আজ আমার প্রণতি গ্রহণ করো, পৃথিবী,
শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে।।
মহা বীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,
বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে,
মানুষের জীবন দোলায়িত কর তুমি দু:সহ দ্বন্দ্বে।
ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা,
বাম হাতে চূর্ণ কর পাত্র,
তোমার লীলাক্ষেত্র মুখরিত কর অট্টবিদ্রুপে;
দু:সাধ্য কর বীরের জীবনকে মহৎ জীবনে যার অধিকার।
শ্রেয়কে কর দুর্মূল্য, কৃপা কর না কৃপাপাত্রকে।
তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছ প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম,
ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক।
জলে স্থলে তোমার ক্ষমাহীন রণ রঙ্গভূমি-
সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।
তোমার নির্দয়তার ভিত্তিতে উঠেছে সভ্যতার জয় তোরণ
ত্রুটি ঘটলে তার পূর্ণ মূল্য শোধ হয় বিনাশে।।
তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের ছিল দুর্জয়-
সে পুরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
তার অঙ্গুলি ছিল স্থূল, কলাকৌশল বর্জিত;
গদা-হাতে মুষল-হাতে লণ্ডভণ্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
অগ্নিতে বাষ্পেতে দু:স্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
প্রাণের ‘পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।।
দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানব দমনের-
জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
ঊষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখর চূড়ায়,
পশ্চিম সাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তি ঘট।।
নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,
তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।
ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা-
তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে
হঠাত্ বেরিয়ে আসে এঁকে বেঁকে!
তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তোমার পাগলামি।
দেবতার মন্ত্র উঠেছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে
দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্র স্বরে।
তবু তোমার বরে পাতাল থেকে আধপোষা নাগ দানব
ণে ণে উঠেছে ফণা তুলে-
তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করেছ আঘাত,
ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।।
শুভে-অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে
তোমার প্রচণ্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে
আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্ন লাঞ্ছিত জীবনের প্রণতি।
বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর, গুপ্ত সঞ্চার তোমার যে মাটির তলায়
তাকে আজ স্পর্শ করি- উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে।
অগণিত যুগযুগান্তরের অসংখ্য মানুষের লুপ্ত দেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।
আমিও রেখে যাব কয়-মুষ্টি ধূলি, আমার সমস্ত সুখ দু:খের শেষ পরিণাম-
রেখে যাব এই নামগ্রাসী আকারগ্রাসী সকল-পরিচয়-গ্রাসী
নি:শব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।।
বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎ চঞ্চু বিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
কালো শ্যেন-পাখির মতো তোমার ঝড়-
সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ;
তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে
হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে;
হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল
শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।
আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিণ হাওয়া
ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহ-মিলনের স্বগত-প্রলাপ আম্র-মুকুলের গন্ধে;
চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে স্বর্গীয় মদের ফেনা;
বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে
অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।।
স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্য-নবীনা,
অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞ-হুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে
সংখ্যা-গণনার-অতীত প্রত্যুষে;
তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছে
শত শত ভাঙা ইতিহাসের অর্ধ-লুপ্ত অবশেষ;
বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি
অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে।।
জীবপালিনী, আমাদের পুষেছ
তোমার খন্ডকালের ছোট ছোট পিঞ্জরে,
তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান।।
আজ আমি কোন মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে;
এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গেঁথেছি বসে বসে
তার জন্য অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে।
তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূর্যপ্রদক্ষিণের পথে
যে বিপুল নিমেষগুলি উন্মীলিত নিমীলিত হতে থাকে
তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোন-একটি আসনের
সত্যমুল্য যদি দিয়ে থাকি,
জীবনের কোন-একটি ফলবান খণ্ডকে
যদি জয় করে থাকি পরম দু:খে
তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে;
সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে।।
হে উদাসীন পৃথিবী,
আমাকে সম্পূর্ণ ভোলবার আগে
তোমার নির্মম পদপ্রান্তে
আজ রেখে যাই আমার প্রণতি।।
Jibapalini, Amader puṣhecho
Tomar khanḍa-kaler choṭo choṭo piñjare,
tar’i madhye sab khelar sima, sab kirtir abashan..
