সিঁড়ি (সুকান্ত ভট্টাচার্য ) কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু
সুকান্ত ভট্টাচার্য দুঃখী-দরিদ্র সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখেছেন অধিকাংশ কবিতা। এসব কবিতার মধ্যে কিছু কবিতা আছে যা রূপকধর্মী। এগুলোতে অন্য বস্তুর রূপক-প্রতীকে কবি দরিদ্র-নিঃস্ব মানুষের বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এসব কবিতার মধ্যে সিঁড়ি, একটি মোরগের কাহিনী, কলম, সিগারেট, দেশলাই কাঠি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব কবিতার রূপকের আড়ালে সুকান্ত তার প্রতিবাদী আওয়াজ কে তুলে ধরেছেন।
“সিঁড়ি” কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সিঁড়ি কে দরিদ্র শ্রেণীর রূপক হিসাবে দেখিয়েছেন। যেভাবে সিঁড়িতে করে মানুষ উপরের দিকে উঠে যায় তেমনি সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষেরা বা বিত্তশালী মানুষেরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের কে শোষণ করে উপরে উঠে। তারপর আর ফিরে তাকায় না এই মানুষগুলোর দিকে। তাই যেভাবে একটি সিঁড়ি ক্ষতবিক্ষত হয় এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ গুলি শোষিত হয় নিরন্তর। যার ফলে তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জীবনে লেগেই থাকে।
তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।
যেভাবে সিঁড়ির আবরণ নষ্ট হলে কার্পেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয় ঠিক সেইরকম দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের দুঃখগুলোকে কেউই প্রাধান্য দেয় না। দরিদ্র মানুষগুলি কোন প্রতিবাদ করে না বলেই বিত্তশালীরা তাদের শোষণ চালিয়ে যায় অবিরত। মজুররা যাতে প্রতিবাদী হয়ে না ওঠে এবং এই প্রতিবাদ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই সব সময় এদের গলা চাপিয়ে রাখা হয়। তাই এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশা কেউই দেখতে পায় না।
আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।
কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য হুংকার ছেড়ে বলছেন এই অত্যাচার আর বেশিদিন টিকবে না। বিশ্ববাসীর কাছে আর চাপা থাকবে না চিরদিন।এই নির্মম অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশার সমাপ্তি ঘটতেই হবে যেমনটা হয়েছিল সম্রাট হুমায়ুনের।
চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
চাপা থাকবে না।
আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
এই কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সমাজের দুইটি শ্রেণী ধনী এবং দরিদ্রের কথা উল্লেখ করেছেন। ধনীদের অত্যাচার আর শোষণের জন্যই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের আজ এই অবস্থা। কেউ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের হাল ধরতে চায় না। তাদের উন্নতির কথা কেউ চিন্তা করে না। তাদেরকে শুধুমাত্র কাজে লাগিয়ে যায় বিত্তশালীরা। এতে করে সমাজে সৃষ্টি হয় পার্থক্য, দ্বন্দ্ব। কিন্তু কবি সর্বশেষে বলেছেন যে বিত্তশালীর অত্যাচার ও অন্যায় চিরকাল চাপা থাকবে না বরং এর সমাপ্তি ঘটবে, বিত্তশালীদের পদস্খলন অনিবার্য।
____________
সিঁড়ি
আমরা সিঁড়ি,
তোমরা আমাদের মাড়িয়ে
প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,
তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে;
তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।
তোমরাও তা জানো,
তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষত
ঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকে
আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।
তবুও আমরা জানি,
চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
চাপা থাকবে না।
আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
আর সম্রাট হুমায়ুনের মতো
একদিন তোমাদেরও হতে পারে পদস্খলন।।
Hridoy
সিঁড়ি (সুকান্ত ভট্টাচার্য ) কবিতার সারমর্ম ও বিষয়বস্তু
সুকান্ত ভট্টাচার্য দুঃখী-দরিদ্র সাধারণ মানুষকে নিয়ে লিখেছেন অধিকাংশ কবিতা। এসব কবিতার মধ্যে কিছু কবিতা আছে যা রূপকধর্মী। এগুলোতে অন্য বস্তুর রূপক-প্রতীকে কবি দরিদ্র-নিঃস্ব মানুষের বেদনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এসব কবিতার মধ্যে সিঁড়ি, একটি মোরগের কাহিনী, কলম, সিগারেট, দেশলাই কাঠি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসব কবিতার রূপকের আড়ালে সুকান্ত তার প্রতিবাদী আওয়াজ কে তুলে ধরেছেন।
“সিঁড়ি” কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সিঁড়ি কে দরিদ্র শ্রেণীর রূপক হিসাবে দেখিয়েছেন। যেভাবে সিঁড়িতে করে মানুষ উপরের দিকে উঠে যায় তেমনি সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষেরা বা বিত্তশালী মানুষেরা দরিদ্র শ্রেণীর মানুষদের কে শোষণ করে উপরে উঠে। তারপর আর ফিরে তাকায় না এই মানুষগুলোর দিকে। তাই যেভাবে একটি সিঁড়ি ক্ষতবিক্ষত হয় এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ গুলি শোষিত হয় নিরন্তর। যার ফলে তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা জীবনে লেগেই থাকে।
তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।
যেভাবে সিঁড়ির আবরণ নষ্ট হলে কার্পেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয় ঠিক সেইরকম দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের দুঃখগুলোকে কেউই প্রাধান্য দেয় না। দরিদ্র মানুষগুলি কোন প্রতিবাদ করে না বলেই বিত্তশালীরা তাদের শোষণ চালিয়ে যায় অবিরত। মজুররা যাতে প্রতিবাদী হয়ে না ওঠে এবং এই প্রতিবাদ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই সব সময় এদের গলা চাপিয়ে রাখা হয়। তাই এই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশা কেউই দেখতে পায় না।
আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।
কিন্তু কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য হুংকার ছেড়ে বলছেন এই অত্যাচার আর বেশিদিন টিকবে না। বিশ্ববাসীর কাছে আর চাপা থাকবে না চিরদিন।এই নির্মম অত্যাচার আর দুঃখ-দুর্দশার সমাপ্তি ঘটতেই হবে যেমনটা হয়েছিল সম্রাট হুমায়ুনের।
চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
চাপা থাকবে না।
আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
এই কবিতায় সুকান্ত ভট্টাচার্য সমাজের দুইটি শ্রেণী ধনী এবং দরিদ্রের কথা উল্লেখ করেছেন। ধনীদের অত্যাচার আর শোষণের জন্যই দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের আজ এই অবস্থা। কেউ দরিদ্র শ্রেণীর মানুষের হাল ধরতে চায় না। তাদের উন্নতির কথা কেউ চিন্তা করে না। তাদেরকে শুধুমাত্র কাজে লাগিয়ে যায় বিত্তশালীরা। এতে করে সমাজে সৃষ্টি হয় পার্থক্য, দ্বন্দ্ব। কিন্তু কবি সর্বশেষে বলেছেন যে বিত্তশালীর অত্যাচার ও অন্যায় চিরকাল চাপা থাকবে না বরং এর সমাপ্তি ঘটবে, বিত্তশালীদের পদস্খলন অনিবার্য।
____________
সিঁড়ি
আমরা সিঁড়ি,
তোমরা আমাদের মাড়িয়ে
প্রতিদিন অনেক উঁচুতে উঠে যাও,
তারপর ফিরেও তাকাও না পিছনের দিকে;
তোমাদের পদধূলিধন্য আমাদের বুক
পদাঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় প্রতিদিন।
তোমরাও তা জানো,
তাই কার্পেটে মুড়ে রাখতে চাও আমাদের বুকের ক্ষত
ঢেকে রাখতে চাও তোমাদের অত্যাচারের চিহ্নকে
আর চেপে রাখতে চাও পৃথিবীর কাছে
তোমাদের গর্বোদ্ধত, অত্যাচারী পদধ্বনি।
তবুও আমরা জানি,
চিরকাল আর পৃথিবীর কাছে
চাপা থাকবে না।
আমাদের দেহে তোমাদের এই পদাঘাত।
আর সম্রাট হুমায়ুনের মতো
একদিন তোমাদেরও হতে পারে পদস্খলন।।