1. This answer was edited.

    ব্যক্তিত্বের বিকাশ ফ্রয়েড জন্ম হতে প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত সময়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সর্বমোট পাঁচটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ হয়। সেগুলি হল নিম্নরুপঃ   মৌখিক পর্যায় (oral stage) জন্ম – ১২/১৮ মাস পায়ু পর্যায় (anal stage) ১ - ৩ বছর শিশ্ন বা লিঙ্গ পর্যায় (phallRead more

    ব্যক্তিত্বের বিকাশ

    ফ্রয়েড জন্ম হতে প্রাপ্ত বয়স পর্যন্ত সময়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন। তাঁর মতে মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশ সর্বমোট পাঁচটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে সম্পূর্ণ হয়। সেগুলি হল নিম্নরুপঃ  

    1. মৌখিক পর্যায় (oral stage) জন্ম – ১২/১৮ মাস
    2. পায়ু পর্যায় (anal stage) ১ – ৩ বছর
    3. শিশ্ন বা লিঙ্গ পর্যায় (phallic stage) ৩ – ৬ বছর
    4. সুপ্তযৌন পর্যায় (latency stage) ৬ – কৈশোর
    5. উপস্থ বা জনন পর্যায় (genital stage) কৈশোর – মৃত্যুকাল
    See less
    • -1
  2. This answer was edited.

    ➣ সাধারণত আমাদের কাছে ব্যক্তিত্ব মানে হল একজন মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করার মত গুণ। এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মনে তাঁর গুনাগুন দিয়ে যে সামগ্রিক ছাপ অঙ্কিত করে তাই হলাে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব। আর এই সামগ্রিক ছাপ নেতিবাচক বা ইতিবাচক দুই ধরণের হতে পারে তাই আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব দেখRead more

    ➣ সাধারণত আমাদের কাছে ব্যক্তিত্ব মানে হল একজন মানুষের চিত্ত আকর্ষণ করার মত গুণ। এক ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির মনে তাঁর গুনাগুন দিয়ে যে সামগ্রিক ছাপ অঙ্কিত করে তাই হলাে সেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব। আর এই সামগ্রিক ছাপ নেতিবাচক বা ইতিবাচক দুই ধরণের হতে পারে তাই আমরা বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব দেখতে পাই। আমরা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পছন্দ করি আবার কখনো পছন্দ করি না।

    ➣ ব্যক্তির সাথে সমাজের বিভিন্ন উপাদানের পারস্পরিক প্রতিক্রিয়ার ফলেই ব্যক্তিত্বের উদ্ভব হয়। তাই ব্যক্তিত্বের মূল্যায়নের ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট ধারণা করা কঠিন। সেই জন্য বিভিন্ন মনােবিজ্ঞানী ব্যক্তিত্বের বিভিন্ন সংজ্ঞা দিয়েছেন।  

    -বিজ্ঞানী Warren এর মতে, ব্যক্তিত্ব হলাে কোন ব্যক্তির চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছ এবং শারীরিক বৈশিষ্টসমূহের সমন্বিত সংগঠন, যা এক ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তি থেকে পৃথক করে ।

    -বিজ্ঞানী Allport বলেন, ‘ব্যক্তিত্ব হলাে ব্যক্তির মনে দৈহিক প্রতিক্রিয়াসমূহের এক গতিময় সংগঠন যা পরিবেশের সাথে তার উপযােগ স্থাপনের স্বকীয় ধরণ নির্ধারিত করে’

    -Woodworth এবং Marquis এর মতে, ‘ব্যক্তিত্ব হচ্ছে ব্যক্তির আচরণের ধরণ, যা তার চিন্তা ও প্রকাশভঙ্গী মনােভাব ও আগ্রহ, কর্মপ্রক্রিয়া ও ব্যক্তিগত জীবন দর্শনের মাঝে প্রকাশ পায়’।

    See less
    • 0
  3. বলাই - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে-- আমাদের বাঘ-গোরRead more

    বলাই – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

    মানুষের জীবনটা পৃথিবীর নানা জীবের ইতিহাসের নানা পরিচ্ছেদের উপসংহারে, এমন একটা কথা আছে। লোকালয়ে মানুষের মধ্যে আমরা নানা জীবজন্তুর প্রচ্ছন্ন পরিচয় পেয়ে থাকি, সে কথা জানা। বস্তুত আমরা মানুষ বলি সেই পদার্থকে যেটা আমাদের ভিতরকার সব জীবজন্তুকে মিলিয়ে এক করে নিয়েছে– আমাদের বাঘ-গোরুকে এক খোঁয়াড়ে দিয়েছে পুরে, অহি-নকুলকে এক খাঁচায় ধরে রেখেছে। যেমন রাগিনী বলি তাকেই যা আপনার ভিতরকার সমুদয় সা-রে-গা-মা-গুলোকে সংগীত করে তোলে, তার পর থেকে তাদের আর গোলমাল করবার সাধ্য থাকে না। কিন্তু, সংগীতের ভিতরে এক-একটি সুর অন্য সকল সুরকে ছাড়িয়ে বিশেষ হয়ে ওঠে– কোনোটাতে মধ্যম, কোনোটাতে কোমলগান্ধার, কোনোটাতে পঞ্চম।

     

    আমার ভাইপো বলাই– তার প্রকৃতিতে কেমন করে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়ে-চড়ে বেড়ানো নয়। পুবদিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে; ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ। ছাদের উপর বিকেল-বেলাকার রোদ্‌দুর পড়ে আসে, গা খুলে বেড়ায়; সমস্ত আকাশ থেকে যেন কী একটা সংগ্রহ করে নেয়। মাঘের শেষে আমের বোল ধরে, তার একটা নিবিড় আনন্দ জেগে ওঠে ওর রক্তের মধ্যে, একটা কিসের অব্যক্ত স্মৃতিতে; ফাল্গুনে পুষ্পিত শালবনের মতোই ওর অন্তর-প্রকৃতিটা চার দিকে বিস্তৃত হয়ে ওঠে, ভরে ওঠে, তাতে একটা ঘন রঙ লাগে। তখন ওর একলা বসে বসে আপন মনে কথা কইতে ইচ্ছে করে, যা-কিছু গল্প শুনেছে সব নিয়ে জোড়াতাড়া দিয়ে; অতি পুরানো বটের কোটরে বাসা বেঁধে আছে যে একজোড়া অতি পুরানো পাখি, বেঙ্গমা বেঙ্গমী, তাদের গল্প। ওই ড্যাবা-ড্যাবা-চোখ-মেলে-সর্বদা-তাকিয়ে-থাকা ছেলেটা বেশি কথা কইতে পারে না। তাই ওকে মনে মনে অনেক বেশি ভাবতে হয়। ওকে একবার পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছিলুম। আমাদের বাড়ির সামনে ঘন সবুজ ঘাস পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে পর্যন্ত নেবে গিয়েছে, সেইটে দেখে আর ওর মন ভারি খুশি হয়ে ওঠে। ঘাসের আস্তরণটা একটা স্থির পদার্থ তা ওর মনে হয় না; ওর বোধ হয়, যেন ওই ঘাসের পুঞ্জ একটা গড়িয়ে-চলা খেলা, কেবলই গড়াচ্ছে; প্রায়ই তারই সেই ঢালু বেয়ে ও নিজেও গড়াত– সমস্ত দেহ দিয়ে ঘাস হয়ে উঠত– গড়াতে গড়াতে ঘাসের আগায় ওর ঘাড়ের কাছে সুড়সুড়ি লাগত আর ও খিলখিল করে হেসে উঠত।