Aaj Ami kono muho niye Ashini tomar sam’mukhe;
Etodin je din-ratrir mala gethechi boshe boshe
tar janno omorotar dabi korabo na tomar dhare.
Tomar ajut nijut baṯsar suryapradakhiṇer pothe
Je bipul nimeṣhguli unmilito nimilito hoye thake
tar’i ek khudra angshe kuno-ekaṭ asaner
Satyamullya jadi diye thaki,
Jibanera kuno-ekṭi falban khonḍoke
Jodi joy kare thaki param du:Khe
Tabe diyo tomar maṭir fuṭar ekṭi tilak amar kopale;
se cihna jabe miliye
Je ratre sakal cihna param achiner madhye jay mishe..
He udashin prthibi,
Amake sampurṇa bhulbar age
tomar nirmam padaprante
Aaj rekhe jai amar praṇati..
Hridoy
পৃথিবী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজ আমার প্রণতি গ্রহণ করো, পৃথিবী,
শেষ নমস্কারে অবনত দিনাবসানের বেদিতলে।।
মহা বীর্যবতী তুমি বীরভোগ্যা,
বিপরীত তুমি ললিতে কঠোরে,
মিশ্রিত তোমার প্রকৃতি পুরুষে নারীতে,
মানুষের জীবন দোলায়িত কর তুমি দু:সহ দ্বন্দ্বে।
ডান হাতে পূর্ণ কর সুধা,
বাম হাতে চূর্ণ কর পাত্র,
তোমার লীলাক্ষেত্র মুখরিত কর অট্টবিদ্রুপে;
দু:সাধ্য কর বীরের জীবনকে মহৎ জীবনে যার অধিকার।
শ্রেয়কে কর দুর্মূল্য, কৃপা কর না কৃপাপাত্রকে।
তোমার গাছে গাছে প্রচ্ছন্ন রেখেছ প্রতি মুহূর্তের সংগ্রাম,
ফলে শস্যে তার জয়মাল্য হয় সার্থক।
জলে স্থলে তোমার ক্ষমাহীন রণ রঙ্গভূমি-
সেখানে মৃত্যুর মুখে ঘোষিত হয় বিজয়ী প্রাণের জয়বার্তা।
তোমার নির্দয়তার ভিত্তিতে উঠেছে সভ্যতার জয় তোরণ
ত্রুটি ঘটলে তার পূর্ণ মূল্য শোধ হয় বিনাশে।।
তোমার ইতিহাসের আদিপর্বে দানবের ছিল দুর্জয়-
সে পুরুষ, সে বর্বর, সে মূঢ়।
তার অঙ্গুলি ছিল স্থূল, কলাকৌশল বর্জিত;
গদা-হাতে মুষল-হাতে লণ্ডভণ্ড করেছে সে সমুদ্র পর্বত;
অগ্নিতে বাষ্পেতে দু:স্বপ্ন ঘুলিয়ে তুলেছে আকাশে।
জড়রাজত্বে সে ছিল একাধিপতি,
প্রাণের ‘পরে ছিল তার অন্ধ ঈর্ষা।।
দেবতা এলেন পরযুগে, মন্ত্র পড়লেন দানব দমনের-
জড়ের ঔদ্ধত্য হল অভিভূত;
জীবধাত্রী বসলেন শ্যামল আস্তরণ পেতে।
ঊষা দাঁড়ালেন পূর্বাচলের শিখর চূড়ায়,
পশ্চিম সাগরতীরে সন্ধ্যা নামলেন মাথায় নিয়ে শান্তি ঘট।।
নম্র হল শিকলে-বাঁধা দানব,
তবু সেই আদিম বর্বর আঁকড়ে রইল তোমার ইতিহাস।
ব্যবস্থার মধ্যে সে হঠাৎ আনে বিশৃঙ্খলতা-
তোমার স্বভাবের কালো গর্ত থেকে
হঠাত্ বেরিয়ে আসে এঁকে বেঁকে!
