সূচনাঃ মানব জীবনের প্রথম পর্যায় হলো শৈশব। আর শৈশবই হল মানব জীবনের অন্যতম অধ্যায়। প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে একটি শিশুকে নির্ভরশীল বলে মনে হলেও কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে ওই দেশের শিশুদের উপর। তাই ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে “today’s child is tomorrow’s citizen” অর্থাৎ আজকের শিশু কালকের নাগরিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রত্যেকটি শিশু প্রাথমিক সুযোগ সুবিধা, শিক্ষা ইত্যাদি পায় না। ওরা শিকার হয় বিভিন্ন অপব্যবহারের। আর তার মধ্যে অন্যতম একটি অপব্যবহার হল শিশুশ্রম।
শিশুশ্রমের সংজ্ঞাঃ
যে কোনো কাজ যা একটি শিশুর মর্যাদা, সম্ভাবনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তার শৈশব থেকে কেঁড়ে নেয় তাকে শিশুশ্রম বলা হয়। বা যে কোন কাজ যা একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাহত ঘটায় তাকে শিশুশ্রম বলা হয়।
আমাদের দেশে সরকারি নির্দেশমতে ১৪ বছর বয়সের অনূর্ধ্ব ছেলেমেয়েরা শিশু হিসেবে গণ্য। তাই ১৪ বছরের নিচের কোন শিশুকে দিয়ে যে কোনো কোথাও কাজ বা শ্রম নেওয়া শিশুশ্রম হিসাবে গণ্য হয়।
শিশুশ্রমের কারণঃ
শিশুদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার অন্যতম কারণ গুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশের একটি অন্যতম অংশ দরিদ্র শ্রেণীর। তাই পরিবারের অসচ্ছলতা দরিদ্রতা এবং উপার্জনকারী সদস্যের অকাল মৃত্যু একটি শিশুকে অল্প বয়সে কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুর পরিবারের শিক্ষা সম্পর্কে অসচেতনতা, অর্থের মোহ, অভিভাবকদের নৃশংস আচরণ একটি শিশুকে শ্রমজীবী হতে বাধ্য করে। তাছাড়াও সামাজিক বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা এবং অন্যান্য নানা কারণে শিশুরা অল্প বয়সেই শ্রমে লিপ্ত হয়।
ভারতবর্ষে শিশুশ্রমঃ
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে থাকা শ্রমিক গোষ্ঠীর মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য অংশ হলো “শিশু শ্রমিক” । এবং দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্বের মধ্যে ভারতেশিশু শ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। তবে ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী দারিদ্রতা, সামাজিক সুরক্ষাঁর অভাব ও দুর্বল অর্থনীতি। যার ফলে আজ লক্ষ লক্ষ শিশু বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, পারিবারিক কাজ, মোটর গ্যারেজে শ্রম এর জন্য বাধ্য।
শিশুশ্রমের নেতিবাচক প্রভাবঃ
শিশুশ্রম একটি অমানবিক কাজ। একটি শিশুর প্রকৃত ভাবে বেড়ে ওঠার সময় তাকে কাজের জন্য ঠেলে দেওয়া তার শৈশব কে কেড়ে নেয়া মোটেই কাম্য নয়। শিশুশ্রম এর ফলে একটি শিশুর দৈহিক মানসিক দুটো ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। একদিকে অনুপযুক্ত পরিবেশে কাজ করার দরুন তাকে রোগাক্রান্ত হতে হয় অন্যদিকে তারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম না করায় অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। এবং কাজের চাপে শিশুর মন ভারাক্রান্ত হয় ওরা জীবনের প্রথম ধাপেই ভেঙে উঠে। যার ফলে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।
শিশুশ্রম নিবারণে সরকারি আইন সামাজিক দায়বদ্ধতাঃ
পৃথিবী ব্যাপী বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রমিকদের মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভারত সরকার ও সমাজের অবহেলিত এবং শোষিত শিশু শ্রমিকদের কথা লক্ষ্য করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে। ভারতে আইন অনুযাযশিত১৪ বছরের নিচে থাকা কোন শিশুকে কারখানায়, বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ অবৈধ ও আইনত দণ্ডনীয়। তাছাড়াও শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন নিয়ম নীতি ও পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ সমাজের শিশুশ্রম সেই হিসাবে রাস পায়নি।
তাই শিশুশ্রম সমূলে নিবারণ করতে হলে দরকার শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা এবং দরিদ্র শ্রেণীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা। এতে প্রয়োজন সরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
উপসংহারঃ
শিশুশ্রম একটি সামাজিক সমস্যা এবং কুপ্রথা। তাই এর দূরীকরণ সরকার এবং সমাজকে মূল দায়িত্ব হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।
Hridoy
শিশুশ্রম
