1. আসামে বাংলাভাষা শহীদদের পরিচিতি বিশিষ্ট লেখক ডা. মুক্তাদীর এর বই "ভাষা শহীদের কথা ও স্বপ্ন" দেয়া বর্ণনা অনুজায়িঃ ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ জন তরুণ তরুণী প্রাণ বির্সজন দেন। এরপর বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চত্রুবর্তী বাচ্চু নামে একজন মৃত্যুবরণ কRead more

    আসামে বাংলাভাষা শহীদদের পরিচিতি

    বিশিষ্ট লেখক ডা. মুক্তাদীর এর বই “ভাষা শহীদের কথা ও স্বপ্ন” দেয়া বর্ণনা অনুজায়িঃ

    ১৯৬১ সালের ১৯ মে শিলচরে ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ১১ জন তরুণ তরুণী প্রাণ বির্সজন দেন। এরপর বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৭২ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চত্রুবর্তী বাচ্চু নামে একজন মৃত্যুবরণ করেন। অক্টোবরে মারা যান মোজাম্মেল হক। ৭ আগষ্ট রহস্য জনক ভাবে নিরুদেষ্ট হন অনিল বরা। ১৯৮৫ সালের ২৪ জুন কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস ১৯ মে’র গুলিতে ক্ষতজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৮৬ সালে আসাম প্রদেশে অসমিয়া ভাষায় মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার সার্কুলার জারি করলে বাঙালিরা এর প্রতিবাদ করেন। এতে ২ জন মারা যান। তাদের নাম দিব্যেন্দু দাস, জগন্ময় দেয়। আসামে বাংলা ভাষা শহীদদের সংক্ষিপ্ত জীবনী নিম্নে দেওয়া হল।

    কমলা ভট্রাচার্য :
    রামরমন ভট্রাচার্য ও সুপ্রভাসিনী ভট্রাচার্যের কন্যা কমলা ভট্রাচার্য বাংলা ভাষা আন্দোলনে একমাত্র মহিলা ভাষাশহীদ। মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা শেষ করেই তিনি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পিতৃহীন কমলার ভাই শ্রী রামেন্দ্র ভট্রাচার্যের সঙ্গে শিলচর শহরের বিলপাড়ে অবস্থিত বাসায় থাকতেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। তাদের পরিবার ১৯৫০ সালে সিলেট জেলা থেকে কাছাড়ে আসেন। দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। কন্যা হারানোর বেদনায় এক অতি সাধারণ রমণী মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যেন অভিশাপ দিয়ে ছিলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরুর উদ্দেশ্যে। এই মানসিক ভারসাম্যহীন কন্যাহারা মা বলে উঠেছিলেন, ‘নেহেরু তুমি আমার মেয়ে কমলাকে গুলি করে মেরেছে, তোমার মেয়েরও এভাবে মৃত্যু হবে।’

    কানাইলাল নিয়োগী :
    জন্ম ১৯২২ সালে। পিতা দ্বিজেন্দ্রলাল নিয়োগী, মায়ের নাম শান্তিকণা নিয়োগী। কানাইলাল ছিলেন তাদের তিন পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। তাঁর বয়স ৩৭ বছর। টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী থানার খিলদা গ্রাম ছিল তার পিতৃভূমি। ১৯৪০ সালে মেট্রিক পাশ করে পরে রেলের চাকুরীতে যোগ দান করেন। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রেখে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।

    হীতেশ বিশ্বাস :
    পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস। পিতা হরিশচন্দ্র বিশ্বাস বাস্তাহারা হয়ে হবিগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামে থেকে ত্রিপুরায় আসেন। বারো বছর খোয়াই শহরে উদ্বাস্ত কলোনীর বাসিন্দা হয়েই মা, ছোট ভাই ও এক বোন নিয়ে জীবন সংগ্রাম করেন। শিলচর শহরের অম্বিকাপট্রীতে ভগ্নীপতির বাসায় অবস্থানকালে ভাষা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবনদান করেন।

    চন্ডীচরণ সূত্রধর :
    পিতা চিন্তাহরণ সূত্রধর। বয়স বাইশ বছর। ১৯৫০ সালে হবিগঞ্জের জাফরপুর গ্রামে থেকে উদ্বাস্ত হয়ে মামাা সুরেন্দ্র সুত্রধরের সঙ্গে শিলচরে আসেন। তিনি এম ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে কাঠমিস্তী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করতেন। শিলচরের রাঙ্গিরখাড়িতে থাকাকালীন সময়ে তিনি ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে আত্মদান করেন। সে সময় শিলচর শহরে তার কোন আত্মীয় ছিল না, প্রতিবেশী স্বজনেরাই তার শ্রাদ্ধ কাজ সম্পন্ন করেন।

    শচীন্দ্র পাল :
    জন্ম ১৯ আশ্বিন ১৩৪৮। পিতা শ্রী গোপেন চন্দ্র পালের পাঁচ ছেলে ও এক কন্যা সন্তানের মধ্য শচীন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয় ছেলে। তিনি কাছাড় হাইস্কুল থেমে তেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার বয়স ছিল ১৯ বছর। হবিঞ্জ জেলার নবীগঞ্জের সন্দপুর গ্রামে ছিল তাদের পূর্বনিবাস। পরীক্ষা দিয়েই ছাত্র শচীন্দ্র মাতৃভাষার জন্যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ের এবং মৃত্যুবরণ করেন।

    কুমুদ দাস :
    জন্ম১৯৪০ সাল। পিতা শ্রী কুঞ্জমোহন দাস মৌলভীবাজারের জুরি থেকে বাস্তহারা হয়ে আসেন। মায়ের মৃত্যুর পর কুমুদ ৮ বছর বয়সে ত্রিপুরায় মামার বাড়িতে থেকে এম . ই প্রর্যন্ত পড়াশোনা করে গাড়ী চালক হন। এই পেশায় সুবিধা করতে না পেরে তিনি শিলচরে চলে আসেন এবং তারা পুরে এক দোকানে স্টল বয়ের কাজ করতে থাকেন। এই অবস্থাই তিনি তারাপুর রেলস্টেশনে আননন্দোনে অংশ গ্রহন করে জীবন দান করেন। বৃদ্ধ পিতা, চার বোন ও এক শিশু ভাইকে নিয়ে তাদের সংসারে তিনিই ছিলেন একমাত্র উপারজনকারী।