তোমার নাড়ীতে লেগে আছে তোমার পাগলামি।
দেবতার মন্ত্র উঠেছে আকাশে বাতাসে অরণ্যে
দিনে রাত্রে উদাত্ত অনুদাত্ত মন্দ্র স্বরে।
তবু তোমার বরে পাতাল থেকে আধপোষা নাগ দানব
ণে ণে উঠেছে ফণা তুলে-
তার তাড়নায় তোমার আপন জীবকে করেছ আঘাত,
ছারখার করছ আপন সৃষ্টিকে।।
শুভে-অশুভে স্থাপিত তোমার পাদপীঠে
তোমার প্রচণ্ড সুন্দর মহিমার উদ্দেশে
আজ রেখে যাব আমার ক্ষতচিহ্ন লাঞ্ছিত জীবনের প্রণতি।
বিরাট প্রাণের, বিরাট মৃত্যুর, গুপ্ত সঞ্চার তোমার যে মাটির তলায়
তাকে আজ স্পর্শ করি- উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে।
অগণিত যুগযুগান্তরের অসংখ্য মানুষের লুপ্ত দেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়।
আমিও রেখে যাব কয়-মুষ্টি ধূলি, আমার সমস্ত সুখ দু:খের শেষ পরিণাম-
রেখে যাব এই নামগ্রাসী আকারগ্রাসী সকল-পরিচয়-গ্রাসী
নি:শব্দ ধূলিরাশির মধ্যে।।
অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী,
গিরিশৃঙ্গমালার মহৎ মৌনে ধ্যান নিমগ্না পৃথিবী,
নীলাম্বু রাশির অতন্দ্র তরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী,
অন্নপূর্ণা তুমি সুন্দরী, অন্নরিক্তা তুমি ভীষণা।
একদিকে আপক্বধান্যভারনম্র তোমার শস্যক্ষেত্রে-
সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু
কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে;
অস্তগামী সূর্য শ্যামশস্যহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী
”আমি আনন্দিত”।
অন্যদিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপান্ডুর মরুক্ষেত্র
পরিকীর্ণ পশু কঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতনৃত্য।
বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎ চঞ্চু বিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল
কালো শ্যেন-পাখির মতো তোমার ঝড়-
সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোলা সিংহ;
তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু করে
হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে;
হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল
শিকল-ছেঁড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো।
আবার ফাল্গুনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিণ হাওয়া
ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহ-মিলনের স্বগত-প্রলাপ আম্র-মুকুলের গন্ধে;
চাঁদের পেয়ালা ছাপিয়ে দিয়ে উপচিয়ে পড়েছে স্বর্গীয় মদের ফেনা;
বনের মর্মরধ্বনি বাতাসের স্পর্ধায় ধৈর্য হারিয়েছে
অকস্মাৎ কল্লোলোচ্ছ্বাসে।।
স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্য-নবীনা,
অনাদি সৃষ্টির যজ্ঞ-হুতাগ্নি থেকে বেরিয়ে এসেছিলে
সংখ্যা-গণনার-অতীত প্রত্যুষে;
তোমার চক্রতীর্থের পথে পথে ছড়িয়ে এসেছে
শত শত ভাঙা ইতিহাসের অর্ধ-লুপ্ত অবশেষ;
বিনা বেদনায় বিছিয়ে এসেছে তোমার বর্জিত সৃষ্টি
অগণ্য বিস্মৃতির স্তরে স্তরে।।
