে তার পরিচালিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫, দাতব্য চিকিৎসাকেন্দ্র দুই শতাধিক, কুষ্ঠ চিকিৎসাকেন্দ্র ৫৫টি। ভারতের বাইরেও তার সেবা প্রতিষ্ঠান ছড়িয়ে আছে।
সেবা কার্যের পুরস্কার : বিশ্বের নানাদেশ একের পর এক সম্মান ও স্বীকৃতি প্রদান করেছে মাদারকে। ১৯৬২ সালে ফিলিপাইন্স সরকার মাদারের জন্য ঘােষণা করেছে ম্যাগসেসে পুরস্কার। ওই বছরই ভারত সরকার তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৬৪ সালে পােপ জন পল তাকে একটি বহুমূল্য গাড়ি উপহার দেন। ওই দামি গাড়ি বিক্রি করে মাদার সেই টাকায় একটি কুষ্ঠাশ্রম গড়ে তােলেন। ১৯৭২ সালে পান নেহেরু পুরস্কার। ১৯৭৯ সালের ১৭ই অক্টোবর তিনি শান্তির জন্য নােবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮০ সালে প্রদত্ত হয় ভারত সরকারের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘ভারতরত্ন’।
আদর্শ : আত্ম প্রচার বিমুখ মা টেরেসা অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশবাসীর কাছে। সেবার এক নতুন আদর্শ গড়ে তুলেছিলেন। শুধু সেবা নয় তার সঙ্গে আন্তরিক ভালবাসায় মানুষকে কাছে টেনে এনেছেন। বাণী বা উপদেশ নয়, যে কোন অবস্থায় আর্তের পাশে দাড়িয়ে সেবা ও ভালবাসাই ছিল তার জীবনাদর্শ।
উপসংহার : ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর এই মহীয়সী নারী পঞ্জভতে বিলীন হয়ে যান। মানুষ হারাল তাদের বিশ্ব জননীকে। মহৎকাজে তাঁর সাধ ছিল, তাই সাদ্যের অকুলান হয়নি। তার সেবাদর্শ ও মানব প্রীতি সর্বকালের মানুষকে প্রেরণা ও শক্তি যোগায়।মূর্তিমতি সেবারূপা মা টেরেসা মানুষের মনিকোঠায় পূজিত ও বন্দিতা হবেন