    সত্যেন্দ্র দেব :
    ১৯৩৭ সালে হবিগঞ্জ জেলার দেওন্ডী গ্রামে জন্ম। পিতা প্রয়াত শশীমোহন দেব। বয়স ২৪ বছর। উদ্বাস্তা হয়ে তাঁদের পরিবার ত্রিপুরায় নতুন রাজনগর কলোনীতে বাসা বাধেন। সে খানে মা ও তিন বোনতে রেখে শিলচর শহরের জানীগঞ্জ বাজারে এক বেসরকারী মাতৃভাষার আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি শহীদত্ব বরণ করেন।

    বীরেন্দ্র সূত্রধর :
    জন্ম ১৯৩৭ সেপ্টেম্বর। পিতা নীলমণি বহরমপুর থেকে পিতা মাতার সঙ্গে আসামে আসেন। জীবিকার অম্বষণে বর্তমান মিজোরামের আইজল শহরে গিয়ে কাঠমিস্ত্রীর কাজ শুরু করেন। ত্রিপুরায় ধর্মনগরে বিয়ে করে মণিপুর চা বাগানের (কাছা জেলায় অবস্থিত) নিকট ঘরভাড়া করে বাসা বেঁধে ছিলেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে তিনি যেদিন শহীদ হন তখন তার বয়স ছিল ২৪ বছর। আর ঘরে আটারো বছরের স্ত্রীর কোলে ছিল ১ বছরের রানী।

    সুকোমল পুরকায়স্থ :
    জন্ম ১৯২৫ সালে। পিতা শ্রী সঞ্জীবচন্দ্র পুরকায়স্থের বাড়ী ছিল করিমগঞ্জের বাগবাড়ী গ্রামে। তিনি ডিব্রুগড় শহরে ব্যবসা করতেন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ১৯৫৯ সালে ভাষা আন্দোলোনের নামে যখন বাঙ্গাল খেদা আন্দোলন শুরু হয় তখন উৎপীড়িত হয়ে সপরিবারে গ্রামে চলে আসেন। ভাষা সংগ্রামে যোগ দিয়ে সুকোল শহীদ হন।

    সুনীল সরকার :
    জন্ম ১৯৮৬ সালের পৌষমাসে। মাতা সুভাসিনী দে। পিতা শ্রী সুরেন্দ্র সরকার দেশবিভাগের পর ঢাকা মুন্সিবাজারে কামার পাড়া থেকে শিলচর শহরের নতুন পট্টিতে ঘর বাধেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে ব্যবসা শুরু করেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সুনীল হলেন সব চেয়ে ছোট। সুনীল এম.ই পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন।

    তরণী দেবনাথ :
    জন্ম ১৯৪৩ সালে। পিতা শ্রী যোগেন্দ্র দেবনাথ ব্রাহ্মণবাড়ীর শ্যামগ্রাম থেকে দেশ ভাগের সময় শিলচর এসে ব্যবসা শুরু করেন। তরণী শহীদদের মৃত্যুবরণ করার প্রায় ছয়মাস আগে একটি বযন যন্ত্র ত্রুয় করে রাঙ্গিরখাড়ী অঞ্চলে জয়দূর্গা কালোনীর ভিতি স্থাপন করেন। মৃত্যু সময় তাঁর বয়স ছিল ২১ বছর।

    কৃষ্ণকান্ত বিশ্বাস :
    ১৯৬১ সালের ১৯ মে কমলা, শচীন, সুকোমল সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। কৃষ্ণকান্ত দীর্ঘ ২৪ বছর এই গুলির ক্ষতজনিত অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করে ১৯৫৮ সালের ২৪ জুন দেহত্যাগ করেন। মৃত্যুরকালটা ভিন্ন হলেও কারণটা একই। বরং এ মৃত্যু অনেক বেশী যন্ত্রণাক্লাষ্ট ও মহান। ফলে তার শহীদত্বের দাবি অনস্বীকার্য।

    ১৯৭২-এর শহীদ বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু :
    ১৯৪৯ সালের ১৭ আগষ্ট বিজন চক্রবর্তী বাচ্চু জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম যোগেশচন্দ্র চক্রবর্তী, মাতা যুই চক্রবর্তী। বিজন চক্রবর্তীর আদি নিবাস ছিল সিলেটের পঞ্চখণ্ডে। স্বাধীনতার পুর্বেই চল্লিশের দশকে তারা চলে আসেন করিমগঞ্জে জেলার পাথরকান্দিতে। বিজন চক্রবর্তী স্কুল জীবনে কেটেছে পাথরকান্দি মডেল হাইস্কুলে। ওখান থেকেই মেট্রিক পাশ করেন ১৯৬৮তে। করিমগঞ্জ কলেজ থেকে তিনি পি. ইউ পাশ করে বি.এ তে ভর্তি হন। করিমগঞ্জ কলেজ যখন পি. ইউ পড়তেন তখন থেকেই তিনি এস.এফ. আই ছাত্র সংগঠনে ছিলেন।

    তারপর মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির যুব সংগঠন ডি ওয়াই এফ-এর সঙ্গে যুক্ত হন। তারপর ১৯৭১ সালে বিশিষ্ট কমিউনিষ্ট নেতা নিশীথ রঞ্জুন দাস বিধান সভা নির্বাচনে দাঁড়ান। তার নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই শহীদদের সক্রিয় পার্টি রাজনীতিতে প্রবেশের পথে পদক্ষেপ। তখন থেকেই সব মিটিং মিছিল সভাতে তাঁর নিয়োমিত যাতায়াত শুরু। পার্টি তার ধ্যান-জ্ঞান। ৭২-এর ভাষা সংগ্রামে অণুপ্রাণিত হন নিশীথ দাসের প্রেরণাতে এবং উদ্বদ্ধ হন ভাষা সংগ্রামের বিষয়ে পার্টির সুস্পষ্ট নীতি ও কর্মসূচীকে শ্রদ্ধা করে তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন বরাক উপত্যকায় বাঙালির শ্রেষ্ঠ ঐতিহ্য তার মাতৃভাষা বাংলা অধিকার, একে যে কোন মুল্যে এমন কি জীবনের বিনিময় হলেও রক্ষা করতে হবে।