     

    রাত্রে বৃষ্টির পরে প্রথম সকালে সামনের পাহাড়ের শিখর দিয়ে কাঁচা সোনারঙের রোদ্‌দুর দেবদারুবনের উপরে এসে পড়ে– ও কাউকে না বলে আস্তে আস্তে গিয়ে সেই দেবদারুবনের নিস্তব্ধ ছায়াতলে একলা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, গা ছমছম করে– এই সব প্রকাণ্ড গাছের ভিতরকার মানুষকে ও যেন দেখতে পায়। তারা কথা কয় না, কিন্তু সমস্তই যেন জানে। তারা-সব যেন অনেক কালের দাদামশায়, ‘এক যে ছিল রাজা’দের আমলের।

     

    ওর ভাবে-ভোলা চোখটা কেবল যে উপরের দিকেই তা নয়, অনেক সময় দেখেছি, ও আমার বাগানে বেড়াচ্ছে মাটির দিকে কী খুঁজে খুঁজে। নতুন অঙ্কুরগুলো তাদের কোঁকড়ানো মাথাটুকু নিয়ে আলোতে ফুটে উঠছে এই দেখতে তার ঔৎসুক্যের সীমা নেই। প্রতিদিন ঝুঁকে পড়ে পড়ে তাদেরকে যেন জিজ্ঞাসা করে, ‘তার পরে? তার পরে? তার পরে?’ তারা ওর চির-অসমাপ্ত গল্প। সদ্য গজিয়ে-ওঠা কচি কচি পাতা, তাদের সঙ্গে ওর কী যে একটা বয়স্যভাব তা ও কেমন করে প্রকাশ করবে? তারাও ওকে কী একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবার জন্য আঁকুপাঁকু করে। হয়তো বলে, ‘তোমার নাম কী।’ হয়তো বলে, ‘তোমার মা কোথায় গেল।’ বলাই মনে মনে উত্তর করে, ‘আমার মা তো নেই।’

     

    কেউ গাছের ফুল তোলে এইটে ওর বড়ো বাজে। আর-কারও কাছে ওর এই সংকোচের কোনো মানে নেই, এটাও সে বুঝেছে। এইজন্যে ব্যথাটা লুকোতে চেষ্টা করে। ওর বয়সের ছেলেগুলো গাছে ঢিল মেরে মেরে আমলকি পাড়ে, ও কিছু বলতে পারে না, সেখান থেকে মুখ ফিরিয়ে চলে যায়। ওর সঙ্গীরা ওকে খ্যাপাবার জন্যে বাগানের ভিতর দিয়ে চলতে চলতে ছড়ি দিয়ে দু পাশের গাছগুলোকে মারতে মারতে চলে, ফস্‌ ক’রে বকুলগাছের একটা ডাল ভেঙে নেয়– ওর কাঁদতে লজ্জা করে পাছে সেটাকে কেউ পাগলামি মনে করে। ওর সব-চেয়ে বিপদের দিন, যেদিন ঘাসিয়াড়া ঘাস কাটতে আসে। কেননা, ঘাসের ভিতরে ভিতরে ও প্রত্যহ দেখে দেখে বেড়িয়েছে– এতটুকু-টুকু লতা, বেগনি হল্‌দে নামহারা ফুল, অতি ছোটো ছোটো; মাঝে মাঝে কন্টিকারি গাছ, তার নীল নীল ফুলের বুকের মাঝখানটিতে ছোট্ট একটুখানি সোনার ফোঁটা; বেড়ার কাছে কাছে কোথাও-বা কালমেঘের লতা, কোথাও-বা অনন্তমূল; পাখিতে-খাওয়া নিমফলের বিচি পড়ে ছোটো ছোটো চারা বেরিয়েছে, কী সুন্দর তার পাতা– সমস্তই নিষ্ঠুর নিড়নি দিয়ে দিয়ে নিড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বাগানের শৌখিন গাছ নয়, তাদের নালিশ শোনবার কেউ নেই।

     

    এক-একদিন ওর কাকির কোলে এসে বসে তার গলা জড়িয়ে বলে, ‘ওই ঘাসিয়ারাকে বলো-না, আমার ওই গাছগুলো যেন না কাটে।’

     

    কাকি বলে, ‘বলাই, কী যে পাগলের মতো বকিস। ও যে সব জঙ্গল, সাফ না করলে চলবে কেন।’

     

    বলাই অনেকদিন থেকে বুঝতে পেরেছিল, কতকগুলো ব্যথা আছে যা সম্পূর্ণ ওর একলারই– ওর চার দিকের লোকের মধ্যে তার কোনো সাড়া নেই।

     

    এই ছেলের আসল বয়স সেই কোটি বৎসর আগেকার দিনে, যেদিন সমুদ্রের গর্ভ থেকে নতুন-জাগা পঙ্কস্তরের মধ্যে পৃথিবীর ভাবী অরণ্য আপনার জন্মের প্রথম ক্রন্দন উঠিয়েছে– সেদিন পশু নেই, পাখি নেই, জীবনের কলরব নেই, চার দিকে পাথর আর পাঁক আর জল। কালের পথে সমস্ত জীবের অগ্রগামী গাছ, সূর্যের দিকে জোড় হাত তুলে বলেছে, ‘আমি থাকব, আমি বাঁচব, আমি চিরপথিক, মৃত্যুর পর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্তহীন প্রাণের বিকাশতীর্থে যাত্রা করব রৌদ্রে-বাদলে, দিনে-রাত্রে।’ গাছের সেই রব আজও উঠছে বনে বনে, পর্বত প্রান্তরে, তাদেরই শাখায় পত্রে ধরণীর প্রাণ বলে বলে উঠছে, ‘আমি থাকব, আমি থাকব।’ বিশ্বপ্রাণের মূক ধাত্রী এই গাছ নিরবচ্ছিন্ন কাল ধরে দ্যুলোককে দোহন করে; পৃথিবীর অমৃতভাণ্ডারের জন্যে প্রাণের তেজ, প্রাণের রস, প্রাণের লাবণ্য সঞ্চয় করে; আর উৎকণ্ঠিত প্রাণের বাণীকে অহর্নিশি আকাশে উচ্ছ্বসিত করে তোলে, ‘আমি থাকব।’ সেই বিশ্বপ্রাণের বাণী কেমন-এক-রকম করে আপনার রক্তের মধ্যে শুনতে পেয়েছিল ওই বলাই। আমরা তাই নিয়ে খুব হেসেছিলুম।

