ভূমিকা – প্রাচীন ভারতে শিক্ষা ছিল মূলত গুরুকুলমুখী। গুরুদেব আশ্রমিক জীবনচর্যার মাধ্যমে ব্ৰহ্লাবিদ্যার পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনের শিক্ষা দানের উপযােগী করে ছাত্রকে পাঠ দিতেন – ক্রমশ কালের পরিবর্তনে সে শিক্ষা একদিন দূরীভূত হয়ে ইংরেজ শাসকদের আনুকুল্যে এদেশে বৃত্তিমুখী, চার দেয়ালের মধ্যে শুরু হয় সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পরিবর্তে সংকীর্ণ প্রথাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ এক আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা। দুশাে বছরের ব্রিটিশ শাসনের পরও এ শিক্ষাই আজও অনুসৃত হচ্ছে – অবশ্য যুগপ্রেক্ষিতের পরিবর্তনে লােকশিক্ষার প্রকৃতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন শিক্ষাপ্রসারের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের মত আধুনিক গণমাধ্যমগুলিকেও স্বীকৃতি দান করেছে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা – শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভুমিকা অতুলনীয় । গণমাধ্যমগুলি একাধারে যেমন শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তােলে তেমনি সমাজ শিক্ষা তথা গণশিক্ষাও ঘটায়, তাই গণমানসকে উদ্দীপিত করে তােলার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়ােজন শিক্ষার জন্য গণমাধ্যমগুলির সঠিক ব্যবহার। ফলে এর বিষয়ভুক্তির দিকেও আমাদের নজর দেওয়া প্রয়ােজন – যেমন ভারতের অর্থনীতির কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব, গ্রামােন্নয়নের পরিকল্পনা, সুস্বাস্থ্যের কর্মসূচী প্রভৃতি। তাই বলা যায় সঠিক গণশিক্ষার মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণের রুচি ও সঠিক শিক্ষার প্রসার ঘটানাে সম্ভব।
সংবাদপত্র – সংবাদপত্র সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বিবিধ বিষয়ে জ্ঞান লাভের অত্যন্ত সহজতর মাধ্যম। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে সংবাদপত্রের ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে। বর্তমানে সংবাদপত্র গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ তথা জনমত গঠনের সেরা মাধ্যম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সংবাদপত্র থেকে সাধারণ মানুষ জাতীয় অর্থনীতি, রাজনীতি, খেলাধূলা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান যেমন লাভ করে তেমনি সমগ্র বিশ্বের সাম্প্রতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারণাও জন্মায়। তাই একাধারে সংবাদপত্র এইসঙ্গে সংগঠক, শিক্ষক, জাতিগঠনে বা নেতৃত্বদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
রেডিও বা বেতার – গণমাধ্যমরূপে বেতার বা আকাশবাণীর ভূমিকাও কম নয়। এখন গ্রামাঞ্চলেও রেডিও প্রভৃতির প্রচলন ব্যাপকভাবে হয়েছে – এর মাধ্যমে কৃষিকাজের জন্য উপদেশ ও পরামর্শ, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষবাস প্রভৃতি বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