    শহীদ মোজাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা :
    ১৯৭২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মাধ্যমের প্রশ্নে অগ্নিগর্ভ আসাম। একদিকে বরাক উপত্যকায় বাঙালিদের জন্য শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ও অন্যান্য অসমিয়াদের জন্য ইংরেজী রাখার দাবীতে চলছে ভাষা আন্দোলন, অন্য দিকে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় শিক্ষার মাধ্যমে শুধু অসমিয়াই হবে, এই নিয়ে হচ্ছে ছাত্র আন্দোলন এবং বাঙালি নিধনজ্ঞ। ৫ অক্টোবর আসাম বনধ পালিত হয়। এর পরের দিন ৬ অক্টোবর গৌহাটি মেডিক্যাল কলেজে মৃত্যু হয় মোজাম্মেল হকের। ৭ অক্টোবর নওগা কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক অনিল বরা রহস্য জনক নিরুদ্দ্যেশ হন। শহীদ মোজ্জাম্মেল হক ও শহীদ অনিল বরা এই দুই জনের জীবন বৃত্তান্ত পাওয়া যায়নি।

    ডা. মনীষী দাস :
    এম. বি. বি. এস. ডি. এল. ও এম (ই.এন.টি) ফাইন্যাল ইয়ারের পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ছিলেন ডিব্রুগড় মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ১৯৭২ সালে জোর করে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় যে সুপরিকল্পিত ভাষা দাঙ্গার সৃষ্টি হয় তারই শিকার হন মনীষী দাস। যারা বিনা প্রতিবাদে অসমিয়া উগ্র জাতীয়তাবাদের আগ্রাসনের নীতিকে মেনে নিতে তাদের সব কথায় সায় দিত, তিনি তাদের দলে ছিলেন না। বাঙালি হিসেবে তার স্বতন্ত্র ছিল তাঁর স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট। ডাক্তারী পড়ার পাহাড় প্রমাণ চাপের ফাঁকে কখনো কখনো স্মৃতি থেকে বেরিয়ে আসতো স্বতস্ফূর্ত আবৃত্তি রবীন্দ্র-নজরুল সুকান্তের কবিতা। যদিও তিনি অসমিয়া ভাষাকে ও অসমিয়া ভাষীদের কখনোও অশ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। বরং তার ঘনিষ্টতম বন্ধুরা ছিলেন অসমিয়া ভাষীই। তবুও তার এই নীরব মাতৃভাষা প্রীতিই তার কাল হলো। অসমিয়াদের হাতেই তিনি নিহত হন। মৌলভী বাজার জেলার শারিয়া গ্রামে তার আদি বাড়ি। ১৩৫০ সালের ২৮ আশ্বিন মাসে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

    ৮৬-এর শহীদ, শহীদ জগন্ময় দেব :
    জগন্ময় দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে হবিগঞ্জ জেলার জলশুখা গ্রামে। মা যোগ মায়া দেবী, বাবা যোগেশ চন্দ্র দেব। পড়াশোনা করীমগনেঞ্জর নীলমনি পাঠশালা ও পালিক হাই স্কুলে। জগন্ময় দেবের গায়ের রং ছিল উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ, মেজাজ খুব নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির। দেখতেন। খেলাধুলায় নেশা ছিল। ফুটবলই বেশী ভালোবাসতেন। সঙ্গীতেও অণুরাগ ছিল। ১৯৬৮এর ২১ জুলাই আন্দোলনের সময় হঠাৎ গুলি এসে চোখের ভিতর দিয়ে ঢুকে মাথার পিছন দিয়ে বের হয়ে যায়।

    শহীদ বিদ্যেন্দু দাস :
    বিদ্যেন্দু দাসের জন্ম ১৯৬২ সালের ২৫ ডিসেম্বর যীশু খ্রীষ্টের জন্ম দিনে। বাবার নাম দিগ্রেন্দ্রদাস পুলিশের কাজ করতেন। মায়ের নাম অর্চনা দাস। বদরপুর কলেজ উচ্চ মাধ্যমিক ছাত্র ছিলেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ২৪ বছর। ৮৬এর ভাষা সংগ্রামের শহীদ।

    See less
    • 0
  2. আসামের মুসলিম জনসংখ্যাঃ ২০১১ এর জনগননা অনুযায়ী আসামের মোট জনসংখ্যার ৩৪.৯% মুসলিম। এবং আসামের মোট জনসংখ্যা ৩.১২ কোটি। সেই হিসাবে আসামে ১.০৮ কোটি মুসলিম রয়েছেন।

    আসামের মুসলিম জনসংখ্যাঃ

    ২০১১ এর জনগননা অনুযায়ী আসামের মোট জনসংখ্যার ৩৪.৯% মুসলিম। এবং আসামের মোট জনসংখ্যা ৩.১২ কোটি।
    সেই হিসাবে আসামে ১.০৮ কোটি মুসলিম রয়েছেন।

    See less
    • 0
  3. শরৎকালের ফলঃ ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল।  শরৎকালে যে সমস্ত ফল পাওয়া যায় সেগুলো হল - আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরই,  করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি।

    শরৎকালের ফলঃ

    ভাদ্র ও আশ্বিন এই দুই মাস শরৎকাল।  শরৎকালে যে সমস্ত ফল পাওয়া যায় সেগুলো হল – আমলকী, জলপাই, জগডুমুর, তাল, অরবরই,  করমচা, চালতা, ডেউয়া ইত্যাদি।

    See less
    • 1
  4. Noya Daman Song Lyrics with Meaning: "আইলারে নয়া দামান" গানটি সিলেটের উদীয়মান শিল্পী মুজা ও তসিবার গাওয়ার পর থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সামান্য ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, এটি সিলেট অঞ্চলের কোনও এক অজানা লোককবি রচিত বহুল প্রচলিত একটি প্রসিদ্ধ লোকগীতি বা বিয়ের গীত। ১৯৭২Read more

    Noya Daman Song Lyrics with Meaning:

    “আইলারে নয়া দামান” গানটি সিলেটের উদীয়মান শিল্পী মুজা ও তসিবার গাওয়ার পর থেকে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সামান্য ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় যে, এটি সিলেট অঞ্চলের কোনও এক অজানা লোককবি রচিত বহুল প্রচলিত একটি প্রসিদ্ধ লোকগীতি বা বিয়ের গীত।
    ১৯৭২/৭৩ সালে সিলেট বেতারে সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ আলী আকবর খানের সুরে (কথা সংগ্রহ) প্রথমে ইয়ারুন্নেছা খানম এবং পরে সমবেতকণ্ঠে গীত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৮০/৮৫ সালের কোনও এক সময় এটি ওস্তাদ আলী আকবর খানের সুর ও সংগীত পরিচালনায় বেতারে ধারন করা হয়।