     

    একদিন সকালে একমনে খবরের কাগজ পড়ছি, বলাই আমাকে ব্যস্ত করে ধরে নিয়ে গেল বাগানে। এক জায়গায় একটা চারা দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করলে, ‘কাকা, এ গাছটা কী।’

     

    দেখলুম একটা শিমুলগাছের চারা বাগানের খোওয়া-দেওয়া রাস্তার মাঝখানেই উঠেছে।

     

    হায় রে, বলাই ভুল করেছিল আমাকে ডেকে নিয়ে এসে। এতটুকু যখন এর অঙ্কুর বেরিয়েছিল, শিশুর প্রথম প্রলাপটুকুর মতো, তখনই এটা বলাইয়ের চোখে পড়েছে। তার পর থেকে বলাই প্রতিদিন নিজের হাতে একটু একটু জল দিয়েছে, সকালে বিকেলে ক্রমাগতই ব্যগ্র হয়ে দেখেছে কতটুকু বাড়ল। শিমুলগাছ বাড়েও দ্রুত, কিন্তু বলাইয়ের আগ্রহের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। যখন হাত দুয়েক উঁচু হয়েছে তখন ওর পত্রসমৃদ্ধি দেখে ভাবলে এ একটা আশ্চর্য গাছ, শিশুর প্রথম বুদ্ধির আভাস দেখবামাত্র মা যেমন মনে করে আশ্চর্য শিশু। বলাই ভাবলে, আমাকেও চমৎকৃত করে দেবে।

     

    আমি বললুম, ‘মালীকে বলতে হবে, এটা উপড়ে ফেলে দেবে।’

     

    বলাই চমকে উঠল। এ কী দারুণ কথা! বললে, ‘না, কাকা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, উপড়ে ফেলো না।’

     

    আমি বললুম, ‘কী যে বলিস তার ঠিক নেই। একেবারে রাস্তার মাঝখানে উঠেছে। বড়ো হলে চার দিকে তুলো ছড়িয়ে অস্থির করে দেবে।’

     

    আমার সঙ্গে যখন পারলে না, এই মাতৃহীন শিশুটি গেল তার কাকির কাছে। কোলে বসে তার গলা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললে, ‘কাকি, তুমি কাকাকে বারণ করে দাও, গাছটা যেন না কাটেন।’

     

    উপায়টা ঠিক ঠাওরেছিল। ওর কাকি আমাকে ডেকে বললে, ‘ওগো, শুনছ। আহা, ওর গাছটা রেখে দাও।’

     

    রেখে দিলুম। গোড়ায় বলাই না যদি দেখাত তবে হয়তো ওটা আমার লক্ষ্যই হত না। কিন্তু, এখন রোজই চোখে পড়ে। বছরখানেকের মধ্যে গাছটা নির্লজ্জের মতো মস্ত বেড়ে উঠল। বলাইয়ের এমন হল, এই গাছটার ‘পরেই তার সব-চেয়ে স্নেহ।

     

    গাছটাকে প্রতিদিনই দেখাচ্ছে নিতান্ত নির্বোধের মতো। একটা অজায়গায় এসে দাঁড়িয়ে কাউকে খাতির নেই, একেবারে খাড়া লম্বা হয়ে উঠছে। যে দেখে সেই ভাবে, এটা এখানে কী করতে! আরও দু-চারবার এর মৃত্যুদণ্ডের প্রস্তাব করা গেল। বলাইকে লোভ দেখালুম, এর বদলে খুব ভালো কতকগুলো গোলাপের চারা আনিয়ে দেব।

     

    বললেম, ‘নিতান্তই শিমুলগাছই যদি তোমার পছন্দ, তবে আর-একটা চারা আনিয়ে বেড়ার ধারে পুঁতে দেব, সুন্দর দেখতে হবে।’

     

    কিন্তু কাটবার কথা বললেই বলাই আঁতকে ওঠে, আর ওর কাকি বলে, ‘আহা, এমনিই কী খারাপ দেখতে হয়েছে!’

     

    আমার বউদিদির মৃত্যু হয়েছে যখন এই ছেলেটি তাঁর কোলে। বোধ করি সেই শোকে দাদার খেয়াল গেল, তিনি বিলেতে এঞ্জিনিয়ারিং শিখতে গেলেন। ছেলেটি আমার নিঃসন্তান ঘরে কাকির কোলেই মানুষ। বছর দশেক পরে দাদা ফিরে এসে বলাইকে বিলাতি কায়দায় শিক্ষা দেবেন বলে প্রথমে নিয়ে গেলেন সিমলেয়– তার পরে বিলেত নিয়ে যাবার কথা।

     

    কাঁদতে কাঁদতে কাকির কোল ছেড়ে বলাই চলে গেল, আমাদের ঘর হল শূন্য।

     

    তার পরে দু বছর যায়। ইতিমধ্যে বলাইয়ের কাকি গোপনে চোখের জল মোছেন, আর বলাইয়ের শূন্য শোবার ঘরে গিয়ে তার ছেঁড়া একপাটি জুতো, তার রবারের ফাটা গোলা, আর জানোয়ারের গল্পওয়ালা ছবির বই নাড়েন-চাড়েন; এতদিনে এই-সব চিহ্নকে ছাড়িয়ে গিয়ে বলাই অনেক বড়ো হয়ে উঠেছে, এই কথা বসে বসে চিন্তা করেন।

     

    কোনো এক সময়ে দেখলুম, লক্ষ্মীছাড়া শিমুলগাছটার বড়ো বাড় বেড়েছে– এতদূর অসংগত হয়ে উঠেছে যে, আর প্রশ্রয় দেওয়া চলে না। এক সময়ে দিলুম তাকে কেটে।

     

    এমন সময়ে সিমলে থেকে বলাই তার কাকিকে এক চিঠি পাঠালে, ‘কাকি, আমার সেই শিমুলগাছের একটা ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দাও।’

     

    বিলেত যাবার পূর্বে একবার আমাদের কাছে আসবার কথা ছিল, সে আর হল না। তাই বলাই তার বন্ধুর ছবি নিয়ে যেতে চাইলে।

     

    তার কাকি আমাকে ডেকে বললেন, ‘ওগো শুনছ, একজন ফোটোগ্রাফওয়ালা ডেকে আনো।’

     

    জিজ্ঞাসা করলুম, ‘কেন।’

     

    বলাইয়ের কাঁচা হাতের লেখা চিঠি আমাকে দেখতে দিলেন।

     

    আমি বললেম, ‘সে গাছ তো কাটা হয়ে গেছে।’

     

    বলাইয়ের কাকি দুদিন অন্ন গ্রহণ করলেন না, আর অনেকদিন পর্যন্ত আমার সঙ্গে একটি কথাও কন নি। বলাইয়ের বাবা ওকে তাঁর কোল থেকে নিয়ে গেল, সে যেন ওঁর নাড়ী ছিঁড়ে; আর ওর কাকা তাঁর বলাইয়ের ভালোবাসার গাছটিকে চিরকালের মতো সরিয়ে দিলে, তাতেও ওঁর যেন সমস্ত সংসারকে বাজল, তাঁর বুকের মধ্যে ক্ষত করে দিলে।

