সমাজসেবা ও ছাত্রসমাজ রচনা | Essay on Social Work and Students
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Hridoy
সমাজসেবা ও ছাত্রসমাজ
অথবা
জনসেবা ও ছাত্রসমাজ
ভূমিকা : মানুষ একপ্রকার সামাজিক প্রাণী। সমাজের সদস্য হিসাবে তাকে সমাজের জন্য নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। আর এই সামাজিক প্রাণী হয়ে উঠার আসল প্রশিক্ষণ শুরু একটি মানুষের ছাত্রজীবন থেকে। তাই যুগ যুগ ধরে ছাত্রসমাজ সুস্থ সমাজ গঠনে এবং জনকল্যাণে এক অগ্রণী ভুমিকা পালন করেছে এবং অত্যাচার, অন্যায়, অবিচার ও শােষণের বিরুদ্ধে সর্বদা রুখে দাঁড়িয়েছে।
সমাজ ও সমাজসেবা : একটি সমাজ সর্বস্থরের মানুষ দ্বারা গঠিত হয় । সেখানে প্রত্যেক মানুষ একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয় এবং এই ক্ষেত্রে ছাত্ররাও ভিন্ন নয়। আমরা সমাজে বাস করছি, সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে আমরা অবগত।আমরা জানি যে নগরে আগুন লাগলে দেবালয় তা থেকে রক্ষা পায় না । সুতরাং দেবালয়কে বাঁচাতে হলে আমাদের আগুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ব্যবস্থা যদি নিতে হয়, তা হলে ছাত্র হলেও কিছু সামাজিক দায়িত্ব কাধে তুলে নিতেই হবে।
ছাত্র জীবনে কর্তব্য : ছাত্র জীবন থেকেই পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবার চেষ্টা করতে হয়। অধ্যয়ন ছাত্রদের তপস্যা বটে, কিন্তু একমাত্র কর্তব্য নয়। তাছাড়া কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আজকের ছাত্রজীবনের আদর্শও পরিবর্তিত হয়েছে। ছাত্র যে সমাজের অধিবাসী তার সমস্যা ও দুঃখ কষ্টের সঙ্গে পরিচিত হলে উত্তর জীবনে সহিষ্ণুতা ও সংগ্রামশীলতা অর্জিত হতে পারে। সমাজ সেবায় অংশ গ্রহণ করলে ছাত্রদের সামনে অভিজ্ঞতার বিচিত্র জগৎ খুলে যায়। তাই শুধু সমাজের কল্যাণে নয় ছাত্রদের নিজেদের স্বার্থেও সমাজ সেবায় ব্রতী হওয়া উচিত।
পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা : কেবল ভাল ছাত্র নয়, একজন সুনাগরিক হতে হলে বিশেষ কয়টি সামাজিক দায়িত্ব এই ছাত্র অবস্থা থেকেই পালন করা অবশ্যই দরকার। এই দায়িত্ব গুলির মধ্যে প্রথম ও প্রধান হল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা। বিদ্যালয়ের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের খুবই জরুরি। পল্লী গ্রামের স্কুল থাকে প্রায়ই জঙ্গলে ভরা। স্কুলের মাঠ ও ঘর-বাড়ির আনাচ-কানাচ থাকে নানা ধরনের নােংরা জিনিসে ভর্তি। ছাত্রেরা যদি কারাের হাতের দিকে না তাকিয়ে, নিজেরা এই নােংরা পরিষ্কারের দায়িত্ব তুলে নেয়, তাহলে স্কুল প্রাঙ্গন পরিষ্কার হয়।
সেবাধর্ম : মানব সেবার আদর্শ থেকেই সমাজ সেবার চিন্তার উদয় হয়েছে। মনীষী মহাপুরুষগণ বলে গেছেন, “যত্র জীব তত্র শিব” অর্থাৎ জন সেবাই প্রকৃত ঈশ্বরের পূজা। স্বামী বিবেকানন্দের বহুল প্রচারিত বাণীতে মানব সেবার আদর্শ অক্ষয় হয়ে আছে –
“বহুরূপে সম্মুখে তােমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর ?
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”
সুতরাং স্বতন্ত্র ভাবে ঈশ্বরের উপাসনার দরকার নেই। পৃথিবীর সকল ধর্মেই দুঃখীজনের দুঃখ মােচনে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ক্ষমার অবতার যীশু মানুষকে ভালােবাসতে পরামর্শ দিয়েছেন। গৌতম বুদ্ধ, শ্রী চৈতন্য দেব, শ্ৰীমন্ত শঙ্কর দেব প্রভৃতি যুগাবতারগণ মানবপ্রেমকেই শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে প্রচার করে গেছেন।
ভবিষ্যৎ নাগরিক হওয়ার প্রশিক্ষন : ছাত্র-ছাত্রীদের একটি গুরুত্ব পূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব হলাে মা-বাবার প্রতি আনুগত্য এবং পারিবারিক কাজে সহায়তা করা। জীবিকা অর্জনের ব্যস্ত পিতার সাংসারিক কাজে সাহায্য করা। এগুলি বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার তা হলাে দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে ভবিষ্যতে নিজেকে গড়ে তােলা। ছাত্ররা পাঠ্য গ্রন্থে বহুতর অনুসরণীয় আদর্শের কথা ও মনীষী মহাপুরুষদের জীবনকথা, তাদের ত্যাগ ও কর্তব্য নিষ্ঠার কথা জানতে পারে। এসব আদর্শ নিজেদের জীবনে রূপায়িত করার দায়িত্ব কিন্তু ছাত্রদেরই। এমনকী সংবাদ পত্রাদি পাঠ করে দেশ বিদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা সম্মন্ধে অবহিত হতে পারে। এভাবেই একজন ছাত্র ভবিষ্যতের একজন পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে পারবে।
উপযুক্ত কর্মসুচির প্রয়ােজনীয়তা : ছাত্র সমাজকে যদি গঠন মুলক কাজে উৎসাহ দিয়ে লাগানাে যায় তা হলে ছাত্র সমাজকে উসৃঙ্খলতা ও বিপথগামিতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ছাত্র সমাজের অপ্রতিরুদ্ধ গতি যদি সেবামূলক কাজে নিয়ােজিত হয় তাহলে অনেক কাজের সমালােচিত ছাত্রসমাজ নিন্দার হাত থেকেও মুক্তি পাবে। পরিকল্পিত ব্যবস্থাকে নিয়মনীতি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত করা গেলেও সার্থক করা যায় না। কর্তব্যের আবরণের মধ্যে ভালবাসা বা প্রীতিকে সংযুক্ত করা গেলে তবেই ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হবে গৃহীত কর্মসূচি, নতুবা সেগুলি হবে ব্যর্থতার নামান্তর মাত্র।
উপসংহার : জনসেবার মহৎ আদর্শ ছাত্র সমাজকে শুধুমাত্র যে বৃহত্তর জীবনের মুখােমুখী দাঁড় করায় তা-ই নয়, তার মানসিক সম্প্রসারণশীলতারও সঞ্চার করে। উপরন্তু ছাত্রজীবন বৃহত্তর জীবনের কর্ম-ধ্যান ও সেবার মহান ব্রত পরবর্তী জীবনের বৃহত্তর সমাজকল্যাণমূলক সমাজসেবার পটভূমি, পরার্থ পরতার জন্মভূমি। এটাই তাকে আলােকবর্তিকার মতাে পথ দেখাতে সাহায্য করবে।