     

    আইলারে নয়া দামান লিরিক্স

    আইলারে নয়া দামান, আসমানেরও তেরা
    বিছানা বিছাইয়া দিলাম শাইল ধানের নেরা
    ও দামান বও, দামান বও॥

    আইলারে – এসেছেন, দামান – জামাই, আসমানেরও তেরা – আকাশের তারা, নেরা – ধান কাটার পর জমিনে থেকে যাওয়া অংশ বিশেষ

    অর্থাৎ নতুন জামাই শ্বশুর বাড়িতে এসেছে। তাঁর চেহারা আকাশের উজ্জল তারকার মত। তাই তাকে আদর আপ্যায়ন করে বসতে দেয়া হয়েছে। কনের আত্মীয়রা কৌতুক করে ‘শাইল ধানের নেরা’ দিয়ে বিছানা তৈরি করে দিয়েছে।

     

    বও দামান কওরে কথা, খাওরে বাটার পান,
    যাইবার কথা কও যদি কাইট্যা রাখমু কান ।
    ও দামান বও, দামান বও ॥

    বও -বস, কওরে কথা – কথা বল/গল্প কর, খাওরে বাটার পান – পান খাও

    নতুন জামাইকে পেয়ে সবাই খুশি তাই তাকে আদর আপ্যায়ন করে নিয়ে সবাই গল্প করতে বসেছে। কিন্তু জামাইকে সতর্ক করা হচ্ছে সে যেন যাওয়ার কথা না বলে। যাওয়ার কথা বললে তাঁর কান কেটে রাখা হবে (কৌতুক করে)।

    .
    আইলারে দামান্দর ভাই হিজলেরও মোড়া
    ঠুনকি দিলে মাটিত পড়ইন, ষাইট/সত্তইরের বুড়া ।
    ও দামান বও, দামান বও ॥

    হিজলেরও মোড়া – হিজল কাঠের গুড়া, পড়ইন – পড়ে যান, ষাইট/সত্তইরের বুড়া – ষাট সত্তর বছরের বুড়ো

    জামাইয়ের ভাই ও সঙ্গে এসেছেন, তিনি দেখতে অনেকটা হিজল গাছের গুড়ার মত। একটু নাড়া দিলে মাটিতে পড়বেন মনে হচ্ছে ষাট সত্তর বছরের বুড়ো।

    .
    আইলারে দামান্দর বইন, কইতা একখান কথা
    কইনার ভাইর ছে’রা দেইখা, হইয়া গেলা বোবা ।
    ও দামান বও, দামান বও ॥

    বইন – বোন, কইতা – বলবেন, কইনা – কন্যা, ছে’রা – চেহারা, বোবা – বাকরুদ্ধ

    জামাইয়ের বোন ও সঙ্গে এসেছেন তো তিনি কিছু একটা বলবেন এমতাবস্থায় কন্যার/নববধুর ভাইয়ের চেহারা দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

    .
    আইলারে দামান্দর ভাইর বউ, দেখতে বটর ঘাইল
    উঠতে বইতে সময় লাগে, করইন আইল-জাইল ।
    ও দামান বও, দামান বও ॥

    ভাইর বউ – বড়ভাইয়ের বউ/ভাবী, বট – বটবৃক্ষ, বটর ঘাইল -বটবৃক্ষের গুঁড়ির মত সুবিশাল অর্থাৎ মোটা, উঠতে বইতে – উঠতে বসতে, আইল-জাইল – উল্টাপাল্টা

    নতুন জামাইয়ের বড় ভাইয়ের বউ সঙ্গে এসেছেন। তিনি আবার দেখতে মোটা, বটবৃক্ষের গুঁড়ির মত মনে হয় অর্থাৎ  তাঁর শরীর ভারী তাই উঠতে বসতে উনার অনেক সময় লাগে। তাঁর কাজগুলোও কেমন উল্টাপাল্টা, একটা করতে আরেকটা করে বসেন।

     

    Ailare Noya Daman Song:

    Ailare Noya Daman Lyrics in English:

    Ailare noya daman
    Ashmanero tera
    Bisana bisaiyya dilam
    Shail dhaner nera
    Daman bo Daman bo

    Bo daman ko reh khotha
    Khaw re batar pan
    Jaibar khotha kou jodi
    Kaitta rakhmu kan
    Daman bo Daman bo

    Aila re Damdor Bhai
    Hijolero Mura
    Thunki dile matit poroin
    Shait sottoiror bura
    Daman bo Daman bo

     

    Aila re Damdor Boin
    Koita ekhan kotha
    Koinar bhair chera dekhiya
    Hoiya gela boba
    Daman bo Daman bo

     

    Aila re Damdor Bhair Bou
    Dekhte Botor Ghail
    Uthle boite shomoy lage
    Koroin aail zail
    Daman bo Daman bo

     

    See less
    • 0
  5. পুরাতন ভৃত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্যগ্রন্থঃ চিত্রা ভূতের মতন চেহারা যেমন, নির্ব্বোধ অতি ঘোর! যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন কেষ্টা বেটাই চোর! উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত, শুনেও শোনে না কানে। যত পায় বেত না পায় বেতন তবু না চেতন মানে। বড় প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ চীৎকার করি’ “কেষ্টা,”- যত করি তাড়া, নাহি পাইRead more

    পুরাতন ভৃত্য

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    কাব্যগ্রন্থঃ চিত্রা

    ভূতের মতন চেহারা যেমন,
    নির্ব্বোধ অতি ঘোর!
    যা কিছু হারায়, গিন্নি বলেন
    কেষ্টা বেটাই চোর!
    উঠিতে বসিতে করি বাপান্ত,
    শুনেও শোনে না কানে।
    যত পায় বেত না পায় বেতন
    তবু না চেতন মানে।
    বড় প্রয়োজন, ডাকি প্রাণপণ
    চীৎকার করি’ “কেষ্টা,”-
    যত করি তাড়া, নাহি পাই সাড়া,
    খুজে ফিরি সারা দেশ্‌টা!
    তিনখানা দিলে একখানা রাখে,
    বাকি কোথা নাহি জানে।
    একখানা দিলে নিমেষ ফেলিতে
    তিনখানা করে আনে!
    যেখানে সেখানে দিবসে দুপরে
    নিদ্রাটি আছে সাধা।

    মহা কলরবে গালি দেই যবে
    পাজি হতভাগা গাধা,
    দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সে হাসে
    দেখে’ জ্বলে’ যায় পিত্ত!
    তবু মায়া তার ত্যাগ করা ভার
    বড় পুরাতন ভৃত্য!

