ভূমিকাঃ রাজ্য বা রাষ্ট্র শাসন ও পরিচালনার নীতিকে এক কথায় বলা হয় বাজনীতি। ইহা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতােপ্রােত ভাবে জড়িয়ে আছে এই রাজনীতি। কেননা একটা দেশ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এই নীতির দ্বারা। স্বাভাবিকভাবেই মানুষও কমবেশি আগ্রহী হয় এই নীতির প্রতি। এই নীতিগুলির দ্বারাই মানব জীবনের ভালাে মন্দ নিয়ন্ত্রিত হয়। সামাজিক জীব হিসেবে তাই এই নীতি সম্পর্কে তার আকর্ষণ স্বাভাবিক।
ছাত্র সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎঃ একটি দেশের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করে ছাত্র সমাজের উপর। তারাই পারে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গঠন করতে। তারা রাজনীতিতে কীভাবে গ্রহণ করছে তার উপর নির্ভর করছে পরবর্তী যুগের চিন্তাভাবনা। একটি পরিচিত বাক্য উচ্চারণ করা যায় এ ক্ষেত্রে, আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরাই বড় হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা এবং শাসনের দায়িত্ব নিতে পারে। কাজেই রাজনীতি থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা যায় না।
ছাত্রদের ব্রতঃ ‘ছাত্র’ শব্দটির অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় – যিনি গুরুর দোষ ছত্রের মতাে আচ্ছাদন করে রাখেন, তিনিই ছাত্র। ছাত্রদের কর্তব্য সম্বন্ধে আমাদের দেশে বহুকাল থেকে চলে আসছে একটি সুপ্রাচীন সংস্কৃত বাক্য – “ছাত্ৰাণাং অধ্যয়নং তপঃ”। অর্থাৎ ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা বা ব্রত। এখন প্রশ্ন হল এই, এই অধ্যয়ন কেমন হবেন ? একটি ছাত্র কি সারাদিন বই নিয়েই থাকবে, নাকি জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধিত হবে পড়াশুনার ? যদি সে তা না করে তা হলে তার জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়বে। মানব চরিত্র বা মানব জীবন গঠনের পর্বে যদি একজন তরুণ বা তরুণী সমাজের দিক থেকে, জীবনের দিক থেকে, মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তা হলে বলা যায় সে স্বার্থপর, সে বৃহৎ জগতে বাঁচতে শিখেনি। সুতরাং আদর্শপূর্ণ হতে হলে সমাজের জন্য কিছু করার মনােভাব নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জীবনের যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণের এটাই উপযুক্ত সময়।
ছাত্রদের রাজনীতি-মনস্কামনাঃ বস্তুত দেশের প্রত্যেক নাগরিককেই রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। ছাত্রসমাজও এর বাইরে থাকতে পারে না। সমাজ সচেতনতার অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেকে কোন না কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। ‘পার্টি এবং পলিটিক্স’ শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে।এখন প্রয়োজন এই শব্দ দুটিকে ভিন্ন ভাবে প্রয়ােগ করা। রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন যে তাকে কোন না কোন পার্টিতে থাকতে হবে সে কথা ঠিক নয়। রাজনীতির মানসসিকতার সঙ্গে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ক্ষমা, সহমর্মিতা, উদারতা প্রভৃতি চারিত্রিক গুনাগুণও তরুণ তরুণীদের আয়ত্ত করা একান্ত প্রয়োজন
দেশ গঠনে ছাত্রসমাজঃ একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে একটি ছাত্রকে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। কেননা যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস প্রমাণ করে দিয়েছে যে ছাত্ররা দেশ গঠনের কাজে অংশ গ্রহন করলে সেটা তাকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গিয়েছে যে যেখানেই যে বিপ্লব বা স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল সেখানেই ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনেেও মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে দলে দলে তরুণ-তরুণীরা স্কুল কলেজ ছেড়ে আন্দোলনে করতে উৎসাহিত হয়েছিল। অনেক সময় কোন কোন ছাত্র-ছাত্রীকে দেশের জন্য বলিদানও করতে হয়েছে তবে তাদের আত্ম বলিদান বিফল হয়নি।