     

    ঐ গাছ যে ছিল তাঁর বলাইয়ের প্রতিরূপ, তারই প্রাণের দোসর।

    See less
    • 0
  4. আয় আয় চাঁদ মামা আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা। ধান ভানলে কুঁড়ো দেব মাছ কাটলে মুড়ো দেব কাল গাইয়ের দুধ দেব দুধ খাবার বাটি দেব চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।   Aay Aay Chand Mama Lyrics: Aay Aay Chand Mama Tip diye ja Chader kopale chand tip diye ja Dhan banleRead more

    আয় আয় চাঁদ মামা

    আয় আয় চাঁদ মামা
    টিপ দিয়ে যা
    চাঁদের কপালে চাঁদ
    টিপ দিয়ে যা।
    ধান ভানলে কুঁড়ো দেব
    মাছ কাটলে মুড়ো দেব
    কাল গাইয়ের দুধ দেব
    দুধ খাবার বাটি দেব
    চাঁদের কপালে চাঁদ
    টিপ দিয়ে যা।

     

    Aay Aay Chand Mama Lyrics:

    Aay Aay Chand Mama
    Tip diye ja
    Chader kopale chand
    tip diye ja
    Dhan banle kuro debo
    Mach katle muro debo
    Kalo gaiyer dudh debo
    Dudh khabar bati debo
    Chader kopale chand
    tip diye ja

    See less
    • 1
  5. ঘুমপাড়ানী মাসি পিসি ঘুমপাড়ানী মাসি পিসি, মোদের বাড়ি এসো। খাট নাই পালং নাই, চোখ পেতে বোসো। বাটা ভরা পান দেব, গাল ভরে খেও। খোকার চোখে ঘুম নাই, ঘুম দিয়ে যেও।   This is a famous Bengali lullaby. Every mother in Bengal used to Sing this beautiful song to calm down their children or put them to sleepRead more

    ঘুমপাড়ানী মাসি পিসি

    ঘুমপাড়ানী মাসি পিসি,
    মোদের বাড়ি এসো।
    খাট নাই পালং নাই,
    চোখ পেতে বোসো।

    বাটা ভরা পান দেব,
    গাল ভরে খেও।
    খোকার চোখে ঘুম নাই,
    ঘুম দিয়ে যেও।

     

    This is a famous Bengali lullaby. Every mother in Bengal used to Sing this beautiful song to calm down their children or put them to sleep.

    Ghum parani mashi pishi lyrics in English font:

    Ghum parani mashi pishi
    Muder bari esho
    khat nai palong nai
    chokh pete bosho
    Bata vora pan debo
    Gal vore kheo
    Khokar choke ghum nei
    Ghum diye jeo

     

    See less
    • 0
  6. Amar Hiyar Majhe lyrics English Translation : আমার   হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে   দেখতে আমি পাই নি। তোমায়    দেখতে আমি পাই নি। বাহির-পানে চোখ মেলেছি,    আমার    হৃদয়-পানে চাই নি॥ আমার সকল ভালোবাসায়    সকল আঘাত সকল আশায় তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি॥ তুমি মোর আনন্দ হয়ে   ছিলে আমার খেলায়-- আনন্দেRead more

    Amar Hiyar Majhe lyrics English Translation :

    আমার   হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে   দেখতে আমি পাই নি।
    তোমায়    দেখতে আমি পাই নি।
    বাহির-পানে চোখ মেলেছি,    আমার    হৃদয়-পানে চাই নি॥
    আমার সকল ভালোবাসায়    সকল আঘাত সকল আশায়
    তুমি ছিলে আমার কাছে, তোমার কাছে যাই নি॥
    তুমি মোর আনন্দ হয়ে   ছিলে আমার খেলায়–
    আনন্দে তাই ভুলেছিলেম,   কেটেছে দিন হেলায়।
    গোপন রহি গভীর প্রাণে   আমার দুঃখসুখের গানে
    সুর দিয়েছ তুমি, আমি   তোমার গান তো গাই নি॥

     

    You were in the centre of my heart, therefore when my heart wandered she never found you;

    You hid yourself from my loves and hopes till the last, for you were always in them.

     You were the inmost joy in the play of my youth, and when I was too busy with the play the joy was passed by.

    You sang to me in the ecstasies of my life and I forgot to sing to you.

     

    Lyrics in English Font:

    Amar hiyar majhe lukiyechile dekhte ami pai ni
    Tumay Dekhte ami pai ni
    Bahir pane chokh melechi, Amar Hridoy pane chai ni.
    Tumar sokol valobashay, shol aghat sokol aashay.
    Tumi chile amar kache, tumar kache jai ni
    Tumi mor anondo hoye, chile amar khelay
    Anande tai bhulechilam, keteche din helay
    Gopon rahi gabhir prane, Amar dukh shukher gaane
    Sur diyecho tumi ami tumar gaan to gaai ni

     

    See less
    • 0
  7. রচনাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    রচনাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

    See less
    • 0
  8. অযান্ত্রিক – সুবোধ ঘোষ বিমলের একগুঁয়েমি যেমন অব্যয়, তেমনি অক্ষয় তার ঐ ট্যাঙ্টিার পরমায়ু। সাবেক আমলের একটা ফোর্ড, প্রাগৈতিহাসিক গঠন, সর্বাঙ্গে একটা কদর্য দীনতার ছাপ। যে নেহাত দায়ে পড়েছে বা জীবনে মোটর দেখেনি, সে ছাড়া আর কেউ ভুলেও বিমলের ট্যাঙ্রি ছায়া মাড়ায় না। দেখতে যদি জবুথবু, কিন্তু কাজের বেলাRead more

    অযান্ত্রিক – সুবোধ ঘোষ

    বিমলের একগুঁয়েমি যেমন অব্যয়, তেমনি অক্ষয় তার ঐ ট্যাঙ্টিার পরমায়ু। সাবেক আমলের একটা ফোর্ড, প্রাগৈতিহাসিক গঠন, সর্বাঙ্গে একটা কদর্য দীনতার ছাপ। যে নেহাত দায়ে পড়েছে বা জীবনে মোটর দেখেনি, সে ছাড়া আর কেউ ভুলেও বিমলের ট্যাঙ্রি ছায়া মাড়ায় না।

