আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা | Natural Beauty of Assam Essay in Bengali Language?
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Nibedita Paul
আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ভূমিকা : আসাম প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন। তার দিকে দিকে নানা রাঙা পাখির কাকলি, নানা রাঙা ফুলের গন্ধবাহার। প্রকৃতি দেবী যেন নিজহাতে তার সমস্ত সৌন্দর্য ভাণ্ডার এই আসাম ভূমিতে উজাড় করে দিয়েছেন। এ রাজ্য পাহাড়-পর্বত বেষ্টিত একটি অতি মনােরম রাজ্য। অনেকের মতে সৌন্দর্যে ‘সম’ বা সমান বা সমকক্ষ নেই বলে এই দেশের নাম অসম। আর অসম হতেই এই দেশের নাম হয়েছে আসাম। আসামের নিসর্গ প্রকৃতি নাগরিক জীবন যন্ত্রণায় ক্লান্ত-ক্লিষ্ট মানুষকে অপার প্রশান্তি এনে দেয়।
প্রকৃতি ভেদে আসামের সৌন্দর্য : ভারতের উত্তর পূর্ব প্রান্তের রাজ্যটি যেন কোন দেবকন্যার কণ্ঠমালা থেকে খসে-পড়া কারুকার্য খচিত একখণ্ড পান্না। সবুজ-শ্যামলে রজত-ঔজ্জ্বল্যে নিসর্গ সুন্দরী সত্যই অপরূপা। রাজ্যটির উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও তার শাখা-প্রশাখা, ছােট-বড় পাহাড়-পর্বত যেন শিরের শােভা মুকুট রাজি। পুর্বদিকে পাতকোই ও দক্ষিণে মেঘালয়ের পর্বতমালা নীলাভ মেঘসজ্জার মতাে শােভা পাচ্ছে। শ্যামল বনরাজি নীলার মেখলা পরিহিতা আসাম যেন এক বনমালা।
আসামের মধ্যাংশ কাৰ্বিমালভূমি, মেঘালয় মালভূমি ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির অংশ বিশেষ। এই অঞ্চলটি অতি প্রাচীন ও রূপান্তরিত আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত। কার্বি মালভূমিকে স্পর্শ করে দক্ষিণ পর্যন্ত রয়েছে উত্তর কাছাড়ের পাহাড়ী অঞ্চল। এই পাহাড় সমূহ স্তরীভূত শিলার ঢেউ খেলানাে পাহাড়। কবির ভাষায় ব্রহ্মপুত্র নদ তার কণ্ঠহার আর বরাক নদী হলাে কটি দেশের কিংকিনী। এই নদী দুটির অসংখ্য উপনদী, শাখানদী নৃত্য পরা অপ্সরার মতাে কলতান তুলে বয়ে চলেছে। শ্যামল-গহন বনানীর রহস্যময়তা ও স্নিগ্ধতা সৌন্দর্য-পিয়াসী মানুষকে পত্রমর্মরে আমন্ত্রণ জানায়। নদীর বুকে সাদা পাল তুলে নৌকা চলে কোন অচিনপরে, মাঝির কণ্ঠে ভাটিয়ালি গানের উদাসী সুর। তাছাড়া নদীগুলি রাজ্যটিকে কৃষির উপযুক্ত ও উর্বর করে তুলেছে। সত্যই সুজলা, সুফলা শস্য-শ্যামলা ব্ৰহ্মপুত্র-বরাকের এই পূণ্য তীরভূমিতে যেন নয়নদুটি শ্যামরূপে বন্দী হয়ে রসলীন ভ্রমরের ন্যায় নিশ্চল হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নানা উপাদান : আসাম রাজ্যটির ৩৫ শতাংশ স্থান জুড়ে রয়েছে বন-জঙ্গল ও গভীর অরণ্য। এসব জঙ্গলে হলং, বনচাম, শাল, সেগুন, সুন্দী, সােনারু প্রভৃতি মূল্যবান কাঠ ও গাছ রয়েছে। স্থানে স্থানে রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও তৃণ প্রান্তর। নাম না জানা জলাশয়ের বুকে বিকশিত পদ্ম-শালুকের বর্ণবাহার। ইতস্ততঃ ছড়ানাে পত্রপুঞ্জের মতাে সবুজ বন। মাথার উপরে উন্মুক্ত আকাশ, আকাশে চন্দ্র-সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার শােভা, মেঘমালার স্বচ্ছন্দ বিচরণ। অন্ধকার রাত্রে ঝােপে-ঝাড়ে জ্বলে জোনাকির দীপ।