সঠিক রাজনৈতিক পথ অনুসরণঃ রাজনীতিতে ঝাপিয়ে পড়বার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ট পড়াশুনা করা উচিত। কোন্ পথে যাওয়া উচিত সে সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। সচেতন রাজনীতি বােধ না থাকলে এই রাজনৈতিক জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যেতে পারে। রাজনীতির প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ পর্ব যদি বিবেচনা প্রবণ না হয় তাহলে সেটা ভুল দিকে এগােবে। এতে কল্যাণের চেয়ে বেশি হবে অকল্যাণ। দলীয় সংকীর্ণ চিন্তা যেন তাকে কুপমণ্ডুক করে না রাখে। তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কুপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তারা অচিরেই তলিয়ে যাবে অনিশ্চিয়তা আর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। ভুল রাজনৈতিক পথ অনেকের জীবনকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ছাত্রসমাজের উন্নতির জন্য ছাত্র সমাজকেই দায়ভার নিতে হবেঃ আজ কাল আমাদের দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে ভাবে রাজনীতি নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে তা পূর্বে ছিল না। শিক্ষা লাভ করা অপেক্ষা অধিকার বােধ সম্বন্ধে ছাত্র-সমাজ আজ অধিকতর সচেতন। তাদের মধ্যে দলাদলি লেগেই আছে। প্রতি রাজনৈতিক দলের সাথে একটি করে ছাত্র সংগঠন জড়িত। তা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য কেউ অগ্রসর হয়ে আসছে না। অতঅব ছাত্র সমাজের উন্নতির কল্পে ছাত্র সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহারঃ বর্তমান যুগে সমাজে নানাবিধ অবক্ষয়ের ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও দলাদলি হানাহানিতে সর্বদাই আক্রান্ত। এই আক্রমণ অনেক সময় প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে। যুগ পরিবেশের প্রভাবে ব্যাপক ছাত্র-সমাজ রাজনৈতিক বা রাজনৈতিক মনস্কামনা হারিয়ে ফেলেছে। এ দুটির কোনটিই কাম্য নয়। ছাত্ররসমাজ এসব অবক্ষয়কে কে দূর করে এই মানবসমাজকে আবার উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে–এই আশা সকলের । দেশের সুস্থ স্বাভাবিক সামঞ্জস্য পূর্ণ বিকাশ নির্ভর করছে ছাত্র সমাজেরই উপর। তারা প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিকতা অর্জন করে দেশ গঠনে সাহায্যে করুক – এটাই বর্তমান প্রজন্মের আশা।
Hridoy
রচনা – ছাত্র সমাজ ও রাজনীতি
ভূমিকাঃ রাজ্য বা রাষ্ট্র শাসন ও পরিচালনার নীতিকে এক কথায় বলা হয় বাজনীতি। ইহা বলতে কোন দ্বিধা নেই যে, দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতােপ্রােত ভাবে জড়িয়ে আছে এই রাজনীতি। কেননা একটা দেশ পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় এই নীতির দ্বারা। স্বাভাবিকভাবেই মানুষও কমবেশি আগ্রহী হয় এই নীতির প্রতি। এই নীতিগুলির দ্বারাই মানব জীবনের ভালাে মন্দ নিয়ন্ত্রিত হয়। সামাজিক জীব হিসেবে তাই এই নীতি সম্পর্কে তার আকর্ষণ স্বাভাবিক।
ছাত্র সমাজ ও দেশের ভবিষ্যৎঃ একটি দেশের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করে ছাত্র সমাজের উপর। তারাই পারে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ গঠন করতে। তারা রাজনীতিতে কীভাবে গ্রহণ করছে তার উপর নির্ভর করছে পরবর্তী যুগের চিন্তাভাবনা। একটি পরিচিত বাক্য উচ্চারণ করা যায় এ ক্ষেত্রে, আজকের শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই শিশুরাই বড় হয়ে রাষ্ট্রপরিচালনা এবং শাসনের দায়িত্ব নিতে পারে। কাজেই রাজনীতি থেকে তাদের দূরে সরিয়ে রাখা যায় না।
ছাত্রদের ব্রতঃ ‘ছাত্র’ শব্দটির অর্থ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় – যিনি গুরুর দোষ ছত্রের মতাে আচ্ছাদন করে রাখেন, তিনিই ছাত্র। ছাত্রদের কর্তব্য সম্বন্ধে আমাদের দেশে বহুকাল থেকে চলে আসছে একটি সুপ্রাচীন সংস্কৃত বাক্য – “ছাত্ৰাণাং অধ্যয়নং তপঃ”। অর্থাৎ ছাত্রদের অধ্যয়নই তপস্যা বা ব্রত। এখন প্রশ্ন হল এই, এই অধ্যয়ন কেমন হবেন ? একটি ছাত্র কি সারাদিন বই নিয়েই থাকবে, নাকি জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য সাধিত হবে পড়াশুনার ? যদি সে তা না করে তা হলে তার জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়বে। মানব চরিত্র বা মানব জীবন গঠনের পর্বে যদি একজন তরুণ বা তরুণী সমাজের দিক থেকে, জীবনের দিক থেকে, মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকে তা হলে বলা যায় সে স্বার্থপর, সে বৃহৎ জগতে বাঁচতে শিখেনি। সুতরাং আদর্শপূর্ণ হতে হলে সমাজের জন্য কিছু করার মনােভাব নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। জীবনের যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণের এটাই উপযুক্ত সময়।