    ঘরের কর্ত্রী রুক্ষ মূর্ত্তি
    বলে, “আর পারি না কো!
    “রহিল তোমার এ ঘর দুয়ার
    কেষ্টারে লয়ে থাকো!
    “না মানে শাসন, বসন বাসন
    অশন আসন যত
    “কোথায় কি গেলো, শুধু টাকাগুলো
    যেতেছে জলের মত!
    “গেলে সে বাজার, সারাদিনে আর
    দেখা পাওয়া তার ভার!
    “করিলে চেষ্টা কেষ্টা ছাড়া কি
    ভত্য মেলে না আর!”

    শুনে মহা রেগে ছুটে যাই বেগে,
    আনি তার টিকি ধরে,’-
    বলি তারে “পাজি, বেরো তুই আজই,
    দূর করে দিনু তোরে!”
    ধীরে চলে যায়, ভাবি, গেল দায়;—
    পরদিনে উঠে দেখি
    হুঁকাটি বাড়ায়ে রয়েছে দাঁড়ায়ে
    বেটা বুদ্ধির ঢেঁকি!
    প্রসন্ন মুখ, নাহি কোন দুখ,
    অতি অকাতর চিত্ত!
    ছাড়ালে না ছাড়ে, কি করিব তারে,
    মোর পুরাতন ভৃত্য!

    সে বছরে ফাঁকা পেনু কিছু টাকা
    করিয়া দালাল-গিরি।
    করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন
    বারেক আসিব ফিরি।
    পরিবার তার সাথে যেতে চায়,—
    বুঝায়ে বলিনু তারে-

    পতির পুণ্যে সতীর পুণ্য;—
    নহিলে খরচ বাড়ে!
    লয়ে রশারশি করি কশাকশি
    পোঁটলা পুঁটুলি বাঁধি’
    বলয় বাজায়ে বাক্স সাজায়ে
    গৃহিণী কহিল কাঁদি,—
    “পরদেশে গিয়ে কেষ্টারে নিয়ে
    কষ্ট অনেক পাবে!”
    আমি কহিলাম “আরে রাম রাম!
    নিবারণ সাথে যাবে!”
    রেলগাড়ি ধায়;—হেরিলাম হায়
    নামিয়া বর্দ্ধমানে-
    কৃষ্ণকান্ত অতি প্রশান্ত
    তামাক্ সাজিয়া আনে!
    স্পর্ধা তাহার হেন মতে আর
    কত বা সহিব নিত্য!
    যত তারে দুষি’ তবু হনু খুসি
    হেরি পুরাতন ভৃত্য!

    নামিনু শ্রীধামে; দক্ষিণে বামে
    পিছনে সমুখে যত
    লাগিল পাণ্ডা, নিমেষে প্রাণ্‌টা
    করিল কণ্ঠাগত!
    জন ছয় সাতে মিলি একসাথে
    পরম বন্ধুভাবে
    করিলাম বাসা, মনে হল আশা
    আরামে দিবস যাবে!
    কোথা ব্রজবালা, কোথা বনমালা,
    কোথা বনমালী হরি!
    কোথা, হা হন্ত, চিরবসন্ত!
    আমি বসন্তে মরি!
    বন্ধু যে যত স্বপ্নের মত
    বাসা ছেড়ে দিল ভঙ্গ।
    আমি একা ঘরে, ব্যাধি-খরশরে
    ভরিল সকল অঙ্গ!
    ডাকি নিশিদিন সকরুণ ক্ষীণ-
    “কেষ্ট আয় রে কাছে!
    এতদিনে শেষে আসিয়া বিদেশে
    প্রাণ বুঝি নাহি বাঁচে!”

    হেরি তার মুখ ভরে’ ওঠে বুক,
    সে যেন পরম বিত্ত!
    নিশিদিন ধরে’ দাঁড়ায়ে শিয়রে
    মোর পুরাতন ভৃত্য!

    মুখে দেয় জল, শুধায় কুশল,
    শিরে দেয় মোর হাত;
    দাঁড়ায়ে নিঝুম, চোখে নাই ঘুম,
    মুখে নাই তার ভাত।
    বলে বার বার, “কর্ত্তা, তোমার
    কোন ভয় নাই, শুন,
    “যাবে দেশে ফিরে, মা-ঠাকুরাণীরে
    দেখিতে পাইবে পুন।”
    লভিয়া আরাম আমি উঠিলাম;
    তাহারে ধরিল জ্বরে;
    নিল সে আমার কাল-ব্যাধিভার
    আপনার দেহ পরে!
    হয়ে জ্ঞানহীন কাটিল দুদিন
    বন্ধ হইল নাড়ি।

    এতবার তারে গেনু ছাড়াবারে,
    এতদিনে গেল ছাড়ি’!
    বহুদিন পরে আপনার ঘরে
    ফিরিনু সারিয়া তীর্থ।
    আজ সাথে নেই চিরসাথী সেই
    মোর পুরাতন ভৃত্য।

    Puraton Vritto Kobita Recitation:

    Puraton Vritto Kobita Lyrics:

    Bhuter matan chehara jemon nirbodh ati ghor
    Ja kichu haray, ginni bolen, Kesto betai chor
    Uthite bashite kori bapanta shuneo shune na kane
    jata pay bet na pay betan, tabu na chetan mane
    Boro pryojon Daki pranpon chitkar kori kesta
    jata kori tara nahi paai shara, khuje firi shara deshta
    Tinkhana dile ekhaana rakhe , baki kotha nahi jane
    Ekhana dile nimesh felite tinkhana kore aane
    Jekhane shekhane dibosh dupure nidrati aache sadha
    Mohakolorobe gaali dei jabe “paji hatabhaga gadha”
    Darjar pashe dariye shey hashe, Dekhe jole jaay pitto
    tabu maya tar tyag kora bhar, Boro puraton vrityo