    দেখতে যদি জবুথবু, কিন্তু কাজের বেলায় বড়ই অদ্ভুতকর্মা বিমলের এই ট্যাঙ্।ি বড় বড় চাঁইগারির পক্ষে যা অসাধ্য, তা ওর কাছে অবলীলা। এই দুর্গম অভ্রখনি অঞ্চলের ভাঙাচোরা ভয়াবহ জংলীপথে, ঘোর বর্ষার রাতে, যখন ভাড়া নিয়ে ছুটতে সব গাড়িই নারাজ, তখন সেখানে অকুতোভয়ে এগিয়ে যেতে পারে শুধু বিমলের এই পরম প্রবীণ ট্যাঙ্িিট। তাই সবাই যখন জবাব দিয়ে সরে পড়ে, একমাত্র তখনি শুধু গরজের খাতিরে আসে তার ডাক, তার আগে নয়।
    ট্যাঙ্স্টি্যান্ডে সারি সারি জমকালো তরুণ নিউ মডেলের মধ্যে বিমলের বুড়ো ফোর্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমোয়, জটায়ুর মতো তার জরাভাব নিয়ে। বাস্তবিক বড় দৃষ্টিকটু। তালিমারা হুড, সামনের আর্শিটা ভাঙা, তোবড়ানো বনেট, কালিঝুলি মাখা পরদা আর চারটে চাকার টায়ার পটি লাগানো; সে এক অপূর্ব শ্রী। পাদানিতে পা দিলে মাড়ানো কুকুরের মতো ক্যাঁচ করে আর্তনাদ করে ওঠে। মোটা তেলের ছাপ লেগে সিটগুলো এত কলঙ্কিত যে, সুবেশ কোনো ভদ্রলোককে পায়ে ধরে সাধলেও তাতে বসতে রাজি হবে না। দরজাগুলো বন্ধ করতে বেশ বেগ পেতে হয়, আর যদিও বন্ধ হলো তো তাকে খোলা হয়ে ওঠে দুঃসাধ্য। সিটের ওপর বসলেই উপবেশকের মাথায় আর মুখে এসে লাগবে ওপরের দড়িতে ঝোলানো বিমলের গামছা, নোংরা গোটা দুই গেঞ্জি আর তেলচিটে আলোয়ান।

    বিমলের গাড়ির দূরায়ত ভৈরবহর্ষ শোনামাত্র প্রত্যেকটি রিকশা সভয়ে রাস্তার শেষ কিনারায় সরে যায়। অতি দুঃসাহসী সাইকেলওয়ালারা বিমলের ধাবমান গাড়ির পাশ কাটিয়ে যেতে বুক কাঁপে। রাত্রির অন্ধকারে একেকবার দেখা যায় দূর থেকে যেন একটা একচক্ষু দানব অট্টশব্দে হা হা করে তেড়ে আসছে; বুঝতে হবে ঐটি বিমলের গাড়ি। একটি হেডলাইটের আলো নির্বাণপ্রাপ্ত। আলগা আলগা শরীরের গাটগুলো যেকোনো সময়ে বিস্ফোরণের মতো শতধা হয়ে ছিটকে পড়তে পারে।
    সবচেয়ে বেশি ধুলো ওড়াবে, পথের মোষ ক্ষ্যাপাবে আর কানফাটা আওয়াজ করবে বিমলের গাড়ি। তবু কিছু বলবার জো নেই বিমলকে। চটাং চটাং মুখের ওপর দুকথা উল্টো শুনিয়ে দেবে_মশাই বুঝি কোনো নোংরা কম্ম করেন না, চেঁচান না, দৌড়ান না? যত দোষ করেছে বুঝি আমার গাড়িটা।

    কত রকমই না বিদ্রূপ আর বিশেষণ পেয়েছে এই গাড়িটা_বুড়া ঘোড়া, খোঁড়া হাঁস, কানা ভঁইস! কিন্তু বিমলের কাছ থেকে একটা আদুরে নাম পেয়েছে এই গাড়ি_জগদ্দল। এ নামেই বিমল তাকে ডাকে, তার ব্যস্ত-ত্রস্ত কর্মজীবনে সুদীর্ঘ পনেরোটি বছরের সাথী এই যন্ত্রপশুটা, বিমলের সেবক বন্ধু আর অন্নদাতা।
    সন্দেহ হতে পারে, বিমল তো ডাকে, কিন্তু সাড়া পায় কি? এটা অন্যের পক্ষে বোঝা কঠিন। কিন্তু বিমল জগদ্দলের প্রতিটি সাধ-আহ্লাদ, আবদার-অভিমান এক পলকে বুঝে নিতে পারে।
    ‘ভারি তেষ্টা পেয়েছে, না রে জগদ্দল? তাই হাঁসফাঁস কচ্ছিস? দাঁড়া বাবা দাঁড়া।’ জগদ্দলকে রাস্তার পাশে একটা বড় বটগাছের ছায়ায় থামিয়ে কুয়ো থেকে বালতি ভরে ঠাণ্ডা জল আনে, রেডিয়েটরের মুখে ঢেলে দেয় বিমল। বগ বগ করে চার-পাঁচ বালতি জল খেয়ে জগদ্দল শান্ত হয়, আবার চলতে থাকে।
    এ ট্যাঙ্রি মালিক ও চালক বিমল স্বয়ং। আজ নয়, একটানা পনেরো বছর ধরে।
    স্ট্যান্ডের এক কোণে তার সব দৈন্য আর জরাভার নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে বুড়ো জগদ্দল। পাশে হাল-মডেল গাড়িটার সুমসৃণ ছাইরঙা বনেটের ওপর গা এলিয়ে বসে পিয়ারা সিং বিমলকে টিটকারি দিয়ে কথা বলে_’আর কেন, এ বিমলবাবু? এবার তোমার বুড়িকে পেনশন দাও।’
    ‘_হুঁ, তারপর তোমার মতো একটা চটকদার হাল-মডেল বেশ্যে রাখি।’ বিমল সটান উত্তর দেয়। পিয়ারা সিং আর কিছু বলা বাহুল্য মনে করে; কারণ বললেই বিমল রেগে যাবে, আর তার রাগ বড় বুনো ধরনের।

