দিদি – শুভ দাশগুপ্ত | Subho Dasgupta Kobita Didi lyrics in Bengali
Lost your password? Please enter your email address. You will receive a link and will create a new password via email.
জিজ্ঞেস করুন আপনার যে কোনো প্রশ্ন আর যুক্ত থাকুন সবসময়
Create A New Account
Durba
দিদি – শুভ দাশগুপ্ত
তোর নতুন ফ্ল্যাট থেকে ঘুরে এসে
মাকে বললাম সব কিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ।
তোর ঝকঝকে মোঝাইক মেঝে, ইমালশান লাগানো দেয়াল,
আধুনিক ডাইনিং টেবিল,
জানালা দরজায় ঝুলানো দামী পর্দা,
এমনকি তোর ভ্যালকোলনিতে রাখা বাহারি পাতার টব,
সব কিছুই বললাম মাকে ।
নগেন দত্ত লেনে আমাদের আলো বাতাসহীন
একতলার ভাঙা ঘরে বসে
মাকে সব শুনলেন চোখ বুজে
শুনতে শুনতে মার মুখে ফুটছিল হাসি আর
চোখে আসছিল জল ।
তোর ব্যালকোলনিতে দাঁড়ালে ছড়িয়ে থাকা শহরটাকে
অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়,
বসবার ঘরের দেয়ালে নতুন কেনা
একটা সুন্দর পেইন্টিং
ঘরটাকে কি গাম্বীর্যে ভরিয়ে তুলেছে
এ সব কিছুই মাকে বললাম ।
চোখ বুজে শুনতে শুনতে মার মুখে
ফুটে উঠছিল হাসি, আর
চোখে আসছিল জল ।
তোর চেহারাটা আগের চেয়ে অনেক ঝকঝকে
সুন্দর হয়ে গেছে, ফর্সা হয়ে গেছিস অনেকটা ।
যদিও তোর হাসিটা আছে ঠিক ছেলেবেলারই মতো ।
জামাইবাবুর মুখে শুনলাম সামনের পূজোয়
তোরা নাকি একেবারে পুরো দক্ষিণ ভারতটাই
বেড়িয়ে আসবি।
মা নগেন দত্ত লেনের ভাঙা চোরা ঘরে বসে
এই সব শুনতে শুনতে হাসছে আর , কেন জানিনা
মার চোখে এসেছে জল…!!
সব কিছুই বলেছি দিদি,
শুধু তোর ডাইনিং স্পেসে রাখা দুধ সাদা রংয়ের
ঐ ফ্রিজটার কথা মাকে বলিনি ।
তোর বিবাহ বার্ষিকির উজ্জ্বল সন্ধ্যায়, তুই যখন
গা ভর্তি গয়নায় অপরূপা হয়ে
ফ্রিজের মাথায় হাত রেখে হাসছিলি,
তখন যে তোকে কি দারুণ সুন্দর লাগছিল-
মাকে বলিনি সে কথাও ।
বিবাহ বার্ষিকির সন্ধ্যায় তোদের আনন্দ উজ্জ্বল
এপার্টমেন্টে তুই আর জামাইবাবু যখন ঐ
ফ্রিজটার পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে
মালা বদল করছিলি
বাবুদের রসিক বন্ধুদের অনুরোধে
আর ক্যামেরা ফ্ল্যাস ঝিলিক দিয়ে উঠছিল
উপচে পড়া খুশির মতো-
তখন ঠিক তখনি দিদি
আমার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল
হাসপাতালের করিডোরে বাবার ভেঙে পড়া মুখ ।
ভেতরে মা তখন অপারেশনের পর অচৈতন্য ।
ডাক্তার এসে বাবাকে বললেন
চোখটা বোধহয় আর বাচানো গেলনা, তাও একবার
চেষ্টা করে দেখতে পারেন-মাদ্রাজে – যদিও সে অবশ্য
অনেক টাকার ব্যাপার ।
হাড়ি কাঠে আটকে পড়া অসহায় পশুর মতো
করুণ দেখাচ্ছিল তখন বাবার মুখটা ।
সিড়ি দিয়ে আসতে আসতে বাবা
আমার কাধে হাত রেখে বলেছিলেন
কমলাকে সারা জীবন শুধু দুঃখ কষ্টই দিলাম,
সুখ দিতে পারলাম না ।
আজ ওর চোখ দুটোও চলে গেল ।
সবই আমার কপাল ।”
দিদি
অনেক দর-দস্তুর চাপা-চাপির পর
তোর বিয়েটা যখন আরো কয়েক ভরি সোনা আর
একটা ফ্রিজের দাবীতে
জন্য আটকে পড়েছিল অনিশ্চয়তার ঘুরটোপে
বাবা তখন কাউকে না জানিয়ে
চড়া সুদে ধার করেছিলেন
অনেক টাকা ।
সামান্য মাইনের প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করা বাবা
বেঁচে থাকতে থাকতে অন্তত একটা মেয়েকে পার করার
দূরন্ত আশায় ঝুঁকি নিয়ে ফেলেছিলেন অনেকটা।
চোখের জল আর রজনীগন্ধার সৌরভকে পিছনে ফেলে
তুই চলে গেলি ।
পড়ে রইলাম আমরা, মা আর আমি। আর
পড়ে রইলো নগেন দত্ত লেনের অন্ধকার ঘরে
বাড়তে থাকা সুদের বোঝার চাপে তলিয়ে যাওয়া
একটা সৎ মানুষ
তোর বাবা, আমার বাবা ।
দিদি
তোর গা ভর্তি গয়না আর ঐ দুধ সাদা ফ্রিজটার কথা
মাকে বলা হয়নি কিছুতেই ।
দৃষ্টিশক্তি খুইয়ে বসা মাকে বাবা বলেননি কিছুই ।
শুধু অসহায়ের মতো খুঁজেতেন
মার মুখে একটু হাসি
বড় মেয়ের ভালো ঘরে বিয়ে হওয়ার একটু তৃপ্তি ।
সে হাসি খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত বাবা চলে গেছেন ।
এখন নগেন দত্ত লেনের ভাঙা ঘরে বসে
মা আর আমি আনন্দেই আছি ।
একটা আনন্দই বোধহয় সবচেয়ে বড় –
এ বাড়িতে আর কোনোদিন সানাই বাজবে না সাহানায়
সানাই, রাজনীগন্ধা, বেনারসি, হৈচৈ এসব
অপ্রাসঙ্গিক হয়ে থেকে যাবে
চিরকাল।