    Gharer korti rukkho murti bole, “aar pari nako”
    Rahilo tumar e ghar duar, Kestaye loye thako
    Na mane shashon bashan bashon oshon aashon jata
    Kothay ki gelo, sudhu takagulo jeteche joler mata
    Gele shey bazar sara din aar dekha pawa jay tar bhar
    Korile chesta kesta chara ki bhrityo mele na aar
    Shune moha rege chute jay bege, aani tar tiki dhore
    Boli tare paj, Ber ho tui aji, dur kore dinu tore
    dhire chole jaay, bhabi gelo day, pordin uthe dekhi
    HUkati baraye, royeche daraye beta buddhir deki
    Prashanna mukh, nahi kuno dukh, ati okatar chitto
    Charle na chare, ki korbo tare – mor puratan bhrityo

    Shey bachare faka penu kichu taka koriya dalalgiri
    Korilam mono sribrindaban barek aashibo firi
    Poribar tay sathe jete chay, bujhaye balinu tare
    Patir punne satir punno, nohile kharach bare
    Loye rasharoshi kore khoshakhoshi putaputli badhi
    Balay bajaye bakso sajaye grihini kohilo kandi
    Pardeshe giye kestare niye kasto onek pabe
    Ami kohilam arey ram ram! Nibaran shathe jabe
    Rail gari dhay, Herilam haay namiya bardhomane
    Krishnokanto ati prashanto tamak shajiye aane
    Sporda tahar henomate aar kata ba shohibo nityo
    Jata tare dushi tabu hani khushi Heri puratan bhritya

    See less
    • 0
  6. হােরিখেলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্যগ্রন্থঃ কথা   (রাজস্থান) পত্র দিল পাঠান কেসর খাঁরে কেতুন হতে ভূনাগ রাজার রানী,— লড়াই করি আশ মিটেছে মিঞা? বসন্ত যায় চোখের উপর দিয়া, এসো তোমার পাঠান সৈন্য নিয়া হোরি খেলব আমরা রাজপুতানী। যুদ্ধে হারি কোটা শহর ছাড়ি কেতুন হতে পত্র দিল রানী। পত্র পড়ি কেসর উঠে হাসRead more

    হােরিখেলা

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    কাব্যগ্রন্থঃ কথা

     

    (রাজস্থান)

    পত্র দিল পাঠান কেসর খাঁরে
    কেতুন হতে ভূনাগ রাজার রানী,—
    লড়াই করি আশ মিটেছে মিঞা?
    বসন্ত যায় চোখের উপর দিয়া,
    এসো তোমার পাঠান সৈন্য নিয়া
    হোরি খেলব আমরা রাজপুতানী।
    যুদ্ধে হারি কোটা শহর ছাড়ি
    কেতুন হতে পত্র দিল রানী।

    পত্র পড়ি কেসর উঠে হাসি,
    মনের সুখে গোঁফে দিল চাড়া।
    রঙিন দেখে পাগড়ি পরে মাথে,
    সুর্মা আঁকি দিল আঁখির পাতে,
    গন্ধভরা রুমাল নিল হাতে
    সহস্রবার দাড়ি দিল ঝাড়া।
    পাঠান সাথে হোরি খেলবে রানী
    কেসর হাসি গোঁফে দিল চাড়া।

    ফাগুন মাসে দখিন হতে হাওয়া
    বকুলবনে মাতাল হয়ে এল।
    বোল ধরেছে আম্র বনে বনে,
    ভ্রমরগুলো কে কার কথা শোনে,
    গুনগুনিয়ে আপন মনে মনে
    ঘুরে ঘুরে বেড়ায় এলোমেলো।
    কেতুনপুরে দলে দলে আজি
    পাঠান সেনা হোরি খেলতে এল

    কেতুনপুরে রাজার উপবনে
    তখন সবে ঝিকিমিকি বেলা।
    পাঠানেরা দাঁড়ায় বনে আসি,
    মূলতানেতে তান ধরেছে বাঁশি,
    এল তখন একশো রানীর দাসী
    রাজপুতানী করতে হোরি-খেলা।
    রবি তখন রক্তরাগে রাঙা,
    সবে তখন ঝিকিমিকি বেলা।

    পায়ে পায়ে ঘাগরা উঠে দুলে
    ওড়না ওড়ে দক্ষিণে বাতাসে।
    ডাহিন-হাতে বহে ফাগের থারি,
    নীবিবন্ধে ঝুলিছে পিচ্‌কারী,

    বামহস্তে গুলাব ভরা ঝারী
    সারি সারি রাজপুতানী আসে।
    পায়ে পায়ে ঘাগরা উঠে দুলে,
    ওড়না ওড়ে দক্ষিণে বাতাসে।

    আঁখির ঠারে চতুর হাসি হেসে—
    কেসর তবে কহে কাছে আসি’,—
    বেঁচে এলেম অনেক যুদ্ধ করি’—
    আজকে বুঝি জানে-প্রাণে মরি।—
    শুনে রাজার শতেক সহচরী
    হঠাৎ সবে উঠল অট্ট হাসি’।
    রাঙা পাগড়ি হেলিয়ে কেসর খাঁ
    রঙ্গভরে সেলাম করে আসি’।

    শুরু হোলো হোরির মাতামাতি,
    উড়তেছে ফাগ রাঙা সন্ধ্যাকাশে।
    নব-বরন ধরল বকুল ফুলে,
    রক্তরেণু ঝরল তরুমূলে,
    ভয়ে পাখি কূজন গেল ভুলে
    রাজপুতানীর উচ্চ উপহাসে।
    কোথা হতে রাঙা কুজ্ঝটিকা
    লাগল যেন রাঙা সন্ধ্যাকাশে।

    চোখে কেন লাগছে নাকো নেশা।—
    মনে মনে ভাবছে কেসর খাঁ।
    বক্ষ কেন উঠছে নাকো দুলি।
    নারীর পায়ে বাঁকা নূপুরগুলি
    কেমন যেন বলছে বেসুর বুলি,
    তেমন ক’রে কাঁকন বাজছে না।
    চোখে কেন লাগছে নাকো নেশা।
    মনে মনে ভাবছে কেসর খাঁ।