সূচনাঃ মানব জীবনের প্রথম পর্যায় হলো শৈশব। আর শৈশবই হল মানব জীবনের অন্যতম অধ্যায়। প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে একটি শিশুকে নির্ভরশীল বলে মনে হলেও কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠে ওই দেশের শিশুদের উপর। তাই ইংরেজিতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে “today’s child is tomorrow’s citizen” অর্থাৎ আজকের শিশু কালকের নাগরিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত প্রত্যেকটি শিশু প্রাথমিক সুযোগ সুবিধা, শিক্ষা ইত্যাদি পায় না। ওরা শিকার হয় বিভিন্ন অপব্যবহারের। আর তার মধ্যে অন্যতম একটি অপব্যবহার হল শিশুশ্রম।
শিশুশ্রমের সংজ্ঞাঃ
যে কোনো কাজ যা একটি শিশুর মর্যাদা, সম্ভাবনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাবে তার শৈশব থেকে কেঁড়ে নেয় তাকে শিশুশ্রম বলা হয়। বা যে কোন কাজ যা একটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ব্যাহত ঘটায় তাকে শিশুশ্রম বলা হয়।
আমাদের দেশে সরকারি নির্দেশমতে ১৪ বছর বয়সের অনূর্ধ্ব ছেলেমেয়েরা শিশু হিসেবে গণ্য। তাই ১৪ বছরের নিচের কোন শিশুকে দিয়ে যে কোনো কোথাও কাজ বা শ্রম নেওয়া শিশুশ্রম হিসাবে গণ্য হয়।
শিশুশ্রমের কারণঃ
শিশুদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করার অন্যতম কারণ গুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত কারণ পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশের একটি অন্যতম অংশ দরিদ্র শ্রেণীর। তাই পরিবারের অসচ্ছলতা দরিদ্রতা এবং উপার্জনকারী সদস্যের অকাল মৃত্যু একটি শিশুকে অল্প বয়সে কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য করে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুর পরিবারের শিক্ষা সম্পর্কে অসচেতনতা, অর্থের মোহ, অভিভাবকদের নৃশংস আচরণ একটি শিশুকে শ্রমজীবী হতে বাধ্য করে। তাছাড়াও সামাজিক বিপর্যয়, সাম্প্রদায়িকতা এবং অন্যান্য নানা কারণে শিশুরা অল্প বয়সেই শ্রমে লিপ্ত হয়।
ভারতবর্ষে শিশুশ্রমঃ
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রে থাকা শ্রমিক গোষ্ঠীর মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য অংশ হলো “শিশু শ্রমিক” । এবং দুর্ভাগ্যক্রমে বিশ্বের মধ্যে ভারতেশিশু শ্রমিকের সংখ্যা সব থেকে বেশি। তবে ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দায়ী দারিদ্রতা, সামাজিক সুরক্ষাঁর অভাব ও দুর্বল অর্থনীতি। যার ফলে আজ লক্ষ লক্ষ শিশু বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্র থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁ, পারিবারিক কাজ, মোটর গ্যারেজে শ্রম এর জন্য বাধ্য।
শিশুশ্রমের নেতিবাচক প্রভাবঃ
শিশুশ্রম একটি অমানবিক কাজ। একটি শিশুর প্রকৃত ভাবে বেড়ে ওঠার সময় তাকে কাজের জন্য ঠেলে দেওয়া তার শৈশব কে কেড়ে নেয়া মোটেই কাম্য নয়। শিশুশ্রম এর ফলে একটি শিশুর দৈহিক মানসিক দুটো ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়। একদিকে অনুপযুক্ত পরিবেশে কাজ করার দরুন তাকে রোগাক্রান্ত হতে হয় অন্যদিকে তারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া বিশ্রাম না করায় অপুষ্টি ও রক্তশূন্যতায় ভোগে। এবং কাজের চাপে শিশুর মন ভারাক্রান্ত হয় ওরা জীবনের প্রথম ধাপেই ভেঙে উঠে। যার ফলে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়।
শিশুশ্রম নিবারণে সরকারি আইন সামাজিক দায়বদ্ধতাঃ
পৃথিবী ব্যাপী বিভিন্ন দেশে শিশুশ্রমিকদের মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভারত সরকার ও সমাজের অবহেলিত এবং শোষিত শিশু শ্রমিকদের কথা লক্ষ্য করে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছে। ভারতে আইন অনুযাযশিত১৪ বছরের নিচে থাকা কোন শিশুকে কারখানায়, বা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ অবৈধ ও আইনত দণ্ডনীয়। তাছাড়াও শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন নিয়ম নীতি ও পরিকল্পনা সরকার হাতে নিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ সমাজের শিশুশ্রম সেই হিসাবে রাস পায়নি।
তাই শিশুশ্রম সমূলে নিবারণ করতে হলে দরকার শিক্ষার প্রসার, সচেতনতা এবং দরিদ্র শ্রেণীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা। এতে প্রয়োজন সরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি।
উপসংহারঃ
শিশুশ্রম একটি সামাজিক সমস্যা এবং কুপ্রথা। তাই এর দূরীকরণ সরকার এবং সমাজকে মূল দায়িত্ব হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।