    কার্তিক পূর্ণিমায় একটা মেলা বসবে এখান থেকে মাইল বারো দূরে, সেখানে আছে নরসিংহ দেবের বিগ্রহ নিয়ে এক মন্দির। ট্যাঙ্স্টি্যান্ডে যাত্রীর ভিড়। চটপট ট্যাঙ্গুিলো যাত্রী ভরে নিয়ে হুস হুস করে বেরিয়ে গেল। শূন্য স্ট্যান্ডে একা পড়ে থেকে শুধু ধুঁকতে লাগল বুড়ে জগদ্দল। কে আসবে তার কাছে, যার ঐ প্রাগৈতিহাসিক গঠন আর পৌরাণিক সাজসজ্জা?
    গোবিন্দ এসে সমবেদনা জানিয়ে বলল_কি গো বিমলবাবু, একটাও ভাড়া পেলে না?
    _না।
    _তবে?
    _তবে আর কি? এর শোধ তুলব সন্ধেয়। ডবল ওভারলোড নেব, যা থাকে কপালে।
    ‘আমিও যন্ত্র। বেঙ্গলি ক্লাব বলেছে ভালো।’ বিমল খুশি হয়ে মনে মনে হাসে।
    কিন্তু জগদ্দলও যে মানুষেরই মতো, এ তত্ত্ব বেঙ্গলি ক্লাব বোঝে না, এইটেই দুঃখ। এই কম্পিটিশনের বাজারে, এসব শিকরে-বাজের ভিড়ে এই বুড়ো জগদ্দলই তো দিন গেলে নিদেন দুটি টাকা তার হাতে তুলে দিচ্ছে! আর তেল খায় কত কম। গ্যালনে সোজা বাইশটি মাইল দৌড়ে যায়। বিমল গরিব, জগদ্দল যেন এই সত্যটুকু বোঝে।
    আরবি ঘোড়ার মতো প্রমত্ত বেগে জগদ্দল ছুটে চলেছে রাঁচীর পথে। শাবাশ তার দম, দৌড় আর লোড টানার শক্তি। কম্পমান স্টিয়ারিং হুইলটাকে দুহাতে আঁকড়ে ও বুক ঠেকিয়ে বিমল ধরে রয়েছে। অনুভব করছে দুঃশীল জগদ্দলের প্রাণস্ফূর্তির শিহর। কনকনে মাঘী হাওয়া ইস্পাতের ফলার মতো চামড়া চেঁছে চলে যাচ্ছে। মাথায় জড়ানো কম্ফোটারটা দুকানের ওপর টেনে নামিয়ে দিল বিমল; বিমলের বয়স হয়েছে, আজকাল ঠাণ্ডাফাণ্ডা সহজে কাবু করে দেয়।
    সম্মুখে পড়ল একটা পাহাড়ি ঘাট। এই সুবিসর্পিত চড়াইটা জগদ্দল রুষ্ট চিতাবাঘের মতো একদমে গোঁ গোঁ করে কতবার পার হয়ে গেছে। সেদিনও অভ্যস্ত বিশ্বাসে ঘাটের কাছে এসে বিমল চাপল এঙ্েিলটর_পুরো চাপ। জগদ্দল ৫০ গজ এগিয়ে খং খং করে কঁকিয়ে উঠল। যেন তার বুকের ভেতর কয়টা হাড় সরে গিয়েছে। উৎকর্ণ হয়ে বিমল শুনল সে আওয়াজ! না ভুল নয়, সেরেছে জগদ্দল! পিস্টন ভেঙে গেছে!

    কয়দিন পরে মাঝপথে এমনি আকস্মিকভাবে বিয়ারিং গলে গিয়ে একটা বড় রিজার্ভ নষ্ট হয়ে গেল। তারপর একটা না একটা উপসর্গ লেগেই রইল। এটা দূর হয় তো ওটা আসে। আজ ফ্যানবেল্ট ছেঁড়ে, কাল কারবুরেটারে তেল পার হয় না, পরশু প্লাগগুলো অচল হয়ে পড়ে_শর্ট সার্কিট হয়।
    এত বড় বিশ্বাসের পাহাড়টা শেষে বুঝি টলে উঠল। বিমল কয়দিন থেকে অস্বাভাবিক রকমের বিমর্ষ। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে বেড়ায়। জগদ্দলেরও নিয়মভঙ্গ হয়েছে, স্ট্যান্ডে আসা বাদ পড়ছে মাঝেমধ্যে। উৎকণ্ঠায় বিমলের বুক দুর দুর করে। তবে কি শেষে সত্যিই জগদ্দল ছুটি নেবে?
    _’না, আমি আছি জগদ্দল; তোকে সারিয়ে টেনে তুলবই, ভয় নেই। মোটরবিশারদ পাকা মিস্ত্রী বিমল প্রতিজ্ঞা করে।
    কলকাতায় অর্ডার দিয়ে প্রত্যেকটি জেনুইন কলকব্জা আনিয়ে ফেলে বিমল। নতুন ব্যাটারি, ডিস্ট্রিবিউটর, অ্যাঙ্লে, পিস্টন_সব আনিয়ে ফেলল। অকৃপণ হাতে শুরু হলো খরচ; প্রয়োজন বুঝলে রাতারাতি তার করে জিনিস আনায়। রাত জেগে খুটখাট মেরামত, অর্থাভাব_বেচে ফেলল ঘড়ি, বাসনপত্র, তক্তপোশটা পর্যন্ত।
    সর্বস্ব তো গেল, যাক। পনেরো বছরের বন্ধু জগদ্দল এবার খুশি হবে, সেরে উঠবে। খুব করা গেছে যা হোক; এবার নতুন হুড, রং আর বার্নিশ পড়লে একখানি বাহার খুলবে বটে! বিমলের কল্পনা যেন নিজেরই খুশিতে বিমলের মনের ভেতর হাসতে থাকে।
    রাত-দুপুরে জগদ্দলকে গ্যারেজে বন্ধ করার সময় বিমল একবার আলো তুলে দেখে নিল। খুশি উপচে পড়ল তার দু চোখে! এই তো বলিহারি মানিয়েছে জগদ্দলকে। কয়দিনের অক্লান্ত সেবায় জগদ্দলের চেহারা ফিরে গেছে; দেখাচ্ছে যেন একটি তেজি পেশীওয়ালা পালোয়ান। এক ইশারায় দঙ্গলে ভিড়ে যেতে প্রস্তুত। হাত-মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ল বিমল। বড় পরিশ্রমের চোট গেছে কয়দিন। কিন্তু কী আরামই না লাগছে ভাবতে_জগদ্দল সেরে উঠেছে; কাল সকালে সগর্জনে নতুন হর্নের শব্দে সচকিত করে জগদ্দলকে নিয়ে যখন স্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াবে বিমল, বিস্ময়ে হতবাক হবে সবাই, আবার জ্বলবে হিংসেতে।
    হঠাৎ বিমলের ঘুম ভেঙে গেল। শেষ রাত্রি তবু নিরেট অন্ধকার। ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি পড়ছে। ধড়ফড় করে উঠে বসল বিমল_জগদ্দল ভিজছে না তো! গ্যারেজের টিনের ছাদটা যা পুরনো, কত ফুটো ফাটাল আছে কে জানে! কোন ফাঁকে ইঞ্জিনে জল ঢুকলে হয়েছে আর কি! বডির নতুন পালিশটাকেও স্রেফ ঘা করে দেবে।