    পাঠান কহে—রাজপুতানীর দেহে
    কোথাও কিছু নাই কি কোমলতা।
    বাহু যুগল নয় মৃণালের মতো,
    কণ্ঠস্বরে বজ্র লজ্জাহত,
    বড়ো কঠিন শুষ্ক স্বাধীন যত
    মঞ্জরীহীন মরুভূমির লতা।
    পাঠান ভাবে দেহে কিংবা মনে
    রাজপুতানীর নাইকো কোমলতা।

    তান ধরিয়া ইমন্ ভূপালিতে
    বাঁশি বেজে উঠল দ্রুত তালে।
    কুগুলেতে দোলে মুক্তামালা,
    কঠিন হাতে মোটা সোনার বালা,

    দাসীর হাতে দিয়ে ফাগের থালা
    রানী বনে এলেন হেনকালে।
    তান ধরিয়া ইমন ভূপালিতে
    বাঁশি তখন বাজছে দ্রুত তালে।

    কেসর কহে—তোমারি পথ চেয়ে
    দুটি চক্ষু করেছি প্রায় কানা।—
    রানী কহে—আমারো সেই দশা।—
    একশো সখি হাসিয়া বিবশা,—
    পাঠানপতির ললাটে সহসা
    মারেন রানী কাঁসার থালাখানা।
    রক্তধারা গড়িয়ে পড়ে বেগে
    পাঠানপতির চক্ষু হোলো কানা।

    বিনা মেঘে বজ্ররবের মতো
    উঠল বেজে কাড়া নাকাড়া।
    জ্যোৎস্নাকাশে চমকে ওঠে শশী,
    ঝনঝনিয়ে ঝিকিয়ে ওঠে অসি,
    সানাই তখন দ্বারের কাছে বসি
    গভীর সুরে ধরল কানাড়া।
    কুঞ্জবনের তরু তলে তলে
    উঠল বেজে কাড়া-নাকাড়া।

    বাতাস বেয়ে ওড়না গেল উড়ে,
    পড়ল খসে ঘাগরা ছিল যত।
    মন্ত্রে যেন কোথা হতে কেরে
    বাহির হোলো নারী-সজ্জা ছেড়ে,
    একশত বীর ঘিরল পাঠানেরে
    পুষ্প হতে একশো সাপের মতো।
    স্বপ্ন সম ওড়না গেল উড়ে,
    পড়ল খসে ঘাগরা ছিল যত।

    যে-পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল
    সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা।
    ফাগুন রাতে কুঞ্জ বিতানে
    মত্ত কোকিল বিরাম না জানে,
    কেতুনপুরে বকুল বাগানে
    কেসর খাঁয়ের খেলা হোলো সারা।
    যে-পথ দিয়ে পাঠান এসেছিল
    সে পথ দিয়ে ফিরল নাকো তারা।

    Hori Khela Poem by Rabindranath Tagore Recitation:

    Horikhela

    Rabindranath Tagore

    Potro dilo pathan kesor khare
    Ketun hote bhunag rajar rani,
    Lorai kori aash mitiche miya?
    Basanta jay chokher upar diya
    Hori khelbo amar rajputani
    Juddhe hari kotha sahar chari
    Ketun hote patro dilo dilo rani

    Patro pori kesor uthe hashi
    Moner sukhe gofe dilo chara
    Rangin dekhe pagri pore mathe
    Surma aaki dilo aakhir pate
    Gandhobhora rumal nilo hate
    Sahasrabar dari dilo jhara
    Pathan sathe hori khelbe rani
    Kesor hashi gof dilo chara
    Fagun mashe dokkhin hote hawa
    Bakulbane matal hoye elo
    Bol dhoreche amro bane bane
    Bhromor gulo ke kar kotha shune
    Gun guniye apon mone mone
    Ghure ghure beray elo melo
    Ketonpure dole dole aaji
    Pathan sena hori khelte elo

    Ketonpure rajar uabone
    Takhan shobe jhikimiki bela
    Pathanera daray abne aashi
    Multanete tan dhoreche bashi
    Elo takhan eksho ranir dashi
    rajputani korte hori khela
    Robi takhan raktarage ranga
    shobe Takhan jhikimiki bela

    Paye paye ghagra uthe dule
    Orna ure dokkhin batashe
    Dahin hate bohe fager khari
    Niboboddhe jhuliche pichkari
    Bamhoste golap bhora jhari
    Sari sari rajutani aashe
    Paye paye ghagra uthe dule
    Orna ure dokkhin batashe

    See less
    • 1
  7. বিপুল তরঙ্গ রে পর্যায়: পূজা রাগ: ভীমপলশ্রী তাল: তেওরা রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1908 বিপুল তরঙ্গ রে, বিপুল তরঙ্গ রে। সব গগন উদ্‌বেলিয়া-- মগন করি অতীত অনাগত আলোকে-উজ্জ্বল জীবনে-চঞ্চল একি আনন্দ-তরঙ্গ ॥ তাই, দুলিছে দিনকর চন্দ্র তারা, চমকি কম্পিছে চেতনাধারা, আকুল চঞ্চল নাচে সংসারে, কুহরে হৃদয়বিহঙ্গ ॥  Read more

    বিপুল তরঙ্গ রে

    পর্যায়: পূজা
    রাগ: ভীমপলশ্রী
    তাল: তেওরা
    রচনাকাল (খৃষ্টাব্দ): 1908

    বিপুল তরঙ্গ রে, বিপুল তরঙ্গ রে।
    সব গগন উদ্‌বেলিয়া– মগন করি অতীত অনাগত
    আলোকে-উজ্জ্বল জীবনে-চঞ্চল একি আনন্দ-তরঙ্গ ॥
    তাই, দুলিছে দিনকর চন্দ্র তারা,
    চমকি কম্পিছে চেতনাধারা,
    আকুল চঞ্চল নাচে সংসারে, কুহরে হৃদয়বিহঙ্গ ॥

     

    উদ্‌বেলিয়াঃ উদ্বেলিয়া অর্থাৎ উচ্ছলিত হইয়া; উচ্ছ্বসিত হইয়া
    মগনঃ মগ্ন
    দিনকরঃ  সূর্য
    কুহরেঃ কন্ঠস্বর
    বিহঙ্গঃ পাখি

    Bipulo Taranga Re Rabindra Sangeet

    Bipulo Taranga Re Lyrics

    Bipulo torongo re, bipulo tarongo re.
    Sab gogono udbelia – magon kori otito onagaoto
    Aaloke-ujjalo jibone-chancholo eki anondo-torongo.
    Tai, dulichhe dinokar chondro tara,
    Chamoki kompiche chetona dhara,
    Aakulo chonchalo nache songsare,
    kuhore hridoyo-bihango.