ছাত্রদের রাজনীতি-মনস্কামনাঃ বস্তুত দেশের প্রত্যেক নাগরিককেই রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া একান্ত প্রয়ােজন। ছাত্রসমাজও এর বাইরে থাকতে পারে না। সমাজ সচেতনতার অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেকে কোন না কোন রাজনৈতিক দলে যোগদান করতে হবে। ‘পার্টি এবং পলিটিক্স’ শব্দ দুটি প্রায় সমার্থক হয়ে গেছে।এখন প্রয়োজন এই শব্দ দুটিকে ভিন্ন ভাবে প্রয়ােগ করা। রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন যে তাকে কোন না কোন পার্টিতে থাকতে হবে সে কথা ঠিক নয়। রাজনীতির মানসসিকতার সঙ্গে সততা, ন্যায়-নিষ্ঠা, ক্ষমা, সহমর্মিতা, উদারতা প্রভৃতি চারিত্রিক গুনাগুণও তরুণ তরুণীদের আয়ত্ত করা একান্ত প্রয়োজন
দেশ গঠনে ছাত্রসমাজঃ একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে একটি ছাত্রকে অবশ্যই রাজনৈতিকভাবে সচেতন হতে হবে। কেননা যুগে যুগে বিভিন্ন দেশের ইতিহাস প্রমাণ করে দিয়েছে যে ছাত্ররা দেশ গঠনের কাজে অংশ গ্রহন করলে সেটা তাকে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গিয়েছে যে যেখানেই যে বিপ্লব বা স্বাধীনতা আন্দোলন হয়েছিল সেখানেই ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনেেও মহাত্মা গান্ধীর আহ্বানে দলে দলে তরুণ-তরুণীরা স্কুল কলেজ ছেড়ে আন্দোলনে করতে উৎসাহিত হয়েছিল। অনেক সময় কোন কোন ছাত্র-ছাত্রীকে দেশের জন্য বলিদানও করতে হয়েছে তবে তাদের আত্ম বলিদান বিফল হয়নি।
সঠিক রাজনৈতিক পথ অনুসরণঃ রাজনীতিতে ঝাপিয়ে পড়বার আগে ছাত্র-ছাত্রীদের যথেষ্ট পড়াশুনা করা উচিত। কোন্ পথে যাওয়া উচিত সে সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিত। সচেতন রাজনীতি বােধ না থাকলে এই রাজনৈতিক জীবন উদ্দেশ্যহীন হয়ে যেতে পারে। রাজনীতির প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণ পর্ব যদি বিবেচনা প্রবণ না হয় তাহলে সেটা ভুল দিকে এগােবে। এতে কল্যাণের চেয়ে বেশি হবে অকল্যাণ। দলীয় সংকীর্ণ চিন্তা যেন তাকে কুপমণ্ডুক করে না রাখে। তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে কুপথে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। তারা অচিরেই তলিয়ে যাবে অনিশ্চিয়তা আর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। ভুল রাজনৈতিক পথ অনেকের জীবনকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
ছাত্রসমাজের উন্নতির জন্য ছাত্র সমাজকেই দায়ভার নিতে হবেঃ আজ কাল আমাদের দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যে ভাবে রাজনীতি নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে তা পূর্বে ছিল না। শিক্ষা লাভ করা অপেক্ষা অধিকার বােধ সম্বন্ধে ছাত্র-সমাজ আজ অধিকতর সচেতন। তাদের মধ্যে দলাদলি লেগেই আছে। প্রতি রাজনৈতিক দলের সাথে একটি করে ছাত্র সংগঠন জড়িত। তা ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য কেউ অগ্রসর হয়ে আসছে না। অতঅব ছাত্র সমাজের উন্নতির কল্পে ছাত্র সমাজকেই এগিয়ে আসতে হবে।
উপসংহারঃ বর্তমান যুগে সমাজে নানাবিধ অবক্ষয়ের ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও দলাদলি হানাহানিতে সর্বদাই আক্রান্ত। এই আক্রমণ অনেক সময় প্রভূত ক্ষতি সাধন করছে। যুগ পরিবেশের প্রভাবে ব্যাপক ছাত্র-সমাজ রাজনৈতিক বা রাজনৈতিক মনস্কামনা হারিয়ে ফেলেছে। এ দুটির কোনটিই কাম্য নয়। ছাত্ররসমাজ এসব অবক্ষয়কে কে দূর করে এই মানবসমাজকে আবার উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে–এই আশা সকলের । দেশের সুস্থ স্বাভাবিক সামঞ্জস্য পূর্ণ বিকাশ নির্ভর করছে ছাত্র সমাজেরই উপর। তারা প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিকতা অর্জন করে দেশ গঠনে সাহায্যে করুক – এটাই বর্তমান প্রজন্মের আশা।