চলচ্চিত্র – শিক্ষা বিস্তার ও সমাজ উন্নতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চলচ্চিত্র। রূপ ও গতির সংমিশ্রণ চলচ্চিত্র। মানুষ ইন্দ্রিয় উপভােগের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পুষ্টির সুযােগ পেল চলচ্চিত্রর মাধ্যমে। বিশ্বের ভূগােল-ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সমাহারে এক একটি চলচ্চিত্র যে ভূমিকা পালন করে যা অজস্র গ্রন্থপাঠেও সম্ভব হয় না। এছাড়া সামাজিক ব্যাধি, অস্পৃশ্যতা, দলাদলির সংকীর্ণতার মত জটিল বিষয়গুলির উপর সচেতনতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দূরদর্শন – চলচ্চিত্রের মতােই দূরদর্শন বা টেলিভিশন দূরকে ‘নিকটবন্ধু’ করার সবচেয়ে শক্তিশালী একটি গণমাধ্যম।মানুষ তার ঘরে বসে জানতে পারে নানা অজানাকে, দেখতে পায় বিভিন্ন মনোরঞ্জন অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে দূরদর্শন বহুমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তােলে, কাজেই আধুনিকতম সংবাদের অতিদ্রুত পরিবেশনা তার অঙ্গ – একথা আজ সর্বজনস্বীকৃত।
ইন্টারনেট – একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্টতম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবন হয়ে পড়েছে অনেক সহজ। শিক্ষা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে আমরা ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছি। ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে করে তুলেছে সুলভ ও সহজ । ই মেইল, সামাজিক মাধ্যমের মত দ্রুত সেবার দরুন ইন্টারনেট বর্তমান যুগের সেরা গণমাধ্যম।
উপসংহার – বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসার আজ গণমাধ্যমগুলি একাধারে লােকশিক্ষা ও সমাজ শিক্ষায় দেশ ও জাতি তথা গােটা পৃথিবীকে স্বশিক্ষিত করে তুলছে। তবুও একথা ভুললে চলবে না যে, আজ যখন সমগ্র সমাজ অবক্ষয় ও নৈতিক শৈথিল্যে কবলিত এমত সময় দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, সংবাদ পত্র সমস্ত অ্যালকেই অসাধু ব্যবসায়ী ও বানিজ্যিক সংস্থা রুচিহীন করে তাকে ব্যবহার করছে – একে যদি শক্ত হাতে দমন না করা যায় তাহলে ‘শিক্ষা’ নয় ‘অশিক্ষা বিস্তার হবে গণমাধ্যমগুলির প্রকৃত কাজ। এর জন্য চাই সরকারী নজরদারী, আর তা রুখতে পারে নৈতিক আদর্শ এবং গণমুখী শিক্ষাচিন্তা – যার প্রভাব পরবে গণমাধ্যমগুলির উপর এবং উপকৃত হবে সমগ্র বিশ্ব।
Hridoy
শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভুমিকা :
ভূমিকা – প্রাচীন ভারতে শিক্ষা ছিল মূলত গুরুকুলমুখী। গুরুদেব আশ্রমিক জীবনচর্যার মাধ্যমে ব্ৰহ্লাবিদ্যার পাশাপাশি ব্যবহারিক জীবনের শিক্ষা দানের উপযােগী করে ছাত্রকে পাঠ দিতেন – ক্রমশ কালের পরিবর্তনে সে শিক্ষা একদিন দূরীভূত হয়ে ইংরেজ শাসকদের আনুকুল্যে এদেশে বৃত্তিমুখী, চার দেয়ালের মধ্যে শুরু হয় সর্বাঙ্গীণ বিকাশের পরিবর্তে সংকীর্ণ প্রথাকেন্দ্রিক সীমাবদ্ধ এক আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা। দুশাে বছরের ব্রিটিশ শাসনের পরও এ শিক্ষাই আজও অনুসৃত হচ্ছে – অবশ্য যুগপ্রেক্ষিতের পরিবর্তনে লােকশিক্ষার প্রকৃতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন শিক্ষাপ্রসারের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, কম্পিউটার, ইন্টারনেটের মত আধুনিক গণমাধ্যমগুলিকেও স্বীকৃতি দান করেছে।
গণমাধ্যমের ভূমিকা – শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যমগুলির ভুমিকা অতুলনীয় । গণমাধ্যমগুলি একাধারে যেমন শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তােলে তেমনি সমাজ শিক্ষা তথা গণশিক্ষাও ঘটায়, তাই গণমানসকে উদ্দীপিত করে তােলার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়ােজন শিক্ষার জন্য গণমাধ্যমগুলির সঠিক ব্যবহার। ফলে এর বিষয়ভুক্তির দিকেও আমাদের নজর দেওয়া প্রয়ােজন – যেমন ভারতের অর্থনীতির কিভাবে উন্নয়ন সম্ভব, গ্রামােন্নয়নের পরিকল্পনা, সুস্বাস্থ্যের কর্মসূচী প্রভৃতি। তাই বলা যায় সঠিক গণশিক্ষার মাধ্যমে দেশের আপামর জনসাধারণের রুচি ও সঠিক শিক্ষার প্রসার ঘটানাে সম্ভব।