জীবপালিনী, আমাদের পুষেছ
তোমার খন্ডকালের ছোট ছোট পিঞ্জরে,
তারই মধ্যে সব খেলার সীমা, সব কীর্তির অবসান।।
আজ আমি কোন মোহ নিয়ে আসি নি তোমার সম্মুখে;
এতদিন যে দিনরাত্রির মালা গেঁথেছি বসে বসে
তার জন্য অমরতার দাবি করব না তোমার দ্বারে।
তোমার অযুত নিযুত বৎসর সূর্যপ্রদক্ষিণের পথে
যে বিপুল নিমেষগুলি উন্মীলিত নিমীলিত হতে থাকে
তারই এক ক্ষুদ্র অংশে কোন-একটি আসনের
সত্যমুল্য যদি দিয়ে থাকি,
জীবনের কোন-একটি ফলবান খণ্ডকে
যদি জয় করে থাকি পরম দু:খে
তবে দিয়ো তোমার মাটির ফোঁটার একটি তিলক আমার কপালে;
সে চিহ্ন যাবে মিলিয়ে
যে রাত্রে সকল চিহ্ন পরম অচিনের মধ্যে যায় মিশে।।
হে উদাসীন পৃথিবী,
আমাকে সম্পূর্ণ ভোলবার আগে
তোমার নির্মম পদপ্রান্তে
আজ রেখে যাই আমার প্রণতি।।
InEnglish Font:
Prithibi
Rabindranath Tagore
Aaj amar praṇati grahaṇ karo prthibi,
Sesh namaskare abanato din basaner beditale..
Maha biryabati tumi birbhogya,
Biparita tumi lolite koṭhur,
Misrito tumar prakriti puruṣhe narite,
Manuṣher jibon dolayito koro tumi du:Saha dhande.
Ḍan hate purṇa koro sudha
bam hate churṇo koro patro,
tomar lilaketre mukharito koro aṭṭabidrup;
Du:Shadhya koro birer jibanke mahaṯ jibane jar adhikar.
Sreyake koro durmulya, kripa koro na kripa patrake.
Tomar gache gache pracchanna rekheche prati muhurter saṅgram,
Phale sashye tara jayamalya hoy sarthak.
Jale sthale tomar khomahin raṇa raṅgabhumi-
Sekhane mrityur mukhe ghoṣhita hoy bijayi praṇer jaybarta.
Tomar nirdayatar bhittite uṭheche shobhyatar joy turaṇ
Truṭi ghaṭle tar purṇa mullya sodh hoy binashe..
Tomar itihasher adiparbe danober chilo durjay-
Se puruṣh, se barbar, se murh.
Tar aṅguli chilo sthulo, kola-kausal barjito;
Goda-hate muṣal-hate laṇḍabhaṇḍa kareche se samudra parbat;
Agnite baṣpete du:shapno ghuliye tuleche Akashe.
Jar-rajatte se chilo ekadhipati,
Praṇer ‘pore chilo tara andha irṣha..
Debota elen parajuge, mantra parlen danab domoner-
Jarer aud’dhatya holo abhibhuto;
Jibodhatri boshlen shyamal astaraṇ pete.
Uṣha daralen purbachaler sikhor churay,
Pashim sagaratire sandhy namalen mathay niye santi ghaṭ..
Namra holo shikole-badha danab,
Tabu se’i adim barbar Aakre ra’ilo tomara itihash.
Byabasthar madhye se haṭhaṯ Aane bisriṅgkholota-
tomar sbabhaber kalo garta theke
haṭhat beriye aase eke beke!
Tomar narite lege ache tomar pagalami.
Debatar mantra uṭheche Akashe batashe oroṇnye
Dine ratre udatta anudtta mandra shore.
Tabu tomr bore patal theke adhpoṣha nag danab
Ne ṇe uṭheche phaṇa tule-
tar taronay tomar Apan jibke korecho Aghat,
Charkhar karcho Apan sriṣṭike..