পশুপাখির সৌন্দর্য বর্ধন : আসামের বনজঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ধিত করে প্রকৃতির ক্রোড়ে লালিত জীবজন্তুর স্বচ্ছন্দ বিহার। এগুলির মধ্যে হাতী, গণ্ডার, বন্য মহিষ, বাঘ, ভালুক, হরিণ, বানর প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য জন্তু। আসামের কাজিরাঙ্গার একশিং বিশিষ্ট গণ্ডার পৃথিবী বিখ্যাত। নানা প্রকার দুর্লভ পাখিও আসামে পাওয়া যায়। যার মধ্যে আছে, ময়না, টিয়া, তােতা, শকুন ও ধনেশ প্রভৃতি পাখি। বনফুল ঘিরে ভ্রমরের গুঞ্জন, চলমান পাহাড়ের মতাে হাতির পাল ইত্যাদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
প্রকৃতি ও মানুষ : নির্জন প্রকৃতির একটি স্বতন্ত্র সৌন্দর্য অবশ্যই আছে। কিন্তু মানুষের সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত হস্তস্পর্শে সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সুন্দরতর হয়ে উঠে। এভাবে হস্তস্পর্শে তৈরি আসামের চা বাগানগুলি অপূর্ব শােভার আধার। পূর্ব আসামের প্রায় সমস্ত অঞ্চল জুড়ে চায়ের ঘন সবুজ ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’ নিসর্গ শােভাতে অপরিমেয় সৌন্দর্যের সঞ্চার করে। টিলার উপর নির্মিত ঘর-বাড়িতে বৈদ্যুতিক আলােক মালা যেন নিজ দীপাবলীর আলােক সজ্জা। সবুজ তরুলতা বেষ্টিত ছায়া সুনিবিড় গ্রামগুলিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অঙ্গীভূত।
ঋতুভেদে আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য : ঋতুর পর ঋতু একে একে এখানে এসে নিজেকে সৌন্দর্য শােভায় মেলে ধরে। বিভিন্ন ঋতুতে প্রকৃতি দেবী বিভিন্ন সাজে সজ্জিতা হন। গ্রীষ্মে লাল, হলুদ, শিরীষ ফুলে আসামের দেহ ঢাকে, বর্ষায় কদম ফুল ফোটে আর পাহাড়ী নদীর রূপালী ধারা চঞ্চল নৃত্যে নেমে আসে ঝরঝর ঝমঝম্ শব্দে। শরতের আগমনে ঝিলে ঝিলে প্রস্ফুটিত হয় কমল। রাজহাঁসেরা ঝাকে ঝাকে উড়ে চলে মানস সরােবরের দিকে। হেমন্তের আগমনে উপত্যকায় ধানক্ষেতের হরিৎ শােভা সত্যই মনােমুগ্ধ কর বাতাসের দোলা খেয়ে তারা সমুদ্রের ঢেউয়ের মতাে উচু-নিচু হতে থাকে। শীতে লাের্ধ ও কাশ জাতীয় শুভ্র ফুলের অমলিন হাসিতে সমস্ত পাহাড়, বন, আকাশ প্রভৃতি শ্বেত শােভায় সজ্জিত হয়। এই নয়নাভিরাম শােভা বাস্তবিকই বিচিত্র। আর বসন্তকালের তাে কথাই নেই। কোকিলের সুমধুর কুজন যেন প্রকৃতি দেবীর নবরূপ ও রাগ গ্রহণের কথাই ঘােষণা করে।
উপসংহার : প্রাচীনকালে প্রবাদ ছিল কামরূপ অর্থাৎ অসম ইন্দ্রজালের মাজ, এখানে প্রকৃতি দেবীর অভিনব আকর্ষণ। আকুল করা সৌন্দর্যে নারী-পুরুষ পঞ্চলেই উন্মাদ হয়ে পড়ে। আসামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে জাতির জনক হাত্মা গান্ধী বলেছিলেন মনমােহন আসামের অধিবাসী সকলেই কবিতা রচনা করতে সেলু।’ অর্থাৎ কাব্য সুষমা বিজড়িত আসামের প্রকৃতি ও তার বিভিন্ন ঋতুর সৌন্দর্যরাশি অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আসাম সত্যই অ-সম অর্থাৎ অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
Rohit Das
Bhot acha hua mera bhot help hua thank you