সংবাদপত্র – সংবাদপত্র সমাজের সর্বস্তরের মানুষের বিবিধ বিষয়ে জ্ঞান লাভের অত্যন্ত সহজতর মাধ্যম। মুদ্রণযন্ত্রের আবিষ্কারের ফলে সংবাদপত্রের ব্যবহার ও গ্রহণযোগ্যতা ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর আনাচে কানাচে। বর্তমানে সংবাদপত্র গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ’ তথা জনমত গঠনের সেরা মাধ্যম হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সংবাদপত্র থেকে সাধারণ মানুষ জাতীয় অর্থনীতি, রাজনীতি, খেলাধূলা, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান যেমন লাভ করে তেমনি সমগ্র বিশ্বের সাম্প্রতিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারণাও জন্মায়। তাই একাধারে সংবাদপত্র এইসঙ্গে সংগঠক, শিক্ষক, জাতিগঠনে বা নেতৃত্বদানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।
রেডিও বা বেতার – গণমাধ্যমরূপে বেতার বা আকাশবাণীর ভূমিকাও কম নয়। এখন গ্রামাঞ্চলেও রেডিও প্রভৃতির প্রচলন ব্যাপকভাবে হয়েছে – এর মাধ্যমে কৃষিকাজের জন্য উপদেশ ও পরামর্শ, বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে চাষবাস প্রভৃতি বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।
চলচ্চিত্র – শিক্ষা বিস্তার ও সমাজ উন্নতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চলচ্চিত্র। রূপ ও গতির সংমিশ্রণ চলচ্চিত্র। মানুষ ইন্দ্রিয় উপভােগের সঙ্গে সঙ্গে মানসিক পুষ্টির সুযােগ পেল চলচ্চিত্রর মাধ্যমে। বিশ্বের ভূগােল-ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব-নৃতত্ত্ব ও বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সমাহারে এক একটি চলচ্চিত্র যে ভূমিকা পালন করে যা অজস্র গ্রন্থপাঠেও সম্ভব হয় না। এছাড়া সামাজিক ব্যাধি, অস্পৃশ্যতা, দলাদলির সংকীর্ণতার মত জটিল বিষয়গুলির উপর সচেতনতা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দূরদর্শন – চলচ্চিত্রের মতােই দূরদর্শন বা টেলিভিশন দূরকে ‘নিকটবন্ধু’ করার সবচেয়ে শক্তিশালী একটি গণমাধ্যম।মানুষ তার ঘরে বসে জানতে পারে নানা অজানাকে, দেখতে পায় বিভিন্ন মনোরঞ্জন অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে দূরদর্শন বহুমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তােলে, কাজেই আধুনিকতম সংবাদের অতিদ্রুত পরিবেশনা তার অঙ্গ – একথা আজ সর্বজনস্বীকৃত।
ইন্টারনেট – একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্টতম বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবন হয়ে পড়েছে অনেক সহজ। শিক্ষা, বাণিজ্য থেকে শুরু করে দৈনন্দিন কাজে আমরা ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে পড়েছি। ইন্টারনেট পুরো পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে করে তুলেছে সুলভ ও সহজ । ই মেইল, সামাজিক মাধ্যমের মত দ্রুত সেবার দরুন ইন্টারনেট বর্তমান যুগের সেরা গণমাধ্যম।
উপসংহার – বিজ্ঞানের দ্রুত প্রসার আজ গণমাধ্যমগুলি একাধারে লােকশিক্ষা ও সমাজ শিক্ষায় দেশ ও জাতি তথা গােটা পৃথিবীকে স্বশিক্ষিত করে তুলছে। তবুও একথা ভুললে চলবে না যে, আজ যখন সমগ্র সমাজ অবক্ষয় ও নৈতিক শৈথিল্যে কবলিত এমত সময় দূরদর্শন, চলচ্চিত্র, সংবাদ পত্র সমস্ত অ্যালকেই অসাধু ব্যবসায়ী ও বানিজ্যিক সংস্থা রুচিহীন করে তাকে ব্যবহার করছে – একে যদি শক্ত হাতে দমন না করা যায় তাহলে ‘শিক্ষা’ নয় ‘অশিক্ষা বিস্তার হবে গণমাধ্যমগুলির প্রকৃত কাজ। এর জন্য চাই সরকারী নজরদারী, আর তা রুখতে পারে নৈতিক আদর্শ এবং গণমুখী শিক্ষাচিন্তা – যার প্রভাব পরবে গণমাধ্যমগুলির উপর এবং উপকৃত হবে সমগ্র বিশ্ব।