Subhe-asubhe sthapito tomar padpiṭhe
Tomar prachaṇḍa sundar mahimar uddese
Aj rekhe jabo Amar katachinna lanchita jibaner praṇati.
Biraṭ praṇer, biraṭ mrityur, gupta sañchar tomar je maṭira talay
take aaj sparsa kari- upalabdhi kari sarba dehe mone.
Agaṇita jugjugantarer osaṅkhya manuṣher lupto deho puñjito tar dhulay.
Ami’o rekhe jabo koy muṣṭi dhuli, Amar samasta sukh du:Kher seṣh poriṇam-
Rekhe jabo e’i namgrashi akargrashi sakal-parichoy-grashi
Ni:shabda dhuli rashir madhye..
Ochol abarodhe Abad’dha prthibi, meghloke udha’o prthibi,
Girisriṅgamalar mahaṯ maune dhyan nimagna prthibi,
Nilambu rashir atandro taraṅge kalamandro-mukhora prthibi,
Annapurṇa tumi sundari, annarikta tumi bhiṣhaṇa.
Ekadike Apakkha-dhan’yabhar-namra tomar sashyakhetre-
Sekhane prasanna prabhat-surya pratidin muche neye sisir-bindu
kiraṇ-uttariya buliye diye;
Astagami surya syamasasya-hillole rekhe jay okothita e’i baṇi
”Ami Anandito”.
An’yadike tomar jalhin folhin Ataṅkapnḍur marukhetra
Parikirṇo pashu kaṅkaler madhye maricikar pret-nritya.
Baisakhe dekhechi bidyuṯ chanchu bid’dha digantake chiniye nite elo
kalo syen-pakhir moto tomar jhar-
Samasta akashṭa ḍeke uṭhlo jeno keshor-phola sinha;
Tar lejer jhapaṭe ḍal-pala aluthalu kare
Hatash banaspati dhulaa parlo ubur hoye;
Ha’wrer mukhe chuṭlo bhanga kurer chal
Sikal-chara koyedi-ḍakater moto.
Abar phalgune dekhechi tomr Atapta dakkiṇ hawa
Choriye diyeche biraho-miloner shagata-pralap Amra-mukuler gandhe;
Chader peyala chapiye diye upaciye pareche shargiya mader fena;
Boner marmardhani bataser spardhaya dhairja hariyeche
akassatṯ kallolocchashe..
Snigdha tumi, hingsra tumi, purtani tumi nitya-nabina,
anadi sriṣṭir jagga-hutagni theke beriye esechile
saṅkhya-gaṇanar-atit pratyuṣhe;
Tomar cakratirther pathe pathe choriye eseche
Shata shata bhanga itihaser ardha-lupta abasesh;
Bina bedanay bichiye eseche tomar barjito sriṣṭi
Agaṇnya bismrtir sthore sthore..
Jibapalini, Amader puṣhecho
Tomar khanḍa-kaler choṭo choṭo piñjare,
tar’i madhye sab khelar sima, sab kirtir abashan..
Aaj Ami kono muho niye Ashini tomar sam’mukhe;
Etodin je din-ratrir mala gethechi boshe boshe
tar janno omorotar dabi korabo na tomar dhare.
Tomar ajut nijut baṯsar suryapradakhiṇer pothe
Je bipul nimeṣhguli unmilito nimilito hoye thake
tar’i ek khudra angshe kuno-ekaṭ asaner
Satyamullya jadi diye thaki,
Jibanera kuno-ekṭi falban khonḍoke
Jodi joy kare thaki param du:Khe
Tabe diyo tomar maṭir fuṭar ekṭi tilak amar kopale;
se cihna jabe miliye
Je ratre sakal cihna param achiner madhye jay mishe..
He udashin prthibi,
Amake sampurṇa bhulbar age
tomar nirmam padaprante
Aaj rekhe jai amar praṇati..