    কেরোসিনের বাতি জ্বালিয়ে নিয়ে গ্যারেজে ঢুকে বিমল প্রায় চেঁচিয়ে উঠল_আরে হায়! হায়! ছাদের ফুটো দিয়ে ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টির জল ঝড়ে পড়ছে ঠিক ইঞ্জিনের ওপর। দৌড়ে শোবার ঘর থেকে বিমল নিয়ে এলো তার বর্ষাতিটা; টেনে আনল বিছানার কম্বল শতরঞ্জি চাদর।
    ইঞ্জিনের ভেজা বনেটটা মুছে ফেলে কম্বলটা চাপিয়ে দিল তার ওপর বর্ষাতিটা! শতরঞ্জি আর চাদর দিয়ে গাড়িটার সর্বাঙ্গ ঢেকে দিয়ে নিজেও ঢুকে পড়ল ভেতরে; নতুন নরম গদিটার ওপর গুটিসুটি হয়ে বিমল শুয়ে পড়ল; আরামে তার দুচোখে যেন ঘুমের ঢল নেমে এলো।
    পরদিনের ইতিহাস। স্ট্যান্ডের উদগ্রীব জনতা জগদ্দলকে ঘিরে দাঁড়াল, যেন একটা অঘটন ঘটে গেছে। স্তুতিমুখর দর্শকেরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখল বিমলের অপূর্ব মিস্ত্রি-প্রতিভার নিদর্শন। বিমলও টেনে টেনে কয়েকবার হাসল। কিন্তু কেমন যেন একটু অস্বচ্ছ সে হাসি, একটা শঙ্কার ধূসর স্পর্শে আবিল।
    কেন? বিমলের মনের ভেতরে বেদনা ছড়ায় একটা সন্দেহ। জগদ্দল চলছে ঠিকই, কিন্তু কই সেই স্টার্টমাত্র শক্তির উচ্চকিত ফুকার, সেই দর্পিত হ্রেষাধ্বনি আর দুরন্ত বনহরিণের গতি?
    শহর থেকে দূরে একটা মাঠের ধারে গিয়ে বিমল বেশ করে জগদ্দলকে পরীক্ষা করে দেখল।
    ‘_চল বাবা জগদ্দল! একবার পক্ষিরাজের মতো ছাড় তো পাখা!’ বিমল চাপল এঙ্েিলটার! নাঃ, বৃথা, জগদ্দল অসমর্থ।
    ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড_প্রতিটি গিয়ার পর পর পাল্টে টান দিল বিমল। শেষে রাগ চড়ে গেল মাথায়_’চল, নইলে মারব লাথি।’
    অক্ষম বৃদ্ধের মতো জগদ্দল হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে চলতে থাকে।
    _’আদর বোঝে না, কথা বোঝে না, শালা লোহার বাচ্চা, নির্জীব ভূত’_বিমল সত্যি সত্যি ক্লাচের ওপর সজোরে দুটো লাথি মেরে বসল।
    বিমলের রাগ ক্রমেই বাড়ছে, সেই বুনো রাগ। আজ শেষ জবাব জেনে নেবে সে! জগদ্দল থাকতে চায়, না যেতে চায়? অনেক তোয়াজ করেছে সে, আর নয়।
    রাগে মাথাটা খারাপই হয়ে গেল বোধ হয়। বিমল ঠেলে ঠেলে প্রকাণ্ড সাত-আটটা পাথর নিয়ে এলো। ঘামে ভিজে ঢোল হয়ে গেল পরিশ্রান্ত বিমলের খাকি কামিজ। এক এক করে সব পাথর গাড়িতে তুলে দিল। একেই বলে লোড! এই লোড জগদ্দলকে আজ টানতে হবে; দেখা যাক, জগদ্দলের সেই শক্তি আছে, না চিরকালের মতো ফুরিয়ে গিয়েছে।
    ‘চল।’ জগদ্দল চলল; গাঁটে গাঁটে আর্তনাদ বেজে উঠল ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে। অসমর্থ_আর পারবে না জগদ্দল এ ভার বইতে!
    এবার বিমল নিশ্চিন্ত। জগদ্দলকে যমে ধরেছে। এ সত্যে আর সন্দেহ নেই। এত কড়া কলিজা জগদ্দলের, তাতেও ঘুণ ধরল আজ। কৃতান্তের ডাক, আর রক্ষে নেই, এবার দিন ফুরিয়ে সন্ধ্যা নামবে। শেষ কড়ি খরচ করেও রইল না জগদ্দল।
    আমি শুধু রৈনু বাকি… পরিশ্রান্ত বিমল মনে মনে যেন বলে উঠল।_কিন্তু আমারও তো হয়ে এসেছে। চুলে পাক ধরেছে, রগগুলো জোঁকের মতো গা ছেয়ে ফেলেছে সব। সেদিনের আর বেশি দেরি নেই, যেদিন জগদ্দলের মতো এমনি করে হাঁপিয়ে আর খুঁড়িয়ে আমাকেও বাতিল হয়ে যেতে হবে।

    বিড়ি ধরিয়ে নিয়ে চুপ করে জগদ্দলের দিকে তাকিয়ে থাকে বিমল। মনের ভেতরে যেন একটা শূন্যতার আক্ষেপ ছটফট করতে থাকে। ‘জগদ্দল আগেই যাবে বলে মনে হচ্ছে, তারপর আমার পালা! যা জগদ্দল, ভালো মনেই বিদেয় দিলাম। অনেক খাইয়েছিস, পরিয়েছিস, আর কত পারবি? আমার যা হবার হবে।’ যা কোনোদিন হয়নি, তাই হলো। ইস্পাতের গুলির মতো শুকনো ঠাণ্ডা বিমলের চোখে দেখা দিল দু ফোঁটা টলমলে উষ্ণ জল।
    ফিরে এসে বিমল জগদ্দলকে গ্যারেজের বাইরে বেলতলায় দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ল। পেছন ফিরে আর তাকাল না। সোজা গিয়ে উঠোনে বসে পড়ল, সামনে রাখল দু বোতল তেজালো মহুয়া।
    একটি চুমুক সবে দিয়েছে, শোনা গেল কে ডাকছে_বিমলবাবু আছ! গোবিন্দের গলা। গোবিন্দ এলো, সঙ্গে একজন মাড়োয়ারি ভদ্রলোক।
    _আদাব বাবুজি।
    _ আদাব, কোন গাড়ির এজেন্ট আপনি? বিমল প্রশ্ন করল। গোবিন্দ পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল_গাড়ির এজেন্ট নন উনি; পুরনো লোহা কিনতে এসেছেন কলকাতা থেকে। তোমার তো গাদাখানেক ভাঙা অ্যাঙ্লে আর রিমটিম জমে আছে। দর বুঝে ছেড়ে দাও এবার।
    বিমল খানিকক্ষণ নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল দুজনের দিকে। ভবিতব্যের ছায়ামূর্তি তার পরম ক্ষুধার দাবি নিয়ে ভিক্ষাভাণ্ডটি প্রসারিত করে আজ সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এমনিতে ফিরবে না সে, শ্রেষ্ঠ ভিক্ষা চাই। ব্যাপারটা বুঝল বিমল।
    _হ্যাঁ আছে পুরনো লোহা, অনেক আছে, কত দর দিচ্ছেন?
    _চৌদ্দ আনা মণ বাবুজি, মাড়োয়ারির ব্যগ্র জবাব এলো।_লড়াই লেগেছে, এই তো মওকা, ঝেড়েপুছে সব দিয়ে ফেলুন বাবুজি।
    _হ্যাঁ সব দেব। আমার ঐ গাড়িটাও দেব। ওটা একেবারে অকেজো হয়ে গেছে। হতভম্ব গোবিন্দ শুধু বলল_সে কি গো বিমল বাবু?
    নেশা ভাঙল এক ঘুমের পর। তখনো রাত, বিমল আর এক বোতল পার করে শুয়ে পড়ল।
    ভোর হয়ে এসেছে। থেকে থেকে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে বিমলের। বাইরে জাগ্রত পৃথিবীর সব কোলাহল থেকে উপচে পড়ছে শুধু একটি শব্দ, বিমলের কানের কাছে আছড়ে পড়ছে_ঠং ঠং ঠকাং ঠকাং। মাড়োয়ারির লোকজন ভোরে এসেই বিমলের গাড়ি টুকরো টুকরো করে খুলে ফেলেছে।