    See less
    • 0
  8. তালগাছ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্যগ্রন্থঃ শিশু ভোলানাথ তালগাছ কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম রচনা।কবিতাটি কবির মুক্ত কল্পনার এক অনবদ্য বহিঃপ্রকাশ । তালগাছ নিয়ে এমন কল্পনা সত্যিই অতুলনীয়। তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়, একেবারে উড়ে যায়; কোথা পাবেRead more

    তালগাছ

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    কাব্যগ্রন্থঃ শিশু ভোলানাথ

    তালগাছ কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি অন্যতম রচনা।কবিতাটি কবির মুক্ত কল্পনার এক অনবদ্য বহিঃপ্রকাশ । তালগাছ নিয়ে এমন কল্পনা সত্যিই অতুলনীয়।

    তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে
    সব গাছ ছাড়িয়ে
    উঁকি মারে আকাশে।
    মনে সাধ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়,
    একেবারে উড়ে যায়;
    কোথা পাবে পাখা সে?

    তাই তো সে ঠিক তার মাথাতে
    গোল গোল পাতাতে
    ইচ্ছাটি মেলে তার, –
    মনে মনে ভাবে, বুঝি ডানা এই,
    উড়ে যেতে মানা নেই
    বাসাখানি ফেলে তার।
    সারাদিন ঝরঝর থত্থর
    কাঁপে পাতা-পত্তর,
    ওড়ে যেন ভাবে ও,
    মনে মনে আকাশেতে বেড়িয়ে
    তারাদের এড়িয়ে
    যেন কোথা যাবে ও।

    তার পরে হাওয়া যেই নেমে যায়,
    পাতা কাঁপা থেমে যায়,
    ফেরে তার মনটি
    যেই ভাবে, মা যে হয় মাটি তার
    ভালো লাগে আরবার
    পৃথিবীর কোণটি।

    Tal gach Poem by Rabindranath Tagore Recitation:

    English Transliteration of the Poem Talgach by Rabindranath Tagore

    Talgach ek paye dariye
    Shob gach chariye
    Uki mare akashe.
    Mone sadh, kalo megh fure jaai,
    Ekebare ure jaai;
    kotha pabe pakha shey?
    Tai to shey thik tar mathate
    Gol gol patate
    Icchati mele tar,
    Mone mone bhabe, bujhi dana ei,
    Ure jete mana nei
    Basakhani fele tar.
    Saradin jharjhar thar thar
    kape pata-pottor,
    Ore jeno bhabe o,
    Mone mone akashete beriye
    Taarader eriye
    Jeno kotha jabe o.
    Taar pore hawa jei neme jaai,
    Pata kapa theme jaai,
    Fere taar monti
    Jei bhabe, maa hoy je mati taar
    Bhalo lage arabar
    Prithibir konti.

    See less
    • 0
  9. অনন্ত প্রেম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাব্যগ্রন্থ : মানসী তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শত বার জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার। চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার, কত রূপ ধরে পরেছ গলায়, নিয়েছ সে উপহার জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার। যত শুনি সেই অতীত কাহিনী, প্রাচীন প্রেমের ব্যথা, অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,Read more

    অনন্ত প্রেম

    রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
    কাব্যগ্রন্থ : মানসী

    তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি
    শত রূপে শত বার
    জনমে জনমে, যুগে যুগে অনিবার।
    চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয়
    গাঁথিয়াছে গীতহার,
    কত রূপ ধরে পরেছ গলায়,
    নিয়েছ সে উপহার
    জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
    যত শুনি সেই অতীত কাহিনী,
    প্রাচীন প্রেমের ব্যথা,
    অতি পুরাতন বিরহমিলনকথা,
    অসীম অতীতে চাহিতে চাহিতে
    দেখা দেয় অবশেষে
    কালের তিমিররজনী ভেদিয়া
    তোমারি মুরতি এসে,
    চিরস্মৃতিময়ী ধ্রুবতারকার বেশে।
    আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি
    যুগল প্রেমের স্রোতে
    অনাদিকালের হৃদয়-উৎস হতে।
    আমরা দুজনে করিয়াছি খেলা
    কোটি প্রেমিকের মাঝে
    বিরহবিধুর নয়নসলিলে,
    মিলনমধুর লাজে–
    পুরাতন প্রেম নিত্যনূতন সাজে।
    আজি সেই চিরদিবসের প্রেম
    অবসান লভিয়াছে
    রাশি রাশি হয়ে তোমার পায়ের কাছে।
    নিখিলের সুখ, নিখিলের দুখ,
    নিখিল প্রাণের প্রীতি,
    একটি প্রেমের মাঝারে মিশেছে
    সকল প্রেমের স্মৃতি–
    সকল কালের সকল কবির গীতি।

    Unending Love by Rabindranath Tagore Recitation:

    Unending Love by Rabindranath Tagore in Bengali

    Tomarei jeno bhalobashiyachi
    shata rupe shata bar
    janame janame, juge juge anibar
    Chirokaldhore mugdho hridoy
    gathiyache Geetohar
    kata rup dhore porecho golay
    Niyecho shey upohar
    janame janame, juge juge anibar
    jata shuni Shei atit kahini
    Prachin premer byatha
    Ati puratan biraha milonkotha
    Ashim atite chahite chahite
    Dekha jay abasheshe
    kaler timir rajani bhediya
    tomari murti eshe
    chirosritimoyi dhrubotarar beshe
    Amra dujone bhashiya eshechi
    Jugal premer srote
    Anadikaler hridoy utsho hote
    Amra dujone koriyachi khela
    Koti premiker majhe
    Birohobidhur nayanshile
    Milon madhur laje
    Puratan prem nityo natun shaje
    Aaji shei chirodibosher prem
    Abashan lobhiyache
    rashi rashi hoye tomar payer kache
    Nikhiler sukh nikhiler dukh
    Nikhil praner priti
    Ekti premer majhare misheche
    Shokol premer sriti
    Shokol kaler shokol kobir geeti

    See less
    • 0