    শোক আর নেশা। জগদ্দলের পাঁজর খুলে পড়ছে একে একে। বিমলের চৈতন্যও থেকে থেকে কোন অন্তহীন নৈঃশব্দের আবর্তে যেন পাক দিয়ে নেমে যাচ্ছে অতলে। তারপরই লঘুভার হয়ে ভেসে উঠছে ওপরে। এরই মাঝে শুনতে পাচ্ছে বিমল, ঠং ঠং ঠকাং ঠকাং, ছিন্নভিন্ন ও মৃত জগদ্দলের জন্য কারা যেন কবর খুঁড়ছে। ঠং ঠং ঠকাং ঠকাং, যেন অনেক কোদাল আর অনেক শাবলের শব্দ।

    See less
    • -1
  9. This answer was edited.

    ফসিল সুবোধ ঘোষের একটি শ্রেষ্ট ছোটগল্প।পরে ফসিল নাম দিয়ে তাঁর একটি ছোটগল্প সংকলন বের হয়। সেই সংকলনে যে গল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলি হলো। ফসিল যাযাবর শক থেরাপী অযান্ত্রিক দন্ডমুন্ডু গ্লানিহর সুন্দরম সবলা গোত্রান্তর     ফসিল গল্পের বইটি  PDF ডাউনলোড করতে এই লিংক এ ক্লিক করুন।

    ফসিল সুবোধ ঘোষের একটি শ্রেষ্ট ছোটগল্প।পরে ফসিল নাম দিয়ে তাঁর একটি ছোটগল্প সংকলন বের হয়। সেই সংকলনে যে গল্পগুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলি হলো।

    • ফসিল
    • যাযাবর
    • শক থেরাপী
    • অযান্ত্রিক
    • দন্ডমুন্ডু
    • গ্লানিহর
    • সুন্দরম
    • সবলা
    • গোত্রান্তর

     

      ফসিল গল্পের বইটি  PDF ডাউনলোড করতে এই লিংক এ ক্লিক করুন

    See less
    • -2
  10. হাট যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি , মাঝে একখানি হাট সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট। বেচাকেনা সেরে বিকেলবেলায় যে যার ঘরে ঘরে ফিরে যায়; বকের পাখায় আলোক লোকায় ছাড়িয়া পূবের মাঠ ; দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে উঠে দ্বীপ …আঁধারেতে থাকে হাট। নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা এক ক্লাRead more

    হাট

    যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত

    দূরে দূরে গ্রাম দশ বারোখানি , মাঝে একখানি হাট
    সন্ধ্যায় সেথা জ্বলে না প্রদীপ, প্রভাতে পড়ে না ঝাঁট।
    বেচাকেনা সেরে বিকেলবেলায়
    যে যার ঘরে ঘরে ফিরে যায়;
    বকের পাখায় আলোক লোকায় ছাড়িয়া পূবের মাঠ ;
    দূরে দূরে গ্রামে জ্বলে উঠে দ্বীপ …আঁধারেতে থাকে হাট।

    নিশা নামে দূরে শ্রেণীহারা এক ক্লান্ত কাকের পাখে ;
    নদীর বাতাস ছাড়ে নিঃস্বাস পার্শ্বে পাকুড়-শাখে
    হাটের দোচালা মুদিল নয়ান
    কারো তরে তার নাই আহবান;
    বাজে বায়ু আসি বিদ্রুপ বাঁশি জীর্ণ বাঁশের ফাঁকে
    নির্জন হাটে রাত্রি নামিল একক কাকের ডাকে।

    দিবসেতে সেথা কত কোলাহল চেনা অচেনার ভিড়ে
    কত না ছিন্ন চরণচিহ্ন ছড়ান সে ঠাঁই ঘিরে
    মাল চেনাচিনি, দর জানাজানি
    কানাকড়ি নিয়ে কত টানাটানি;
    হানাহানি করে কেউ নিলো ভরে কেউ গেলো খালি ফিরে
    দিবসে থাকে না কথার অন্ত চেনা অচেনার ভিড়ে।

    কত কে আসিল কত বা আসিছে কত বা আসিবে হেথা
    ওপারের লোক নামলে পশরা ছুটে এপারের ক্রেতা।
    শিশির বিমল-প্রভাতের ফল,
    শতহাতে সহি পরখের ছল
    বিকালবেলায় বিকায় হেলায় সহিয়া নীরব ব্যথা।
    হিসাব নাহিরে-এলো আর গেলো কত ক্রেতা বিক্রেতা

    নুতন করিয়া বসা আর ভাঙা পুরানো হাটের মেলা
    দিবসরাত্রি নুতন যাত্রি নিত্য নাটের খেলা।
    খোলা আছে হাট মুক্ত বাতাশে
    বাধা নাই ওগো-যে যায় সে আসে;
    কেহ কাঁদে কেহ গাঁটে করি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা
    উদার আকাশে মুক্ত বাতাশে চিরকাল একই খেলা।

    Hat Kobita Jatindra Nath Sengupta Lyrics

    Haat

    Jatindranath Sengupta

    Dure dure gram dosh barokhani, majhe ekkhani haat
    Shondhay setha jole na prodip, provate pore na jhat
    Bechakena shere bikelbelay
    Je jar ghore ghore fire jay
    Boker pakhay aalok lukay chariya puber maath
    Dure dure grame jole uthe dip..aadharete thake haat

    Nisha name dure srenihara ek klanto kaker pakhe
    Nodir batash chare nishash parshe pakur shakhe
    haater duchala mudilo noyan
    Karo tore tar nai aahoban
    Baje bayu aashi bidrup bashi jirno basher faake
    Nirjon haate ratri namilo ekok kaker daake.

    Diboshete setha koto kulahol chena ochenar bhire
    Koto na chinno choroncinno choran shei thai ghore
    Mal chenachini, Dar janajani
    kanakori niye koto tanatani
    Hanahani kore keu nilo bhore keu gelo khali fire
    Diboshe thake na kothart onto chena ochena r bhire.

    Koto ke aashilo koto ba aashiche koto ba aashiche hetha
    Oparer luk namle poshora chute eparer kreta
    Shishir bimol probhater fol
    Shotohate shohi porokher chol
    Bikel belay bikay helay sohiya nirob betha
    Hishabe nahire-elo aar gelo koto kreta bikreta

    Nutan koriya bosha aar bhanga purano haater mela
    Diboshratri nutan jatri nityo nater khela
    Khola aache haat mukto batashe badha nai ogo-je jay se aashe
    Keho kaadhe keho gathe kori badhe ghore firibar bela
    udar akashe mukto batashe chirokal ek e khela

    See less
    • 0